আগুনের তৃষ্ণা পর্ব ২৩+২৪

#আগুনের_তৃষ্ণা
#Maishara_Jahan
Part………..23

হঠাৎ করেই সায়ন আস্তে আস্তে তার চোখ খুলে, আলো কিছুটা ভয়ে তাকিয়ে আছে। সায়ন হঠাৎ করেই উঠে বসে, আলো কিছুটা চমকে যায়।

আলোর ভীত চেহেরা দেখে সায়ন হালকা হেঁসে বলে,, ভয় পেয়ো না, আমি তোমার কোনো ক্ষতি করবো না।

আলো সায়নের হাত ধরে বলে,,, আমি ভয় আমার জন্য পাচ্ছি না, আমি ভয়টা তোমার জন্য পাচ্ছি। তুমি তোমার নিজের না ক্ষতি করে ফেলো।

সায়ন আলোর দিকে তাকিয়ে, তার মাথা বেন্ডেজ করা দেখে সায়ন তার হাত সরিয়ে নিয়ে বলে,,, দূরে থাকো আমার থেকে। আমি কারো জন্য নিরাপদ না। আমি একটা ভয়ানক সাইকো।

আমি সায়নের কাঁধে হাত রেখে বলি,,, তুমি ভয়ানক হতেই পারো না। যে নিজের আগে অন্যের কথা আগে ভাবে সে ভয়ানক কিভাবে হতে পারে। আর যার মন অন্যের কষ্ট দেখে কষ্ট পায় সে তো সাইকো হতেই পারে না।

সায়ন তুচ্ছ হাসি দিয়ে বলে,,, এসব শুনতেই ভালোলাগে কিন্তু বাস্তব অনেক আলাদা।

আলো,,, বাস্তব আরো সুন্দর, বাস্তবকে সুন্দর করে দেখলেই সুন্দর লাগবে কঠিন ভাবলে কঠিন হবে।

,,,,হুমম,ঠিক আছে,আমি এখন বাসায় যাবো।

আলো একটু দ্বিধা বোধ করে বলে,,,,, সায়ন আমরা সবাই ভাবছিলাম কি যে,,

,,,কি আমাকে পাগলা গারতে পাঠিয়ে দিবে তাই তো।

,,,,,নাহহ,,তুমি কি পাগল নাকি যে তোমাকে পাগলা গারতে পাঠাবো। আর যদি হতেও তাও আমি যেতে দিতাম না।

সায়ন আমার দিকে তাকিয়ে আবার তার চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বলে,, তাহলে?

,,,,, দেখো আমি তোমাকে। স্পষ্ট করে বলছি। তোমার সাইকোলজি-ক্যাল ট্রিটমেন্ট দরকার। এর এটা তোমাকে বাসায় রেখেও করা যেতে পারে, কিন্তু এটা মারু ভাবীর জন্য হানী কারক হতে পারে।

,,,নাহহ আমি এটা চাই না, আমার কারনে ভাবী বা তার সন্তানের কিছু হোক সেটা আমি চাই না।

,,,হুমম তাই তো তোমাকে প্রাইভেট প্লেজে রেখে চিকিৎসা করবো,আর চিন্তা করো না সেখানে আমি আমার বেশিরভাগ সময় কাটাবো। তুমি খুব তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যাবে।

,,,,কিন্তু আমি ভালো হতে চাই না। চাই না এখানে থাকতে। আমি চলে যাবো এখান থেকে, আমি আবার আমেরিকায় ফিরে যাবো। তাহলেই সব ঠিক হয়ে যাবো।

আমি মুখটা মলিন করে বললাম,,,,,,কোথাও যেতে দিবো না আপনাকে আমি। যদি ঐখানে গিয়ে আপনার কিছু হয়ে যায় তখন।

,,,হয়ে গেলে হয়ে যাবে, তাছাড়া আমার কিছু হলেই বা কার কি এসে যায়।

,,,,যায় আমার এসে যায়।

সায়ন আমার দিকে তাকায়, আমি তাড়াতাড়ি নার্ভাস হয়ে বলি,,,মানে আপনার মা বাবা, ভাই,ভাবী এদের এসে যায়। ওরা আপনাকে অনেক ভালোবাসে। অন্তত তাদের জন্য তো আপনাকে সুস্থ হওয়ার ট্রাই করা উচিত। আর আপনি যদি এক বার এটা ধরে নেন যে আপনি সুস্থ হতে চান তাহলে খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবেন।

সায়ন বেডে অন্যদিকে অন্য পাশ হয়ে শুয়ে বলে,,,,,, আমি একটু একা থাকতে চায় মিস্ আলো।

আলো সায়নকে নিজের দিকে ফিরিয়ে বলে,,,,,একা থাকতে চাইলেই হলো। আমি দিবো না আপনাকে একা থাকতে। কারন আমি আপনার বন্ধু, আর বন্ধুরা কোনো দিন একা ছাড়ে না।

সায়ন আমার কপালের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,,কিন্তু আমি তো তোমাকে আঘাত করেছি।

আমি মুচকি হেঁসে বললাম,,,, আপনি ইচ্ছে করে তো আর আঘাত করেননি। আর ইচ্ছে করে আপনি করতেও পারবেন না। আর আপনার সামনে এই ব্যাথা কিছুই না।

সায়ন আমার দিকে তাকিয়ে বলে,,, এমন কোনো ফিলিং নিজের মধ্যে এনো না যেটাতে পরে কষ্ট পেতে হয়।

আমি হেঁসে বলি,,,এই ফিলিংসটাতে একটা অন্য রকম খুশি আছে, আর সেটার জন্য এসব কষ্ট কিছুই না বুঝলেন,, এখন আপনি শুয়ে থাকেন আমি একটু আসছি ওকে।

আলো একটু বাহিরে যায়, সায়ন শুয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে থাকে।
,,,,,,,,,
বেশ অনেক ক্ষন পর অয়ন সাওয়ার নিয়ে বের হলো। অয়নকে বের হতে দেখে বিছানা থেকে উঠে বসি। অয়ন আমার দিকে তাকিয়ে ছোট্ট করে একটা হাসি দেয়। হাসিটা যে মিথ্যে ছিলো সেটা আমার বুঝতে আর বাকি নেয়।

আমি অয়নকে গিয়ে জরিয়ে ধরি। অয়ন আমাকে ছাড়িয়ে বলে,,আমার শরীর এখনো ভেজা নীর।

আমি আবারো অয়নকে জরিয়ে ধরে বলি,,, তো কি হয়েছে আমি তো ধরবো। আর আমার তো বেশ ভালো লাগছে শরীরটা বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা।

অয়ন ও আমাকে জরিয়ে ধরে বলে,,আজ আমার উপর এতো মেহের বানী হলে যে।

,,আমার মা বলে জরিয়ে ধরলে নাকি সব টেনশন দূরে চলে যায়, আর মন ভালো হয়ে যায়।

,, হুমম তাহলে তোমার মা ঠিক কথাই বলেছে।

,,,অয়ন শুনো না।

,,,হুমম বলো।

,,,কিছু না তোমার নামটা নিতে ইচ্ছে করছিলো।

অয়ন হেঁসে বলে,,, কেনো আমার নামে এমন কি আছে যেটা আপনার বলতে ইচ্ছে করে।

,, যানিনা, শুধু জানি তোমার নাম নিতে আমার খুব ভালো লাগে। আলাদা একটা ভালো লাগা কাজ করে।

,,,,তুমি আর তোমার কথা।

আমি অয়নকে সরিয়ে দিয়ে বলি,,,,,লজ্জা করে না সারা দিন এভাবে জরিয়ে ধরে থাকতে, আর কোনো কাজ নেয় নাকি। তাড়াতাড়ি জামা কাপড় পড়ে নাও, খেতে হবে না, রাত হয়েছে কতো দেখছেন।

,,,,,, আরে এটা কি হলো।

অয়ন নিচে আসে, এসে দেখে সবার মন খারাপ করে বসে আছে। অয়ন আসার সাথে সাথে সবাই খেতে বসে। কিন্তু কেও আর খাচ্ছে না। সবাই খাবারে আঙ্গুল ঘুরাচ্ছে।

অয়ন সবার উদ্দেশ্যে বলে,,,, আরে চিন্তা করার কিছুই নেয়, আমি সায়নকে দেখেছি। ও একদম ঠিক হয়ে যাবে। আমি আছি না। দেখবে কিছুদিনের মধ্যে সায়ন আমাদের সবার সাথে বসে খাবে। এখন তোমরা না খেলে পরে সায়ন যখন সুস্থ হয়ে আসবে তখন তোমরা সবাই অসুস্থ হয়ে যাবে। তাই সবাই ঠিক মতো খাও পিল্জ।

অয়ন সবাইকে তো সান্ত্বনা দিয়ে দিলো কিন্তু নিজেকে কি বলে বুঝাবে সেটাই ভাবছে। সবাই খাওয়া দাওয়া শেষ করে নিজের মতো চলে যায় রুমে। প্রহর আর অয়ন সোফায় বসে আছে। আমি তাদের দুজনের জন্য কফি নিয়ে আসি।

অয়ন,,,,, প্রহর আলোকে ফোন দে তো, জিজ্ঞেস কর সব কিছু ঠিক আছে নাকি।

প্রহর আলোকে ফোন দেয়।কিছু ক্ষন পরে আলো ফোন ধরে,, হ্যালো,, কে বলছেন।

প্রহর,,,, আলো আমি প্রহর।

,,,জ্বী ভাইয়া বলেন।

,,,,সায়ন কেমন আছে।

,,,ভাই য়া ও তো আবার আগের মতো পাগলামো শুরু করে দিয়েছে, আমি ওকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়েছি।

প্রহর একটু আস্তে বলে,,,এ কথা অয়নকে বলবে না পিল্জ।

,,,,ঠিক আছে।

,,,,একটু পরে আমি আসছি।

,,,,না ভাইয়া লাগবে না, একটু পরেই সায়ন ঘুমিয়ে যাবে। আপনার আসার কোনো দরকার নেয়,আমি সামলে নিবো।

,,,হুমম তাহলে ঠিক আছে,, কিন্তু বেশি প্রবলেম হলে বলবে কিন্তু।

,,,হুহহ ওকে।

অয়ন,,,,,প্রহর এতো আস্তে আস্তে কি বলছিস আমার কাছে ফোনটা দে।

অয়ন প্রহর থেকে ফোনটা নিয়ে জিজ্ঞেস করে,,, হ্যালো আমি অয়ন,সায়ন কেমন আছে, ও কোনো প্রবলেম করছে না তো। করলে বলো আমি এখনি আসছি।

,,,না স্যার আসার দরকার নেয়, সায়ন তেমন কিছু করেনি। ঘুমের ইনজেকশন দিয়েছি একটু পরেই ঘুমিয়ে যাবে।

,,,,আচ্ছা,, সায়ন কোনো ধরনের পাগলামো করলে আমাকে অবশ্য জানাবে আমি সাথে সাথে চলে আসবো।

,,,,,, ওকে স্যার।

,,,,এতো রাত হয়েছে তুমি এখনো বাসায় যাওনি।

,,,,সায়ন ঘুমালেই আমি চলে যাবো, তাছাড়া আমার বাসা তো বেশি দূরে না।

,,,,ঠিক আছে,, তবে বেশি লেইট করবে না।

,,,,হুমম ঠিক আছে।

অয়ন ফোন রেখে দিয়ে সবাইকে বলে,,,আমি ভাবছি সায়নকে বাসায় নিয়ে আসবো। ওর কাছে সব সময় কাওকে না কাওকে দরকার।

প্রহর,,,,,,কিন্তু সায়ন যদি আবার মারুর কোনো ক্ষতি করতে চাই তখন।

আমি সোফায় বসতে বসতে বলি,,,, তাহলে তো আগেই করে দিতো। সায়ন আমার কোনো ক্ষতি করবে না। ওকে এখানে আনলে আরো তাড়াতাড়ি সুস্থ হবে।

প্রহর,,,,হুমম,,তোদের যেটা ভালো মনে হয়। আচ্ছা ঘুমাতে যা, এমনি অনেক লেইট হয়ে গেছে। তাছাড়া মারুর এখন তাড়াতাড়ি ঘুমানো উচিত।

অয়ন,,,হুমম,,ঠিক। চলো নীর ঘুমাবে।

অয়ন আর আমি রুমে চলে আসি প্রহর তার রুমে চলে যায়। অয়ন শুয়ে মন খারাপ করে আছে। আমি সোজা গিয়ে অয়নকে জরিয়ে ধরে শুয়ে পড়ি। এক কথায় বলতে নিলে অয়নের উপরে উঠে পড়ি।

অয়ন ও আমি তার দুই বাহু ডরে বেঁধে বলে,,,,কি হয়েছে।

,,,,আমার এভাবে শুতে ইচ্ছে করছে, তোমার কোনো সমস্যা।

,,,,, না, কোনো সমস্যায় নেয়।

বলে আমার পেটে এক হাত রেখে বলে,,,তোমার মামনি আগের থেকে অনেক দুষ্টু হয়ে গেছে।

,,,,, হুমম,, আর বাবা তো দুধে ধোঁয়া তুলশী পাতা।

,,,, আচ্ছা তোমার কি চাই, এতো বড় খুশি দিলে আমাকে।

,,,,,, আমার আর তোমার অতীতের কাহিনী শুনানো লাগবে। আমার তো কিছুই মনে নেয়।

,,,,হুমম অবশ্যই শুনাবো, কিন্তু আজ না, আজ আপনি ঘুমান, আমি কাল আপনাকে বলবো সব ওকে।

,,,,হুমম,, তাহলে ঠিক আছে।

সকাল সকাল সায়ন তার চোখ খুলে দেখে আর বাবা তার পাশে বসা। চোখে পানি টলমল করছে। যেকোনো মূহুর্তে পানি নিচে পড়ে যেতে পারে।

সায়ন উঠে বেডের সাথে হালকা হেলান দিয়ে অর্ধেক শুয়া অবস্থায় আস্তে করে বলে,,,,বাবা তুমি এতো সকাল সকাল।

সায়নের বাবা সায়নের হাত ধরে বলে,,,তোর কাছে মাফ চাওয়ারো আমার কাছে কোনো উপায় নেয়। কোন মুখে মাফ চাবো তোর কাছে।

,,,,, বাবা কি হয়েছে, তুমি কেনো আমার কাছে মাফ চাইবে।

,,,,এসব কিছু আমার কারনেই হয়েছে, এর জন্য আমি দায়ী। শুধু মাত্র আমি। আর আমার দোষের কারনে তার শাস্তি ভোগ করছে আমার দুই ছেলে আর বৌ মা।

,,,,বাবা তুমি কি বলছো আমি বুঝছি না।

,,,,সায়ন,, দিয়ার মৃত্যুতে অয়নের কোনো দোষ নেয়, সব দোষ আমার।

সায়ন উঠে বসে গিয়ে বলে,,,,,মানেহহ।

[খুব তাড়াতাড়ি গল্পটা শেষ করে দিবো]
#আগুনের_তৃষ্ণা
#Maishara_Jahan
Part………..24

,,,,সায়ন,, দিয়ার মৃত্যুতে অয়নের কোনো দোষ নেয়, সব দোষ আমার।

সায়ন উঠে বসে গিয়ে বলে,,,,,মানেহহ।

সায়নের বাবা মাথা নিচু করে বলে,,, ঐদিন যখন দিয়া বলে সে কোনো দিন মা হতে পারবে না। সেটা আমি মেনে নিতে পারিনি। তাই পার্টিতে তাকে টাকা দিয়ে চলে যেতে বলি কিন্তু সে রাজি হয় না। তোকেও তো কতো ভবে বুঝানোর চেষ্টা করলাম। তারপর ভাবলাম দিয়াকে ভয় দেখিয়ে চলে যেতে বলবো।

ঐদিন আমি বন্ধুক বের করে এমনি দিয়ার সামনে ধরে হুমকি দিচ্ছিলাম, যেনো সে তোমার জীবন থেকে সরে যায়। তখনি দিয়া ভয়ে দৌড় দিতে নেয় আমিও তাকে আটকাতে যায়, দিয়া আমাকে ধাক্কা দিতে নেয় আর ভুল করে আমার হাত দিয়ে বন্ধুক থেকে গুলি বের হয়ে যায়।

দিয়া সাথে সাথে মারা যায়। অয়ন দৌড়িয়ে এসে আমার হাত থেকে বন্ধুকটা নিয়ে দিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে৷ সে নিজেও বুঝে না কি হচ্ছে। একটু পরেই তুই এসে চিৎকার করতে থাকিস। অয়নের হাতে বন্ধুক দেখে ওকে দোষারোপ করতে থাকিস। আমার অবস্থা তখন খারাপ ছিলো, আমি বুঝতেই পারছিলাম না কি থেকে কি হয়ে গেলো।অয়ন আমার দিকে তাকিয়ে, আমার অবস্থা থেকে সব দোষ নিজের ঘাড়ে নিয়ে নেয়।

আমি কিছু বলতে পারিনি । আমি জানি অয়ন যতোই আমার ওপরে রেগে থাকুক না কেনো সে চাই না তোর নজরে আমি ছোট হয়ে যায়,তুই আমাকে অপরাধী ভাবিস সেটা অয়ন চাই না। তাই সব অপরাধ নিজের উপরে নিয়ে নেয়। পিল্জ আমাকে মাফ করে দে।

বলে তার বাবা কান্না করতে থাকে, অয়ন দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সব শুনছে।অয়নের চোখেও পানি চলে আসে। সায়ন পানি ভরা চোখে সামনে তাকিয়ে দেখে অয়ন দাঁড়িয়ে আছে।সায়ন বেড থেকে নেমে অয়নকে জরিয়ে ধরে কান্না করতে থাকে। আর বার বার সরি বলতে থাকে।

অয়ন সায়নের পিঠে হাত দিয়ে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করে, সায়নকে বেডে বসিয়ে নিজেও সায়নের পাশে বসে।তাদের বাবা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। কিছু ক্ষন তিন জনে চুপচাপ বসে থাকে।

অয়ন তার বাবার হাতের হাত রেখে বলে,,,, যা কিছু হয়েছে এতে করো কোনো দোষ ছিলো না। এমন পরিস্থিতি এসে গেছে যে কাকে কাওকেই দোষারোপ করা যাচ্ছে না। আমরা সবাই পরিস্থিতির শিকার। আমরা সবাই অনেক দুঃখ পেয়েছি এখন দুঃখকে সরিয়ে খুশি থাকার পালা। সায়ন পিল্জ বাবাকে মাফ করে দে। মানছি ভুল ওনার ও ছিলো কিন্তু যা হয়েছে ভুলে হয়ে গেছে।

সায়ন কিছু বলে না, শুধু মাথা নাড়িয়ে অয়নকে জরিয়ে ধরে। তাদের বাবা চোখে পানি নিয়ে বলে,,,জানি তোর কাছে মাফ চাওয়ার ও আমার মুখ নেয়। নিজের নজরেই নিচে নেমে গেছি, তাও মাফ চাইছি। তোর কিছু হয়ে গেলে আমি কি নিয়ে বাঁচবো। নিজেকে কোনো দিন মাফ করতে পারবো না।

সায়ন অয়নকে ছেড়ে তার বাবাকে জরিয়ে ধরে কান্না করতে থাকে। তার বাবাও সায়নকে জরিয়ে ধরে কান্না করতে থাকে। তাদের বাবা অয়নের দিকে তাকায় তকন অয়ন ও দুজনকে জরিয়ে ধরে।

এমন সময় আলো সোজা সায়ন বলে ভিতরে ডুকে, ডুকতেই অভাক হয়ে যায়। ওরা তিন জন তিনজনকে ছেড়ে দেয়। তিন জনের চোখেই পানি। আলো একটু নার্ভাস হয়ে বলে,,,, আমি একটু পরে আসছি।

বলে যেতে নেয়, তখনি সায়নের বাবা উঠে বলে,,, ডক্টর আলো আপনাকে যেতে হবে না। আপনি আমার ছেলের ভালোভাবে চিকিৎসা করেন, আমি আসছি।

আলো,,,,ওকে আংকেল।

তিনজনি তাদের চোখের পানি মুছে ফেলে। অয়ন দাঁড়িয়ে বলে,,,আমি আপনাকে বাহিরে পর্যন্ত ছেড়ে দিয়ে আসি।

অয়ন আর তার বাবা বাহিরে যায়। সায়ন ও ঠিক করে বসে। আমি সায়নের পেশার চেক করতে করতে বললাম,,,, যায় হয়ে যাক মাথায় কোনো চাপ নিবে না। সব কিছুর সমাধান আছে।

সায়ন মুচকি হেঁসে বললো,,,,, আর চিন্তা করতে হবে না আমার। মিস্ আলো আমি সুস্থ হতে চাই। যদিও আমার মন বার বার বলছে,, তুই দিয়াকে ছাড়া বাঁচবি না,, তাও আমি সুস্থ হতে চাই।

আমি খুশিতে লাফিয়ে বললাম,,,,সত্যি,, ওয়াও এটা তো অনেক খুশির খবার। আর দিয়ার কথা বার বার আপনার মন না মাথা বলছে, যেটাকে আপনার কন্ট্রোল করতে হবে।

,,,,,,,হুমমম। পাশে থাকবে তো আমার।

,,,,আপনি না চাইলেও সব সময় আপনার পাশে থাকবো। এই আলো অন্ধকারেও আপনার সাথে থাকবে।

সায়ন হালকা হাসে। তখনি অয়ন আসে। এসে সায়নকে বলে,,, তোকে আজকে বাড়ি নিয়ে যাবো। সেখানেই তোর চিকিৎসা করাবো।

সায়ন অন্য দিকে ফিরে বলে,,,,আমি বাড়ি যাবো না।

অয়ন,,,,কেনো।

সায়ন,,,,আমার জন্য ভাবীর বিপদ হতে পারে।

অয়ন,,, এখন এমন কিছুই হবে না, তুই তো সব কিছু জেনেই গেছিস।

সায়ন,,,, আমি ভাবীর সামনে গিয়ে দাঁড়াবো কিভাবে। ওনাকে মারার জন্য সব প্লেন আমিই করেছি। কতো বার মারার চেষ্টা করেছি। ভাবীর সামনে দাঁড়ানোর ক্ষমতা আমার নেয়।

তখনি মারু আসে এসে সায়নের সামনে দাঁড়ায়। সায়ন আমাকে দেখে অভাক হয়ে যায়। নিজের মুখ ঘুরিয়ে নেয়। আমি সায়নের সামনে দাঁড়িয়ে বলি,,,, আমি জানতাম তুমি আসতে চাইবে না, তাই আমিও সাথে এসেছি তোমাকে নেওয়ার জন্য।

সায়ন নিচের দিকে তাকিয়ে বলে,,,, আমি কোথাও যাবো না।

আমি বেডে সায়নের পাশে বসে বলি,,,,,, কেনো আসবে না, আর আমার জন্য গিল্টি ফিল করার কোনো দরকার নেয়। তুমি আমার ভায়ের মতো। আর ভাই একটা ভুল করলে মাফ করায় যায়৷ তাছাড়া তুমি তো কিছু ইচ্ছে করে করো নি। আর আমি জানি সায়ন কোনো দিন ইচ্ছে করে কারো খারাপ করতে পারে না। আর তুমি সবসময় আমাকে বাঁচিয়েছো। নিজের অজান্তেই আমার ক্ষতি করার চেষ্টা করলেও নিজের ইচ্ছায় সজ্ঞানে আবার আমাকে বাঁচিয়েছো।

তুমি আমাদের সাথে বাড়ি যাবে বেস এটাই শেষ কথা।তোমাকে ছাড়া বাড়িটা কেমন ফাঁকা ফাকা লাগে। মনে হয় বাড়িতে জান নেয়।

সায়ন,,,,কিন্তু ভাবী।

,,,কোনো কিন্তু নয়,, বাড়ি ফিরে যাবে মানে যাবে। এখন যদি তুমি আমার কথা না শুনো তাহলে আমি কষ্ট পাবো। আর এসময় আমার কষ্ট পাওয়া ঠিক না। তাহলে বেবির সমস্যা হতে পারে ।

সায়ন,,,,,ভাবী এসব কথা কেও বলে,, বেবির কিছু হবে না।

,,,তাহলে তুমি যাবে।

সায়ন একটু ভেবে বলে,,,হুমম যাবো।

তখন সবাই খুশি হয়ে যায়। তখন অয়ন বলে,, আমি তোর জন্য আমেরিকার একজন বেস্ট সাইকোলজি ডক্টর এর ব্যাবস্থ করেছি, সেই তোর চিকিৎসা করবে।

এটা শুনে আলোর মুখটা মলিন হয়ে যায়। সায়ন আলোর দিকে তাকিয়ে বলে,,,,আলোও কিন্তু অনেক ভালো ডক্টর। তাই আমার মনে হয় আলো আমার চিকিৎসা করলে ভালো হয়।

অয়ন,,,,,হুমম,, আলোও ডক্টরের সাথে থাকবে। আলো প্রতিদিন আমার বাসায় আসতে কোনো প্রবলেম নেয় তো তোমার।

আলো এক লাফে বলে উঠে,,,,, না কোনো প্রবলেম নেয়।

অয়ন আর আমি আলোর দিকে চোখ দুটো বড় করে তাকায়। তখনি আলো তাড়াতাড়ি করে বলে উঠে,,,, না মানে এটা তো আমার কর্তব্য।

আমি আর অয়ন হাল্কা হেঁসে বলি,,,, হুমম

কিছু ক্ষন পরে আমরা সায়নকে নিয়ে বাসায় পৌঁছে যায়। সায়ন রুমে শুয়ে রেস্ট করতে থাকে। মা সায়নের পাশে বসে আছে।

আমি আর অয়ন বসে আছি। অয়ন ফ্রেশ হয়ে জিজ্ঞেস করে,,,,,প্রহর কোথায় ওকে দেখছি না যে।

,,,,, প্রহর তো তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গেলো, বলছিলো কি যেনো কাজ আছে।

,,,হুমম আজ কাল ওর কাজটা একটু বেশিই থাকে।

,,,,,তোমার এতে কি প্রবলেম।

,,,নাহহ আমার আর কি সমস্যা থাকতে পারে।
,,,,,,,,
প্রহর স্নেহার বাসায় যায়। সেখানে তাকে জামাতার মতো ব্যবহার করা যায়। সে স্নেহার রুমে যায়, গিয়ে দেখে স্নেহা শুয়ে আছে৷ ওর মাথায় জ্বর পট্টি দেওয়া। স্নেহা প্রহরকে দেখে উঠতে নেয়, প্রহর উঠতে মানা করে।

প্রহর আমার পাশে বসে বলে,,,,জ্বর কিভাবে বাঁধালে।

যতো টুকু জ্বর উঠেছে তার থেকে বেশি ভাব নিয়ে বলে,,,আমি কি জানি,, আমি কি ইচ্ছে করে করেছি নাকি।

প্রহর স্নেহার কপাল থেকে পট্টিটা সরিয়ে জাত লাগিয়ে চেক করে বলে,,,তোমার তো দেখে অনেক জ্বর,, আমি ডক্টরকে কল করছি।

,,,, ডক্টর এসে দেখে গেছে আর ঔষধ ও দিয়ে গেছে, বলেছে তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে আমি আর বেশি দিন বাঁচবো না।

স্নেহার অবস্থা আর কান্না কান্না ভাব দেখে প্রহর স্নেহার হাত ধরে বলে,,,,, এমন কিছু হবে না। এসব তোমার মনের ভুল ইসটুপিড। জ্বর হলে এমন মনে হয়। আর এটা তো সাধারণ একটা জ্বর,তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যাবে।

স্নেহা রোগীদের মতো করে বলে,,,,অনেক জ্বালাতন করেছি আপনাকে, পারলে মাফ করে দিয়েন।

,,,,,,,স্নেহা এবার একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে। চুপচাপ শুয়ে থাকো, দেখবে এমনি ঠিক হয়ে যাবে।

,,,,,আমি আর ঠিক হবো না, আমি নিশ্চিত মরে যাবো।

,,,, দূররর তোমার সাথে কথা বলাটাই ভুল, আমি চলে গেলাম।

বলে প্রহর যেতে নেয় স্নেহা হাত ধরে টান দেয়। প্রহর তাল সামলাতে না পেরে স্নেহার উপরে গিয়ে পড়ে যেতে নেয় কিন্তু প্রহর তার দুহাত স্নেহার দুপাশে বিছানায় ধরে ফেলার কারনে স্নেহার গায়ে পড়ে যায়নি কিন্তু স্নেহার অনেক কাছে চলে আসে।

দুজন দু’জনের দিকে তাকিয়ে আছে। প্রহর উঠে যেতে নিলে স্নেহা তার দুই হাত প্রহরের ঘাড়ে রেখে তাকে আটকায়। প্রহর স্নেহার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,, কি করছো স্নেহা।

স্নেহা প্রহরের গালে কিস করে বলে,, আই লাভ ইউ প্রহর,, তোমাকে অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছি। তুমি কি আমাকে ভালোবাসবে।

প্রহর তাড়াতাড়ি উঠে পরে। নিজের গালে হাত দিয়ে স্নেহার দিকে তাকিয়ে চলে যায়।
,,,,,,
আমি,অয়ন, প্রহর, সায়ন নিচে বসে আছি। এমন সময় কেও একজন দরজার বেল বাঝায়৷ একজন মেইড এসে দরজা খুলে দেয়। দরজা খুলতেই রিয়ান জোরে আমার নাম নিয়ে ভিতরে আসে।

রিয়ান এসেই বলে,,,,মারু আমি এসে গেছি।

আমিও উঠে গিয়ে খুশিতে লাফিয়ে বলি,,,,তোর অপেক্ষাতেই ছিলাম।

অয়ন দাঁড়িয়ে তীক্ষ্ণ ভাবে তাকিয়ে বলে,,,, কেনো।

আমি রিয়ানের হাত থেকে প্যাকেটটা নিয়ে বলি,,,এর জন্য,, এতে আন্টির তৈরি করা আমের আচাড় আছে। আমার অনেক খেতে ইচ্ছে করছিলো, তাই রিয়ানকে বলেছি এনে দিতে।

প্রহর,,,,এতো ইচ্ছে করলে আমাদের বলতে পারতে। কিনে এনে দিতাম।

,,,আরে আন্টির হতের আচারের সাথে কোনো আচারের মিল হতেই পারে না। আমার অনেক ইচ্ছে করছিলো তাই বলেছি৷

অয়ন,,,হুমম

রিয়ান,,,,আরে তোমাদের প্রবলেমটা কি হুমম,,আমি এখানে এসেছি বলে৷ ঠিক আছে আমি চলে যাবো, চলে যাবো ২/৩ ঘন্টা পরে। কতো দিন হলো মারুর সাথে ঠিক করপ কথা হয় না।

আমি সোফায় দুপা উঠিয়ে বসে, আচারের ডিব্বাটা বের করে খেতে থাকি। আমার খাওয়া দেখে সায়ন আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কিছু ক্ষন পরে বলে,,,ভাবী আমাকেও একটু দাও।

আমি সায়নের দিকে ডিব্বাটা এগিয়ে দিলাম। সায়ন সেখান থেকে একটা খোসা নিলো। প্রহর সায়নের দিকে তাকিয়ে বলে,,,, তুইও কি প্রেগন্যান্ট নাকি।

সায়ন খেতে খেতে বলে,,,, কোন বইয়ে লিখা আছে আচার শুধু প্রেগন্যান্ট মেয়েদের জন্য।

চলবে,,,,,,,,

ভালো লাগলে লাইক, কমেন্ট করতে ভুলবেন না ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here