অবেলায় তোমার আকাশে পর্ব – শেষ

#অবেলায়_তোমার_আকাশে
#নুসাইবা_রেহমান_আদর
#২য় এবং শেষ

– থাম স্মৃতি ইতি আমার মেয়ে না হলেও ইতি কে আমি চিনি। ইতি এমন জঘন্য কাজ কখোনো করতে পারেনা। আমার থেকে তো ইতিকে তোর ভালো চিনার কথা।

– আম্মা আপনি কিভাবে ওর কথা বিশ্বাস করছেন আমাকে নয়? আমি আপনার মেয়ের জামাই।

-তোমার সম্পর্কে আমি কম জানিনা বাবা ভালো হবে চুপ থাকো তুমি। আর স্মৃতি এই মুহুর্তে নিজের জামাইকে নিয়ে আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে যা। যে মেয়ে নিজের বোন কে সম্মান করতে পারেনা আর যাইহোক সে মেয়েকে আমি জন্ম দেই নাই। ইতি তোর বাবার ২য় স্ত্রীর সন্তান। ইতির মা পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে তোর বাবা ওকে এখানে নিয়ে আসছে৷ ওকে আমি না দেখতে পালেও ওর প্রতি তোর ভালোবাসা দেখে আমি সত্যি খুশি হতাম। আর ইতির মতো মেয়েকে তুই অবিশ্বাস করলি?

– মা অন্যকারো মেয়ের প্রতি তোমার বিশ্বাস ভালোবাসা টা বেশি হয়ে গেলো না?

স্মৃতিকে আজ ইতির বড্ড অচেনা লাগছে। এই আপুকে তো সে চিনেনা।কিভাবে পারছে তার সেই ছোট্ট ইতুকে এতো আঘাত করতে? তার গায়ে লাগছেনা। একটুও কি কষ্ট হচ্ছে না তার আপাইর?

তখন সেখানে মেহতাব পুলিশ নিয়ে হাজির হয়। বাড়িতে মেহতাব এর সাথে পুলিশ দেখে সবাই অবাক হয়ে যায়।

– কি ব্যাপার মেহতাব তুই পুলিশ নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ি কি করিস?

– আহ জানতে পারবে ভাইয়া তুমি একটু ধৈর্য ধরো।

– আপনাকে মিস ইতিকে রেপের চেষ্টা করার জন্য গ্রেফতার করা হচ্ছে মিস্টার মাহবুব। তা ছাড়া বিভিন্ন মেয়েকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের সম্মান হানি করার অপরাধ তো আছেই।

– ইন্সপেক্টর আপনি হয়তো ভুলে যাচ্ছেন আমি এইখানেট চেয়ারম্যান। আর আপানার কাছে কি প্রমান আছে যে আমি ইতিকে রেপড করার চেষ্টা করছি? আর বাকি কথার প্রমান কি? ইতি আর মেহতাব কে আমি খারাপ অবস্থায় ধরার জন্য ওরা আমার নামে বাজে কথা বানাচ্ছে ফাসাচ্ছে আমাকে। মেহতাব আমার সম্পত্তির লোভে এই কাজ করছে বিশ্বাস করুন।

– সরি মিস্টার মাহবুব আমরা কথায় না প্রমানে বিশ্বাস করি। আর মেহতাব আমাদের আপনার বিরুদ্ধে সব রকম প্রমান এনে দিয়েছে। তাই আপনাকে আমাদের সাথে যেতে হবে। মেহতাব পরিবারের সবাইকে ভিডিও টা দেখাও তো।

মেহতাব নিজের পকেট থেকে মোবাইলে বের করে ভিডিও প্লে করলো। যেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে মাহবুব ইতির শাড়ির আচল ধরে টানছে। স্মৃতি এটা দেখে এক পা পিছিয়ে গেলো। পড়ে যেতে নিলেই ইতি তার বোন কে সামলিয়ে নেয়।

– জানেন ভাবি এই প্রথম না ভাইয়া আরো অনেক অনেক মেয়ের সম্মান নষ্ট করেছেন। আমি যখন থেকে জানি ভাইয়াকে অনেক অনুরোধ করি এসব যেনো আর না করে। কিন্ত জানেন ভাবি ভাইয়া আমার কথা শুনতো না। এরপর থেকে ভাইয়ের প্রতি ঘৃনায় আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাই। ঢাকা গিয়ে আমি টিউশনি করিয়ে নিজের খরচ চালাতাম। তবুও ভাইয়ের টাকা নিতাম না। মায়ের কথায় দেশে আসি এরপর ভাইয়ের বিরুদ্ধে প্রমান জোগার করতে লেগে যাই। আজ যখন তোমার বোন বাসায় আসে তখন আমি আমার রুমে। ভাইয়ের সামনে এমন অভিনয় করি যে আমি নেশা করে জ্ঞান নাই আমার। আর ভাই ও এই সুযোগ কাজে লাগায়। ইতি তোমার রুমে দেখা করতে গিয়ে দেখে তুমি নাই। তুমি আপুর বাসায় গেছো শুনে ইতি চলে যাচ্ছিলো আর তখন ভাইয়া জোর করছিলো আমি তখন একটি ভিডিও করে মোবাইল পকেটে রেখে দেই। আর পিছন থেকে ভাইয়ার সাথে কথা বলি আমাকে দেখে ভাইয়া চমকে যায়। ইতি সুযোগ পেয়ে পালিয়ে যায়। আর ভাইয়া ও কোথাও যায় আমি জানিনা। ভাইয়ের পিছনে আমি আগেই লোক লাগিয়ে রেখেছি তার থেকেই জানতে পেরে থানা থেকে ওনাকে নিয়ে চলে আসি।

ইতির মা স্মৃতি সব শুনলো। ইতির মা আজ অনুতপ্ত হচ্ছে, সে আর ইতির বাবা বড় মেয়েটা সুখে থাকবে ভেবে ছেলের চরিত্র সম্পর্ক খোঁজ না নিয়ে বিয়ে দিয়ে দেয়। কত বড় ভুল করছে সে জানে। মাহবুব কে পুলিশ নিয়ে যায়। মাহবুব দাঁড়িয়ে আছে কিছু বলতে চাচ্ছে তবুও ইস্তত বোধ করছে।

– তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ বাবা আজ তোমার জন্য আমার মেয়েটা বেচে গেলো। আমি জানতাম আমার ইতি এতো খারাপ না।

– আমাকে ক্ষমা করে দিস বোন। আমি লোকটা কে অনেক ভালোবাসি বিশ্বাস করি। উনি যেভাবে বানিয়ে বানিয়ে বলছে আমি বিশ্বাস করে নিছি। পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিস।

– ভাবি আপনি কি আমার সাথে বাড়িতে ফিরবেন?

– কোন বাসায় যাবো ভাই যেখানে তোমার ভাই নাই?

– সে না থাকুক ভাবি তার সব কিছুর ওপর আপনার অধিকার। অই অমানুষের জন্য নিজের অধিকার কেনো ছাড়বেন। ওটা আপনার ও বাড়ি ওখানে আপনি নিজের দাপটে থাকবেন। তার জন্য আপনি খারাপ থাকবেন এমন হবে না। এই সমাজ ডিভোর্সিদের বাচতে দেয়না ভাবি। তাই তাকে ডিভোর্স না দিয়ে এই বিয়েয়ে থেকেই শাস্তি দিবেন।

– ধন্যবাদ ভাই আমাকে এভাবে বুঝানোর জন্য আমি তোমার সাথে যাবো।

– হ্যাঁ মা ও ঠিক বলছে তোর যা ঠিক মনে হয় তুই কর।

– কাকি আমি আরেকটা কথা বলতে চাচ্ছি আপ্নাদের। চাচা কোথায়?

– উনি তো শহরে গেছেন আসতে অনেকদিন সময় লাগবে। কি বলবা আমাকে বলো?

– আমি ইতিকে আজ আর এখুনি বিয়ে করতে চাই। আপনাদের মত কি?

– আমি কি বলবো মেয়েটার প্রতি তো আমি কম অন্যায় করি নাই বাবা। আজ ওর জিবনের সিদ্ধান্ত ও নেক।

-আমি ইতির সাথে একান্তে কথা বলতে চাই আপ্নারা কি অনুমতি দিবেন?

– হ্যাঁ বাবা যাও, ইতি মেহতাব কে নিজের ঘরে নিয়ে যাও মা।

ইতি চুপচাপ আগে আগে হাটতে লাগলো। ইতির পিছে মেহতাব যাচ্ছে। ইতি নিজের বিষ্ময় কাটিয়ে উঠতে পারছে না। মেহতাব যে তার স্বপ্ন পুরুষ। আর তার থেকেই বিয়ের প্রস্তাব বিশ্বাস হচ্ছে না তার।

– ইতি আমি জানিনা কিভাবে নিজের মনের ভাব প্রকাশ করতে হয়। কিভাবে কি বলতে হয়। তবুও শুনে রাখো প্রথম দেখা থেকে আজ অব্দি যতোবার আমি তোমাকে দেখেছি তখন থেকে তোমার প্রতি আমি নিজের ভালোবাসা বুঝতে পেরেছি। কখোনো বলা হয় নাই আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। #অবেলায়_তোমার_আকাশে আমাকে তারা হয়ে মিটিমিট সারাজিবন জ্বলতে দিবে?

ইতি লজ্জায় পড়েছে কি থেকে কি বলবে বুঝতে পারছে না। মাথা নিজ দিকে দিয়ে হাসি আটকাচ্ছে সে। নিজের ভালোবাসার মানুষের মুখেও নিজের প্রতি ভালোবাসা আছে শুনতে কার না ভালো লাগে।

– জানেন মেহতাব আমিও আপনাকে অনেক পছন্দ করি তবে এটা বলার সাহস হয় নাই আমার কখোনো।

ইতির মুখে পজেটিভ উত্তর শুনে খুশি হয়ে যায় মেহতাব। বাহিরে গিয়ে সবাই কে জানায় ইতি রাজি। তবুও ইতির মা সবাইকে শান্ত করে বললেন।

– বাবা ইতির বয়স এখন কম আমি বলছি কি ৩ বছর পর ওর সাথে বিয়ে দেই এতোদিন মেয়েটা নিজের স্কুল লাইফ শেষ করুক?

– হ্যাঁ চাচি তবে চাচাকে খবর পাঠান আমরা আগামি সপ্তাহে আকদ করে ফেলবো। মা ও আপু রাজি আছে।

মেহতাব খুশি মনে স্মৃতিকে নিয়ে বাড়ি ফিরলো। ইতি ওর মা কে জরিয়ে ধরে কেদে দিলো। আজ এই ঘটনায় জানতে পারলো তার মা খারাপ না। তাকে যতটুকি বিশ্বাস ভালোবাসছে তাই অনেক। ইতিকে সে অনেক বিশ্বাস করে।

– আমাকে ক্ষমা করে দিও মা কখোনো তোমাকে কষ্ট দিয়ে থাকলে।আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি।

– আমাকেও ক্ষমা করে দিস মা অনেক অন্যায় করেছি আমি। চল তোর না খুদা লাগছে আমি খাইয়ে দেই।

– চলো।

এইভাবেই সবাই হাসিখুশি থাকুক। খুব ভালো থাকুক তারা। মেহতাব আর ইতি যেনো খুশি থাকে ভবিষ্যতে।

সমাপ্ত

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here