অব্যক্ত ভালোবাসা পর্ব -১৯

#অব্যক্ত_ভালোবাসা
#লেখনীঃআরভি_আহিয়াদ_তিহু
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্বঃ19

দুপুর দেড়টা বাজে। রুশা রুমের ব‍্যালকনিতে দাড়িয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। সিকদার ভিলার সামনের পুরো গার্ডেন এড়িয়াটা জুড়ে বাচ্চা, মধ‍্য বয়স্ক এবং বৃদ্ধলোকদের সমগম। এরা সবাই সমাজের অবহেলায়, অযত্নে বেঁচে থাকা একেকটা প্রান। আজকে রুশার মায়ের বিশতম মৃত‍্যুবার্ষিকী। প্রতিবছরই ইমদাদ সিকদার এই দিনটায় দোয়া মোনাজাতের আয়োজন করেন। আর সমাজের কিছু দুঃস্থ, অসহায় মানুষদের ডেকে খাওয়ানোর ব‍্যবস্থা করেন। এত কাছ থেকে আজ অবদি এসব দেখার সুযোগ রুশার হয়নি। এতবছর শুধু ওর দাদুভাইয়ের মুখেই শুনে গেছে সবটা। আজকে প্রথমবার কাছ থেকে সব দেখছে। মনের কোথাও একটা এটা ভেবে বেশ শান্তি অনুভব হচ্ছে যে ইমদাদ সিকদার নিজের লাইফে মুভ-অন করলেও ওর মাকে অন্তত ভুলে যায়নি। ভালো বাবা হয়ে ওকে আগলে রাখতে না পারলেও ওর মায়ের চলে যাওয়ার পরেও এতবছর ধরে তার স্মৃতিগুলো আগলে রেখেছে।

রুশা ব‍্যালকনি থেকে নিজের রুমে চলে আসলো। ওড়নাটা ভালো করে মাথায় দিয়ে রুম থেকে বেড় হয়ে নিচের দিকে রাওনা দিল। সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে হাতের ডানপাশের ডায়নিং জোনের দিকে নজর গেল। কিছু গেস্টরা ডায়নিং টেবিলে লাঞ্চ করতে বসেছে। আর বাকিরা ড্রইংরূমের সোফায় বসে নিজেদের মধ‍্যে কথাবার্তা বলছে। শান, সৃজা আর আয়াশ ছাড়া এখানে সবাই-ই উপস্থিত আছে। রুশা এক নজর সবার দিকে চোখ বুলিয়ে বাসার মেইন দরজা দিয়ে বাইরে বের হয়ে গেল। সবাই ওর যাওয়ার দিকে এক পলক তাকিয়ে নিজেদের কাজে মনোযোগী হল।

রুশা বাইরে এসে দুচোখ ভরে কিছুক্ষণ সবটা দেখে প্লাস্টিকের অন-টাইমের একটা থালা নিয়ে বাচ্চাদের সাথে ঘাসের উপরে বসে পড়ল। দুপুরের এত গা ঝলসানো রোদে ওর চোখ মুখ কুচকে এলো। খানিকটা বিরক্তও লাগল। মনে হল এখানে ছায়া দেওয়ার মতো কিছু একটা থাকলে খুব ভালো হত। কিন্তু পরক্ষনেই ওর নজর গেল আশেপাশে বসে থাকা মানুষ গুলোর দিকে। তারা এই রোদের মধ‍্যেও ঠোঁটে প্রশস্ত হাঁসি ঝুলিয়ে অধির আগ্রহ নিয়ে খাবারের অপেক্ষা করছে। এই রোদের মধ‍্যে এত সময় বসে থাকার পরেও এদের চোখেমুখে কোনো বিরক্তির ছাপ নেই। মানুষ গুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে রুশার ফেস থেকেও মুহূর্তের মধ‍্যে বিরক্তির ছাপটা মিলিয়ে গেল। সব সময় A.c. তে থাকা মেয়েটাও খুব সহজেই যেন এই মানুষ গুলোর সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিল। বেশ অনেকক্ষণ পর স্টাফ’রা খাবারের বড় বড় পাতিল গুলো নিয়ে এসে এক সাইডে রাখল। তার কিছু সেকেন্ড পর ইমদাদ সিকদার, আরাফ রায়জাদা আর শান বাসার ভিতর থেকে বেড়িয়ে আসলো। তিন জনের গায়েই সাদা পাঞ্জাবী পড়া। রুশা প্রথমে ভেবেছিল স্টাফ’রা হয়ত খাবার পরিবেশন করবে। কিন্তু ওকে সম্পূর্ন ভুল প্রমানিত করে, স্টাফদের সাথে সাথে আরাফ রায়জাদা, ইমদাদ সিকদার আর শান মিলে সবাইকে খাবার পরিবেশন করা শুরু করল। এতে রুশা বেশ অবাক-ই হল। কারন ‘ও’ ভেবেছিল বাড়ির কেউই এসব কাজে হাত লাগায় না। সব স্টাফ’রাই করে। কিন্তু এখন দেখছে ‘ও’ যা যা ভেবেছে ওর সেই সব ভাবনাই ভুল।

শান খাবার দিতে দিতে একটা জায়গায় এসে থমকে গেল। কয়েকবার চোখের পলক ঝাপটে কিছুটা অবাক দৃষ্টি নিয়ে পাশে বসে থাকা সাদা সালোয়ার সুট পরিহিতা মেয়েটার দিকে তাকাল। তারপর বিষ্ময়ে কিছুক্ষণ চোখ বড় বড় করে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইল। পরক্ষণেই মুচকি হেঁসে হাঁটু গেড়ে মেয়েটার সামনে বসে তার থালায় খাবার দিতে দিতে পিঞ্চ করে বলল,

–“কি ব‍্যাপার ডাক্তার সাহেবা? মনে হচ্ছে আজকে তোমার একটু বেশিই খিদে লেগে গিয়েছিল। তাই বাসার খাবারের অপেক্ষা না করে সোজা এখানে এসেই খেতে বসে গেছো।”

রুশা শানের দিকে বিরক্তির দৃষ্টিতে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে মুখ ভেংচি মার্কা একটা হাঁসি দিয়ে বলল,
–“জি, হ‍্যাঁ। আপনার ইচ্ছে হলে আপনিও বসে যেতে পারেন।”

শান ঠোঁট কামড়ে কিছু একটা ভেবে বলল,
–“নট আ ব‍্যাড আইডিয়া।”

কথাটা বলে শান উঠে দাড়িয়ে একজন স্টাফকে হাতের ইশারায় ডেকে খাবারের বাটিটা তার হাঁতে ধরিয়ে দিল। তারপর নিজেও একটা প্লাস্টিকের থালা নিয়ে রুশার পাশ থেকে একটা বাচ্চাকে অন‍্যপাশে বসতে বলে নিজে গিয়ে সেই বাচ্চাটার জায়গায় বসে পড়ল। রুশা ভ্রু কুটি করে শানের কর্ম-কান্ড দেখছে। শান রুশার দিকে একটু এগিয়ে ওর সাথে চিপকে বসতে বসতে বলল,

–“বউয়ের সাথে একসাথে বসে খাওয়ার মজাই আলাদা।”

রুশা কঠিন গলায় বলল,
–“আমি আপনার বউ না।”

শান স্বাভাবিক ভাবেই বলল,
–“হতে কতক্ষণ? এমনিতেও আমি অলরেডি আম্মুর সাথে আমাদের বিয়ের ব‍্যাপারে কথা বলে ফেলেছি।”

শানের কথায় রুশা টাস্কি খেল। চোখ জোড়া বড় বড় করে শানের দিকে তাকিয়ে অবাক কণ্ঠে বলল,
–“হোয়াট! তারপর? কী বলেছে বড়-মা?”

–“আম্মু বলেছে, একবার উনি তোমার অমতে তোমাকে বিয়েতে রাজি করিয়ে যেই ভুল করেছিলেন। সেই ভুল উনি আর এখন করতে পারবেন না। উনি আর তোমাকে বিয়ের ব‍্যাপারে কোনো কথা বলতে পারবেন না। তবে আমি যদি তোমাকে ইমপ্রেস করে তোমাকে বিয়ে করার জন‍্যে রাজি করাতে পারি। তাহলে ওনাদের এই বিয়েতে কোনো আপত্তি নেই।”

শানের কথা শুনে রুশা সরু চোখে শানের দিকে তাকাল। তারপর খানিকটা সন্দীহান গলায় বলল,

–“আপনি হঠাৎ আমাকে বিয়ে করার জন‍্যে উঠে পড়ে লাগলেন কেন? বাই এ‍্যানি চান্স, আপনি কি আমাকে ভালোবাসেন?”

শান মুখ বাঁকিয়ে বলল,
–“ভালোবাসা? আর আমি? হুহ! একবার একজনকে ভালোবেসে যেই ভুল করেছি, তারপর আর অন‍্য কাউকে ভালোবাসার প্রশ্নই উঠে না। এই ভালোবাসা শব্দটাকেই আমি ঘৃনা করি। লাইফে আর যাই করি না কেন, দ্বিতীয়বার কাউকে ভালোবাসার মতো ভুল আমি আর কখনো করব না।”

শানের কথায় রুশার মুখটা থমথমে হয়ে গেল। ‘ও’ গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
–“তাহলে আমাকে বিয়ে করতে চাইছেন কোন যুক্তিতে? যখন দ্বিতীয়বার আর কাউকে ভালোই বাসতে পারবেন না, তখন আমাকে বিয়ে করে কি করবেন?”

শান বলল,
–“তোমাকে ত রিভেঞ্জ নেওয়ার জন‍্যে বিয়ে করব। পুরনো কিছুই আমি ভুলিনি। সব আমার মনে আছে। একবার তোমাকে বিয়েটা করে নিই। তারপর টর্চার করে-করে তোমার করা সব কাজের প্রতিশোধ নিব।”

রুশা চোখ-মুখ শক্ত করে শানের দিকে তাকাল। দাঁতে দাঁত পিষে বলল,
–“দেয়ালের সাথে কপাল ঠুকে ঠুকে ম’রে গেলেও না আপনার এই আশা জীবনে পূরন হবে না। আপনার মতো সেকেন্ড হ‍্যান্ড পিচকে আমি জীবনে কোনোদিন বিয়ে করব না।”

কথাটা বলে রুশা না খেয়েই ওখান থেকে উঠে চলে গেল। শান রুশার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেঁসে দিল। রুশাকে রাগাতে পারলে কেন যেন ওর ভীষন ভালো লাগে। রেগে গেলে মেয়েটার গাল, নাক, চোখ সবকিছু একদম গোলাপি টাইপ হয়ে যায়। মনে হয়, জীবন্ত কিউট-গুলুমুলু একটা বারবি-ডল চোখের সামনে বসে আছে।
_________________________
সন্ধ‍্যা 7:30….

ছাদের এক সাইডে মিডিয়াম সাইজের একটা গোল টেবিল রাখা রয়েছে। টেবিলটার চারপাশ ঘুড়িয়ে ছোট্ট ছোট্ট পাঁচটা লোহার চেয়ার রাখা। সৃজা আর রুশা দুজন হাতে দু-মগ ধোয়া ওঠা কফি নিয়ে ছাদে প্রবেশ করল। তারপর টেবিলটার দিকে এগিয়ে গিয়ে দুজন দুটো চেয়ার টেনে ধুপ করে বসে পড়ল। কিছুক্ষণ পর আশু ট্রে তে করে দু-মগ কফি আর কিছু স্নাক্স নিয়ে ছাদে আসলো। ট্রে টা টেবিলের উপর রেখে সৃজার পাশের চেয়ার টা টেনে ‘ও’ নিজেও ওদের সাথে বসে পড়ল। আশু ট্রে থেকে একটা কফি মগ হাতে নিয়ে তাতে এক সিপ দিয়ে রুশাকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে বলল,

–“কি ব‍্যাপার বলো ত? হঠাৎ আমাদের ছাদে আসতে বললে কেন?”

রুশা ওর হাতে থাকা কফি মগটা ঘোরাতে ঘোরাতে বলল,
–“বলছি ওয়েট, আরেক জনের আসার কথা আছে। সে আগে আসুক।”

আশু কিছু বলতে যাবে তার আগেই ছাদের দরজা দিয়ে ধুপধাপ পাঁ ফেলে আয়াশ ভিতরে আসলো। তারপর এগিয়ে এসে রুশার পাশের চেয়ারটা টেনে সেটাতে বসে ব‍্যস্ত ভঙ্গিতে বলল,
–“ডেকেছিস কেন? কিছু বলবি?”

রুশা হাত বাড়িয়ে ট্রে থেকে অন‍্য কফি মগটা হাতে নিয়ে আয়াশের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,

–“একটু আগে হৃদান আর ওর মা-বাবা এসেছে। স্টাডি রুমে বসে শানদের সাথে ওনারা বিয়ের ব‍্যাপারে কিছু একটা আলাপ আলোচনা করছে। বাইরে থেকে শুনে যতদূর বুঝলাম, তাতে মনে হচ্ছে, দুই/তিন দিনের মধ‍্যেই বিয়ের ডেট টা ফাইনাল করা হবে।”

আয়াশ রুশার হাত থেকে কফি মগটা নিতে নিতে ভ্রু কুচকে বলল,
–“ত? আমি কি করব? নাচব?”

আয়াশের এমন গাঁ ছাড়া ভঙ্গির কথা শুনে রুশা বেশ বিরক্ত হল। খানিকটা দাঁতে দাঁত পিষে বিরক্তির স্বরে বলল,
–“হ‍্যাঁ নাচ। পারলে আমার মাথার উপর উঠে নাচ।”

আয়াশ স্বাভাবিক ভাবেই বলল,
–“না থাক। তাহলে আবার তোর ছোট্ট ঘাড়টা ভেঙে যাবে।”

রুশা চোখ গরম করে আয়াশের দিকে তাকাল। তারপর সিরিয়াস ফেস করে বলল,
–“দেখ, তোকে এখানে কাজের কথা বলার জন‍্যে ডেকেছি। অযথা ফালতু কথা বলে একদম আমার টাইম ওয়েস্ট করবি না।”

–“ওকে ফাইন। কি বলবি বল।”

রুশা লম্বা একটা নিঃশ্বাস নিয়ে আয়াশের দিকে দৃষ্টি রেখে বলল,
–“এই বাড়ি থেকে প্রায় পনেরো কিলোমিটার দূরে শানের একটা কাপড়ের ফ‍্যাক্টরি আছে। বিয়ের দিন পাত্র পক্ষ এই বাড়িতে আসার ঠিক দশ মিনিট পর শানের ফোনে একটা র‍্যান্ডম কল আসবে। কলটা করবে তোর গার্ডদের মধ‍্যে একজন। তারা শানকে বলবে বৈদ‍্যুতিক কিছু ত্রুটির কারনে ওর সেই ফ‍্যাক্টরিতে আগুন লেগে গেছে। ভিতরে অনেক ওয়‍্যার্কার’রা আটকে আছে। আর আগুন কোনো ভাবেই কন্ট্রোল করা যাচ্ছে না। অ‍্যাজ ইউজুয়‍্যাল শান যেহেতু ওই ফ‍্যাক্টরির ওউনার, তাই ‘ও’ ওখানে অবশ‍্যই ছুটে যাবে। কিন্তু ওকে একা যেতে দেওয়া যাবে না। তুই ওর সাথে যাবি। আর এটা খেয়াল রাখবি যাতে ‘ও’ পথে যেতে যেতে ফ‍্যাক্টরির ম‍্যানেজার বা অন‍্য কাউকে কল করতে না পারে।”

আয়াশ অবাক কণ্ঠে বলল,
–“এসব করে কি হবে?”

রুশা বলল,
–“দেখ, শান এই বাড়িতে থাকলে আমরা কিছুই করতে পারব না। ‘ও’ একটু বেশিই চালাক। ‘ও’ এখানে থাকলে ঠিক আমাদের প্লানটা ধরে ফেলবে। আর কোনো না কোনো ভাবে ওই ছাগলটার সাথে আশু আপুর বিয়েটা দিয়েই ছাড়বে।”

–“কিন্তু শান যখন ওখানে গিয়ে দেখবে ওর ফ‍্যাক্টরিতে আগুন লাগেনি। তখন ত ‘ও’ আবার এই বাড়িতে চলে আসবে। তারপর কি করবি?”

আয়াশের কথায় রুশা বাঁকা হাসল। তারপর একটু ভাব নিয়ে বলল,
–“উনি যতক্ষণে ওখানে গিয়ে আবারও ফিরে আসবেন, ততক্ষণে আমাদের এদিকের সব কাজ হয়ে যাবে।”

আশু শুকনো গলায় বলল,
–“রুশা কিন্তু তুমি অ‍্যাকচুলি করতে কি চাইছো? মানে তোমার প্লান’টা কি?”

রুশা গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
–“সেটা তোমার না জানলেও চলবে। তুমি তোমার বিয়েতে ফোকাস করো।”

আশু বোঝানোর ভঙ্গিতে বলল,
–“বি কেয়ারফুল রুশা। এমন কিছু কোরো যাতে পরে তুমি নিজেই ঝামেলায় জড়িয়ে যাও। আমি চাই না, তুমি আমার জন‍্যে কোনো ঝামেলায় পড়ো।”

আশুর কথা শেষ হতেই পাশ থেকে সৃজা মুখ বাঁকিয়ে বলল,
–“তুমি নিজের মুখটা বন্ধ রেখো তাহলেই হবে। কেউ ধমক দিলে আবার গড়গড় সব বলে দিও না।”

সৃজার কথা শুনে আশু রাগি দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকাল। সৃজা ভেংচি কেঁটে বলল,
–“এভাবে তাকিয়ে লাভ নেই। আমি তোমার স্বভাব সম্পর্কে খুব ভালো করে জানি। কেউ সামান‍্য একটা ধমক দিলেও তুমি কাঁপতে কাঁপতে তাকে নিজের পেটের কথা সব বলে দেও, সেটাও আমার জানা আছে।”

রুশা বলল,
–“এইজন‍্যেই কাউকে কিছু বলব না। যা করার আমি আর সৃজাই করব।”

রুশার কথা শুনে আয়াশ সৃজার দিকে তাকিয়ে বিদ্রুপের হাঁসি হেঁসে বলল,
–“তুমিও রুশার সাথে হাত মিলিয়েছো? ভেরি গুড! সেদিন ত শান শুধুমাত্র দুটো থা’প্প’র দিয়েই তোমাকে ছেড়ে দিয়েছিল। এইবার যদি তোমার কু-কর্মের কথা জানতে পারে তাহলে তোমার হাত-পাঁ সব ভেঙে তোমাকে হসপিটালে ফেলে আসবে।”

সৃজা ভেংচি কেটে বলল,
–“আপনি নিজের মুখটা বন্ধ রাখবেন। তাহলেই আর ভাইয়া কিছু জানতে পারবে না।”

আয়াশ দুষ্টু হেঁসে বলল,
–“আমি এক্ষুনি গিয়ে শানকে সব বলে দিব। তারপর দেখো শান তোমার কি অবস্থা করে।”

আয়াশের কথা শেষ হতেই রুশা আয়াশকে সাবধান করে বলল,
–“আয়াশ খবরদার শান যেন এই বিষয়ে কিচ্ছু জানতে না পারে। শান জানলে কিন্তু…”

রুশাকে পুরো কথাটা শেষ করতে না দিয়ে পিছন থেকে হঠাৎ কেউ বলে উঠল,
–“শান জানতে পারলে কি হবে?”

পরিচিত কণ্ঠস্বর কানে ভেষে আসতেই রুশা, সৃজা আর আশু তিনজন চমকে পিছনে তাকাল। দেখল, ছাদের দরজার সামনে শান দু-হাত ট্রাউজারের পকেটে ঢুকিয়ে সটান হয়ে দাড়িয়ে আছে। শানের দিকে এক পলক তাকিয়ে আয়াশ বিরবির করে বলল,
–“শয়তান কা নাম লিয়া। অর শয়তান হাজির।”

শান একপা দু’পা করে এগিয়ে এসে রুশার সোজাসুজি যে চেয়ারটা রাখা সেটার উপরে বসে পড়ল। তারপর ভ্রু কুচকে বলল,
–“কি ব‍্যাপার? আমাকে নিয়ে কি ষড়যন্ত্র চলছে?”

রুশা নিজেকে ধাতস্ত করে স্বাভাবিক কণ্ঠে বলল,
–“আপনাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করব আমরা? কোন দুঃখে? নিজেকে এতটাও ইম্পরটেন্স দিবেন না মিঃ রায়জাদা। আপনাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করা ছাড়াও আমাদের সারাদিনে আরো অনেক কাজ থাকে।”

শান তীক্ষ্ম স্বরে বলল,
–“ভেরি গুড। তাহলে অন‍্য কোনো ব‍্যাপারে কেউ নিজেদের নাক না গলিয়ে, মনোযোগ দিয়ে সবাই নিজেদের কাজ গুলোই কোরো। নাহলে তোমাদের কারো জন‍্যেই ব‍্যাপারটা তেমন সুবিধাজনক হবে না।”

শানের কথা শুনে আয়াশ ডোন্ট কেয়ার একটা ভাব নিয়ে কান চুলকানোর নাটক করতে করতে ওখান থেকে উঠে চলে গেল। শান আয়াশের যাওয়ার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আশুকে উদ্দ‍েশ‍্য করে বলল,

–“আশু মেন্টালি প্রিপারেশন নে। কালকে সকালে তোর গায়ে হলুদ। আর সন্ধ‍্যায় বিয়ে।”

শানের কথা শুনে রুশা, আশু, সৃজা তিনজনেই শকড হল। আশু বসা থেকে দাড়িয়ে খানিকটা চেঁচিয়ে বলল,

–“হোয়াট? কিন্তু ভাইয়া বিয়ের ডেট ত আরো পনেরো/বিশ দিন পরে ঠিক হওয়ার কথা ছিল, তাইনা? তাহলে হঠাৎ এত তাড়াহুড়ো করে কেন বিয়েটা হচ্ছে?”

শান বসা থেকে দাড়িয়ে গেল। আশুর মুখোমুখি এসে চোয়াল শক্ত করে বলল,

–“আমি চাচ্ছি তাই হচ্ছে। কেন? কালকে বিয়ে হলে তোর কোনো আপত্তি আছে?”

আশু অসহায় দৃষ্টিতে শানের দিকে তাকাল। শান ধারাল, তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে ওর দিকে। আশুর গলাটা শুকিয়ে গেল। শানের এমন কঠিন দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আপত্তি প্রকাশ করার সাধ‍্য ওর নেই। তাই মাথা’টা করে ফ্লোরের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করল। শান আশুর দিকে আগের মতো করেই দৃষ্টি রেখে বলল,

–“আপত্তি থাকলেও কিছু করার নেই। বিয়েটা কালকেই হবে। তুই চাইলেও হবে, আর না চাইলেও হবে। কেউ যদি এই বিয়েতে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করে, তাহলে তার কপালে দুঃখ আছে।”

শেষের কথাটা শান, রুশা আর সৃজার দিকে তাকিয়ে বলে গটগট করে হেঁটে ওখান থেকে চলে গেল। সৃজা মাথায় হাত দিয়ে আতঙ্কিত স্বরে বলল,

–“ওহ শিট। এবার কি হবে? এত দ্রুত আমরা সবকিছু অ‍্যারেঞ্জ করব কীভাবে? ভাইয়া ত আমাদের প্লানে এক বালতি পচা পানি ঢেলে দিয়ে চলে গেল।”

রুশা রাগে গজগজ করতে করতে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠল,
–“মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয়, এই লোকটাকে খু!ন করে ফেলি। বা’জে লোক একটা।”

#চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here