আবছায়া পর্ব ২৭+২৮

আবছায়া
Writer::প্রিয়া
২৭
ইনায়ার শরীর প্রচন্ড দূর্বল প্রেগন্যান্সির দুই মাস চলছে শরীরে রক্তশূন্যতা দেখা দিয়েছে।
আইজান আর ওর মা দেখাশুনার কোনো ত্রুটি রাখছে না।
ইনায়া বারান্দায় বসে বসে কাঁদছে বাবার কথা খুব মনে পড়ছে ওর।
তখন কলি দুধ বানিয়ে নিয়ে আসলো।
-আপা দুধটা খাইয়া লন।

‘না রে এখন খাবো না।

-আপা আপনি কাঁদছেন কেনো।

‘বাবাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে রে।

-ফোন করেন আইয়া পড়বো।

‘না রে বাবা আসবেন না রাগ করেছেন মেয়ের উপর।

-আপনের মতো ভালা মানষের লগে মানুষ কেমনে রাগ করে।
আপা দুধ খাইয়ালন দেখবেন শরীরটা হালকা লাগবো।

‘রেখে যা পরে খেয়ে নিবো।

-না হইবো না আমার সামনেই খাইতে অয়বো।

‘তুই বড্ড জ্বালাচ্ছিস।

-তোমার কাছে জ্বালা মনে হইলে ও আমার কাছে ভালা লাগে।তোমারে শাসন করতে।

‘তুই আস্ত একটা পাগলি।

-দুধটা খাইবেন কিন্তু আমি রান্না বসাইয়া আইছি পুইড়া যাইবো।

কলি চলে গেলো ইনায়া দুধ অল্প খেয়ে রেখে দিলো।আইজান গেইটের ভিতর দিয়ে আসছে দেখে ইনায়া পুরো দুধ খেয়ে নিলো।না খেলে এসে ঘ্যানঘ্যান করবে।

রুমে এসেই ওয়াসরুমে চলে গেলো আইজান।ফ্রেশ হয়ে এসে বারান্দায় গেলো।
-সরি আজ লেইট হয়ে গেলো আসলে ফুফু নেই সবকিছু সামাল দিতে আমি হিমসিম খাচ্ছি।

‘ঠিক আছে খেয়ে আসো যাও।

-তুমি ও চলো একসাথে খাবো।

‘না প্লিজ আমি খাবো না।

-অল্প হলেও খেতে হবে কিন্তু।

ইনায়াকে কোলে করে টেবিলে নিয়ে গেলো আইজান।
কলি সব রান্নায় জানে নিজের হাতের রান্না করে।

ইনায়াকে খাইয়ে নিজে খেয়ে নিলো।ড্রইংরুমে বসে দুজনেই টিভি দেখছে।
ইনায়ার মন খারাপ দেখে আইজান
-শরীর খারাপ লাগছে ডাক্তারের কাছে যাবে।

‘না ঠিক আছি সমস্যা নেই।

-মন খারাপ কেনো বলো আমায়।

-আজ বাবার জন্য মন কেমন করছে।

‘ওহ তোমাকে তো বলা হয়নি তোমার বোন আনায়া তো পালিয়ে গিয়েছে কি যেনো নাম ওহ তুহিন তোমাদের ফুফাতো ভাইয়ের সাথে।

-কি তুহিনের সাথে ওর রিলেশন কবে থেকে।পালিয়ে গেলো কেনো বিয়ে করে নিতে পারতো।

‘তোমার বাবা বোধহয় মানবে না তাই পালিয়েছে।

আচ্ছা ইনয়া তুমি কি বাবার সাথে কথা বলবে।

-নাহ বাবা বলেছে আমি উনার মেয়ে না তাই কথা বলতে চাইনা আমার ও বাবা লাগবে না।

-পাগলি তোমার বাবা কিন্তু সবচেয়ে বেশি খুশি হবেন উনার নাতি নাতনি আসছে শুনে।

‘না কথা বলবো না।

-দাঁড়াও আমি ফোন দেই।

ইনায়া চুপটি করে বসে আছে আইজান ওর বাবার নাম্বারে ফোন দিলো।
রিং বাজতেই উনি ফোন রিসিভ করলেন।

-আসসালামু আলাইকুম বাবা কেমন আছেন।

‘ আলহামদুলিল্লাহ বাবা তুমি কেমন আছো।আমার পাগলি মেয়ে কেমন আছে।

‘ভালো আছে বাবা তবে আপনার সাথে ওর খুব রাগ।

-রাগ তো হবেই আমার মেয়েটাকে আমি কত কষ্ট দিয়েছি।

‘বাবা একটা সুখবর ছিলো।

-বলো বাবা কি।

‘বাবা আপনি নানু হতে চলছেন।

– আলহামদুলিল্লাহ।
কই গো ইনায়ার মা তাড়াতাড়ি আসো আমরা বুড়ো-বুড়ি এবার খেলার সঙ্গী পাচ্ছি। এসে সুখবর শুনে যাও।

ইনায়ার মা ছুটে আসলেন।

-কি হয়েছে।

“আমরা নানা-নানি হচ্ছি।

-কি বলো আল্লাহর অশেষ রহমতে।
বাবা আইজান আমার ইনায়ার কাছে ফোন দাও তো।

-না কথা বলবো না আমার মা নেই বাবা নেই। বলেই কান্না করে দেয় ইনায়া।
অপরপ্রান্তে থাকে ওই দুজন মানুষ ও কাঁদছে

-কি হলো এবার কাঁদছো কেনো তোমরা কত সহজে বলে দিলে আমি তোমাদের কেউ না।তোমাদের একটা মাত্র মেয়ে আনায়া।

‘তোর জায়গা আনায়া কখনো নিতে পারবে না রে।

-বাবা ও বাবা আসবে আমায় দেখতে।

‘মা কে বলবি না আসার জন্য।

-আমার বাবা কে চাই।

” তাহলে তোর বাবা যাবে আমি যাবো না।

-মা আমার সোনা মা তোমার ছোট সতীন আসছে খুব ঝগড়া করবে কিন্তু তোমার সাথে ওকে এসে দেখে যাওনা।

আসবো রে মা খুব তাড়াতাড়িই আসবো।

ইনায়া ফোন রেখে আইজানের বুকে মাথা রাখে।

-থ্যাংকস আইজান।

‘দূর পাগলি আমার পাগলি বউয়ের মন খারাপ কি আমার ভালো লাগে। এই যে হাসছো অনেক ভালোলাগছে এখন।
কলি দুজনের জন্য চা নিয়ে আসলো।

-কলি বস আমাদের পাশে।

‘না আপা আমি ঘরে যাই কিছু লাগলে বইলেন।

-আরে ধুর বস একটু।
কলি ওদের পাশে বসলো।ভুলবশত চায়ের কাপ ইনায়াত হাতে পড়ে গেলো। আইজান চিল্লিয়ে উঠলো তাড়াতাড়ি বরফ নিয়ে আয় কলি।
কলি বরফ নিয়ে আসে আইজান ইনায়ার হাতে যত্ন করে বরফ ঘষে। কলি সেই দৃশ্য দেখে তাকিয়ে আছে।

-ইনয়া তোমার হাতে কি খুব জ্বালাপোড়া করছে।

‘তেমন না এতো অস্থির হচ্ছো কেনো।

-এই কলি আর কখনো তোর আপাকে গরম চা দিবি না।

‘আপা তো ঠান্ডা চা খেতে পারে না।

-এখন থেকে খাবে।

‘আইজান কিছু হয়নি তো।

-চলো রুমে চলো।
আইজান ইনায়াকে রুমে নিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়। চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে পরম যত্নে।
এদিকে কলি আইজানের মায়ের পা টিপে দিচ্ছে ওর চোখ ঘুমে লাল হয়ে গেছে।
আইজানের বাবা কলিকে ঘুমাতে যাওয়ার কথা বলছেন।কলি উঠে নিজের রুমে চলে গেলো।

*দিন যতো যাচ্ছে ইনায়া ততো দূর্বল হয়ে পড়ছে হাতে পায়ে পানি এসেছে।অর্ধবয়স্ক মহিলাদের মতো মুটিয়ে যাচ্ছে।রাতে ঘুম হয়না চোখের নিচে কালি জমেছে।
এখন আর নিজে থেকে সময় করে আয়না দেখা হয়না চুল আঁচড়ানো হয়না কতদিন হলো মুখে প্রসাধনী মাখেনি।
আইজান চুল বেঁধে দেয়। কলি মাঝেমধ্যে বেণি বাঁধে।

ধুলো পরে যাওয়া ওয়ারড্রবের কাপড় গোছাতে গিয়ে কলি একটা ডাইরি পেলো।

-আপা এখানে কিসের কাগজ যেনো।
‘দে তো আমার কাছে।
কলি ডাইরি হাতে দিতে ইনায়ার মনে পড়লো আনায়া ওকে এই ডাইরি দিয়েছিলো।
কলিকে দরজা বন্ধ করে চলে যেতে বলে ইনায়া। কলি বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে চলে যায়।
ইনায়া ডাইরি খুলে পড়তে শুরু করলো।
– মুগ্ধতায় ঘিরে রাখে প্রিয়ার দুটো আঁখি
চোখ বুঝলেই আমি দেখি ওর মায়াবী চাহনি

পরের পৃষ্ঠায় ইনায়া দেখে বড় বড় অক্ষরে আবেগ ❤ইনায়া দেয়া।
ইনায়া চোখ বড় বড় করে থাকায় না ইনায়া দেয়া।

-জানিস ইনায়া তোকে আমি ২বছর ৮মাস ১৭দিন ১৪ঘণ্টা ধরে ভালোবেসে আসছি এখনো কিন্তু বাসি তবে বলতে কেনো পারিনা।
তোর সামনে গেলেই আমার হার্টবিট বন্ধ হয়ে যায়।
ভালোবাসার কথা বলবার আগেই পানির তৃষ্ণা পেয়ে যায়।কবে যে তোকে মনের কথা বলতে পারবো।

এতোটুকুই পরে ইনায়ার মাথা চক্কর দিতে শুরু করলো।
ডাইরি রেখে বালিশে মাথা রাখতেই রাজ্যের ঘুম এসে হাজির হলো।
আইজানের মায়ের চিল্লানিতে ওর ঘুম ভাঙলো।উঠে রুম থেকে বাইরে আসতেই দেখলো উনি বিলাপ করে কাঁদছেন।
-মা কি হলো।

‘শেষ সব শেষ হয়ে গেলো।

-কি হয়েছে বলবেন তো।

ইনায়া তাকিয়ে দেখে কলির রুম ফাঁকা কেউ নেই ওর কাপড়গুলো ও নেই।বালিশের উপর একটা চিঠি পরে আছে।গুটিগুটি অক্ষরে চিঠি লেখা অস্পষ্ট চিঠি লেখার মধ্যে কোনো আগামাথা নেই তবুও অনায়াস চিঠি পরে যাচ্ছে ইনায়া।
আবছায়া
writer::প্রিয়া
২৮
কলির রেখে যাওয়া চিঠি পড়ে হাসতে হাসতে সোফায় লুটিয়ে পরে ইনায়া।
তবে সেটা খুশি কিংবা আনন্দের হাসি না দুঃখের মাঝে মনকে শান্ত করার জন্য বিদ্রুপের হাসি।
ইনায়ার হাসি দেখে আইজানের মায়ের রাগে গাঁ জ্বলছে।

-এতো হাসির হলো কি কাজের মেয়ে পালিয়ে গেছে কি না কি চুরি করে নিয়ে গেছে সেদিকে লক্ষ্য নেই চিঠি পড়ে হাসা হচ্ছে বলি হচ্ছেটা কি।

‘হাসবো না তো কাঁদবো না কি মা।আপনি কি বললেন চুরি করে নিয়ে গেছে টাকাপয়সা গহনাদি কিছুই নেই নি তবে সবচাইতে মূল্যবান জিনিসটা নিয়ে গেছে।

-কি নিয়ে গেছে।

‘আপনার ছেলে।

-কি আবোলতাবোল বকছো।

‘বাবা আপনি ও এসেছেন ভালোই হলো দুজনে একসাথে শুনোন কলি চিঠিতে কি লিখেছে।
-আপা আমি খুব খারাপ আপা আপনের সুখ আমার সহ্য হয় নাই।
আইজান সাহেবের আপনের প্রতি এতো ভালোবাসা দেখে আমার হিংসা হইছে। আমি মনে মনে এরকম একজনরে চাইতাম। আইজান সাহেব যেদিন বইলেন আমারে বিয়া করবেন উনি আমায় ভালোবাইসা পেলছেন সেদিন আমার বউ হওয়ার খুব ইচ্ছা জাগলো।
উনি বলছে আমায় আপনের চাইতে বেশি ভালোবাসবো।
আপনার রাজকীয় সংসার দেইকা আমার লোভ হয়ছে।পারলে আমার খেমা করবেন।

ইনায়া চিঠি শেষ করে আবার হাসতে শুরু করলো।আইজানের মা-বাবা ধপ করে সোফায় বসে রইলেন।

-গ্রামের মেয়েরা এতো সহজ সরল হয় আল্লাহ পাগল মেয়েটা কি স্বপ্ন দেখছে কি বোকা হা হা হা।

‘এই মেয়ে তোমার স্বামী কে ভুলিয়ে ভালিয়ে একটা মেয়ে নিয়ে গেছে তুমি পাগলের মতো প্রলাপ বকছো আর হাসছো কি হয়ছে কি।

-মা আপনি কি বললেন কলি আপনার ছেলেকে ভুলিয়ে ভালিয়ে নিয়ে গেছে।
কলি তো গ্রামের অশিক্ষিত একটা মেয়ে যে মেয়েরা বড় হওয়ার পরই জানতে পারে সংসার ধর্মই বড়।
কলি এরকম যে সবসময় স্বপ্ন দেখেছে ভালো সুখী সংসারের। আমার এখানে থেকে ও ভেবেছে আইজান আমাকে রাণী বানিয়ে রাখছে ওর লোভ জন্মে যায়।
কিন্তু আপনার ছেলে ও তো শিক্ষিত সবকিছুতে স্ট্যাটাস খুঁজে কিন্তু নারীর বেলা শুধু নারী হলেই ওর চলে।
একজন কাজের মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে গেলো ছিঃ।

ইনায়া আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না কথা ও বলতে পারছে না এটুকু কথা বলেই হাঁপিয়ে উঠেছে।

নিজের রুমে চলে গেলো শ্বাস নিতে প্রচুর কষ্ট হচ্ছে।কিছুক্ষণ শান্ত হয়ে বসে থাকলো।
ফোনের রিংটোন বাজতেই তাকিয়ে দেখে মা ফোন দিয়েছে।
নিজেকে শান্ত করে ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে চাপা কান্নার শব্দ আসলো।

-মা তুমি কাঁদছো কেনো।আমার বাবা, মা আমার বাবা কেমন আছেন।

‘সব ভালো আছে রে মা তবে আমাদের নিঃস্ব করে দিলো ইকরাম।

-বড় ভাইয়া কি করেছে বড় ভাইয়া।

‘তোর বাবাকে ঠকিয়ে উনার সব সম্পত্তি আর এই বাসা ও নিজের নামে করে নিয়েছে।

-কি বলছো এসব।ছোট ভাইয়া এসব জেনে কি করছে।

‘তোর বাবা ইকরামের সাথে ঝগড়া করছেন।ইসহাক বাসা থেকে বেড়িয়ে গেছে।

-এতো বড় কাজ বড় ভাইয়া কি করে করতে পারলেন।

‘ইকরাম বলে সবকিছুর চার ভাগ হলে ও না কি অল্প কিছু পাবে।

-মা চার ভাগ হবে কেনো আমরা দুই বোনের লাগবে না ওরা দুই ভাই মিলেমিশে থাকুক।

‘ইকরাম বড্ড লোভী রে মা তোর বাবা খুব ভেঙ্গে পড়েছেন।উনি আর এক মূহুর্ত ইকরামের সাথে থাকবেন না।

-ছোট ভাইয়া বেড়িয়ে গেছে এখন তোমরা কোথায় যাবে।

‘তোর বাবা খুব কাঁদছেন তুই কথা বলে একটু বুঝা।

-ফোন দাও।

‘কথা বলো ইনায়া কল দিয়েছে।

-ইনায়া কেমন আছিস মা।

‘বাবা আমি ভালো আছি বাবা এই অবস্থায় মা কে নিয়ে কোথায় যাবে তুমি।

-আর যাওয়ার জায়গা নেই রে মা গ্রামেই ফিরে শিকরে ফিরতে হবে।

‘বাবা ছোট ভাইয়ার সাথে কথা বলে দেখো প্রয়োজন হলে বড় ভাইয়ার নামে মামলা করো প্রতারণা মামলা।

-বাবা হয়ে ছেলের নামে মামলা করবো সমাজ কি বলবে।
আমি অকৃতজ্ঞ বাবা রে মা সারাজীবন ছেলে মেয়ে মানুষ করার জন্য পরিশ্রম করে মানুষ করতে পারলাম না।আনায়া পালিয়ে গেলো একটা বাজে ছেলের সাথে ইকরাম আমাকে ঠকালো ইসহাক রাগ করে বাড়ি ছাড়লো।আমি পারলাম না রে ভালো বাবা হতে।

ইনায়া ফুফিয়ে কান্না করছে।

-বাবা তুমিই ভালো বাবা আমরা অকৃতজ্ঞ সন্তান বাবা ক্ষমা করে দিও আমাদের।

‘মা রে তুই সাবধানে থাকিস নিজের যত্ন নিস।
আমরা যেখানেই থাকি নানুভাই কে দেখতে আসবো।

-বাবা প্লিজ তোমরা আমার কাছে চলে আসো তোমাদের আমি একা ছাড়তে পারবো না।

‘তোর কি মনে হয় তোর বাবা বৃদ্ধ হয়ে গেছেন মোটেও না গ্রামের যত সম্পত্তি আছে ওইগুলো চাষবাস করে জীবন কাটিয়ে দিতে পারবো।
ইসহাকের জন্য গ্রামে ফিরে জমিজমা বিক্রি করে ওকে টাকা দিয়ে দিবো। ছোট ছেলে কিছু পাবে না তাই কি করে হয়।
মা রে তোকে কিছু দিতে পারবো কি না জানিনা তবে তোর জন্য মন থেকে দোয়া করবো।

-ও বাবা আমার কিচ্ছু চাই না তোমরা শুধু ভালো থাকো।

‘আচ্ছা রাখছি রে মা গ্রামে গিয়ে তোকে ফোন করবো।

ফোন রাখার পর ইনায়া হাউমাউ করে কাঁদে সবাই স্বার্থপর কেউ ভালোবাসার মূল্য বুঝে না কেউ না।

রাত পেরিয়ে গেলো ইনায়া একবারের জন্য বাইরে আসে না। কিছুক্ষণ পর পর আইজানের মায়ের ন্যাকা কান্নার শব্দ কানে আসে উনার কথা শুনে মনে হয় দুধের বাচ্চা কেউ কিডন্যাপ করেছে।

ভোরের আলো ফুটতেই ইনায়া পেটের মধ্যে লাথি অনুভব করলো।উঠে বসে পেটের দিকে তাকিয়ে থাকে নিশ্চয় বাবুটার খিদে পেয়েছে।
পেটে আলতো করে হাত ভুলায়।
-তোকে দুনিয়ায় নিয়ে আসার মতো শক্তি আমি পাচ্ছি না রে বাপ। তোর বাপ যে কত বড় অমানুষ সেটা দেখছিস তো।
তোকে কি করে আমি বড় করবো কার কাছেই বা যাবো।আমার বাবা যে সন্তানের জন্য নিঃস্ব হয়ে গেলেন।

উঠে দাঁড়ানোর মতো মিনিমাম শক্তি টুকো নেই।চোখের সামনে আইজানের মুখ ভেসে উঠছে এই তো কাল সকালেই কোলে করব ওয়াসরুমে নিয়ে গেলো। নিজ হাতে নাস্তা খাইয়ে দিলো আর আজ কোথায় ও।
কলির ভালো করতে গিয়ে নিজেরই এতো বড় ক্ষতি হয়ে যাবে কল্পনায় করতে পারেনি।এজন্যই বোধহয় মানুষের ভালো করতে নেই।

অনেক ধীরস্থিরভাবে উঠে বসলো খাট থেকে নেমে দাঁত ব্রাশ করে রান্নাঘরের দিকে গেলো।
কাউকে দেখা যাচ্ছে না শাশুড়ী মনে হয় ঘুমে এখনো।

কি খাবে ভাবতে ভাবতে ফ্রিজ থেকে ডিম বের করে ভয়েল করতে দিলো।
এক গ্লাস দুধ বানিয়ে আর ডিম নিয়ে টেবিলে আসলো।

এগুলো খাওয়ার পর খিদেটা কমেছে টেবিলে মাথা রেখে বসে আছে।
তখন আইজানের মা আসলেন।

-খাও ভালোমতো খাও আমার ছেলেটা যে নিখোঁজ সে খেয়াল নেই সে চিন্তা নেই।

‘নিখোঁজ কোথায় পালিয়ে গেছে কাজের মেয়ে নিয়ে।

-সব তোমার জন্য নিজের স্বামীকে বেঁধে রাখতে পারো না।কাজের মেয়ের দিকে কেনো চোখ যায় বউয়ের কাছে ভালোবাসা পাচ্ছে না তাই।

‘তাই না কি মা আমি যদি বলি সব আপনার দোষ।

-কি বলতে চাও কি।

‘হ্যাঁ দোষটা আপনারই ছেলেকে মানুষ বানাতে পারেননি।

-মুখ সামলে কথা বলো বউমা।বয়সে ছোট ছেলের কাছে নেচে নেচে বিয়ে বসার আগে ভাবলে না।
আমার ছেলে যুবক থাকতে থাকতে তুমি আধাবয়সী নারী হয়ে যাবে। আর এখন কি আমার ছেলের বাপ হওয়ার বয়স না কি।

-আরে বাহ বাপ হওয়ার কাজ করতে বয়স লাগে না বাপ হলেই দোষ।

‘কি নির্লজ্জ মেয়ে।

*আপনিই তো বাধ্য করছেন নির্লজ্জতা দেখানোর জন্য।
বাদ দিন আমার বাবুর খিদে পেয়েছে বারবার পেটে লাথি দিচ্ছে রান্নাবান্না কিছু চুলায় বসান।

-পারবো না আমি।

‘পারতে তো হবে মা আপনার বংশের প্রদীপের জন্য।

চলবে
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here