অপ্রিয় পর্ব ২+৩

২+৩
#অপ্রিয়।
#তিতিশ্মা_মুসাররাত_কুহু।
#২য়_পর্ব।

আমার চিৎকার শুনে দিহান উঠে আমার দিকে আসতে থাকে,
আর আমি সাথে সাথেই ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।

কিছু ক্ষণ পর চোখ খুলে দেখি দিহান আমার মুখের উপর পানি ছিটাচ্ছে।

-ওই উঠলি?নাকি থাপ্পড় খাবি?
ওঠ বলছি।
-এ্যাআয়ায়ায়া,
-আবার কাঁদে,এক থাপ্পড়ে দাঁত সব ফেলে দিবো আরেক বার কাঁদলে।
-আপনি আমাকে তুলে এনেছেন কেন?
আমি কি ক্ষতি করেছি আপনার?
আমি আর কোন দিন শাড়ী পরবোনা কথা দিলাম।এই যে সত্যি বলছি আর পরবোনা শাড়ী।আর কোন দিন পরবোনা।
আজো আমার শাড়ীর আঁচল পড়ে গিয়েছিলো বুঝি?তাই আপনি আমাকে তুলে এনেছেন?

বিশ্বাস করুন আমি অন্ধকারে কিচ্ছু দেখিনি।কারেন্ট চলে গিয়েছিলো তো তাই।
আমি যদি একটু দেখতাম যে আমার আঁচল পড়ে গেছে তাহলে আমি সাথে সাথেই আমার আঁচল তুলে ফেলতাম।
প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন।
আমি আর শাড়ী পরবোনা।

কাঁদতে কাঁদতে শাড়ীর দিকে তাকিয়ে দেখি শাড়ীতো ঠিকই আছে।

-এই যে, এই যে, আমার শাড়ীতো ঠিকই আছে।তাহলে আপনি আমাকে তুলে এনেছেন কেন হ্যাঁ?

ও,
সেদিন যে বললেন আমার মত মেয়ের জন্য যুব সমাজ খারাপ হচ্ছে।
তার মানে ওই একদিন আমাকে দেখেই আপনি খারাপ হয়ে গেছেন?
ছিঃ ছিঃ ছিঃ।
আমি না আপনার ছোট বোনের মত?
যেতে দিন আমাকে।

এ্যয়ায়ায়ায়া।

-চুউউউউউউউউউপ!ওই থামবি তুই?
আমার মাথা গরম করিস না।
বকর বকর বকর বকর করতেই আছে।
এত কথা কিভাবে বলিস হ্যাঁ?
একেবারে গলা টিপে ধরবো।জবান এক বারে বন্ধ হয়ে যাবে।

আমি ভয় পেয়ে চুপ হয়ে গেলাম।

-তোর জন্য আমার আজ সব শেষ।সব শেষ হয়ে গেলো আজ আমার তোর জন্য।শুধু মাত্র তোর জন্য সব প্ল্যান মাটি হলো।

-কিসের প্ল্যান?আমি কি করেছি?
-কি করিস নি তুই?
তোকে রত্নার মত শাড়ী কে পরতে বলেছে?
কে বলেছে তোকে বউ সাজতে?
-আমার কোন দোষ নেই দিহান ভাইয়া।
আমাকে তো আম্মু এই শাড়ী এনে দিয়েছেন।আর আম্মুই চেয়েছিলেন আমি যেন ঠিক রত্না আপুর মত সাজি।
সুন্দর লাগছেনা আমাকে খুব দিহান ভাইয়া?

-হুম তোকে একদম ডাইনির মত লাগছে।
ফাজিল মেয়ে কোথাকার।তোর জন্য আজ আমি আমার বউ হারালাম।
-বউ হারালেন মানে?
আপনি বিয়ে করেছেন দিহান ভাইয়া?কংগ্রাচুলেশনস ভাইয়া!তো কোথায় আপনার বউ ভাইয়া?দেখছিনা যে?
-রত্না আমার বউ রত্না।
-ও মাগো!কি বলছেন আপনি?রত্না আপু আপনার বউ?তাহলে কি রত্না আপুর আজ ২য় বিয়ে হচ্ছে?

আপনি কেন তার বিয়ে আটকালেন না?কেন বসে বসে আঙ্গুল চুষছিলেন?
-এক থাপ্পড়ে সব দাঁত ফেলে দেবো।আমি বসে বসে আঙুল চুষছিলাম?আমি তো রত্নাকে আনতে গিয়েছিলাম।আর ভুল করে ওকে আনতে গিয়ে তোকে নিয়ে এসে পড়েছি।
-ছিঃ দিহান ভাইয়া ছিঃ।কেমন স্বামী আপনি নিজের বউকে চিনেন না।
-ওই মাইর খাবি কিন্তু।মেজাজ খুব খারাপ আছে।
-তা, আপনি আপনার বউকে নাকে রুমাল দিয়ে অজ্ঞান করে কিডন্যাপ করতে গিয়েছিলেন কেন?

-আরে কিডন্যাপ না।প্ল্যান তো আমরা দুজনই করে রেখেছিলাম যে বিয়ের একটু আগেই দুজন পালাবো।আমি কারেন্টের লাইন কেটে দিবো আর ও ওয়াস রুমে যাবার কথা বলে ভেতরে আসবে।তারপর আমি ওকে নিয়ে পালাবো।

কিন্তু আমি লাইন কাটার আগেই দেখি কারেন্ট চলে যায়।আর দেখি তোকে পেছন থেকে।ভেবেছি তুই ই রত্না।আর ভাবলাম যদি হঠাৎ করে পেছন থেকে গিয়ে হাত ধরলে ভয় পেয়ে চিৎকার দিয়ে দেয়।তাহলেই তো সবাই দৌড়ে আসবে।
আর সব প্ল্যান পানিতে যাবে।
তাই এই ব্যবস্থা করেছি।
যাতে অজ্ঞান হলেই কোলে করে সহজেই নিয়ে আসতে পারি।

-আমি এটা বুঝলাম না,আপনি রুমালে মেডিসিন কেন মিশিয়ে রেখেছিলেন তাহলে?যেহেতু দুজনের ইচ্ছেতেই পালিয়ে যাবার কথা ছিলো।

-রুমাল কোথায় পেলি তুই?
ওটা তো আমার পায়ের মৌজা ছিলো।

-কিইই?ইয়াক থুঃ।এত ধক এত গন্ধ যে আমি ওটার গন্ধে অজ্ঞান হয়ে গেছি।ছিঃ ছিঃ ছিঃ।

এখন কি করবেন দিহান ভাইয়া?
-কি আর করবো?
কিছুই আর করার নেই আমার।
আমিতো কোলে করে যে নিয়ে এসেছি তোকে,আর মুখ টাও দেখিনি।দেখলেই বা কি হতো,যে আটা ময়দা মুখে,চেনার উপায়ও নেই।
বাসায় এনে দেখি এটা আমার বউ না,এটা তো আমার অপ্রিয় শালী।

-হি হি হি।খুব ভালো হয়েছে।
এখন তাহলে আপুকে নিয়ে আসুন।
-তোর আপু বিয়ে করে এত ক্ষণে তোর আরেক দুলাভাই এর সাথে চলে গেছে।
বিয়ে হয়ে যাবার পর ফোন দিয়ে কেঁদে কেঁদে বল্লো,

-নিমক হারাম বেঈমান,এই ছিলো তোর মনে।তুই তাহলে মুসাররাত কে নিয়ে পালানোর জন্য এত দিন ভাব ধরে ছিলি?সুযোগ খুঁজছিলি?আর আমাকে ঢাল বানিয়ে ফুড়ুৎ হয়ে গেলি।

আচ্ছা তুই ই বল,
যেই মেয়েকে আমি সহ্যই করতে পারিনা।তাকে নিয়ে কেন ফুড়ুৎ হবো আমি?

-আপনি বলেন নি আপুকে?আমিও যে আপনাকে সহ্য করতে পারিনা।
-কিইইই?
-না কিছুনা,
বাদ দিন,তারপর বলুন কি হলো?

-তারপর আর কি?ভুল বুঝে লাইন টা কেটে দিয়ে ওর স্বামীর সাথে চলে গেলো।
আর আমি এই ডাইনিকে নিয়ে বসে আছি।

-আচ্ছা এত সবের কি দরকার ছিলো?

খালামণি আর আংকেলকে বললেই তো হতো।তারা খুশিতে খুশিতে বিয়ে দিয়ে দিতেন।
-বলা হয়েছিলো।তারা রাজি না,আত্মীয়র
মধ্যে আত্মীয়তা করতে চান না তারা।
-ও আচ্ছা, তো এটাই আপনাদের বাসা?
বাসায় কেউ নেই কেন?

-তোর মাথায় দেখছি গোবর ছাড়া কিচ্ছু নেই।
সবাই না বিয়ে বাড়ীতে?
-ওহ তাইতো।
আচ্ছা আমি তাহলে এবার যাই।যা হবার তাতো হয়েই গেছে,ভুল করেছেন আপনারা।মুখে মুখে জামাই বউ না সেজে লুকিয়ে বিয়ে করে রাখলেই পারতেন।
তাহলে আর বউ টাকে এইভাবে হারাতে হতোনা।

আচ্ছা,এখন তাহলে আমাকে দিয়ে আসুন বাসায়।
সবাই হয়তো চিন্তা করছে।

-হুম চল।
-একটা প্রশ্ন ছিলো।
-বল।
আপনি আমাকে আজ তুই তুই করছেন কেন?
আর বার বার শুধু থাপ্পড় মারতে চান কেন?এটা কি আপনার রোগ নাকি?

দিহান এবার চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে বল্লো,

-এখানে কয়টা প্রশ্ন হলো?
-না মানে।
-চলো বাসায় দিয়ে আসি।

দিহান আমাকে নিয়ে গিয়ে বাসার সামনেই নামিয়ে দিলো।

-তুমি যাও,আমি আর ও বাড়ীতে পা রাখবোনা।

আমার আর রত্না আপুর বাসা একটাই।
কারণ,রত্না আপু একদিকে আমার খালাতো বোন অন্য দিকে আবার চাচাতো বোন।
আরকি আমার আংকেলের (চাচ্চু) কাছেই বিয়ে হয়েছে আমার খালামণির।

-আচ্ছা,যান তাহলে।মন খারাপ করবেন না যেন।আর সঅঅরি।

আর আরেক টা কথা,ভালোই হয়েছে রত্না আপুর সাথে আপনার বিয়ে হয়নি।
কারণ আপনাকে আমার একদমই পছন্দ না।অপ্রিয় একজন মানুষ আপনি আমার।
আপনাকে আমার দুলাভাই বলতে হতো।চোখের সামনে থাকতেন প্রায়ই।কি জঘন্য একটা ব্যাপার হতো।তাই যা হয়েছে খুব ভালো হয়েছে।অপ্রিয় মানুষটাকে আজকের পর আর দেখতেও হবেনা,আর দুলাভাইও ডাকতে হলোনা।হি হি হি।

-তবে রে..

আমি হাসতে হাসতে দৌড়ে বাড়ীর ভেতরে ঢুকে গেলাম।

-দাঁড়াও।
-জ্বী আংকেল।
-এ বাড়ীতে তোমার আর কোন জায়গা নেই।
-মানে?
-বেরিয়ে যাও।
-কেন আংকেল?
-কেন না?তুই আমাদের মান সম্মান মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছিস।আমাদের মুখে চুনকালি মেখেছিস।
-কি করেছি আমি খালামণি?
-কি করেছি না?বাড়ী ভরা মেহমানের সামনে আমাদের নাক কেটেছিস তুই।পুরো এলাকার সামনে মান ইজ্জত ডুবিয়ে দিয়ে বলছিস কি করেছি।
-আম্মু, খালামণি আর আংকেল কি বলছে এসব?আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা।
-তোর মা কি বলবে?তোর মায়ের কিছু বলার মত মুখ রেখেছিস?
-যা বেড়িয়ে যা এ বাড়ী থেকে।

আম্মু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছে।
-ও আম্মু তুমি কাঁদছো কেন?

-ওই তুই আমার বোন কে আম্মু বলে ডাকবিনা।
যা তুই তোর নতুন আম্মুর কাছে যা।
এই বলে খালামণি আমাকে দিহানের মায়ের পায়ের কাছে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো।

চলবে…

#অপ্রিয়।
#তিতিশ্মা_মুসাররাত_কুহু।
#পর্ব_৩।

-ওই তুই আমার বোন কে আম্মু বলে ডাকবিনা।
যা তুই তোর নতুন আম্মুর কাছে যা।
এই বলে খালামণি আমাকে দিহানের মায়ের পায়ের কাছে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো।

আমি অসহায় এর মত মাথা তুলে উপরের দিকে তাকাতেই দিহানের মা আমার দু হাত ধরে আমাকে উঠালেন।
-উঠো মা উঠো।
-আমার সাথে সবাই কেন এমন করছে বলতে পারবেন আন্টি?
-দিহান কোথায়?
-সে তো বাসায়।
-চলো আমার সাথে।
-কোথায় যাবো?
-আমাদের বাসায়,
-আপনাদের বাসায় কেন যাবো আমি?

-কেন যাবি মানে?
ওনার ছেলের সাথে পালাতে পেরেছিস।আর এখন ওনার সাথে ওনার বাসায় যেতে সমস্যা না?
-খালামণি কি বলছেন এসব?
আমি কেন পালাতে যাবো দিহান ভাইয়ার সাথে?
আর যদি পালাতামই তাহলে কি আর ফিরে আসতাম?
-আমি কোন কথা বলতে চাইনা,এক্ষুনি বেড়িয়ে যাবি তুই এক্ষুণি।

আম্মু তুমিও কিছু বলবেনা?
-ও কি বলবে?ওর কি কিছু বলার মত মুখ আছে?
-প্লিজ আংকেল,আমাকে এভাবে বেড় করে দিবেন না।আমার কোন দোষ নেই বিশ্বাস করুন।
-বেড়িয়ে যাও।

-চলো মা বাসায় চলো।এখন সবাই রেগে আছে।পরে সব ঠিক হয়ে যাবে।
মাথা ঠান্ডা হলেই আমি তোমাকে দিয়ে যাবো এখানে।

আম্মু একবার আমার কাছে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে ভেতরে চলে গেলো।

আমি শুধু আম্মুকে বললাম,
-তোমার মেয়ে নিরপরাধী আম্মু।

-চলো মা আমার সাথে চলো।

আমি মুখ বুজে সহ্য করে দিহানের মা এবং বোনের সাথে দিহান দের বাসায় চলে এলাম।

আমি চাইলেই পারতাম রত্না আপুর রহস্য টা সবার সামনে খুলে দিতে।
কিন্তু বললাম না,কারণ কারো খারাপ যে আমি চাইনা।

এখন সবাই ভাবতে পারেন,
দিহান ভাইয়া রত্না আপুর ফুফাতো ভাই হলে আমারো তো ফুফাতো ভাই ই হয়।যেহেতু রত্না আপু আমার খালাতো ভাইয়ের সাথে সাথে চাচাতো বোনও।তাহলে আমি কেন দিহান ভাইয়াকে রত্না আপুর ফুফাতো ভাই বলছি।

আর এটাও ভাবতে পারেন,নিজের বোনের ছেলের কাছে কেন বিয়ে দিতে রাজি হলেন না আংকেল।আসলে নিজের মায়ের পেটের বোন হলে হয়তো ঠিকই বোনের ছেলের কাছে নিজের মেয়েকে বিয়ে দিতেন আংকেল।কিন্তু দিহান ভাইয়ার মা তো আংকেলের আপন বোন না।
সেক্ষেত্রে দিহান ভাইয়াও রত্না আপুর আপন ফুফাতো ভাই না।

আংকেল নাকি ব্যবসায়ের কাজে একবার অনেক বড় সমস্যায় পড়েছিলেন,আর সেদিন দিহানের বাবা আংকেল কে অনেক গুলো টাকা দিয়ে সাহায্য করেন।
আর তার কিছু দিন পর দিহানের আব্বু স্ট্রোক করে মারা যান।

আর সেদিন নাকি আংকেল সবার সামনে বলেছিলেন, আজ থেকে আমি দিহানের মায়ের ভাই।দিহানকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলেন,আজ থেকে আমি তোমার মামা।

আমরা গ্রামে ছিলাম বলে কিছুই জানতাম না এসবের।

রত্না আপুরা থাকতো শহরে,আমরা থাকতাম গ্রামে।

আংকেল খালামণি আব্বু আম্মুকে বলতো গ্রামেই তোরা ভালো আছিস।
শহরের বাড়ীতে থেকে কোন মজা নাই।শান্তি নাই।
তোরা ওখানে থাক,আমরা এখানে থাকি।
দুই বাড়ীতে দুই ভাই থাকি।

কিছুদিন আগেই আমরা শহরে আসি।
আব্বু আম্মু চান আমি যেন শহরের কলেজে পড়ি।তাই আম্মুকে নিয়ে আমি শহরে চলে আসি।আব্বু এখন প্রবাসী।আমরা দাদাভাই এর এই শহুরে বাড়ীতে উঠার কিছু দিন পরই রত্না আপুর বিয়ে হয়।

যাইহোক এখন মূল কথায় আসি,

দিহান ভাইয়ার মা আর ছোট বোন যখন আমাকে নিয়ে বাসায় এন্ট্রি করলেন তখন দিহান ভাইয়ার চোখ দুটো চড়কগাছের মত ঘুরতে লাগলো।

-তুমি?তুমি এখানে?

দিহান ভাইয়ার মা ঠাস করে দিহান ভাইয়ার গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিয়ে বললেন,

-পালিয়ে নিয়ে যখন এসেছিলিই,আবার ফেরত কেন পাঠিয়েছিস?
জানিস মেয়েটাকে সবাই যা তা বলা শুরু করেছে।

-আসলে মা তোমরা সবাই যা ভাবছো তা নয়।
-আমি জানি, তুই রত্নাকে পাসনি বলে মুসাররাত কে বিয়ে করে ওই বাড়ীর জামাই হয়ে প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলি,তাইতো?
-আরে না মা।শোনো তো.
-আমার সব কিছু বোঝা শেষ।
আমার মুসাররাত কে খুবই পছন্দ।আর এলাকার লোক জনও জেনে গেছে তোরা দুজন পালিয়েছিস।

তাই আমি চাই তোদের বিয়েটা যত শীঘ্র সম্ভব হয়ে যাক।

-না মা,তা কি করে হয়?
-না না আন্টি,আমি তাকে বিয়ে করতে পারবোনা।
-কেন পারবেনা?ওহ বুঝেছি, তোমাদের বুঝি ঝগড়া হয়েছে?
অমন একটু আকটু ঝগড়া সারাজীবনই হবে,
কারণ আমার ছেলের ঘাড়ের রগটা একটু ত্যাড়াই।

আচ্ছা,আজ আর কোন কথা না বাড়াই।অনেক রাত হয়ে গেছে।
দীনা, যা তোর ভাবীকে নিয়ে তোর রুমে।
যত ক্ষণ না ওদের বিয়ে হয় তত ক্ষণ মুসাররাত তোর সাথেই থাকবে।

-আচ্ছা মা।
চলুন ভাবী?
-আরে কিসের ভাবী?আমি তোমার ভাইয়ের বউ না।
-হি হি,হোন নি তাতে কি হয়েছে?আগামীকালই তো হয়ে যাবেন।

পড়লাম নাকি মসিবতে।
কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিনা আমি,
দিহানের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আমি দীনার সাথে দীনার রুমে চলে গেলাম।

-খারাপ লাগছে আপনার?
-না,ঠিক আছি।আর তুমি আমাকে তুমি করে বলো।আপনি আমার ভালো লাগেনা।তাছাড়া আমরা সেইম এজের
-আচ্ছা ভাবী,তুমি করেই বলবো।
-আহ্ ভাবী ভাবী বলোনাতো,আমি তোমার ভাই এর বউ না।আর না কোন দিন হবো।
-পালানোর সময় মনে ছিলোনা?
হি হি।
-উফ ওটাতো একটা এক্সিডেন্ট ছিলো।
-কেমন এক্সিডেন্ট?
-আসলে দিহান ভাইয়া তো রত্না আপুকে…না থাক কিছুনা।

-এই নাও আমার এই ড্রেস টা পরে নাও ভাবী।
এত ভাড়ী শাড়ী পরে ঘুমাতে পারবেনা।
-হুম।

ড্রেস চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে দীনার সাথে শুয়ে আছি।
-জানো ভাবী,আমার না রত্না আপুকে একটুও ভালো লাগতোনা।
কিন্তু ভাইয়ার পছন্দ,তাই কিছু বলতেও পারিনি।আমার কি,সংসার তো করবে ও।তাই চুপ থেকেছি ভাইয়ার ভয়ে।ভাইয়া যে রাগী।ভয়ে বলতেও পারিনি,ভাইয়া রত্না আপুকে আমার ভাবী হিসেবে পছন্দ না।
-ও আচ্ছা।
-কিন্তু তোমাকে আমার খুব পছন্দ ভাবী।
তাইতো তোমাকে প্রথম বারেই ভাবী বলে ফেললাম।
-আচ্ছা ঘুমাও এখন, অনেক রাত হয়েছে।
-তুমিও ঘুমাও ভাবী,আজকের রাত টাই।
আগামীকাল থেকেই ভাইয়ার সাথে ঘুমাতে পারবে।হি হি হি।

মেজাজ টাই খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
কি থেকে কি হয়ে গেলো।যাকে আমি দুলাভাই ডাকতে অপছন্দ করি,তাকে নাকি প্রিয় ভাবতে হবে।

ও মাই গড!কোন দিনও সম্ভব না এটা আমার পক্ষে।
দিহান আমার অপ্রিয় মানুষ।প্রিয় হবার কোন চান্সই নেই।
সকাল হবার আগেই আমার এ বাড়ী ছেড়ে পালাতে হবে।
নয়তো ঠিক ই দিহানের মা আর বোন দিহানকে আমার গলায় ঝুলিয়ে দিবে।

এখন শুধু ভোর হবার অপেক্ষা।

সারারাত ঘুম হয়নি আমার,কখন আযান দিবে অপেক্ষা করছি।
ভোর হলেই এ বাসা থেকে পালিয়ে যাবো,
নিজের বাসায়ও তো যেতে পারবোনা।
তাহলে যাবো টা কই?
আর যেতে গেলেও টাকা লাগবে,ভাড়াতো লাগবে।

তাই ভোর হতেই আস্তে আস্তে ধীর পায়ে দিহানের রুমে গেলাম।
গিয়েই ওর মানি ব্যাগ খুঁজতে লাগলাম,

ঝুলানো শার্টে খুঁজলাম,প্যান্টে খুঁজলাম।
টেবিলে খুঁজলাম।
কোথাও নেই।
শেষমেস মনে হলো মাথার কাছে কিনা।

মাথার কাছে যেতেই দেখি যেই ভাবা সেই কাজ।
মানি ব্যাগ মাথার কাছে।
ধীরেধীরে হাত বাড়াতে লাগলাম দিহানকে এড়িয়ে মানিব্যাগের দিকে।

হঠাৎ চোখ পড়লো দিহানের ঘুমন্ত মুখটার দিকে।
আবছা আলোয় দিহানের মুখটা কি সুন্দর লাগছে।কি নিষ্পাপ লাগছে ছেলেটাকে।
অথচ জাগন্ত দিহানকে দেখলে আমার রাক্ষস মনে হয়।
আসলে ঘুমন্ত মানুষ মানেই হয়তো সুন্দর।
তাই হয়তো ওকেও ভালো দেখাচ্ছে।আমাকে না জানি আরো কত ভালো দেখায় হুহ।

আমি মানিব্যাগে হাত দিতেই দিহান টুপ করে আমার হাত টা ধরে ফেলে।
আর আমি চিৎকার দিবো মাত্র আর ওর আরেকটা হাত দিয়ে আমার মুখটা চেপে ধরে বলে,

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here