অপ্রেমের গল্পটা যেভাবে শুরু হয়েছিলো পর্ব-১৩+১৪

#অপ্রেমের গল্পটা যেভাবে শুরু হয়েছিলো
#পর্ব-১৩
বিন্তীর ঘুম ভাঙলো জোরে জোরে কথা বলার আওয়াজে। শিশিরের চেচামেচি ছাড়া বেশী কিছু শুনতে পেল না। খানিকটা অবাক হয়ে ভাবলো ও ছাড়া শিশির আর কার সঙ্গে ঝগড়া করছে।

বিন্তী ড্রইংরুমে এসে দেখলো ধুন্ধুমার কান্ড। ফিরোজা খালার সঙ্গে শিশিরের ঝগড়া লেগেছে। শিশিরের এই খালা যে বিন্তীকে খুব একটা পছন্দ করে না সেটা ও টের পেয়েছে। কিন্তু শিশির কে তো ভালোবাসে। তাহলে ঝগড়া কেন করছে!

বিন্তী সেখানে যেতেই শিরিন অসহায় চোখে তাকালো। যার অর্থ হচ্ছে শিশির কে সে কোনোভাবেই সামলাতে পারছে না। বিন্তী জানতে চাইলো কী হয়েছে। শিরিন সেকথা বলার সুযোগ ই পেল না। কারণ দুজনেই সমানতালে গলাবাজি করে যাচ্ছে।

খালা ঝগড়ার এক পর্যায়ে বলতে শুরু করলেন,

“তুই এতোটুকু ছিলি। তোরে কতো কোলে নিছি! আর তুই এখন আমারে অপমান করস!’

শিশিরও বলল,

“আপনি কোলে নিছেন ক্যান? আমি বলছিলাম আপনারে কোলে নিতে! ”

খালা বললেন, জন্মের পর রাত্তিরে ট্যা ট্যা করে কানতি। কত রাত জাগছি।

শিশির মায়ের দিকে তাকিয়ে রাগী গলায় বলল,

“এই মহিলার কোলে দিয়া তুমি ঘুমাইছিলা মা? এখন আমার এসব খোটা শোনা লাগবে!”

শিরিন বলল, অনেক হইছে এখন থাম।

এক পর্যায়ে বিন্তী জোর করে শিশির কে নিয়ে গেল। তাও ঝগড়া থামানো গেল। খালা বিলাপ করে কাঁদছেন আর শিশির ঘরে বসে কান খাড়া করে সব শুনে একটা করে জবাব দিয়ে আবারও ঘরে আসছে।

বিন্তী সামলানোর চেষ্টা করেও পারলো না। ঝগড়াঝাটি থামার পর বিন্তী শিশির কে বলল,

“বাপরে! তুমি তো পাড়ার মহিলাদের মতো ঝগড়া পারো। ”

শিশির তখনও রাগে ফুসছে। বলল,

“অনেক সহ্য করছি। খালা বলে অনেক ছাড় দিছি শাকচুন্নী টা’কে। ”

“ছিঃ ছিঃ! এসব কী বলছ!”

“সত্যি। ভালো করে খেয়াল করে দেখো, পান খাওয়া লাল দাঁত বের করে হাসলে শাকচুন্নীর মতো লাগে। শাকচুন্নীও ওর থেকে সুন্দর। ”

শিশিরের কথা বলার ধরনে বিন্তী হেসে ফেলল। শিশির বলল,

” এতো হেসো না তো। মেজাজ খারাপ কিন্তু। ”

“তোমার মহিলাটাইপ ঝগড়াটা তুষার মিস করে ফেলল। ইশ! ”

শিশির রাগী গলায় বলল,

“তুমি এই মুহুর্তেও আমার সঙ্গে ফাজলামির ম্যুডে আছ? আমার মেজাজ কিন্তু খুব খারাপ। একটা ঘুষি মেরে কিন্তু তোমার নাক, মুখ ভচকে দেব। ”

বিন্তী হেসে বলল, আচ্ছা সরি। শান্ত হও এখন। কফি খাবে?

শিশির বিড়বিড় করে বলল,

“শাকচুন্নিটা’র মাথা চিবিয়ে খেতে পারলে ভালো হতো। ”

বিন্তী শুনতে পেয়ে আবারও হাসতে শুরু করলো। শিশির সেই হাসি দেখে মনে মনে বলল,

“হুহ! হাসি আর থামে না! এতো যুদ্ধ যে সব ওনার জন্য তা যদি একটু বুঝতো। ”

***
শিশিরের খালা গলাবাজি বন্ধ করে খানিকক্ষন চুপ ছিলেন। যেই শিশিরের বাবা বাড়ি ফিরলেন অমনি তার মরাকান্না শুরু হলো। বিন্তী দৌড়ে এসে শিশির কে বলল,

“শিশির আজ তো তুমি শেষ। ”

শিশির গান শুনছিল। হেডফোন নামিয়ে রেখে বলল,

“কেন?”

“খালা তো চাচাকে দেখে খুব কাঁদছে। ”

“তো?”

“বুঝতে পারছ না? তোমার নামে একশ নালিশ ইতিমধ্যে করা শেষ। ”

শিশিরের আবারও রাগ হলো। এরমধ্যে শিশিরের বাবা ও’কে নাম ধরে ডাকাডাকি শুরু করলো। বিন্তী বলল,

“যাও। দেখো নাক খত দিতে হয় কী না।”

শিশির বিন্তীর দিকে তাকালো রাগী চোখে। বিন্তী বলল,

“তাড়াতাড়ি যাও। এরপর শাস্তি আরও বাড়বে।”

শিশিরের বাবা শিশিরের উপর খুব রাগ করলেন। খালা ইনিয়ে বিনিয়ে কেঁদে কেটে অনেক নালিশ করলেন। শিশির চুপচাপ হজম করলো। বাবার নির্দেশমতো খালার কাছে মাফ চেয়ে ঘরে এলো।

ঘরে আসতেই বিন্তী জিজ্ঞেস করলো,

“আচ্ছা খালার সঙ্গে এতো ঝগড়া কেন করলে শিশির। ”

শিশির এমনিতেই রেগে ছিলো। রাগের সময় লোকের ভালো কথাও ওর কাছে খারাপ লাগে। বিন্তীকে বলল,

“তুমি চুপ করে না থাকলে এখন কিন্তু ভয়ংকর কান্ড ঘটাবো। ”

বিন্তী চুপ করে রইলো। আর কথা বাড়ালো না। শিশিরের রাগে গা জ্বলছে। এতো ঝগড়াঝাটির পর মাফ চাইতে হলো ভন্ড মহিলার কাছে। শেষ পর্যন্ত উনিই জিতে গেল। সারারাত মেজাজ খারাপ নিয়ে কাটালো। ভালো করে ঘুমালোও না। বিন্তী একবার জেগে দেখলো শিশির পায়চারি করছে। বলল,

“শিশির ঘুমাও। মাথা ঠান্ডা করো। ”

শিশির দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

“তুমি চুপচাপ ঘুমাও। নাহলে মেরে মুখ ভেঙে দেব। তারপর তোমাকেও ডাইনির মতো লাগবে। ”

বিন্তী নিঃশব্দে হেসে ঘুমিয়ে পড়লো।

***
পরদিন সকালে শিশিরকে ঘুম থেকে উঠে বিন্তী দেখতে পেল না। ভাবলো রেগেমেগে হয়তো বাইরে গিয়ে থাকছে। কিন্তু ঝামেলা ঘটলো অন্য জায়গায়। সাদাসিধা ভালো মানুষ বুয়া এসে জানালেন তিনি আর এই বাড়িতে কাজ করবেন না। শিরিন আকাশ থেকে পড়লেন। বুয়া ওদের সঙ্গে কাজ করছে প্রায় চৌদ্দ বছর ধরে। বুয়া কেঁদে কেটে যা বলল তার সারমর্ম এই যে, এই বাড়িতে তার কোনো সম্মান নেই। ছোট বেলা থেকে শিশির তুষার কে ছেলের মতো দেখেছে তবুও এই বাড়ির লোক তাকে ভালো চোখে দেখে নি। সে এই বাড়িতে আর কাজ করবে না।

শিরিন বুঝলো যে এর পেছনে শিশির আছে। শিওর হবার জন্য বিন্তীকে জিজ্ঞেস করলো,

“শিশির ঘরে নেই তাই না?”

“হ্যাঁ। সকালে কোথায় যেন বেরিয়ে গেছে। ”

“দেখেছ বদমায়েশ টার অবস্থা! ”

“কিন্তু আমি তো কিছু বুঝতে পারছি না। এক্সাক্টলি কী হচ্ছে!”

শিরিন আর বোঝাতে গেল না। এমনিতেই ব্যাপার টায় বিন্তী আছে। ওর খারাপ লাগবে ফিরোজার কথা শুনে। তাই চুপ করে রইলো।

বুয়াকে অনেক বুঝিয়েও লাভ হলো না। ঝামেলার আভাস পেয়ে ফিরোজা ঘর থেকে এলেন। এসে বুয়ার মরাকান্না দেখে শিরিন কে বললেন,

“কাজের লোক রে লাই দিলে যা হয়। এই সব মানুষ রে রাখতে হয় পায়ের কাছে। ”

বুয়া আরও ক্ষেপে গেলেন। লেগে গেল ফিরোজার সঙ্গে। বুয়াও বিন্তীর সামনে ফিরোজার চুরির কাহিনি তুলে ধরলো। ফিরোজাও মারমুখী হয়ে গেছে। হাত উচিয়ে গেছেন বুয়াকে মারতে। বুয়া আরও চেচামেচি শুরু করলো। আশপাশের ফ্ল্যাটের লোকজন ও চলে এলো। লোকজন দেখে বুয়া বলল ফিরোজা তার গায়ে হাত তুলেছে। সেটা শুনে কেউ কেউ আবার পুলিশ ডাকতে চাইলো। অবস্থা বেগতিক দেখে শিরিন বলল,

“আপা তুমি এক্ষুনি তৈরী হয়ে নাও। বড় ভাইজানের বাসায় গিয়া থাকো। টাকা পয়সা যা লাগে আমি দেব। ”

ফিরোজা কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন,

“সামান্য বান্দিছান্দির জন্য তুই আমারে বাড়ি থেকে বের করে দিতাছস?”‘

“না। আমার সংসারের ঝামেলা এড়াতে। আর তোমার তো বয়স হইছে। স্বভাব গুলা পাল্টাও। আমি তো বোন দেখে এতকাল চুপ ছিলাম। ছেলেরা বড় হইছে। ওদের মুখে লাগাম নাই তাই তারা চুপ থাকে। ”

ফিরোজা কাঁদতে কাঁদতে বিদায় নিলো। বিন্তী এগিয়ে দিতে গেলে এমন ভাবে তাকালো যে চোখ দিয়ে ভষ্ম করে দিবে।

***
শিশির বাড়ি ফিরে আয়েশ করে নাস্তা করলো। শিরিন বলল,

“আমার বোন চলে গেছে। এখন শান্তি?”

শিশির খেতে খেতে বলল, হু।

তারপর বিন্তীকে ডেকে বলল, তোমরা দুজনেই তো ভাব করো কেউ কাউকে সহ্য করতে পারো না। কিন্তু আজ তো অন্য কাহিনী দেখলাম।

বিন্তী বুঝতে না পেরে বলল,

“বুঝলাম না চাচী!”

“কাল আপা তোমাকে নিয়ে দুটো নেগেটিভ কথা বলেছে। তাতে এতসব কাহিনী। এখন বুঝছ?”

বিন্তী অবাক চোখে শিশিরের দিকে তাকালো। শিশির তখনও খেতে ব্যস্ত। শিরিন বলল,

“কাল যেন আমার বুয়া ঠিক সময়ে আসে বিন্তী। ”

শিরিন চলে যাবার পরও বিন্তী শিশিরের দিকে তাকিয়ে রইলো। শিশির চোরা চোখে একবার বিন্তীকে দেখলো। মনে মনে বলল,

“হে আল্লাহ আমাকে দিয়ে এসব কেন করাচ্ছো? এই মেয়েটা এখন প্রশ্ন করে করে মেরে ফেলবে তো। ”
#অপ্রেমের গল্পটা যেভাবে শুরু হয়েছিলো
#পর্ব-১৪
তুমুল ঝগড়াঝাটি, এক ফোটাও দেখতে না পারা অসভ্য, বেয়াদব মেয়েটার জন্য শিশিরের বুকে এক সমুদ্র ভালোবাসা জন্ম নিলো। এও কী হয়! মেয়েটাকে শিশিরের ভীষণ ভালো লাগে। বারান্দায় বসে আনমনে ডায়েরিতে কীসব যেন লিখে আজকাল। শিশিরের খুব জানতে ইচ্ছে করে সেখানে কী লেখা হয়! সেখানে কী মেয়েটা নিজের কথা লিখে! শিশিরের কী জায়গা হবে কোনোদিনও সেই ডায়েরির পাতাগুলোতে!

শিশির বিন্তীর প্রেমে পড়েছে। প্রেম টা হুট করে হয় নি সিনেমার মতো। হঠাৎ এসে বুকে কাঁপুনিও জাগায় নি। বরং দিনে দিনে একটু একটু করে প্রেমে পড়েছে। শুরুটা কীভাবে হয়েছিল সেটাও মনে পড়ে না। শুধু এইটুকু জানে যে তর্কে জিতে যাওয়া, ঠাস ঠাস কথা বলা বয়সে একটু বড় মেয়েটাকে শিশির এখন ভালোবাসে।

ভালোবাসা হয়েও ব্যাপার টা বড্ড জ্বালার হয়ে গেল। ইচ্ছে করে সারাদিন তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে। দিনের বেলা সেটা সম্ভব না হলেও রাতের বেলা সম্ভব হয়। শিশির রাত জেগে ড্রিম লাইটের আলোয় বিন্তীকে দেখে। একদিন অবশ্য ধরাও পড়ে গেল। বিন্তী জেগে উঠে বলল,

“কী হয়েছে? তাকিয়ে আছ কেন?”

শিশির ভারী লজ্জা পেল। সেই সঙ্গে অপ্রস্তুতও হলো। বলল,

“কই তাকিয়ে আছি। ঘুম ভেঙে গেছে তাই চোখ খুলে রেখেছি। ”

বিন্তী বলল, ওহ।

“কেন তুমি ভাবছিলে আমি তোমাকে দেখছিলাম!”

“না তা ভাবব কেন?”

“হ্যাঁ সেটা ভাবতে যেও না। আমি যেমন নাটোরের কাঁচা গোল্লা না, তুমিও তেমনি বগুড়ার দই না। ”

বিন্তী হেসে ফেলল। বলল,

“রাত বিরাতে তোমার তো দেখছি ঝগড়া করার ম্যুড আছে ভালোই। ”

বিন্তী পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো। শিশিরও পাশ ফিরলো। অপেক্ষা করলো কখন বিন্তী এদিকে ফিরবে। অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়েও পড়লো।

***
শিশিরের আজকাল আর বাইরে যেতেও ভালো লাগে না। বন্ধু বান্ধব, আড্ডা সব বিরক্ত লাগে। বাড়িতে থাকলেও সারাদিন যে বিন্তী চোখের সামনে থাকে এমন না। মায়ের সঙ্গে থাকে কিংবা নিজের কাজে ব্যস্ত থাকে। আজকাল আবার পড়াশোনাও করছে। এতো পড়ে কী লাভ কে জানে! আর পড়াশোনার বা এতো কী দরকার কে জানে!

সকালে ঘুম থেকে উঠে আজ বিন্তীকে দেখতে পেল না। আজ ছুটির দিন। ছুটির দিনে বাড়িতে বাবাও থাকে দুপুর পর্যন্ত । শিশির ডাইনিং টেবিলে খেতে বসে জিজ্ঞেস করলো,

“আজ বাড়ি এতো ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। বাকীরা কোথায়?”

শিরিন বলল,

“বিন্তীকে খুঁজছিস? ও তো বাড়িতে নেই। ”

“কোথায় গেছে?”

“ওর ইউনিভার্সিটিতে গেছে। কী যেন কাজ আছে। ”

শিশির অবাক গলায় বলল,

“আমাকে তো কিছু বলে গেল না।”

“তোকে আবার কী বলে যাবে?”

শিশির আমতা আমতা করে বলল,

“আমাকে বললে আমিও যেতে পারতাম। একা যাবার দরকার ছিলো না। ”

“একা না তো। তুষারও গেছে। ”

শিশিরের মাথায় আগুন জ্বলে উঠলো সঙ্গে সঙ্গে। তুষার কে নিয়ে গেল। অথচ ও’কে একবার বলল না পর্যন্ত! শিশির না খেয়ে উঠে গেল। শিরিন ডাকাডাকি করলেও পাত্তা দিলো না। ঘরে ফিরে সঙ্গে সঙ্গে বিন্তীকে ফোন করলো। বিন্তী ফোন তুলল না। শিশির একবার, দু’বার না পুরো ছাব্বিশ বার ফোন করলো। সাতাশ বারের ফোন টা তুলে বিন্তী বলল,

“কী হয়েছে শিশির?”
বিন্তীর গলায় আতঙ্কের ছাপ। এতো বার ফোন দেখে ভাবলো বাড়িতে কিছু একটা ঘটেছে। শিশির দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

“তোমার বাইরে যেতে হবে সেটা আমাকে বললেই পারতে। আমি তো বাড়িতে বসেই থাকি। ”

“কেন কী সমস্যা? তুষার আছে তো আমার সঙ্গে। ”

শিশির কোনো কথা খুঁজে পেল না। বলল,

“তুষারের পড়াশোনা আছে না! ও তো ব্যস্ত থাকতেই পারে।”

“ও ব্যস্ত ছিলো না। থাকলে বলতো। ”

“ব্যস্ত না থাক, পড়াশোনা তো আছে। পড়াশোনা তো সব আলমারিতে ভরে রেখেছে দেখছি। আজ বাসায় আসুক। ”

বিন্তী অবাক গলায় বলল, ঘুম থেকে উঠে কীসব আবোল তাবোল কথাবার্তা বলছো। তুষার কতটা পড়ুয়া ছেলে তা আমি জানিনা!

“একদম তর্ক করবে না। আর তোমাকে এতবার কল করতে হলো কেন! নিশ্চয়ই ফোন সাইলেন্ট ছিলো? যদি ফোন সাইলেন্ট ই রাখবে তাহলে ফোন চালানোর কী দরকার?”

বিন্তী দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

“বাকীটা বাসায় এসে শুনব। ঝগড়া আপাতত মুলতবি রাখো। বাসায় এলে এখান থেকেই শুরু করবো। ”

শিশিরের মেজাজ খারাপ হয়ে গেল৷ রাগী গলায় বলল,

“ফোন রাখো ফাজিল মেয়ে।”

বলে নিজেই ফোন টা কেটে দিলো।

***
সারাদিন শিশিরের সময় কাটলো বিরক্তির মধ্যে। এর মধ্যে শিরিন কে গিয়ে তুষারের নামে একগাদা নালিশ করে এলো। তুষার একদম ই পড়াশোনা করে না, শুধু আড্ডা দিয়ে বেড়ায়। এরকম তো আর চলতে দেয়া যায় না। সবকিছুর একটা লিমিট আছে। শিরিন সন্দিহান গলায় বলল,

“তুষারের পড়াশোনা নিয়ে তোর এতো চিন্তা!”

“একটা দায়িত্ব বোধ থেকে বলছি। পড়াশোনার জন্য এতো টাকা খরচ করছে অথচ পড়ছে না। এসব কী! ওর শাসন দরকার। ”

“আচ্ছা। ”

মায়ের সঙ্গে কথা বলে এসে কিছুসময় গান শোনার চেষ্টা করলো। পছন্দের গান যেগুলো দিনে দশবার শুনলেও বিরক্ত হয় না সেগুলো শুনে আজ মেজাজ খারাপ হলো। এসব কী লিরিক্স! লজিকলেস যত্তসব গান।

এরপর মুভি দেখার চেষ্টা করলো। সেখানেও আরেকদফা মেজাজ খারাপ হলো। নায়ক নায়িকার মাখোমাখো প্রেম অথচ নায়িকার বাবা অন্য এক জায়গায় মেয়ের বিয়ে ঠিক করেছে। পরিচালক এসব কী জিনিস বানাচ্ছে। দুটো মানুষের প্রেমের মধ্যে বাবাকে ভিলেন বানানোর কী দরকার। বাবা থাকবে তার জায়গায়। সে কেন মেয়ের প্রেমের বিষয়ে নাক গলাবে। রেগেমেগে পরিচালক কে গালাগাল করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিলো। মোট কথা বিন্তীর জ্বাল অন্যজায়গায় দেখাচ্ছে।

এভাবে দুপুর টা কেটে গেল। বিন্তীর কাছে দ্বিতীয় বার ফোন দিতে সংকোচ হচ্ছে তাই ফোন করলো তুষার কে। তুষার ফোন তুলে ব্যস্ত গলায় বলল,

“এখন খাচ্ছি পরে ফোন দিচ্ছি। ”

বলেই সঙ্গে সঙ্গে ফোন কেটে দিলো। মেজাজ যেটুকু ভালো ছিলো সেটুকুও খারাপ হয়ে গেল মুহুর্তেই। ঠিক তখনই ম্যাসেঞ্জারে তুষার কয়েকটা ছবি পাঠালো। যেখানে ও বিন্তী আর একটা মেয়ে খাচ্ছে। বিন্তী আবার সেলফিতে হাসি মুখে পোজ দিচ্ছে। শিশিরের গা জ্বলে যাচ্ছে। খেতে গিয়ে এতো ছবি তোলার বা কী আছে! আর বিন্তীর সঙ্গে তো ওর একটাও সেলফি নেই। ঝুম্পাকে দেবার জন্য যেটা তুলেছিল সেটাও তো ডিলিট করে দিয়েছিল। আর তুষারের সঙ্গে এতো ছবি থাকবে কেন!

শিশিরের সারা দিন টাই খারাপ গেল৷ বিকেল হবার পর মা’কে গিয়ে বলল ওদের খোঁজ নিতে। শিরিন বলল,

“খোঁজ নিয়ে কী হবে! কাজ শেষ হলেই চলে আসবে। ”

শিশির এবার মায়ের উপর মেজাজ দেখাতে শুরু করলো। বলল,

“তুমি এমন কেয়ারলেস হয়ে থাকলে সংসার রসাতলে যাবে। তুমি না বিন্তীর শাশুড়ী। এতো প্রশ্র‍য় কেন দাও?”

“প্রশ্রয় কখন দিলাম?”

“দিচ্ছো তো। একটু কঠিন হও। ওই সিরিয়ালগুলো দেখে অন্তত শিখো। ”

“তুই একটু শেখ তাতেই হবে। আমার শিখতে হবে না। ”

“এতো প্রশ্রয় দিও না। মাথায় উঠে শেষমেস পায়খানা করবে দেখে নিও। ”

শিরিন স্তম্ভিত হয়ে গেল। এসব কী কথাবার্তা! ছিঃ!

রাগী গলায় বলল,

“অশিক্ষিত, মূর্খ কী আর গায়ে লেখা থাকে। কথাবার্তায় বোঝা যায়। ”

“আমি মূর্খ? ”

“মূর্খ না বলে কী বলব? পাগল? পাগলও তোর চেয়ে ভালো। মেরে মুখ ভেঙে দেয়া দরকার। ফাজিল কোথাকার। ”

শিশির কিছুক্ষন রাগে ফোসফাস করে ঘরে চলে গেল।

তুষার ফিরে এলো সন্ধ্যার দিকে। বিন্তী আসে নি। ওর বন্ধুর কাছে থেকে গেছে। বন্ধু জোর করায় শিরিন কে ফোন করে পারমিশন নিয়েছে। শিশির কীভাবে রিয়েক্ট করবে বুঝতে পারলো না। কিছু সময় তুষারের দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। তারপর বেরিয়ে গেল। শিরিন জিজ্ঞেস করলো,

“কোথায় যাচ্ছিস?”

“বিন্তী ছেমরিটা’ কে আনতে। ”

তুষার অবাক চোখে একবার শিশিরের দিকে একবার মায়ের দিকে তাকালো। শিরিন বলল,

“না কোথাও যাবি না। ও থাকুক যেখানে ইচ্ছা। ”

শিশির শুনলো না। চলে গেল। শিশির যাবার পর তুষার বলল,

“ও তো জানেই না যে ভাবী কোথায় আছে!”

শিরিন বলল, মাথা পুরোপুরি গেছে। এমন বউপাগল ছেলে আজ অবধি একটাও দেখিনি।

চলবে….
চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here