অব্যক্ত ভালোবাসা পর্ব -২১

#অব্যক্ত_ভালোবাসা
#লেখনীঃআরভি_আহিয়াদ_তিহু
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্বঃ21

দুপুর 12:00

দিনের মধ‍্যমাপ্রহরে খাঁ খাঁ রোদ থাকার কথা থাকলেও আজকের আবহওয়া বেশ শীতল। অন‍্যদিনের তুলনায় সূর্যি মামার তেজ আজকে অনেকটা কম। সূর্যি মামা যখনই নিজের তেজ’টা বাড়িয়ে ধরিত্রির সবাইকে ঝলসানোর চেষ্টা করে, তখনই মেঘ মামা এসে নিজের এক গুচ্ছ মেঘ দিয়ে সূর্যি মামাকে আবৃত করে ফেলেন। মেঘ মামা আর সূর্যি মামার এমন খুনশুটি দেখে মাঝে মাঝে দমকা হাওয়ারাও ছুটে এসে সবার শরীর ছুয়ে দিয়ে নিজেদের উচ্ছাস প্রকাশ করে।

কাল-রাত থেকেই শানের ব‍্যস্ত সময় কাটছে। সবকিছু এত তাড়াতাড়ি অ‍্যারেঞ্জ করতে গিয়ে ওর প্রায় নাজেহাল অবস্থা। কাজ করতে করতে এক দণ্ড বসার সময় অবদি পাচ্ছে না। এক কাজ শেষ করে উঠতে না উঠতেই অন‍্য একটা কাজ এসে ওর সামনে হাজির হয়ে যাচ্ছে। সবকিছু একা হাতে ম‍্যানেজ করতে গিয়ে ‘ও’ প্রায় হিমশিম খাচ্ছে। কিন্তু তাতেও ওর চোখে-মুখে বিন্দুমাত্রও বিরক্তির ভাব দেখা যাচ্ছে না। ‘ও’ নিজে দাড়িয়ে থেকে সব কাজ একদম নিখুঁত এবং পারফেক্টলি কম্পিলিট করছে।

শান রেডি হয়ে বাসা থেকে বের হয়ে ফোন স্ক্রল করতে করতে স্টেজের দিকে যাচ্ছিল। তখনই আরাফ রায়জাদা রেগে মেগে বোম হয়ে শানের মুখোমুখি এসে দাড়াল। হঠাৎ করে বাবাকে সামনে এসে দাড়াতে দেখে শান থেমে গেল। ফোনের দিক থেকে মাথা উঠিয়ে কপাল কুচকে বাবার দিকে দৃষ্টি রাখল। কোনো ভনিতা না করেই আরাফ রায়জাদা রাগি কণ্ঠে শানকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে বললেন,

–“ওই অ’স’ভ‍্য মেয়েটা এখানে কি করছে?”

আরাফ রায়জাদার প্রশ্নে শান ভ্রু কুচকে ফেলল। প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে ওনার দিকে তাকিয়ে বলল,
–“কোন মেয়ে?”

আয়াফ রায়জাদা দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,
–“ইতি! তোমার এক্স গার্লফ্রেন্ড। যার জন‍্যে তুমি এক সময় পাগল ছিলে। ওকে এখানে ডেকেছো কেন?”

শান বাঁকা হাঁসল। আরাফ রায়জাদার দিকে রহস‍্যজনক দৃষ্টিতে তাকিয়ে হেয়ালি ভরা কণ্ঠে বলল,

–“এখানে উপস্থিত সব গেস্টদের এন্টেটেইন করার জন‍্যে ওনাকে ডাকা হয়েছে। ডোন্ট ওয়ারি আব্বু, এর জন‍্যে ওনাকে ওনার ডিমান্ড অনুযায়ী পে করা হবে।”

শানের এমন হেয়ালিপনা’র কথা শুনে আরাফ রায়জাদার মেজাজ’টা আরো খারাপ হয়ে গেল। উনি তিরিক্ষি মেজাজে বললেন,

–“ডু হ‍্যাব এ‍্যানি আইডিয়া শান, হোয়াট আর ইউ সেইং? তুমি জানো না, আয়াশ ওই মেয়েকে দেখলে হাইপার হয়ে যায়? ওই মেয়েকে দেখে ‘ও’ যদি এখন এখানে বসে একটা সিনক্রিয়েট করে, তখন কি হবে? আমাদের মান-সম্মানের কথা না ভাবো, আয়াশের কথা ভেবে অন্তত ওই মেয়েকে এখান থেকে যেতে বলো।”

আরাফ রায়জাদার কথায় শানের মুখটা মুহূর্তের মধ‍্যে থমথমে হয়ে গেল। ‘ও’ শান্ত কিন্তু বিদ্রুপের স্বরে বলল,

–“ওয়াউ! ভেরি নাইস! আয়াশের জন‍্যে তোমার চিন্তা-ভাবনা এখন একদম উপচে পড়ছে, তাইনা আ‍ব্বু? তোমার এই চিন্তা-ভাবনা তখন কোথায় ছিল, যখন জোর করে ওকে ওর বাবার কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিলে?”

শানের কথা শুনে আরাফ রায়জাদার মুখটা কালো মেঘে ছেয়ে গেল। উনি গম্ভীর স্বরে বললেন,
–“তখনকার সিচুয়েশন অন‍্যরকম ছিল। তখন আমার জায়গায় তুমি থাকলে তুমিও এই একই কা……”

কথার মাঝে আরাফ রায়জাদাকে থামিয়ে দিয়ে শান বলল,
–“আব্বু প্লিজ, আমাকে অন্তত কোনো রকম এক্সকিউজ দিতে এসো না। আমি তখন বাচ্চা ছিলাম, কিন্তু এখন আর বাচ্চা নেই। তুমি চাইলে ওই সময়ে আশুর সাথে আয়াশকেও নিজেদের কাছে রেখে দিতে পারতে। কিন্তু অযথা জেদ দেখিয়ে জোর করে ওই ফালতু লোকটার কাছে আয়াশকে পাঠিয়ে দিয়েছো। যার না ছিল ভালো হাসবেন্ট হওয়ার যোগ‍্যতা, আর না ছিল ভালো বাবা হওয়ার যোগ‍্যতা। যেটা তোমরাও ভালো করেই জানতে। কিন্তু তুমি আর তোমার ভাইয়েরা মিলে নিজেদের জেদ বজায় রাখার জন‍্যে আয়াশকে ওই জা’নো’য়া’র লোকটার হাতে তুলে দিয়েছো।”

আরাফ রায়জাদা চোখ জোড়া বন্ধ করে ফেললেন। শানের কথার প্রতিউত্তরে বলার জন‍্যে উনি কোনো কথা খুজে পেলেন না। শান বিটখিটে কণ্ঠে আবারও বলল,

–“ইমদাদ আংকেল, তুমি, তোমার ভাইয়েরা আর তোমার বোন মোহনা সিক‍দার, তোমরা সবাই মিলে নিজেদের জেদ বজায় রাখার জন‍্যে আয়াশ আর রুশার ছোট বেলাটা রুইন্ড করে দিয়েছো। শুধুমাত্র তোমাদের জন‍্যে ওদের দুজনের লাইফটা আজকে ছন্নছাড়া হয়ে গেছে। যতই এক্সকিউজ দেও না কেন, এর দায়ভার ত তোমাদের সবাইকে নিতেই হবে আব্বু।”

কথাটা বলে শান, আয়াফ রায়জাদাকে ক্রস করে ওখান থেকে চলে গেল। আরাফ রায়জাদা দূর্বল পাঁয়ে হেঁটে গিয়ে ধপ করে একটা চেয়ারের উপরে বসে পড়লেন। বুকে হাত দিয়ে চেপে ধরে ভাবতে লাগলেন, শানের বলা একটা কথাও ত মিথ‍্যা নয়। উনি চাইলেই আয়াশকে তখন নিজেদের সাথে রেখে দিতে পারতেন। আয়াশের মতো হাজারটা ছেলেকে খাওয়ানোর সামথ‍্য ওনার ছিল। কিন্তু শুধুমাত্র নিজেদের জেদের জন‍্যে আয়াশকে জোর করে ওর বাবার কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। যদি সেদিন আয়াশকে ওর বাবার কাছে না পাঠাতেন, তাহলে আয়াশের লাইফটা আজকে অন‍্যরকম হত। ওকে এরকম ছন্নছাড়া একা একা বড় হতে হত না। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে আরাফ রায়জাদার চোখের পাতা ভিজে উঠল। ছোট বেলায় আয়াশ ওনার খুব নেওটা ছিল। অন‍্য মামাদের চেয়ে ওনার প্রতি আয়াশের অ‍্যাটাচমেন্ট’টা ছিল একটু বেশি। ওনাদের বাসায় মোহনা সিকদার যখন বেড়াতে আসতেন, তখন বড় মামুর কাছে আয়াশের বায়নার কোনো শেষ থাকত না। অথচ সেই আয়াশ এখন বড় মামুর কাছে বায়না করা ত দূরে থাক, বড় মামুর সাথে কথা অবদি বলে না। যেই চোখে একটা সময় আরাফ রায়জাদা এক সমুদ্র সমান ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা দেখতে পেতেন, সেই চোখের দিকে তাকালে উনি এখন শুধু ওনার প্রতি আয়াশের তীব্র ঘৃনাটাই দেখতে পান।

এ‍্যাক্টিং করার সুবাদে আরাফ রায়জাদা’রা সবাই আয়াশকে অনেক আগে থেকেই চিনতেন। আয়াশের সাথে শানের ঝামেলার ব‍্যাপারেও ওনাদের সবার জানা ছিল। কিন্তু সুপারস্টার আয়াশ দেওয়ানই যে মোহনা সিকদারের প্রথম পক্ষের বড় ছেলে সেটা আরাফ রায়জাদা’দের কারোরই জানা ছিল না। মোহনা সিকদার আয়াশের সাথে দেখা করার বিষয়টা এতদিন সবার কাছেই গোপন রেখেছিলেন। উনি কাউকে জানান নি এ‍্যাক্টর আয়াশ দেওয়ানই আসলে ওনার বড় ছেলে আয়াশ। আর আয়াশের নাম শুনে বাকিদেরও কখনো এই কথাটা মাথায় আসেনি। কজ ওনারা সবাই জানতেন, আয়াশ ওর বাবার সাথে ক‍্যালিফোর্নিয়া থাকে। তাছাড়া সময়ের ব‍্যবধানে আয়াশের নামটাও ওনাদের মাথা থেকে প্রায় বেড়িয়ে গিয়েছিল। আয়াশ রুশার সাথে এই বাড়িতে আসার পর, মোহনা সিকদার সব কথা একে একে ওনাদের খুলে বলেছেন। সবটা শুনে ওনারা সবাই রীতিমতো ঝটকা খেয়েছেন। কিন্তু এখন সব শুনেও বা কি লাভ? পুরনো ভুল ঠিক করার সুযোগ ত এখন আর নেই। অলরেডি অনেকটা দেরী হয়ে গেছে।
_________________________
আয়াশ রেডি হয়ে বেডের উপর বসে বসে ফোন ঘাটছিল। তখনই রুশা ওর রুমের দরজা খুলে ভিতরে এসে একটা খালি শপিং ব‍্যাগ ওর মুখের উপর ছুড়ে মারল। আচমকা আক্রমনে আয়াশ হকচকিয়ে উঠে ফোন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে রুশা দিকে তাকাল। রুশার দিকে তাকাতেই ওর চোখ আটকে গেল। সাদা লেহেঙ্গা আর আর্টিফিশিয়‍্যাল লাল গোলাপের জুয়েলারিতে সামনে দাড়িয়ে থাকা মেয়েটাকে ভয়ংকর সুন্দর লাগছে। রুশার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আয়াশের মুখটা হা হয়ে গেল। রুশা এগিয়ে এসে আয়াশের পাঞ্জাবির কলার চেপে ধরে ঝাকাতে ঝাকাতে বলল,

–“বেয়াদব, এটা কি এনেছিস তুই? হলুদের অনুষ্ঠানে হলুদ লেহেঙ্গা না পড়ে আমি এখন সাদা লেহেঙ্গা পড়ব? আমার কি জামাই মরছে?”

সামনে দাড়িয়ে থাকা ভয়ংকর সুন্দরীর ভয়ংকর আক্রমণাত্মক কথা শুনে আয়াশ টাস্কি খেল। ‘ও’ ড‍্যাবড‍্যাব করে রুশার দিকে তাকিয়ে সরল গলায় বলল,

–“তুই ত লেহেঙ্গা নিয়ে আসতে বলেছিলি। হলুদ লেহেঙ্গা লাগবে সেটা ত বলিস নি। সবগুলোর মধ‍্যে আমার এটা ভালো লেগেছিল, তাই আমি এটাই নিয়ে এসেছি।”

রুশা দাঁত কটমট করতে করতে বলল,
–“আমি কি জানতাম যে তুই একটা ব’ল’দ? হলুদের জন‍্যে লেহেঙ্গা কিনতে বলেছিলাম। আমি কীভাবে বুঝব, হলুদে মানুষ কি কালারের লেহেঙ্গা পড়ে সেটা বোঝার মতোও কমনসেন্স তোর নেই?”

কথাটা বলে রুশা ঝাড়া মেরে আয়াশের পাঞ্জাবির কলার ছেড়ে দিল। আয়াশ বুকে হাত দিয়ে ফোশ করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়ল। তারপর ঠাণ্ডা গলায় বলল,

–“ওকে ফাইন, তাহলে তোর রুমের বেডের উপর যে লেহেঙ্গা’টা দেখেছিলাম, সেটা পড়ে নে। সেটার কালার ত হলুদ। আর সাথে আর্টিফিশিয়‍্যাল জুয়েলারিও আছে। তোকে ভালো মানাবে।”

রুশা রাগে গিজগিজ করতে করতে বলল,
–“তোর ইচ্ছে হলে তুই পড়ে নে। আমি ম’রে গেলেও ওইটা পড়ব না। দরকার হলে সাদা লেহেঙ্গা পড়ে বিধবা সেঁজে পুরো বাড়িতে ঘুড়ে বেড়াব, তাও ওটা পড়ব না।”

কথাটা বলে রুশা হনহন করে আয়াশের রুম থেকে বেড়িয়ে গেল। আয়াশ কোমড়ে হাত দিয়ে বিরবির করে বলল,

–“এই মেয়ে জাতি পুরাই অদ্ভুত এক ধরনের জাতি। এদের বোঝার ক্ষমতা আল্লাহ বোধহয় কারো মধ‍্যেই দেয়নি। বড় বড় ডিটেকটিভ’রা জটিল-কঠিন সব কেস সলভ করে ফেলল। কিন্তু মেয়ে নামক এই ভয়ংকর প্রজাতির মনের প‍্যাচের রহস‍্য আজ অবদি কেউ সলভ করতে পারল না।”
_________________________

দুপুরের আযান এবং নামাজ শেষে আশুকে নিয়ে স্টেজে বসানো হল। গেস্ট’রা সবাই গিয়ে নিজেদের যথাস্থানে বসে পড়ল। গেস্টদের আপ‍্যায়ন করার জন‍্যে নির্দিষ্ট করা লোকেরা তাদের কাজে ব‍্যস্ত হয়ে পড়ল। বাড়ির সবাই একে একে এসে মজলিসে যোগ দিল। আয়াশ আর রুশাও নিজেদের রুম থেকে বের হয়ে নিচে আসলো। বাসা থেকে বের হয়ে দুজন স্টেজের দিকে যাবে ঠিক তখনই পুরনো অপ্রিয় একটা মুখ ওদের সামনে এসে হাজির হল। সামনের ব‍্যাক্তিটাকে দেখে মুহূর্তের মধ‍্যে আয়াশের চোয়াল শক্ত হয়ে গেল। রুশা ভ্রু কুচকে ব‍্যাক্তিটার দিকে তাকিয়ে বলল,
–“তুমি এখানে?”

ইতি মুচকি হাসল। খানিকটা ভাব নিয়ে বলল,
–“হ‍্যাঁ, শান ইনভাইট করেছে। অ‍্যাজ আ চিফ গেস্ট।”

ইতির কথায় রুশা বেশ অবাক হল। কথাটা রুশার কেন যেন হজম হল না। ইতি বাঁকা চোখে আয়াশ আর রুশার দিকে তাকিয়ে বলল,

–“কিন্তু তোমরা এখানে কি করছো? ইনভিটিশন পেয়েছো না-কি?”

রুশা মুখ বাঁকিয়ে বলল,
–“আরেহ না, আয়াশকে এখানে নাচ-গান করার জন‍্যে ডাকা হয়েছে। আর আমি ওর সাথে এসেছি। অ‍্যাকচুলি বাসায় কোনো কাজ ছিল না, তাই ভাবলাম ওকে কম্পানি দিয়ে দেই।”

রুশা কথাটা ইতির থেকে মজা নেওয়ার জন‍্যে বললেও, ইতি সিরিয়াসলি ওর কথাটা বিশ্বাস করে নিল। আয়াশ রাগি দৃষ্টিতে রুশার দিকে তাকাল। ইতি কটাক্ষের স্বরে বলল,

–“যাস্টফ্রেন্ড-যাস্টফ্রেন্ড বলে দুজন মিলে এত বছর ধরে ত অনেক ফষ্টিনষ্টি করলে। এবার বিয়েটা করে নিলেই ত পারো। আর কতকাল দুজন এভাবে নোংরামি করে বেড়াবে?”

আয়াশ অগ্নি দৃষ্টিতে ইতির দিকে তাকিয়ে হিংস্র গলায় বলল,
–“যাস্ট শাটআপ ওকে? আমাদের ফ্রেন্ডশিপ নিয়ে একটাও বাজে কথা বললে এখনই তোমার জিহ্বা টেনে আমি ছিড়ে ফেলব। সেদিনের পার্টিতে খাওয়া থাপ্পর গুলোর কথা এখনো নিশ্চয়ই ভুলোনি?”

আয়াশের কথা শেষ হতেই ইতি ওর দিকে খানিকটা এগিয়ে এলো। তারপর ফিশফিশ করে খানিকটা শাসানোর ভঙ্গিতে বলল,

–“এই কাজ ভুলেও কোরো না। এখানে শান উপস্থিত আছে। শানকে চিনো ত? যে আমার এক কথায় তোমাকে মারতে মারতে আধমরা বানিয়ে হসপিটালে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিল সেই ছেলেটা। একবার যদি ‘ও’ জানতে পারে তুমি আমার সাথে মিসবিহেব করেছো, তাহলে তুমি এখান থেকে আজকে প্রান নিয়ে বের হতে পারবে না।”

–“কিছু মাস আগে এরকমই একটা গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে তোমার গালে কষিয়ে দুইটা থাপ্পর মেরেছিলাম। বিভিন্ন নিউজে সেই ভিডিও ক্লিপটা দেখানোও হয়েছিল। আই থিংক সেই ভিডিওটা তোমার শানও দেখেছিল। তাহলে সে তখন আমাকে কিছু করল না কেন? তখন কি তার হাত-পাঁ গ্লু দিয়ে আটকানো ছিল?”

অনেকটা রাগি কণ্ঠে বিদ্রুপের ভঙ্গিতে কথাটা বলে উঠল আয়াশ। আয়াশের কথা শুনে ইতি খানিকটা থতমত খেয়ে গেল। কিন্তু দমে না গিয়ে দাম্ভিক গলায় বলল,

–“তখন শান আমার উপর রেগে ছিল, তাই তোমাকে কিছু বলেনি। কিন্তু এখন ওর রাগ কমে গেছে। ‘ও’ নিজে ফোন করে আমাকে এখানে ডেকেছে। আই থিংক ‘ও’ এখন আমাদের মধ‍্যের সবকিছু আগের মতো ঠিকঠাক করতে চাইছে। তাই তুমি সেদিনের মতো ভুল একদমই করতে যেও না। এইবার একই ভুল করলে শান তোমাকে ছাড়বে না কিন্তু।”

শেষের কথাটা অনেকটা হুমকির ভঙ্গিতে বলে ইতি দ্রুত ওখান থেকে প্রস্থান করল। আয়াশ দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

–“এই মেয়েকে আজকে আমি মে’রে’ই ফেলব। আমিও দেখি কোন শান রায়জাদা আমার কি করতে পারে!”

কথাটা বলে আয়াশ তেড়ে যেতে নিলেই রুশা এসে আয়াশের হাত চেপে ধরল। কঠিন দৃষ্টিতে আয়াশের দিকে তাকিয়ে সাবধানি গলায় বলল,

–“আই সোয়‍্যার আয়াশ, ওই মেয়ের জন‍্যে তুই যদি আজকে কোনো রকম সিনক্রিয়েট করিস, তাহলে তুই আর কোনোদিন আমাকে খুঁজে পাবি না।”

রুশার কথায় আয়াশ থেমে গেল। স্থির দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রুশার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইল। তারপর চোখ মুখ শক্ত করে কঠিন গলায় বলল,

–“ওকে ফাইন! আমি এখানে কোনোরকম সিনক্রিয়েট করব না। আর আমি এই অনুষ্ঠানেও থাকব না। এই মুহূর্তে আমার সব জিনিসপত্র নিয়ে আমি এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাব। তোর যা ইচ্ছে তুই তাই কর।”

কথাটা বলে আয়াশ ঝাড়া মেরে নিজের হাত থেকে রুশার হাত ছাড়িয়ে গটগট করে বাসার ভিতরে চলে গেল। রুশা পিছনে থেকে আয়াশের নাম ধরে কয়েকবার ডাকার পরেও আয়াশ পিছনে ফিরল না।
রুশা মাথায় হাত দিয়ে কিছুক্ষণ ওখানে ঠায় দাড়িয়ে থেকে আশেপাশে তাকিয়ে এই সমস‍্যার মেইন নাটের গুরুকে খুঁজতে লাগল। গেটের দিকে চোখ যেতেই কাঙ্খিত ব‍্যাক্তিটাকে দেখতে পেয়ে ‘ও’ সেদিকে এগিয়ে গেল।

শান দাড়িয়ে দাড়িয়ে ওর কয়েকজন গার্ডদের সাথে কথা বলছিল। রুশা এগিয়ে গিয়ে শানের পিছনে দাড়িয়ে রাগি কণ্ঠে বলল,
–“আই ওয়ান্না টক টু ইউ, রাইট নাউ।”

পরিচিত কণ্ঠস্বর কানে আসতেই শান থেমে গেল। পিছনে ঘুরে রাগি মুড নিয়ে দাড়িয়ে থাকা মেয়েটার দিকে দৃষ্টি রেখে হাতের ইশারায় গার্ডদের চলে যেতে বলল। তারাও বিনাবাক‍্যে দ্রুত জায়গা থেকে প্রস্থান করে নিজেদের কাজে মনোযোগ দিল। রুশা এগিয়ে এসে শানকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ওর পাঞ্জাবির কলার চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

–“কি চান আপনি? কেন ওই মেয়েটাকে এখানে ডেকেছেন? প্রাক্তন প্রেমিকার প্রতি পুরনো প্রেম উৎলে উঠছে বুঝি?”

শান ভ্রু কুচকে রুশার দিকে তাকাল। তারপর দুষ্টু হেঁসে রুশার দিকে একটু ঝুকে বলল,

–“হ‍্যাঁ! বাট আমার প্রাক্তন প্রেমিকাকে দেখে তুমি এরকম রিয়‍্যাক্ট করছো কেন? তোমার কি ভিতরে ভিতরে জ্বলছে?”

–“যাস্ট শাটআপ। ওইসব রাস্তার মেয়েদের দেখে রুশা জ্বলবে, এতটাও খারাপ দিন রুশার এখনো আসেনি।”

শান রুশার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,
–“তাহলে এত হাইপার হওয়ার কারন?”

রুশা শানের কলার ঝাকাতে ঝাকাতে বলল,
–“ওই মেয়ের জন‍্যে আয়াশ হলুদের অনুষ্ঠান ছেড়ে চলে গেছে। ইনফ‍্যাক্ট এখনই এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ারও ডিসিশন নিয়েছে। আপনি ত এটাই চেয়েছিলেন তাইনা? সেইজন‍্যেই ত ওই মেয়েকে ইচ্ছে করে এখানে ইনভাইট করেছেন।”

শান তীর্যক দৃষ্টিতে রুশার দিকে তাকিয়ে ওর কলার থেকে রুশার হাত দুটো ছাড়িয়ে নিল। তারপর গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

–“আমি যদি আয়াশকে তাড়াতে চাইতাম, তাহলে এতদিন আমাকে ওয়েট করতে হত না। ‘ও’ যেদিন এই বাড়িতে এসেছিল আমি সেদিনই ওকে এই বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিতে পারতাম। তখন যখন ওকে এখান থেকে তাড়িয়ে দেইনি। তারমানে আমি চাই ‘ও’ এখানে থাকুক।”

–“ওহ রিয়েলি? তাহলে ওই মেয়েকে এই অনুষ্ঠানে কোন যুক্তিতে ডেকেছেন?”

রুশার প্রশ্নের প্রতিউত্তরে শান থমথমে মুখে বলল,
–“সেটা তোমার না জানলেও চলবে। তুমি চলো আমার সাথে।”

কথাটা বলে শান রুশার হাত ধরে ওকে সামনের দিকে নিয়ে যেতে লাগল। রুশা পিছন থেকে কয়েকবার জিজ্ঞেস করল “কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?” কিন্তু শান কিছু বলল না। টানতে টানতে রুশাকে বাসার দিকে নিয়ে গেল।

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here