#অরূপ_জ্যোৎস্না
পর্ব-১৮
লেখনীতে-তানিয়া শেখ
ঈপ্সা রীতিমতো কাঁপছে। ভয়ে জবুথবু হয়ে বসে আছে আদরূপের কারের পেছনের সিটে। চোখের পানি মুছতে মুছতে ওর ফর্সা গালটা রক্তিম হয়েছে। আদরূপ ওকে রাস্তা ভর্তি মানুষের সামনে জীবনের প্রথমবার চড় মেরেছে। এখনও অবশ হয়ে আছে সেই পাশটা। শান্ত নামের ছেলেটাকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে বেধড়ক পিটিয়েছে। ছেলেটার নাক, ঠোঁট ফাটিয়ে রক্তারক্তি কান্ড ঘটিয়েছে। পথচারীরা বাধা না দিলে বোধহয় মেরেই ফেলত। মানুষ মারা আদরূপের জন্য কোনো ব্যাপার না। এর মানে এই নয় যে প্রতিদিন মানুষ মারে। হয়তো মানুষ মারা তার পক্ষে অসম্ভব না। কারণ ঈপ্সা তাঁর নিষ্ঠুরতার অনেক গল্পই শুনেছে। আজ সচক্ষে দেখল।
গাড়ি ফুল স্পিডে চালাচ্ছে আদরূপ। অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা ক্রমশ বাড়ছে সেই স্প্রিডের সাথে। ঈপ্সার মনে হলো এই গাড়িটা যেন মৃত্যুপুরীর দিকে এগোচ্ছে। সামনে ড্রাইভিং সিটে বসা সাক্ষাৎ যমদূত।
“কী ভেবেছিলি মিনি তুই? ওই রাস্তার ছেলেটার সাথে ভেগে যাবি? এত অধঃপতন হয়েছে তোর? এত সাহস?”
“তু..মি ভুল বুঝছ দা..দাভা..ই। ছেলেটা..”
ঈপ্সার ভীত কণ্ঠ থমকে যায় আদরূপের ধমকে।
“চুপ! ধরা খেয়ে মিথ্যা বলছিস? আমি নিজ চোখে ওই ছেলের হাত ধরে হাসতে দেখেছি তোকে। আর কোথায় কোথায় গিয়েছিলি ওর সাথে? কী কী করেছিস?”
আদরূপ রাগে ফুঁসতে লাগল। লজ্জায়, অপমানে দু’হাতে মুখ ঢেকে সশব্দে কাঁদে ঈপ্সা। ওর কান্নায় পাষাণেরও মন গলবে কিন্তু আদরূপ তো পাষাণ না, পাথর। ঈপ্সা কী করবে এখন? আদরূপের মস্তিষ্কে একবার যেটা গেঁথে যায় সেটা বদলানো অসম্ভব। সে ধরে নিয়েছে ঈপ্সার সাথে ওই ছেলের সম্পর্ক ছিল৷ ওরা পালিয়ে যাচ্ছিল। সুতরাং সেটাই সঠিক। কোনো কিছুতেই এই ধারণা ঈপ্সা বদলাতে পারবে না এখন। বুঝাতে গেলে হিতে বিপরীত হবে। আদরূপ নর্মাল মানুষ নয়। ওর ধারণা, ওর ভাবনা, ওর সবকিছু অস্বাভাবিক। হাত ধরে হাসার কোনো ঘটনা ঘটেনি। ওটা আদরূপের মস্তিষ্কের বানানো। কিন্তু এই কথা বলা যাবে না, মানানোও যাবে না।
বাকি পথ তটস্থ হয়ে রইল। আদরূপ বিড়বিড় করে ওকে বকলো। ঈপ্সার মনে স্বস্তি এলো পরিচিত রাস্তায় গাড়ি চলতে। আদরূপ ওকে সৈয়দ বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে। বাবাকে গিয়ে যা বলবে তা নিয়ে ভয়ের শেষ নেই। কিন্তু সেই ভয় আদরূপের কাছে থাকার চেয়ে বহু কম। বাড়ির লনে গাড়ি থামিয়ে টানতে টানতে ঈপ্সাকে বের করে আনল আদরূপ।
“ভাবিস না বাড়ি এসে নিস্তার পাবি। আজ তো বাপ-মেয়ে দুটোকেই দেখে যাব আমি। বুড়ো বয়সে বাপটা হাঁটুর বয়সী মেয়ে বিয়ে করে রঙে মজে আছে। মেয়ে উচ্ছন্নে যাচ্ছে সে খেয়াল পর্যন্ত তাঁর নেই। এহসাসের কথা তো মুখেও আনতে ইচ্ছে করছে না। কুলাঙ্গার একটা! ফুপিমনি বেঁচে থাকলে কি আর এই দিন দেখতে হতো? দুদিন পর রাস্তার মানুষ এ বাড়িতে এসে থু থু ফেলবে তোদের কর্মকাণ্ডে। কাঁদবি না বলছি!”
ঈপ্সা ঠোঁট কামড়ে কান্নার শব্দ গিললো। ওর হাতটা যেন আদরূপের কঠিন মুষ্টির ভেতর পিষে যাচ্ছে। যত বিপদ মুক্তির দোয়া মনে আছে সব পড়ছে। একটু আগে স্বস্তি পেয়েছিল বাড়িতে এসেছিল বলে। এখন আতঙ্কে আছে। প্রার্থনা করছে আদরূপ বাড়ির ভেতর না প্রবেশ করুক। বাবার ওপর ঈপ্সার যত রাগই থাকুক না কেন তাঁর কিছু হোক চায় না ও। এহসাসের কারণে এমনিতেই তাঁর শরীর ভালো না। বিপি অস্থির। তার ওপর আদরূপের আচরণে দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। কোন বাবা সন্তানের চোখ রাঙানিতে কষ্ট পায় না? আদরূপ তো তার কাছে সন্তানের মতো। এহসাস, আদরূপ একই সাথে বড়ো হয়েছে। ঈপ্সা বড়ো হয়েছে ওদের ছায়ায়। ঈপ্সার ওপর যতখানি এহসাস অধিকার খাটায় আদরূপও ততখানিই খাটায়।
এক এক পা এগোচ্ছে আর উত্তেজনায় অবশ হয়ে যাচ্ছে ঈপ্সা। চোখ বন্ধ করল। সামান্য একটা ভুল সিদ্ধান্তে আজ কত বড়ো অনাসৃষ্টিই না বাধিয়ে দিলো। ঈপ্সার সত্যি শাস্তি পাওয়া উচিত, কঠিন শাস্তি। কিন্তু ওর ভুলে অন্যরা কেন সেই শাস্তি পাবে?
“আদরূপ, কী হয়েছে?”
ঈপ্সার বুকের ভেতর ধ্বক করে উঠল। চোখ খুললো সাথে সাথে। চিন্তিত মুখে ওদের পথ আগলে দাঁড়িয়ে আছে দুর্জয়। পরনে ফর্মাল পোশাক। চোখে ফ্রেমলেস চশমা। হাতে স্টেথোস্কোপ। বাড়ির ভেতর থেকেই বেরিয়েছে সে। বাবার কি কিছু হয়েছে আবার? ঈপ্সার ভয় করে।
“সামনে থেকে সরে যাও ডাক্তার। চল ঈপ্সা।”
পাশ কাটিয়ে আবার বোনকে টানতে টানতে নিয়ে যেতে লাগল। ঈপ্সা পেছন ফিরে করুণ চোখে তাকায় দুর্জয়ের দিকে। ইশারায় সাহায্য চায়। দুর্জয়ের চোখে পড়ে ঈপ্সার গালে বসে যাওয়া আদরূপের আঙুলের ছাপ। রাগে চোয়াল কঠিন হয়। দ্রুত আবার আদরূপের পথ আগলে দাঁড়ায়।
“ওর গায়ে হাত তুলেছ তুমি আদরূপ? কেন?”
“কোন অধিকারে প্রশ্ন করছ তুমি ডাক্তার? এ বাড়ির মাইনে পাওয়া ডাক্তার তুমি, ঈপ্সার বাবা নও। পথ ছাড়ো।”
দুর্জয় পথ ছাড়ে না। আদরূপ আগুন চোখে তাকায়।
“পথ ছাড়ো ডাক্তার। নয়তো খুব খারাপ হয়ে যাবে।”
“সৈয়দ সাহেব অসুস্থ। নতুন করে তাঁকে স্ট্রেস দিয়ো না আদরূপ। ঈপ্সা অন্যায় কিছু করলে এবারের মতো ক্ষমা করে দাও। ছোটো মানুষ হয়তো ভুল করেছে। আর করবে না। ঠিক না ঈপ্সা?”
ঈপ্সা সজোরে মাথা নাড়ায়। আদরূপ দাঁত কামড়ে বলে,
“ছোটো মানুষ? এই ছোটো মানুষ রাস্তায় দাঁড়িয়ে হাত ধরা-ধরি করে আরেকটা ছোটো ছেলে মানুষের সাথে প্রেম করছিল, ভেগে যাওয়া প্লান করছিল।”
“কী!” দুর্জয় অবিশ্বাস্য চোখে তাকায়। ঈপ্সা মাথা নাড়িয়ে ভাইয়ের কথার বিরোধিতা করতে চায় কিন্তু আদরূপের চোখ তা করতে দেয় না।
“যা শুনেছ তাই বলেছি। এখন পথ ছাড়ো। আজ এ বাড়িতে কেয়ামত হবে।”
দুর্জয় নিজেকে সামলে নিয়ে নরম গলায় বলে,
“প্লিজ, আদরূপ, প্লিজ। আজ নয়। আজ সত্যি সৈয়দ সাহেব বড্ড অসুস্থ। আজকে তাঁকে রেহায় দাও। ঈপ্সাকে আমি বুঝাব। ও শুনবে আমার কথা। শুনবে না ঈপ্সা?”
চিবিয়ে চিবিয়ে শেষ কথা বলল দুর্জয়। ঈপ্সা আনত মুখে আবার মাথা নাড়ায়। আদরূপ ধমকে ওঠে,
“মুখে বল।”
“শুনব।”
অশ্রুরুদ্ধ ঈপ্সার গলা। আদরূপ ওর অসাড় হাতটা ছেড়ে দেয়। ঈপ্সার প্রাণে পানি এলো। সভয়ে সরে এলো দুর্জয়ের পেছনে। এই যেন ওর জন্য এখন নিরাপদ জায়গা। আদরূপ আঙুল তুলে বলল,
“আজ থেকে এই গেটের বাইরে যাওয়া বন্ধ তোর জন্য মিনি। ডাক্তার তোমার কথায় আজ ওকে ছেড়ে দিয়ে গেলাম। বুঝিয়ে দিয়ো আর কোনোদিন যেন ওই ছেলেকে ওর সাথে না দেখি।”
“আর দেখবে না।” দুর্জয়ের আশ্বস্তের সাথে ঈপ্সা মাথা নাড়াতে আদরূপ ফের ধমকায়,
“ঘাড় ভেঙে ফেলব তোর কিন্তু আমি মিনি।”
“আর দেখবে না, কোনোদিন না।”
আদরূপ শেষবার সাবধান করে দিয়ে হনহন করে গাড়িতে উঠে বসল। পরমুহূর্তে চলে গেল বাড়ির বাইরে। ঈপ্সার দৃষ্টিসীমার বাইরে।
দুর্জয় সরে দাঁড়াল। ঈপ্সা যেন অস্পৃশ্য কিছু। আহত মুখে তার দিকে তাকালো ঈপ্সা। দুর্জয়ের মুখ গম্ভীর। দৃষ্টি কঠিন।
“আমি ওই ছেলেকে চিনিওনা। বিশ্বাস করুন।”
“আদরূপ মিথ্যা বলেছে? বলল তো সরাসরি দেখেছে হাতে হাত.. তোমার কোনো ব্যাপারে আমার ইন্টারেস্ট নেই ঈপ্সা। তোমার বাবা অসুস্থ। আমি তাঁর কেয়ার করি। ব্যস! তোমাকে রক্ষা করেছি তাঁর জন্য। তবে আদরূপকে যেহেতু কথা দিয়েছি কথা তো রাখতেই হবে। ওকে তুমি ভালো করেই চেনো। আজকের পর তোমার শিক্ষাও হওয়া উচিত। এমন কিছু কোরো না যেন এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়। এহসাসের কারণে এমনিতেই তোমার বাবা কষ্টে আছে। নতুন করে আর কোনো কষ্ট দিয়ো না। তাঁর কথা ভেবেই না হয় ছেলেটার কথা ভুলে যাও। চলি।”
দুর্জয়ের পথ চেয়ে ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইল ঈপ্সা। অভিমানে, ক্ষোভে ওর সজল চোখ আরও সজল হয়ে অশ্রু রূপে গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ল। বিড়বিড় করে বলল,
“আমি মিথ্যা বলিনি, বলিনি মিথ্যা।”
নিরুপমার মায়ের শরীর তেমন ভালো না যাচ্ছে না। অতিরিক্ত গরমে তাঁর শরীরে জ্বালাপোড়া করে। দুর্বল হয়ে যান। ফ্যানের বাতাস না থাকলে একই জায়গায় শুয়ে-বসে অস্থির হয়ে ওঠেন। মাথা খারাপ হয় আগের তুলনায় বেশি। বিদ্যুৎ চলে গেলে তাঁর পাশে বসে হাত পাখায় বাতাস করতে হয়। দুদিন ধরে টিউশনিতেও যেতে পারছে না। কাল যেভাবেই হোক যেতে হবে।
প্রায় এক ঘণ্টা ধরে বসে বসে বাতাস করছে ও। হাত লেগে গেলে একটু বিরতি নেয়। তারপর আবার হাত বদল করে পাখা ঘুরায়। বা’হাতে বেশিক্ষণ পারে না। ডান হাতেই ঘোরে তাল পাখাটা। এক ঘণ্টা পর মাথার ওপর বৈদ্যুতিক পাখাটা চক্রাকারে ঘুরতে নিরুপমা হাঁপ ছাড়ে। একটু পর উঠে দাঁড়ায়। পা ঝিনঝিন করছে। তবুও টেনে টেনে এগোলো। আবার বিদ্যুৎ যাওয়ার আগে ভাত আর তরকারিটা রান্না করে ফেলতে হবে। ফ্রিজ থেকে নিজেদের জন্য মাছ আর লোকটার জন্য গোরুর মাংস বের করলো। প্রতিদিন মাংসের ঘ্রাণে ওর মা সন্দেহ করছে। শুধু এই ঘ্রাণে নয় আরও অনেক কারণে দিনদিন সন্দেহ তাঁর বেড়েই যাচ্ছে। ইদানীং মায়ের নানান প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে ওকে, খালেদা কেন তাঁর সামনে আসে না, একদিনও ওর গলা পর্যন্ত শোনেননি বা ওই ঘরে ওরা আস্তে আস্তে কথা বলে কেন? আবার বলে, খালেদার গলার স্বর কী মোটা? আজকাল ঘরে সিগারেটের গন্ধ পান ইত্যাদি ইত্যাদি। নিরুপমা মাঝে মাঝে মিথ্যা বলে, মাঝেমধ্যে কিছু বলতেই পারে না। মায়ের সন্দেহ বাড়ে। চিৎকার করে খালেদাকে ডাকেন। খালেদা আসে না। আসবে কী করে ওই ঘরে খালেদা নেই। যে আছে সে এলে কী হবে? নিরুপমা সময় সময় ভাবে কথাটা। ওর মা বোধহয় হার্ট অ্যাটাকই করবেন কিংবা আরও খারাপ কিছু ঘটতে পারে। নিরুপমার প্রতি তাঁর বিশ্বাস থাকবে না। ভাববে কী সাংঘাতিক মেয়ে তাঁর। যে মেয়ে দিনের পর দিন একজন খু*নী যুবককে ঘরে আড়াল করে রাখতে পারে সে সাংঘাতিক ধরনের মেয়ে ছাড়া কী! কিন্তু কেউ তো বুঝবে না নিরুপমার কষ্ট, অসহায়ত্ব।
মাছ ও মাংসের বরফদলা পানিতে ভিজিয়ে ভাত চড়িয়ে দিলো চুলায়। ফ্যানের বাতাসে ওর মা গভীর নিদ্রায়। তবুও আরেকবার পরীক্ষা করে নিলো। তারপর চললো নিজের অতীত রুমের দিকে। এখন যে রুমটা ওর নেই।
বাথরুম দু’রুমের মাঝামাঝি। ওর মা ঘুমিয়ে গেলেই লোকটাকে বাথরুমের সকল কাজ সেরে নিতে বলে। নিরুপমা অবাক হয় যখন সে চুপচাপ ওর কথা মেনে নেয়। যেন কত বাধ্যগত অতিথি সে।
“মা ঘুমিয়েছে।”
নিরুপমা রুমে ঢুকে দরজা ভিজিয়ে দিলো। লোকটা আধশোয়া হয়ে চোখ মুদে ছিল। প্রথম যেদিন রাতে দেখেছিল সেদিন তার মুখভর্তি দাড়ি-গোঁফ ছিল। এখন সেটা ট্রিম করা। মাথার চুল আর বাবরি নেই। কিন্তু বড়ো।
লোক লোক বললে আসলে লোক বলাটা মানাচ্ছে না। বেশি বয়স না। নিরুপমার বয়সী? বেশি হবে না নিশ্চিত। কম হতে পারে। তবুও নিরুপমা লোকই বলবে। ছেলেটা সুদর্শন। নিরুপমা মিথ্যা বলবে যদি বলে ওর চেহারা ওর ভালো লাগে না। মানুষ হিসেবে শতভাগ ভালো লাগে না। কিন্তু… নিরুপমা মাথা নাড়ায়। কী যা-তা ভাবছে। এই লোক একজন খু*নী, খারাপ মানুষ। কোনো বুদ্ধিভ্রষ্ট মানুষই জেনেশুনে ওকে পছন্দ করবে।
লোকটার পরনে শুধু টাউজার। পরশু তার অন্তর্বাস থেকে শুরু করে টিশার্ট পর্যন্ত কিনে এনেছে নিরুপমা। ভাবলে এখনও রাগ হয়। এই লোকের চেয়ে রাগটা নিজের ওপরই বেশি হয়। হুমকি দিয়ে কেনায়নি ওগুলো। আজকাল সে অ*স্ত্রের ভয় দেখায় না৷ নিরুপমা সে পর্যন্ত যেতে দেয় না। যদিও সেদিন ক্ষমা চেয়েছিল। ওইদিনের ক্ষমা চাওয়ার প্রভাব অবশ্য ওর ওপর বেশ পড়েছে। কিন্তু বিশ্বাস কী ক্ষতি করবে না? অ*স্ত্র কপালে ঠেকাবে না আর?
বিছানা এলোমেলো। মশারী ঠিকমতো তোলেনি। তোলেই না সে। সিগারেটের গন্ধে ওই ঘরে নিঃশ্বাস নেওয়া দায় নিরুপমার জন্য। গত পরশু পাঁচ প্যাকেট সিগারেট আনিয়েছে নিরুপমাকে দিয়ে। কতটা নীচ লোকটা! এই লোককে কে ভালোবাসবে? কে পছন্দ করবে?
“মনুষ্যত্বহীন একটা লোক!”
লোকটা যেন শুনতে পেয়েছে এমনভাবে চোখ খুলে তাকিয়ে রইল। নিরুপমা শুনতে পাওয়ার মতো জোরে বলেনি। এই লোকটা টেলিপ্যাথি জানে না তো? না, অযথাই ভয় পাচ্ছে। ইচ্ছে করে চোখ-মুখ এমন করে যেন নিরুপমা ভয় পায়। মানুষকে ভয় দেখানোর চাকরি নিয়েছে যেন সে।
“ফালতু লোক কোথাকার!” লোকটা ভুরু তুললো একটা। কিন্তু নিরুপমা মুখেই তো বলেনি এবার। মনে মনে বলেছে। চোখ সরিয়ে নিলো। এই লোকের সাথে আর যুদ্ধ যুদ্ধ খেলবে না। চুপচাপ থাকবে। যেভাবে চলছে চলতে দেবে। কত নীচে নামতে পারে দেখবে। ততদিনে লোকটার অভিসন্ধি জেনে তারপর ওকে তাড়ানোর বুদ্ধি বের করবে। কিছু কঠিন কাজ সন্ধিতেও হয়।
“মা জেগে উঠবে যে কোনো সময়।” নিরুপমা যেন না পেরে বলে। লোকটা উঠে এলো। গায়ে তোয়ালে জড়িয়ে ওর পাশ দিয়ে যাচ্ছিল হঠাৎ থামল। নিরুপমা ফিরে ভুরু কুঁচকে তাকায়। লোকটার চোখ দুটো লাল, নিচে বসে গেছে, কালি পড়েছে। রাতে কি ঘুমায় না?
একটু ঝুঁকে লোকটা ফিসফিস করে বলল,
“আমার অভিসন্ধি জানলে তোমার ঘুম হারাম হয়ে যাবে, অমাবস্যা। খবরদার জানতে যেয়ো না।”
তারপর রহস্যময় মুচকি হাসি হেসে দরজার বাইরে চলে গেল। নিরুপমা হতবুদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়ে রইল সেখানে।
চলবে,,,