#অবেলায়_তুমি (পর্ব-৭)
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ
তনুর কথা মতন সিকিউরিটি আকাশকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে অফিস থেকে বের করে দিয়ে আসে। কিন্তু সিকিউরিটি আকাশকে অফিস থেকে বের করে দেওয়ার সময় তনু দূর থেকে লক্ষ্য করে তার মা অফিসের প্রধান গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তনুর মা কোনো একটা কারণে অফিসে এসেছিল। কিন্তু তিনি এসে তনুর কৃত্তিকলাপ সব কিছু দেখে ফেলে। তনু তার মা’কে দেখে মাথা নিচে নামিয়ে ফেলে। অন্যদিকে আকাশকে অফিস থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়ার পর আকাশ ও মাথা নুইয়ে গন্তব্যহীন ভাবে হাঁটতে আরম্ভ করে। চোখ থেকে পানি টলমল করে পানি পড়ছে আকাশের। সব কিছুই শেষ তার। না আছে চাকুরী। আর না আছে ইজ্জত। দুটোই তনু তার থেকে কেঁড়ে নিয়েছে। তবে তনু আকাশকে অপমান করে বের করে দিলেও আকাশের জন্য একদিকে সেটা ভালো হয়েছে। কারণ আজ থেকে তাকে আর তনুর কথা শুনতে হবে না। আজ থেকে তনু আর তাকে অপমান করতে পারবে না। চাকুরী করতে এসে তিন বছরের জন্য তনুর কাছে আটকা পড়ে গিয়েছিল আকাশ। সে কখনো চাইলেও নিজ ইচ্ছায় এই চাকুরী ছাড়তে পারতো না। কিন্তু তনু আজ নিজেই তাকে মুক্ত করে দিয়েছে। তবে পরিবারের কথা ভেবে প্রচন্ড হতাশ লাগছে আকাশের। সংসার কি করে সামলাবে সেই চিন্তায় হতাশা এসে ভর করেছে আকাশের উপরে। হতাশাগ্রস্ত হয়ে হাঁটতে হাঁটতে কোনো এক পার্কে গিয়ে বেঞ্চের উপরে বসে চোখের পানি মুছে ভাবতে থাকে কি ভাবে কি করবে সে।
‘অন্যদিকে তনুর মা তনুর কৃত্তিকলাপ দেখে পুরোপুরি আশ্চর্য হয়ে যায়। মেয়ের কার্যকালাপ দেখে তিনি কোনো ভাবেই বিশ্বাস করতে পারছে না এটা তারই মেয়ে। ছোট ছোট কদমে হেঁটে অফিসের প্রধান গেইট দিয়ে প্রবেশ করে তনুর কাছে যায় তনুর মা। তনু এখনো মাথা নুইয়ে রেখেছে। তনুর মা তনুর কাছে গিয়ে তনুকে আগাগোড়া ভালো করে দেখতে থাকে আসলেই কি এটা তার মেয়ে তনু কিনা। কারণ একটু আগের কৃত্তিকলাপ দেখে তনুর মা বেশ অবাক। তনুর মা’য়ের যেনো নিজের মেয়েকেই চিনতে কষ্ট হচ্ছে।
সামনে দাঁড়িয়ে থাকা তনু তার মা’য়ের তাকানোর ভঙ্গিমা দেখে বুঝতে পারে সব কিছুই তার মা দেখে নিয়েছে। তনু দ্বিধাদ্বন্দে পড়ে যায় এখন সে কি করবে। একটু আগে আকাশকে অফিসের সকল কর্মচারীর সামনে অপমান করে বের করে দিয়ে পৈচাশিক আনন্দ পেয়ে সে। কিন্তু এখন হয়তো তার সমস্ত আনন্দ মাটি হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে সে অপমান ও হতে পারে। কারণ তনুর মা যদি কোনো ভাবে সকলের সামনে তনুকে একটু আগের বিষয় নিয়ে জিজ্ঞাস করে বা তনুর সাথে সেই বিষয় নিয়ে রাগারাগি করে, তাহলে তনুকে লজ্জার মুখে পড়তে হবে। পরিস্থিতি হাতে অনুকূলে চলে যাচ্ছে।
সেজন্য তনু পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য নিজের মা’কে বলে,
–‘মা তুমি হটাৎ আজ আমার কি মনে করে?’
–‘আসলে একটা কাজের জন্য বেরিয়েছিলাম। কিন্তু কাজ শেষ করে ফেরার পথে ভাবলাম তোর অফিস থেকে একবার ঘুরে যাই। তাই তোর অফিসে এসেছি। কিন্তু অফিসে আসার পর যা দেখলাম তাতে করে আমার তো আস্থা উঠে গেছে তোর উপর থেকে।’
–‘মা এই বিষয়টা নিয়ে তোমার সাথে আমি আলাদা জায়গায় কথা বলছি। কিন্তু তুমি প্লিজ এখানে কথাটা উঠিও না। না হয়তো আমার মানসম্মান থাকবে না।’
–‘তনু তোর মতন আমাকে ভাবিস না। আর তুই একটু আগে আকাশকে সকলের সামনে অপমান করে তার প্রেস্টিজ ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছিস। কিন্তু তাই বলে যে আমি তোকে সকলের সামনে প্রশ্ন করে লজ্জায় ফেলবো বা মানসম্মান নষ্ট করবো এমনটা কিন্তু নয়। কারণ তোর মধ্যে বিবেকবুদ্ধি না থাকলেও আমার মধ্যে আছে। আমি তোর কেবিনের ভিতরে যাচ্ছি। আর তুই ও কেবিনের ভিতরে আয়।’
তনুর মা তনুর কেবিনে যায়। তনুও তার মা’য়ের পিছন পিছন কেবিনে প্রবেশ করে। মা-মেয়ে দু’জনে কেবিনে প্রবেশ করার পর তনুর মা তনুকে প্রশ্ন করে,
–‘তনু তুই একটু আগে আকাশের সাথে ঐরকম নোংরা কাজটা কেন করলি? শুধু মাত্র কাজ ভুল করায়?’
–‘মা একে তো সে কাজ ভুল করেছে৷ তার উপরে সে গতকাল আমার সাথে জোরজবরদস্তি করেছে। তাই তার উপরে প্রতিশোধ নিয়েছি।’
–‘জোরজবরদস্তি মানে?’
–‘মা সে গত পরশু আমায় বাসায় খাওয়া-দাওয়া করে আসেনি দেখে তাকে আমি গতকাল রেস্টুরেন্টে নিয়ে গিয়েছিলাম খাবার খেতে। তখন আমার সাথে সোহানের দেখা হয়। যাকে আমি ভালোবাসি। কিন্তু আকাশের কেন জানি সোহানকে সহ্য হয়নি। তাই খাওয়া-দাওয়া শেষ করে রেস্টুরেন্টে থেকে ফিরে আসবার সময় আকাশ আমার গলা চে’পে ধরে ফোর্স করে বলেছে আজকের পর থেকে সোহানের সাথে না মিশতে। আজকের পর সোহানের সাথে আর কখনো কথা না বলতে। আর আমি চাই আর না চাই আমার বাকিটা জীবন নাকি আকাশের সাথেই কাটাতে হবে৷ তাই আমি তার সাথে আজ এমনটা করেছি। কারণ আমি সোহানকে ভালোবাসি। আমার মনে আকাশকে নিয়ে কিছুই নেই। তাহলে সে আমাকে ফোর্স করে আমার সাথে সারাজীবন থাকার স্বপ্ন দেখে কোন সাহসে? না আমি তাকে ভালোবাসি। না আমার মনে তার জন্য কোনো ফিলিংস আছে। যখন আমি তাকে ভালোবেসেছিলাম তখন সে পাত্তা দেয়নি। আর আজ সে এসেছে আমার সাথে ভালোবাসার নামে ধান্দা বাজি করতে?’
–‘তনু তার মনে ধান্দা বাজি না কি আছে সেটা সে আর উপর ওয়ালা ভালো জানে। তবে সে যেটা করেছে সেটাতে তো কোনো ভুল দেখতে পাচ্ছি না আমি। কারণ তুই নিজেই তাকে তিন বছরের জন্য বিয়ে করেছিস। সম্পর্কে সে তোর স্বামী হয়। তাহলে তার তো অবশ্যই অধিকার আছে তোর উপরে ফোর্স করার। আর সে তোকে তো খারাপ কিছু নিয়ে ফোর্স করেনি৷ শুন তনু সে একটা ছেলে মানুষ৷ আর তুই তার সম্পর্কে অর্ধাঙ্গিনী। তোকে অন্যের সাথে দেখে তার হয়তো গায়ে লেগেছে যার কারণে সে এমনটা করেছে। কিন্তু তার জন্য তো তুই তাকে এভাবে অপমান করে অফিস থেকে বের করে দিতে পারিস না।’
–‘মা গত পাঁচ বছর আগে আমি তাকে মনের কথা প্রকাশ করায় সে বড়োজোর শুধু আমার প্রপোজাল প্রত্যাখ্যান করতে পারতো, কিন্তু সে প্রপোজাল প্রত্যাখ্যান করার পাশাপাশি আমায় থা’প্পড় মে’রে অপমান করেছিল। আর মা আমি এই অকর্মা টাকে বিয়ে করেছি তাকে একটা শিক্ষা দেওয়ার জন্য। তার সাথে সংসার করার জন্য নয়। আর সে নিজেও সেটা ভালো করে জানে। কিন্তু তারপরেও সে আমার উপরে অধিকার ফলায় কি করে?’
–‘ঠিক আছে মানলাম সে পাঁচ বছর আগে তোকে থা’প্পড় মে’রে অপমান করেছে। আর তুই সেই জন্য তাকে শিক্ষা বা প্রতিশোধ নিতে বিয়ে করেছিস। এছাড়া এটাও মানলাম সে তোর উপরে অধিকার ফলিয়ে ভুল করেছে। কিন্তু তুই যেটা করেছিস বিশ্বাস কর সেটা তোর মোটেও উচিত হয়নি।’
–‘মা তোমার কাছে উচিত মনে না হলেও আমার কাছে উচিত মনে হয়েছে।’
–‘তনু তোর খুব অহঙ্কার তাইনা এই অফিস-আদালত নিয়ে? একটা কথা জানিস তো তনু অহঙ্কার সৃষ্টিকর্তার গায়ের চাঁদর। তুই কিন্তু সৃষ্টিকর্তার গায়ের চাঁদর নিয়ে টান দিয়েছিস। সৃষ্টিকর্তা কিন্তু তোকে ছাড়বে না। আর তার থেকেও বড় কথা তুই ছেলেটাকে অপমান অপদস্ত করে কাঁদিয়ে অফিস থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিস।
তোর অফিসের সিকিউরিটি যখন তোর কথা মতন ছেলে টাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছে, তখন ছেলেটা আমার চোখের সামনে দিয়েই চোখের পানি ফেলতে ফেলতে গিয়েছে। আমি ছেলে টার কান্নার সাথে সাথে ভিতরের আর্তনাদ দেখতে পেয়েছি। তনু আমি তোর মা হয়ে বলছি, বিশ্বাস কর ছেলেটার একটা চোখের পানিও যদি এই অফিসের মধ্যে পড়ে, তাহলে অভিশাপে তোর পুরো অফিস ধ্বংস হয়ে যাবে। এখনো সময় আছে যদি সম্ভব হয় ছেলেটার কাছে ক্ষমা চেয়ে তাকে ফিরিয়ে নিয়ে আয়।’
–‘ঠিক আছে মা মানলাম আমার ভুল হয়েছে। কিন্তু মা তুমি কি জানো শুধু মাত্র ঐ আকাশের কারণে আমার শরীরে পরপুরুষ স্পর্শ করেছে?’
–‘আকাশের কারণে তোর শরীরে পরপুরুষ স্পর্শ করেছে মানে?’
–‘মানে হলো গত পাঁচ বছর আগে আকাশ আমাকে অপমান করে চলে যাওয়ার বিষয়টা রাস্তার কয়েকজন ছেলে দেখে। যেটা আমি জানি না! আমার বান্ধবীরা আমাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে শান্ত করে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে তাড়াও বাড়িতে চলে যায়। এরপর আমি যখন একাকী হেঁটে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলাম তখন সেই ছেলে গুলো হুট করেই আমার সামনে এসে পথ আঁটকে আমার শরীরে হাত দিতে থাকে। আর সঙ্গে আমাকে বলতে থাকে, একটু আগে দেখলাম একটা ছেলে তোকে থা’প্পড় মে’রে তোর প্রেমের প্রপোজাল রিজেক্ট করেছে। কিন্তু বিশ্বাস কর আমরা তোকে রিজেক্ট করবো না। তুই খালি আমাদেরকে একবার প্রপোজাল দে, তাহলে দেখবি তোকে আমরা সবাই মিলে পরিপূর্ণ তৃপ্তি দিব। মা সেদিন আমি কোনো মতে ছেলে গুলোর হাত থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে দৌড়ে পালিয়ে নিজের ইজ্জত বাঁচিয়েছি। না হয়তো সেদিন আমার সর্বনাশ হয়ে যেতো। আর এই জিনিসটা একমাত্র আকাশের কারণে হয়েছে। সে যদি আমাকে গ্রহণ করে নিতো, তাহলে ছেলে গুলো আর ঐ কথা বলে আমার সাথে অসভ্যতা করতে পারতো না।’
–‘তনু হ্যাঁ তোর সাথে সেটা খারাপ হয়েছে। তবে এতে আকাশের কোনো দোষ দেখছি না আমি। হ্যাঁ সেদিন আকাশ তোকে রিজেক্ট করেছে। কিন্তু সে নিজে তো তোর সাথে অমনটা করেনি। আর না সে ঐ ছেলে গুলোকে শিখিয়ে দিয়েছে তার বিষয়টা নিয়ে মজা নিতে। আসলে ছেলে গুলোর ভিতরেই শয়তানি ছিল। তাই তারা ওসব কথাবার্তা বলে তোর সাথে নোংরামী করতে চেয়েছে। কিন্তু তুই অযথা ভুল বুঝছিস আকাশকে। তাই তোর কাছে অনুরোধ করবো ছেলে টাকে ফিরিয়ে নিয়ে আয়। আর আগামীতে কখনো ছেলে টার সাথে অমন করবি না। আর না কখনো ওর মনে কষ্ট দিবি। সে তার মতন অফিসে কাজ করবে। আর তুই তোর মতন কাজ করবি। পার্সোনাল কোনো আক্ষেপ তুই আর তার উপরে কখনো উঠাবি না প্রমিজ কর আমাকে।’
তনু এক বিপাকে পড়ে যায় তার মা’য়ের কথা শুনে। কি করবে ভেবে পাচ্ছে না তনু। আকাশের উপরে প্রচন্ড ক্ষোভ তনুর। কিন্তু তনুর মা এখন প্রমিজ করিয়ে তনুর হাত-পা বেঁধে দিতে চাইছে। কি করবে কিছুই মাথায় আসছে না তনুর। চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। তনুকে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তনুর মা বলে,
–‘ঠিক আছে শুন তোকে আর ফোর্স করবো না। তবে ইচ্ছে হলে আমার কথাটা রাখিস। এবার আমি চললাম।’
তনুর মা চলে যায়। তনুর মা’য়ের নাম সালমা বেগম। সালমা বেগম চলে যাওয়ার পর তনু তার মা’য়ের বলা কথা গুলো নিয়ে ভাবে। কিছুক্ষণ ভাবার পর তনু উপলব্ধি করতে পারে তনু যা করেছে সেটা ঠিক হয়নি। হ্যাঁ আকাশের উপরে তার রাগ অভিমান রয়েছে। কিন্তু তনু এযাত্রায় ও অতিরিক্ত করে ফেলেছে। তনুর ভিতরেও এবার খারাপ লাগছে তখনকার আচরণের কারণে। একটা মানুষ এক দিনের মধ্যে সাতটা ফাইল কমপ্লিট করেছে। তনু তাকে বাহবা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তনু সেটা না করে তাকে উল্টো অপমান করে বের করে দিয়েছে। তনু মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয় আকাশের কাছে ক্ষমা চেয়ে তাকে ফিরিয়ে আনবে। ভাবনা-চিন্তা মোতাবেক অফিসের ম্যানেজারের নাম্বার থেকে আকাশের কাছে ফোন দেয়। কারণ তনু ভালো করেই জানে তার নাম্বার দেখলে আকাশ ফোন রিসিভ করবে না। তাই সে ম্যানেজারের নাম্বার দিয়ে আকাশকে ফোন দেয়। কিন্তু আকাশ তাও ফোন রিসিভ করে না। বেশ কয়বার ম্যানেজারের নাম্বার থেকে আকাশকে ফোন দেওয়ার পরেও ফোন রিসিভ করার কোনো নাম-নিশানা নেই আকাশের। তনু বুঝতে পারে আকাশ হয়তো ফোন সাইলেন্ট করে রেখেছে। না হয়তো ইচ্ছে করেই কারোর ফোন রিসিভ করছে না। তনু আকাশকে ফোনে না পেয়ে ভাবে কি করবে। তখনি তনুর মাথা আসে ফোনের জিপিএস ট্রেকারের সাহায্যে আকাশের খোঁজ পাওয়া যেতে পারে, যদি আকাশ ফোনের লোকেশন অন থাকে। ভাগ্যক্রমে আকাশের ফোনের লোকেশন অন করাই ছিল। অবশ্য আকাশ ফোনের লোকেশন আজীবন এই অন করে রাখে। কারণ রাস্তাঘাটে কখন কি হয় বলা যায় না। তনু আকাশের লোকেশন পেয়ে যায়। অফিস থেকে বেরিয়ে গাড়ি নিয়ে লোকেশন দেখে সোজা আকাশের কাছে চলে যায়। আকাশ এখনো পার্কে বসে মন-ম’রা হয়ে কি করবে সেটা নিয়ে ভাবনায় মশগুল। তনু পার্কে গিয়ে আকাশের পাশে বসে। তবে তনু যে আকাশের পাশে গিয়ে বসেছে সেই দিকে আকাশের কোনো খেয়াল নেই। তনু আকাশের পাশে বসে ধীরে ধীরে হাতটা এগিয়ে নিয়ে গিয়ে আকাশের হাতের উপরে রাখে। যার ফলে আকাশ সাথে সাথে চমকে উঠে। আকাশকে চমকে উঠতে পাশ দেখে তনু আকাশকে বলে,
–‘আরে চমকে উঠার কিছু নেই আমি তনু।’
–‘হ্যাঁ ম্যাডাম আপনি তনু তা তো দেখতেই পেয়েছি। কিন্তু আপনি এখানে কি করছেন? আর আমার হাত ধরেছেন কেন?’
–‘তোর সাথে সময় কাটাতে এসেছি।’
–‘মানে?’
–‘মানে হলো তুই একা একা বসে আছিস। তাই তোর সাথে সময় কাটাতে চলে এলাম।’
–‘ম্যাডাম ফাজলামো করছেন আমার সাথে? আর হাতটা ছাড়ুন।’
–‘আরেহ ফাজলামো করছি না। আচ্ছা শুন আকাশ আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখীত তোর কাছে তখনকার আচরণের জন্য।’
–‘না ম্যাডাম সমস্যা নেই। আমার কপালে লিখা ছিল ওসব। আর এবার প্লিজ আমার হাতটা ছাড়ুন।’
–‘তোর হাত ছাড়ার জন্য তো ধরিনি। তুই এখন আমার সঙ্গে যাবি। তারপর তোর হাত ছেড়ে দিব আমি।’
–‘আমি আপনার সঙ্গে যাবো বলতে? কোথায় যাবো আমি?’
–‘অফিসে যাবি আবার কোথায় যাবি।’
–‘সরি ম্যাডাম আমি আর কাজ করবো না আপনার অফিসে।’
–‘আকাশ আমি সত্যিই সরি। আগামীতে আমি আর কখনো তোকে কিছু বলবো না। এবার চল আমার সাথে।’
–‘না ম্যাডাম আমি আর কখনো আপনার অফিসে যাবো না।’
–‘তোকে যেতে হবে। আমি বললাম তো তোকে আর কখনো কিছু বলবো না।’
–‘না ম্যাডাম আমি তাও আর আপনার অফিসে কাজ করবো না।’
–‘দ্যাখ আমার রাগ উঠাস না। ভুলে যাস না তুই কিন্তু এখনো আমার কাছে জিম্মি। তাই ভালো ভাবে চল আমার সাথে। তোকে আর আমি কখনো কিছু বলবো না। না হয় কিন্তু জোর করে নিয়ে যাবো বলে দিলাম।’
তনুর কথা শুনে আকাশ নিজের জেদ কমিয়ে ফেলে। কারণ সে ভালো করেই জানে তনুর কাছে সে এখনো জিম্মি। তাই সে তনুর অফিসে ফিরে যাবে বলে মনে মনে ঠিক করে। তবে সে মনে মনে আরেকটা সিদ্ধান্ত নেয়। এবার সে অফিসে যাবে ঠিক, কিন্তু অফিসের পুরো নকশা সে বদলে বদলে ফেলবে। কারণ যেখানে সিস্টেমে সমস্যা সেখানে মানুষকে নয় সিস্টেমকে ঠিক করতে হবে। আজ যেই মানুষ গুলা তাকে অফিস থেকে বের করে দিতে বলেছে, সেই মানুষ গুলাই একটা সময় তাকে ছাড়া কিছু বুঝবে না। এছাড়া তনুকেও সে নিজের আয়ত্তে করে নিবে। কারণ রাজ্যের প্রজাকে নয় রাজাকে পরাজয় করলে পুরো রাজ্য হাতে চলে আসে। আকাশ এখন সেটাই করবে। এতোদিন সে চুপসে ছিল। তবে আর নয়। ধৈর্যের একটা সীমা থাকে। যেটা এবার আকাশের অতিক্রম হয়ে গেছে। কতো ধানে কতো চাল আকাশ এবার এটা তনুকে বুঝিয়ে ছাড়বে….
চলবে….