অব্যক্ত ভালোবাসা পর্ব -১৬

#অব্যক্ত_ভালোবাসা
#লেখনীঃআরভি_আহিয়াদ_তিহু
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্বঃ16

ফজরের দিকে সৃজা আশুর রুম থেকে বের হয়ে পাঁ টিপে টিপে গিয়ে শানের রুমের সামনে দাড়াল। সতর্ক চোখে চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে দরজায় নক করল। একবার নক করতেই শান এসে দরজা খুলে দিল। সৃজা ভ্রু কুচকে বলল,

–“একি তুমি ঘুমাও নি?”

শান আঙুল দিয়ে কপাল ঘষতে ঘষতে বলল,
–“না, একটু কাজ ছিল, সেটাই করছিলাম। ফজরের নামাজ পড়ে তারপর ঘুমাব। তুই এত ভোরে এখানে কি করছিস?”

সৃজা আমতা আমতা করে বলল,
–“আসলে ভাইয়া আজকে একটা ইম্পরটেন্ট ক্লাস আছে। সেটা নিয়েই নেটে একটু রিসার্চ করছিলাম। কিন্তু কাজের মধ‍্যেই হঠাৎ ফোনটা সুইচ অফ হয়ে গেছে। তাই তোমার কাছে আসলাম। তোমার আইপ‍্যাড টা একটু দিবে ভাইয়া?”

শান গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
–“এখন উঠে রিসার্চ করছিস? সন্ধ‍্যায় কি কাজ করছিলি? ইম্পরটেন্ট ক্লাস যখন ছিল, তখন সন্ধ‍্যায়ই ত সব কম্পিলিট করে রাখা উচিৎ ছিল, তাইনা?”

–“সন্ধ‍্যায় ত গেস্ট’রা এসেছিল, তাই তখন….”

সৃজাকে কথার মাঝে থামিয়ে দিয়ে শান বলল,
–“তাই তখন… কি? এসব লেইম এক্সকিউজ আমাকে দিস না সুজি। তোর মতো আমি যখন স্টুডেন্ট ছিলাম তখন এরকম হাজারটা অকেশন ইগনোর করেছি। সবকিছু বাদ দিয়ে সারাদিন শুধু স্টাডি করেছি। তুইও সেটাই কর। অহেতুক লাফালাফি গুলো বাদ দিয়ে নিজের স্টাডিতে মনোযোগী হ।”

কথাটা বলে শান আইপ‍্যাড আনতে ভিতরে চলে গেল। সৃজা বিরক্তিতে কপাল কুচকে বিরবির করে বলল, “শুরু হয়ে গেল বাবা বিদ‍্যান শানের লেকচার। ভাগ‍্যিস যুদ্ধের সময় শেখ মুজিবুর রহমান যখন ৭ই মার্চের ভাষন দিয়েছিল তখন এই বিদ‍্যান মহাশয় সেখানে উপস্থিত ছিল না। থাকলে হয়ত শেখ মুজিবুর রহমানের যুদ্ধের আহ্বানের বিরোধীতা করে বলত, তোমরা এসব যুদ্ধ-মারামারি বাদ দিয়ে বইখাতা নিয়ে পড়তে বসো। পড়ার থেকে ইম্পরটেন্ট পৃথিবীতে আর কিচ্ছু নেই।” সৃজার এসব কথা বলার মধ‍্যেই শান আইপ‍্যাড নিয়ে এসে সৃজার হাতে ধরিয়ে দিল। তারপর খানিকটা সতর্ক করার ভঙ্গিতে বলল,

–“উল্টাপাল্টা কোনো ফোল্ডারে ঢুকবি না। এটা আমার কাজের জিনিস। যেভাবে নিয়ে যাচ্ছিস সেভাবে আবার আমার কাছে ব‍্যাক করে যাবি। ওকে?”

শানের কথায় সৃজা ডানে বামে ঘাড় কাৎ করে হ‍্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল। শান আর কিছু না বলে দরজাটা লক করে দিল। সৃজা আবারও সতর্ক দৃষ্টিতে আশেপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে রুশার রুমের দিকে এগিয়ে যায়। রুশা-ই রাতে সৃজাকে এটা শানের থেকে নিয়ে আসার জন‍্যে বলেছিল। তবে চেয়ে না, চুরি কর আনতে বলেছিল। কিন্তু সৃজা চুরি করার থেকে মিথ‍্যা বলে চেয়ে নিয়ে আসাটাই শ্রেয় মনে করল।

দরজায় জোরে জোরে দু-বার নক করার পরেও ওপাশ থেকে রুশার কোনো সারাশব্দ আসলো না। হঠাৎ পিছন থেকে আয়াশ নিজের রুমের দরজা খুলে বাইরে বেড়িয়ে আসলো। সৃজা ঘাড় ঘুড়িয়ে পিছনে ফিরে একবার আয়াশের দিকে তাকিয়ে আবারও রুশার রুমের দরজায় নক করল। আয়াশ ভ্রু কুচকে সৃজাকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে প্রশ্ন করল,

–“তুমি এখানে কি করছো?”

সৃজা পিছনে ঘুরে ব‍্যাঙ্গাত্মক ভঙ্গিতে বলল,
–“রুমে ঘুম আসছিল না, তাই এখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে ঘুমাচ্ছি।”

সৃজার কথা শুনে আয়াশ গম্ভীর স্বরে বলল,
–“অহেতুক ফালতু কথা আমার পছন্দ না। যেটা জিজ্ঞেস করছি সেটার সরাসরি অ‍্যান্সার দেও। এত সকালে এখানে কি করছো তুমি?”

সৃজা আয়াশের কথার তোয়াক্কা না করে, আবারও আগের মতো করেই বলল,

–“আমার পোষা গরুদের খিদে পেয়েছে। তাই সকাল সকাল তাদের জন‍্যে ঘাস কাঁটতে এসেছি। আপনি খেতে চাইলে আপনার জন‍্যেও কাঁটতে পারি।”

সৃজার ত‍্যাড়া ত‍্যাড়া অ‍্যান্সার শুনে আয়াশের মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। ওর ধৈর্য এমনিতেই একটু কম। তার উপর কেউ ওর মুখে মুখে কথা বললে ‘ও’ সেটা একদম মেনে নিতে পারে না। আয়াশ বিরক্ত হয়ে এগিয়ে এসে সৃজার হাতের বাহু ধরে ওকে নিজের দিকে ঘোরাল। তারপর খিটখিটে মেজাজ নিয়ে বলল,

–“সেদিনের থাপ্পরটার কথা নিশ্চয়ই ভুলে যাওনি? আমার সাথে বাদরামি করতে আসলে সেদিনের মতো আরো একটা কানের নিচে পড়বে। বি কেয়ারফুল, ওকে?”

কথাটা বলতে বলতে আয়াশ সৃজার হাতের বাহুটা আরেকটু জোরে চাপ দিয়ে ধরল। সাথে সাথে সৃজা ঘাড় কাৎ করে আয়াশের ডান হাতের কব্জিতে জোরে কামড় বসিয়ে দিল। ঘটনার আকষ্মিকতায় আয়াশ ছিটকে কয়েক পাঁ পিছনে সরে গেল। ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে একবার সৃজার দিকে তাকিয়ে ওর ডান হাতের কব্জিতে দৃষ্টি রাখল। ফর্সা হাতে দাঁতের দাগ গুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আয়াশ বাম হাত দিয়ে ডান হাতের আঘাতপ্রাপ্ত স্থান টা ঘষতে ঘষতে বলল,

–“ইউ ইডিয়েট, এটা কি করলে? তোমার জন‍্যে আমার হাতে স্পট পড়ে গেল।”

সৃজা মুখ বাঁকিয়ে বলল,
–“ভালোই হল। ভবিষ্যতে যদি আপনি আবারও আমাকে হার্ট করতে আসেন, তাহলে আবারও এভাবে কামড়ে দিব। সাথে আপনার মুখে খুব জোরে খামচিও দিয়ে দিব। বুঝেছেন?”

সৃজা কথাটা বলার সাথে সাথে রুশা ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে এসে দরজার লক খুলে দিল। ঘুমুঘুমু চোখে দেখল আয়াশ খেয়ে ফেলা লুক নিয়ে সৃজার দিকে তাকিয়ে আছে। পরিস্থিতি বোঝার জন‍্যে রুশা চোখ কচলাতে কচলাতে জিজ্ঞেস করল,

–“কি ব‍্যাপার? কি হচ্ছে এখানে?”

সৃজা রুশার দিকে ঘুড়ে খুশীতে গদগ‍দ হয়ে বলল,
–“ওই বিশ্রি লোকটা আমাকে আবারও মারতে এসেছিল। তাই আমি অনেক জোরে ওর হাতে একটা কামড় দিয়ে দিয়েছি। এইবার ‘ও’ হাড়ে হাড়ে টেড় পাবে সৃজা কি জিনিস।”

–“অসভ‍্য মেয়ে, একে ত আমার হাতে কামড় দিয়েছো, আর এখন আবার সেটা আমার সামনে দাড়িয়েই বলছো? তোমাকে ত আমি….!”

কথাটা বলতে বলতে আয়াশ সৃজার দিকে তেড়ে এলো। সৃজা দ্রুত পিছিয়ে গিয়ে রুশার পিছনে দাড়িয়ে ওর হাতে থাকা আইপ‍্যাড টা উপরে উঠিয়ে আয়াশকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে হুমকির স্বরে বলল,

–“খবরদার মিঃ আয়াশ, আমার কাছে আসলে কিন্তু আমি এইটা একদম আপনার মাথায় ছুড়ে মারব। আপনি কিন্তু এখনো আমাকে চিনেন না। আমি কিন্তু ভিষণ ডেঞ্জারাস একটা মেয়ে। একবার যেটা বলি, সেটাই করি।”

সৃজা আর আয়াশের কান্ড দেখে রুশার ঘুম উবে গেল। ‘ও’ আয়াশের দিকে তাকিয়ে মুখ থেকে বিরক্তিকর একটা ‘চ’ শব্দ উচ্চারন করে বলল,

–“বাচ্চা মেয়েটার সাথে এরকম কেন করছিস আয়াশ? কাজ না থাকলে গিয়ে ঘুমিয়ে থাক। তাও অযথা ওকে বিরক্ত করিস না।”

আয়াশ রুশার দিকে নিজের আঘাতপ্রাপ্ত হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে অভিযোগের ভঙ্গিতে বলল,

–“ওই এচোড়ে পাকা মেয়েটাকে তোর বাচ্চা মেয়ে মনে হচ্ছে? দেখ ত ‘ও’ কামড়ে আমার সুন্দর হাতটাকে কি করেছে? ওর ডাইনোসরের মতো দাঁত গুলো সব আমার স্কিনে বসিয়ে দিয়েছে। বেয়াদব ডাইনোসর মেয়ে কোথাকার!”

রুশা বিরক্তির স্বরে বলল,
–“সামান‍্য একটা কামড় ই ত দিয়েছে আয়াশ। এরজন‍্যে এত রিয়‍্যাক্ট করার কি আছে? হাতে একটু ওয়েনমেন্ট লাগিয়ে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়। সকাল সকাল অযথা আমার মাথা খাস না।”

কথাটা বলে ঠাস করে রুশা দরজাটা বন্ধ করে দিল। আয়াশ রাগি চোখে কিছুক্ষণ বন্ধ দরজার দিকে তাকিয়ে থেকে দরজার উপরে জোরে একটা লাথি মেরে নিজের রুমে চলে গেল। এদিকে দরজা লক করতেই সৃজা দাঁত বের করে হেঁসে রুশার দিকে আইপ‍্যাড টা বাড়িয়ে দিয়ে বলল,

–“এই নাও ভাইয়ার আইপ‍্যাড। মিথ‍্যা বলে ওর থেকে নিয়ে এসেছি। চুরি করার প্রয়োজন হয়নি।”

রুশা বলল,
–“ওয়েলডান। এবার এটার পাসওয়ার্ড দিয়ে এটাকে ওপেন করো।”

রুশার কথা মতো সৃজা পাসওয়ার্ড দিয়ে আইপ‍্যাডের লক খুলে ফেলল। সৃজা প্রায়ই স্টাডির জন‍্যে শানের থেকে আইপ‍্যাড নিয়ে এসে নিজের কাজ করে। সেইজন‍্যে এটার পাসওয়ার্ড ওর ভালো মতোই জানা। লক খোলার সাথে সাথে রুশা সৃজার থেকে আইপ‍্যাড টা নিজের হাতে নিয়ে নিল। তারপর কল লিস্টে ঢুকে একটু স্ক্রল করতেই নিজের কাঙ্খিত জিনিসটা পেয়ে গেল। সৃজা প্রশ্নবিদ্ধ চাহনিতে রুশার দিকে তাকিয়ে বলল,

–“আপু তুমি অ‍্যাকচুলি কি করতে চাইছো আমাকে একটু বলবে প্লিজ?”

রুশা নিজের ফোন হাতে নিয়ে আইপ‍্যাড থেকে একটা নম্বর নিজের ফোনের উঠাতে উঠাতে বলল,

–“আপাতত মিঃ হৃদানকে ট্রিট দেওয়ার কথা ভাবছি। চাইলে তুমিও তোমার হবু জিজুর সাথে কফি খাওয়ার জন‍্যে আমার সাথে যেতে পারো।”
_________________________
সকাল 10:45

একটা রেস্টুরেন্টে পাশাপাশি বসে আছে রুশা আর সৃজা। ওদের সামনেই হৃদান নামের ছেলেটা বসে বসে হাতে থাকা কফি মগটা নেড়েচেড়ে ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে দেখে যাচ্ছে। আর খুব মনোযোগ দিয়ে রুশার কথা গুলো শুনছে। সবকিছু বলে রুশা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চুপ হয়ে গেল। কিন্তু ওর বেশ অদ্ভুত লাগল এটা দেখে ছেলেটা সব শোনার পরেও একদম নিশ্চুপ আছে। কোনো রকম রিয়‍্যাক্ট ই করছে না। রুশা চুপ হয়ে যেতেই হৃদান শান্ত ভঙ্গিতে কফিতে চুমুক দিল। তারপর কফি মগের দিকে দৃষ্টি রেখেই বলে উঠল,

–“ওয়েল মিস রুশানি, এসব আমি অনেক আগে থেকেই জানি। আশুকে যেদিন প্রথম দেখতে গিয়েছিলাম সেদিনই উনি কেঁদে কেটে আমাকে সব বলেছিলেন। আর এই বিয়েটা করতে বারনও করেছিলেন।”

হৃদানের কথায় সৃজা আর রুশা ভিষণ অবাক হল। একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করে রুশা বলে উঠল,

–“সব জানার পরেও আপনি এই বিয়েটা কেন করছেন?”

হৃদান রুশার দিকে দৃষ্টি রেখে বলল,
–“কজ আমার এসবে কিচ্ছু আসে যায় না। আশুর উপরেও আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই। এই বিয়েটা শুধুমাত্র একটা বিজনেস ডিল। আশু যদি বিয়ের পরেও ওই ছেলের সাথে রিলেশন রাখে সেটা নিয়েও আমার কোনো মাথা ব‍্যাথা নেই। বিয়ের পর ‘ও’ ওর মতো থাকবে, আর আমি আমার মতো থাকব। দ‍্যাটস ইট!”

হৃদানের এমন লেইম কথাবার্তা শুনে রুশা রেগে গেল। হাইপার হয়ে খানিকটা উঁচু গলায় বলল,

–“হোয়াট রাবিশ! আপনাদের কাছে কি বিয়েটা ফাজলামো মনে হয়? একটা মেয়ের লাইফ নিয়ে আপনারা সবাই ছেলে খেলা শুরু করেছেন? আপনাদের ওই বিজনেস ডিল আমি আপনাদের পানির সাথে গুলিয়ে খাইয়ে দিব।”

হৃদান বলল,
–“টেইক ইট ইজি ম‍্যাম, এত হাইপার হলে চলে?”

রুশা ধমকের স্বরে বলল,
–“শাটআপ ইউ ইডিয়ড। আপনার সাথে ত আমার কথা বলার কোনো ইচ্ছেই নেই। এইবার আমি যা বলার শান রায়জাদা আর ইমদাদ সিকদারকে বলব।”

কথাটা বলে রুশা দাড়িয়ে গেল। টেবিলের উপর থেকে নিজের সাইড ব‍্যাগ টা হাতে নিয়ে সামনের দিকে হাঁটা দিল। সৃজাও বসা থেকে দাড়িয়ে রুশার পিছনে যাওয়ার জন‍্যে উদ‍্যত হল। এরমধ‍্যেই হৃদান এসে খপ করে রুশার হাত ধরে বলল,

–“হেই লিসেন টু মি, খবরদার শানকে আপনি এই বিষয়ে কিচ্ছু বলবেন না। বললে কিন্তু আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।”

হৃদান কথাটা শেষ করার সাথে সাথে রুশা ঘুরে ওর গালে ঠাটিয়ে একটা চড় বসিয়ে দিল। চড়ের শব্দে রেস্টুরেন্টে যেই গুটিকয়েক মানুষ উপস্থিত ছিল সবাই চমকে ওদের দিকে তাকাল। হৃদান গালে হাত দিয়ে রুশার দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। রুশা তর্জনী আঙুল উঠিয়ে শাসানোর স্বরে বলল,

–“ভবিষ্যতে এই ভুল করলে এক হাত কে*টে তোর আরেক হাতে ধরিয়ে দিব। আর তুই রেডি থাক। আমি বেঁচে থাকতে আশু আপুকে বিয়ে করার শখ তোর এই জীবনে কোনোদিন পূরন হবে না।”

কথাটা বলে রুশা সামনের দিকে হাঁটা দিল। পিছন থেকে হৃদান হিংস্র গলায় বলে উঠল,
–“তাহলে নাহয় ম*রার জন‍্যেই প্রস্তুত হ। এই বিয়ে ত হবেই। দরকার হলে এর জন‍্যে তোকে নিজের প্রানও দিতে হবে।”

রুশার পাঁ জোড়া থেমে গেল। ‘ও’ কিছু বলতে যাবে তার আগেই সৃজা ওদের টেবিলের উপর থেকে এক মগ গরম কফি হাতে নিয়ে সোজা হৃদানের মুখের উপর ছুড়ে মারল। হৃদান লাফিয়ে উঠে আআআ করে চিল্লিয়ে উঠল। সৃজা দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

–“আগে নিজেকে কীভাবে বাঁচাবি সেই চিন্তা কর। তোর ইন্টেনশনের ব‍্যাপারে ভাইয়া যদি ভুলেও কিছু জানতে পারে না? তাহলে না থাকবি তুই, আর না থাকবে তোর এসব বড় বড় কথা। আমি এখনই বাসায় গিয়ে ভাইয়াকে সবটা জানাচ্ছি। তারপর ভাইয়া তোর কি অবস্থা করবে সেটা তুই এখানে বসে বসে ইমাজিন করতে থাক।”
_________________________

কথায় বলে মানুষ যেটা সবচেয়ে বেশি আশা করে সেটা কখনো হয় না। বরং অধির আগ্রহ নিয়ে যেটার আশা করে সেটার উল্টোটাই ঘটে সবসময়। রুশাদের বেলায়ও তার ব‍্যতিক্রম কিছু ঘটল না। রুশা আর সৃজা ভেবেই রেখেছিল হৃদানের ইন্টেনশনের ব‍্যাপারে সবাই সবটা জানার পর তারা নিজেরাই বিয়েটা ভেঙে দিবে। বাড়িতে এসে কীভাবে কি বলবে সেইসব কিছু ভেবে দুজন রেস্টুরেন্ট থেকে সোজা সিকদার ভিলায় চলে আসে। সদর দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে ওদের নজর যায় ড্রইংরুমের দিকে। সেখানে শান সহ বাড়ির বড়’রা, ছোট’রা, গেস্ট’রা সবাই উপস্থিত আছে। সবার মুখেই গম্ভীর ভাব। আয়াশ দোতলার কড়িডোরে দাড়িয়ে রেলিংয়ের উপর হাতে ভর দিয়ে নিশ্চিন্তে আপেল খাচ্ছে। রুশা চারপাশে ভালো করে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে সবার দিকে তাকাল। সৃজা এগিয়ে গিয়ে শানকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে বলল,

–“ভাইয়া তোমার সাথে আমার কিছু ইম্পরটেন্ট কথা আছে। একটু শুনবে প্লিজ।”

কথাটা বলার সাথে সাথে শান বসা থেকে দাড়িয়ে এগিয়ে এসে সৃজার গালে একটা চড় বসিয়ে দিল। ঘটনার আকষ্মিকতায় ওখানে উপস্থিত সবাই ভরকে গেল। রুশা হতবম্ভ হয়ে শানের দিকে তাকিয়ে আছে। সৃজা গালে হাত দিয়ে মাথা উঠিয়ে ছলছল চোখে শানের দিকে তাকাতেই চোখের পলকের মধ‍্যে ওর গালে আরো একটা চড় এসে পড়ল। এবারের চড়টায় সৃজা নিজেকে সামলাতে না পেরে পড়ে যেতে নিল। কিন্তু ব‍্যালেন্সলেস হয়ে পড়ে যাওয়ার আগেই রুশা এসে সৃজাকে ধরে ফেলল। তারপর হতবম্ভ হয়ে শানের দিকে তাকিয়ে বলল,

–“আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন শান? কিছু না বলে অযথা ওকে মারছেন কেন?”

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here