অবন্তর আসক্তি পর্ব ২৫+২৬

#অবন্তর_আসক্তি
#পর্ব_২৫
#Sharmin_Akter_Borsha
________
“ চাচি আম্মো এই মেয়েকে কাজকর্ম শিখাও না কেন? এর তো বিয়ে হবে না আজব সারাদিন খেয়ে বসে দিন কাঁটায়। ”

ডাইনিং টেবিলে পায়ের উপর পা তুলে হালুয়া খেতে খেতে বলল অভ্র। সামনের চেয়ার থেকে কাটা চামচ ছুঁড়ে ফেলল তিন্নি অভ্রর দিকে ও কিছুটা ঝুঁকে পরল টেবিলের পাশে চামচটা মেঝেতে পরে টুংটাং শব্দ তুলল। অভ্রর পেছনে দাঁড়িয়ে আছে বর্ষা তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। রান্নাঘর থেকে বের হয়ে আসল অভ্রর মা তিনি ওর মাথায় গুঁতো দিয়ে কর্কশকন্ঠে বলে উঠল, “ তুই না জেনেই একটু বেশি বেশি বকবক করিস। কে বলেছে আমাদের মেয়ের বিয়ে হবে না শুনি। ”

অভ্র এক বাক্যে উত্তর দিলো, “ কেনো আমি বলেছি। ”

“ কেনো বলেছিস শুনি কারণ কি? ” অভ্রর আম্মু বলল।

“ রান্না বান্না জানে না তাই বিয়ে হবে না। ” চামচ দিয়ে হালুয়া খেতে খেতে বলল।

রান্নাঘর থেকে আসলেন রিয়ার আম্মু তিনি বললেন, “ তুমি যে মজা করে খাচ্ছো। যে খাবারের এত প্রশংসা করছো এগুলো কে রান্না করছে শুনি? ”

ডোন্ট কেয়ার এটিটিউট নিয়ে অভ্র বলে উঠল,“ তোমরা ”

টেবিলের উপর চামচ দিয়ে টুংটাং শব্দ তুলে তিন্নি বলল, “ আজ্ঞে নাহহ। টেবিলে যে এত সাজানো পরিপাটি সকল খাবার দেখছো এগুলো একটাও আম্মু বা চাচি আম্মুরা কেউ করেনি। এগুলো সবকিছুই ভোর পাঁচ টা বাজে ঘুম থেকে উঠে বর্ষা নিজে একা রান্না করেছে। আর সেইসব খাবার তুমি কিছুক্ষণ পূর্বে সবার আগে টেস্ট করে এত এত প্রশংসা করেছো। ”

তিন্নির কথা শুনে বিষম খেলো অভ্র পেছন থেকে এগিয়ে আসল বর্ষা।
টেবিলের উপর থেকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিলো অভ্রর দিকে গ্লাসের অর্ধেকের বেশি পানি ঢকঢক করে খেয়ে সে বিমর্ষ কন্ঠে বলল, “ তাহলে বিয়ে হবে ”

বলে অভ্র ঘাড় ঘুরিয়ে পাশে তাকালো যে পানি দিলো তাকে থ্যাঙ্কস জানানোর জন্য কিন্তু পাশে তাকাতে তার চোখ কপালে উঠে যায়। রাগে রক্তচক্ষু নিক্ষেপ করে তাকিয়ে আছে বর্ষা অভ্রর দিকে। তা দেখে শুকনো ঢোক গিলল অভ্র আমতা আমতা করে বলে উঠল, “ তুতুতুতু, তুই কখন এ্যলি? ”

বর্ষা টেবিলের উপর থেকে পানির জগ নিয়ে সোজা অভ্রর মাথার উপর ঢেলে দিলো। থতমত খেয়ে গেলো সকলে থমথমে হয়ে তাকালো। অভ্র মুখ কিছুটা হা করে বর্ষার দিকে তাকালো অভাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে সে, বর্ষা রাগী গলায় বলে উঠল, “ যখন তুমি বলছিলে আমার বিয়ে হবে না তখন। ”

বলে ধুপধাপ পা ফেলে কিচেনে চলে গেলো বর্ষা। অভ্র দুইদিকে মাথা নাড়ালে চুলের ছিটেফোঁটা পানি মেঝেতে টুপটুপ করে পরছে। অভ্র এক চামচ হালুয়া মুখে দিয়ে বলল, “ দেখেছো চাচি আম্মু তোমার মেয়ের বিয়ে করার শখ মারাত্মক লেভেলের। বিয়ে হবে না বলেছি বলে আমাকে ভিজিয়ে দিলো। ”

ফ্রিজ খুলে দুইটা কাঁচামরিচ বের করে চিবিয়ে চিবিয়ে খেতে লাগল বর্ষা। তখনই কিচেনে উপস্থিত হয় তিন্নি ও অভ্র বর্ষাকে কাঁচামরিচ চিবিয়ে খেতে দেখে অভ্র পা বাড়ালে তিন্নি ওর হাত ধরে সরু কন্ঠে বলে, “ এখন যাস না ”

“ কিন্তু ওর তো ঝাঁল লেগেছে দেখছিস না কাঁদছে ”
অভ্র বলল।

“ তোকে আমি আগেই বলেছি ওকে রাগিয়ে দিস না। ওর রাগ সম্পর্কে তোর কোনো ধারণা নেই। ওর যখন মাত্রারিতিক্ত রাগ হয় তখনই ও ঝাঁল সহ্য করে হলেও কাঁচামরিচ খায়। এতে চোখের জল গড়িয়ে পরলেও ওর কিছু যায় আসে না। মরিচ খেলে নাকি ওর রাগ কমে। ” তিন্নি অভ্রর হাত ধরে বলল।

তিন্নির হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে অভ্র কর্কশকন্ঠে বলল, “ কিন্তু আমার যায় আসে আলবাত যায় আসে। তুই জানিস সব সবকিছু তারপরেও কিভাবে ভাবলি আমি ওকে এভাবে কষ্ট পেতে দেখে সহ্য করে নেবো? ”

বলে অভ্র বর্ষার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো ঝাঁল সহ্য করতে না পেরে চোখ বন্ধ করে নিয়েছে তবুও কাঁচা মরিচ চিবিয়ে যাচ্ছে। বর্ষার ঠোঁট জোড়া এমনিতে হালকা লাল ঝাঁলে দ্বিগুণ লাল হয়ে গেছে। হাত থেকে কাঁচামরিচ টেনে নিয়ে নিলো অভ্র ফ্লোরে ছুঁড়ে ফেলে দিলো। চোখ জোড়া খোলে তাকালো বর্ষা অশ্রুসিক্ত নয়নে অস্পষ্ট দেখছে সে। অভ্র কে সামনে দেখে কেঁদে উঠল বর্ষা। অভ্রর বুকের উপর হাত রেখে পেছনে ধাক্কা দিয়ে কান্না ভেজা কন্ঠে বলল, “ আমার মরিচ ফেললে কেনো? ”

অভ্র বর্ষার দুই হাত শক্ত করে ধরে নিচু কন্ঠে বলতে শুরু করল, “ সরি বর্ষ্যু আমাকে ক্ষমা করে দে। আমি আর কখনো তোকে রাগাবো না। প্রমিস করছি কখনো তোর পেছনে লাগবো না৷ আমার উপর রাগ করে তুই নিজেকে কষ্ট দিস না আমি সহ্য করতে পারি না। এভাবে কাঁচা মরিচ চিবিয়ে খেতে তোকে কোন পাগলে শিখিয়েছে? ”

বর্ষা অভ্রর হাত ছাড়াতে ছাড়াতে বলল, “ হ্যাঁ আমি পাগল হইছে খুশি এখন ছাড়ুন আমার হাত ”

বললে অভ্র এক টানে বর্ষাকে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে নেয়। নিজের আষ্টেপৃষ্টের সাথে জড়িয়ে নেয়৷ বর্ষা এবার আরো জোরে জোরে কেঁদে উঠল।

অভ্র বর্ষার কানে কানে ফিসফিস করে বলল, “ তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে। কান্না বন্ধ করলে দিবো। ”

বর্ষার কান্নার আওয়াজ কমে গেলো নাক টেনে টেনে বলল, “ কি সারপ্রাইজ? ”

অভ্র বর্ষার হাত ধরে নিজের সামনে দাঁড় করালো। বর্ষার অশ্রু ভেজা মুখটি দেখে সে সশব্দে হেসে উঠল, ঠোঁটের কোণে মৃদুহাসি ফুটিয়ে মাথা নিচে করে ফেলল বর্ষা লজ্জায় লাল হয়ে গেছে তার গাল। অভ্র হাসি কোনোরকমে থামিয়ে বলল, “ তোকে এখন পুরো পেত্নী লাগছে ”

বলে পেটে হাত দিয়ে হাসতে লাগল। অবশ্য বর্ষার বুঝতে বাকি নেই। অভ্র এমন লাগাম ছাড়া হাসছে কেনো? কেননা, বর্ষা কান্না করায় ওর চোখের কার্নিশের কাজল ও অশ্রু মিশ্রিত হয়ে দুই গালে ল্যাপ্টে রয়েছে।

বর্ষা অভিমানী কন্ঠে বলল, “ কি সারপ্রাইজ? ”

অভ্র বর্ষার সামনে এসে দাঁড়ালো কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসে আওয়াজে বলল, “ তোর রুমে বিছানার উপর রাখা আছে। ”

আর কে পায় বর্ষাকে ছুটে সিঁড়ি বেয়ে এক দৌঁড়ে রুমে চলে আসল।
বিছানার উপর লাল রঙের রেপিং পেপারে মুঁড়ে একটা গিফট বক্স। বর্ষা বিছানার উপর গিয়ে পা তুলে বসল। বক্সটা দুইহাত দিয়ে ধরে নিজের কোলে তুলে নিলো, বক্সটার উপর হলুদ রঙের কালার পেপার অর্থাৎ চিরকুট দেখে বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠল বর্ষার। ও মনে মনে ভেবে নিলো,
“ চিঠি? তাহলে ওই চিঠিবাজটা কি অভ্র ভাইয়া? ”

আর ভাবতে পারছে না কাগজটা খুলে দেখল তাতে লিখা:-

“ শুভ জন্মদিন আমাদের প্রিয় বর্ষ্যু! কৃষ্ণচূড়া ফুল যখন গাছ থেকে ঝড়ে পরে মাটির বুকে, তখন চারদিকে মাটির সৌন্দর্য বিপুল হয়। মাটি নতুন রূপে সজ্জিত হয়। তার আপন রঙ ভুলে কৃষ্ণচূড়ার রঙে। খুশি দেখে কে তখন মাটির? নিজের গায়ের উপর লুটিয়ে থাকা কৃষ্ণচূড়াকে আঁকড়ে ধরে মাটি সেজে উঠে কৃষ্ণচূড়া ফুলে।
আমিও চাই তোকে কৃষ্ণচূড়ার রাঙা লাল রঙে সসজ্জিত দেখতে। তোর জন্য এই বক্সটায় আমার তরফ থেকে ছোট্ট একটা উপহার। প্রত্যাশা রাখছি আজ সন্ধ্যা ঠিক ছয়টায় রেডি থাকবি। কিন্তু শর্ত একটাই পাঁচটার আগে বক্সটা খুলতে পারবি না। খুলবি না কিন্তু? খুললে কিন্তু আমি পাঁচ তলার ছাঁদ থেকে একবার নিচে তাকিয়ে আবারও রুমে চলে আসবো হুহহহ। ”

অভ্রর লেখা চিরকুটটার শেষাংশ পড়ে বর্ষার মুখে হাসির ঢল নামে। পুরো পুরে হাসির শব্দ। হাসতে হাসতে গাল ব্যাথা হয়ে যায় তবুও হাসতে লাগল। বক্সটাকে জড়িয়ে ধরে বিছানার উপর শুয়ে পরে বর্ষা। ভাবান্তর হয়ে বলে উঠে, “ কি আছে তোর মধ্যে হুহহ? দেখার জন্য যে আমার তোড় সইছে না। আল্লাহ কখন বাজবে পাঁচটা? ”

কিছুক্ষণ পর অভ্রর দেওয়া চিরকুট ও সেই চিঠিবাজের দেওয়া চিরকুট দুইটা ভালো করে মিলিয়ে দেখছে কিন্তু দুইটা মিলছে না। দুইরকম লেখা ভারী দীর্ঘ শ্বাস ত্যাগ করে নির্মলকন্ঠে বলল, “ চিঠিবাজ অভ্র ভাইয়া না। ”

আজ তার জন্মদিন কিন্তু তার বন্ধু বান্ধবী একটাও কল করে উইশ করল না। মিনিটের মধ্যে উদাস হয়ে গেলো। বিছানার উপর পা গুটিয়ে বসে রয়। তখনই ফোন বেজে উঠে তার। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল আননোন নাম্বার কল রিসিভ করে কানে লাগাতে সে বলল, “ জলদি চলে আয় তারাতাড়ি সময় নেই? ”

কল কেটে তারাহুরো করে রুম থেকে হন্ন হয়ে বের হলাম। বাড়ির বাহিরে এসে কাউকে দেখতে পেলাম না। ভ্রুখানিক কুঞ্চন করে কিছুটা সামনে এগিয়ে যেতে লাগলাম তখনই সামনে লক্ষ্য করলাম, চার থেকে পাঁচটা কুত্তা ঘেউঘেউ করে দৌঁড়ে আসছে তা দেখে ভয় পেয়ে চিৎকার করলাম, “ আহহহহহহহ ”

আমার পাশে থাকা ব্যক্তি সজোরে চিৎকার দিয়ে উঠল, “আহহহহহহহ”

আমি তার চিৎকার শুনে পেছনে ঘুরে তাকিয়ে বিমূঢ় কন্ঠে প্রশ্ন ছুঁড়লাম, “ আপনি চিৎকার করলেন কেন? ”

সে বলল, “ তুমি চিৎকার করেছে তাই ”

আমি চোখজোড়া পিটপিট করে তাকিয়ে শাণিতকন্ঠে বলে উঠি, “ আমি তো ভয় পেয়ে চিৎকার করেছি ”

সে বলল, “ আমিও তোমার চিৎকার শুনে ভয় পেয়ে চিৎকার করেছি ”

আমি কর্কশকন্ঠে চেচিয়ে বললাম,“ কি বললেন? ”

সে অস্ফুটস্বরে বলল, “ কোই আমি কিছু বলিনি তো? ”

পেছন থেকে কারো চিৎকার শুনে ঘাবড়ে পেছনে তাকালাম, সবগুলো একসাথে চেঁচিয়ে বলল,
“ হ্যাপি বার্থডে বর্ষা আমাদের অন্তর আত্মা ”

মাহিরা, আহিতা, রিয়া, রিমা, বৃষ্টি, নিঝুম, নিভ, মুরাদ সকলকে দেখে হেসে ফেললাম। চোখের কার্নিশ বেয়ে একফোঁটা অশ্রু কণা গড়িয়ে পরল। কোই? আমি ভাবছিলাম ওরা ভুলে গেছে আমার বার্থডে কিন্তু না ওরা ভুলেনি। সারপ্রাইজ দিবে বলে চুপ ছিল। সবাই এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল। দূরে দাঁড়িয়ে রইল নিভ ও মুরাদ।

মুরাদ আহ্লাদী স্বরে নিভকে উদ্দেশ্য করে বলল, “ আয় দোস্ত আমি তোকে জড়াই ধরি। মাইয়া গুলারে দেইখা এহন আমার মনেও জড়াই ধরার শখ জাগছে। ”

নিভ তেজি কন্ঠে বলল, “ সর শালা! তোর আহিতাকে গিয়া জড়াই ধর। আমারে কি তোর গার্লফ্রেন্ড পাইছোস নাকি? ”

মুরাদ ফ্যালফ্যাল নয়নে তাকিয়ে বলল, “ তুই আমারে এমনে কইতে পারলি দোস্ত? ”

বর্ষা পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে শাণিতকন্ঠে বলে উঠল, “ আপনি কি বার্থডে উইশ করবেন নাকি আপনার জন্য চেয়ার টেবিল আনতে হবে? ”

দাঁড়িয়ে থাকা আদ্রিক সশব্দে হেসে উঠল, বাকিরা ও তালে তাল মিলিয়ে হেসে উঠল।
________
পাঁচ টা বাজতে এখনও পাঁচ মিনিট বাকি বর্ষা বক্সটা সামনে নিয়ে বিছানার উপর বসে আছে। বারবার মোবাইলের মধ্যে সময় দেখে চলেছে কখন যে বাজবে পাঁচটা? শেষের পাঁচ মিনিট জেনো শেষই হচ্ছে না। দীর্ঘ অপেক্ষার পর মেবাইলে এলার্ম-ঘড়ি বাজলো। বর্ষা পাঁচটার এলার্ম দিয়ে রেখেছিল। যাতে করে পাঁচটা বাজার সঙ্গে সঙ্গে বক্স খুলতে পারে এক সেকেন্ড সময়ও সে ব্যয় করতে চায় না। সকাল থেকে অপেক্ষা করছে বক্সটা খুলার। অবশেষে সে ঘড়ি এসেই গেলো। ১০ ইঞ্চি হবে বক্সটার লম্বা সাইজ। কোলের উপর রেখে বক্সের গা থেকে রেপিং পেপার খুলতে লাগল বর্ষা।
#অবন্তর_আসক্তি
#পর্ব_২৬
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
________
কোলের উপর রেখে বক্সের গা থেকে রেপিং পেপার খুলতে লাগল বর্ষা। একটা হ্যান্ড পেইন্টেড শুভ্র সাদা শাড়ি। চোখ ধাধানো সৌন্দর্য তার শাড়ির আঁচলের ও পাড়ের দিকটায় কৃষ্ণচূড়া ফুলের মতল ডিজাইন করে পেইন্ড করেছে। দেখে অনুমান করা যাচ্ছে, যে আর্ট করেছে সে এই শাড়িটা খুব যত্ন সহকারে হ্যান্ড পেইন্ড করেছে। শাড়ির আঁচল পুরোটা জুড়ে কৃষ্ণচূড়া ফুলে পেইন্ড করা। বর্ষা শাড়িটা বিছানার উপর রাখল বক্সটার ভেতর থেকে এবার দুই মুঠ হাতের কাঁচের চুড়ি বের করল দুই রঙের চুড়ি লাল ও সাদা চুড়িগুলো নাড়িয়ে চাড়িয়ে দেখছে। কাঁচের সাথে কাঁচ বারি লেগে টুনটুন শব্দের সৃষ্টি হচ্ছে। ফিক করে হেসে ফেলল বর্ষা। চুড়ি গুলো শাড়ির উপরে আলতো করে রেখে দিলো। এবার বের করল টপ কানের দুল সেটাও ফুলের মধ্যে, চারপাশে সাদা মধ্যে একটা ছোট্ট ফুলের ডিজাইন। দুলটার সাথে ছোট একটা বক্স সেই বক্সের মধ্যে একটা পায়েল। বক্সটার মধ্যে আবারও হাত দিলে বের হয়ে আসে খোঁপায় বাঁধার প্লাস্টিকের সাদা ফুল। সবশেষে একটা চিরকুট দেখে মৃদু হেসে চিরকুট টা হাতে নিয়ে খুলল,
“ সব কিছু তোর জন্য শুধু আজকে দিন উপলক্ষে, সব কিছু দিয়ে সেজে নিচে চলে যায়। ”

বর্ষা ওয়াশরুমে চলে গেলো রুমে এসে শাড়ি পরে নেয়। রুমে বড় আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সাজ গোঁজ করতে লাগল।

বর্ষা তৈরি হয়ে হল রুমে এসে উপস্থিত হলো সকলে তার বড় প্রশংসা করল দেখতে সুন্দর লাগছে। শাড়ির ডিজাইনটাও সুন্দর বলল। বর্ষা প্রত্যত্তরে মৃদু স্বরে বলল, “ থ্যাঙ্কিউ ”
সকলে এখানেই আছে শুধু নেই অভ্র। সকলে একজোট হয়ে অপেক্ষা করছে অভ্রর জন্য, সে আসলেই না সকলে বের হতে পারবে। বর্ষা চোখ মুখ কুঁচকে বিরক্তি নিয়ে বলল, “ ও ছেলে ওর কেন রেডি হতে একশ ঘন্টা লাগবে? ”

রিয়া মুখের উপর একহাত দিয়ে ফিসফিসে আওয়াজে বলল, “ তোর পেছনে তাকিয়ে দেখ আসছে। ”

রিয়ার কথা শুনে বর্ষা পেছনে সিঁড়ির উপরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। দেখল অভ্র সিঁড়ি দিয়ে নামছে। একটা নেভি ব্লু টি শার্ট পরছে, আর কালো জিন্স, তার উপর গাঢ় এস কালার লেদার জ্যাকেট, ব্লু আর এস এর কম্বিনেশনে কেচ পরেছে চুলগুলো কালো সিঁড়ি দিয়ে যেভাবে নামছে লম্বা লম্বা চুলগুলো কপালের উপর এসে বারি খাচ্ছে । কী চমৎকার দৃশ্য বর্ষা হাজার চেষ্টা করেও চোখ ফেরাতে পারছেনা অভ্রকে অমায়িক সুন্দর ও কিউট লাগছে। বর্ষা তার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে।

অভ্র একহাত দিয়ে চুলগুলো পেছনের দিকে ঢেলে দেয় সকলের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল, “ স্যরি একটু লেট হয়ে গেলো। কিন্তু এখন চলো। ”

সকলের উদ্দেশ্য কথা বলার মধ্যে বর্ষার দিকে আড়চোখে একনজর তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে উঠল, “ খুব সুন্দর লাগছে। শাড়িটা মানিয়েছে তোর গায়ে। ”

প্রত্যত্তরে বর্ষা নির্বাক রইল। একসাথে সকলে বের হয়ে পরল। বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে নূর ইসলাম পই পই করে বলে দিয়েছেন রাত নয়টার আগে সব ছেলে মেয়ে জেনো বাড়িতে চলে আসে।
_________
চারদিকে শুধু অন্ধকার গাড়ির হেডলাইটের আলোয় সামনের রাস্তা টুকুই শুধু যা দেখা যাচ্ছে। বার কয়েক জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে অভ্রর উদ্দেশ্য প্রশ্ন ছুঁড়ল বর্ষা, “ আমরা কোথায় যাচ্ছি? ”

অভ্র ড্রাইভিং করছিল সামনে নজর রেখেই উত্তর দিলো, “ মনপোড়া দ্বীপ মুকসবিল ”

পেছন থেকে অস্ফুটস্বরে রিমা বলে উঠল, “ কিহহ? ওই যে নতুন দ্বীপ হইছে ওইটায়? ”

“ হুম! ওইটাই এখন তোরা এক্সাইটেড না হয়ে চুপ করে বস। ”

ত্রিশ মিনিট পর সকলে সেখানে পৌঁছে যায়। দ্বীপে যেতে কিছুটা হাঁটতে হবে প্রায় পাঁচ মিনিটের কাঁচা রাস্তা হেঁটে যেতে হয়। গাড়ি রাস্তার পাশে খোলা মাঠে পার্ক করে সকলে একসাথে রওনা হলো। এদিকটা পুরো গ্রামের মতো সব জাগায় শুধু ঝোপজঙ্গল গাছতলা। এদিকে লাইটও নেই অন্ধকারে জঙ্গল থেকে সাপ বের হতে পারে। সেজন্য অভ্র আগে থেকে সকলকে সাবধান করে দেয়। সকলে জেনো চারপাশ দেখে চলাচল করে৷ সকলে ফোনের টর্চ লাইট অন করে হেঁটে চলেছে।

দ্বীপে আগে থেকেই উপস্থিত আছে বর্ষার সকল চাচাতো ফুফাতো ভাইয়েরা। দ্বীপে পৌঁছে ওদের খুঁজে বের করে সেখানে যায়। দ্বীপটা নতুন তাই তেমন কিছু নেই। একটা নাগরদোলা, দুই অনেক দূরে দূরে মানুষের বসার জন্য চেয়ার টেবিল। এক বড় রুম সব জায়গায় বড় বড় আম, কাঁঠাল ও অনন্য গাছ। সন্ধ্যার পরের দৃশ্য টা খুবই সুন্দর।
সকলে একসাথে খোলা মাঠে ঘাসের উপর বসে রয়েছে। দিগ দিগন্ত থেকে ঠান্ডা হিমেল বাতাস এসে গা কাঁপিয়ে তুলছে। সকলের থেকে এক ফুট গ্যাপ রেখে শুকনো লাকড়ি দিয়ে আগুন জ্বালানো হয়েছে।

বর্ষার সামনে একটা কেক তাতে মোমবাতি জ্বলছে। খানিকক্ষণ বাদ বাদ আসা উড়ন্ত হাওয়া মোমবাতি টা কে নিভু নিভু করে দিচ্ছে।

কাব্য আচমকা অভ্রর উদ্দেশ্য বলে উঠল,“ ভাই আজ তো বর্ষার বার্থডে তো ওকে ডেডিকেট করে একটা গান ধর ”

কাব্যর সাথে তালে তাল মিলিয়ে সহমত প্রকাশ করল, নাহিদ, নিভ, মুরাদ ও আদ্রিক মেয়েরাও কম নয় রিয়া, রিমা, বৃষ্টি, তিন্নি, আহিতা, মাহিরা, নিঝুম ওরাও তো আছে। সকলে মিলে রিকুয়েষ্ট করল বলে অভ্র আর না করতে পারে না। এতবার বলার পরও গানটা না গাইলে এটা বেয়াদবি করা হবে। রিমা ওর গিটার টা অভ্রর দিকে বাড়িয়ে দিলো। সে গিটারে টুংটাং সুর তুলে গান গাইতে শুরু করল।

❝ যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো
চলে এসো এক বর্ষায়,
এসো ঝরো ঝরো বৃষ্টিতে জল ভরা দৃষ্টিতে
এসো কমলো শ্যামলো ছায়,
চলে এসো এক বর্ষায়!

যদিও তখনো আকাশ থাকবে বৈরি,
কদমও গুচ্ছ হাতে নিয়ে আমি তৈরী,
উতলা আকাশ মেঘে মেঘে হবে কালো
ঝলকে ঝলকে নাচিবে বজলি আলো
তুমি চলে এসো,
চলে এসো এক বর্ষায়।

নামিবে আঁধার বেলা ফুরাবার পরে
মেঘমল্লার বৃষ্টিরো মনে মনে,
কদমও গুচ্ছ খোপায় জড়ায়ে নিয়ে,
জল ভরা মাঠে নাচিব তোমায় নিয়ে চলে এসো
তুমি চলে এসো এক বর্ষায়। ❞

গানটা সকলে মুগ্ধ হয়ে শুনেছে। বর্ষা অভ্র যখন গান গাইছিলো তখন তার মুখের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিল। এমন মনোরম পরিবেশ, ঠান্ডা বাতাস, সামনে আগুন জ্বলছে তার সাথে গিটার বাজিয়ে অভ্র গান গেলো তাকে ডেডিকেট করে। আগুনের লালচে-হলুদ আলোতে অভ্রর মুখটা অধিক মায়াবী লাগছিল। চোখ ফেরাতে পারেনি বর্ষা অভ্রর উপর থেকে চোখ জোড়া জেনো তার অবাধ্য হয়ে গেছে। চাইলেও সরাতে পারছে না পলকহীনভাবে তাকিয়ে আছে। গানটায় বর্ষার হৃদয় ছুঁয়ে দিয়েছে। কেননা, গানটায় তার নাম ছিল। কিন্তু গানটার পেছনে অর্থ গুলো বর্ষা বা কেউই বুঝেনি।

কেক কাটা হলো সকলকে বর্ষা একটু একটু খাইয়ে দিলো। সকলে বর্ষার হাতে তাদের আনা গিফট বক্স দিলো বর্ষা মৃদু হেসে সকলকে ছোট্ট করে বলল, “ থ্যাঙ্কিউ ”
___________
বাড়ি ফিরে আসতে রাত নয়টার উপরি বেজে যায়। এতে একটু আকটু বকাঝাড়ি শুনতে হয় বাড়ির ছেলেদের।

রুমে এসে শাড়ি চেঞ্জ করে নেয় বর্ষা। বাড়িতে ফিরার পথে সকলে মিলে রেস্টুরেন্ট গিয়েছিল সেখানেই খেয়ে এসেছে। তাই রাতে খেতে হবে না। বিছানার উপর বসে গিফট বক্স গুলো এক এক করে খুলে দেখছে। কয়েকটা বক্স খোলা শেষ অন্য বাকিগুলোতে হাত দিলে বক্সগুলোর ভেতর থেকে একটা নীল রঙের কাগজ বের হয়ে আসে। ভ্রু কুঞ্চিত করে কাগজটার দিকে তাকিয়ে রইল চারজন। ফোঁসফোঁস করতে করতে রিয়া বলল, “ নে এসে গেছে তোর চিঠিবাজের চিঠি। ”

রিমা খুশিতে গদগদ হয়ে বলল, “ নে নে খোলে জোরে জোরে পড় আমরাও একটু শুনি। ”

বৃষ্টি ভ্রু উঁচু করে বিমূঢ় কন্ঠে বলল, “ কে এই ছেলেটা হুমম? ভালোবাসলে এত লুকোচুরি কিসের? সামনাসামনি এসে বললেই তো হয়। ”

বর্ষা ওদের কথা উপেক্ষা করে কাগজটা হাতে নিয়ে খুলে পড়তে লাগল,

❝ আমার শুভ্র সাদা পরী ”
“ তোমার শুভ্র সাদা রঙে শাড়ির আঁচলে বিবর্ষ হয়ে হুঁশশ হারিয়েছি আমি। এই মেয়ে এই, তুমি কি জানো আজ কতবার আমি হাবুডুবু খেয়েছি তোমার শাড়ির আঁচলে? আজ আমার কল্পনার ও বাহিরে সুন্দর লেগেছে তোমাকে। সত্যি বলছি তুমিই হচ্ছো আমার শুভ্র রাঙা পরী। তুমি কি জানো শুভ্র পরী? আজ তোমায় পাওয়ার ইচ্ছে আমায় বিষণ জ্বালা দিচ্ছে। আজ অনেক ইচ্ছে করেছিলো। হেঁটে তোমার সামনে চলে যাই। তুমি চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলে আমি আলতো পরশে চুম্বন এ্যঁকে দেই তোমার চোখের উপরে। এই শুভ্র পরী। তুমি কি জানো? তুমি খিলখিল করে হেসে উঠলে হেসে উঠে আমার পৃথিবী? আচ্ছা শুভ্র পরী তুমি কি হারিয়ে যাবে কভু? তুমি কি আমার একান্তই আমার প্রিয়জন হবে? ❞

ভারী দীর্ঘ শ্বাস ফেলে চিরকুট টা বিছানার উপর রেখে দিলো, গভীর চিন্তায় মগ্ন হলো বর্ষা তখনই বৃষ্টি চিৎকার দিয়ে বলে উঠল, “ আরও একটা চিঠি ”

বর্ষা ইচ্ছুক দৃষ্টিতে তাকালো। এবার চিঠির কাগজটার রঙ হলুদ।
জিহ্বা দিয়ে উপর নিচ ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে নিয়ে কাগজটা খুলে পড়তে লাগে এটাতে লিখা:

❝ ওই শোনো তোমার মুখের হাসি আমি বড্ড ভালোবাসি!
তোমার গালের তিল’টা কে ভালোবাসি!
তোমার মায়াবী চোখের দুষ্ট মিষ্টি লাজুক চাহনি টা কে আমি ভালোবাসি!
তোমার এক পায়ের নুপুরের ছুনছুন শব্দ’টা কে ভালোবাসি!
তোমার মাথার লম্বা লম্বা ঘন কালো কেশ গুলোকেও আমি ভালোবাসি।
তোমার কপালের কালো টিপ টাকে আমি ভালোবাসি।
তুই লজ্জা পেয়ে যখন মাথা নত করে চোখ বন্ধ করে ফেলো তখন তোমার লজ্জা মাখা মুখখানি দেখতে ভালোবাসি।
কথা বলতে বলতে হুটহাট ফিক করে হেঁসে ফেলো তখন তোমার ওই হাসিটা দেখতে ভালোবাসি।
তোমাকে মন ভরে দেখতে চাই।
তুমি অপরূপ সুন্দরী তোমার রূপের প্রসংশা করার অধিকার শুধু আমার আছে।
তোমাকে দেখার অধিকার শুধু আমার।
তোমাকে কেউ সুন্দর বললে আমার বুকের বা পাশটায় জ্বলে বড্ড যন্ত্রণা হয়।
তুমও শুধু আমার তোমাকে ভালোবাসার অধিকার আমার। আমি পাগল উন্মাদ হয়েছি শুধু তোমারই প্রেমে। তুমি আমার ভালো বাসা ভালো থাকার ঔষধ। তুমি যে আমার ভালোবাসার এক কুঁড়েঘর। তুমি যে আমার চাতকপাখি! ❞

জোরে জোরে পড়ার শব্দ শুনে দরজার সামনে দাঁড়ালো অভ্র। পড়া শেষ করে স্থির বসে রইল বর্ষা। বৃষ্টি বর্ষার হাতে গুঁতো দিয়ে বলল, “ কি ভাবছিস? ”

বর্ষা ইনোসেন্ট ফেস বানিয়ে তাকালো, তা দেখে রিমা বলল, “ ও নিশ্চয়ই চিঠি বাজের প্রেমে পরে গেছে। ”

বৃষ্টি সম্মোহনী কন্ঠে জিজ্ঞেস করল, “ রিমা যা বলছে তা কি সত্যি? ”

বর্ষা উপর নিচ মাথা দুলালো অর্থাৎ হ্যাঁ।

রিয়া আকস্মিক চাহনি ফেলে প্রশ্ন ছুঁড়ল, “ চিঠি বাজের প্রেমে পরেছিস মানে তো ওই বেটা আদ্রিক। তুই ওই আদ্রিকের প্রেমে পরেছিস? ”

বর্ষা নির্বাক হয়ে মাথা নত করে ফেলল। তা দেখে দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে থসকা অভ্র দরজার পর্দা এক হাতে খাবলে ধরলো। মাত্রারিতিক্ত ক্ষোভ নিয়ে অভ্র তৎক্ষনাৎ সেখান থেকে নিজের রুমে চলে যায়। ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে টি-টেবিলের উপর সজোরে লাণ্থি মারল। রাগে ফোঁসফোঁস করতে করতে হুংকার ছাড়ল, “ আদ্রিক ”

অপরাধীর মতো বসে রয়েছে বর্ষা। হাল্কা একটু মাথা তুলে দুইদিকে ডানে বামে নাড়ালো মানে হচ্ছে না।

রিয়া অস্ফুটস্বরে জানতে চাইলো, “ এভাবে মাথা নাড়ানোর মানে কি? ”

বর্ষা করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে নির্মূলকন্ঠে বলল, “ আমি প্রেমে পরিনি কিন্তু আমার মন বলে আমি একজনকে ভালোবেসে ফেলেছি। ”

রিমা বলল, “ সেই তো এই চিঠিবাজ আদ্রিক? ”

বর্ষা আবারও দুইদিকে মাথা নাড়ালো মানে না। বৃষ্টি ভ্রু কুঞ্চিত করে প্রশ্ন ছুঁড়ল, “ মানে? ”

বর্ষা শীতলকন্ঠে বলল, “ আমি আদ্রিককে ভালোবাসি না৷ আমি অ? ”.

কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে গেলো বর্ষা। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রিয়া বলল, “ তুই তো কি? ”

বর্ষা চটজলদি বিছানা থেকে নেমে পরল বাকিদের উদ্দেশ্য বলল, “ কিছু না। রাত অনেক হয়েছে এখন আমি ঘুমাবো তোরা যা। ”

তিনজনের একজন ও চুল পরিমান ও নড়লো না। কাকে ভালোবাসে বর্ষা না জানা পর্যন্ত তারা কোত্থাও যাবে না।
অবশেষে বাধ্য হয়ে নাম বলতেই হলো। আকস্মিক তিনজনে চিৎকার দিয়ে উঠল, “ সত্যিইই? ”
বর্ষা লজ্জা পেয়ে ওড়নার আড়ালে মুখ লুকালো।

পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠার পরে আর অভ্রকে কেউ দেখতে পায় না। বর্ষা তার বড় আম্মু অর্থাৎ অভ্রর আম্মুর কাছে শুধালে তিনি বলেন, অভ্র সাভার চলে গেছে। নিমিষেই মন খারাপ হয়ে যায় বর্ষার মুখ ভাড়ি হয়ে আসে৷ বার কয়েক অভ্রর নাম্বারে কল দেয় ফোনে রিং হচ্ছে কিন্তু কল রিসিভ করছে না। বিরক্তিতে ফোন বিছানার উপর ঢিল মেরে ধুপ করে মাটিতে বসে পরল। খাটের উপর ফোনটা হুট করে বেজে উঠল। হাত বাড়িয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখল অভ্র কল বেক করেছে। সাথে সাথে কল রিসিভ করে বর্ষা বলে উঠল, “ অভ্র ভাইয়া তুমি কোথায়? ”

ফোনের অপরপাশ থেকে বলল, “ দুঃখিত আমি অভ্র নই, আমি মুজাহিদ। ”

বর্ষা তেজি কন্ঠে প্রশ্ন ছুঁড়ল, “ অভ্র ভাইয়ার ফোন আপনার কাছে কিভাবে আসলো? আপনি কি ফোনটা চুরি করেছেন? ”

ফোনের অপরপাশের লোকটি ক্রোধিত স্বরে বললেন, “ আজব কিসব কথা বলছেন আপনি? মাথা ঠিক আছে আপনার? আপনার অভ্র ভাইয়া গাড়ি এক্সিডেন্ট করেছে। বেশি ক্ষতি হয়নি শুধু হাতে পাশে চোট লেগেছে আপনারা ফ্যামিলি মেম্বার রা এসে উনাকে হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে যান। যতসব পাগলের কারবার। ”

মুজাহিদ হাসপাতালের নাম ও কেবিন নাম্বার কত বলে কল কেটে দেয়। বর্ষা হন্তদন্ত হয়ে ছুটে যায় হল রুমে। বাড়ির বড়’রা সোফায় বসে চা বিস্কুট খাচ্ছিলেন ও অফিসের কাজের বিষয়ে কথা বলছেন। তাদের সামনে দাঁড়িয়ে হাফ ছেড়ে বর্ষা অভ্রর এক্সিডেন্টের খবর জানায়। তারা সকলে বর্ষার কথা শুনে কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ প্রায় স্থির তাকিয়ে রইল। পরক্ষণেই বর্ষার আব্বু ও বর্ষার বড় সেজো ছোট চাচুরা সকলে মিলে এড্রেস অনুযায়ী হাসপাতালের উদ্দেশ্য বের হয়ে গেলেন।

#চলবে?

(কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ)
চলবে?

(কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here