অপ্রত্যাশিত ভালোবাসা পর্ব -০৯

গল্প: #অপ্রত্যাশিত ভালোবাসা
লেখক:#কাব্য মেহেরাব

পর্ব: ০৯

এভাবেই আমার দিন পার হচ্ছিল। আমার ভালোবাসার মানুষটির মতো আমিও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে শুরু করলাম। রামু চাচা সম্পূর্ণ ব্যবস্থা করে দিয়েছিল আমাকে। তবে এর বিন্দুমাত্র ধারণা ছিল না প্রবীশ বাবুর। তার মানসিক অত্যাচার টা আমার ওপর কন্টিনিউ চলতে থাকতো। একসময় ভয় হতে লাগলো আমার, তবে নিজের জন্য নয় । নিজের গর্ভের সন্তানের জন্য।

এইতো কয়েকদিন আগের কথা। তিনি তার কোন একটা কাজের জন্য ক্লায়েন্টদের সাথে একটা ক্লাবে মিটিংয়ে যান। মূলত তিনি যে কি কাজ করেন, আমি আজও তা জানতে পারিনি। মিটিংটা ছিল রাতে। ক্লা্ব সম্পর্কে আর কি বলবো। নিচে অহেতুক ছেলেমেয়েরা মাতলামো করে ডান্স করে বেরোবে। চোখ দিয়ে একে অন্যকে গিলে খাবে। বিভিন্ন ধরনের নেশাজাতীয় দ্রব্য পান করবে। আর হেলে দুলে নেচে বেড়াবে। এগুলোকে নাকি মডার্ন সোসাইটি বলা হয়। পাশ দিয়ে যেই দোতালার সিঁড়ি বেয়ে যায়, সেখানে গুটি কয়েক টেবিল বসানো তার চারিপাশে কিছু চেয়ার ।সেখানেই মিটিং এর ব্যাবস্থা করা হয়। মাঝে মাঝে সার্ভেন্ট রা ড্রিঙ্গ সার্ভ করে দেয়। আবার কিছু কিছু ডান্স করা মেয়েরাও এসে সার্ভ করে। তিন তালা বিশিষ্ট যেই বন্ধ রুম গুলো আছে,তা একান্ত ঘনিষ্ঠ মূহুর্তের জন্য বরাদ্দ করা। বাবা মায়ের বিগরে যাওয়া ছেলে মেয়ে উভয়ের জন্য।

আপ্পায়ন হিসেবেই নিচতলায় তেই নাকি প্রথমে ড্রিঙ্ক করানো হয়। প্রবীশ বাবু তার ক্লায়েন্টদের জন্য অপেক্ষা করতে করতে ডিসকোর সামনে বসে বসে সফট ড্রিঙ্ক করছিলেন। কয় গ্লাস ড্রিক্স করে চোখ যায় সামনে তার অপজিটে ডেক্সে।

একটা লাল ওয়েস্টান্ড ড্রেস পড়ে একটি মেয়ে বিয়ার খাচ্ছে আর মাতলামো করে বেড়াচ্ছে। পাশ দিয়ে তাকে চার-পাঁচজন ঘিরে ধরেছে। শরীরের কাপড় এতো ই ছোট যে বিভিন্ন স্থান স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। অনেকেই আঙ্গুল দিয়ে সেই দৃশ্য মান জায়গায় স্পর্শ করছে। আর মেয়েটাও খুব স্বাভাবিকভাবে সেই স্পর্শ গুলোকে আরো প্রকট করে তুলছে। মেয়েটার শরীরের ড্রেসটা এতই ছোট যে প্রতিটি ভাজ তা দৃশ্যমান।লোভাভূত দৃষ্টি দিয়ে গিলে খাচ্ছে প্রতিটা পুরুষ। আর তা উপভোগ করছে মেয়েটা। এতো মাতামাতির মাঝে মেয়েটার চেহারা স্পর্শ দেখতে পাইনি প্রবীশ বাবু।

এই সব পুরুষের মাঝে হঠাৎ একটি পুরুষ এলোমেলোভাবে মেয়েটাকে স্পর্শ করছে ।একবার তো মেয়েটির ঠোটে ঠোট মিলিয়ে দিল।কি আশ্চর্য! কোন বাধা ছাড়াই মেয়েটি ও তাকে সাপোর্ট করছে। এতগুলো পুরুষের মাঝে, জনসমাজে কিভাবে একটা পুরুষকে এই ভাবে আঁকড়ে ধরল বুঝতে পারল না প্রবীশ বাবু। এতোই যদি রঙ্গলিলা করতে মন চায় তাহলে তার ব্যাবস্থা তো উপরে আছেই। তাহলে এতো মানুষের সামনে নিজেকে নগ্ন করার কি দরকার?

খুব তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে প্রবীশ বাবু মেয়েটির দিকে। এইজন্যই মেয়েদেরকে সহ্য করতে পারে না।পুরুষটি সামনে থাকায় মেয়েটিকে স্পর্শ দেখা যাচ্ছে না শুধু হাত দুটি ছাড়া।

মেয়েটির হাতে পরা রিং এর দিকে চোখ গেল প্রবীশ বাবুর। খুব চেনা এই রিংটি। ভালোবেসে কাউকে উপহার দিয়েছিল। তাহলে কি সেই…….. ?মাথাটা কয়েকবার ঝাঁকিয়ে নিল। না হ তার সেই চিরচেনা আংটি টাই এটা। ধীর পায়ে আস্তে আস্তে মেয়েটির সামনে গেল।

ততক্ষণে মেয়েটি ওই পুরুষটিকে ছাড়িয়ে হাসতে হাসতে সামনে তাকালো। তার প্রত্যাখ্যান হাসবেন্ড তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে, অবাক হওয়ার কথা থাকলেও মেয়েটি হেসে দিলো। আর সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল-

ওহ মাই ডারলিং, মিট অল অফ দেম।
হি ইজ রাকেশ,এন্ড হি ইজ সানজু ।ওর এ হলো মালোতরা। ইউ নো দেট দেআর ওলছো বিজনেস ম্যান।কত টাকার মালিক তুমি জা……( ঠাসসসসসসসস)

মেঘা : ইউ ব্লাডি রাস্কেল! তোমার সাহস কি করে হয় আমার গায়ে হাত তোলার….?( মুখে হাত দিয়ে বলল)

মালোতরা: হেই ইয়াং ম্যান। তোমার সাহস কি করে হয় ? কোন অধিকারে তুমি গায়ে হাত তুলছো? তার গায়ে? তুমি জানো এই মুহূর্তে তোমার হাত ভেঙ্গে গুরে দিতে পারি আমরা?( প্রবীশের জামার কলার ধরতে ধরতে বলল)

প্রবীশ: (জামার গলার থেকে হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বললো) আমি ওর সো কল হাজবেন্ড ছিলাম। কিন্তু এখন ওর মত মেয়েদের সাথে কথা বলতে ও আমার রুচিতে বাধে। আই জাস্ট হেট হিম।।

সানজু : সেই ইউ……..( আঙ্গুল উঁচু করে)

প্রবীশ: ডোন্ট শাউট……(আঙ্গুল নামিয়ে দিল)

কথাটা বলেই প্রবীশ বাবু ক্লাব থেকে বেরিয়ে পড়লেন। অমিত বাবুকে সাথে আনেননি আজ। একাই ফুল স্পিডে গাড়ি ড্রাইভ করছেন তিনি। রাগে তো চক্ষু দিয়ে যেন রক্তের লাভা বেরিয়ে আসতে চাইছে। কিছুতেই তার রাগ সংবরণ করতে পারছে না। সমস্ত কিছু ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে মন চাচ্ছে।

দূরত্ব নিজের প্রাসাদে এসে হাজির হলেন। বেল বাজানো তোর সইছে না তার। একের পর এক লাগাতার বেল বাজিয়ে চলছে। রামু জেঠু দ্রুত এসে দরজাটা খুলে দিলেন। রামু জেঠু কে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিলেন প্রবীশ বাবু। আজ যে তার রাগ সপ্তম আসমানে উঠেছে তা ডের বুঝতে পেরেছেন রামু চাচা। কি দিয়ে যে কি করবেন তিনিও দিশাহারা হয়ে গেছে ন।

প্রবীশ বাবু নিজের আলাদা রুমে যেয়ে এক বোতল বিয়ার নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলেন। শোবার রুমে এসে বিছানার তল থেকে কিছু একটা বের করে নিলেন। এইবার আমার রুমের পথ ধরলেন।

আমি সবেমাত্র ঘুম ঘুম ভাবে ঘুমোনোর চেষ্টা করছি। হঠাৎ দরজায় লাথি মেরে খুলে ফেললেন প্রবীশ বাবু। আমি দ্রুত উঠে বসলাম। ভয়ে আমার বুক উঠা নামা করছে। এইভাবে তার আমার রুমে আসাটা আমার আত্মাটাকে কাঁপিয়ে তুললো।

আমার দিকে তাকিয়ে বোতলের ছিপি খুলে এক নিশ্বাসে পুরা এক বোতল বিয়ার শেষ করে ফেললেন। তারপর বোতলটা সজোরে এক ঝটকায় মেঝেতে ফেলে দিলেন। চোখের পলকেই আমার সামনে এসে আমার গলা চেপে ধরে বললেন তোদের এই শরীরে এত তেজ কেন বলতো? কতজন পুরুষ লাগে তোদের শরীরের চাহিদা মেটানোর জন্য? তার এই কথার আগামাথা আমি কিছু বুঝে উঠতে পারলাম না। আমার শ্বাসনালী বন্ধ হয়ে আসছিল। আমি কি করেছি যে তিনি এই কথা গুলো আমাকে বলছেন? হঠাৎ বেডের উপর ছিটকে ফেলে দিলেন আমায়।

তারপর শুরু হল তার সেই অমায়িক নির্যাতন। কাঁদতে কাঁদতে একসময় তার পা জড়িয়ে ধরলাম। ততক্ষণে রামু চাচা ও এসে হাজির হলেন। আমার সাথে রামু চাচা ও যোগ দিলেন।

রামু চাচা: মামনি কে এভাবে আর মারবেন না, বাবাসাহেব । আপনার যত রাগ আমার উপর প্রয়োগ করুন তবুও তাকে ছেড়ে দিন। আপনার পায়ে পড়ি বাবাসাহেব। দয়া করে মামুনিকে আর মারবেন না।

মেঘা: আপনারা সব যন্ত্রণা আমি সহ্য করে নেব। কিন্তু আমার বাচ্চাটাকে সুন্দরভাবে পৃথিবীতে আসতে দিন ।আমি কথা দিচ্ছি আপনি যা বলবেন আমি তাই শুনবো! তবুও এইভাবে আমার গর্ভের বাচ্চাটাকে কষ্ট দিবেন না! আমি আপনার পায়ে পড়ি।

প্রবীশ বাবু:( থেমে যায় প্রবীশ বাবু। মনে মনে ভাবে) শরীরের ক্ষত তো মিটে যায়, কিন্তু মনের ক্ষত কোনদিনও মেটে না। না চাইতেও কষ্ট দেওয়ার পথ আমি পেয়ে গেছি। আমার সন্তান যখন পৃথিবীর আলো দেখতে পাইনি । আমিও দেখতে দিবোনা, এই মেঘার সন্তানকে । কম আকুতি মিনতি তো আমি করেনি… আমার কথা কি মেঘা শুনেছিল? তাহলে আমি কেন শুনবো?

প্রবীশ বাবু রুম থেকে বের হয়ে পড়ে। রামু চাচার বুকে মাথা রেখে অশ্রু বিসর্জন দিয়ে যাচ্ছি আমি। আর কত কষ্ট সহ্য করবো আমি। এতদিন নিজের শরীরের উপর দিয়ে যন্ত্রনা মেনে নিতে পারলেও এখন গর্ভের উপর এই যন্ত্রনা অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করতে যে পারছি না। সিদ্ধান্ত নেয় রহিমা খালাকে ফোন দিব।

রামু চাচা এর মাধ্যম দিয়ে ফোন নিয়ে কল করি রহিমা খালাকে। আমার সাথে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা তাকে আমি খুলে বলি। জবাবে রহিমা খালা আমাকে বলে, একটু চড়-থাপ্পড় সহ্য করতে পারিস না আর এখানে রাতের পর রাত হাজারটা পর পুরুষের সাথে সহবাস করতিস কি করে? তখন যন্ত্রণা হতো না? ব্যথা হতো না? তাহলে এখন।? তোর কপাল ভালো। রাজ কপাল নিয়ে জন্মেছিস! এই সব জ্বালা আর পোহাতে হবে না।

আর ঐ বাচ্চাটার কথা ভাবছিস? বাদ দে তো !কার না কার বাচ্চা? বড় হইলে বাপের পরিচয় দিবি কি? বাচ্চাটা ফালাই দে।আর বাবু কে খুশি কর। তোকে রাজরানী করে রাখবে। তাছাড়া এইসব আজাইরা কথাবাত্রা আমারে কইতে আইবি না তো। তোর জন্য প্রতি সপ্তাহে সপ্তাহে এক লক্ষ করে টাকা আমারে পেমেন্ট কইরা দেয়। তাই বেশি প্যান প্যান করবি না। যা কয় তাই শুনবি। আমি কিন্তু কোনো অভিযোগ সুনবার চাইনা। ফোন রাখ।

শেষ হলো আমার ঐইখানকার অন্ধকার গলির ভালোবাসা। সুন্দরী ডালিয়া এখন তাদের কাছে বোঝা। অথচ এই ডালিয়াকে ছাড়া ঐ অন্ধকার গলি জমতো না।

কাব্য নাম টা উচ্চারণ করে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলাম। কাব্য নিজেকে শুধুমাত্র একটা পুতুল ছাড়া আর কিছুই মনে হচ্ছে না আমার। আমাকে যে যেভাবে পারছে নাচিয়ে নিয়ে বেরোচ্ছে। আর আমি তাদের মনোরঞ্জন দিচ্ছি শুধু। যেই #অপ্রত্যাশিত_ভালোবাসার জোয়ারে ভাসাতে চেয়েছিলে আমায়, কোথায় সেই সামান্য টুকু ভালোবাসা?আমার যে পেয়েও না পাওয়া ভালোবাসা গুলো #অপত্যাশিত_ভালোবাসা হিসেবে ই রয়ে গেল। আমি তো কথা দিয়েছিলাম তোমায়, আমি আর কান্না করব না। বিনিময় তুমি আমাকে শুধু ভালোবাসবে। আমি তো আমার কথা রেখেছি ,তাহলে তুমি কেন হারিয়ে গেলে আমাকে একা ফেলে রেখে?

এত দিনে আমি একটা জিনিস খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছি। এখানে আনার আমার একমাত্র কারণ আমাকে মানসিক টর্চার করা। তবে প্রবীশ বাবুর রাগ ক্ষোভ তার স্ত্রীর থেকে ও যেন আমার ওপরই বেশি দেখনোর চেষ্টা করেন। কি নিয়তি আমার। আমার মত অভাগা কে তার বেছে নিতে হলো?

পরদিন সকালে মেঘা প্রবীশ বাবু কে নিজের রুমে দেখে চমকে গেল। কোনো শাস্তি দেওয়া ছাড়া তিনি এই রুমে আসবেন বলে তো মনে হয় না। ঐ দিন রাত থেকে প্রবীশ বাবু কে বেশ ভয় হতে লাগলো।

কারণ মেঘা ঘুম থেকে উঠে খেয়াল করল প্রবীশ বাবু মেঘার পাশে বসে আছে।মেঘা বেশ চমকে গেল প্রবীশ বাবু কে এভাবে দেখে।বুঝতে পারল না প্রবীশবাবু এভাবে বসে আছে কেন? কিছুটা বিস্মিত আর কাঁপা কাঁপা সুরে মেঘা প্রবীশ বাবুকে বলল-

মেঘা: প্রবীশবাবু আপনি এখানে?কিছু লাগবে?আমি কি কোন ভুল করেছি?

প্রবীশ :(এবার একরাশ শয়তানি হাসি দিয়ে বলল)
নাহ ডালিয়া তুৃমি কোন ভুল কর নি।আমি তো এসেছি তোমার জন্য নাস্তা নিয়ে। ভয় নেই আজ বুলেট টি নিয়ে আসেনি। সেদিন ঐ ভাবে মারার পর, দিনে রাতে কিছু খেয়েছো কি না কে জানে। তাই ভাবলাম এভাবে না খেয়ে থাকলে যে তোমার শরীর খারাপ করবে। তোমার বেবি টাও কষ্ট পাবে। তাই তোমাদের জন্য আমি নিজে খাবার নিয়ে এসেছি।

এই নাও ব্রাশ, পেস্ট লাগানো আছে তাড়াতাড়ি দাঁত ব্রাশ করে আস।আর এসে খাও।খেয়ে রেডি হও আমরা একটু বাইরে ঘুরতে যাব। অনেক দিন তো হলো তোমার কোন চেকাপ করানো হয়নি।আগেও করেছো কি না কে জানে?

প্রবীশ বাবুর এরকম ব্যাবহার দেখে মেঘা কিছুটা নয় পুরো টাই আশ্চর্য হল।কাঁপা কাঁপা হাতে ব্রাশটা নিয়ে বাথরুমে গেল……

#চলবে ………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here