অভিমান পর্ব ১৭+১৮

#অভিমান
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন
পর্ব-১৭
ঝকঝকে সাদা-গোল্ডেন কম্বিনেশনের ডিভানটাতে বসে রয়েছে রাহান। কপালে হাত রাখা। মুখে অনুতপ্তের ছায়া। অনুতাপ যেনো আষ্ঠেপৃষ্ঠে বেধে ধরলো তাকে যখন কামিনী বেগমের ফোন এলো। ঝুমকোর বিয়ে না কি তার সাথে! কথাবার্তা চলছে। রাহানের মতামত নিলো। এরপর রাহানের বাবা-মার সাথে কথা বলবে।

হায় কপাল! রাগের বশে জিদের বশে যে রাহান আজ ঝুমকোকে এতো কষ্ট দিয়ে জোরজবরদস্তি, কান্নাকাটি, হাত কাটাকাটি করে বিয়ে করলো। তার সাথেই না কি তার বিয়ের কথাবার্তা চলছে। কি আশ্চর্য! পৃথিবী এতো আজব কেনো? সাথে পৃথিবীর মানুষগুলোও এতো অবুঝ কেনো?
তার বিয়ে করা বউকে আবার বিয়ে করতে হবে। ইশশ…রাহানের বড্ড বড় ভুল হয়ে গেলো। শুধুমাত্র একটা লেইম চিন্তা ভাবনার জোরে কোনো কিছু না ভেবেই ঝুমকোকে বিয়ে করা ঠিক হলো না। তার পরিবার কতো আশা করে আছে! বাড়ির একমাত্র মেয়ে নয়নের মনির বিয়ে ধুমধাম করে সাত এলাকা জানিয়ে দিবে আর রাহান কি করলো এটা?

শুধুমাত্র ভালোবাসা হারানোর ভয়ে ভালোবাসাকে কষ্ট দিয়ে মস্ত বড় ভুল করে ফেলল । এই ভুলের খেসারত কীভাবে দিবে সে? আর ঝুমকো? সেও কি কখনো ক্ষমা করবে? আর রাহানের বাবা-মা? তারাও তো জানে না। তারা জানলে কি করবে? মা তো লিটেরেলি পাগল ই হয়ে যাবে। নাহ…বিয়ের ব্যাপারটা এখন কাউকে ঘুনাক্ষরেও জানানো যাবে না। রাহানের ই সব দিক সামলাতে হবে। চোখ কান আরো খোলা রাখতে হবে। তার সাথে ঝুমকোকে বুঝাতে হবে।

________________________________

সদ্য ভেজা সোনালতা আলোয় সেজেছে আজকের ভোর। কেবলই জেগে উঠা পাখিদের টুই টুই আওয়াজে প্রকৃতি জীবন্ত। ঝুমকো সাত সকালে ঘুম থেকে উঠে গোসল করেছে। ভেজা চুল পিঠময় ছড়িয়ে দিয়ে বারান্দার রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। খুব অন্যরকম অভূতপূর্ণ সকাল! এমন সকাল কি আদেও কখনো এসেছিলো ঝুমকোর জীবনে?
কি আশ্চর্য সকাল কেনো বলছে ঝুমকো? এটা তো ভোর। দিনের নবীন ভাগ। আস্তে আস্তে সূর্য পুরোপুরি উঠবে। মাথার উপর কড়া তাপ দিবে তারপর দিন শেষে প্রবীণ হয়ে ধীরে ধীরে ডুবে যাবে ওই দিগন্ত বিস্তৃত মাঠের প্রান্তরে, বড় বড় গাছের পেছনে, উঁচু রাস্তায় সাথে মিলেমিশে।

ঝুমকোর মুঠোফোনটাতে টুন করে একটা শব্দ হলো। মেসেঞ্জারে মেসেজ এসেছে। এতো সকালে মেসেজ! ভ্রু কুচকে মেসেজটা ওপেন করতেই চোখে পরলো একটা অদ্ভুত লেখা। সোহেল মেসেজ পাঠিয়েছে। কি আজব! সে এসব কি লিখেছে? ঝুমকো আবার চোখ বুলায়। মেসেজটা বিরবির করে বায় কয়েক পড়ে।

“আমি আমাকে আমি মানতে পারছি না ঝুমকো। নিজের সাথে বোঝাপড়া করে উঠতে পারছি না? এম আই মেন্টালি সিক?”

ঝুমকো সময়টা ভালো মতো দেখে। ঘড়িতে বাজে ছয়টা তিন। তারমানে কি সোহেল সারারাত ঘুমায় নি? যে ছেলে সকাল এগারোটার আগে ঘুম থেকে উঠে না সেই ছেলের এতো সকালে মেসেজ? হয়তো ঝুমকোকে অনলাইনে পাওয়ার সাথে সাথেই মেসেজ করেছে। ঝুমকোর অপেক্ষাতেই বোধহয় ছিলো সে। ঝুমকো লিখে পাঠায়,

‘এনিথিং রং সোহেল? ইজ এভরিথিং অলরাইট? তুমি কি অসুস্থ? কি হয়েছে তোমার?’

বয়সে সোহেল দু বছরের বড় হলেও প্রথম থেকেই নিজের রাগের বশে ঝুমকো নাম ধরে এবং তুমি করে ডাকতো। ভাই টাই এসব তার দ্বারা হতো না। বড্ড বেপরোয়া মেয়ে বলে কথা! সোহেল সাথে সাথে সিন করে মেসেজ পাঠালো,

‘কাল রাতে তোমার বান্ধবী এসব কি বলল? সে আমাকে তার কাছে ফোন করতে বারণ করেছে। ইভেন শি সেইড দ্যাট ইউ আর ম্যারিড। তুমি বিয়ে করেছো! ঝুমকো আমার লিটেরেলি কেমন কেমন যেনো লাগছে। একটু অসহায়ত্ব! একটু দম বন্ধকর পরিস্থিতি! নিজের মাঝে এলোমেলো হওয়া আমি নিজেকে বুঝতে পারছি না ঝুমকো। প্লিজ ক্যান ইউ টেল মি হোয়াট উইল হ্যাপেন উইথ মি?’

মেসেজটা পড়ার সাথে সাথে ঝুমকোর নিঃশ্বাস আটকে এলো। গলায় চাপা ভয় দলা পাকিয়ে গড়াগড়ি করতে লাগলো। হাত পা ভয়ে জমে বরফ হয়ে গেলো। মেসেজটা সিন করে রেখে দিলো ঝুমকো। আর কোনো উত্তর দিলো না। আর কোনো উত্তর দেওয়ার নেই। সোহেল ভয়ানক ভাবে আসক্ত হয়ে পরেছে। এটা কোনো প্রতিশোধ নয়। ক্রোধ নয়। এটা অন্যরকম! ইট’স স্পেশাল ফর হিম বাট নট ফর ঝুমকো! ঝুমকোর জন্য স্পেশাল তো একজন ই।

ঝুমকো গভীর নিঃশ্বাস ছাড়ে। আজ সকাল টা খুব অদ্ভুত। সোনালী কিরন। এক ফালি রোদের আলো মাটিতে মিশে যাচ্ছে। রাস্তায় ময়লা পানির উপর চিকচিক করছে। গাছে গাছে পাখিরা জাগছে। ডানা ঝাপটাচ্ছে। ফুল ফুটছে। সেই ফুলে আস্তে আস্তে পাখি বসছে, মৌমাছি বসছে, প্রজাপতি বসছে। মধু আহোরন করছে। প্রজাপতির হরেক রঙে প্রকৃতি নতুন ভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। সুন্দর লাগছে ! চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে! সাথে সোহেলের কাছ থেকে পাওয়া অপ্রত্যাশিত মেসেজে মনটা কু ডাকছে।

প্রকৃতির মায়া কাটাতে বাধ্য করলো আবারো ফোনের মেসেঞ্জারের সাউন্ড। কেউ একজন কল দিয়েছে। ঝুমকোর বুক কাপতে থাকলো অজানা কারনে। ফোনটা ঘুরিয়ে দেখার সাহস হচ্ছে না যে, কে ফোন দিয়েছে। যদি সোহেল দেয়? সোহেলের প্রশ্নের কি জবাব দিবে ঝুমকো? এই অনুভূতির নাম যে ভালো….বাসা! তা কি করে বলবে সোহেলকে? ঝুমকো যে এখন শুধুই রাহানের। রাহানকে ছাড়া সে এই জগতসংসারে আর কাউকে মন দিতে পারবে না। এই কথা কি সোহেলের কন্ঠে কন্ঠ রেখে বলতে পারবে ঝুমকো?

ফোন বেজে কেটে গেলো। ঝুমকো চোখ বন্ধ করে নিঃশ্বাস নিলো। দু সেকেন্ড সময় পোহাতে না পোহাতেই আবার ফোন আসলো। ঝুমকো ফোন চোখের সামনে নিয়ে দেখলো ‘রাহান’। নামটা দেখা মাত্রই ঝুমকোর চিন্তা ভাবনা সব জানালা দিয়ে পালালো। কেনো এই ছেলেটা এতো অন্যায় করার পর ও ঝুমকো তাকেই এতো ভালোবাসে? ভালোবাসা বোধ হয় এমনি। বড্ড বেপরোয়া এবং বেহায়া! ঝুমকো ভাবে, তাই বুঝি তখন ওভাবে তার বুক কাপছিলো? শরীর না বুঝলেও মন টা বুঝে গিয়েছিলো যে কে ফোন দিয়েছে।

আবার ফোন কেটে গেলো। এবার মিনিট গড়ালো। তারপর আবার ফোন আসলো। ঝুমকো তড়িঘড়ি করে ধরলো। ওপাশ থেকে ক্লান্ত গলা ঠেলে কেউ গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো, ‘এতো সকালে উঠে পড়েছো যে আজ?’

ঝুমকো তৎক্ষণাৎ কথা বলল না। সে বুঝতে ব্যস্ত যে রাহান কি সারারাত জেগে ছিলো? কিন্তু বেশি বেগ পেতে হলো না। তার ক্লান্ত গলা এবং ঘুমোঘুমো ভাব ই বলে দিচ্ছে সে সারারাত জেগে ছিলো। রাহান ঝুমকোর সাড়াশব্দ না পেয়ে এবার গভীর ভাবে ডেকে উঠে বলল, ‘বউ?’

ঝুমকো নির্বিঘ্নে খুব যত্ন করে চোখ বন্ধ করলো। যেনো রাহান ওর কানের কাছে ফিসফিস করে ডাকছে। নরম গভীর সুরে ‘বউ।’ এই প্রথম রাহান ডাকলো ‘বউ’। রিলেশন চলাকালীন সময়ে ঝুমকো কত করে রাহানকে বলতো একটু বউ ডাকো। রাহান তখন বলতো, ‘হঠাৎ কোনো কিছুর আবেগ বেশি। বিয়ের পর ডাকবো। এখন থেকে ডাকলে বিয়ের পর আর আসল আবেগ টা আসবে না।’ ব্যস, ঝুমকোও কখনো রাহানকে জামাই বলে ডাকতো না। গাল ফুলিয়ে বসে থাকতো।

রাহান আবার ডাকলো। ঘুমোঘুমো ক্লান্ত তীক্ষ্ণ বুকে মোচড় মাড়া কন্ঠে, ‘ও বউ….কথা বলবে না গো আমার সাথে?’
ঝুমকো অনেক কষ্টে দাত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে বলল, ‘হুম..?’
‘আই লাভ ইউ বউ।’ রাহান করুন কন্ঠে বলল।
মায়া দয়া হীন ঝুমকো বলে উঠলো, ‘আই হেইট ইউ।’

রাহানের বুকে সবসময়ের মতো চাপা কষ্ট হলো। তবুও তা একপাশে সরিয়ে হাসিমুখে বলল,

‘আচ্ছা বাদ দেও। তো বলো বর ছাড়া বাসররাত কেমন কাটলো?’
‘বান্ধবী রাত কাটিয়েছি।’ ঝুমকো বলল গম্ভীর গলায়।
‘বান্ধবী মানে কে?’
‘সব বিষয় তোমার না জানলেও চলবে।’
রাহান তোয়াক্কা না করে বলল, ‘নিউ বান্ধবী?’
‘নাহ। ফার্স্ট ইয়ারে চিনতাম। সেকেন্ড ইয়ার থেকে পরিচয়। থার্ড ইয়ার থেকে বেস্ট ফ্রেন্ড।’
‘এতো ফ্যাস্ট?’
‘তাও ভালো ও অন্তত আমাকে ছেড়ে যায় নি। বাকি সবাই তো ছেড়ে চলেই যায়।’
‘বাকি সবাই মানে? আমি ছাড়া আর কে?’
‘নিয়ন।’ ঝুমকো বলল এক নিঃশ্বাসে।
রাহানের রাগ হলো। কপালের এক পাশে রগ লাল হয়ে ফুলে উঠলো। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রাগ নিয়ন্ত্রণ করে বলল,
‘তোমার বান্ধবীর নাম কি?’
‘প্রাপ্তি।’
‘পরিচয় করাবে না?’
‘নাহ…’
‘আমি বোধহয় তাকে চিনি।’
‘কিভাবে?’ ঝুমকো অবাক হয়ে বলল।
‘আমি দেখেছি তোমাকে তার সাথে।’
‘তার মানে তুমি আমাকে ফলো করো?’
‘এই এক মাস দূর থেকে তাই করতাম। তোমাকে স্পেস দিতে চেয়েছিলাম যাতে নিজেকে একটু বুঝাতে পারো কিন্তু তুমি উল্টে তোমার বয়ফ্রেন্ড নিয়ে রেস্টুরেন্টে গেলে?’
‘এতোকিছু জানো অথচ এটা জানো না যে কাল রেসটুরেন্টে প্রাপ্তি সহ গিয়েছিলো? এতো খোঁজ খবর রাখো অথচ এটা জানো না আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই। তোমার আমাকে কি মনে হয় বলো তো? হ্যা? মানে কি ধরনের মেয়ে বলে মনে হয়?’ ঝুমকো রেগে উত্তেজিত কন্ঠে বলছে।

রাহান অবাক হয়ে যায়। অবিশ্বাস্য চোখে সামনের দিকে তাকিয়ে থাকে। একের পর এক ভুল। বিয়েটা করা মস্ত বড় ভুল হয়ে গেলো। ঝুমকোর বয়ফ্রেন্ড ছিলো না। তার মানে ঝুমকো মিথ্যে বলেছিলো। আর রাহান কোনো খোঁজ খবর না নিয়ে ঝুমকোর কথা ধরে বসেছিলো। মানে কীভাবে করতে পারলো এই বোকামিটা? রাহানের রাগ টা সত্যি অত্যাধিক মাত্রায় বেশি। এই রাগের কারনে বিদেশ চলে গিয়েছিলো। এই রাগের কারনে বিয়েটাও করলো৷ জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল মানুষ রাগের সময় আর বেশি খুশির সময় ই নেয় বোধ হয়।

নিজের চুল টেনে ছিড়তে ইচ্ছে করে রাহানের। তবুও নিজেকে অনেক কষ্টে সামলিয়ে দাত কেলানির ভঙ্গিতে বলে,

‘সে যাই হোক। বিয়ে তো আমাকেই করতে হতো। সেটা নাহয় আগেই করলে। আর জানো তো আমার অনেক পালিয়ে বিয়ে করার শখ ছিল।’
‘ফোন রাখো তো।’ ঝুমকো ঝাড়ি দিয়ে বলল।

রাহান ভাব নিয়ে বলে, ‘আমি এখন তোমার হাসবেন্ড যতক্ষন কথা বলতে চাইবো ততক্ষণ কথা বলবে।’

‘রাহান সবকিছু জোর করে চাপিয়ে দিতে চেও না। ইট’স মাই হাম্বল রিকুয়েষ্ট।’ ঝুমকো বলল করুন গলায়।

‘তুমি খুব কষ্ট পেয়েছো তাই না জান?’ রাহান একটু কেমন করে যেনো বলে।

ঝুমকোর কান্না আসলো রাহানের ওমন নরম সুরে। দাঁতে দাঁত চেপে কান্না আটকিয়ে বলল, ‘ঘুমাও রাহান। ইউ নিড আ রেস্ট। সারারাত তো বোধহয় ঘুমাও নি।’

‘তোমার থেকে ভালো আমায় কেউ কখনো চিনবে না ঝুম…মুখে যতই বলো আই হেইট ইউ আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো। শুধু তোমার অভিমান গুলো প্রাচীর ঘিরে বসে আছে। শীঘ্রই সেগুলোর অবসান ঘটবে।’

ঝুমকো আর শুনলো না। কেটে দিলো ফোন। এরপর আবার কান্না। ঠোঁট চেপে কান্না। আকাশের দিকে তাকিয়ে আল্লাহর কাছে আহাজারি করা। তারপর চোখ মুখ মুছে নিজের ঘরের দিকে গিয়ে বিছানায় ঘুমন্ত প্রাপ্তির দিকে চোখ পড়লো। কি নিষ্পাপ মেয়ে! কিন্তু এই কিউটনেস টা ওর দস্যিপনার নিচে পরে গেছে। ঝুমকো প্রাপ্তির মাথার কাছে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। ঝুমকো শুনতে পেলো প্রাপ্তি ঘুমের মাঝে বিরবির করে বলছে,

“সিসিক্যামেরা ইজ আন্ডার দ্যা খাট ইন বাসররাত। দেন ব্রেক ডাউন দ্যা খাট, মাই সিসিফুটেজ ইজ কাট।”

ঝুমকো প্রাপ্তির কথা শুনে কিছুক্ষন গোল গোল চোখ করে তাকিয়ে থাকলো। এরপর হাহা করে দম ফাটা হাসিতে বিছানায় গড়াগড়ি খেতে লাগলো। ওর হাসির শব্দে প্রাপ্তির ঘুম ছুটে গেলো। উঠে বসে চোখ কচলিয়ে বলে উঠলো,

‘দিলি তো স্বপ্ন টা ভেঙে। কিন্তু ভালোই করছস। কি ভয়ানক স্বপ্ন! আমি দেখিছি কি জানোছ? আমি দেখছি তোর বাসররাতে খাটের নিচে সিসিক্যামেরা লাগাইছি। সব রেকর্ড হইছে। এরপর খাট ভাঙ্গলো। আমার সিসি ফুটেজ থেকে সব ডিলেট। মানে ক্যামেরাই ভাইঙ্গে গেছে। আল্লাহ না করুক এমন! তওবা তওবা! আমার এতো খাটুনি সব জলে যাবো।’

প্রাপ্তি কাদো কাদো গলায় বলল। ঝুমকো একটু লজ্জা পেয়ে আবারো হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেয়ে খাট থেকে ফ্লোরে পরে গেলো।
#অভিমান
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন
পর্ব-১৮
‘দোস্ত, ভাইয়ার নাম্বার টা একটু দে।’
‘কোন ভাইয়া?’
‘যাহার সাথে তোমার কাল বিকাল পাঁচটা তেরো ঘটিকায় বিবাহ সম্পন্ন হইলো তাহার নাম্বার। এখন দেও।’
‘হর, যাহ তো।’
‘দে না। দুলাভাই লাগে। আর এখন পর্যন্ত কথাই বলতে পারলাম না।’
‘দোস্ত তুই মেসে কেন যাইতাছস না? আমার বাড়িত পইরে আছোস কেন? কি সমস্যা তোর? হ্যা? মতলব কি?’ ঝুমকো ভ্রু কুচকিয়ে বলল।
‘আরে মতলব থাকলেই কি না থাকলেই কি? তোর ভাই রুম তো আমার থেকে ছোট ক। বড় হইলে না একটা কথা আছিলো। ফিলিং বহুত কষ্ট মামা।’
‘আজাইরা।’
‘তুই আজাইরা। এখন নাম্বার দে। ভাইয়াকে আসতে বলি।’

,

রাহানকে ফোন করে ডেকে এনেছে প্রাপ্তি। রাহানের সাথে এমন ভাবে সে গল্প জুড়েছে যেনো কতদিনের চেনা পরিচিত তারা। রাহান বাড়িতে ঢুকার সাথে সাথে ঝুমকো ঘর থেকে চলে গেছে।

রাহান বাড়িতে এসেছে প্রায় ঘন্টা খানিকের মতো হবে। ঝুমকো একবারো রাহানের সামনে আসে নি। এদিকে প্রাপ্তি এক ঘন্টা যাবত কন্টিনিউয়াসলি বকবক করেই যাচ্ছে। রাহানের এবার বিরক্ত লাগতে শুরু করেছে। সে নিজেই অতি স্বল্প ভাষী একজন মানুষ। তার উপর ননস্টপ ভাঙা রেকর্ডের মতো পু পু তার মাথায় জ্যাম ধরিয়ে দিয়েছে। এদিকে উঠে চলেও যেতে পারছে না। কি মুসিবত!

রাহান স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলল তখন। যখন ঝুমকোকে জোর করে ঘরে নিয়ে এলো কামিনী বেগম। প্রাপ্তি তার রেকর্ড অফ করলো। রাহান হাফ ছেড়ে বাচঁলো।

এর পর তাকালো অতি আপন মানুষটার দিকে।
অতঃপর আড়চোখে যখন ঝুমকোও তাকালো খনিকের জন্য অপ্রত্যাশিত ভাবে চোখাচোখি হয়ে গেলো। এরপর কিছুক্ষনের জন্য মুগ্ধতা। দুজন দুজনের মাঝে দুজনকে দেখতে পারছে না। দেখছে অন্য সত্তাকে। একজন দেখছে সদ্য বিবাহ করা নিজের স্ত্রীকে আরেকজন দেখছে নিজের পবিত্র স্বামীকে। এরপর শ্বাস আটকে গেলো। মুগ্ধতায় পরিবেশ সাদা-কালো হয়ে গেলো। কেবল মাত্র দুজন দুজনাতে রঙিন।

রাহান উঠে গিয়ে ঝুমকোর কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। কামিনী বেগম ঝুমকোকে ঘরে রেখেই চলে গিয়েছেন। প্রাপ্তি গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে দেখে রোমান্টিক সিন। রাহান ঝুমকোর চারিপাশে গোল গোল ঘুরে পর্যবেক্ষণ করার ন্যায় বলে,

‘লুকিং ডিফারেন্ট। বিয়ে বিয়ে একটা ব্যাপার ফুটে উঠেছে তোমার চোখে মুখে। যে কেউ বুঝে ফেলবে তুমি বিবাহিতা। কিন্তু কেনো মনে হচ্ছে? এই শালিকা, দেখো তো আমাকে দেখে কি বিবাহিত মনে হচ্ছে?’

প্রাপ্তি জরুরি ভঙ্গিতে মাথা নাড়িয়ে বলল, ‘একদম না। হ্যান্ডাসাম লাগছে ভাইয়া।’

প্রাপ্তি বলল হাতটাকে পার্ফেক্ট ইশারা করে।

‘তবে ওকে কেনো লাগছে?’ রাহান চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল।

‘কি জানি? এই বিয়াত্তা নারী, বলো তোমাকে বিবাহিত দেখতে কেনো লাগছে?’

প্রাপ্তি বলল চোখ বড় বড় করে ভাবুক হয়ে। ঝুমকো কড়া চোখে তাকায়। প্রাপ্তি মুর্ছে যায়।

রাহান ভালো করে খেয়াল করতেই আবিষ্কার করলো ঝুমকোর নাকে নাক ফুল আর কানে সাদা পাথরের ঝুমকো। নাক ফুলেতে আর কানের পাথরে সোনালী রোদ লেগে চিকচিক করছে। আর সেই পবিত্র সূর্যের চিকচিক আলোয় ঝুমকোর এই পবিত্র সত্তা টা ফুটে উঠেছে। রাহান মনোযোগ দিয়ে দেখে। মুগ্ধ হয়! আকর্ষিত হয়! তবুও ঠেস মারা গলায় বলে,

‘দেখেছো শালিকা, ঝুমকো.. ঝুমকো পরেছে।’

প্রাপ্তি চোখ ছোটো ছোটো করে তাকিয়ে থাকলো। যার অর্থ, মানে কি এই কথার? ঝুমকোও প্রাপ্তির ন্যায় তাকিয়ে আছে। রাহান ঝুমকোর কানের পাথরখচিত ঝুমকো দুল দুটোতে টুকা দিয়ে দেখিয়ে দিলো। সাথে সাথে কান সহ ঝুমকো দুলে উঠলো। রোদের সাথে পাথর গুলো ঝিলিক দিয়ে উঠলো। ঝুমকো আউচ বলে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে সরে দাড়ালো রাহানের থেকে।

রাহান বলল, ‘কাল ওভাবে চলে কেনো এলে ঝুমকো? এলে তো এলে একবার ফোন ও দিলে না? আমাকে কি এখন আর আগের মতো দেখতে ইচ্ছে করে না? কথা বলতে ইচ্ছে করে না?’

রাহানের কন্ঠ কেমনতর যেনো। ঝুমকো তাকিয়ে থাকলো। কিছুটা ক্রোধ মিশানো আবার কিছুটা ছলছল চোখে। দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকে গভীর নয়নে। থাকুক। এখন ওদের চোখে পবিত্রতা, মাদুর্যতা। এতে পাপ নেই। তাকিয়ে থাকুক তারা অনন্তকাল। কিন্তু ভালো সময় কি দীর্ঘস্থায়ী হয়? তাদের এই সুন্দর মুহুর্তের ঘোর কাটলো একটা বেসুরা গলার গানের আওয়াজে। প্রাপ্তি গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে রাহানের রোমান্টিক ডায়লগ শুনছিলো। আর না পেরে এবার গান ই গেয়ে দিলো সে,,,

“আসি বলে গেলো বন্ধু আইলো না,
দেওয়ান কালে প্রাণ বন্ধে
নয়ন তুলে চাইলো না (ii)”
আসবে বলে আশায় রইলাম
আশাতে নিরাশা হইলাম (ii)
বাটাতে পান সাজায় থুইলাম
বন্ধু এসে খাইলো না।

সুজন বন্ধুরে চাইলাম
মনে বড় ব্যাথা পাইলাম
আমি শুধু তার গান গাইলাম
সে আমার গান গাইলো না
আসি বলে গেলো বন্ধু আইলো না
আমি শুধু তার গান গাইলাম
সে আমার গান গাইলো না।”

প্রাপ্তি এখানেই গান সমাপ্ত করে কপালে হাত দিয়ে কাদার ভঙ্গি করে। ঢং করে আবার বলে,

‘হায়! আমি ঝুমকোরে চাইলাম, মনে বড় ব্যাথা পাইলাম। হায়! আমি রাহানরে চাইলাম, মনে বড় ব্যথা পাইলাম। আমি শুধু তার গান গাইলাম সে আমার গান গাইলো না। আল্লাহ এই দুঃখ আমি কই রাহুম??’

রাহান হু হা করে হেসে দিলো প্রাপ্তির গানে আর কথায়। ঝুমকো কঠিন থাকতে চেয়েও উল্টো ঘুরে মিটিমিটি হাসলো। এরপর প্রাপ্তির কান ধরে বলল,

‘খুব না? খুব মজা নিতাছস?’

প্রাপ্তি আবারো আহাজারি গলায় আকাশের দিকে হাত তুলে টেনে টেনে বলল, ‘ আল্লাহ তোমার কাছে বিচার দিলাম……’

ঝুমকো এবার হেসে ফেলল। প্রাপ্তির কান জোরে টেনে ধরলো। প্রাপ্তি আবার গানের সুরে গাইলো, ‘আমি ঝুমকোর মন গলাইতে চাইলাম, তার বদলে কানে বড় ব্যাথা পাইলাম।’

ঝুমকো শব্দ করে হেসে প্রাপ্তির কান ছেড়ে দিলো। প্রাপ্তি কলার উচিয়ে বলল, ‘ছাড়লি কে ধইরে রাখ। শোনো, তুমি যদি ক্রিকেট খেলো আমি হবো আম্পিয়ার। রেসাল্ট টা আমি ই দিবো।’

প্রাপ্তি ভাব নিয়ে গলা পুরুষের মতো করে ডায়লগ দেয়। রাহান হাসতে হাসতে বলল, ‘কেয়া বাত হ্যা মেরা শালী। হোয়াট আ ডায়লগ! সুপার ডুপার।’

‘বুঝতে হবে না মানুষটা কে? আমি মুখ দিয়ে যাই বলি তাই সুপার ডুপার হয়ে যায়।’

_____________________________

মাস্টার্সে ক্লাস শুরু করেছে ঝুমকো প্রাপ্তির এই তিনদিন হলো।
আজ ক্লাস শেষে বের হয়েই দুজনে হেটে হেটে যাচ্ছে সবুজ মূর্ছে যাওয়া ছোট ছোট ঘাস গুলোতে পা ফেলে। ঝুমকো হঠাৎ সামনে তাকিয়েই কথা বলা থামিয়ে দিলো। ভারসিটির ক্যাম্পাস পেরিয়ে এসেছে। ওদের ভারসিটিতেই মাস্টার্স করছে ওরা। ঝুমকোর দেখাদেখি প্রাপ্তি পা চালানো বন্ধ করে সামনের দিকে তাকালো। সামনের দিকে তাকাতেই বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে গেলো।

ঝুমকো দিক বিক না দেখে ছুটে গেলো মানুষটার কাছে! কত্ত…দিন….কত্তদিন পর দেখা! মানুষটার শার্ট খামচে ধরে ভরা ক্যাম্পাসে কেঁদে দিলো। জড়িয়ে ধরলো নিজের প্রানপ্রিয় বন্ধুটাকে। ওদের দেখে এখন যে কেউ বলবে ওরা প্রেমিক-প্রেমিকা। কিন্তু প্রেমিক-প্রেমিকার চাইতেও যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গাঢ় হয় সেটা অনেকেই বুঝে না। নিয়ন ঝুমকোর পিঠে এক হাত রাখলো। ঝুমকোর থুতনি ধরে মুখ উপরে তুলে ধরলো। এরপর এক গাল হেসে বলল,

‘ছাড়। মানুষ দেখলে কি ভাববে?’

ঝুমকো কেদে কেদেই রাগী গলায় বলল, ‘কোথায় ছিলি তুই? হ্যা? বেয়াদব। একটা কথাও বলবি না। তোর মতো ফালতু ফ্রেন্ড আমার দরকার নাই।’

নিয়ন হাসে। ঠোঁট প্রসারিত হাসি। গদগদ গলায় আমোদিত হয়ে সে বলে, ‘কক্সবাজার ছিলাম।’
‘এতোদিন?’
‘হুম। একটা ফ্রেন্ডের বাসায় ছিলাম।’
‘থাকতে দিলো এতোদিন?’
‘কেনো দিবে না?’
‘কেনো দিবে শুনি?’
‘ও মা, অনেক ভালো ফ্রেন্ড আমার। আর তাছাড়া বন্ধু বিপদে পরেছে হেল্প করবে না? তুই হলে বুঝি তোর বাসায় থাকতে দিতিস না?’

প্রাপ্তি ওদের দুজনের মাঝখানে ঢুকে দু হাত দিয়ে দুজনকে থামিয়ে দিয়ে বলল, ‘হইছে, বহুত হইছে ইমোশনাল ড্রামা। বাব্বাহ! কি কথা বার্তা! বলি আমার দিকে একটু নজর দে হাদারাম।’

নিয়ন হেসে প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরলো। বলল, ‘তুই আর শুধরাবি না।’
‘এতো জোরে ধরছস কেন বাল? আমার হাড্ডি ভাইঙ্গে গেলো সব। ‘
‘যাহ, দূর হ।’ নিয়ন ছেড়ে দিয়ে বলল।

প্রাপ্তি কোমড়ে হাত দিয়ে বলল, ‘এতোদিন আমাদের ছাড়া কেমনে আছিলি তুই? এই তোর বন্ধুত্ব? ‘

নিয়ন আর প্রাপ্তি কথা বলে। এর মাঝে ঝুমকো ভালো করে নিয়নকে দেখে। ছেলেটা কি একটু অন্যরকম হয়ে গেছে? প্রানবন্ত চঞ্চল নিয়নের ভেতর কি গম্ভীয় চুপচাপ নিয়ন এসেছে? শরীর ভেঙে গেছে। গাল ভেঙে চাপার ভেতর ঢুকে গেছে। গায়ের রঙ একটু ময়লা হয়েছে। বড় বড় চোখ দুটি লাল লাল। উঁচু নাকটাতে গাম্ভীর্য। একটু কষ্ট কষ্ট ছাপ মুখশ্রীতে। দীর্ঘ চার বছরের বন্ধুকে যেনো চিনতে পারছে না ঝুমকো। ভিষন অগোছালো আর অন্যরকম লাগছে।

হঠাৎ করেই ঝুমকোর মনে পরলো, এই যাহ, প্রাপ্তি যদি রাহান আর ঝুমকোর বিয়ের ব্যাপারটা বলে দেয়। এই মেয়ে যা ফাটাবাঁশ। যদিও তাদের বন্ধুদের মাঝে কখনোই কিছু লুকানো হতো না। কিন্তু এই ব্যাপারটা অন্যরকম। নিয়ন সবে মাত্র এলো। একটু রয়ে সয়ে বলা যাবেনি। ঝুমকো প্রাপ্তিকে না করার আগেই প্রাপ্তি তার বিশাল বোকার ভাণ্ডার নিয়ে আহাজারি গলায় বলে উঠলো,

‘ইশশ..ভাইরে.. কি মিস টা করলি তুই ভাই। আর.. আর মাত্র পাঁচটা দিন আগে যদি আসতি তাহলে ঝুমকোর বিয়েটা খাইতে পারতি। যদিও আমিও খাইতে পারি নাই। কিন্তু তৎক্ষনাৎ তাজা খবর শুনছি। তুমি তো মিয়া বাসি খবর শুনতাছো।’

ঝুমকো প্রাপ্তিকে দুটো চিমটি দিয়েছে। কিন্তু উড়নচণ্ডী প্রাপ্তি এসব কিছুই বুঝে না। নিয়ন অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো প্রাপ্তির দিকে। এরপর ঝুমকোর দিকে। তারপর আটকে যাওয়া গলায় বলল,

‘ঝুমকোর বিয়ে হয়ে গেছে?’

প্রাপ্তি মাথা ঝাকায়। নিয়নের চোখ ভিজে আসতে চায়। ও অন্যদিকে তাকিয়ে চোখের পানি আড়াল করার চেষ্টা করে। আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। কিছুক্ষন নিজের সাথে যুদ্ধ চালানোর পর জোর পূর্বক হেসে বলে,

‘কি রে? বিয়ে করলি? অথচ কোনো খবর ই পেলাম না? স্ট্রেঞ্জ!’

‘আরে লুকায় বিয়ে করছে।’ প্রাপ্তি বলছে গড়গড় করে। এদিকে ঝুমকো নখ কামড়াচ্ছে।

‘লুকিয়ে?’

‘হ রে, দুলাভাই মানে ওর হাসবেন্ড ওরে জোর করে তুইলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করছে।’

‘সেই দুলাভাই টা কে? রাহান ভাইয়া?’ নিয়ন বলল নিজের মাঝে নিঃশ্বাস আটকে রেখে।

প্রাপ্তি আবার বলল, ‘হ রে, ভাইয়া ওরে প্রচুর ভালোবাসে। কিন্তু এই ছেমরি তো কোনোমতেই ভাইয়ারে মানতাছে না। ভাইয়ারে খালি অপমান করে। আর ভাইয়া কষ্ট পায়।’

নিয়ন ঝুমকোর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘কেনো এমন করিস?’

‘আরে, ওই যে ভাইয়া তিনবছর আগে গেছিলো গা। কি জানি ভুল বুঝাবুঝি! আচ্ছা যাই হোক, মানুষটা যখন আবার ফিরে আসছে নিজের ভুল স্বীকার করছে তাইলে তোর এক্সেপ্ট করতে কই সমস্যা এটাই তো বুঝি না। এন্ড ইউ নো হি ওয়াজ সো মাচ কেয়ারিং! কিন্তু এই মেয়ের তো দুনিয়ার আত্মসম্মান। এতো ইগো থাকলে চলে? এদিকে নিজেও ভালোবাইসে কষ্ট পায়।’

প্রাপ্তি সব বলছে ভাঙা রেকর্ডের মতো। ঝুমকো এবার ভেজা কন্ঠে মুখ খুলল, ‘তোর ভাইয়া ভুল স্বীকার করে নি। সে কিচ্ছু বলে নি আমাকে। কেনো সে চলে গিয়েছিলো। কি হয়েছিলো সেদিন? কিচ্ছু বলেনি।’

নিয়ন চোরাচোখে চেয়ে বলল, ‘কিচ্ছু বলেনি?’

‘না।’ ঝুমক অন্যদিকে তাকিয়ে বলে।

‘বলে দিবে চিন্তা করিস না।’

ঝুমকো তাকালো নিয়নের দিকে। প্রাপ্তি সন্দেহহীন গলায় বলল, ‘এক মিনিট, রাহান ভাইয়ার সাথে ঝুমকোর বিয়ে হইছে কি না এটা বললি কেন তখন? মানে অন্য কারোর সাথেও তো হইতে পারতো। তুই কেমনে জানোছ রাহান ভাইয়া না কি কেরা? তোর তো জানার কথা না কারন তুই তো এতোদিন ছিলি না কাজেই তুই জানোছ ও না যে রাহান ভাইয়া দেশে ফিরছে না কি।’

নিয়ন অন্যদিকে তাকিয়ে কেশে বলল, ‘অনুমান করছিলাম। ভাবছিলাম ঝুমকো রাহান ভাইয়া ছাড়া আর কাকে বিয়ে করবো। চল। কোথাও বসে আড্ডা দেই। কে বলতে পারে এটাই হয়তো শেষ আড্ডা।’

ঝুমকো ভয়ার্ত কন্ঠে বলল, ‘কি বলিস?’

‘আরে ভয় পাস কেন? মানুষের নিঃশ্বাসের বিশ্বাস আছে না কি? চল।’

ঝুমকো এগিয়ে গিয়ে হাত ধরলো নিয়নের। নিয়ন কেপে উঠলো। কম্পিত বুক নিয়ে তাকালো ঝুমকোর দিকে। ঝুমকো সামনের দিকে তাকিয়ে হেটে যাচ্ছে। নিয়নও হাটা দিলো। তার চোখ ভিজে উঠলো। এই স্পর্শে যে কতটা শিহরণ তা যদি একবার নিয়ন দেখাতে পারতো! শুধুমাত্র একবার যদি আল্লাহ সুযোগটা দিতো।

আগে সবসময় ঝুমকো নিয়নের হাত ধরে ঘুরতো। সেই দিন গুলো বুঝি এবার ফুরিয়েই এলো। আর পাওয়া যাব না এই যাদুমিশ্রিত স্পর্শ! বুক কাপানো স্পর্শ! মন ভালো করার এই মুখটাও বোধ হয় আর কখনো দেখা হবে না।

নিয়নের ঘোর ভাঙলো তখন। যখন প্রাপ্তি নিয়নের অন্য হাত ধরলো। প্রাপ্তি দাত কেলিয়ে বলল, ‘কি ভাবো মামা? বউ পোলাপান না হইতেই এতো ভাবনা চিন্তা?’

নিয়ন হেসে মাথা ঝাকিয়ে বলে, ‘তুই আর শুধরাবি না। তোর শুধরানির দিন শেষ। সারাজীবন বাদরামি করতেই যাবো তোর।’

চলবে❤️

ধামাকা…💥
কালকে আরেকটা চমক আসবে। এখন শুধু চমকের উপর চমক চলবে।
চলবে❤️

কাল থেকে ইফতারের পরে গল্প দিবো। আর যদি না দেই ধরে নিবেন গল্প দিবো না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here