অরূপ জ্যোৎস্না পর্ব -১৫

#অরূপ_জ্যোৎস্না
পর্ব-১৫
লেখনীতে-তানিয়া শেখ

পাপকে বড্ড ভয় নিরুপমার। কাওকে অভুক্ত রাখার চেয়ে বড়ো পাপ আর কী হতে পারে? খুব চেষ্টা করেছিল কঠিন হওয়ার। লোকটাকে অভুক্ত রেখে শাস্তি দিতে চেয়েছিল। শেষমেশ বিবেকের দংশনে ভাতের প্লেট হাতে এসে দাঁড়িয়েছে এই রুমের দরজায়। অপরাহ্ণের প্রারম্ভে নিরুপমা খাবারের থালা হাতে নিজের রুমে প্রবেশ করলো।

নিজের রুম কেবল নামেমাত্র এখন। পুরোটা অজানা লোকটার দখলে। যার নাম ধাম ধাম পর্যন্ত জানা নেই সে এসে ওর ঘর দখল করে বসে আছে৷ সাপের মতো কুন্ডলী পাকিয়ে বসেছে জীবনে। চুপচাপ সহ্য করে বোকামি করছে না নিরুপমা? অবশ্যই করছে। মাঝে মাঝে মানুষ জেনে বুঝে বোকামি করে। উপায় যে আর থাকে না। এই উপায়হীনতা নিরুপমার ভেতরটা ক্ষোভে ভরে তুলেছে। মন থেকে কখনো কারো খারাপ চায়নি ও। ঠাণ্ডা মেজাজি মেয়ে নিরুপমা। কিন্তু মেজাজ চড়ে গেলে প্রলয় ঘটিয়ে ফেলতে পারে। এই লোক ওর ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছে!

নিরুপমা ভালো করে তাকালোও না বিছানায় বসা রাগী মূর্তিটির দিকে। কতটা পরিবর্তন এসেছে মুখে খেয়ালও করল না। খাবারের প্লেট সামনে রেখে দরজার দিকে ফিরলো।

“যাচ্ছ কোথায়?” এহসাস চাপা রাগে বলল। নিরুপমা থামে কিন্তু ফেরে না।

“খাবার দিয়ে গেলাম। পানি বোধহয় এখনও জগে আছে।”

নিরুপমা এই রুম থেকে বেরিয়ে যেতে পারলে বাঁচে। ও দ্রুত পা বাড়ায়। দরজা থেকে এই তো আর কয়েক পা দূরে।

“আর এক পা এগিয়ে দেখো তুমি, নিরুপমা। জাস্ট ওয়ান স্টেপ। কাম অন গো এহেড।”

এহসাসের গলার স্বরে স্পষ্ট ওয়ার্নিং। নিরুপমা উপেক্ষা করে নির্ভীক হতে চাইল। কিন্তু ওর স্মৃতিতে ভেসে ওঠে এহসাসের রুদ্রমূর্তি। মনে পড়ে পি*স্তল এবং সেই কথা, একটা খু*ন করতে ওর বাধেনি। নিরুপমাকে মারতে বাধবে? মরণের ভয় পায় না কে? নিরুপমা ঘুরে দাঁড়ায়। ওর ভেতরটা আক্রোশে ফেটে যাচ্ছে। দু’জোড়া রাগত চোখের মোকাবেলা রাগের দৃষ্টিতেই করল৷

“এগোলে কী করবেন? গুলি? করেন দেখি।”

এহসাস থম ধরে বসে রইল। নিরুপমা নিজেকে মনে মনে বাহবা দেয়। এই তো পেরেছে পালটা জবাব দিতে। বেশ, বেশ। আচমকা এহসাস লাফ দিয়ে ওর সামনে এসে দাঁড়ায়। এত কাছে যে নিরুপমাকে মুখ তুলে তাকাতে হচ্ছে। বিস্ফোরিত ভীরু চোখজোড়া। বাহবা দেওয়া ওর সাহস মুহুর্তে কোথাও মিলিয়ে যায়। এহসাস পি*স্তল ঠিক নিরুপমার কপালে ঠেকায়। কপালের চামড়ার সাথে সেটে যায় ধাতবটির মুখ।

“দেখতে চাও গুলি করতে পারব কি না? চলো দেখাই।”

নিরুপমার মুখ সাদা হয়ে গেল ভয়ে। ঠোঁট কাঁপতে থাকে। এহসাস ক্রুর হাসল,

“দেখবে না? এই তো বললে দেখবে।”

নিরুপমা কম্পিত ঠোঁট শক্ত করে চেপে ধরে আছে। ও আর একটা কথাও বলবে না। দু-চোখ জ্বলছে ভীষণ। না, না, কাঁদবে না এই নিষ্ঠুরের সামনে।

“আরে! ভয় পেলে দেখি। কেঁদে দেবে আবার? প্লিজ ডোন্ট বি অ্যা ক্রাই বেবি এগেইন।”

এহসাস পি*স্তল নামিয়ে নেয়। মুখটা শক্ত। গিয়ে বসল আগের জায়গায়। এই সুযোগে টলমল চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়া অশ্রু ফোঁটা মুছে ফেললো নিরুপমা।

“রাত থেকে না খাইয়ে রেখে এখন এই অখাদ্য নিয়ে এসেছ? ভেবেছ অভুক্ত রেখে আমায় শাস্তি দেবে? লড়বে আমার সাথে, অমাবস্যা? সে সাহস আছে তোমার?”

অখাদ্য! আলু ভর্তা, ডাল আর ডিম ভাজি অখাদ্য? নিরুপমা মুখ খুলবে না। কোনো প্রতিবাদ করবে না আর৷

“কী? জবাব দেবে না? দিয়ো না। আমার সামনে থেকে এক্ষুণি এই অখাদ্য সরাও। কাল যা রেখে গেছ সেটাও নষ্ট হয়ে গেছে৷ খাওয়ার মতো কিছু নিয়ে এসো। সামথিং ইটেবল৷ এক্সাম্পল দিতে হবে?”

ধমক দিয়ে বলতে নিরুপমা মাথা নাড়ায় দুদিকে। এই লোকের সামথিং ইটেবল কী নিরুপমা জানে না। কিন্তু এখান থেকে যাওয়ার জন্য মাথা নাড়াতেই হলো। কাঁপা হাতে প্লেট দুটো নিতে এহসাস আবার বলল,

“দাঁড়াও।” উঠে নিরুপমার টেবিলের ওপর থেকে খাতা আর কলম নিলো। খস খস করে কিছু লিখল তাতে। তারপর শুকনো ভাতের প্লেটের ওপর কাগজটা ফেললো৷

সামথিং ইটেবল:
সকালে
১. পরোটা/ রুটি/ নান ( একেক দিন এক একটা)
২. ডাল সবজি/ ডিম
৩.রঙ চা (তিনবেলাতেই, মাঝে মাঝে আরও বেশি)
অথবা,
১. পাউরুটি ও ডিম পোচ আর দুধ
এবং
সপ্তাহে দুইদিন শুধুমাত্র মিক্স স্যালাড ও ফ্রেশ ফ্রুট/ ফ্রুট জুস।

দুপুরে

১. সাদা ভাত
২. মুরগি/ গোরু (খাসি খাই না)
৩. যে কোনো ফ্রেশ সবজি তরকারী( খবরদার যদি মাছ দিয়েছ)
৪. ডিমের যে কোনো আইটেম( খবরদার এসব অমলেট ফমলেট দিয়েছ তো!)
৫. ডালও চলবে( আজকের টা পাতলা তাই বাতিল)
৬. দুধ/ দুধ জাতীয় খাবার
মাঝে মাঝে
১. কাচ্চি/ তেহারি
২. মিষ্টি জাতীয় যে কোনো খাবার।

রাতে

১. দুপুরের আইটেম থেকে যে কোনোটি।
২.দুধ/ দুধ জাতীয় খাবার( উইদাউট সুগার)

“আপাতত এইটুকু। পড়ে লিষ্টটাতে খাবারের নাম যোগ বিয়োগ হতে পারে।” আগের তুলনায় এহসাসের গলার স্বর নমনীয় হয়।

নিরুপমা অবশ্য পার্থক্য বুঝল না। তব্দা খেয়ে তাকিয়ে রইল কাগজের দিকে। মানুষ এতটা নির্লজ্জ আর অবিবেচক হতে পারে! নিজেকে কী ভাবে এই লোক? লাট সাহেব? আর নিরুপমা তার কেনা দাস? যাকে পাচিকা পদে নিয়োগ দিয়েছে! ভেতরে ভেতরে আক্রোশে ফেটে পড়ছে ও। কিন্তু একটু আগে এহসাসের সন্ত্রাসী আচরণ মনে করে কথা বলার সাহস করল না।

“আর এটা!”

নিরুপমা ভুরু কুঁচকে তাকায় এহসাসের হাতের দিকে। অনেকগুলো টাকা। ম্যানিব্যাগটা বিছানায় ছুঁড়ে ফেললো এহসাস। নিরুপমা এর টাকা ছোঁবেই না। মাথা নাড়ায় সজোরে।

“নেবে না কেন? পরে যেন কথা শোনাতে পারো আমি বসে বসে খাই? এত মেরুদণ্ডহীন না আমি, অমাবস্যা। টাকাটা ধরো। আমার গায়ে পাপ থাকতে পারে, কিন্তু এই টাকা হালাল। তোমার পাপ লাগবে না ধরলে। টেক ইট।”

ধমক খেয়ে টাকাটা হাতে তুললো নিরুপমা। ওর এক হাতে আঁটেনি টাকাগুলো। কত হবে কে জানে! এই টাকা দিয়ে মাকে নিয়ে অন্যত্র পালিয়ে যাওয়া যাবে না রাতারাতি? লোকটার একটা উচিত শিক্ষাও দেওয়া হবে তাতে। নিরুপমা জানে, এসব কেবল ভাবতেই পারবে। এত সাহসী নয় আবার এতটা খারাপও নয় ও। তাইতো এত ভুগতে হচ্ছে।

“প্রচণ্ড খিদে পেয়েছে আমার। আমাকে শাস্তি দেওয়ার আরও অনেক উপায় তুমি পাবে। এটা মাফ করো। প্লিজ কিছু নিয়ে এসো। অবশ্যই লিস্টের কিছু।”

নিরুপমা চুপচাপ বেরিয়ে গেল। এহসাস দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। মাথাটা ঘুরছে। বিপি লো হলো কি? গতকাল থেকে না খাওয়া। তার ওপর যে দৌড়াদৌড়ি করেছে!
বিছানায় আধশোয়া হয়। একটু পর ভাবে ক্ষুধার যন্ত্রণা মানুষকে কতটা নিচে নামাতে পারে! মেয়েটার সাথে এমন দুর্ব্যবহার না করলে কি চলত না? ওর ভীত আতঙ্কিত ছলছল চোখদুটো এহসাসকে জ্বালিয়ে মারে। এইটুকু ক্ষুধা কি সহ্য করা যেত না? হয়তো যেত কিন্তু এহসাস অভ্যস্ত নয়। বিলাসিতায় বড়ো হয়েছে। মনের কষ্ট ছাড়া কোনো কষ্টই ওর ছিল না। একটু কষ্ট সহ্য করতে বেগ পেতে হয়। এতিম বলে বাড়াবাড়ি রকমের আদর আহ্লাদ পেয়েছে ছোটো চাচার কাছ থেকে। সবকিছুতেই প্রশ্রয় পেয়েছে। সে হোক রাগ বা জেদ। অনভ্যস্ত খিদেতে রাগ জন্মেছিল। নিরুপমার ঘৃণা আর রাগ এহসাসের রাগ বাড়িয়ে দেয়। নিরুপমার কপালে পি*স্তল ঠেকিয়েছে সেই বেপরোয়া রাগে। খুব খারাপ করেছে। এমনটা করা অনুচিতই না বরং পাপ হয়েছে। এই পাপের কী শাস্তি হতে পারে?

সৈয়দ বাড়ি ঈপ্সার জন্মস্থান। জীবনের সতেরো বছরের গত হওয়া সকল স্মৃতি এ বাড়ির দেওয়ালে দেওয়ালে মিশে আছে৷ পৃথিবীর সবচেয়ে সুখের স্থান ছিল এখানেই। ছিল! হ্যাঁ, তাই তো। সুখ এখন যে আর এখানে পায় না ঈপ্সা। মা নেই। বাবা অন্য কাওকে বুকে নিয়ে জগত ভুলেছে৷ দাদাভাই মিথ্যা বলেছে ওর সাথে। ঈপ্সার বিশ্বাস ছিল এহসাস পৃথিবীর সকল মানুষকে মিথ্যা বললেও ওর সাথে বলবে না। ভুল ছিল ঈপ্সা। কী নিদারুণ ব্যথা দিয়ে ভুলটা ভাঙল ওর দাদাভাই। ঈপ্সার বড়ো একা লাগে এই বাড়িটাতে। নিজ কক্ষে দমবন্ধ হয়ে আসে। দূরে কোথাও পালিয়ে দিতে ইচ্ছে করে, বহুদূরে। যেখানে গেলে বাবা আর ক্যামেলিয়াকে একসাথে দেখবে না। এহসাসের মিথ্যা ওয়াদা শুনতে হবে না। বুকে রক্তক্ষরণ হবে না দুর্জয় আহমেদের হৃদয়ে অন্য নারীর বাস জেনে।

ঈপ্সা আয়নায় নিজেকে দেখল। কী দেখে দুর্জয় ভালোবাসবে? মেদবহুল এই শরীর? ব্রণ ওঠা এই চেহারা? ঈপ্সার কান্না পায়। আয়নার সামনে থেকে সরে আসে। ভীষণ তুচ্ছ আর বেকার লাগে জীবনটা। মৃত মাকে মনে পড়ে। মা থাকলে ঈপ্সার এত কষ্ট হতো না।

কাপড় পালটে, চুলটা আঁচড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো ঈপ্সা। প্রাইভেট কারে করে চললো পারিবারিক কবরস্থানে। মা নেই কিন্তু তার কবরটা তো আছে। ঈপ্সা সেখানেই যাবে। বাড়ি থেকে কবরস্থান মিনিট দশেক দূরে। বিকেল তখন। তেমন মানুষজনের আনাগোনা নেই। ঈপ্সা ওড়নাটা ভালো করে মাথায় ও গায়ে জড়িয়ে নিলো। ড্রাইভারকে গাড়িতে বসতে বলে ও খালি পায়ে ভেতরে প্রবেশ করে।

এই কবরস্থানটি অত্র এলাকার বিশিষ্টজনের জন্য। সৈয়দরা তন্মধ্যে অন্যতম। সালাম দিয়ে কতগুলো কবর পেরিয়ে গেলেই প্রথমে ঈপ্সার বড়ো মা ও বড়ো বাবা অর্থাৎ এহসাসের মা-বাবার কবর। তারপর ঈপ্সার মায়ের কবর, চারপাশে ইটে সিমেন্টের কারুকার্য করা দেওয়ালে ঘেরা। গতবার ঈপ্সা কতগুলো লাল গোলাপের চারা লাগিয়েছিল। মায়ের ভীষণ পছন্দের। দুটো বেঁচে গেছে। একটাতে ফুটে আছে টকটকে লাল গোলাপ। ঈপ্সা ছুঁয়ে দেখে।

“তুই কি আমার মাকে দেখিস রে ফুল? কেমন আছে সে জানিস? তাকে বলিস আমি ভালো নেই মা ছাড়া। কেউ আমাকে ভালোবাসে না তার মতো।” ঈপ্সার গলা ব্যথা করে। কথা বলতে পারে না। কবরের দেওয়াল ঘেঁষে বসে। দোয়া পড়ে। পড়তে পড়তে ওর চোখে ভিজে যায়। কণ্ঠের সুর কেঁপে কেঁপে ওঠে।

কখন বিকেলের রোদ পড়ে গেল ঈপ্সা টের পেল না। কবরস্থানে ক্রমে ক্রমে নিস্তব্ধতা নামে। ঝিঝি পোকারা এখানে ওখানে থেমে থেমে ডাকছে। ঈপ্সা দোয়া-দরুদ পড়ে উঠে দাঁড়ায়। ভেতরটা খুব হালকা লাগছে। মায়ের কবর ছেড়ে কয়েক কদম সরে আসতে হঠাৎ ঈপ্সার দৃষ্টি গেল একটু দূরের গাছ-গাছালিতে ঘেরা জঙ্গলে। কুয়াশা জড়ানো গাছের আড়ালে কাওকে যেন দেখল! আপাদমস্তক কালো কাপড়, স্মাইলিং মাস্ক মুখে। ভয়ে ঈপ্সার শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেল। পলক ফেলতে যেন অদৃশ্য। মনের ভুল ছিল কি?
বিঘা খানেক জায়গার অর্ধেকের বেশি কবরস্থান। বাকিটার কিছু অংশে পুকুর ও নানান গাছ-গাছালি রোপিত৷ ঈপ্সার জন্মের আগে লাগানো এই গাছ গুলো। অযত্নে অবহেলায় ওদিকটা ছোটো খাটো একটা ভূতুড়ে জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। কত গালগল্প লোকমুখে প্রচলিত হচ্ছে এই জঙ্গল নিয়ে। ঈপ্সার সকল ভূতুড়ে গল্প মনে পড়ে গেল। তেমনই কি কোন অশরীরি দেখল আজ ও? ঈপ্সা এক মুহূর্ত সেখানে দাঁড়াল না। বিপদমুক্তির দোয়া পড়তে পড়তে গাড়িতে গিয়ে বসল। ওর ভয়ার্ত মুখ দেখে ড্রাইভার বলল,

“কী হইছে আম্মাজান?”

ঈপ্সা দু’দিকে সজোরে মাথা নাড়ায়।

“কিছু না। তুমি গাড়ি স্টার্ট দাও আংকেল। তাড়াতাড়ি।”

ড্রাইভার কপাল কুঁচকে সামনে ফিরল। গাড়ি সামনে চলছে। ড্রাইভার রেয়ার ভিউ মিররে ঈপ্সার ফ্যাকাসে মুখ চেয়ে বলে,

“তুমি কি ভয় পেয়েছ কিছু দেখে?”

ঈপ্সা কথা বলে না। ঘাড় গুঁজে বসে রইল। এখনও ওর বুকের ভেতর কাঁপছে। মনকে বুঝায়,

“কিছু দেখিনি, কিছু দেখিনি। সব মনের ভুল। ভয়ের কিছু নেই, ভয়ের কিছু নেই…”

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here