আফিম বড্ড নেশালো ০২-পর্ব ২২

#আফিম_বড্ড_নেশালো_০২
#লেখিকা_মাহযাবীন
#পর্বঃ২২

কোনো এক ঘোরের মাঝে বিলীন আফিম।নেই তার নিজের উপর বিন্দু মাত্র নিয়ন্ত্রণ।মন মস্তিষ্ক জুড়ে যেনো ঝর বইছে।মনে উৎপন্ন হওয়া কামনার নেশায় ক্রমশ উন্মাদ হয়ে যাচ্ছে সে।নিজের প্রেয়সীকে আদরের চাদরে মুড়িয়ে নেওয়ার মনোবাসনা তার।তাইতো পেটে ঠোঁট ছুঁয়ানোর পর এখন ধীরে ধীরে স্পর্শ আরো গাঢ় হচ্ছে তার।
মেঝে হতে বিছানায় উঠে বসে আফিম।নাফিয়ার পেটে আলতো হাতে স্পর্শ আঁকতে আঁকতে মেয়েটির দিকে ঝুঁকে তার গলায় মুখ ডুবায় সে।গলায় আস্তে আস্তে একের পর এক চুমুর বর্ষণ করতেই নড়েচড়ে উঠে নাফিয়া।ধীরে ধীরে তন্দ্রা ঘোর কাটছে তার।গভীর ঘুম হালকা হয়ে এসেছে।ফিরে পেয়েছে সে নিজের বোধশক্তি।পেটে ও গলায় কারো স্পর্শ অনুভব হওয়ায় নড়েচড়ে উঠে ধীরে ধীরে নিজের চোখ মেলতে আরম্ভ করে মেয়েটা।
এদিকে নাফিয়ার তন্দ্রা ঘোর কেটেছে বুঝতে পেরে সাথে সাথে নিজের চোখ বুজে নেয় আফিম।নাফিয়ার গলায় মুখ গুঁজে ঘুমের ভান ধরে সে।
ধীরে ধীরে চোখ মেলে নিজের সামনে বরাবর তাকিয়ে দেখতেই ব্রুদ্বয়ের মাঝে ভাজ পড়ে নাফিয়ার।বুঝতে পারে সে তার কক্ষে নেই।পরক্ষণেই মনে পড়ে অতীতের কাহিনি বলতে বলতে আফিমের বুকেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো সে।কথাখানা মনে পড়তেই নিজের চারপাশে চোখ বুলোতে উদ্ভূত হয় সে।চোখ ঘুড়িয়ে নিজের বাম দিকে তাকাতেই চোখ চড়কগাছ।আফিম তার গলায় মুখ গুঁজে শুয়ে আছে।সেই সাথে ছেলেটার বাম হাত তার উন্মুক্ত পেটের উপর রাখা।মুহুর্তেই চোখ-মুখে লাল আভা ফুটে ওঠে নাফিয়ার।লাজে সাথে সাথে নিজের চোখমুখ খিঁচে বন্ধ করে নেয় সে।হৃৎপিন্ডে যেনো ঢোল বাজতে আরম্ভ করেছে তার।জোরে ক’বার নিঃশ্বাস নিজের মাঝে টেনে নিয়ে ধীরে ধীরে আফিমের হাত নিজের পেটের উপর থেকে সরায় নাফিয়া।অতঃপর আফিমের থেকে একটু সরে এসে উঠে বসে সে।এবার যেনো একটু স্বস্তি মিললো।স্বস্তির নিঃশ্বাস নিজের মাঝে টেনে নিয়ে সে তাকায় আফিমের দিকে।
তাকাতেই ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠে নাফিয়ার।মনে মনে বলে ওঠে,
“উফ!মানুষটা এমনিও সুন্দর আর ঘুমালে দ্বিগুণ সুন্দর লাগে।উম না,দ্বিগুণ না বরং ইনফিনিটি গুণ সুন্দর লাগে।”
কথাখানা বলেই আফিমের দিকে ঝুঁকে আফিমের খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয় মেয়েটা।গালে ঠোঁট ছুঁয়ানোর পর কপালেও ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয় সে।অতঃপর আফিমের থেকে সরে আসে।
পাশ থেকে নিজের ওড়না টা নিয়ে গায়ে জড়াতে জড়াতে বিছনা থেকে উঠার চেষ্টা করে নাফিয়া।উদ্দেশ্য নিজের কক্ষে গিয়ে ঘুমোনো।কিন্তু সে উদ্দেশ্য আর সফল হওয়ার নয়।নাফিয়া বিছনা থেকে নামার পূর্বেই এক হেঁচকা টানে আফিম তাকে নিজের কাছে টেনে নেয়।দু’হাতের বন্ধনে আবদ্ধ করে চোখ বুজে রেখেই বলে ওঠে,
-Be my pillow Miss. Sheikh, you are so soft!

আফিমের কান্ডে হতবাক নাফিয়া।বড়বড় চোখ করে চেয়ে আছে সে ছেলেটার মুখ পানে।একটু আগেও যে ঘুম ছিলো সে হুট করে জেগে গেলো কি করে?মনে প্রশ্ন উদয় হতেই আফিমের বাহুবন্ধনী হতে নিজেকে ছাড়ানোর প্রয়াস করতে করতে নাফিয়া বলে ওঠে,
-আপনি না ঘুম ছিলেন?
আফিম নিজের চোখজোড়া বুজে রেখেই বেপরোয়া কন্ঠে বলে ওঠে,
-কি জানি!
-মানে?ঘুম ছিলেন না?
এবার চোখমুখে বিরক্তি ভাব ফুটিয়ে তোলে আফিম।বিরক্ত কন্ঠে বলে ওঠে,
-ঘুমোতে দেও মিস.শেখ।
কথাখানা বলে নাফিয়াকে নিজের আরো কাছে টেনে নেয় সে।মেয়েটার কানের কাছে মৃদু নাক ঘষে সেভাবেই স্থির শুয়ে রয় আফিম।এদিকে আফিমের কাজে শিহরিত হচ্ছে নাফিয়া।ছেলেটার গরম নিঃশ্বাস কানের কাছে আছড়ে পরছে আর তার মাঝের শিহরণ বাড়িয়ে তুলছে।
নাফিয়া কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে ওঠে,
-যেতে দিন আফিম।
-উহু।
-আমি আপনার বউ নই।এগুলো অনুচিত……
কথাখানা বলা ঠিকমতো শেষ হবার আগেই নাফিয়ার ঠোঁটের কোণে চুমু খায় আফিম।শক্ত কন্ঠে বলে ওঠে,
-আর একটা শব্দ করলে ভয়ংকর কিছু হবে মিস.শেখ।সো চুপচাপ ঘুমাও নাহয় যদি রোম্যান্স করতে চাও তাইলে বলতে পারো আই ডোন্ট হ্যাভ এনি প্রবলেম।
নাফিয়ার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে কথাগুলো বলে আফিম।শেষের কথাটুকু বলে বাঁকা হাসে সে।আফিমের দুষ্টু চাহনি,ঠোঁটের বাঁকা হাসি এবং উচ্চারিত সাংঘাতিক বাক্যদ্বয়ে নাফিয়া একদম চুপসে গেলো।সাথে সাথে নিজের চোখজোড়া বুজে নিলো সে।এই মুহুর্তে ঘুমানোই উত্তম।
নাফিয়ার কান্ডে মৃদু হাসে আফিম।মেয়েটাকে নিজের বুকে টেনে নিয়ে চোখ বুজে নেয় সে।এই রাত টা বেশ বিশেষ ঠেকছে তার।মন উৎফুল্ল হয়ে আছে।

!!
নিজের ক্যাবিনে বসে আছে রিয়াদ।সদাসর্বদার ন্যায় কাজে থাকে তার প্রখর মনোযোগ।ছোটবেলা দিয়ে ফাঁকিবাজ হলেও আফিমের সাথে থেকে আফিমের মতোই পরিশ্রমী ও নিষ্ঠাবান পুরুষে পরিণত হয়েছে সে।নিজের কাজ নিখুঁতভাবে করাই যেনো তার একমাত্র লক্ষ্য।
রিয়াদের মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটে কোনো এক মেয়েলী কন্ঠ কানে আসায়।
“মে আই কাম ইন স্যার?”
ফাইল খানা বন্ধ করে রিয়াদ বলে ওঠে,
-আসুন।
অনুমতি পেয়ে একজন যুবতী ক্যাবিনে প্রবেশ করে।রিয়াদ দেখা পায় এক কৃষ্ণবর্ণ রমণীর।পড়নে ঢিলেঢালা ফতুয়া,স্কার্ট ও গলায় ওড়না পেছানো।কাঁধ অব্দি লম্বা খোলা চুলগুলো সামনের দিক থেকে ক্লিপ দিয়ে আঁটকে রাখা।ঠোঁটে লেগে আছে তার আলতো হাসি।সাজসজ্জা বলতে চোখে লেপ্টানো কাজল আর ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক।
মেয়েটি রিয়াদের টেবিলের কাছে এসে ঠোঁটে হাসি টেনে বলে ওঠে,
-আসসালামু আলাইকুম স্যার,আমি কুসুম।জবের জন্যে এপ্লাই করেছিলাম।আজ সকালে আমাকে জানানো হয়েছে যে আমাকে জবের জন্য সিলেক্ট করা হয়েছে।
-জ্বি মিস.কুসুম।আপনাকে সিলেক্ট করা হয়েছে কিন্তু প্রথম মাসে আপনার পারফরম্যান্স ভালো না হলে আবার ফায়ারড ও করা হবে।সো বুঝতেই পারছেন কাজে কোনো প্রকার অবহেলা গ্রহণযোগ্য নয়।
কুসুম ঠোঁটে হাসি টেনেই বলে ওঠে,
-জ্বি স্যার।
-ঠিক আছে আজই মাসের প্রথম দিন আর আপনার জয়েনিং ডে সো নিজের কাজগুলো বুঝে নিন।কাল থেকে নাহয় ভালোভাবে কাজ করবেন।
-প্রবলেম নেই স্যার,আমি আজ থেকেই কাজ শুরু করতে পারবো।আমাকে জাস্ট রুলস এন্ড আদারস ইমপোর্টেন্ট থিংকস গুলো জানালেই হবে।
রিয়াদ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে কোনো একজন সিনিয়র স্টাফকে ডাকে নিজ ক্যাবিনে।উদ্দেশ্য, সে সিনিয়র স্টাফই গাইড করবে মিস.কুসুমকে।
প্রায় ২ মিনিটের মাঝে ক্যাবিনে উপস্থিত হয় সিনিয়র স্টাফ মীরা।রিয়াদ তাকে কুসুমের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে তাকে দায়িত্ব দেয় কুসুমকে গাইড করবার জন্যে।মীরাও খুশি মনে এ দায়িত্ব গ্রহণ করে।অতঃপর মীরা ও কুসুম তার ক্যাবিন হতে বেরিয়ে যেতেই রিয়াদ মনে মনে বলে ওঠে,
“এই মেয়েটার উপর বিশেষ নজর রাখতে হবে।দেখতে যতটা সাদাসিধা কথায় ততই দম্ভ ও নিজের প্রতি ওভার কনফিডেন্স।প্রথম দিন অফিসে অথচ বিন্দুমাত্র নার্ভাসনেস নেই।উম,মেয়েটা সুবিধার না।”

!!
আজ মাসের প্রথম দিন হওয়ায় আজ থেকে শুরু হবে নাফিয়ার শিক্ষকতা।অর্থাৎ আজ থেকে ৩ জন বাচ্চাকে পড়ানো শুরু করবে সে।বিকেল চারটা হতে ছয়টা অব্দি শিক্ষার্থীদের বাড়িতে গিয়ে পড়িয়ে আসবে।৩ জনের বাসা কাছাকাছি হওয়ায় একই সাথে তিনজনকে পড়াবে।মাসিক সম্মানি ঠিক করা হয়েছে ৩ হাজার টাকা।আর এ সব কিছুই ঠিক করেছে রিয়াদ।
‘রিয়াদ’ নামক ছেলেটাকেই আফিম সব থেকে বেশি বিশ্বাস করে।সেই সাথে ভালোও বাসে।তাই তো নিজের প্রেয়সীর যেসকল কাজে নিজে উপস্থিত থাকতে পারে না সে সমস্ত কাজের দায়িত্ব সে রিয়াদকে দেয়।আজ থেকে রিয়াদের নতুন দায়িত্ব নাফিয়ার সাথে যাওয়া,যতক্ষণ মেয়েটা পড়াবে ততক্ষণ গাড়িতে বসে তার অপেক্ষা করা এবং পড়ানো শেষ হলে সাবধানে তাকে নিয়ে বাড়ি ফেরা।
এতে অবশ্য আপত্তি নেই রিয়াদের।রিয়াদের জন্য আফিমই সব!নিজের পরিবারের থেকেও আফিমকে সে বেশি ভালোবাসে।আফিমের প্রতিটা আদেশ বিনা বাক্যে মাথা পেতে নেয় সে।তাই অফিসের কাজ হোক বা আফিমের ব্যক্তিগত কাজ সব টাই সে খুশি মনে করে।কিশোর বয়স থেকে যুবক বয়স অব্দি আফিমের সাথে সাথে থাকছে সে।জানে আফিম মুখে কখনো তাকে ‘ভালোবাসি’ বলেনি তবুও আফিম তাকে নিজের আপন ভাইয়ের মতোই ভালোবাসে।
তাদের মাঝের ভালোবাসাটা রক্তের নয় বরং মন থেকে মনের সম্পর্ক।আর এই মন বা আত্মার সম্পর্ক গুলো রক্তের সম্পর্কগুলোকেও হার মানিয়ে দেয় কিছু ক্ষেত্রে।

!!
প্রতিদিনের থেকে আজকের দিনটা সকাল থেকেই নতুন নতুন লাগছে নাফিয়ার।একে তো অপরিচিত বাচ্চাদের পড়াতে যাবে যা একদমই নতুন অভিজ্ঞতা তার জন্যে।তার উপর থেকে আফিমের সব নির্লজ্জের ন্যায় কান্ড তাকে লজ্জার সাগরে হাবুডুবু খাইয়ে চলছে।
যেমন আজ সকালে ঘুম ভাঙ্গতেই সে অনুভব করে আফিম তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে।ছেলেটা দু’হাতে আঁকড়ে ধরে রেখেছিলো তার কোমর।লজ্জায় লাল হবার পরেও নিজেকে সামলে নিয়ে উঠার চেষ্টা করেছিলো সে।কিন্তু আফিম তাকে ছাড়ার বদলে আরো শক্ত করে আঁকড়ে ধরে।তার কাঁধে নাক ঘষতে ঘষতে ঘুমু কন্ঠে বলে ওঠে,
-You smell so good Miss. Sheikh. It’s makes me crazy!

চলবে।

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here