অশ্রুমালা পর্ব ২

#অশ্রুমালা
Part–2
#Arishan_Nur (ছদ্মনাম)

আবেগ ঘাবড়ে গেল। যদি সিজারের সেলাই খুলে গিয়ে রক্তপাত শুরু হয়? তখন কি করবে সে? এমনি রোদেলার অপারেশনটায় কমপ্লিকেশন ছিল। সে নিজেই তো অপারেশনের একজন সদস্য ছিল। যদিও বা শুধু অপারেশন থিয়েটারে গিয়েছিল। কোন ধরনের কাজে অংশ গ্রহন করেনি। আবেগ নিজে তো জানে কতোটা রিস্ক ছিল রোদেলার জন্য সেই সময়টায়। অথচ এমন কম্পলিকেট ওটি পেশেন্টের সাথে এমন অমানবিক আচরণ কিভাবে করতে পারল সে? নিজের উপরই এখন তার রাগ লাগতে শুরু করেছে৷

আবেগ ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়ল। রোদেলা পেটে হাত দিয়ে কুকিয়ে উঠছে। আবেগ দ্রুত তার কাছে গেল।

এবং আবেগ বিচলিত হয়ে বলে, ব্যথা করছে?

উত্তরে রোদেলার ব্যথিত কন্ঠে শুনতে পেল, নাহ।

রোদেলার মুখ থেকে নাহ শোনার পর ও আবেগ স্বস্তি পেল না। এই ‘না’ জবাব টাই যেন তাকে অশান্ত করে তুলল।

আবগে এক মূহুর্তে দেরি না করে রোদেলাকে উঠে বসালো এবং পরমূহুর্তে বিছানায় শুইয়ে দিল।

এবং শাড়ি থেকে আচলটা হালকা সরালো। এতে সিজারের কাটা সেলাই তার চোখে পড়ল৷

নাহ। সব ঠিক আছে। আবেগ তো ভয় পাচ্ছিল যদি রোদেলার সেলাই ফেটে যায় বা ছিড়ে যায়? কিন্তু এমন কিছু ই হয়নি।

তাই আবেগ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল।

সে রোদেলাকে পরখ করে দেখে নিল। মেয়েটার মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে আছে।

আচ্ছা রোদেলার কি খুব কষ্ট হচ্ছে? আবেগ রোদেলার কাছে গিয়ে বসল।

রোদেলার চোখ বন্ধ। কিন্তু পিটপিট করে বন্ধ চোখজোড়া নড়ে উঠছে থেকে থেকে৷

আবেগের মনে আছে, যখন রোদেলার সিজার হয় তখন পাঁচ ব্যাগ রক্ত লেগেছিল। কি দুর্দশা ঝেঁকে বসেছিল তাদের মধ্যে আবেগ তো একটা সময় আশাই ছেড়ে দিয়েছিল যে রোদেলা হয়তো আর বাচবে না!

আবেগ কিছু বলতে যাবে আর আগেই রোদেলা পেটে হাত দিয়েই আস্তে করে উঠে বসে।

তাকে বসতে দেখে আবেগ গমগমে আওয়াজে বলে, পেইন কিলার খাবে?

রোদেলা উঠে দাড়ালো এবং শাড়ির আচল কাধে ঠিক মতো ঝুলিয়ে নিয়ে বাথরুমের দিকে হাটা ধরল কিছু না বলেই।

এতে আবেগের মেজাজ চটে গেল। আবেগ তাকে কিছু জিজ্ঞেস করছে অথচ তার উত্তর না দিয়ে পরাগপর হওয়া —এটা কেমন আচরণ?

একে তো তার উপর দয়া করে আবেগ এই বিয়ে করেছে। অথচ সে! তার মুখের উপর অপমান করছে? কতোটা অকৃতজ্ঞ রোদেলা?

আবেগের দৃষ্টি গেল বিছানার মাঝখানে শুয়ে থাকা ছোট্ট বাবুটার উপর। তার বিছানায় কোন দিন কোন বাচ্চা ঘুমায় নি৷ আজকেই প্রথম তার বিছানায় কোন বেবি ঘুমাচ্ছে৷

আবেগ আনমনে হেসে দিল বাচ্চাটাকে দেখে৷ আসলে ছোট্ট বাবুরা কিছুটা ম্যাজিকের মতো হয়। এদের দেখলে মনটা বিষন্ন হয়ে থাকতে পারে না৷ ওই ছোট্ট ছোট্ট হাত-পা গুলো আর ফোকলা হাসির দিকে তাকিয়ে মনে হয় একজন দশ খুনের আসামীও খানিকটা হলেও হাসবে৷

সেই সুত্র ধরে আগালে, আবেগের ও বাবুকে দেখে মনটা কিছু টা ভালো হওয়ার কথা। হলোও তাই!

আবেগ নিজে থেকে বাচ্চাটার কাছে গেল।এবং বাচ্চাটার গা ঘেষে বসল৷

বারবার বাচ্চা বা বাবু বলার কারন হলো বাবুর নাম এখনো রাখা হয় নি। একটা পরিবারে যখন কোন নতুন সদস্যা আসে সবাই খুশি হয়। কিন্তু রোদেলার বাচ্চা হওয়ার সময়কার পরিস্থিতি টা ছিল খুব জটিল। হবেই বা না কেন?

একে তো রোদেলা অপুষ্টিহীনতায় ভুগছিল তারপর রোদেলার ছিল কমপ্লিকেশন প্রেগ্ন্যাসি। কিন্তু আবেগের তো মনে হয় রোদেলার প্রোপার ট্রিটমেন্ট করা হত। এই পযন্ত যদি রোদেলার অবস্থা থাকত তবে যেকোন দায়িত্ববান ডাক্তার ই সিজারিয়ান পদ্ধতি তে রোদেলার ডেলিভারি করতে পারত৷ এতে রোদেলা লাইফ রিস্ক হত না।

কিন্তু রোদেলার সাথে যা ঘটেছিল,,,,,,, এইটুকু ভাবতেই আবেগ বাবুর কান্নার শব্দ পেল৷

সে বাবুর দিকে তাকাতেই দেখল পিটপিট করে চোখ খুলে হালকা গলায় কান্না করছে বাবু।

আবেগ বুঝে উঠতে পারছে না কি করবে? সে বাবুটার ছোট্ট হাত জোড়া ধরে আদর মাখা গলায় বলে উঠে, না, বাবা কাদে না।

এতে মনে হয় না বাচ্চাটার মধ্যে কোন ভাবান্তর আসল। সে তার মতো কেদেই চলেছে আর পিটপিট চোখে আবেগকে দেখছে।

আবেগ বাবুটার বুকে হাত রেখে আস্তে করে হাত উঠা-নামা করতে লাগলো। বাচ্চা দের ঘুম পাড়ানোর সময় বাবা-মা রা যা করে সেটাই করতে লাগলো আর আস্তে আস্তে বলা শুরু করে, কাদে না বাবা। তুমি না ভালো ছেলে। আম্মুর কাছে যাবে? আরো অনেক কিছু বলা শুরু করে দেয়।

এতে যা হলো বাবুটা কান্না থামিয়ে আবেগ কে দেখতে লাগে আর ফোকলা হাতে হাসি দিল।

আবেগও বিনিময়ে একটা হাসি দিয়ে বাবুটার ছোট্ট হাত দুটি তার হাতের সাথে নিয়ে খেলতে লাগে তার সাথে৷

রোদেলা বাথরুম থেকে বের হয়েই এই দৃশ্য দেখে চমকে উঠে। সে প্রথমে ভেবেছিল আবেগ বুঝি তার বাচ্চাকে মারছে। কারন এই সময়ে আবেগ সম্ভবত মাতাল অবস্থায় আছে৷যদি তার বেবিকে কিছু করে বসে আবেগ?

রোদেলার বুক ছ্যাত করে উঠে। সে এই অবস্থায় ও বড় বড় পা ফেলে বেডের কাছে গেল। কিন্তু সে যা ভেবেছে তার উল্টাটা হয়েছে।

আবেগ তো তার ছেলের সাথে খেলা করছে। আর তার ছেলেও কি সুন্দর আবেগের সাথে হাসছে যেন কতো দিনের পরিচয় তাদের। এই সিনটা দেখে রোদেলার মনটা যে কি প্রশান্ত হলো তা বুঝিয়ে বলার মতো না। কিন্তু রোদেলার পেটে চিনচিন ব্যথা আরাম্ভ হলো। হয়তো জোড়ে জোড়ে হেটে আসার জন্য হয়েছে!

রোদেলা দাতে দাত চেপে ব্যথা সহ্য করে মৃদ্যু গলায় বলে উঠে, আবেগ!

আবেগ রোদেলার কন্ঠ শুনে তার দিকে তাকালো। এবং ভ্রু কুচকালো কারন রোদেলার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে ব্যথা পাচ্ছে। অন্য কেউ না বুঝলেও আবেগ বেশ ভালো করেই ধরতে পারল ব্যাপার টা৷

আবেগ উঠে দাড়ালো এবং বলল, ব্যথা করছে খুব?

রোদেলা হু বলল।

আবেগ হন্তদন্ত হয়ে বলে, কোথায়? সেলাইয়ের জায়গায়?

–হু।

আবেগ এ কথা শুনে রোদেলাকে বিছানায় বসিয়ে দিল।

রোদেলা বলে উঠে, ডাক্তার আফরোজাকে কল দিবে?

আবেগ শান্ত গলায় বলে, আমিও তো ডাক্তার!

রোদেলা আর কিছু বলল না৷

আবেগ রোদেলা কে বলল, মেডিসিন দিব?

রোদেলা ছোট করে উত্তর দিল, হু।

ঠিক সেই সময় বাবু কেদে দিল।

আবেগ তা দেখে বলে, ওর খিদা লাগছে। খাওয়াও ওকে। আমি মেডিসিন আনছি৷

বলে হনহন করে আবেগ রুমের বাইরে গেল।আবেগের মাথা চক্কর দিচ্ছে। মাথা ঘুরাচ্ছে তবুও সে রোদেলার মেডিসিন আনতে রুমের বাইরে গেল।
রোদেলা মাথা উচিয়ে একবার আবেগকে দেখে নিয়ে বাবুকে খাওয়াতে লাগলো । পেট ব্যথা করছে। চিনচিনানি ব্যথা করছে৷

রোদেলা বালিশে হেলান দিয়ে শুয়ে পড়ে।ঘুম যেন দুই চোখে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। চোখের পাতা যেন খুলে রাখতেই পারছে না রোদেলা।

এদিকে আবেগ ড্রয়িং রুমে আসল। তাদের ড্রয়িং রুমে একটা শোকেস আছে। সেই শোকেসের নিচের ড্রয়ারে সব ধরনের ঔষধ রাখে আবেগ। রোদেলার মেডিসিন ও আছে। আবেগ হাতে নিল মেডিসিন গুলো তারপর রুমের দিকে এগালো।

রুমে প্রবেশ করতেই দেখে রোদেলা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। মা-ছেলে পাশাপাশি ঘুমিয়ে আছে৷

তাদেরকে দেখে আবেগ মৃদ্যু হাসল। তারপর পরক্ষনে তার কপালে চিন্তার ভাজ ফুটে উঠল।

রোদেলা তো ঘুম। মেডিসিন খাবে কিভাবে? ব্যথা নিয়েই ঘুমিয়ে গেল? কি করবে সে?

আবেগ এমবিবিএস ডাক্তার। আবেগ যেই হাসপাতালের ডাক্তার সেখানেই রোদেলার অপারেশন হয়েছে। সেখানকার ই গাইনোলজিস্ট হলো ডাক্তার আফরোজা৷ খুব ভালো ডাক্তার উনি। ডাক্তার আফরোজা বারবার বলে দিয়েছে ব্যথা উঠলে মেডিসিন টা দিতে। এখন কি সে রোদেলা কে ডাকবে? ডাকা তো উচিত।

আবেগ গিয়ে রোদেলাকে ডাকতে লাগে। কিন্তু তার কোন ভাবান্তর নেই। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।

আবেগ তার ডাকলো না। সে দেখল রোদেলা মাঝ খানে শুয়ে ঘুমাচ্ছে আর বাবু বাম পাশে৷

তাকে যদি শুতে হয় তবে ডান পাশে শুতে হবে। ডান পাশে জায়গাই আছে অল্প একটু। অর্থাৎ শুতে হলে আবেগকে রোদেলার গা ঘেষে শুতে হবে।কিন্তু আবেগের রোদেলার সাথে গা ঘেষে শোয়ার না আছে ইচ্ছা আর না আছে শখ!

সে সোফায় গিয়ে বসল। আজ রাত এখানেই ঘুমাবে। তার বিছানায় মা-বাচ্চা আরাম করে ঘুমাক৷

চলবে।

[ আসসালামু আলাইকুম। প্রথমেই সকলকে ধন্যবাদ গল্পটাকে এতো এতো ভালোবাসা দেওয়ার জন্য কি বলে যে ধন্যবাদ দিব বুঝে পাচ্ছি না৷ আশা করি আগামীতেও আপনারা এভাবেই আমাকে সাপোর্ট দিবেন আর অবশ্যই ভুল-ভ্রান্তি ক্ষমার চোখে দেখবেন। আবারো একবার ধন্যবাদ সবাইকে। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here