অবেলায় তুমি পর্ব -০৮

#অবেলায়_তুমি (পর্ব-৮)
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ

আকাশ এতোদিন চুপসে ছিল। তবে আর নয়। ধৈর্যের একটা সীমা থাকে। যেটা এবার আকাশের অতিক্রম হয়ে গেছে। কতো ধানে কতো চাল আকাশ এবার এটা তনুকে বুঝিয়ে ছাড়বে। তনুর কথা মেনে নিয়ে আকাশ তনুর সাথে অফিসে যেতে রাজি হয়। তবে যাওয়ার আগে তনুকে বলে,

–‘ম্যাডাম আমি আপনার অফিসে যাবো ঠিক, কিন্তু আমি কাজ করতে গিয়ে কোথায় ভুল করেছি সেটা আমাকে দেখতে দিতে হবে। আই মিন ফাইল গুলো আমায় আবার দিতে হবে।’

–‘ঠিক আছে দিব। তুই এবার অফিসে চল। অফিসে পৌঁছে তুই নিজেই আমার কেবিনে ঢুকে ডেস্ক থেকে ফাইল গুলো নিয়ে নিস। সব কয়টা আমার ডেস্কের উপরেই রাখা আছে।’

–‘ওকেহ।’

আকাশ তনুর সাথে অফিসে চলে যায়। অফিসে পৌঁছে নিজেই গিয়ে তনুর কেবিন থেকে ফাইল গুলো নিয়ে এসে নিজের ডেস্কে বসে দেখতে থাকে কোথায় ভুল হয়েছে। সমস্ত ফাইল ঘেঁটে ঘেঁটে ভুল খুঁজতে থাকে। সাতটা ফাইলের ভিতরে শেষ ফাইলটার মধ্যে আকাশ ছোট খাটো একটা ভুল দেখতে পায়। যেটা কোনো আহামরি ভুল নয়। একবার কলমের গুঁতো দিলেই ভুলটা সংশোধন হয়ে যাবে। এছাড়া আকাশের কাছে আর কোনো ভুল চোখে পড়ে না। আকাশ আশ্চর্য হয় ছোট্ট একটা ভুলের কারণে তনু তার সাথে এমনটা করলো। ফাইল গুলো হাতে উঠিয়ে নিয়ে তনুর কেবিনে চলে যায়। তারপর ফাইল গুলো তনুর ডেস্কের উপরে রেখে বলে,

–‘ম্যাডাম একটা সামান্য ভুলের কারণে আপনি আমার সাথে এতো কিছু করলেন? আমার ভুলটা একদম অতি সামান্য ছিল। যেটা চাইলে মিনিটের মধ্যেই ঠিক করা যেতো। কিন্তু আপনি তা না করে আমাকে সকলের সামনে টেনে নিয়ে গিয়ে অপমান করে অফিস থেকেই তাড়িয়ে দিলেন?’

–‘আকাশ আসলে তোর উপরে আমার অনেক রাগ উঠেছিল গতকালের কারণে। আমার ইচ্ছে ছিল তোর উপরে প্রতিশোধ নেওয়ার। তাই তোকে সকলের সামনে নিয়ে গিয়ে অপমান করেছি। তবে বিশ্বাস কর তোকে অফিস থেকে বের করে দেওয়ার ইরাদা আমার মধ্যে ছিল না। কিন্তু অফিসের সকল কর্মচারী তোকে বের করে দিতে বলায় আমি কোনো কিছু না ভেবেই তাদের কথা মতন তোকে বের করে দিয়েছি।’

আকাশ তনুর কথা শুনে আবারো আশ্চর্য হয়। একটা মানুষ প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য কতোটা নিচে নামতে পারে সেটা তনুকে না দেখলে আকাশ কখনো বুঝতেই পারতো না। এক দিনে সাতটা ফাইল কমপ্লিট করা দু-চারটে কথা নয়। পুরো রাত অর্ঘুমা থেকে ফাইল গুলো কমপ্লিট করেছে আকাশ। তনুর কাছে প্রশংসার পাত্র হওয়ার কথা ছিল আকাশের। সেখানে ক্ষুদ্র একটা ভুলের কারণে উল্টো পুরো অফিসের সামনে লজ্জিত হতে হলো। সেই সঙ্গে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে তাকে অফিস থেকে বের করে দেওয়া হয়ে হয়েছে। অবাক দৃষ্টিতে তনুর দিকে তাকিয়ে থাকে আকাশ। বলার মতন কিছুই খুঁজে পাচ্ছেনা সে। অপরদিকে তনু আকাশকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে,

–‘আমি ক্ষমাপ্রার্থী তোর কাছে। তুই আমাকে ক্ষমা করে দে। আগামীতে আর কখনো তোর সাথে এই রূপ আচরণ করবো না।’

আকাশ কিছু বলে না। মুচকি হাসি দিয়ে তনুর কেবিন থেকে কোনো কথাবার্তা ছাড়া বেরিয়ে যায়। কারণ সম্মান নষ্ট করার জন্য মানুষকে একাধিক বার তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতে হয় না। একবার করলেই যথেষ্ট। আর তনু সেটা তার সাথে একবার করে ফেলেছে। আগামীতে করুক আর না করুক তাতে আর তেমন কিছু যায় আসে না। দাগ যা লাগার প্রথম বারেই লেগে গিয়েছে। তাই আকাশ তনুর কথার কোনো গ্রাহ্য না করে কেবিন থেকে বেরিয়ে চলে যায়। আকাশের আচরণে এবার তনুও আশ্চর্য হয়। তনু ভাবে তার কথার প্রত্যুত্তরে কিছু না বলে আকাশ হুট করেই চলে গেলো। তনুর ভিতরে আকাশের এই ব্যাপার টা কেমন যেনো দাগ কাটে। তবে তনুকে কে বোঝাবে সবে মাত্র শুরু। এখনো বহু দাগ কাটা বাকি। অন্যদিকে আকাশ ডেস্কে বসে বসে ভাবে তনুকে কি ভাবে কন্ট্রোল করা যায়। এমন সময় অফিসের ম্যানেজার আকাশের কাছে এসে বলে,

–‘এই আকাশ তোমাকে না ম্যাডাম অফিস থেকে বের করে দিয়েছে? কিন্তু পরবর্তীতে কি মনে করে উনি তোমায় আবার অফিসে নিয়ে আসলো? হটাৎ ম্যাডামের কি হয়েছে? উনি তোমাকে বের করে দেওয়ার পর আমার নাম্বার থেকে বেশ কয়েকবার তোমাকে ফোন দিয়েছে। কাহিনীটা কি?’

ভাবনার অবসান ঘটিয়ে আকাশ ম্যানেজারকে বলে,

–‘কাহিনী হচ্ছে অফিসে নাকি গরু,ছাগল দিয়ে ভরপুর। তাই ম্যাডাম আবার আমাকে নিয়ে এসেছে। কারণ গরু,ছাগল দিয়ে কখনোই অফিসের কাজকর্ম হবে না। কাজ কর্মের জন্য কিছু মানুষ দরকার। যেটা ম্যাডাম বুঝতে পাড়ার পর আমাকে আবার ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে।’

–‘মানে কি?’

–‘এই যে মাত্রই বললাম মানে টা।’

–‘আকাশ তুমি কি আমাকে অপমান করলে?’

–‘ওমাহ আপনাকে অপমান কেন করবো? ম্যাডামের যা ভাষ্য আমি তো তাই আপনাকে বললাম।’

ম্যানেজার লজ্জা পেয়ে চলে যায়। ম্যানেজার থেকে মুখে পানি ছুঁড়ে মা’রার প্রতিশোধ নিয়েছে আকাশ। ম্যানেজার চলে যাওয়ার পর আকাশ আবারো ভাবতে থাকে তনুর বিষয় নিয়ে। ভাবতে ভাবতে একটা বুদ্ধি আসে আকাশের মাথায়। আকাশ এবার বুদ্ধিটা কাজে খাটাবে। অবশ্য আকাশের এখন তেমন কোনো বুদ্ধি খাটানোর প্রয়োজন নেই৷ কারণ তনু তাকে বলেই দিয়েছে সে আগামীতে আর তাকে কিছু বলবে না। কিন্তু তার পরেও তনুকে রিয়েলাইজ করানো উচিত তনু যেটা করেছে সেটা অনেক বড় অন্যায়। না হয়তো একই ভুল তনু পরবর্তীতে আবার করতে পারে। আকাশ যথারীতি প্রিপারেশন নিয়ে বসে থাকে। দুপুরে লাঞ্চের কিছু সময় আগে তনুর কেবিন থেকে আকাশের ডাক আসে। আকাশ তনুর কেবিনে যায়। তনু আকাশকে নিজের কেবিনে ডেকে নিয়ে ব্যাগ থেকে হাজার টাকার একটা নোট আকাশের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,

–‘এই নে এক হাজার টাকা। এই টাকা দিয়ে অফিসের বাহিরে যেই কেন্টিনটা আছে সেখান থেকে আমার আর তোর জন্য দুই প্যাকেট খাবার কিনে নিয়ে আয়। আজ দুপুরে আমরা দু’জন এক সাথে লাঞ্চ করবো।’

আকাশ তনুর থেকে টাকাটা নিয়ে চুপচাপ কোনো কথাবার্তা ছাড়া কেবিন থেকে বেরিয়ে কেন্টিনে চলে যায়। কিছু সময় পর কেন্টিন থেকে খাবার নিয়ে ফিরে আসে। তনুর দেওয়া টাকা থেকে খাবার আনার পর অতিরিক্ত অনেক টাকা বেঁচে যায়। আকাশ খাবারের প্যাকেট এবং অতিরিক্ত টাকা গুলো তনুর ডেস্কের উপরে রেখে কেবিন থেকে বেরিয়ে আসার উদ্দেশ্যে হাঁটা দেয়। তনু আকাশের আচরণে যথারীতি আবারো আশ্চর্য হয়। তবে আগের বারের চাইতে এবার একটু বেশিই আশ্চর্য হয়। কারণ আকাশকে দুই প্যাকেট খাবার আনতে বলেছে তনু। কিন্তু আকাশ এক প্যাকেট খাবার নিয়ে এসেছে। তার উপরে কোনো কিছু না বলেই সে চলে যাচ্ছে। তনু পিছন থেকে আকাশকে ডেকে বলে,

–‘এই তুই কোথায় যাচ্ছিস? আর তোকে না বললাম দুই প্যাকেট খাবার আনতে? তাহলে তুই এই প্যাকেট খাবার এনেছিস কি করতে? আমার কথাটা কি তোর কানে যায়নি?’

–‘গিয়েছে।’

–‘তাহলে দুই প্যাকেট খাবার আনিস নি কেন?’

–‘প্রয়োজন মনে করিনি তাই।’

–‘মানে?’

–‘মানে হলো আপনি অফিসের বস। আর আমি সামান্য একজন কর্মচারী। আপনার সাথে এক সঙ্গে খাবার খাওয়াটা আমার শোভা পায়না। এছাড়া আপনি আমাকে মাসিক বেতন দিবেন কাজের জন্য। যেই টাকা দিয়ে আমার সারা মাস ঘর আর নিজের পকেট চলবে। তাহলে অযথা নিজের টাকা রেখে আপনার টাকায় খেতে যাবো কেন। তাই আর নিজের জন্য খাবার কিনে আনিনি। আচ্ছা ম্যাডাম এবার আমি গেলাম। আপনি খেয়ে নিন।’

আকাশের কথা শুনে তনুর মাথা পুরোপুরি আউলে যায়। তনু পুরো হতভম্ব হয়ে গেছে আকাশের কথা শুনে। তনুর এখন কেমন রিয়াকশন করা উচিত তনু নিজেও বুঝে উঠতে পারছে না। আকাশ তনুর মাথা আউলে দিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে চলে গেছে। তনুর ইচ্ছে করছে পুরো কেবিনের সমস্ত জিনিসপত্র ভেঙ্গে চুর্মাচুর করে ফেলতে। ভয়ানক রকমের রাগ উঠছে তনুর। তবে তনু নিজেকে কোনো ভাবে সামলে নেয়। আর রাগটা ঝাড়ে খাবারের উপরে। আকাশের আনা খাবারের প্যাকেটে তনু কোনো প্রকারের হাত দেয় না। খাবার গুলো ডেস্কের উপরের ফেলে রেখে কাজ করতে থাকে। অন্যদিকে আকাশ তনুকে কৌশলে মা’ইর দিয়ে ডেস্কে এসে বসে আছে। মা’ইরের প্রতিক্রিয়াতে তনুর ভিতরটা জ্বলছে কিন্তু তনু কিছুই বলতে পারছে না আকাশকে। না খেয়েই তনু সারাটা দুপুর কাঁটায়। বিকাল বেলায় অফিস ছুটি হওয়ার মিনিট পাঁচেক আগেই তনু কেবিন থেকে বেরিয়ে এসে আকাশকে বলে,

–‘কাজটা ঠিক করিস নি। অনেক ইচ্ছে ছিল দুপুরে দু’জনে এক সঙ্গে খাবার খাবো। কিন্তু তুই আমার ইচ্ছেটা পূর্ণ হতে দিলি না। তোর উপরে রাগ করে আমারো দুপুরের খাবারটা আর খাওয়া হয়নি।
যাক যা করেছিস ভালো করেছিস। এবার প্রিপারেশন নে বাড়ি যাওয়ার। আর কিছু সময়ের মধ্যেই অফিস ছুটি হবে।’

তনু আকাশকে কয়েকটা কথা বলে অফিস থেকে বেরিয়ে যায়। এদিকে আকাশ তনুর কথা শুনে বুঝতে পারে তার বুদ্ধি কাজে দিচ্ছে। সে যেই হাতিয়ারটা তনুর উপরে প্রয়োগ করেছে, সেটা থেকে সহজে মানুষ বাঁচতে পারে না। তনু যাওয়ার পর আকাশ হাসতে হাসতে নিজের ব্যাগ গুছিয়ে নেয়। এরপর অফিস ছুটি হতেই সে বাড়ি চলে যায়। এভাবেই দিন কাটতে থাকে। আকাশ নিজেকে একদম লিমিটে নিয়ে আসে। তনু আকাশকে কোনো কাজের জন্য ডাকলে আকাশ খুব হিসেব-নিকাশ করে তনুর সাথে কথা বলে। সব সময় মুখ গম্ভীর করে রাখে তনুর সামনে গেলে। এক কথায় আকাশ তনুকে এটা বুঝায় আকাশ তার সাথে কথা বলতে ইন্টারেস্ট না। সেটা হোক কাজের কথা বা এমনিতেই কোনো কথা। আকাশ তনুর সাথে এই জিনিসটা প্রতিদিন করতে থাকে। কিছুদিন যাওয়ার পর তনু লক্ষ্য করে আকাশ কেমন যেনো পাল্টে গেছে। আকাশের ভিতরে কেমন যেনো পরিবর্তন এসেছে। একটা সময় তনুর সাথে সে সাধারণ ভাবেই কথা বলতো। কিন্তু এখন কেমন যেনো এক রকমের হয়ে গেছে। নিশ্চুপ একটা ভাব চলে এসেছে আকাশের মাঝে। ছোট খাটো কোনো কথায় মাথা নাড়িয়ে জওয়াব দেয়। খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু হলে তখন গুনে গুনে এক-দুইটা কথা বলে। সেই প্রথমের আকাশের সাথে এখনকার আকাশকে তনু কোনো ভাবেই মেলাতে পারছে না। আকাশের পরিবর্তনে তনুর ভিতরে কেমন যেনো একটা প্রভাব পড়ে। তবে তনু সেটা আকাশের সামনে প্রকাশ করে না। এভাবেই চলতে থাকে। একদিন অফিস চলাকালীন সময়ে তনু আকাশকে ডেকে বলে,

–‘আজ রাতে একটা পার্টি আছে। যেখানে আমার সাথে তোর যেতে হবে। পার্টিটা রেখেছে আসাদ নামক একজন ভদ্রলোক। যিনি কিনা আমার বিজনেস পার্টনার। সেখানে আমার পরিচিত আরো অসংখ্য লোক থাকবে। আর পার্টিতে সোহান ও আসবে। কারণ আসাদ সাহেব আমাকে চেপে ধরেছে পার্টিতে নিজের জীবনসঙ্গী সম্পর্কে সবাইকে জানাতে। এবং বিয়ের ডেট সম্পর্কে এনাউন্সমেন্ট করতে। শুন তুই ভালো জামা-কাপড় পড়ে রেডি হয়ে মাগরিবের পর আমার বাসার নিচে চলে আসিস। তারপর আমরা দু’জন গাড়ি করে যাবো। আর সোহান ও সময় মতন সেখানে পৌঁছে যাবে।’

–‘আচ্ছা।’

মাগরিবের পর রেডি হয়ে আকাশ তনুর বাসার নিচে চলে যায়। তনুও রেডি-টেডি হয়ে নিচে এসে আকাশকে নিয়ে গাড়ি করে পার্টিতে এসে হাজির হয়। আকাশ পার্টিতে এসে এক কোণায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। আর তনু তার থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে এক মেয়ের সাথে কথা বলছে। এমন সময় আসাদ সাহেব তনুর কাছে গিয়ে বলে স্পিকার হাতে নিয়ে স্টেজে গিয়ে সবাইকে নিজের জীবনসঙ্গী সম্পর্কে জানাতে। তনু আসাদ সাহেবকে বলে আর একটু পরেই সে স্টেজে গিয়ে সবাইকে নিজের সম্পর্কে বলবে। এবং সবাইকে নিজের জীবনসঙ্গীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিবে। আসাদ সাহেব চলে যায়। তনু মেয়েটার সাথে কথা বলা বাদ দিয়ে আকাশের কাছে এসে বলে,

–‘আর কতো সময় অপেক্ষা করবো সোহানটার জন্য আল্লাহ জানে! সে এখনো আসছে না। মাথাটা পুরো খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আচ্ছা তুই কি একটু গেইটের সামনে গিয়ে দেখবি সোহান আসছে কিনা?’

–‘আচ্ছা দেখছি।’

আকাশ গেইটের সামনে চলে যায় সোহান আসছে নাকি দেখার জন্য। কিন্তু সোহান আসার কোনো নাম গন্ধ নেই। আকাশ ফিরে এসে তনুকে বলে সোহানকে দেখতে পাওয়া যায়নি। তনু আকাশের কথা শুনে আকাশকে বলে,

–‘ওর আসার গুষ্টি মা’রি। ওর আর আসতে হবে না। তুই চল আমার সাথে। তুই একদম চুপচাপ থাকবি। আর আমি ডাকলে পরে তুই আমার কাছে যাবি। আর আমি যেমন যেমন বলবো তুই শুধু সেটার উপরে ভিত্তি করে পরে সবাইকে কিছু বলবি।’

আকাশ কিছুই বলে না। তনু আকাশকে নিয়ে গিয়ে সামনে একটা জায়গায় দাঁড় করিয়ে দেয়। আর সে স্পিকার হাতে নিয়ে স্টেজে গিয়ে উঠে। এরপর আকাশকে সবাইকে দেখিয়ে দিয়ে বলে,

–‘ঐ যে মানুষটা সে হচ্ছে আমার প্রিয় মানুষ। আমরা দু’জন একটা মিউচুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ে রয়েছি। দু’জনের মধ্যে গভীর প্রেম চলছে। অল্প কয়দিন পরেই আমরা দু’জন বিবাহ করবো।’

তনু আকাশকে নিজের বয়ফ্রেন্ড বলে পরিচয় করিয়ে দিয়ে আকাশকে স্টেজে ডেকে তার হাতে স্পিকার দিয়ে বলে তাদের দু’জনের সম্পর্কে কিছু বলতে। আকাশ স্টেজে গিয়ে সোজা তনুর মুখে চুনকালি মেখে দিয়ে বলে,

–‘আমরা দু’জন কোনো মিউচুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ে নেই। আমি উনার অফিসের একজন কর্মচারী। আর উনি আমার অফিসের ম্যাডাম। উনার বয়ফ্রেন্ড হচ্ছে সোহান নামক একজন ভদ্রলোক। যিনি এই পার্টিতে আসার কথা ছিল। কিন্তু কোনো কারণে উনি আসতে না পারায় ম্যাডাম আমাকে উনার বয়ফ্রেন্ড বলে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আমি চাইনা আপনারা কেউ বিভ্রান্ত হন। তাই উনাকে আরো কিছুটা সময় দিন। কিছু সময়ের মধ্যে হয়তো উনার আসল প্রেমিক সোহান চলে আসবে।’

আকাশ সবার সামনে সত্যিটা বলে স্টেজ থেকে নেমে পার্টি থেকে বেরিয়ে চলে যায়। এদিকে আকাশের কর্মকান্ডে লজ্জায় তনু স্টেজে দাঁড়িয়ে কান্না করে দিয়েছে। সবাই তনুর দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে
আছে। কিছুক্ষণ পর তনুও লজ্জায় স্টেজ থেকে নেমে কান্না করতে করতে পার্টি থেকে বেরিয়ে চলে যায়। পার্টি থেকে বেরিয়ে গাড়িয়ে গিয়ে উঠে বসে। গাড়িতে আগ থেকেই আকাশ বসা ছিল। আকাশ ও পার্টি থেকে বেরিয়ে এসে গাড়ির মধ্যে উঠে বসেছে। তনু গাড়িতে উঠে আকাশকে দেখতে পেয়ে রাগে আকাশের শার্টের কলার টেনে ধরে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে চেঁচিয়ে বলে,

–‘কেন তুই আমার সাথে এমনটা করলি?’

–‘কারণ আপনি মিথ্যা বলেছেন সবাইকে। আমি আপনার কোনো বয়ফ্রেন্ড না। আপনার বয়ফ্রেন্ড হচ্ছে সোহান। কিন্তু আপনি আমাকে সবার সামনে বয়ফ্রেন্ড বলে মিথ্যা পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। তাই আমি সবার সামনে ঐরকমটা বলেছি।’

–‘আসলেই তুই একটা নিচু মনের মানুষ। ঐরকমটা করার আগে তোর দশ বার ভাবা উচিত ছিল। আর কি বললি আমি মিথ্যা বলেছি? শুন আমি কোনো মিথ্যা বলিনি। আর সোহান আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড না। সে শুধু মাত্র আমার ফ্রেন্ড।’

আকাশ তনুর কথা শুনে ভুত দেখার মতন চোখ বড় বড় করে তনুর দিকে তাকিয়ে থাকে….

চলবে…

(ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here