আবছায়া পর্ব ১৩

আবছায়া
writer::প্রিয়া
১৩
আইজানের কেনো জানি ইনায়ার বিয়েতে যাওয়া নিয়ে এতো উচ্ছ্বাস যেনো সুবিধার মনে হচ্ছে না।কোনো ঘাপলা নিশ্চয় আছে।
-ইনয়া জান তুমি এতো খুশি কেনো

-অজান্তার বিয়ে কত আনদ করবো তাই খুশি।

-ওহ আচ্ছা।
রেডি হয়ে আসো আমি ড্রাইভার কে বলছি গাড়ি বের করতে।

আইজান ওর মা,বাবার রুমে যায় উনাদের তৈরি হতে বলে নিচে গিয়ে ড্রাইভার কে গাড়ি বের করতে বলে।

আইজান নিজে ও শাওয়ার করে নেয়।ইনায়া আজ শাড়ি পড়েছে কাঁচা হলুদ রঙের শাড়ি চুলগুলো খোঁপা করে নিয়েছে।শশুর বাড়িতে প্রথম যাচ্ছে নিজেকে যতটুকু সম্ভব সাজিয়ে তুলছে।

আইজান চুল মুছতে মুছতে ওয়াসরুম থেকে বাইরে এসে ইনায়াকে দেখে থমকে যায়। হাত থেকে টাওয়াল পরে যায়।
-এ কাকে দেখছি।

ইনায়া পিছন ফিরে থাকায়।

-কেনো চিনতে পারছো না।

‘কি করে চিনবো আকাশের চাঁদ আমার ঘরে।

-আমি কিন্তু একদম রেডি তুমি তাড়াতাড়ি করো।

‘আমার বউয়ের দিকে দেরি সইছে না।

-প্রথম শশুর বাড়ি যাচ্ছি বলতে গেলে অনেকটা এক্সাইটেড।

‘এইটা কি তাহলে।

-যত হোক ওইটা আসল শশুর বাড়ি।

আইজান আর কথা বাড়াল না।ইনায়া রুম থেকে বেড়িয়ে আম্মুর রুমে গেলো।
-আম্মু আসবো

‘আয় আয়।
মাশা আল্লাহ কি সুন্দর লাগছে আমার মেয়েকে।আইজানের চয়েস আছে বলতে হয়।

‘আম্মু একা একা তোমার কষ্ট হবে থাকতে।

-আরে একা কোথায় ঝুমকো আসবে তো।

‘ঝুমকো কে।

-আমাদের বাসার কাজের মেয়ে ছিলে আগে ওকে ফোন দিয়েছিলাম আসবে বললো।

‘যাক তাহলে নিশ্চিন্ত হলাম।

-কত চিন্তা আমার মেয়েটার আমার জন্য।এতো চিন্তা করতে হবেনা মাত্র তো দু চারদিনের ব্যাপার।

আইজানের মা,বা আর ইনায়া বিদায় নিয়ে ড্রইংরুমে এসে বসলো। আইজানের আসার কোনো খবর নেই।

আইজানের মা আইজানের বাবা কে লাগেজ গাড়িতে তুলতে বললেন।
আর উনি নিজে আইজানকে ডাকতে গেলেন।
আইজানের রুমে গিয়ে উনি চিৎকার দিয়ে উঠলেন আইজানের বাবার হাত থেকে লাগেজ পরে গেলো। সাথে সাথে সবাই দৌঁড়ে গেলো।
আইজান জবাই হওয়া মোরগের মতো ফ্লোরে গড়াগড়ি খাচ্ছে শ্বাস ফেলতে ওর কষ্ট হচ্ছে।

ইনায়া ফ্লোরে বসে আইজানের মাথা কোলে নিলো। আইজানের মা ফ্যান চলছে তা ও উনি হাতপাখা ফিয়ে বাতাস করছেন।
ওর বাবা ইনহেলার এনে ওকে শ্বাস নিতে দিলেন।
দু বার ইনহেলার দেয়ার পর আইজান কিছুটা স্বাভাবিক হয়।
আইজানের এমন অবস্থা দেখে ইনায়া কান্না শুরু করে।
মা-কাঁদিস না ইনায়া কিচ্ছু হবেনা।আইজানের এজমার সমস্যা এলার্জি কিছু খেলে এরকম হয়।
আজ বাইরে নিশ্চয় উল্টাপাল্টা কিছু খেয়েছে।

আইজান কে ধরে এনে বিছানায় শুইয়ে দেয়া হলো।
অনেক সময় পেরিয়ে গেছে এরমধ্যে গ্রামে যেতে প্রায় ৩ঘণ্টা লাগবে।
তাই ইনায়া ওর শশুর শ্বাশুড়ি কে বললো।

-মা,বাবা আপনারা চলে যান আমি আর আইজান যাচ্ছি না।

‘কি বলো বউমা আমরা চলে যাবো আইজানের এই অবস্থা রেখে

তখনি আইজানের ফুফি বললেন।
-অজান্তা বিয়েতে তোমাদের যেতেই হবে এতিম মেয়েটা তোমরা না গেলে কষ্ট পাবে।আর আইজান ৩-৪ ঘন্টার ভিতর সুস্থ হয়ে যাবে।

-আপা তা ও বলছিলাম যাওয়া বাদ দিয়ে দেই।

ইনায়া -আমি আছি সব সামলে নিবো তোমরা যাও।

-তুমি কত শখ করেছিলে যাবে তোমাকে রেখে কি করে যাই।

আইজান -ইনয়া তুমি যাও মা বাবার সাথে এই প্রব্লেম আমার অনেকদিনের কিছুক্ষণ পর এমনি ঠিক হয়ে যাবো।
আমি না হয় কাল চলে যাবো বিয়েতে।

মা-না না ইনায়া যাওয়ার দরকার নেই তাহলে তোকে কে দেখবে। আর বিয়েতে গিয়ে তুই কিসব হাজি বাজি খাবি তখন আবার তোর শ্বাসকষ্ট বাড়বে। কাজ নেই বাবা তোরা বাড়িতে থাক।আমার আসার পর তোরা বেড়াতে যাবি।

ইনায়া ওর শশুর শ্বাশুড়িকে আটকে রাখলো একটা কাগজে অনেককিছু লিখে অজান্তার জন্য নিয়ে আসা কাপড়ের ব্যাগে ঢুকিয়ে দিলো।
মা,বাবার কাছে সবকিছু বুঝিয়ে দিলো।
আইজানের মা ছেলের মাথায় হাত ভুলিয়ে দিলেন।

ইনায়া আইজানের মাথার কাছে বসে আছে।
আইজানের শ্বাস প্রশ্বাস কিছুটা স্বাভাবিক হচ্ছে।আগের চাইতে অনেকটা ভালো দেখাচ্ছে আইজানকে।
ইনায়া রান্নাঘরে গিয়ে সবধরনের মসলা দিয়ে আইজানের জন্য রং চা বানিয়ে নিয়ে আসলো।

আইজানকে উঠিয়ে খেতে দিলো।
আইজান চা খাচ্ছে তখনি কলিংবেলটা বেজে উঠলো।বাসায় ফুফি ছাড়া কেউ নেই তাই ইনায়া গিয়ে দরজা খুললো।
লম্বা একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে পোশাক দেখে বুঝা যাচ্ছে কাজের মেয়েই হবে।
-হাই নতুন বউ আমি ঝুমকোলতা।সবাই ঝুমকো বলে।
-আম্মু তোমার কথাই বলেছিলেন। আসো ভিতরে আসো।

-তুমি বিয়েতে যাওনি।

‘না আইজান অসুস্থ হয়ে গেছে তাই যাওয়া হয়নি।

-আমি এসে গেছি বস একদম সুস্থ হয়ে যাবে।

ইনায়া আর কিছু বললো না ঝুমকো এসেই কাজে লেগে গেছে মেশিনের মতো সব কাজ শেষ করে টিভি দেখতে বসে গেছে।

ইনায়া ওর পাশে গিয়ে বসলো।
-নতুন বউ জবার নাটক দেখো কি সুন্দর অভিনয়।

‘আমি সিরিয়াল দেখি না গো।

-আমি তো দিনে কাজকাম করে রাতে যে সিরিয়াল দেখতে বসি রাত ১২টা পর্যন্ত দেখি।

‘তোমার বাসায় টিভি আছে।

-কি যে বলো নতুন বউ টিভি,ফ্রিজ সব আছে আইজান বস কিনে দিয়েছে।
কি যে গরম ভাবছি এবার বলবো এসি কিনে দিতে।আইজান স্যার বড্ড মহৎ।

ইনায়ার কেনো জানি আইজানের এতো মহৎতের গল্প ভালো লাগছেনা।
ইনায়া আইজানের কাছে গেলো

-সরি ইনয়া।

‘কেনো।

-তুমি কত শখ করেছিলে বিয়েতে যাওয়ার আমার জন্য সব মাটি হয়ে গেলো।

‘অসুখ কি বলে আসে বিয়েতে যাইনি তো কি হয়েছে তুমি সুস্থ হয়ে গেছো এটাই অনেক।

-আইজান মুচকি হেসে ইনায়া কে জড়িয়ে ধরতে চাইলেই ঝুমকো চলে আসে।

‘নতুন বউ তোমারে মা ডাকে।
ইনায়া উঠে চলে যায়।একটু আড়ালে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে ওর সন্দেহ হয় কারণ ও বেড়িয়ে আসলে ও ঝুমকো কেনো থেকে গেলো সেজন্য।

-বস আপনের জন্য দারুণ খবর আছে।

‘কি বল।

-বস বস্তিতে নতুন মাল আসছে।
কথাটা ইনায়ার কানে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here