অপ্রিয় শহরে আপনিটাই প্রিয় পর্ব -১০+১১

#অপ্রিয়_শহরে_আপনিটাই_প্রিয়
#লাবিবা_আল_তাসফি

১০.

একের পর এক ম্যাসেজ আসছে। প্রিয়তা কপাল কুঁচকে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। এই নিখিলের সমস্যা কি? এত ম্যাসেজ কেন দিতে হবে? আর সে ম্যাসেজ দিলেও বা প্রিয়তা কেন রিপ্লাই করবে? প্রিয়তা আবারো বইয়ে মন দিল। অবহেলায় পড়ে রইলো ফোনটি আগের স্থানে। এর মাঝে ডোরবেল বেজে উঠল। দরজা খুলতেই দেখল বাড়িওয়ালা দাদু থমথমে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। প্রিয়তা বুঝে না সবসময় এমন থমথমে মুখ করে থাকার কারণ। দিদাকি তাকে আদর যত্ন করে না? প্রিয়তা মিষ্টি হেসে সালাম দিল। জবাবেও দাদু থমথমে মুখে তাকালো।

‘কিছু বলবেন দাদু?’

‘আমার বাড়িতে থাকতে কিছু নিয়ম আছে। সেগুলোই জানাতে এসেছি।’

এমন কাঠকাঠ কথায় প্রিয়তা না চাইতেও বিভ্রান্ত হলো। মানুষ বুঝি শুরুতেই এমন কথা বলে!

‘জ্বি। ভেতরে এসে বসুন?’

লোকটা জবাব দিলো না। তবে হাতের ইশারায় বুঝাল সে এখানেই ঠিক আছে। প্রিয়তা নড়েচড়ে দাঁড়াল। তার কেমন জানি নিজেকে আসামি আর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বৃদ্ধকে জজ বলে মনে হচ্ছে। প্রিয়তার একটা ভুল কথা তার প্রাণ কেড়ে নিবে এমন দমবদ্ধ অনুভূতিতে প্রিয়তা হাঁসফাঁস করে উঠলো। বাড়িওয়ালারা বুঝি এমনই হয়!

‘চাকরি কর নাকি?’

‘জ্বি।’

‘রাত করে বাড়িতে ফেরা চলবে না। সে তুমি যত বড় চাকরিই কর না কেন।’

প্রিয়তা ঝটপট জবাব দিলো,

‘জ্বি না বড় চাকরি করি না। প্রাইমারি স্কুলের গেস্ট টিচার।’

লোকটা চশমার উপর থেকে কপাল কুঁচকে তাকালো। এখানে কপাল কুঁচকানোর কি আছে? প্রিয়তার ইচ্ছা হলো লোকটাকে বলতে,’দাদু আপনার কপালের চামড়া কি ছোট থেকেই অমন কুঁচকানো?’

‘দরজা জানালা আটকাই থাকবে। একা মেয়ে মানুষ। সাবধানতা নিজের মধ্যে। আমি আমার কর্তব্য পালন করলাম মাত্র। আমি এখন যাচ্ছি তুমি দরজায় খিল দাও।’

‘জ্বি দাদু।’
____________

কিছুদিন ধরে আয়াজ ভিষণ ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। প্রিয়তার সাথে তার দেখা হয়না এক সপ্তাহের বেশি। কেবল রোজ রাতে সময় করে দশ মিনিট ভিডিও কলে কথা হয়। দুজন মানব মানবী নিরবে একে অপরের দিকে অপলক তাকিয়ে থাকে। দুজনেই সারাদিন বাদে তার প্রিয় মানুষটাকে দুচোখ ভরে দেখে নেয়। তাদের সকল ক্লান্তি একে অপরের চোখে তাকিয়েই যেন দূর হয়ে যায়। তবে এ নিয়ে দুটো মানুষের কারোর কোনো অভিযোগ ছিল না। সুন্দর করে মানিয়ে নিয়েছে তারা। তবে আজ ঘটনা ভিন্ন। রাত একটা বাজতে চলছে কিন্তু আয়াজের কোনো খোঁজ নেই। কল করলেও রিসিভ হচ্ছে না। চিন্তিত হয়ে সারা ঘর জুড়ে পায়চারি করছে প্রিয়তা। একটুতে উত্তেজিত হওয়া মানুষ নয় সে। তবুও সে উত্তেজিত হয়ে উঠছে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেতে শুরু করেছে। মাথার মাঝে এলোমেলো অগুছালো খারাপ চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। কিছু হলো না তো ছেলেটার!

ঘড়িতে রাত একটা বেজে সাতাশ মিনিট। ঘড়ির কাঁটার টিক টক শব্দ আর মশার গুনগুন গান পরিবেশকে থমথমে করে তুলেছে। প্রিয়তার রুমের লাইটটি এখনো জ্বলছে। ঘুমঘুম চোখে প্রিয়তা মোবাইলের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ দুটো বুঝে আসতে চাইছে যেন। কিন্তু তার অবচেতন মন বলছে‌ এখনি কল আসবে। তার মনের কথা বৃথা যায়নি। নিঃশব্দ কামরার দ্যজা জানালা কাঁপিয়ে বেজে উঠলো ফোন। প্রিয়তার ঠোঁট কোনে খেলে গেল এক টুকরো হাসি। হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে সময় নিয়ে আয়াজ উত্তর দিলো,

‘ক্ষুদা পেয়েছে প্রিয়তা। একটু নিচে আসবে? ভাত আছে?’

প্রিয়তার বুকের ভেতর কেমন করে উঠলো। চোখ ভরা ঘুম যেন নিমিষেই উদাও হয়ে গেলো। শিরশির করে কেঁপে উঠলো দুচোখের পাতা। প্রিয়তা কাঁপা গলায় উত্তর দিলো,

‘আমি আসছি।’

কল কেটে যাওয়ার পরও দু মিনিট থম মেরে বসে রইল সে। আয়াজ ছেলেটা দিন দিন বড্ড পাজি হয়ে যাচ্ছে! কেমন করে ডাকে! “প্রিয়তা!” আবার তুমি করেও বলছে! প্রিয়তা বড় করে শ্বাস নিলো। ব্যস্ত পায়ে রান্না ঘরে যেয়ে প্লেটে ভাত তুলে নিল। ডাল ছাড়া আর কিছুই নেই। ব্যস্ত হাতে একটা ডিম ভেজে নিল। ব্যাস এতেই চলবে।

ল্যাম্প পোস্টের আলোতে ফরমাল পোশাক পরিহিত আয়াজকে প্রিয়তার একজন অতিবসুদর্শন পুরুষ বলে মনে হলো। আয়াজের ক্লান্তিতো মোড়ানো মুখটা তার সৌন্দর্যের কোনো পরিবর্তন আনতে পারেনি। প্রিয়তা এগিয়ে আসতেই আয়াজ গাড়ির ডোর খুলে দিল। প্রিয়তা কোনো প্রশ্ন করলো না। চুপচাপ উঠে বসলো। আয়াজ গাড়ির ভেতর ঢুকে ডোর লক করে দিল।

‘এত রাতে আমার বাসার সামনে কেন?’

‘তুমি ছাড়া দ্বিতীয় কোনো প্রেমিকা নেই আমার তাই।’

আয়াজের উত্তরে প্রিয়তার বুকের ভেতর আবারো ছলকে উঠলো। ছেলেটার কথা এমন কেন? তার প্রত্যেকটা কথা প্রিয়তার বুকের ভেতর কাঁচের মতো গেঁথে যায় তা কি সে জানে না? নাকি জেনে বুঝেই প্রিয়তাকে ঘায়েল করতে এই অস্রের ব্যাবহার!

‘বাড়িতে তোমার মা রান্না করেনি?’

আয়াজ গম্ভীর উত্তর দিলো,

‘আমার মা তোমারও মা হয় প্রিয়তা। এরপর আর কখনো এভাবে বলবে না। মা বলে সম্বোধন করবে। আমার সবকিছু তোমার। ইভেন মা টাও।’

প্রিয়তা বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নাড়াল।

‘খাইয়ে দাও।’

প্রিয়তা পিটপিট করে তাকালো। এই পুচকে তার উপর হুকুম জারি করছে!

‘হাত নেই তোমার? খেয়ে নাও। আর কখনো এমন পাগলামি করবে না। যদি কেউ দেখে নেয় কি হবে বুঝতে পারছ?’

‘বিয়ে করে নিব। প্রবলেম সলভ।’

প্রিয়তা রেগে গেল। সিরিয়ায় ব্যাপারেও ছেলেটার গা ছাড়া ভাব। তার এ ধরণের ব্যাবহার একদম পছন্দ না। প্রিয়তা কিছুটা কঠিন হয়ে বলল,

‘তোমার বাচ্চামি বন্ধ কর আয়াজ। বিয়ে বললেই বিয়ে হয়ে যায় না। তুমি এখনো বাচ্চা রয়ে গেছ। তোমার পরিবার কখনো আমায় মেনে নিবে? আমার যোগ্য সম্মান তোমার পরিবারের কাছ থেকে দিতে পারবে তুমি?’

প্রিয়তা রাগে ফুঁসে চলছে এখনো। আয়াজ একমনে তাকিয়ে থাকলো প্রিয়তার দিকে। হঠাৎ বলে উঠল,

‘নেমে দাঁড়ান প্রিয়তা।’

প্রিয়তা না বুঝতে পেরে আয়াজের চোখে তাকালো। আয়াজ পুনরায় একই কথা আওড়াল।

‘বাহিরে নেমে দাঁড়ান।’

অবুঝের মত প্রিয়তা গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াতে শব্দ করে গাড়ির ডোর বন্ধ করে দিল আয়াজ। জোর শব্দে কেঁপে উঠলো প্রিয়তা। কিছু বোঝার আগেই শো করে গাড়ি নিয়ে হাওয়া হয়ে গেল আয়াজ। খাবার প্লেট হাতে বিস্ময় নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল প্রিয়তা। পরক্ষণে অপমান আর খারাপ লাগায় চোখ থেকে টপটপ করে গড়িয়ে পড়লো পানি। আয়াজের এমন ব্যবহার তীব্রভাবে আঘাত করল প্রিয়তার আত্মসম্মানকে। এই পুচকে ছেলের এত কিসের দাপট? রাগে মুখশ্রী লাল হয়ে এলো। বড় বড় পা ফেলে বাড়ির ভিতর ঢুকে নিঃশব্দে মেইন গেট লক করে নিজের ফ্লাটে চলে এলো সে। রাতে আর ঘুম হলো না। রুমের বাতি নিভিয়ে বারান্দায় এসে বসলো প্রিয়তা। ধোঁয়া ওঠা কাঁপে চুমুক বসাল। তার মুখে আঁধার ছেয় আছে। তার গভীরতা এই রাতের আঁধারকেও হার মানাবে। প্রিয়তা নিজের বিহেভে অবাক হলো। সে কি বদলে যাচ্ছে? এই যে সে আয়াজের উপর রাগ করার চাইতে বেশি মন খারাপ করছে। এটা কি অস্বাভাবিক নয়? তার এখন উচিত ঝটপট আয়াজকে তার সকল সাইট থেকে ব্লক করে দেওয়া। কিন্তু সে তা না করে দেবদাসের মতো চা খেয়ে শোক পালন করছে। দেবদাস! মেয়েরাও দেবদাস হয়? নাকি দেবদাসি!
প্রিয়তা আবারো চায়ের কাপে চুমুক বসাল। তার এভাবে আয়াজকে ছেড়ে দেওয়া চলবে না। ছেলেটা দিনকে দিন চরম বিয়াদপ হয়ে যাচ্ছে। সবটাই শাসনের অভাব!
প্রিয়তা আড় চোখে ফোনের দিকে তাকালো। নাহ এখনো কোনো টেক্সট বা কল আসেনি। প্রিয়তার চোখ ছলছল করে উঠলো। অভিমান হলো খুব। একটা মেসেজ দিলে কি এমন হতো?

চলবে……….

(ভুলত্রুটি, ক্ষমা সুন্দর চোখে দেখবেন।)#অপ্রিয়_শহরে_আপনিটাই_প্রিয়
#লাবিবা_আল_তাসফি

১১.

সূউচ্চ প্রাচীরে ঘেরা বাড়িটা প্রিয়তার ভিষণ পছন্দ হলো। বাড়ির সদর দরজা পেরোতেই সামনে পিচদেওয়া সরু রাস্তা। যার দুধারে বাহারি গাছের সমারোহ। দুতলা বাড়িটার অধিকাংশ জায়গা থেকেই রং খসে পড়েছে। বাড়িটায় যে বহুদিন ধরে রঙের আচর পরেনি তা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। প্রিয়তার বেশি পছন্দ হলো ছোট্ট শান বাঁধানো পুকুর ঘাটটা। টলমলে পানিতে তাকালে নিজের অবয়ব স্পষ্ট দেখা যায়। এতবড় বাড়িটা এই ভর দুপুরেও কেমন ঝিমিয়ে আছে। প্রিয়তা যখন এসবে বিভোর তখন আয়াজ কিছুটা রসিকতা করে বলল,

‘ আপনার নিজগৃহে আপনাকে স্বাগতম প্রিয়।’

‘হুম?’

‘কিছুনা। ভিতরে চলুন।’

আয়াজ হাসে। প্রিয়তা ছোট ছোট চোখে তাকায়। আয়াজ কেন হাসলো সে বুঝতে পারেনা। তবে তার এখন কেমন কেমন লাগছে। সেদিন রাতের ঘটনার পর দুদিন তার সাথে আয়াজের কোনো যোগাযোগ ছিল না। না আয়াজ তার খোঁজ নিয়েছছ আর না সে নিয়েছে। তবে হুটহাট করেই মন খারাপের মেঘ ছেয়ে যেত। চোখের জল ঝড়েছে কয়েকবার। কখনো বা ভিষণ রকম জেদ চেপে বসতো মাথায়। এই পিচ্চি অভদ্র ছেলের সাথে তার আর কোনো সম্পর্ক নেই। পরক্ষনেই হু হু করে কেঁদে উঠত মন। তাকে ভুলে থাকাটা এত বেদনার কেন?
আজ প্রিয়তা দুটো ক্লাস করিয়ে ছুটি নিয়েছে। মনের সাথে সাথে শরীরটাও ভিষণ খারাপ। স্কুল থেকে বেরিয়ে বাসের জন্য দাড়াতেই সেখানে আয়াজের আগমন ঘটে। পরনে তার থ্রিকোটার প্যান্ট এবং হাফ হাতার টিশার্ট। প্রিয়তার বুকের ভেতর দামামা বেজে ওঠে। ছেলেটা এত আকর্ষণীয় কেন? এই যে তার কেমন ঘোর লেগে যাচ্ছে! তার ভেতর পুষে রাখা রাগ গলে যাচ্ছে। প্রিয়তা চোখ সরিয়ে নেয়। এই অভদ্র ছেলের দিকে দ্বিতীয়বার তাকাবেনা সে। আয়াজ এগিয়ে এলো। প্রিয়তার শাড়ির আঁচল তুলে মুখ মুছল। প্রিয়তা‌ হকচকাল। চোখ বড় করে বলল,

‘কি হচ্ছে আয়াজ! লোক দেখছে তো!’

আয়াজ আশপাশে তাকালো। তাদের থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকা দুজন লোক কেমন ভাবে তাকিয়ে আছে। আয়াজ মিষ্টি করে হাসলো। মুখে হাসি ধরে রেখেই বলল,

‘মুখের ঘাম মোছার জন্য বউয়ের আঁচল বেষ্ট। তাই না চাচা?’

লোক দুটো কিছুক্ষণ একে অপরের দিকে তাকিয়ে অন্য দিকে চলে যায়। প্রিয়তা চোখ গরম করে। তবে আয়াজ পাত্তা দেয় না। প্রিয়তার পিছু পিছু বাসে ওঠে। বাস থেকে নামার পর এক প্রকার হুমকি ধমকি দিয়েই সে প্রিয়তাকে বাড়িতে নিয়ে এসেছে। যদিও প্রিয়তাকে এভাবে ধমকে আনা সহজ ছিল না আয়াজের পক্ষে। শাকিলা বেগম কল করে বলায় প্রিয়তা রাজি হয়েছে। তা দেখে আয়াজ প্রিয়তাকে খোঁচাতে বাদ রাখেনি। দুষ্টু হাসি দিয়ে ছোট ছোট করে বলেছিল,

‘কি ভেবেছিলেন? একা বাসায় আপনায় হরণ করতে নিয়ে যাচ্ছি? আপনার ভাবনাগুলোতো ভিষণ দুষ্টু প্রিয়! আপনাকে দেখে তো বোঝা যায় না এত দষ্টু চিন্তা নিয়ে ঘুরছেন!’

প্রিয়তা চোখ কপালে তুলে তাকায়। মুখের কি ভাষা ছেলের! একদম রসাতলে চলে গিয়েছে ছেলেটা!
__________

বর্তমানে আয়াজদের লিভিংরুমে বসে আছে প্রিয়তা। তার সামনের টেবিল জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন রকম খাবার। তার শরীরের তাপ বেড়েছে কিছুটা। কোনো কিছুই খেতে ইচ্ছা হচ্ছে না। খুব ছোট থেকেই অসুস্থ হলে সে খেতে পারে না। খাবার দেখলে বমি বমি পায়। এখনো তার ভিন্ন কিছু নয়। তবুও প্রিয়তা এক টুকরো আপেলে ছোট ছোট করে কামড় বসাচ্ছে। কিছুক্ষণ পরপর শাকিলা তাকে তাড়া দিচ্ছে খাওয়ার জন্য। প্রিয়তা অসহায় চোখে আয়াজের দিকে তাকায়। কিন্তু আয়াজ তার দিকে নজর দিল না। সে তো সোফায় আধশোয়া হয়ে গেইম খেলায় ব্যস্ত।

‘আপনিই কি আমার হতে চলা ভাবী?’

কন্ঠস্বর অনুসরণ করে বা দিকে তাকায় প্রিয়তা। ছিমছাম গঠনের একটা ছেলে হাসিহাসি মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। হাতে ফুটবল। পরনে জার্সি। মুখমন্ডল ঘর্মাক্ত। মাত্রই মাঠ থেকে খেলে ফিরেছে। প্রিয়তা ভিষুম খেল। খুকখুক করে কেশে উঠলো। শাকিলা বেগম ব্যস্ত হলেন। এগিয়ে এসে পানির গ্লাস মুখের সামনে ধরলেন। আয়ানকে চোখ রাঙালেন। আয়ান ঠোঁট উল্টে ভাইয়ের দিকে তাকালো। আয়াজ কপালে ভাঁজ ফেলে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আয়ান মুখ কালো করে বলল,

‘কি করেছি আমি? এভাবে কেন তাকাচ্ছো সবাই?’
কথা শেষ করে পরপর প্রিয়তার দিকে তাকালো আয়ান। মুখ ভার করে শুধাল,

‘নট ফেয়ার ভাবী। কতটা এক্সাইটেড ছিলাম আমি তা তোমার চিন্তা ধারণার বাহিরে। ভেবেছিলাম তুমি আমার পার্টনার হবে। আমরা দুজন মিলে এ বাড়িকে ছোটখাটো একটা সার্কাস বানাব। কিন্তু প্রথম দিনেই তুমি আমার শত্রু বনে গেলে! এটা সত্যিই বেদনাদায়ক।’

আয়ান অসহায় মুখ করে চলে গেল। প্রিয়তা গোল গোল চোখে তাকিয়ে রইল কেবল। শাকিলা হেসে জানালেন,

‘ওর কথায় কিছু মনে করো না। ও আয়াজের ছোট চাচ্চুর ছেলে। আয়ান। ভিষণ দুষ্টু।’

প্রিয়তা হাসলো। সে জানে না ঐই মুহূর্তে কি বলা উচিত তাই হাসিকেই উত্তর হিসেবে বেছে নিল সে। শাকিলা আবারো বললেন,

‘দেখো তোমায় ঢেকে এনে এখন নিজেই ব্যস্ততা দেখাচ্ছি। কিছু মনে করো না। আজ বাড়িতে কেউ নেই। রিতাও তার বাবার বাড়িতে।’

প্রিয়তা হেসে বলল,

‘কোনো ব্যাপার না আন্টি। আমি আপনাকে হেল্প করি? কাজ করতে করতে নাহয় গল্প হবে।’

শাকিলা বেগমের মুখ উজ্জ্বল হলো। মেয়েটার অমায়িক ব্যাবহার তাকে মুগ্ধ করেছে। কি ভিষণ মিষ্টি মেয়েটা! যেন কোন স্বর্গদূত! শাকিলা বেগমের ভিষণ আফসোস হলো। কি হতো যদি মেয়েটার বয়স আর একটু কম হতো? প্রিয়তাকে দেখলে তার বয়স বোঝা যায় না ঠিক। প্রিয়তাকে তার পছন্দ হয়েছে এটাও ঠিক। তবুও তার মনে একটু খচখচানি রয়েই গেলো। মেয়েটা যে তার ছেলের থেকে পাঁচ বছরের বড়! আয়াজের বাবা কি এই সম্পর্কে সম্মতি দিবেন?
__________

গ্রীষ্মের শেষ প্রায়। প্রকৃতি হুটহাট নিজের রূপ বদলে ফেলছে। কখনো ভিষণ রোদ কখনো বা ঝুপঝুপ করে বৃষ্টি। বর্তমানে আকাশে মেঘ করেছে। ভিষণ রকম অন্ধকার। বাতাস বইছে শো শো করে। ভাব এমন যেন এখনি বৃষ্টি নামবে। ভাসিয়ে দিবে এ ধরণীকে। কিন্তু প্রিয়তা জানে বৃষ্টি হবে না। থেমে যাবে কিছুক্ষণের মাঝে। মেঘ কেটে সূর্যি মামা উঁকি দিবে। হেসে বলবে,’হাভ সাম ফান?’

প্রিয়তার কথা সত্যি হলো। মেঘ কেটে গেছে। উজ্জ্বল আলোয় ছেয়ে গেছে সর্বত্র। প্রিয়তা সরল হাসলো। গুনগুন করে গান ধরলো। আজকাল তার খুব সুখ সুখ অনুভব হয়। মাজা অবদি ছড়ানো চুলগুলো হাতে পেঁচিয়ে খোপা বাঁধলো। মনে পড়লো আয়াজ তার চুল দেখে বলেছিল,

‘চুল সামলাতে নিশ্চই আপনার ভিষণ কষ্ট হয় প্রিয়? বিয়ের পর আপনার চুল সামলানোর দায়িত্বটা আমি নিয়ে নিলাম। এই সামান্য কটা দিন নাহয় একটু কষ্ট করে নিন।’

প্রিয়তার ঠোঁটের কোণে হাসি মিলল। আয়াজের কথা মনে পড়লে আজকাল তার ভিষণ লজ্জা লাগে। কেমন করে যেন তাকায় ছেলেটা। একদম বুকে এসে লাগে। প্রিয়তার ফোন বেজে উঠলো। প্রিয়তা ব্যস্ততা দেখালো না। ফের আয়নায় নিজেকে একবার দেখে উঠলো। ধীর পায়ে এগিয়ে বিছানা থেকে ফোন তুলে নিল। ফোনের ট্রেনে আজের নাম্বর ভেসে উঠেছে। প্রিয়তা আয়োজন নাম্বার সেভ করেনি। সেভ করার মতো উপযুক্ত কোনো নাম সে আয়াজকে দিতে পারেনি। তবে নম্বরটা তার ভিষণ পরিচিত।

‘এত দেরী কেন হলো প্রিয়তা?’

‘চুল বাঁধছিলাম।’

‘আচ্ছা।’

এরপর নিশ্চুপ। কিছুসময় পর আয়াজ আবার বলল,

‘একটু বের হতে পারবেন?’

‘যদি বলি না তবেকি বের হতে মানা করবে?’

‘দুঃখীত। না বলে কোনো অপশন আপনার বরাদ্দ নেই। রেডি হয়ে নিন। টাইম থার্টি মিনিট।’

কল কেটে গেছে। প্রিয়তা ফিচেল হাসলো। অতঃপর বসে গেলো পোশাক বাছাইয়ের জন্য। আজকের এই সুন্দর পরিবেশে তাকেও সুন্দর লাগা চাই।

চলবে……..

(ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর চোখে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here