আফিম বড্ড নেশালো ০২-পর্ব ৯

#আফিম_বড্ড_নেশালো_০২
#লেখিকা_মাহযাবীন
#পর্বঃ০৯

প্রতিদিনের পড়া জামাগুলোর থেকে আজকে পড়া জামাটার গলা একটু বড় হওয়ায় নাফিয়ার গলার সামান্য নিচে অবস্থিত লাল তিল টা উন্মুক্ত হয়ে আছে।এতোদিন সে তিলটি কাপড়ের আড়ালেই লুকিয়ে ছিলো।আজ সকাল সকাল নাফিয়া আফিমের জন্যে কফি বানিয়ে এনে কফির মগটি আফিমের দিকে এগিয়ে দেওয়ায় কফির মগটি হাতে নিতে নিতে হটাৎ সেই লাল তিলটার দিকে চোখ যায় আফিমের।লাল রঙা সে তিলটায় চোখ আঁটকে যায় তার।মনে আবারও নিষিদ্ধ চিন্তার আগমন ঘটতে আরম্ভ করে।কিন্তু তা প্রশ্রয় না দিয়ে সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নেয় আফিম।কফির মগ হাতে নিয়ে মোবাইলে ফেসবুকিং করাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে সে।
নাফিয়া তার সামনেই দাঁড়িয়ে ভাবছে তার আজকের কাজগুলো কি কি এবং কখন কোনটা করতে হবে।নাফিয়ার এসব ভাবার মাঝেই আফিম বলে ওঠে,
-Miss. Sheikh,do you remember what you promised me?[মিস.শেখ,আপনার কি মনে আছে আপনি আমায় কি কথা দিয়েছিলেন?]
কথাটি শুনতেই নাফিয়ার হৃদয় ধুক করে ওঠে।ভয়ে একটি ঢোক গিলে মিনমিন করে বলে ওঠে,
-যা বলবেন তাই করবো।
নাফিয়ার কথাটি শুনে ঠোঁটে বাঁকা হাসি টেনে আফিম বলে ওঠে,
-Good.
আফিমের বাঁকা হাসিটায় মুগ্ধ হতে ইচ্ছে করে নাফিয়ার।এই হাসিতে ঘায়েল হওয়া যায় বারংবার সহস্র বার।কিন্তু এই হাসি টা তার নিজের জন্যে মোটেও হিতকর নয় তা জানে সে।তাইতো এই হাসিটা মুগ্ধতা না এনে মনে ভয়ের উদয় ঘটায় তার।

নাফিয়ার ভীত ও চিন্তিত চেহারা হতে চোখ সরিয়ে মোবাইলে কিছু একটা করে আফিম।প্রায় সাথে সাথে একজন গৃহপরিচারিকা কালো একটি মাজারি সাইজের বক্স নিয়ে হাজির হয় আফিমের কক্ষে।হাতের বক্সটি নাফিয়ার সামনে বরাবর মেঝেতে রেখে সোজা কক্ষ ত্যাগ করে সে।নাফিয়া অসহায় চোখে একবার বক্স এবং একবার আফিমের দিকে তাকায়।আফিম ঠোঁটে রহস্যময় হাসি ফুটিয়ে নিজের বিছানা হতে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলে ওঠে,
-আজ তোমার বায়োলজি প্রাকটিকাল ক্লাস নেওয়া হবে মিস.শেখ।
নাফিয়া ব্রু কুঁচকে বলে ওঠে,
-আপনি কিভাবে জানেন আমি সাইন্সের স্টুডেন্ট?
-তুমি আর্টস অর কমার্সের হলেও আজ তোমার এ ক্লাস করতেই হতো।
কথাখানা বলে নাফিয়ার দিকে এগিয়ে আসে আফিম।নাফিয়ার সামনে বরাবর দাঁড়িয়ে বলে ওঠে,
– Open the box miss. Sheikh[বক্স টা খুলো মিস.শেখ]
আফিমের আদেশ অনুযায়ী বাক্সটার দিকে ঝুঁকে তা খুলতেই চমকে ওঠে নাফিয়া।ঘৃনায় সাথে সাথে কয়েক কদম পিছিয়ে যায় সে।নাফিয়াকে এভাবে পিছিয়ে যেতে দেখেই মৃদু হাসে আফিম।তার আজকের দেওয়া ডোজে মেয়েটা নির্ঘাত আবারও যুদ্ধ ঘোষণা করবে।আর এটাই চায় আফিম নাহয় এখনকার এই ভদ্র-সভ্য নাফিয়াকে দেখতে ভালো লাগছে না তার।
তেলাপোকা মোটেও ভয় পায় না নাফিয়া কিন্তু এর ধারেকাছে যাইতে ভীষণ ঘৃণা করে তার।সেখানে এতো এগুলো মরা তেলাপোকা তার সামনে হাজির করে রেখেছে আফিম।না জানি এখন ছেলেটা তাকে কি করতে বলবে!ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে নাফিয়ার।অসহায় চোখে আফিমের দিকে তাকিয়ে আছে সে।আফিম সে দৃষ্টি উপেক্ষা করে বলে ওঠে,
-মিস.শেখ,লেটস স্টার্ট ইউর বায়োলজি প্রাকটিকাল ক্লাস।
নাফিয়া করুন স্বরে আফিমকে বলে ওঠে,
-প্লিজ আফিম, এটা ছাড়া অন্য কিছু করি?
-তুমি তোমার কথা রাখছো না মিস.শেখ।তাহলে কি তুমি স্বীকার করে নিচ্ছো যে তুমি এতোটাই ভীতু যে নিজের দেওয়া কথা রাখার যোগ্যতা টুকু তোমার নেই?
আফিমের কথা গুলো সোজা গিয়ে নাফিয়ার আত্মসম্মানে আঘাত করলো।আর যাই হোক নিজের আত্মসম্মানের সাথে মোটেও সমঝোতা করতে রাজি নয় সে।সব ঘৃণা পাশে ফেলে দৃঢ় কন্ঠে নাফিয়া বলে ওঠে,
-কি করতে হবে?
তীর সঠিক নিশানায় গিয়ে লাগায় মৃদু হাসি ফুটে ওঠে আফিমের ঠোঁটে।সে স্বাভাবিক কন্ঠে বলে ওঠে,
-এখান থেকে একটি একটি করে তেলাপোকা নিয়ে কাটার বোর্ডে রাখবে।তারপর ছুরি দিয়ে ঐ তেলাপোকাগুলোর শরীরের মাঝ বরাবর কাটবে।সুন্দর করে ধরে সুন্দর করে কাটতে হবে।হালকার উপর ঝাপসা কাজ আবার আমার পছন্দ না।
কথাটি বলেই বিছানায় পায়ের উপর পা তুলে বসে পড়ে আফিম।মাথা কাত করে নাফিয়াকে চোখের ইশারায় কাজ শুরু করতে বলে সে।
আফিমের কথা শুনেই বমিবমি ভাব হচ্ছে নাফিয়ার।সে কি করে এই কাজ করবে!ভাবতে ভাবতে তীব্র অনিচ্ছা নিয়ে ধীর পায়ে তেলাপোকা গুলোর দিকে এগিয়ে যায় নাফিয়া।
চোখমুখ কুঁচকে দ্রুত গতিতে একটি তেলাপোকা হাতে নিয়ে তা কাটার বোর্ডে রেখে ছুরি দ্বারা দুভাগে ভাগ করে নেয় নাফিয়া।এভাবে দু-তিনটি করা শেষ হতেই আর ধৈর্য্যে কুলায় না তার।তড়িৎ গতিতে ওয়াশরুমের দিকে দৌড় লাগায় সে।
নাফিয়ার অবস্থা দেখে ভীষণ হাসি পায় আফিমের।মৃদু শব্দে হাসতেও আরম্ভ করে সে।
নাফিয়া ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে দেখে আফিম তখনো মিটিমিটি হাসছে।ব্যাস এবার নাফিয়ার রাগ ১০০× বেড়ে গেলো।তাকে প্যারা দিয়ে মজা নিচ্ছে ছেলেটা,ভাবা যায়!
রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে কাটা তেলাপোকা গুলোর দিকে চোখ যায় নাফিয়ার।সাথে সাথে মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি এসে হাজির।ঠোঁটে দুষ্টু হাসি ফুটিয়ে আফিমের দিকে এগিয়ে যায় নাফিয়া।নাফিয়ার দিকে চোখ পড়তেই একটু অবাক হয় আফিম।মেয়েটার ঠোঁটের হাসির কারণ বোধগম্য হয় না তার।ব্রুদ্বয়ের মাঝে মৃদু ভাজ ফেলে তাকিয়ে আছে সে নাফিয়ার দিকে।মেয়েটার মতলব বুঝার চেষ্টা করছে।
নাফিয়া ধীরে ধীরে আফিমের কাছে এগিয়ে এসেই দ্রুত গতিতে ফ্লোরে পড়ে থাকা কাটা সেই তেলাপোকা হাতে নিয়ে আফিমের টিশার্টের গলার কাছ থেকে তা টিশার্টের ভেতর ঢুকিয়ে দেয়।নাফিয়ার এমন কাজের জন্য বিন্দু পরিমাণ প্রস্তুত ছিলো না আফিম।আচমকা মেয়েটির এমন কাজে অবাক হলেও সাথে সাথে “ইয়ুক” বলে উঠে দাঁড়ায় আফিম।চোখমুখ কুঁচকে জামা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে শেষ পর্যন্ত নিজের টিশার্টই খুলে ফেলে সে।আফিমের অবস্থা দেখে শব্দ করেই হাসছে নাফিয়া।নিজের টিশার্ট টা মেঝেতে ফেলে রাগী দৃষ্টিতে নাফিয়ার দিকে তাকায় আফিম।আফিম তাকাতেই নাফিয়া মুখ ভেঙ্গচি দিয়ে সোজা দৌড়।আফিমও ছাড়ার পাত্র নয়।সেও নাফিয়ার পিছু পিছু দৌড়ে তাকে ধরবার উদ্দেশ্যে অগ্রসর হয়।
আফিমের পাশের কক্ষটাই দেওয়া হয়েছে নাফিয়াকে।মেয়েটা দৌড়ে গিয়ে নিজের কক্ষে প্রবেশ করে কক্ষের দরজা লাগাতে যায় কিন্তু তা আর পেড়ে ওঠে না।তার দরজা লাগাবার পূর্বেই আফিম দরজা ঠেলে কক্ষে প্রবেশ করে।
আফিম কক্ষে প্রবেশ করতেই ভয়ে জড়সড় হয়ে দাঁড়ায় নাফিয়া।এখন কি করবে সে ভাবতে ভাবতে এক পা দু পা করে পিছিয়ে যেতে আরম্ভ করে। আফিম কক্ষের দরজা বন্ধ করে দিয়ে নাফিয়ার দিকে ঘুরে তার চোখে চোখ রেখে দাঁড়ায়।ঠোঁটে বাঁকা হাসি টেনে বলে ওঠে,
-এখন কোথায় পালাবা,মিস.শেখ?
কথাটি বলেই আর দেরি করে না আফিম।এক হেঁচকা টানে নাফিয়ার কোমর আঁকড়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় সে।আফিমের খালি গায়ের সাথে লেপ্টে দাঁড়িয়ে আছে নাফিয়া।আফিমের এতোটা কাছে এসে হৃদয়ের ধুকপুকানি বাড়তে আরম্ভ করেছে তার।
নাফিয়ার এলোমেলো চুল কানের পেছনে গুঁজে দিতে দিতে আফিম বলে ওঠে,
-তোমার দুঃসাহসের কি শাস্তি দেওয়া যায়, মিস.শেখ?
নাফিয়া বাচ্চাদের মতো করে একটু হাসার চেষ্টা চালিয়ে বলে ওঠে,
-আমি তো ছোট মানুষ।বয়স এখনো ১৮ তে পড়েনি মানে একদম একটা শিশু আমি।শিশুদের শাস্তি দিতে হয় না।
নাফিয়ার কথা শুনে মৃদু হাসে আফিম।মনে মনে বলে ওঠে, “কি সাংঘাতিক সুবিধাবাদী মেয়ে!নিজের সুবিধা মতো একবার নিজেকে বড় আবার একবার নিজেকে ছোট বলে দাবী করছে”।নাফিয়ার কথার উত্তরে আফিম ঠোঁটে সামান্য হাসি নিয়েই জিজ্ঞেস করে ওঠে,
-তাহলে শিশুরা দুঃসাহস দেখালে কি করতে হয়?
ঠোঁটে বাচ্চাদের মতো হাসিটা বহাল রেখেই নাফিয়া বলে ওঠে,
-আদর করতে হয়।
এবার এক ব্রু উঁচু করে আফিম বলে ওঠে,
-ভেবে বলছো?
আফিমের এভাবে প্রশ করার পেছনের রহস্য টা বুঝলো না নাফিয়া।সে সরল মনে বলে উঠলো,
-হ্যাঁ।
ঠোঁটে আবারও বাঁকা হাসি ফুটে ওঠে আফিমের।দু’হাতে নাফিয়ার কোমর জড়িয়ে ধরে মেয়েটিকে আরো নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় সে।এতে চমকে উঠে আফিমের বাহু দু’হাতে চেপে ধরে নাফিয়া।বড় বড় চোখ করে চেয়ে আছে সে আফিমের সেই অদ্ভুত চাহনি ও ঠোঁটের বাঁকা হাসিটির দিকে।
আফিম ধীরে ধীরে নিজের ঠোঁট নাফিয়ার গলা অব্দি নামাতেই মৃদু কেঁপে ওঠে নাফিয়া।আফিমের গরম নিঃশ্বাস তার গলায় আছড়ে পড়ছে।এতে অদ্ভুত এক শিহরণ অনুভব করছে নাফিয়া নিজের মাঝে।আফিম ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে প্রথমে নাফিয়ার গলার নিচের সে লাল তিলটায় আলতো করে নিজের ঠোঁট ছোঁয়ায়।অতঃপর অনতিবিলম্বে সেথায় কামড় বসিয়ে দেয় সে।শিহরণ সামলাতে না পেড়ে আফিমের বাহু খামচে ধরে নাফিয়া।চোখ জোড়া বুজে নিয়েছিলো অনেক আগেই।সময়ের সাথে সাথে লাল সে তিলটার উপর হওয়া আফিমের আক্রমণে ব্যাথা বাড়ছে আর নাফিয়ার হাতের নখ গুলোও আফিমের বাহুতে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে চলছে।লম্বা সে কামড়ের ইতি টেনে নাফিয়ার গলার কাছ থেকে মুখ উঠিয়ে মেয়েটির মুখপানে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আফিম।উফ কি সুন্দর এ দৃশ্য! মেয়েটা খিঁচে চোখ বুজে রেখেছে।তার ঘন চোখের পাপড়িতেই চোখ আঁটকে যাচ্ছে আফিমের।সেই মায়াবী চোখজোড়ার কণে আবার এক বিন্দু পানি চিকচিক করছে।
আফিমের ইচ্ছে করছে এ জ্বলজ্বলে অশ্রু বিন্দুতে ঠোঁট ছোঁয়াতে।কিন্তু নিজের ইচ্ছেকে দমিয়ে নাফিয়ার কানের কাছে ঠোঁট এগিয়ে নিয়ে যায় আফিম।কানের কাছে আফিমের গরম নিঃশ্বাস অনুভব হতেই আবারও শিহরণ অনুভব করে নাফিয়া।একটু নড়েচড়ে ওঠে সে।আফিম তার কানের কাছে নাক ঘষতে ঘষতে মৃদু স্বরে বলে ওঠে,
-আদুরে শাস্তি কেমন ছিলো মিস.শেষ?
আফিমের কন্ঠ স্বর,তার নিঃশ্বাস সব মিলিয়ে নাফিয়ার হৃৎস্পন্দন এতোটাই বেড়ে গিয়েছে যেনো আরেকটু বাড়লেই তা ব্ল্যাস্ট হয়ে যাবে।এমনটাবস্থায় গলা দিয়ে কোনো শব্দ উচ্চারণে সক্ষম হলো না নাফিয়া।কিন্তু মনে মনেই ভাবতে লাগলো তার উত্তর কি হওয়া উচিৎ,
“ব্যাথাময় নাকি শিহরণময় নাকি লজ্জাময়”

চলবে।

[গল্প কেমন হচ্ছে? সবাই জানাবেন কিন্তু❤️]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here