অভিমানে তুমি পর্ব ১৩+১৪

#অভিমানে_তুমি (সিজন ২)
#ফারিয়া_আফরিন_ঐশী
#পর্বঃ১৩

কথাগুলো শুনে হতবাক স্পর্শ, যেন নড়তে ভুলে গিয়েছে!!!
স্পর্শ পড়ে যেতে নিলে ধরে বসে আয়মান!!!
স্পর্শ নিজেকে একটু সামলে নিয়ে বেরিয়ে যায়!!আয়মান পরিস্থিতি বুঝে নিজেও যায় স্পর্শের পেছনে!!!
স্পর্শ দৌড়ে চলে আসে সেই পুরোনো লেকের পাড়ে যেখানে নিদ্রিতা তাকে প্রেগনেন্সির কথা বলেছিল!!!
স্পর্শ এসে এই ভয়ানক ঠান্ডার মাঝে নিজের গায়ের জ্যাকেট,মাফলার খুলে ছুড়ে দেয়!!!তারপর লেকের একদম কর্নারে বসে হাঁটুতে মুখ গুজে কাঁদতে শুরু করে!!!
লেকটা বহু বছরের পরিত্যক্ত!!!! পাহাড়ের কর্নারে হওয়ায় বলা যায় নীভিরার সুইসাইড পয়েন্ট!!!
স্পর্শ চিন্তাই করে নেয় সে সুইসাইড করবে!!!এভাবে আর ধাক্কা খেয়ে বাঁচা সম্ভব নয়!!!
স্পর্শ লেকের দিকে পা বাড়াতেই কেউ একজন হাত টেনে ধরে স্পর্শকে জড়িয়ে ধরে!!!
পরিচিত মানুষের আভাষ পেয়ে স্পর্শ ও তাকে জড়িয়ে ধরে!!কাঁদতে শুরু করে!!!
আয়মান যেন অবাক হয়ে যায়!!যে ছেলে নিজের বাবা-মা সম্পর্কে এতো বড় সত্যি জেনে একফোটা চোখের জল ফেলেনি!!!আজ অনাগত,অদেখা বাচ্চার মৃত্যুতে এতটা কাঁদছে!!!একেই বোধহয় বলে পিতৃত্ব!!!
আয়মান আর একটু ভালো করে জড়িয়ে নিয়ে বলে–মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে তোর!!!কি করতে যাচ্ছিলি??!!!
স্পর্শ এবার ছেড়ে দিয়ে কাঠের বেঞ্চে বসে বলে–আমি আর পারছি না চাচ্চু!!!পর পর এতো ধাক্কা নিতে!!!
আয়মান–তাই বলে নিজেকে মারতে এসেছিস!!!
স্পর্শ –তা কি করবো বলো!!!!আমার বাচ্চাটা আর নেই, নিদ্রিতা আমায় ঘেন্না করে!!!তাই আমার উচিত মরে যাওয়া,,, সব দোষ আমার!!!
আয়মান স্পর্শের পাশে বসে কাঁধে হাত রেখে বলে–নিদু তোকে ঘেন্না করে না!!!শুধু ওর মনে একরাশ অভিমান ঘর বেঁধেছে!!!আসলে বাচ্চা বয়সে এতোগুলো ধাক্কা মেনে নিতে পারে নি!!!
স্পর্শ –সব আমার দোষ!!!আমিই কোনোদিক না ভেবে ওকে হার্ট করেছি!!!
আয়মান–হুমম!!দোষ তোর আছে বটে!!সব ঠিক ছিল তবে নিদুর সাথে ওমন করা উচিত হয়নি!!!
স্পর্শ –আমার না তখন মাথা কাজ করছিল না!!!আমারই মরে যাওয়া উচিত চাচ্চু!! আমি না পেলাম মাকে না পেলাম নিজের বাবাকে!!!যাকে বাবা বলে জানলাম সে আসলে একটা শয়তান!!!আর না পেলাম নিজের বাচ্চাকে!!!আর এখনতো যে পরিস্থিতি তাতে এটুকু বলা যায় নিদু আর আমার কাছে আসবে না!!!
আয়মান–তোর মতো বুদ্ধিমান ছেলের থেকে এমন হতাশাজনক কথা আশা করি না!!!তোকে নিদ্রিতার সাথে কথা বলতে হবে!!!মরে গেলে সব সমাধান হয় না!!!এখন সময় সব ঠিক করে নিজের করে পাওয়ার!!!
আমি আর আকাশ তো আছি!!নিদুকে সবটা খুলে বলব!!দেখবি নিদু আবার তোকে নিজের করে নিবে!!
স্পর্শ এবার আয়মানের হাত ধরে বলল–তুমি ওকে বলো না চাচ্চু,,আমি ওকে খুব ভালোবাসি!! কখনো আর কষ্ট দিবো না!!!আমার ভুলের জন্য ও ক্ষমা চাইবো!!!
আয়মান–বলবো!!এখন চল জ্যাকেট গায়ে দে!!এই হাফহাতা টি শার্ট এ এখুনি ঠান্ডা লেগে যাবে!!!
স্পর্শ জ্যাকেট তুলে পড়তেই দূর থেকে একটা গুলি এসে আয়মানের মাথাতে লাগে!!!
আয়মান লুটিয়ে পড়ে মাটিতে!!!
স্পর্শ আতঙ্কিত হয়ে যায়!!হুস ফিরে পেয়ে ফোন করে নিজের গার্ডদের!!!গার্ডরা এসে দ্রুত আয়মানের লাশ নিয়ে যায়!!!
একজন খুব পুরোনো গার্ড এসে স্পর্শকে ধরে বাড়িতে নিয়ে যায়!!!
স্পর্শ যেন ভাবতেই পারছে না ২ মিনিট আগে কথা বলা মানুষটা মরে গিয়েছে!!!
স্পর্শ বাড়ি এসে ঠান্ডা মাথাতে চিন্তা করে এটুকু বুঝে যায় পরবর্তী টার্গেট নিদ্রিতার পরিবার!!!
রাত ৯.১৬,,,
আকাশের এখনো সেন্স আসেনি!!
নিদ্রিতা অতিরিক্ত ক্লান্তিতে বিছানাতে এসে কেবল গা এলিয়ে দিয়েছে!!সাথে সাথেই ফোন বেজে ওঠে!!!
অচেনা নম্বর দেখে রিসিভ করতেই স্পর্শ বলল–খুব ক্লান্ত পাখি??একটু দেখা করবে!!১০ মিনিটের জন্য তোমাদের ছাদে!!!!
নিদ্রিতা কপাল কুঁচকে কোনো উত্তর ছাড়াই ফোন কেটে দিল!!!তারপর নম্বরটা ব্লক করে দিল!!!
স্পর্শ আবার চেষ্টা করতেই বুঝল নিদ্রিতা নম্বর ব্লক করেছে!!!
স্পর্শ তাও রওনা হলো নিদ্রিতাদের বাড়ির পথে!!! হাতে একটা শপিং ব্যাগ!!!এতো ঝামেলার মধ্যে নিজেদের ১ম বিবাহ বার্ষিকী আর নিদ্রিতার জন্মদিন ২ টো তেই কোন সেলিব্রেশন হয়নি!!!তাই কোলকাতা থেকে ফেরার সময় স্পর্শ কিছু উপহার এনেছে নিদ্রিতার জন্য!!!
স্পর্শের দৃঢ় বিশ্বাস নিদ্রিতা ছাদে আসবে!!!গার্ডদের নিচে দাঁড়াতে বলে পাইপ বেয়ে স্পর্শ ছাদে উঠে এল!!!
এরপর একটা সিগারেট ধরিয়ে অপেক্ষা করতে থাকল নিদ্রিতার!!!
আকাশের একটু সেন্স ফিরতেই পাশে তাকিয়ে দেখে তামান্না ঘুম!!!ঘুমটা দেখে মনে হচ্ছে কতকাল ঘুমোয়নি সে!!!তাই আকাশ হালকা করে তামান্না কপালে ঠোঁট ছুয়ে দিয়ে বিছানা থেকে ধীর পায় উঠে যায়!!
ধীর পায়ে নিদ্রিতার ঘরে আসতেই দেখল নিদ্রিতাও ঘুম!!!
অনেকদিন খোলা বাতাস থেকে দূরে থাকায় আকাশ হালকা পায়ে উঠে ছাদে এলো!!!ছাদের দরজা খুলতেই সোডিয়ামের আলোতে দেখল কেউ একজন সিগারেট টানছে!!!!
আকাশ হালকা পায়ে তার দিকে এগিয়ে গেল!!!
কারো একজনের উপস্থিতি টের পেয়ে স্পর্শ মনে করল নিদ্রিতা এসেছে!!তাই ঘুরে যেই না জড়িয়ে ধরতে যাবে তখনই আকাশকে দেখে চোখ বড়বড় করে পেছনে সরে আসে!!!
মুখে ধরানো সিগারেট হাত দিয়ে পেছনে নিয়ে বলে–
তু–মি– এখানে এসময়??
আকাশ হালকা হেসে বলে–সিগারেট টা ফেলিস না!! আমাকে দে!!
স্পর্শ ভ্রু কুঁচকে বলল–তোমারও অভ্যাস আছে নাকি???!!!
আকাশ–একটু আদধু সবারই থাকে!!কই দে??
স্পর্শ প্যাকেট থেকে নতুন সিগারেট বার করে আকাশের হাতে দিল,,আকাশ সিগারেট ধরিয়ে নিজেও টান দিল!!
স্পর্শ সামনের দিকে তাকিয়ে বলল–জীবনে ১ম আমরাই জামাই শ্বশুর যারা একসাথে সিগারেট টানছি!!!
আকাশ হেসে বলল–সব কিছু পসিবল,,, ইয়াং ম্যান!!তবে তুই এতো রাতে এখানে??
স্পর্শ –তোমার মেয়ের সাথে দেখা করতে এসেছি!!!আমায় তো সংসার করতে হবে!!!তাই বউ তো লাগবে!!
আকাশ–বউ এর রাগ ভাঙাতে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হব৷ কিন্তুু এবার!!!
স্পর্শ –হুমম!!!
স্পর্শ আয়মানের মৃত্যুর কথাটা আর আকাশের সামনে তুলল না কারণ আকাশের শরীর ভালো না!!!
আকাশ–তা তুই ছাদে এলি কিভাবে??দরজা তো বন্ধ ছিল!!!
স্পর্শ –পাইপ বেয়ে!!!
আকাশ—বাব্বাহ!!!সাহসী জামাই আমার!!!
স্পর্শ –হুমম!!!আগেও এসেছি!!!
আকাশ–তা আবার জানি না!!
স্পর্শ ভ্রু কুঁচকে বলল–কেমনে জানো??
আকাশ–দেখেছিলাম সেই একবার!!!অন্যরকম অবস্থায়!!!
স্পর্শ বুঝে নিল লাস্ট টাইম সে আর নিদ্রিতা ছাদে দাঁড়িয়ে কিস করেছিল সেই সময়টার কথা বলছে আকাশ!!!
স্পর্শ এবার হেসে বলল–তা তুমি শ্বশুরমশাই,,তখন কিছু বললে না কেন??
আকাশ–এতো পাগল না,, মেয়ে জামাই এর প্রাইভেসি নষ্ট করব!!
স্পর্শ হেসে আকাশকে জড়িয়ে ধরে বলল–আমার বেস্ট শ্বশুর!!!
আকাশ ও জড়িয়ে ধরল আর বলল–আমার নিদুর সব দায়িত্ব তোর!!খেয়াল রাখবি ওর!!!আর সিগারেট কম খাবি!!!মদ তো খাবিই না!!!মনে থাকবে??
স্পর্শ মাথা নাড়িয়ে বলে–থাকবে!!
আচমকা একটা গুলি এসে স্পর্শ আর আকাশের পায়ের কাছের ফুলের টবে লাগল!!
স্পর্শ আর আকাশ ছিটকে সড়ে গেল!!!স্পর্শ ও বন্দুক বার করে গুলি আসার দিকটায় ৩ বার শুট করলো!!
এতো গুলির আওয়াজে ঘুম ভাঙল নিদ্রিতার!!!
নিদ্রিতা হালকা পায়ে ছাদের দিকে আসতে লাগল!!!
আচমকা পরপর ৫ টা গুলি এসে ক্ষতবিক্ষত করে দেয় আকাশকে!!!
স্পর্শ হাতে বন্দুক নিয়ে আকাশকে আগলে ধরে অপরদিকে শুট করে!!!
স্পর্শ আকাশকে ধরে রেখেছে!!!ইতিমধ্যে আকাশ মারা গিয়েছে!!!
এসবের মাঝেই নিদ্রিতার আগমন!!!
নিদ্রিতার নিজের বাবাকে স্পর্শের হাতে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দেখল আর স্পর্শের হাতে বন্দুক দেখে চেচিয়ে উঠলো!!!
স্পর্শ দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে নিদ্রিতা!!!।নিদ্রিতা দৌড়ে এসে নিজের বাবাকে ধরল!!মাটিতে শুইয়ে দিয়ে –“বাবা বাবা” বলে ডাকতে লাগল!!!
স্পর্শ কাছে বসতেই নিদ্রিতা বলল–মেরে ফেললে আমার বাপীকে!!!
স্পর্শ নিদ্রিতার হাত জড়িয়ে ধরে বলল–ট্রাস্ট মি নিদু!!আমি মারি নি!!
নিদ্রিতা এবার ঝাঁকা দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে কেঁদে বলল–মিথ্যা বলবে না!!তুমি মেরেছো আমার বাবাকে!!!
গুলির আওয়াজে তামান্না আর স্পর্শের গার্ডরাও ছাদে চলে এলো!!তামান্না তো স্বামীকে এমন দেখেই সেন্সলেস হয়েছেন!!আর নিদু যেন হতবাকের মতো দাঁড়িয়ে আছে!!শাড়িতে লেগে আছে তার বাবার তাজা লাল রক্ত!!স্পর্শের গার্ডরা আকাশের লাশকে নিয়ে গেল!!!স্পর্শ নিদ্রিতার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল–ট্রাস্ট মি নিদু!!!আমি তোমার সাথে দেখা করতে এসেছিলাম!!আমি খুন করি নি চাচ্চুকে!!!স্পর্শের চোখে পানি!!
নিদ্রিতা পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে!!
স্পর্শ এবার নিদ্রিতাকে জড়িয়ে ধরল!!জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে ঠোঁটের ছোঁয়া দিয়ে বলল–আমি কিছু করিনি নিদু!!!
নিদ্রিতা এবার জোড়ে ধাক্কা দিয়ে স্পর্শকে সরিয়ে দিয়ে চিল্লিয়ে বলল–আর কখনো নিজের মুখ দেখাবে না আমায় !!!তারপর নিদ্রিতা নিজের মায়ের পাশে গিয়ে বসল!!
স্পর্শ কান্নামাখা চোখে তাকিয়ে রইল!!!ফোন আসাতে দ্রুত বেরিয়ে গেল!!!
পরদিন,,,
আকাশের কোনো ছেলে না থাকায় স্পর্শই নিজ হাতে দাফনের কাজ করল!!!
নিদ্রিতার সামনে আর যায় নি!!মেয়েটা যেন ধাক্কা পেতেই আছে!!
স্পর্শ নিজেও ধাক্কা খাচ্ছে একের পর এক!!!
কাটে ২ মাস!!!
স্পর্শ এখনো নিদ্রিতার সামনে যায়নি!!!তবে আড়াল থেকে বারবার নিদ্রিতাকে দেখতে ছুটে যায় সে!!!

নিদ্রিতা এখন বেশ সামলে নিয়েছে নিজেকে তবে স্পর্শকে এখনো ক্ষমা করেনি!!!
তামান্না এখন প্রায়শই অসুস্থ থাকে!!নিজের ঘরেই থাকে!!!
সন্ধ্যা ৭ টা,,
নিদ্রিতা গোসল সেড়ে বেরিয়েছে মাত্র!!!নিজের চুল ঝাড়ছে!!!
অন্যদিকে,,,
স্পর্শ সরাসরি পাইপ বেয়ে ব্যালকোনি থেকে আজ নিদ্রিতার ঘরে চলে এসেছে!!!
নিদ্রিতা কারো উপস্থিতি টের পেয়ে পেছন ফিরে দেখে স্পর্শ!!! চোখ ২ টো লাল!!রাগে ফুলছে!!
নিদ্রিতা ভ্রু কুঁচকে বলে–এ কি!!তুমি এখানে??বেরোও এখুনি!!!
স্পর্শ নিদ্রিতার ঝাঝালো কন্ঠ শুনেই নিদ্রিতাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে!!
তারপর দাঁত কটমট করে বলে–আমার কি টাকার অভাব যে তোকে টিউশনি করতে হবে??আর টিউশন বাড়িতে তোকে স্টুডেন্টের বাবা যে নজরে দেখে সেটা বেশ ভালো লাগে তাইনা!!আজ বেডে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন খুব খুশি লাগছে না!!
নিদ্রিতা ভ্রু কুঁচকে বলে–ছি!!ছেড়ে দিয়েছি ওই টিউশন!!আর আপনার টাকা দিয়ে তো কখনোই খাবো না!!খুনি একটা!!
স্পর্শ এবার রেগে গিয়ে জোরে নিদ্রিতার নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে রক্ত বার করে দেয়!!!
তারপর বলে–আগেও বলেছি আবারও বলছি খুন করিনি আমি!!তবে তুই বারবার খুনি বললে তোকে খুন করে ফেলবো!তারপর খুনি হবো!!নিদ্রিতা ঠোঁটের ব্যাথাতে ফুপিয়ে যাচ্ছে!! হাত দিতে পারছে না কারণ হাত স্পর্শ শক্ত করে চেপে রেখেছে!!!
স্পর্শ এবার একহাতে নিদ্রিতাকে চেপে ধরে।। অন্য হাতে ফোন লাগায় নিজের গার্ডদের!!গার্ডকে বলে–নার্স এপোয়েন্ট কর!!খালা মনির খেয়াল রাখবে!!কোনো সেবার যেনো ত্রুটি না হয়!!!
তারপর ফোন কেটে!!নিদ্রিতা দিকে তাকিয়ে দেখে নিদ্রিতার ঠোঁট কেটে রক্ত পড়ছে!! স্পর্শ নিজের ঠোঁট দিয়ে নিদ্রিতার ঠোঁটের রক্ত শুষে নিয়ে বলে–এবার যা হবে আমার সামনে বসে হবে জান!!তোমাকে আর খোলা পায়ে ছাড়ছি না!!!

তারপর নিদ্রিতাকে তুলে নিজের নতুন বাড়িতে নিয়ে আসে!!!
এর পেছনে যদিও কারণ আছে!!নিদ্রিতার ওপর ইতিমধ্যে ৩ বার আক্রমণ হয়েছে!! যদিও নিদ্রিতার অগোচরে স্পর্শ ব্যাপারটা সামলে নিয়েছে!!!
তবে তার মতে এখন নিদ্রিতাকে তার সাথেই থাকতে হবে!!!!
আজ ৫ দিন নিদ্রিতা একটা ঘরের মধ্যে!! স্পর্শ বহুবার বোঝাতে এসে ফিরে গিয়েছে!!!
আজ স্পর্শ মদ খেয়ে এসেছে!!!যদিও খুব একটা নেশা হয়নি!!!
নিদ্রিতা স্পর্শকে দেখেই বলল–আবার এসেছো!!!!
স্পর্শ এবার রেগে নিদ্রিতাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল তারপর বলল–হাজারবার আসবো!!!
নিদ্রিতা ধাক্কাধাক্কি শুরু করল!!!সাথে বহু কথা!!স্পর্শের কোনো কথাই শুনছে না!!স্পর্শ না পেরে নিদ্রিতাকে ধাক্কা দিয়ে বেডে ফেলে চেপে ধরল বেডের সাথে!!!
নিদ্রিতা তাও ধাক্কাধাক্কি করছে!!
তাই স্পর্শ উপায়ান্তর না পেয়ে নিদ্রিতার ঠোঁট আকড়ে নিল!!!
নিদ্রিতা এখনো ধাক্কাচ্ছে!!!
কিন্তুু স্পর্শের তো হুস নেই!!!বহুদিন পর প্রেয়সীর ঠোঁটে নিজের তৃষ্ণা মেটাতে ব্যস্ত সে!!!ছোঁয়া আরও গভীর হতেই নিদ্রিতা নিজেও শান্ত হয়ে পড়ে!!!
হাজার হলেও নিজের ভালোবাসার মানুষের ছোঁয়া বহুদিন পর সে নিজেও উপেক্ষা করতে পারছে না আবার নিজে রেসপন্স ও করছে না!!!
বাকিটা তো সবার জানা ১ম পর্বে!!!🎈♥️
#অভিমানে_তুমি (সিজন ২)
#ফারিয়া_আফরিন_ঐশী
#পর্বঃ১৪

অতীতের কথা চিন্তা করা শেষ হতেই চোখের কার্নিশে গড়িয়ে পড়া জল মুছল নিদ্রিতা!!!তারপর বলল—আমি তোমাকে একদম ভালোবাসি না স্পর্শ!!! খুব খারাপ তুমি!!!একদম বাজে!!!!
এসবের মাঝে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ল তা তার অজানা!!!
কিছুক্ষণ পর,,,
কারো গরম নিশ্বাস আর ঠোঁটে অনবরত চুমু খাওয়ার দরুণ নিদ্রিতার ঘুম ভেঙে যায়!!চোখ খোলার আগেই নিদ্রিতা বেশ বুঝে যায় এ কাজ স্পর্শের!!!
নিদ্রিতা চোখ খুলতেই স্পর্শ তার কপালে চুমু দিয়ে বলে–উঠে পড় দ্রুত!!!
নিদ্রিতা ভ্রু কুঁচকে মুখ ফুলিয়ে বলল—লাভ কি উঠে থাকতে তো হবে সেই চার দেয়ালের মাঝেই!!!!
স্পর্শ হালকা হেসে বলল–আর মাত্র ২ দিনই!!!
নিদ্রিতা –মানে??
স্পর্শ হালকা কাছে এসে বলল–মানে বিয়ে হয়েছে শ্বশুর বাড়ি তো যেতে হবে!!!
নিদ্রিতা–কোথাও যাবো না আমি!!
স্পর্শ নিদ্রিতাকে কাছে টেনে বলল–দেখা যাবে!!
স্পর্শের ফোন আসাতে স্পর্শ বিরক্ত হয়ে ফোন হাতে দরজা লক করে বেরিয়ে গেল!!!
স্পর্শ যেতেই নিদ্রিতা বলল–আচ্ছা,, খুব কি ক্ষতি হতো যদি আমার আর স্পর্শের সংসারটা স্বাভাবিক হতো!!!
স্পর্শ কে কোলকাতা থেকে ফোন করে একজন জানালো তার বাবা এখন সুস্থ!!!
স্পর্শ হালকা হেসে বলল–আসছি আমি কোলকাতা!!অনেক প্রশ্নের উত্তর জানার আছে!!!যা কেবল চৌধুরী সাহেবই দিতে পারবে!!!
তামান্না(নিদ্রিতার মা) কে আজই স্পর্শ কোলকাতা পাঠানোর ব্যবস্হা করছে!!!
স্পর্শ এসেছে তামান্নার সাথে দেখা করতে!!!
স্পর্শ তামান্নার পাশে বসে বলল–কেমন আছো খালামনি???
তামান্না–এই তো ভালো বাবা!!!তুই??
স্পর্শ –এই আছি!!!
তামান্না–নিদু কেমন আছে??
স্পর্শ –ভালো আছে!!তুমি আজ রাতে কোলকাতা যাচ্ছ খালামনি!!পরশু আমরাও আসছি!!!
তামান্না চোখের জল ফেলে বলে–সত্যি!!!জানিস আমি তোর চাচ্চু সেই ছোট নিদ্রিতাকে নিয়ে কোলকাতা ছেড়েছিলাম!!!আর ফিরিনি!!আজ দেখ মানুষটা নেই!!
স্পর্শ এবার চোখের কার্নিশের পানি ফেলে তামান্নাকে জড়িয়ে ধরে বলে–সরি খালামনি!!
তামান্না স্পর্শের মাথায় হাত দিয়ে বলে–ধুর পাগল ছেলে!!যখনই কথা হয় শুধু সরি আর সরি!!তোর তো কোন দোষ নেই!!!
স্পর্শ –তোমার মেয়ে তো মানেই না!!
তামান্না –মানবে!!তবে তোর কাছে আমার দাবি!!!সায়ানের শাস্তি চাই!!!ভয়াবহ শাস্তি!!!
স্পর্শ –কথা দিলাম!!!ওর শাস্তি এমন হবে যে ওর নিজের আত্মা ই ওর লাশ দেখে কেঁপে উঠবে!!!
তারপর তামান্না কে কিছু গার্ড দিয়ে কোলকাতা পাঠিয়ে দিয়ে স্পর্শ বাড়িতে চলে এলো!!
স্পর্শ ফ্রেস হয়ে ঘরে এসে দেখল নিদ্রিতা জানাল দিকে মুখ করে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে!!!
স্পর্শ দরজা বন্ধ করে এসে পেছন থেকে নিদ্রিতাকে জড়িয়ে ধরল!!!
নিদ্রিতার কোনো রিয়েকশন না পেয়ে নিদ্রিতাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে দেখল নিদ্রিতার চোখে পানি!!!
স্পর্শ চোখের পানি মুছে বলল–বিশ্বাস কর নিদু!!আমি চাচ্চুকে মারি নি!!আটকে রেখেছিলাম ঠিকই কিন্তুু কোনো অত্যাচার করার পারমিশন দেই নি!!!সব সায়ান করেছে!!!
নিদ্রিতা চুপ করে চোখের জল ফেলেই যাচ্ছে!!
স্পর্শ নিদ্রিতার হাত দুটো মুঠোতে নিয়ে বলল–আমি যে কি বাজে পরিস্থিতিতে ছিলাম তা তোমায় বলে বোঝাতে পারব না!!!নিজের পরিচয়টাই মিথ্যা হয়ে গিয়েছে!!! আমি ওসবের পরোয়া করি না নিদু!!আমি শুধু তোমাকে চাই!!তুমি যা বলবে তাই হবে!!!
নিদ্রিতা এবার স্পর্শের দিকে তাকিয়ে বলল–মেনে নিলাম তুমি বাপীকে মারোনি!!কিন্তুু আমার অনাগত বাচ্চাটা মৃত্যুর দায় কার??
তোমার অবহেলাই কি ওর মৃত্যুর জন্য দায়ী নয়??
স্পর্শ এবার চোখের পানি ফেলে বলল–হুমমম আমার ভুল!!তবে নিদু বাচ্চাটা কি আমার ছিল না??!!আমার কি কষ্ট হয় নি!!!আমার জীবনের ১ম একটা অন্যরকম অনুভূতি মিস করেছি এই দায় কি সারাজীবন আমার মন বইবে না??!!!
নিদ্রিতা এবার শব্দ করে কেঁদে দেয়!!!
স্পর্শ –আমাকে একটু সময় দাও সব ঠিক করে দিবো আমি প্লিজ!!!
নিদ্রিতা ফুপিয়ে যাচ্ছে!!
আচমকা কালো জামা পড়া একটা লোক জোড়ে তাদের বেডরুমের দরজা খুলে স্পর্শের দিকে শুট করলো!!
নিদ্রিতা চেঁচিয়ে উঠে চোখ বন্ধ করে নেয়!!গার্ডরা আওয়াজ শুনে এসে লোকটাকে ধরে দেখে সে স্পর্শের গার্ডদের একজন!!
স্পর্শ একটুর জন্য বেঁচে গিয়েছে!! কিন্তুু গুলিটা তার ঘাড় বরাবর লেগেছে!!
স্পর্শ গুলিবিদ্ধ জায়গা টা হাত দিয়ে চেপে ধরে আছে কারণ সেখান থেকে রক্তপাত হচ্ছে!!!
নিদ্রিতা চোখ খুলে স্পর্শের এই অবস্হা দেখে ভয় পেয়ে যায়!!
স্পর্শকে দ্রুত ২ জন গার্ড ধরে বিছানাতে বসিয়ে দেয়!!! আরেকজন ডাক্তার আনতে গিয়েছে!!!
নিদ্রিতা ভয়ে কাঁপছে!!! স্পর্শ যন্ত্রণার মধ্যেও নিদ্রিতাকে ডাক দিল!!!
নিদ্রিতা তাড়াতাড়ি কাছে এসে এতো রক্ত দেখে ভয়ে আরও কাঁপতে শুরু করল!!স্পর্শের কাছে আসতেই স্পর্শ একহাতে নিদ্রিতাকে কাছে নিয়ে বলল–ভয় পেও না!!ঠিক আছি আমি!!
নিদ্রিতা ভয়ার্ত কন্ঠে বলল–কিন্তুু!!!
স্পর্শ বলতে না দিয়ে বলল–আমার পারসোনাল ডক্টর একজন মেইল !!!তুমি ফ্রক টা চেন্জ করে এসো!!!গো!!
নিদ্রিতা আর কিছু বলার সুযোগ পেল না তাই আলমারি থেকে শাড়ি নিয়ে দ্রুত পড়ে এলো!!!
ডাক্তার এসে স্পর্শকে প্রপোর ট্রিটমেন্ট দিল!!!
ঘুমের ইনজেকশন দেওয়ার কারণে স্পর্শ ঘুমাচ্ছে!!!
নিদ্রিতা ডাক্তারের কাছ থেকে ওষুধ বুঝে নেওয়ার জন্য ঘর থেকে বেরিয়ে সিড়ির কাছে আসতেই দেখল গার্ডরা ঐ লোকটাকে মারছে আর জিজ্ঞেস করছে কিছু একটা!!!
নিদ্রিতা ডাক্তারকে এগিয়ে দিতে নিচে আসতেই শুনল লোকটা বলছে–আমাকে সায়ান স্যার টাকা দিয়েছেন,নিদ্রিতা ম্যামের বাবাকে মারার পর নিদ্রিতা ম্যামকে মারার জন্য!! কিন্তুু তার আগে স্পর্শ স্যারকে মারতে!!!
নিদ্রিতা শুনেই থমকে গেল!!যে জন্য সে এতোদিন স্পর্শকে কষ্ট দিয়েছে আসলে স্পর্শের কোনো দোষই নেই!!!
নিদ্রিতাকে দেখে স্পর্শের সবচেয়ে পুরাতন আর বিশ্বস্ত গার্ড এগিয়ে এসে বলল–ম্যাম আপনি ওপরে যান!!ব্যাপারটা আমরা দেখে নিবো!!!
নিদ্রিতা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল–ঐ লোকটা মেরেছে আমার বাবাকে!!!
গার্ড–জি ম্যাম!!!
নিদ্রিতা নাক,মুখ শক্ত করে বলল–ওকেও শেষ করে ফেল!!!
বলেই ওপরে চলে গেল!!
গার্ডটা এগিয়ে এসে বলল–তোকে তো মারতেই হবে!!! ম্যাম অর্ডার দিয়েছেন বলে কথা!!!
নিদ্রিতা ঘরে এসে একজন পাহারারত গার্ডকে ডাকল,,,
গার্ড–ইয়েস ম্যাম,,
নিদ্রিতা–ওষুধ গুলো নিয়ে আসবেন আর দরজার লকটা ঠিক করে দিবেন!!
গার্ড–ওকে ম্যাম!!!
গার্ড চলে যেতেই নিদ্রিতা দরজা চাপিয়ে স্পর্শের কাছে এসে বসল!!
স্পর্শের মুখে হাত দিয়ে কপালে ঠোঁটের ছোঁয়া দিয়ে নাকে নাক মিশিয়ে বলল–সরি!!!আমি এতোটা ভুল ধারণা নিয়ে ছিলাম!!
বিগত ৪ ঘন্টা ধরে স্পর্শ ঘুমিয়ে আছে!!
গার্ড লক ঠিক করে দিয়ে যাওয়ার পর নিদ্রিতাও স্পর্শের পাশে এসে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে!!!
রাতের মধ্য ভাগে,,
স্পর্শের ঘুম ভেঙে যায়!!হালকা নড়তেই বুঝতে পারে কাঁধে ব্যাথা!!
কোনোমতে ডান পাশ ঘুরতেই চোখে পড়ে ঘুমন্ত নিদ্রিতাকে!!!
স্পর্শ নিদ্রিতার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে–বাব্বাহ!!ম্যাডাম আজ আমার পাশে!!!এই ক দিন তো জোর করেও রাখতে পারি নি!!
স্পর্শ এসব ভেবে হালকা করে উঠতে যাবে,তখনই নিদ্রিতা ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে বলে–কি হলো??চোট পেয়েছো??কই যাচ্ছ??
স্পর্শ –এইতো উঠবো একটু!!!
নিদ্রিতা উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলে–উঠে কোথায় যাবা??কোনো দরকার নেই ওঠার!!রেস্ট নেও!!
স্পর্শ এবার দাঁড়িয়ে থাকা নিদ্রিতার একহাত ধরে কাছে এনে বলে–আমি শুয়ে থাকলে আমার হয়ে ওয়াশরুম কি তুমি যাবে!!!!
নিদ্রিতা চোখ বড়বড় করে বলে–অসভ্য লোক!!ওয়েট আমি হেল্প করছি!!
স্পর্শ চোখ টিপে বলে–কি ওয়াশরুমের কাজে!!!
নিদ্রিতা মেকি সুরে বলে–না!! ওয়াশরুম পৌঁছাতে!!
নিদ্রিতার সাহায্য নিয়ে স্পর্শ ওয়াশরুমে গিয়ে হালকা ফ্রেস হয়ে নিল!!!
স্পর্শ নিদ্রিতার ব্যবহারে অবাক হলো!!
ওয়াশরুম থেকে বেরোতেই দেখে নিদ্রিতা খাবার নিয়ে বসে আছে!!
স্পর্শ দেয়াল ঘড়ি দেখে বলে–রাত ৩.৫০ বাজে নিদু!!এখন খাবার নিয়ে এলে কেন??
নিদ্রিতা স্পর্শের কাছে এসে টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছিয়ে দিয়ে বলে–খাবার খেয়ে ওষুধ খেতে হবে!!!
স্পর্শকে বসতে দিয়ে নিদ্রিতা স্পর্শের একটা টি-শার্ট নিয়ে আসে!!
দেখে স্পর্শ বলে–দরকার নেই!!পরে চেন্জ করে নিবো!!
নিদ্রিতা ভ্রু কুঁচকে বলে–পরে না এখুনি!!ওই রক্তমাখা টি-শার্ট পরে আমার বিছানাতে ঘুমোনো যাবে না!!
স্পর্শ এবার আরও অবাক হলো!!যে হলো কি নিদ্রিতার!!!!

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here