অষ্টপ্রহরে পেয়েছি তোমায় পর্ব -০৯

#অষ্টপ্রহরে_পেয়েছি_তোমায়🥀
#ইশা_ইসলাম
#পর্ব_৯

“বাদ দাও এসব”

আমি বুঝলাম উনি বলতে চাচ্ছেন না।কিন্তু আমার জানতে হবে উনি আমার সাথে এমন করলেন কেনো আর আমাকে ভালোবাসেন কিনা।নাহলে এমন অনিশ্চিত সম্পর্ক না রাখাই ভালো।

আমি জোড় গলায় বললাম,,,”আপনাকে বলতেই হবে কি হয়েছে”.

উনি এবার বলতে শুরু করলেন,,,
আমি তখন ভার্সিটিতে পড়ি।অনার্স থার্ড ইয়ারের ছাত্র।আমাদের ৬ জন এর একটা গ্রুপ ছিল।আমি,আহি,নিশান,সামির,জুবায়ের,ইমান আমাদেরকে এক নামে চিনত সবাই।সবই ভালো চলছিল।ভার্সিটিতে একটা মেয়ে আসল ফার্স্ট ইয়ারের।আমি ছোট থেকেই গম্ভীর বদমেজাজি।তাই আমার ফ্রেন্ড ছাড়া আমি কারো সাথে কথা বলতাম না।যেই মেয়েটার কথা বললাম ওর নাম ছিল নশিন।মেয়েটা ছিল বড়লোক বাবার বিগড়ে যাওয়া সন্তান।ও যা চায়,তাই নাকি নিজের করে নেয় সেটা যভাবেই হোক না কেন।আমাকে প্রপোজ করে,আমি ওকে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম সুন্দর ভাবে।কিন্তু ও তো ওই আমার পিছু পড়ে রইল।জ্বালাতো অনেক কিন্তু আমি ওকে পাত্তা দেয়নি।থাপ্পড় যে কতো খেয়েছে তার হিসাব নেই।হুট করে কোথায় চলে গেল।ভেবেছিলাম বেঁচে গেছি।কিন্তু না ও আবার ফিরে এসেছে।

এটুকু বলে থামলেন উনি আমি উনার দিকে তাকিয়ে পানি এনে উনার হাতে দিলাম।উনি ধকধক করে খেয়ে ফেললেন।আমি গ্লাসটা রেখে আবার উনার পাশে বসলাম।আয়াজ আবার বলতে শুরু করলেন,,

“সেদিন আমাকে ফোন দিয়েছিল।আমি বলেছি যে আমি বিবাহিত।কিন্তু ও শুনতে নারাজ।আজকে অফিসে এসেছিল।কথা-কাটাকাটি হয়েছে অনেক এইসব নিয়েই মেজাজ খারাপ ছিল।তাই তোমার সাথে ওমন করে ফেলেছি,আ’ম স’রি”

আমি মলিন হেসে বললাম,,,”তাহলে আমাকে ছেড়ে দিয়ে ওকে বিয়ে করে নেন ও তো আপনাকে অনেক ভালোবাসে”

উনি আমার গাল চেপে ধরলেন।আর চিল্লিয়ে বললেন,,,”আমার থেকে তোর মুক্তি শুধু আমার মৃত্যুতে বুঝলি।আমাকে ছেড়ে দেওয়ার কথা চিন্তাও করিস না”

গাল ছেড়ে দিলেন আমার।আমি উনার দিকে চেপে এসে বললাম,,,”ভালোবাসেন আমায়?”

উনি অন্যদিকে তাকিয়ে বললেন,,,”না”

আমি উনার কথা শুনে বললাম,,,”তাহলে ছেড়ে দিন আমায়!মুক্তি দেন”

আয়াজ কোনো কথা না বলে চলে গেলেন।আমি দোলনায় বসে কাঁদতে লাগলাম।উনি কেনো এমন করছেন।মাঝে মাঝে মনে হয় উনি আমায় ভালোবাসেন কিন্তু ভালোবাসলে বলছেন না কেনো।আমি নিজের কাছে নিজেই প্রমিস করলাম উনি যতখন আমায় ভালোবাসি না বলছেন আমি উনার কাছে যাবো না।আমি ওখান থেকে নিজের রুমে চলে আসলাম।শুয়ে পড়লাম।ঘুম আসছে না,তাও ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।মাথার ব্যান্ডেজ এর কারণে নড়াচড়া ও করা যাচ্ছে না বেশি।নড়লেই মাথায় ব্যাথা করছে।
|
|
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরের দিকে গেলাম।রান্না ঘরে গিয়ে দেখি আয়াজ রান্না করছেন।আমি সোফায় গিয়ে ফোন টিপতে লাগলাম।উনি খেতে ডাকলেন।আমি চুপচাপ খেয়ে আবারও ফোন চাপতে লাগলাম।উনার দিকে খাওয়ার সময়েও তাকাইনি।উনি আমায় ডাক দিলেন।আমি না শুনার ভান করে বসে আছি।

আয়াজ আমার কাছে এসে ব্যান্ডেজটা খুলে দিলেন।
উনি ব্যান্ডেজ খুলে দেওয়ার পর বললেন,,,”ইশা রেডি হয়ে নাও।তোমায় কলেজে ভর্তি করতে যাবো”

আমি কোনো কথা না বলে রেডি হয়ে চলে আসলাম।উনি নিচে দাঁড়িয়ে ছিলেন।আমাকে আসতে দেখে গাড়িতে উঠে বসলেন।আমিও গাড়িতে বসে সিট বেল্ট লাগিয়ে বাইরের দিকে তকালাম।আয়াজ যে গাড়ি চালানোর মাঝে আমার দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছেন,সেটা আমি বুঝতে পারছি।

উনি কলেজের সামনে এসে গাড়ি থামালেন।উনি আমাকে বললেন,,,”এখানে নেমে দাঁড়াও আমি গাড়ি পার্ক করে আসছি”

আমি কোনো কথা না বলে গাড়ি থেকে নেমে পাশে দাঁড়ালাম।উনি গাড়ি পার্ক করে এসে সোজা হাঁটতে লাগলেন।আমিও উনার পিছুপিছু হাঁটতে লাগলাম।কলেজটা অনেক সুন্দর।আমি যেতে যেতে চারপাশ দেখছিলাম।উনি অফিস-রুমের ভেতরে ঢুকলেন।আমিও উনার পিছনে পিছনে ঢুকলাম।আয়াজ প্রিন্সিপালের সাথে কথা বলছেন।আমি পাশে বসে আছি।প্রিন্সিপাল স্যার উনাকে বললেন,,,

“কি হয় আয়াজ তোমার ও”

উনি আমতা আমতা করে বলেন,,,”আমার ওয়াইফ স্যার”

আমি তাছিল্য হাসলাম।সত্যিইতো আমাকে কি আর আয়াজের সাথে মানায়, তাইতো ওয়াইফ বলে পরিচয় দিতে আমতা আমতা করতে হচ্ছে।প্রিন্সিপাল স্যার হয়তো অবাক হলেন,অবাক হয়েই বললেন,,

“কবে বিয়ে করলে আয়াজ আমাকে বললে না যে”

আয়াজ বললেন,,,”আসলে স্যার আমাদের বিয়েটা এমন পরিস্থিতিতে হয়েছে সেটা আর নাই বলি।”

স্যার আমায় ভালো করে দেখে বললেন,,”মামনি মাশাআল্লাহ দেখতে অনেক সুন্দর।”

স্যারের কথায় আমার লজ্জা লাগল।স্যার আমাকে বললেন আজকের ক্লাস করতে।আমিও না করিনি। আমাকে নিয়ে আয়াজ ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাস রুমের কাছে আসলেন আমাকে বললেন,,
“তুমি এই ক্লাসটা করো শুধু,কালকে থেকে সম্পূর্ণ ক্লাস করো।আমি ক্লাস শেষে নিতে আসব”

আমি মাথা নাড়ালাম।উনি সানগ্লাস চোখে দিয়ে ভাব নিতে নিতে চলে গেলেন।আমি উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি দিয়ে বিড়বিড় করে বলি,,,

“ভাব দেখলে মনে হয় কোন দেশের প্রেসিডেন্ট”

আমি ক্লাসে ঢুকলাম।একপাশে ছেলেরা আরেক পাশে মেয়েরা।আমি পিছনে গিয়ে বসলাম।কেউ আমার সাথে কথা বলল না।এরা কেমন রে বাবা।আমাদের স্কুলে নতুন কেউ আসলে তো আমরা কথা বলার জন্য ঝাপিয়ে পড়তাম।আর এইখানে কেউ তাকাচ্ছেও না।আমাকে আবার এদের ভিতরে কেমন দেখাচ্ছে সবাই কলেজ ড্রেস পড়া আমি বাদে।একটা মেয়ে দৌড়ে ক্লাসে ডুকল।মেয়েটা এসে আমার পাশে বসল।আমি মেয়েটার দিকে তাকালাম।
মেয়েটা কিছুক্ষন বসে আমাকে বলল,,,”তুমি কি নতুন,আগের দিন তো দেখলাম না”

“হুম আমি নতুন আজকেই এসেছি”

মেয়েটা নিজের হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,,,”আমি লামিসা তুমি?”

আমি হাত মিলিয়ে বললাম,,,”আমি ইশা”

“আচ্ছা শোনো আমার কোনো ফ্রেন্ড নেই,তুমি আমার ফ্রেন্ড হবে ইশা”

“হুম আমার ফ্রেন্ড নেই তাই আমি আর তুমি আজকে থেকে ফ্রেন্ড”

আমি ওকে আবার জিজ্ঞেস করলাম,,,”আচ্ছা এরা এমন কেনো কেউ কারো সাথে কথা বলছে না যে যার মতো ফোন টিপছে আর কাছের বান্ধবী ছাড়া কথা
বলছে না”

লামিসা হেসে বলল,,”আরে এরা হলো বড় লোক বাপের ছেলে-মেয়ে এদের অহংকার অনেক বুঝলে”

আমি মাথা নাড়ালাম।এর ভেতরেই স্যার আসলেন।আমরা আর কোনো কথা বললাম না।মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করলাম।স্যার চলে যেতেই আমি লামিসাকে বললাম,,
“লামিসা এখন আমায় নিতে আসবে তুমি থাকো হ্যাঁ কালকে দেখা হবে”
লামিসা আমার দিকে করুন চোখে তাকিয়ে বলল,,”না গেলে হয় না”

“না রে আয়াজ নিতে আসবেন”

লামিসা বলল,,,”আয়াজ কে?”

“কালকে বলবানি উনি হয়তো চলে এসেছেন।বাই”

আমি ওকে বাই বলে বাইরে আসলাম।আয়াজ বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিলেন আমাকে দেখে বললেন,,,”এতো দেড়ি হলো কেনো তোমার”

আমি অন্যদিকে তাকিয়ে বললাম,,”এমনি”

আয়াজ আমার হাত ধরলেন।আমি অবাক হলাম।।হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম।কিন্তু আমি আজকেও ব্যার্থ।আমি আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম সব মেয়েরা উনার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।আমার মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল।তাড়াতাড়ি করে হেঁটে ওখান থেকে চলে আসলাম।

আয়াজ আমায় দাঁড় করিয়ে গাড়ি নিয়ে আসলেন।আমি গাড়িতে উঠে বসলাম।আয়াজ গাড়ি স্টার্ট দিলেন।আমাকে নিয়ে শপিংমলে আসলেন।আমি ওনার সাথে এখন অব্দি নিজ থেকে কথা বলিনি উনি কিছু বললে হু হা করে শুধু উত্তর দিয়েছি।আমার হাত ধরে শপিংমলের ভিতরে ঢুকলেন।আমি চুপচাপ থাকলাম।কারণ হাত না ধরে হাঁটলে হারিয়ে যেতে পারি।

উনি আমাকে একটা ব্যাগ কিনে দিলেন।আর ড্রেস বানাতে দিলেন।আমার কলেজের জন্য যতো কিছু লাগবে সব কিনে দিলেন।তারপর নিজের জন্য কিছু শার্ট কিনলেন।আমাকেও আরো কয়েকটা টপ’স কিনে দিলেন।আমি কিছুই বলিনি।উনি আমায় একেকটা ড্রেস আমাকে দিচ্ছিলেন আর আমি পড়ে ওনাকে দেখাচ্ছিলাম।উনার যেগুলো ভালো লেগেছে উনি সেগুলোই নিয়েছেন।

তারপর আরেকটা দোকানে গেলেন সেখান থেকে একটা ব্লাক কালারের গাউন আমায় দিয়ে বললেন,,,,”এটা পড়ে আসো”

আমি বিরক্ত হলাম।এতোবার চেঞ্জ করা যায়।বিরক্তি নিয়ে ড্রেসটা পড়লাম।ড্রেসটা অসম্ভব সুন্দর কিন্তু এটার ওড়ান নেই তাই আমি কি করবো ভেবে না পেয়ে চেঞ্জিং রুমে বসে আছি।উনি এসে দরজা ধাক্কালেন।

আমি বললাম,,,”আমি বের হতে পারব না”

“কেনো?”

“এই ড্রেসের তো ওড়না নেই”

“তুমি দরজাটা খুলো”

আমি দরজা খুলে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছি।আয়াজ ভেতরে এসে দরজা বন্ধ করে দিলেন।আমি চোখ খুলে আয়াজের দিকে তাকালাম। আয়াজ আমার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।আয়াজের এইভাবে তাকিয়ে থাকাতে আমার অস্বস্তি হচ্ছে।উনার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখি উনি আমার গলার তিলটার দিকে তাকিয়ে আছেন।গাউনের গলাটা অনেক বড়ো টেনেও তিলটা ঢাকতে পাড়লাম না।

আয়াজ আমায় কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে আনলেন।উনার নিশ্বাস আমার মুখে আছড়ে পড়ছে।উনি আমার গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলেন।চুমু দিতে থাকলেন।আমি আর সয্য করতে না পেড়ে ছাড়ানোর জন্য চেষ্টা করলাম।উনি হয়তো ঘোর থেকে বের হলেন।দ্রুত আমায় ছেড়ে দিলেন।আমি জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিচ্ছি।

উনি অন্যদিকে তাকিয়ে বললেন,,,”ড্রেসটা চেঞ্জ করে তাড়াতাড়ি আসো”

উনি চলে যেতেই বুকে হাত দিয়ে বড় বড় নিশ্বাস ফেলে নিজেকে স্বাভাবিক করে চেঞ্জ করে বাইরে আসলাম।উনি ড্রেসগুলো প্যাক করে দিতে বললেন।বিল দিয়ে চলে আসলেন।সব শপিং ব্যাগ গুলো আমার হাতে আমি ঠিকমতো হাটতেও পারছি না।হুট করে আয়াজ আমায় কোলে তুলে নিলেন।
আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,,,”কি করছেন কি ছাড়ুন।সবাই দেখছে”

আয়াজ গম্ভীর কন্ঠে বললেন,,”কে দেখলো কি দেখলো না তাতে আমার কিছু যায় আসে না”

কিছু ছেলেরা শিশ দিয়ে বলছ,আয় হায় কি প্রেম ব্রো চালিয়ে যান।কিছু মেয়ে ও বলল,,ইশ আমায় যদি এভাবে কেউ ভালোবাসতো।আমি ওদের কথায় তাছিল্য হাসলাম।আচ্ছা আমি কি আয়াজকে ভালোবেসে ফেলেছি।কি জানি উনাকে ছাড়া তো কিছুই ভালো লাগে না।

গাড়ির কাছে এসে আমাকে গাড়িতে বসিয়ে দিলেন।শপিংব্যাগগুলো পিছনে রেখে এসে গাড়ি স্টার্ট দিলেন।আমার এখন লজ্জা লাগছে।আয়াজের দিকে এবারও তাকালাম না। জানলা দিয়ে ব্যাস্ত নগরী দেখতে লাগলাম।হুট করে গাড়ি থেমে গেল।সামনে তাকিয়ে দেখলাম,জ্যামের জন্য গাড়ি থামিয়েছেন উনি।

একটা মেয়ে জানলার কাছে এসে বলল,,,”ম্যাডাম ফুল নিবেন”

আমার ফুল অনেক পছন্দ।আমি উনার দিকে তাকালাম উনি ফুলগুলো নিতে বললেন আমায়।আমি ফুলগুলো নিলাম মেয়েটির হাত থেকে।উনি মেয়েটির কাছে দাম জিজ্ঞেস করতে মেয়েটি বলল,,”স্যার ১৮০ টাকার ফুল এখানে।”

আয়াজ এক হাজার টাকার নোট দিয়ে বললে,,”এটা রেখে দাও”

মেয়েটা খুশি মনে চলে গেলেন।আমি উনার দিকে অবাক হয়ে তাকালাম।এইগুনটাও আছে উনার।উনি আসলেই একজন পারফেক্ট মানুষ।সব দিক দিয়েই উনার গুন আছে।

উনি গাড়ি নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টের সামনে থামালেন।দুপুর হয়ে গেছে।আমাকে নিয়ে ভিতরে ঢুকলেন।বিরিয়ানি ওর্ডার দিলেন।খাওয়ার পড়ে আমরা বাসায় চলে আসলাম।
উনি আমায় বললেন,,,”কালকে একটা পার্টি আছে তোমাকে আমার সাথে যেতে হবে”

চলবে,,,,?

(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here