আমায় একটু ভালবেসো পর্ব -০২+৩

#আমায়_,একটু_ভালবেসো
#জান্নাতুল_ফেরদৌস_কেয়া

(২)

,,পর্ণার বিদায় পালা শেষ। সব আত্মীয় স্বজনের তাদের বাড়ি ফেরার জন্য পায়তারা করছে। আমি ছাঁদে ওঠে এলাম। এই জায়গাটা নিরিবিলি। মানুষজন নেই। ছাঁদের ওপাশটাই একটা দোলনা আছে। আমি গিয়ে সেখানে বসে পড়লাম। এই জায়গাটা আমার ভিষণ প্রিয়। যখনই মন খা রা প হয় তখনই চলে আসি।
আমি দোলনায় হেলান দিয়ে বসে পড়লাম। বড্ড ক্লান্ত লাগছে। চোখ বন্ধ করে ভাবতে লাগলাম ফেলে আসা দিনগুলো।
,যেদিন প্রথম আদনান স্যারকে দেখি সেদিন ছিল বৃষ্টি। আমি আর পর্ণা কোনরকমে কলেজে পৌঁছায়।কলেজের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আমরা যখন কাপড় ঝারছিলাম।তখনই বৃষ্টিতে দৌড়ে আসতে দেখলাম স্যার কে।প্রথমে আমি গুরুত্ব দেয়নি।কিন্তু যখন আমাদের সামনে এসে দাঁড়ালো,তখনই আমি অবাক হয়ে যায়। স্যার কাপড় থেকে পানি ঝারতে,ঝারতে হেসে বলল,
,কি অবস্থা মেয়েরা?
ব্যস এটুকু কথাতেই আমি ঘায়েল হয়ে যায়। তার হাসি,গালে পড়া টোল,শ্যামবর্ণের চেহারা।সেদিন তার করা প্রতিটা আচরণে মুগ্ধ হয় আমি।
তারপর
থেকে শুরু হয় কথা বলা দেখা হওয়া। বছর না ঘুরতেই স্যারকে রাখা হয় আমাদের প্রাইভেট টিচার হিসেবে। সেদিন যে কি খুশি হয়েছিলাম। তা ভাষায় প্রকাশ সম্ভব নয়। মনে মনে ভাবি যে এবার স্যারকে বলব। আমার মনের কথা। যেই ভাবা সেই কাজ।বসে পড়লাম চিঠি লিখতে। কিন্তু খাতার সব কাগজ শেষ হয়ে গেল কিন্তু, আমার চিঠি লেখা আর হলো না। পর্ণার সাথে আমার কখনোই ভালো সম্পর্ক ছিল নাই। তাই তাকে বলার মতো সাহস করতে পারছিলাম না। তারপর একদিন পর্ণা গেল বাবার কাছে আদনান স্যারের নামে কি যেন বলতে। আমি ভেবেছিলাম পর্ণা বোধহয় কোনোভাবে আমার মনের কথা জানতে পেরেছে। তাই বাবাকে বোঝাতে গিয়েছে। সেদিন লজ্জায় ওঠে চলে এসেছিলাম।কিন্তু পড়ে যা হলো তা মেনে নেয়ার মতো না।

এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে চোখ লেগে গেছে বুঝতে পারিনি। যখন চোখ খুললাম চারিদিকে তখন গুটগুটে অ ন্ধ কার। শরীরে এক ফোটা শ ক্তি পাচ্ছি না। দুদিন ধরে না খাওয়ার কারণে শরীর ভিষণ দূর্ব ল। আমি আরো কিছুক্ষণ এভাবেই বসে রইলাম। হঠাৎ কারো পায়ের শব্দ পেলাম। আমি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম। অ ন্ধ কারে কিছু দেখতে পেলাম না।
,এখানে কি করছিস মা?
কন্ঠ শুনে বুঝলাম এটা ছোট বাবা।তাকে দেখে মুচকি হাসলাম । দোলনার এক কোনে সরে গিয়ে বসার জায়গা করে দিয়ে বললাম,
,তেমন কিছু না। আকাশের তারা দেখছি।
,ওহ্ ভালো!একটা কথা বলব অনি?
,হ্যাঁ বলো না।
,না মানে,,তোর কি কোনো বিষয় নিয়ে মন খা রা প? কয়দিন ধরেই দেখছি তুই কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গেছিস। কিছু কি হয়েছে? আমাকে বল মা। তুই তো আগে এমন ছিলি না?
আমি দীর্ঘ শ্বাস ফেললাম। জীবনটা আর আগের মতো নেই । কিন্তু এটা ওদের কে বলবো কীভাবে।আমরা যৌথ পরিবার। এখানে একজনের মন খা রা প হলে অন্য জন তা ঠিকই ধরে ফেলে। এখানে মন খা রা প করা বারণ।
আমি কিছু বলার জন্য উদ্যেৎ হবো। তার আগেই বাবার আগমন ঘটে।
,কি হচ্ছে এরেখানে? দুই কাকা-ভাতিজী মিলে কি নিয়ে গল্প করছিস তোরা?
,এইতো ভাই ও এসেছো।দেখ না অর্ণা কেমন যেন হয়ে গেছে আজকাল। মন ম রা হয়ে বসে থাকে। কারো সাথে ঠিকমত কথাও বলে না।
,তাই নাকি! আমি তো খেয়াল করিনি। আসলে তিন-চার দিন ধরে পর্ণার বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত। তাই আর নজর দিতে পারিনি। তা অর্ণা মা কি হয়েছে বলো তো?
আমি মলিন হাসলাম।
,না বাবা। তোমরা ভুল বুঝতেছো। আমি একদম ঠিক আছি।
,এই মেয়ে। একদম মি থ্যা বলবি না। সেই ছোট থেকে তোকে কোলে-পিঠে করে মানুষ করেছি। আমাদের কে শেখাতে এসেছিস। যে তুই ঠিক আছিস!
,আহ্ ছোট বাবা তেমন কিছুই নয়,,
,অর্ণা। কি হয়েছে আমাদের খুলে বল। কেউ কি তোমায় কোনো কটু কথা বলেছে। তাহলে আমাদের কে বল।নয়তো বুঝবো কিভাবে?

বাবা আর ছোট বাবা হৈচৈ শুনে বাড়ির প্রায় সকলেই ছাঁদে এসে উপস্থিত হলো। সকলেই উৎসুক হয়ে চেয়ে আছে আমাদের দিকে। মা এসে বলল,
,কি হয়েছে? তোমরা এমন করছো কেন?আর অর্ণা। এতক্ষণ কই ছিলি তুই? খুঁজে,খুঁজে হয় রান হয়ে গেলাম।
,এইতো মা। ছাঁদে বসে ছিলাম।
,তা কি নিয়ে কথা বলছিলি তোরা?
,তেমন কিছু না মা।
,এই মেয়ে একদম মি থ্যা বলবি না। বড় ভাবি তুমি অর্ণাকে জিজ্ঞেস করো তো। ওর কি হয়েছে?
ব্যস এবার সবাই ওঠে পড়ে লাগলো। যে আমার কি হয়েছে তা বলার জন্য। আসলে এই বাড়ির প্রত্যেকেই আমার অতি কাছের মানুষ। এখানে ছোট বড় সবাইকে প্রাধান্ন দেয়া হই। সবার জোড়াজুড়ি তে আমি মুখ খুললাম। তবে তার নাম বললাম না। চোখ বন্ধ করে বলতে লাগলাম,,
,আসলে বাবা-মা। ছোট বাবা -ছোট মা।ফুপিরা, তোমাদের কে আমি মি থ্যা বলতে পারব না। তাই বলছি, আমি একটা ছেলেকে ভালবাসতাম। প্রচন্ড ভালবাসতাম।তোমরা আমাকে খা রা প ভেবো না। কি করে যে তার প্রেমে পড়লাম তা আমি নিজেও জানিনা। আস্তে, আস্তে সেই প্রেম বাড়তে থাকে । কিন্তু তাকে বলার মতো সাহস করতে পারিনি। যখন ঠিক করলাম তাকে আমার মনের কথা বলবো। তখনই সে হারিয়ে গেল। চিরতরে আমার জীবন থেকে চলে গেল। জানো বাবা, তাকে আমি মনে মনে কতশত চিঠি দিয়েছি। কিন্তু সে বুঝতেই পারেনি যে আমি তাকে ভালবাসি।
কথাগুলো বলতে গিয়ে আমার গলা ধরে গেল। চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো,,,,
#আমায়_একটু_ভালবেসো
#জান্নাতুল_ফেরদৌস_কেয়

(৩)

আমার কথা শুনে সবাই বাকরূ দ্ধ হয়ে গেল।বাবা এসে তার বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলো। মায়ের চোখ দিয়ে পানি ঝরছে। তার মেয়ে যে এতদিন কী ক ষ্টের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তা হয়তো ভাবতেই পারেনি। ছোট বাবা এসে একহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো। ভাঙা,ভাঙা কন্ঠে বলল,
,তুই আগে কেন বলিসনি অনি। নিজের মধ্যে কেন এতো পাহাড় সমান ক ষ্ট পুঁষে রেখেছিস? কী ঐ ছেলের নাম? কোথায় তার বাড়ি? আমাকে বল! এখুনি তাকে এনে হাজির করব তোর সামনে। ওর সা হ স হয় কী করে। তোকে ধোঁ কা দেওয়ার। তুই শুধু নাম বল অনি।
আমি বাবার বুকের সাথেই লেপ্টে রইলাম।
স্মিত হেসে বললাম,
,তার আর প্রয়োজন নেই ছোট কাকা। সে এখন অন্য কারো। তাকে আর আমার চাই না।
আমি মুখ দিয়ে আর শব্দ করতে পারলাম না। তার আগেই জ্ঞা ন হারালাম।

আমি যখন চোখ খুললাম। তখন ভোর হবে বোধহয়। বাহিরে পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ। ডান হাতটা অবশ হয়ে আছে। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলাম। সেখানে ক্যানলা লাগানো। উপড়ে স্যালাইনের প্যাকেট। আমি চোখ খুলেছি দেখেই ছোট মা দৌড়ে এলো।
,এই অর্ণা।তোর জ্ঞান ফিরেছে। কেমন লাগছে এখন? কোথাও কোনো কষ্ট হচ্ছে? ও বড় ভাবি। দেখুন অর্ণার জ্ঞান ফিরেছে।
মা হন্তদন্ত হয়ে রুমে ঢুকলেন। ছোট মায়ের চিৎ কারে বাবার ঘুম ভে ঙে গেল। বাবা আমার পাশেই শুয়ে ছিল। তিনি ওঠেই আমার মাথায় হাত বুলালেন।নরম সুরে বললেন,
,এখন কেমন লাগছে মা?
বাবার কন্ঠ শুনে। আমার চোখ ছলছল করে ওঠলো। আহ্ কী মধুময় ডাক।
মা বাবাকে ধমক দিয়ে বলল,
,আহ্ সরো তো। মেয়েটা সবে মাত্র জ্ঞান ফিরলো। আর তোমরা সবাই জেরা শুরু করে দিয়েছো।মেয়েটা যে দুদিন ধরে না খেয়ে আছে। সেটা মাথায় আছে। দেখি সরো তো। নে মা হা করতো!
আমি আর কথা বাড়ালাম না লক্ষি মেয়ের মতো। খাবার গুলো খেয়ে নিলাম।
খাবার শেষ করে আমাকে বিশ্রাম নিতে দিয়ে । সবাই যে যার ঘরে চলে গেল। আমি চোখ ব ন্ধ করে শুয়ে রইলাম। মনে পড়লো পর্ণার কথা। শশুর বাড়িতে গিয়ে কেমন আছে কে জানে? সুখে থাকারই কথা। নিসন্দেহে আদনান স্যার ভালো মানুষ। পর্ণাকে সুখেই রাখবে।
আমি হাসলাম। আজকাল নিজেকে পা গ ল, পা গ ল লাগে। বুকের ভেতর চিনচিন ব্যাথা হয়। বুকটা খালি,খালি মনে হয়। আগামী দিন গুলো কেমন কা ট বে কে জানে?

বেলা গড়িয়ে বিকেল হলো।আমি আর রুম থেকে বের হলাম না। মা এসে দুপুরের নিজ হাতে খাইয়ে দিয়ে গেছে। আমি শোয়া থেকে উঠে বারান্দায় এলাম। ফুরফুরে বাতাস আমার মন ছুঁয়ে গেল । পড়ন্ত বিকেলের নরম আলো আমার শরীরে এসে লাগল। মনে হলো আমি যেন দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর সুস্থ হলাম।
পাখিরা তার আপন নিড়ে ফিরে যাচ্ছে।আকাশে ধূসররাঙা মেঘেরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। কি অপরূপ দৃশ্য।
হঠাৎই চোখ গেল বাগানের দিকে। আয়ান,ইশান,ইরা, মিতু,সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছে। ওরা আমার কাকা তো, জেঠা তো ভাই বোন। আয়ান, আর ইশান আমার সমবয়সী। আর ওরা ছোট।আমি বাগানের দিকে তাকাতেই, মিতু চেঁচিয়ে উঠলো,
,এই অর্ণা আপু নিচে এসো! গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।
,নারে শরীরটা ভালো লাগছে না। তোরা গল্প করো।
,আচ্ছা দাঁড়াও। আমরা আসছি, এই চলো সবাই।
এই বলে সবাই দৌড়ে আমার রুমের দিকে রওনা হলো।
দরজা এসো সবগুলো একসাথে ধাক্কা দিতে লাগলো। আমি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে দরজা খুলে দিলাম। ওমনি সবগুলো হুড়মুড় করে রুমে ঢুকলো। যে যার মতো বসে পড়লো।
,এই অর্ণা আপু কাল তোমার কী হয়েছে বলো তো?এত রাতে ডাক্তার এসেছিল। আর কয়দিন ধরেই দেখছি তুমি কেমন জানি হয়ে গেছ।(ইরা বলল)
,আরে! অর্ণা শাকচু ন্নি কার প্রেমে যেন হাবুডুবু খাচ্ছিল। কিন্তু সেই ব্যাটা অর্ণাকে ছেঁকা দিয়ে। অন্য কাউকে বিয়ে করে ফেলেছে। তাই আমাদের অর্ণা বেগম এই বি চ্ছে দ সইতে না পেরে ডিপ্রেশনে চলে গেছে।হা,হা,হা(আয়ান)
,আয়ান এবার কিন্তু বেশি হয়ে যাচ্ছে।
,আচ্ছা ওসব বাদ দাও। যা নিয়ে কথা হচ্ছিল। আপু তুমি কালকে কি পড়ে যাবে কিছু ভেবেছো?(মিতু)
,মানে?কালকে কোথায় যাব আমরা?
,সেকি তুমি ভুলে গেছ!আরে কাল না পর্ণা আপুর বউভাত।আমরা সবাই তো কাল সেখানেই যাব।
কথাটা শুনা মাত্র আমার মুখ কালো হয়ে গেল। আনমনে হয়ে বললাম।
,আমি যাব না রে!
,কেন?কেন যাবি না তুই (আয়ান)
,এমনি আমার ওসব ভালো লাগে না । আর তাছাড়া লোকে কি বলবে ?
,এই লোকে কি বলবে মানে কী? এখানে বলাবলির কী আছে বল তো?(ইশান)
,আমার একটা জিনিস নিয়ে খটকা লাগছে?(আয়ান)
,কী সেটা?(ইরা)
,দেখ যেদিন থেকে পর্ণার বিয়ের কথা চলছে। তারপর থেকেই অর্ণা কেমন যেন করছে। এমন তো হতে পারে পর্ণার জামাই, অর্ণার সেই পছন্দ করা ছেলে।(আয়ান)
আয়ানের কথা শুনার পর সকলেই অবাক চোখে তাকালো আমার দিকে। আমি পা থ রের মতো দাঁড়িয়ে রইলাম। মুখ দিয়ে কোনো আওয়া জ বের হচ্ছে না। এই তিক্ত সত্যি টা যে এভাবে সবার সামনে চলে আসবে তা ভাবতে ও পারিনি। বেশ কিছুক্ষণ নিরবতা কে টে গেল।হঠাৎ আয়ান উ চ্চ স্ব রে হেসে উঠলো।
,আরে তোরা এমন সিরিয়াস হয়ে গেলি কেন?আমি তো শুধুমাত্র ম জা করার জন্য বলেছি । অর্ণা কেন পর্ণার জামাই কে ভালবাসতে যাবে!ওদের তো নিশ্চয় আগে থেকেই রিলেশন ছিল। আমি তো শুধু ভ য় দেখানোর জন্য বলেছি।
আয়ানের কথাটা শুনে হাফ ছেড়ে বাচঁলাম। মনে মনে আল্লাহ দরবারে শুকরিয়া আদায় করলাম।আর একটু হলেই ধরা পড়ে যেতাম।
,যাই হোক, তোমাকে কিন্তু কাল যেতে হবে আপু। আমরা কিছু জানি না ব্যস্।(ইরা)
,কিন্তু,,,,
,কোনো কিন্তু নয়!আর নয়তো ভেবে নেব যে আয়ানের কথায় সত্যি।(ইশান)
,ঠিক আছে যাব!এবার হলো?

চলবে,,,৷
দুঃখিত দেরি করে দেয়ার জন্য।
#চলবে,,,,

উৎসাহ দিয়ে পাশে থাকবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here