আবছায়া পর্ব ২৫+২৬

আবছায়া
Writer::প্রিয়া
২৫
নিজের স্বামীকে অন্যমেয়ের সাথে দেখে ইনায়ার পুরো পৃথিবী থমকে যায়।বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে ওর যাকে এতো ভালোবাসে সেই কিনা এতো বড় ধোঁকা দিলো।

আইজান যেনো এসবের জন্য প্রস্তুত ছিলো না।ইনায়া এখানে কি করে এই বস্তির সন্ধান জানলো।
ঝুমকো আর রমিজ ছুটে আসে দরজা ধাক্কানোর শব্দে।
ওরা দুজনেই ইনায়া দেখে চমকে যায়।

*ইনায়া কোনো কথা না বলেই রুমের ভিতর চলে যায় মেয়েটা জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে।
-কি নাম বোন তোমার।

-ক ক কলি।

‘ভয় পাবে না একদম আমি মানুষ অমানুষ না।

ঝুমকো ছুটে আসলো।
-ম্যাডাম আপনি এখানে।

‘হুম আসার জন্যই তো তোমাদের সকলের আসল চেহারা দেখতে পারলাম।

-ম্যাডাম আসলে বস গাড়ি কিনতে আসছেন।

‘বস গাড়ি না নারী কিনতে এসেছে।নিজের চোখেই দেখলাম।
-না না ম্যডাম বস এই মাইয়াডারে ছোট বইনের লাহান দেখেন

-ওহ তাই বুঝি তা এক্ষুণি বুঝা যাবে।
কলি তুমি এখানে কি করে এসেছো।

‘ওই রমিজ মারে বাপরে কইছে আমারে বড় চাকরি দিবো কইয়া নিয়া আইছে চাকরি দেয় নাই।

-তোর সাথে ওরা খারাপ কিছু করছে।

‘না আমারে নাকি কোন সাহেব টাকা দিয়া কিন্না রাখছে।

-ওই যে দেখছিস আমার স্বামী আইজান ওই তোকে কিনেছে।

আইজান-ইনয়া তুমি ভুল করছো এসব কিছু না আমি ওকে চাকরি দিবো তাই কথা বলতে আসলাম।

-কি চাকরি দিবে তোমার রক্ষিতা বানানোর।

-ইনয়া তুমি আমায় ভুল বুঝছো সোনা।প্লিজ বাসায় চলো সব বুঝিয়ে বলবো।

‘চলো বাসায় যায়।কলি আসো আমার সাথে।

-কলি কোথায় যাবে।

‘কেনো আমাদের সাথে তুমি না ওকে চাকরি দিবে।

-ইনয়া ও এখানে থেকে চাকরি করবে।
আমি ব্যবস্থা করে দিবো।

‘ও আমার বাসায় কাজ করবে। কলি চলো।

-ইনয়া।

‘কলি আসো আমার সাথে।

ইনয়া কলিকে নিয়ে বেড়িয়ে গেলো ঘর থেকে। আইজান ও পিছে পিছে যাচ্ছে।

আইজানের গাড়িতে গিয়ে কলিকে নিয়ে উঠে বসলো ইনায়া।
ইনায়া জানে ও খাল কেটে কুমির আনছে তা ও এই মেয়েটার জন্য একটা নিরাপদ আশ্রয় প্রয়োজন।
এই মূহুর্তে ইনায়ার বাড়ি ছাড়া অন্য কোনো আশ্রয় ইনায়ার জানা নেই।
আইজান এসে গাড়িতে বসলো।গাড়ি এসে থামলো ওদের বাসার সামনে রাত তখন ১০টা।
দুজনেই একসাথে এসেছে দেখে আইজানের মা ওদের সামনে এসে দাঁড়ালেন।
-তোরা একসাথে আছিস বলে গেলে পারতি।কত চিন্তায় ছিলাম।

ইনয়া-না মা আসার সময় আইজান আমাকে নিয়ে আসলো।

-মেয়েটা কে।

‘ও কলি আমার পরিচিত।আজ থেকে আমাদের বাসায় থাকবে টুকটাক কাজ করবে।

-তুমি কি ওকে চিনো।দেখো মা এখনকার মেয়েরা রাতে বাসায় লোক ঢুকিয়ে ডাকাতি করায়।

‘নিশ্চত থাকুন মা ও এমন কিছু করবে না।

কলি কে নিয়ে ভিতরের একটা রুমে যায় ইনয়া।আপাতত এই বাড়িতে কেউ কোনো প্রশ্ন করলে উত্তর দিয়ো না যা বলার আমি বলবো।
কলি মাথা নাড়িয়ে হ্যা বুঝালো।

আইজান রুমে গিয়ে বসে আছে।ইনায়া সব জেনে গেছে কি করবে ভেবে যাচ্ছে আইজান।
ইনায়া ফুফির রুমে গেলো উনি কাপড় গুছাচ্ছেন।

-আম্মু আসবো।

‘আয় তুই না কি কাকে সাথে নিয়ে এসেছিস।

-হ্যা ওর নাম কলি একটু পর তোমার সাথে দেখা করাতে নিয়ে আসবো।
আচ্ছা আম্মু তুমি লাগেজে কাপড় গুছিয়ে কোথায় যাচ্ছো।

-তুই এই কয়দিন ডিপ্রেশনে ছিলি তোর সাথে তেমন কথা হয়নি।লন্ডনে আমার নাতনীর বিয়ে মেয়ে খুব জোড়াজুড়ি করছে যাওয়ার জন্য।
কাল রাতেই ফ্লাইট।

ইনায়ার মন কালো হয়ে গেলো চেয়েছিলো উনাকে সব খুলে বলতে। উনি যাওয়ার সময় বলা ঠিক হবে না তাই চুপ করে রইলো।

-কি বলবি বল।

-তুমি কবে ফিরবে আম্মু তোমাকে ছাড়া আমার খুব কষ্ট হবে।

-দূর পাগলি চিন্তা করিস না আইজান আছে ওর মা,বাবা সবাই তোকে অনেক আদর করবে।

‘কি খাবে বলো আজ আমি নিজের হাতে তোমার জন্য রান্না করবো।

-চল আমি আজ তোদের রান্না করে খাওয়াবো।

‘তোমার হাই প্রেশার তোমাকে চুলার পাশে যেতে হবে না।
-আমি বলে দিবো তুই রাঁধবি।

রাতে মা,মেয়ে মিলে রান্না করে একসাথে খাওয়াদাওয়া করলো।
ঘুমানোর আগে কলির রুমে গেলো ইনায়া।

-ভালো করে দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে ঘুমাবি।রাতে কেউ ডাকলে দরজা খুলবি না একদম।

‘ঠিক আছে আপা।আপনি খুব ভালা আল্লাহ আপনার ভালা করবো।

ইনায়া রুমে গিয়ে দেখে আইজান শুইয়ে আছে।লাইট অফ করে ইনায়া শুইয়ে পড়লো।
কিছুক্ষণ পর পিছন থেকে আইজান ওকে জড়িয়ে ধরলো। ইনায়া সাড়া দিলো না।
ধীরেধীরে আইজান ওর গা ঘেষে শক্ত করে ওকে জড়িয়ে ধরলো।ইনায়া একচিমটি ও নড়লো না।
আইজান ওর চুলে নাক ঘষতে থাকলো।নিজের দিকে মুখ ঘুরাতেই আইজান থমকে যায়।
ইনায়া চোখ মুখ লাল হয়ে আছে ভিতরে ভিতরে ফুফিয়ে কান্না করছে জলগুলো গাল বেয়ে ঝরে যাচ্ছে শব্দ ছাড়া।

আইজান ওকে ছেড়ে দিয়ে উঠে বসে।ইনায়া বালিশে মুখ গুছে চিৎকার করে কাঁদে যাতে বাহিরে শব্দ না যায়।

-ইনায়া মাফ করে দাও আমায় ভুল হয়ে গেছে আর কখনো এমন করবো না

ইনায়া নিশ্চুপ।

-আমি তোমাকে ভালোবাসি ইনায়া আসলে শয়তানের পাল্লায় পড়ে খারাপ করতে গিয়েছিলাম। আর কখনো খারাপ কিছু মাথায় আনবো না।

ইনায়া একটা কথা ও বলে না।ইনায়া ছোট থেকেই দূর্বল কখনো প্রতিবাদ করতে শিখেনি।রাগ হলে কষ্ট পেলে কেবলি কান্না করতে জানে।

আইজান ইনায়াকে বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে ।
শেষবারের মতো ক্ষমা করে দাও আমায়।তুমি আমাকে মারো কাটো গালি দাও যা ইচ্ছে করো তা ও এভাবে কান্না করো না।আমি তোমার কান্না সহ্য করতে পারিনা।

ইনায়া সেন্স লেস হয়ে আইজানের বুকের মধ্যে পরে আছে।
আইজানের সেদিকে কোনো খেয়াল নেই।আইজান ওর পিঠে হাত ভুলিয়ে দিচ্ছে ওকে বুঝাচ্ছে।
ওর দিকে তাকাতেই দেখে ইনায়া অজ্ঞান হয়ে আছে।
উঠে গিয়ে জগ থেকে পানি এনে ওর চোখেমুখে দিলো।ইনায়া চোখ খুলছে না । এভাবে অনেকক্ষণ পর আইজান বাইরে এসে ওর মাকে ডাক দিলো।

সবাই ইনায়ার রুমে গিয়ে ওকে ডাকাডাকি করছে। আইজান গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে যায় কিছুদূরের হাসপাতাল থেকে একজন ডাক্তার নিয়ে ফিরে আসে।

বাসার ফিরে দেখে ইনায়ার জ্ঞান ফিরেছে তবে উঠে বসতে পারছে না ।
ডাক্তার চেক করে জানায় ওর শরীর প্রচন্ড
দূর্বল।কিছু মেডিসিন খাইয়ে ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে দেয়।

আইজানের কাছে জানতে চায় বিয়ের কতদিন হয়ছে। আইজান জানায় দুই মাস।
ডাক্তার ওকে হাসপাতালে নিয়ে কিছু চেকাপ করাতে বলে।

*আবেগ আর অরিত্রি পরেরদিনই বাসায় ফিরে আসে।আবেগের মা,বাবা অরিত্রিকে মেনে নেন।
কিন্তু অরিত্রি আবেগের সাথে তেমন কথা বলে না প্রয়োজন ছাড়া অরিত্রির এমন আচরণ আবেগ মেনে নিতে পারছেনা। অরিত্রির প্রতি আবেগের টান জন্মে গেছে একসময় সেটা ভালোবাসায় রূপ নিবে।

*ইনায়ার পাশে পুরো রাত আইজান বসে ছিলো।ওর মাথার কাছে।
ইনায়ার ঘুম ভাঙ্গতেই আইজান তড়িঘড়ি করে ওকে উঠিয়ে বসালো।

-তুমি উঠো না আমি তোমার ব্রাশ আর পানি নিয়ে আসছি।

আইজানের কথায় পাত্তা না দিয়ে ইনায়া উঠতে চাইলো।আইজান ওকে কোলে তুলে নিয়ে গেলো ওয়াসরুমে।দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আছে ইনায়া ফ্রেশ হয়ে দরজা খুলতেই আবার ওকে কোলে করে খাটে এনে বসালো।

-নড়বে না আমি নাস্তা নিয়ে আসছি।
আইজান গিয়ে ওর ফুফিকে বললো ইনায়ার জন্য নাস্তা নিয়ে যেতে।উনি নিজ হাতে ইনায়াকে নাস্তা খাইয়ে দিচ্ছেন।
-বাড়ির লোকদের কথা চিন্তা করতে করতে এমন হাল হয়েছে তোর। খাইয়ে রেডি হয়ে নে চেকাপ করাতে যেতে হবে।
‘আমি এখন ঠিক আছি আম্মু।

-বেশী কথা বলবি না।
ইনায়া আর কিছু বলতে পারলো না।আইজানের সাথে হাসপাতালে গেলো। চেকাপ করিয়ে রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলো।ওদের দিকে তাকিয়ে ডাক্তার

– কংগ্রাচুলেশনস মা,বাবা হতে চলছেন।

আইজান খুশিতে ইনায়াকে জড়িয়ে ধরলো।কিন্তু ইনায়া খুশি হতে পারলো না।
আবছায়া
writer::প্রিয়া
২৬
নবদম্পতির জন্য সবচেয়ে খুশীর সংবাদ মা-বাবা হওয়া।কিন্তু ইনায়ার মনে এক ফোটা খুশি নেই।
এরকম একটা লোকের সন্তানের মা হতে নারাজ ইনায়া।
-ডাক্তার আমি বাচ্চাটা নষ্ট করে দিতে চাই।

‘কি বলছেন ম্যাম আপনি।

-ভেবেচিন্তে বলছি।

আইজান–ইনায়া কি বলছে এসব তুমি না বাচ্চা ভালোবাসো।আমার সাথে রাগ বাচ্চার সাথে মিটাচ্ছো কেনো?

-দেখুন ম্যাম বাসায় যান স্যারের সাথে সব মিটমাট করে নিন।আর একটা কথা এটা আপনাদের প্রথম বাচ্চা প্রথম বাচ্চা এবোরশন করলে পরবর্তীতে বাচ্চা হতে অনেক সমস্যা ফেস করতে হবে।
ভেবে দেখুন কি করবেন।

ইনায়া আর কিছু না বলে গাড়িতে গিয়ে উঠে বসলো।
আইজান গাড়ি নিয়ে সোজা ওদের কলেজ ক্যাম্পাসের পিছনের বাগানে গেলো।
আইজান গাড়ির দরজা খুলে বাইরে আসে।ইনায়া গাড়িতেই বসে থাকে।
আইজান গাড়ির দরজা খুলে ইনায়ার হাত ধরে বাইরে নিয়ে আসে।

-ইনু বেবি প্লিজ মাফ করে দাও আমায় আর কখনো ভুল কাজ কিছুই করবো না।
ইনু প্লিজ কথা বলো।
আইজান এবার চিৎকার করে উঠে।

-কাল থেকে কথা বলেই যাচ্ছি তুমি একটা কথাও বলছো না কেনো।

ইনায়া চিৎকার শুনে কেঁপে উঠে।
আইজান ইনায়ার পায়ের কাছে বসে পড়ে।
-তোমার আল্লাহর দোহাই ইনায়া কথা বলো।আমি আর থাকতে পারছি না তোমার ইগনোর আমি সহ্য করতে পারি না।

ইনায়া অনেকটা দূরে সড়ে যায়।আইজান মাটিতে বসে থাকে।
ইনায়া এবার বলতে শুরু করে।
-সব লোকের কথা অবিশ্বাস করে শুধুমাত্র তোমাকে ভালোবেসে ছিলাম আইজান।
আমি তোমাকে বলেছিলাম তুমি মনে আছে আমার বিশ্বাস ভাঙ্গলে আমি হারিয়ে যাবো।তুমি সেটাই করলে আমার বিশ্বাস নিয়ে খেলা করলে
আর কয়টা মেয়ের জীবন এভাবে নষ্ট করেছো।

‘ইনায়া মাফ করে দাও আমায়।

-কত মেয়েকে নিয়ে এভাবে ফুর্তি করেছো কত মেয়ের স্বপ্ন ভেঙ্গে দিয়েছো।

‘ইনু চুপ করো।

-কেনো চুপ করবো কেনো চুপ করবো আমি।আমি একটা মেয়ে একটা মেয়ে হয়ে অন্যমেয়ের জীবন নষ্টকারীকে কি করে ক্ষমা করবো।

‘আর ভুল হবে না ভুলে ও কারো দিকে তাকাবো না।

-বিশ্বাস করি না।

‘শেষবার শুধু শেষবারের মতো মাফ করো আমায়।

ইনায়া আজ ও আইজানের কথা বিশ্বাস করলো ভেবে নিলো আইজান আর ভুল কিছু করবে না।

-বাসায় চলো।

আইজান আর ইনায়া বাসায় ফিরে আসলো।বাসায় ফেরার পথে আইজান মিষ্টি কিনে আনে।
বাসার সবাই খবর শুনে অনেক খুশি হলো।
আইজানের ফুফি আজ রাতেই চলে যাবেন যাওয়ার আগে ইনায়াকে নিজের রুমে ডাকলেন।

-আমি অনেক খুশি হয়েছি মা তুই আমায় অনেক বড় উপহার দিলি।আমি খুব তাড়াতাড়িই ফিরে আসবো।

‘আম্মু আমি কি পারবো সংসার আর সন্তান সামলাতে।

-সংসার বড্ড কঠিন জায়গা জানিস মা প্রতিনিয়ত সংসার রক্ষার জন্য মেয়েদের লড়াই করতে হয়।
আমাকে দেখছিস এতো স্ট্রং আমি প্রথমে ছিলাম না।সাধারণ একজন মেয়ে ছিলাম কারো ঘরে বউ হয়ে আসলাম এসেই বুঝলাম সংসার করার মতো কঠিন কাজ আর কিছুতেই নেই।
তোর বাবা মানে আমার স্বামী জুয়ারি ছিলেন।বিয়ের প্রথম রাতেই আমার গহনা গুলো নিয়ে জুয়ায় দিয়ে আসেন।

-আম্মু।

‘জুয়ায় জিতলে খুশিতে নানা রকমের মাছ ভালো ভালো খাবার নিয়ে বাসায় ফিরতেন আর হারলে এসেই আমার গায়ে হাত তুলতেন।সাথে উনার মায়ের নির্যাতন, পান থেকে চুন কষলেই গালাগালি। একা হাতে সব সামলে নিয়েছি।
এতো অত্যাচারের পর ও ঠিকে ছিলাম লোকটাকে ভালোবেসে।একসময় আমার মেয়ে আসলো কোল জুড়ে।
ভেবেছিলাম বাচ্চার মুখ দেখলে লোকটা ভালো হয়ে যাবে।মেয়ে বড় হতে থাকলো বাড়িঘর বন্ধক দিয়ে হাফসার বাবা জুয়া খেললেন,হেরে গিয়ে বাড়ি ছাড়া হই।
ততোদিনে হাফসার দাদী মারা গেলেন।

-এতো কিছুর পর উনার প্রতি আপনার ঘৃণা জমেনি আম্মু।

‘জমেছিলো তো অনেক। পরক্ষণেই ভাবলাম মানুষটা তো আমারি ওকে ভালো পথে নিয়ে আসা আমার দায়িত্ব। আমার মাটির ব্যাংকে জমানো ১হাজার টাকা নিয়ে শহরে আসলাম তিনজন মানুষ।
আমার মেয়ের তখন ৬মাস বয়স।সেদিন হাফসার বাবার চোখে অনুশোচনা দেখেছিলাম।
শুরু হলো জীবনযুদ্ধ উনি সারাদিন সি,এন,জি চালাতেন আর বাসায় নকশীকাঁথা, সেলাই,পাঠি বানিয়ে বিক্রি করতাম আমি।
দিনশেষে আমাদের টোনাটুনির সংসার হলো একসময় যে সংসারের স্বপ্ন দেখতাম ঠিক তেমন।
বাবা মেয়ের খুনসুটি ভালোবাসা,খড়কুটোর ঘরে লোকটার বুকে আমার আশ্রয় নেয়া।ভালোই চলছিলো সব, বিপত্তি ঘটলো সেদিন রাতে।
একজন লোক উনার গাড়িতে উঠেছিলো রাস্তায় ছিনতাইকারী হামলা করে। হাফসার বাবা ওই লোককে বাঁচানোর চেষ্টা করে গুরুতর আহত হলেন।
উনাকে চুরি মেরে ছিনতাইকারী পালিয়ে যায়।খবর পেয়ে ছুটে গেলাম হাসপাতালে উনার ক্রিটিকাল অবস্থা। আমার আর শেষ রক্ষা হয়নি ছেড়ে চলে গেলেন মা,মেয়েকে রেখে।
যে লোকটার জন্য প্রাণ দিলেন সেই লোকটাই আমার আশ্রয়দাতা হয়ে উঠলেন,মেয়ে বানিয়ে উনার বাসায় নিয়ে গেলেন।সব হারিয়ে সেদিন সংসার পেয়েছিলাম মা,বাবা সবাইকে এতিমখানা বড় হওয়া আমি মা,বাবা পেয়ে ভালোই চলছিলো সব।মেয়ে বড় হলো বিয়ে হলো মা,বাবা ছেড়ে চলে গেলেন রয়ে গেলাম উনাদের বাড়িতেই আমি।তারপর তো সব তোর জানা।

ইনায়া চোখের জল মুছিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরলেন উনি।
মায়ের কষ্ট শুনে কান্না আসছে।
-আপনি যে জীবনে এতো কষ্ট সহ্য করেছেন বুঝাই যায় না।

‘বললাম না স্ট্রং হয়ে গেছি।তুই অনেক দূর্বল মা মনকে শক্ত করবি অন্যায়ের প্রতিবাদ করবি দেখবি মানুষিক যন্ত্রণা কমে যাবে।

-আম্মু শেষরাতে তো আপনু চলে যাবেন ততোক্ষণ আমি আপনার কোলে মাথা রেখে শুইয়ে থাকি।

‘আয় পাগলি মেয়ে আমার।
ইনায়ার আম্মু চলে গেলেন উনি যাওয়ার পর থেকেই ইনায়া অনেক কান্না করছে।
আইজান রুমে আসলো।
-ইনয়া এভাবে কান্না করা শরীরের জন্য খারাপ।ফুফি তো চলে আসবেন কিছুদিন পর।

‘আম্মুকে ছাড়া থাকতে আমার খুব কষ্ট হবে।

-চিন্তা করো না আমি তোমার পাশে আছি সারাক্ষণ আর মা তো আছেন।

দু দিন পর ইনায়া কলিকে নিজের রুমে ডাকলো। মেয়েটাকে ওর মা-বাবার কাছে পাঠাতে হবে।

-কলি আমি চাই তুমি নিরাপদে তোমার মা-বাবার কাছে যাও।তুমি ঠিকানা আমায় দাও আমি পৌছে দেয়ার ব্যবস্থা করবো।
‘আপা আপনের কাছে থাকি বাড়িতে ফিরলে আবার আমায় অন্যকাজে পাঠিয়ে দিবো বাপে।

*আমি তোমার বাবাকে বলে বিয়ের ব্যবস্থা করিয়ে দিবো তোমার।

-আপা আপনের কাছে আমি নিরাপদে থাকবো।

‘তুমি বুঝতেছো না আমার ঘরেই বিপদ।পুরুষের মন এখন ভালো কখন বিগড়ে যায়।

-আপনি ভাইজানের কথা কইছেন উনি এহন ভালা হইয়া গেছেন।সেদিন আমার কাছে খেমা চাইছেন।

-ক্ষমা চাইছে মানে।

‘সেদিন ভাইজান আমায় কইছেন আমি যেনো উনারে মাফ কইরা দেই।উনার অনাগত সন্তানকে যেনো অভিশাপ না দেই।আমারে কইছেন উনারে ভাইজান কইয়া ডাকতে।

‘ওহ আচ্ছা ঠিক আছে।

-আপা আপনের এই বিপদে আমারে আপনের পাশে থাকতে দিন।
‘ঠিক আছে তবে সাবধানে থাকিস।

-আপা আপনের পা একটু দিন তো।

‘কেনো রে।

-সালাম করমু।আপনে আমার মায়ের মতো মা যেমনি সন্তানরে আগলাইয়া রাখে আপনি ও আমায় আগলাইয়া রাখছেন।

চলবে
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here