আফিম বড্ড নেশালো ০২-পর্ব ৮

#আফিম_বড্ড_নেশালো_০২
#লেখিকা_মাহযাবীন
#পর্বঃ০৮

বৃষ্টি পরতে আরম্ভ করে দিয়েছে।পুরো শহর ভিজে একাকার।ভিজে গিয়েছে আফিমের গাড়িটাও।কিন্তু গাড়ির ভেতরে বসা মানব-মানবীর শরীরে এখনো অব্দি স্পর্শ লাগেনি বৃষ্টির পানি।মেয়েটা রেগে গাল ফুলিয়ে বসে আছে আর আফিম গাড়ি চালানোর ফাঁকে ফাঁকে সেই গোমড়া মুখে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে। মনে মনে হাসি পাচ্ছে তার কিন্তু চেহারায় তা প্রকাশ না করে চুপচাপ নিজের মতো করে ড্রাইভ করে চলছে সে।
হটাৎ এক জনমানব শূন্য প্রকৃতিতে ঘেরা রাস্তায় এসে গাড়ি থামায় আফিম।বড় এক পাকা রাস্তার দু’পাশেই গাছপালা দিয়ে পরিপূর্ণ।এমন আবহাওয়া ও নির্জন পরিবেশ যেকারো মনে মুগ্ধতা সৃষ্টি করতে সক্ষম। গাড়ি থামিয়ে আর সময় অপচয় করে না আফিম।সোজা গাড়ি থেকে বেরিয়ে নাফিয়ার কাছে গিয়ে গাড়ির দরজা খুলে দাঁড়ায় সে।নাফিয়া গাল ফুলিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।সে মোটও ইচ্ছুক না আফিমের দিকে তাকাতে।তাকাবেও বা কেনো?ছেলেটাকে তখন কত্তো অনুরোধ করলো সে তাকে একটু বৃষ্টিতে ভিজতে দিতে কিন্তু ছেলেটা তার কোনো কথাই শোনেনি।

নাফিয়া নিজের স্থান থেকে নিজ ইচ্ছায় নড়বে না তা বুঝে গিয়েছে আফিম।তাই সে কোনো বাক্য ব্যয় না করে নাফিয়ার এক হাত ধরে এক হেঁচকা টানে তাকে গাড়ির বাইরে নিয়ে আসে।আচমকা আফিমের হেঁচকা টানে তাল সামলাতে না পেরে আফিমের বুকে আছড়ে পড়ে নাফিয়া।আফিম দু’হাতে তার কোমর আঁকড়ে ধরে মৃদু স্বরে বলে ওঠে,
-See.[দেখো]
কথাটি বলে আশেপাশে চোখ বুলায় আফিম।আফিমের দৃষ্টি অনুসরণ করে নাফিয়াও তার আশেপাশে চোখ বুলোতেই ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠে তার।চোখমুখে বিস্ময় ও খুশির ছাপ ফেলে আফিমের থেকে একটু দূরে সরে দাঁড়িয়ে চারিদিকে ঘুরে ঘুরে দেখতে ব্যস্ত হয়ে পরে নাফিয়া।ঠান্ডা বাতাস,বৃষ্টির ঘ্রাণ,ভেজা গাছপালা,নির্জন রাস্তা সবটা মিলিয়ে একরাশ মুগ্ধতা কাজ করছে নাফিয়ার মাঝে।খুশিতে নাচতে মন চাইছে তার।
ঠোঁটে হাসি নিয়ে বৃষ্টির পানি নিয়ে খেলতে ব্যস্ত নাফিয়া।আর আফিম ব্যস্ত নাফিয়ার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকাতে।মেয়েটির বাচ্চামি,ভেজা মুখশ্রীতে মায়াবী হাসি,ভেজা চুল মুখে লেপ্টে থাকা সবটাই গভীর দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করছে আফিম।বেশ ক’বার নিষিদ্ধ জায়গায়ও চোখ গিয়েছে তার।কিন্তু নিজের উপর কঠিন নিষেধাজ্ঞা জারি করে দৃষ্টি সরিয়ে নিয়েছে সে।কিন্তু এতে খুব একটা লাভ হলো না।মনে নিষিদ্ধ সব কামনা উদয় হয়েই চলছে তার।ইচ্ছে করছে ভয়ংকর কান্ড ঘটিয়ে বসতে।কিন্তু বহু কষ্টে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখছে সে।
হটাৎ মেঘ গর্জে উঠতেই নাফিয়া দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে আফিমকে।চোখ খিঁচে বন্ধ করে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে আফিমের শার্ট।এ যেনো আগুনে ঘি ঢালার ন্যায় কান্ড ঘটে বসলো।এতোক্ষণ ধরে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখার সকল চেষ্টা বৃথা গেলো ছেলেটির।নাফিয়া তার বুকে এসে জায়গা করে নিতেই হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেলো আফিমের।নিজের সকল নিষেধাজ্ঞা ভুলে মনের নিষিদ্ধ কামনায় সাড়া দিতে বাধ্য হলো সে।এক হাতে নাফিয়ার কোমড় আঁকড়ে ধরে অন্য হাত দ্বারা মেয়েটির গাল আলতো করে স্পর্শ করে আফিম।গালে আফিমের হাতের স্পর্শ পেয়ে ছেলেটির বুক হতে মাথা তুলে তার চোখে চোখ রেখে দাঁড়ায় নাফিয়া।আফিম আলতো হাতে নাফিয়ার গালে হাত বুলোতে বুলোতেই অন্য হাত দ্বারা নাফিয়ার কোমড় শক্ত করে আঁকড়ে ধরে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। এতে মৃদু কেঁপে ওঠে নাফিয়া।ছেলেটা কি করতে চাইছে তা বোধগম্য হচ্ছে না তার তাই সে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে আফিমের চোখের দিকে।ছেলেটির চোখ স্বাভাবিক নয়।কেমন যেনো এক নেশালো চাহনিতে তাকিয়ে আছে আফিম।আফিমের চোখের ভাষা বুঝতে পারছে না নাফিয়া কিন্তু আফিমের এমন চাহনিতে লজ্জা লাগছে তার।ছেলেটার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকা টা দুষ্কর হয়ে উঠেছে তার জন্যে।তাই উপায় না পেয়ে নিজের চোখজোড়াই বুঁজে নেয় সে।
আফিম নাফিয়ার কপাল ও গালে এলোমেলো লেপ্টে থাকা চুল গুলোকে আলতো হাতে সরিয়ে দিয়ে তার ঠোঁটের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।ভিজে ঠোঁট মৃদু কাঁপছে।এ দৃশ্য যেনো আফিমকে আরো উন্মাদ করে দিলো।সে ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে শুরু করলো নাফিয়ার অধরদ্বয়ের স্বাদ গ্রহণের উদ্দেশ্যে।দু’টি হৃদয়ই সমানতালে কম্পিত হচ্ছে এ মুহূর্তে।কোনো এক অজানা ঘোরে বিলীন হয়ে আছে উভয়ই।নাফিয়া চোখ বুজা অবস্থাতেই অনুভব করতে পারছে আফিমের ওষ্ঠদ্বয় তার ওষ্ঠদ্বয়ের দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে।খুব কাছ থেকে একে-অপরকে অনুভব করছে তারা।এমন সময় আবারও মেঘ গর্জে উঠে।আবারও ভয়ে কেঁপে উঠে আফিমকে আঁকড়ে ধরে নাফিয়া।
ধ্যান ভাঙে আফিমের।কি করতে যাচ্ছিলো সে ভাবতেই নিজের উপর রাগ লাগছে তার।কত সুন্দর সুন্দর মেয়েদের দিকেও যেখানে চোখ যায়নি তার সেখানে একটা এমন পিচ্চি মেয়ের প্রতি এতো কেনো আকর্ষিত হচ্ছে সে?উত্তর খুঁজে পায় না আফিম।নিজের প্রতি নিজেই ভীষণ বিরক্ত সে।
মেঘের গর্জন থামতেই আফিমের থেকে কিছুটা দূরে সরে দাঁড়ায় নাফিয়া।নাফিয়া সরে দাঁড়াতেই আফিম বিরক্ত কন্ঠে বলে ওঠে,
-হয়েছে তোমার বৃষ্টি বিলাস?
নাফিয়া উত্তরে কিছু না বলে শুধু মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়।আফিমও আর কোনো বাক্য ব্যয় না করে গাড়ির ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসে পরে।আফিমকে অনুসরণ করে নাফিয়াও চুপচাপ গিয়ে তার পাশের সিটে গিয়ে বসে পড়ে।
আফিম গাড়ি স্টার্ট দিতেই যাবে ঠিক এমন সময়েই দু’জন একই সাথে হাঁচি দিয়ে ওঠে।সাথে সাথেই একে-অপরের দিকে তাকায় তারা।চোখাচোখি হতেই দ্রুত আবার চোখ সরিয়ে নেয়।কেমন যেনো এক অস্বস্তি কাজ করছে উভয়ের মাঝেই।

!!
সারাদিন পর রাতে সবে মাত্র বিছানায় শরীর এলিয়ে দিয়েছে নাফিয়া।একটু আগে আফিম ঘুমিয়ে পড়তেই আজকের ডিউটির সমাপ্তি ঘটে তার।অতঃপর নিজের কক্ষে এসে ফ্রেশ হয়ে ঘুমাবার উদ্দেশ্যে শুয়ে পরেছে সে।কিন্তু ঘুম আসার বদলে একরাশ লজ্জারা কোথা থেকে যেনো এসে ভিড় জমাচ্ছে তার মনে।চোখ বুঝতেই বার বার আফিমের সেই অদ্ভুত চাহনি চোখের সামনে ভেসে উঠছে তার।ঠোঁটে মৃদু লজ্জা মাখা হাসি ফুটে আছে নাফিয়ার।বিছানায় এপাশ ওপাশ করতে করতে বারংবার আফিমের তাকে কাছে টেনে নেওয়া,সেই চাহনি সব কিছু মনে করছে নাফিয়া।ভালো লাগছে তার আবার লজ্জাও লাগছে।হটাৎ ডান কাত হয়ে শুয়ে নাফিয়া নিজেই মনে মনে প্রশ্ন করে ওঠে,
“আফিম কি চুমু খেতে চাইছিলো আমায়?”
প্রশ্নটি করতেই আবারও লজ্জায় লাল হয়ে গেলো সে।পরমুহূর্তেই লজ্জাকে বিদায় দিয়ে নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে ওঠে,
“কেনো চুমু দিতে চেয়েছিলো?আমাকে পছন্দ করে আফিম?নাকি মাম্মি যে বলেছিলো বিপরীত লিঙ্গের মানুষরা একসাথে থাকলে তাদের মাঝে সাময়িক সময়ের আকর্ষণ কাজ করে সেই আকর্ষণ টাই কাজ করছে আফিমের মাঝে?”
প্রশ্নটি মাথায় আসতেই মন খারাপ হয়ে যায় নাফিয়ার।অজানা কারণেই আজকাল সারাদিন আফিমের সাথে থাকা,তার কাজ দেখে মুগ্ধ হওয়া এবং সেই সাথে কিছু কাজ শিখে নেওয়ার চেষ্টা করা,আফিমের তাকে জ্বালানো আবার আফিমের উপর রাগ করে প্রতিশোধ নেওয়া,তার খেয়াল রাখা সব কিছুই ভালো লাগতে শুরু করেছে নাফিয়ার।আজ আফিমের তার কাছে আসাটাও খারাপ লাগেনি নাফিয়ার।হয়তো সে আফিমকে পছন্দ করতে আরম্ভ করেছে।কিন্তু আফিম কি পছন্দ করে তাকে নাকি শুধুই সাময়িক আকর্ষণ মাত্র?
কথাটি মনে হতেই খারাপ লাগছে নাফিয়ার।আজ আফিম আর অফিসেও যায়নি।বৃষ্টি বিলাসের পর সোজা বাসায় এসেছিলো তারা।উভয়েই ফ্রেশ হয়ে প্রতিদিনের মতো নিজেদের কাজ করেছে কিন্তু আফিম একবারও আর তাকায়নি নাফিয়ার দিকে।প্রয়োজনের অতিরিক্ত কথাও বলেনি।কেমন গম্ভীর হয়ে ছিলো।এমনটার কারণ বোধগম্য হয় না নাফিয়ার।
এসব ভাবতে ভাবতেই নাফিয়ার মনে পড়ে তার মাম্মার বলা কথাগুলো।তখন নাফিয়া সবে ৭ম শ্রেণীতে উঠেছে।শৈশব ছেড়ে কিশোরী বয়সের মেয়ে তখন সে।উঠতি বয়স।লোকমুখে শোনা যায় ৯০% মানুষ জীবনের বড় ভুলটা এ বয়সেই করে থাকে।এ বয়স টা নাকি সাংঘাতিক খারাপ।এ সময়ে অভিভাবকদের নাকি বিশেষভাবে সচেতনতা অবলম্বন করতে হয় নিজ সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য।নাফিয়ার জন্যেও তার মাম্মির চিন্তের শেষ ছিলো না।একদিন রাতে সে নাফিয়া নিজের বুকে জড়িয়ে বলে ওঠে,
-নুফি,ধীরে ধীরে বড় হচ্ছিস মা তুই!এ বয়সে কিছু বিষয় সম্বন্ধে জেনে রাখা উচিৎ তোর।
-কি বিষয় মাম্মা?
-বিষয়ের নাম “প্রেম”।মনে রাখবি “প্রেম” আর “ভালোবাসা” এক জিনিস নয়।প্রেম নোংরা কিন্তু ভালোবাসাটা পবিত্র।ভালোবাসা হচ্ছে অসংখ্য অনুভূতির সংমিশ্রণ।আর প্রেম হচ্ছে একটা সম্পর্কের নাম।এখন তুই যে বয়সে আছিস এ বয়সে অনেকের প্রেমের প্রস্তাব পাবি।অনেকেই তোকে বলবে যে তারা তোকে ভালোবাসে কিন্তু আসলে তা ভালোবাসা নাহ।
একটু থেমে আবারও নুরানি বেগম বলে ওঠেন,
-একটা সুন্দর ফুল যখন গাছে থাকে তখন অনেকেই দেখবি ঐ ফুলটা ছুঁয়ে দেখতে চাইবে, অনেকে ফুলটা ছিঁড়ে ব্যবহার করতে চাইবে।ঠিক এভাবে অনেকের কামনার দৃষ্টি পড়বে ফুলটার উপর।তারপর ধর কেউ ফুলটা ছিঁড়ার অনুমতি পেলো তখন সে ফুলটা ছিঁড়ে নিয়ে যাবে।কিছুক্ষণ হাতে রেখে ছবিটবি তুলে প্রয়োজন শেষে ফুলটা ফেলে দিবে।ঠিক এমনই হয় মানুষের ক্ষেত্রেও।ধর ঐ ফুলটা তুই।আর যারা তোর উপর বাজে দৃষ্টি দিচ্ছে তারাই হচ্ছে তোকে প্রেমের প্রস্তাব দিচ্ছে।মানে ধর ফুল ছিঁড়ার অনুমতি চাচ্ছে।তুই অনুমতি দিয়ে দিলি অর্থাৎ প্রেমের প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলি।তখন কি হবে?তারা তোকে ব্যবহার করবে এবং প্রয়োজন শেষে ফেলে রেখে চলে যাবে।রয়ে যাবি তুই সেই ছিঁড়া ফুলটার ন্যায় রাস্তার পাশে কোনো এক কোণে ধুলোবালিতে।এখন তুই নিজেই ভাব ঐ ছিঁড়া ফুলটা দিয়ে কি কোনো কাজ হয়?ঐ ছিঁড়া ফুলটা তো মরে যায় তার কাহিনি শেষ। কিন্তু আমরা মানুষরা তো মরে মুক্তি লাভ করতে পারিনা।আমাদের বেঁচে থাকতে হয়।মৃত্যু সহজ কিন্তু বেঁচে থাকাটা অনেক কঠিন নুফি!ব্যবহৃত হওয়ায় তোর গায়ে-মনে যে একটা চিহৃ লেগে যাবে তা নিয়ে বেঁচে থাকা মৃত্যুর চেয়েও কয়েকশত গুন বেশি কঠিন হয়ে যাবে তোর জন্য।
কথাগুলো বলে থামেন নুরানি বেগম।নাফিয়া মনোযোগ দিয়ে শুনছে তার মাম্মার কথাগুলো।নাফিয়ার দিকে একবার তাকিয়ে নুরানি বেগম আবারও বলে ওঠেন,
-আর ভালোবাসাটা এমন হয়না নুফি(নাফিয়া)।ধর তুই একটি গাছের ফুল।যে ফুলটাকে ভালোবাসবে সে কখনো গাছের ফুলটাকে ছিঁড়বে না বরং গাছে পানি দিবে,গাছের যত্ন নিবে।ভালোবাসলে মানুষ অপর মানুষটিকে আগলে রাখে,যত্নে রাখে।
-কিন্তু মাম্মা বুঝবো কি করে কে ভালোবাসে আর কে ব্যবহার করতে চাইছে?
-বুঝা খুব কঠিন।এটা সময়ের সাথে সাথে বুঝা যায় কিন্তু এই বুঝতে বুঝতেই খুব বড়সড় ক্ষতি হয়ে যায় মানুষের।এই জন্যেই তোর এই বয়সে প্রেম হোক বা ভালোবাসা কোনোদিকেই পা বাড়াতে হয় না।কারণ, এ দুয়ের মাঝে পার্থক্য বুঝতে ভুল করা মানেই সারাজীবনের কান্না।
-ওওওওওও!তাও বলো না কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য।
-ভালোবাসা শব্দটা ছোট হলেও এর গভীরত্ব অনেক।এটা কোনো একটা অনুভূতি না।অসংখ্য, অব্যক্ত অনুভূতির মিশ্রণ।এই অনুভূতি টা প্রথম দেখা বা মাস দুই তিনেক কথা বলাতে তৈরি হয় না।এই অনুভূতি টা তৈরি হতে অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়।প্রথমে মানুষটার প্রতি আমরা আকর্ষিত হই তারপর তাদের ভালো লাগতে আরম্ভ করে আমাদের তারপর তাদের কাজে,ব্যাক্তিত্বে মুগ্ধ হতে আরম্ভ করি আমরা তারপর ধীরে ধীরে তারা আমাদের অভ্যাস থেকে আসক্তিতে পরিণত হয়ে যায়।আর এই আসক্তি টাই ভালোবাসা।
-ওওওওওওওও।
নাফিয়ার এভাবে বিজ্ঞদের মতো “ওওওও” বলায় হেসে ওঠেন নুরানি বেগম।ঠোঁটে হাসি টেনে বলে ওঠেন,
-হ্যাঁ।আর তোদের বয়সে মানুষ আরও একটি ভুল করে।তা হলো,আকর্ষণ বা ভালো লাগাকে তারা ভালোবাসা ভেবে নেয়।বিপরীত লিঙ্গের মানুষ একসাথে থাকলে তাদের মাঝে আকর্ষণ কাজ করবেই কিন্তু তা ভালোবাসা নয়।ভালোবাসা সারাজীবন থাকে,একদম এভারগ্রীন।কিন্তু এসব আকর্ষণ, ভালো লাগা সাময়িক সয়মের অনুভূতি।খবরদার এসব ফাও ফাঁদে পা দিবি না।
-ঠিক আছে মাম্মা দিবো না।
বলেই নুরানি বেগমকে জড়িয়ে ধরেছিলো নাফিয়া।আর মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছিলো যে সে তার বান্ধবীদের মতো ৫-১০ টা প্রেম করবে না বরং একটা মানুষকেই ভয়ংকর ভাবে ভালোবাসবে।একদম ভয়ংকর ভালোবাসা!
পুরোনো স্মৃতি মনে করা শেষ হতেই চোখের কোণ হতে চিকচিক করতে থাকা অশ্রু কণা মুছে নেয় নাফিয়া।তার মাম্মার কথা ভীষণ মনে পড়ছে।কেমন জানি শূন্য শূন্য লাগছে তার।মাম্মা কাছে থাকলে এখন নির্ঘাত জড়িয়ে ধরে নিজের সকল অনুভূতি বিনা দ্বিধায় নিজের মাম্মাকে বলে দিতো সে।চোখ বুজে নাফিয়া নিজে নিজেই বলে ওঠে,
“আই মিস ইউ মাম্মা বাট আই নিড উইংস টু ফ্লাই”

চলবে।

[]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here