আমায় একটু ভালবেসো পর্ব -২২+২৩

#আমায়_একটু_ভালবেসো
#জান্নাতুল_ফেরদৌস_কেয়া

(২২)

গাড়ি চলতে শুরু করেছে। অর্ণা তাহমিদের বুকের মধ্যে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে আছে। তাহমিদ তাকিয়ে আছে অর্ণার মুখশ্রীর পানে।গাড়ির মৃদু আলোয় অর্ণার মুখটা ভিষণ মায়বী লাগে। তাহমিদের লোভ হয়।ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছে জাগে। দুহাতে অর্ণার মুখটা উপরে তুলে, কপালে গভীর এক চুম্বন করলো।
গাড়ি দ্রুত গতিতে ছুটছে।খোলা জানালা দিয়ে হুরহুর করে বাতাস ঢুকছে।বাহিরের উত্তাল হাওয়ার কারণে অর্ণার ছোট,ছোট চুল গুলো তার চোখে মুখে এসে পরছে।তা দেখে তাহমিদ মুচকি হাসলো। আলতো হাতে চুলগুলো কানের পাশে গুঁজে দিল। যত্ন করে অর্ণার মাথাটা বুকের মাঝে চেপে ধরলো। বাকিটা সময় দু’জনে ওভাবেই রইল।

চোধুরী বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামলো।তাহমিদের কাকি-জেঠীরা দাঁড়িয়ে আছে সদর দরজার সামনে। হাতে বরণডালা।তাহমিদের ছোট কাকার মেয়ে তানিয়া আর তিশা,এসে অর্ণাকে নামানোর জন্য তাড়া দিল।
,,ও ভাইয়া, বউমনিকে নামতে বলো।
তাহমিদ অর্ণাকে জাগানোর চেষ্টা করলো।তবে বিশেষ কোনো লাভ হলো না। তাহমিদ তানিয়াকে বলল অর্ণা জ্ঞান হারিয়েছে। তার জ্ঞান ফিরানোর জন্য পানি আনতে।সে দৌড়ে গেল। নতুন বউ নামছে না দেখে, গাড়ি দিকে এগিয়ে এলো তাহমিদের বড় জেঠি, নয়নতারা বেগম। অর্ণার চোখ বন্ধ দেখে, ব্যতিবস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
,ওমা, ওর কি হয়েছে তাহমিদ?ঘুমিয়ে গেছে নাকি জ্ঞান হারিয়েছে?
তাহমিদ নয়নতারা বেগম কে আশ্বস্ত করে বলল,
,তেমন কিছু না জেঠি।গাড়িতে সময়ই জ্ঞান হারিয়েছে। এখনও ফিরছে না!তানিয়াকে পাঠিয়েছে পানি আনতে। পানি দিলে হয়তো ফিরবে।

তানিয়া পানি নিয়ে এলো।তাহমিদ অর্ণার চোখে মুখে ছিটিয়ে দিল। বেশ কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরলো অর্ণা।পিটপিট করে চোখ খুলে বোঝার চেষ্টা করলো কোথায় আছে। যখনই দেখলো তাহমিদের কোলে শুয়ে আছে। তখনই তড়িঘড়ি করে ওঠে পড়লো। এতক্ষণ তাহমিদের কোলে শুয়ে ছিল ভাবতেই অর্ণা লজ্জায় গাল দুটো লাল হয়ে গেছে। কান দিয়ে গরম ধোঁয়া বের হচ্ছে যেন।
নয়নতারা বেগম অর্ণার হাত ধরে গাড়ি থেকে নামলো।সদর দরজায় নিয়ে গিয়ে দাঁড় করালো।তারপর যা,যা নিয়ম-রীতি আছে তা পালন করিয়ে ড্রয়িংরুমে নিয়ে বসালো।

রাত দশটা বাজে। অর্ণাকে তাহমিদের রুমে বসিয়ে দিয়ে, সবাই চলে গেছে। দরজা বাহির থেকে লক করা।অর্ণার ক্লান্ত লাগছে। শরীরটাও দূর্বল।সকালে দুটো ব্রেড মা জোর করে খাইয়ে দিয়েছিল।তারপর আর কিছু খাওয়া হয়নি।এখানে আসার পর নয়নতারা বেগম অবশ্য বলেছিল খেতে। কিন্তু অর্ণা না করেছে। কেমন যেন বমি,বমি লাগছে।
অর্ণা খাট থেকে নামলো।পুরোটা রুম ঘুরে, ঘুরে দেখতে লাগলো। আভিজাত্যপূর্ণ রুমটা,।সবগুলো জিনিসই দামি,দামি। পুরো রুম জুড়ে ফুলের ছড়াছড়ি। ফুলের গন্ধ পুরো রুম জুড়ে বিরাজ করছে। অর্ণার আবার গিয়ে আগের জায়গায় বসে পড়লো। কি জানি তাহমিদ কখন আসবে?

ঘড়ির কাঁটায় তখন সাড়ে এগারোটা বাজে। অর্ণা তখনও ওভাবেই বসে আছে। তার বুকের ভিতর টিপটিপ করছে। হার্টবিট দ্রুত গতিতে ছুটছে।মনের ভিতর চলছে হাজারো কল্পনা- জল্পনা।এই বুঝি তাহমিদ দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো। তাহমিদের দাদি আসার সময় কিসব উল্টা-পাল্টা কথা বলেছে। অর্ণার তখন ইচ্ছে করছিল মাটি ফাঁক হোক অর্ণা তার ভিতর লুকিয়ে পড়ুক।
অর্ণার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলো তাহমিদ। হাতে কিসের যেন একটা প্যাকেট। সেটা সেন্টার টেবিলের উপর রেখে, দরজা লাগিয়ে অর্ণার পাশে এসে বসলো।অর্ণার হাত দুটো নিজের হাতে নিয়ে,চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
,সরি।খুব বেশি দেরী করে ফেলেছি তাই না?
অর্ণা মাথা দুলালো।যার অর্থ “না।
তাহমিদ আবারও বলল,
,আসলে ফ্রেন্ডদের সাথে বসেছিলাম।ওরা আসতেই দিচ্ছিলনা। তোমার কি কোনো সমস্যা হয়েছে?
,না কোনো সমস্যা হয়নি!আমি ঠিক আছি।
তাহমিদ ভালো করে লক্ষ্য করে দেখলো, অর্ণাা এখনো ফ্রেশ হয়নি।মেয়েেটাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে কতটুকু ক্লান্ত। সে গম্ভীর সুরে বলল,
,এতক্ষণ হয়ে গিয়েছে অথচ তুমি এখনও ফ্রেশ হওনি কেন?
অর্ণা কি বলবে ভেবে পেল না।সে মাথা নিচু করে রাখলো।আসলে সে ও চেয়েছিল ফ্রেশ হয়ে নিতে। কিন্তু পরে কাপড়ের লাগেজটা না পেয়ে, আর ফ্রেশ হওয়া গেল না।
অর্ণাকে চুপ করে থাকতে দেখে, তাহমিদের মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি চাপলো।সে হুট করেই অর্ণাকে কোলে তুলে নিল।আকস্মিক ঘটনায় ঘাবড়ে গেল অর্ণা।ভ য়ে তার কলিজায় পানি নেই।তাহমিদ অর্ণার মুখের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো। তারপর ওয়াশরুমে নিয়ে গিয়ে, শাওয়ার ছেড়ে দিল। অর্ণা গোল,গোল চোখ করে তাহমিদের দিকে তাকালো।সে বুঝতে পারছে না। তাহমিদের এরকম করার কারণ কি?অর্ণাকে বললেই হতো, সে তো নিজ থেকেই আসতো।
শাওয়ারের পানি দুজনকে ভিজিয়ে দিচ্ছে। তাহমিদের চুলের পানি গুলো এসে অর্ণার মুখের উপর পরছে।তাহমিদ আরেকটু শক্ত করলো হাতের বাঁধন। ফলস্বরূপ তাদের মধ্যে আর একবিন্দু পরিমাণ জায়গা ফাঁক রইলো না। তাহমিদ অর্ণার কানের কাছে মুখ নিয়ে গেল,ফিসফিস করে বলল,
,এভাবে তাকিয়ে থেকো না বউ!আমি যে হার্ট অ্যাটাক করে মা রা যাবো।
তাহমিদের কথায় ব্যাপক লজ্জা পেল অর্ণা।মনে,মনে বলল,অসভ্য লোক কোথাকার। নিজে তাকিয়ে থেকে এখন আবার আমাকে বলা হচ্ছে হুহ!
তাহমিদ চোখ বন্ধ করে ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছে। অর্ণাকে দেয়ালের সাথে চেপে, একহাত দিয়ে অর্ণার ঘাড়টা আঁকড়ে ধরলো। আস্তে, আস্তে যেই না অর্ণার ঠোঁটের কাছে মুখ নিয়ে গেল, ওমনি বড় একটা হাঁচি দিয়ে ওঠলো অর্ণা।
,হা,হা,হাচ্চু!
তাহমিদ বিরক্তি নিয়ে তাকালো অর্ণা দিকে। মুখ কালো করে বলল,
,এটা কি হলো?তোমার হাঁচি আসার কোনো সময় পেল না? বেছে,বেছে আমার রোমান্স করার সময়ই আসতে হলো। অসহ্য!
অর্ণা অসহায় মুখ করে তাকালো। সে কি আর ইচ্ছে করে করেছে। হাঁচি তো আর তাকে বলে আসেনি, যে সে আটকাবে।তাহমিদ কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো অর্ণার দিকে। তারপর অর্ণাকে গোসল করতে বলে বের হয়ে গেল। তাহমিদ বের হতেই ফিক করে হেসে ওঠলো অর্ণা।একদম ঠিক হয়েছে!

চলবে,,,
#আমায়_একটু_ভালবেসো
#জান্নাতুল_ফেরদৌস_কেয়া

(২৩)

গোসল শেষ করে অর্ণা ওয়াশরুমের দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো। তাহমিদ ততক্ষণে কাপড় বদলে খাটের উপর শুয়ে আছে। অর্ণাকে এভাবে ভেজা কাপড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করলো,
,কি ব্যাপার?এই ভেজা কাপড়ে দাঁড়িয়ে আছো কেন?যাও কাপড় বদলে এসো!
অর্ণা অসহায় মুখ করে বলল,
,আমার কাপড়ের লাগেজটা তো ঘরে আনা হয়নি।সম্ভবত আসার পরে তানিয়ার ঘরে রাখা হয়েছিল। সেখান থেকে আর নিয়ে আসা হয়নি।এখন কি পড়বো?
তাহমিদের কপালে ভাঁজ পড়লো।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো,বারোটা বাজে।এতরাতে তানিয়াকে ডাকা ঠিক হবে না। আর কোনো উপায় ও খুঁজে পাচ্ছে না। হঠাৎই কি যেন মনে পড়লো তাহমিদের। কোনায় থাকা ওয়াড্রবটা খুলে কি জানি খুঁজতে লাগলো।কাঙ্ক্ষিত জিনিসটি হাতে পেতেই মুচকি হাসলো তাহমিদ। অর্ণার সামনে এসে, হাত বাড়িয়ে এগিয়ে দিল।
,নাও এই শাড়িটা পড়ো! এখানে ব্লাউজ ও আছে। তোমার হয়ে যাবে।
অর্ণা ইতস্তত বোধ করলো। নিচু স্বরে বলল,
,কার এগুলো?
তাহমিদ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,
,আমার মায়ের। আম্মুর বেশ কিছু জিনিসই আমার কাছে আছে। শাড়িগুলো তার মধ্যে অন্যতম।যখনই মায়ের কথা মনে হয়। তখনই এই শাড়িগুলো বুকের মাঝে নিয়ে বসে থাকি। যেন মা আমাকে জড়িয়ে রেখেছে, এমন মনে হয়। এগুলোকে কখনো আমি কাউকে ধরতে দেয় না। আজকে তোমাকে দিলাম।যত্ন করে রেখো!
অর্ণা মুচকি হাসলো। শাড়িটা নিয়ে আবারও ওয়াশরুমে চলে গেল।
খয়েরী রঙের শাড়িটা, অর্ণাকে বেশ মানিয়েছে। একদম নতুন বউ,নতুন বউ লাগছে। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে অর্ণা বারান্দায় গেল কাপড় মেলতে। আর এদিকে অর্ণাকে দেখো তার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে তাহমিদ। ভুলেও চোখের পলক ফেলছে না। অর্ণা রুমে এসে বিছানায় বসলো।আনমনে বলল,
,উফফ! এখন যে কি শান্তি লাগছে তা বলে বোঝানো যাবে না।সারাদিন শেষে এই গোসলটা সত্যিই প্রয়োজন ছিল।
এই কথা বলে অর্ণা তাহমিদের দিকে তাকালো। তাহমিদ এমন করে তাকিয়ে আছে দেখে, অর্ণা ভ্রু কুঁচকে ফেলল। হাত দিয়ে তুড়ি মেরে বলল,
,ও হ্যালো!কোথায় হারিয়ে গেছেন?
তাহমিদ মোহগ্রস্তের মতো বলল,
,তোমার মাঝে।
অর্ণা বিষম খেল।লোকটার মুখে কিছু আটকায় না।অর্ণা কপট রাগ দেখিয়ে বলল,
,কি বলছেন আবল-তাবল।আমার মাঝে মানে?
তাহমিদ এগিয়ে এলো।তা দেখে অর্ণা ভড়কে গেল। লোকটার মতলব কি? অর্ণা পিছাতে লাগলো। রাগার চেষ্টা করলো। কিন্তু লাভ হলো না।এই মূহুর্তে তার শুধু বুক ধুকপুকই করছে এছাড়া আর কিছু না।তাহমিদ খপ করে অর্ণার কোমর পেঁচিয়ে ধরলো। উল্টো দিক থেকে অর্ণাকে জরিয়ে ধরে, নিজের সাথে মিশিয়ে নিল। অর্ণার কানের কাছে মুখ নিয়ে তাতে আলতো কামড় দিল।ফিসফিস করে বলল,
,আর কতো পালাবে বউ?এবার তো ধরা দাও!
অর্ণার শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত গতিতে বাড়ছে। তাহমিদের দিকে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
,আপনি কি বলছে,,,,,,
অর্ণাকে আর সুযোগ দেয়া হলো না।তার আগেই তার ওষ্ঠদ্বয় তাহমিদ নিজের দখলে নিয়ে নিল।আকস্মিক ঘটনায় হতবিহ্বল হয়ে গেল অর্ণা।তার সর্বাঙ্গে শীতল শ্রোত বয়ে গেল। জীবনে এই প্রথম কোনো পুরুষের এতো গভীর ছোঁয়া সে অনুভব করছে। তার শরীর থরথর করে কাঁপতে লাগলো।অর্ণা শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো তাহমিদ কে ।
(বাকীটা কি হবে তা আপনারা কল্পনা করে নিন।আমি আর লিখতে পারুম না 🙈আমার শরম করে।🫢)

রাত প্রায় দুটো।পর্ণা জেগে আছে।কয়েকটি রাত না ঘুমানোর কারণে চোখের নিচে কালো দাগ পড়েছে। সেদিকে খেয়াল নেই তার। সে খুব সুন্দর করে সাজাতে ব্যস্ত। আদনানের দেয়া নীল শাড়িটায় তার শরীরে জড়ানো। মুখে হালকা কিছু সাজ।তার মৃত্যুর জন্য সমস্ত রকমের আয়োজন সে করে রেখেছে। এখন আদনান কে কল করবে।ওর সাথে শেষবারপর মতো কথা বলে তারপর চুপি চুপি বাবার মায়ের রুমে যাবে। তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে। তারপর যা করার করবে।পর্ণা আদনানের নাম্বারে ডায়াল করলো। তিনবার রিং হয়ে কেটে গেল।পর্ণা আবার দিল।
ফোনের বাইব্রেট করার শব্দে ঘুম ভাঙলো আদনানের।বিছানা হাতড়ে ফোনটা খুঁজে বের করলো।তারপর রিসিভ করে কানে নিয়ে গুঁজলো।
,হ্যালো কে বলছেন?
পর্ণার শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল হাওয়া বয়ে গেল। আদনানের ঘুম ঘুম কন্ঠটা কি মারাত্মক শোনাচ্ছে। পর্ণার ভিষণ ইচ্ছে হলো আদনানের মুখটা দেখার। কি সেটা কি আর সম্ভব। এই ভেবে দীর্ঘ শ্বাস ফেলল।
আদনাান ওঠে বসলো।মোবাইলের মধ্যে নাম্বারটা দেখে বুঝলো পর্ণা ফোন দিয়েছে।আদনান কোনোরকম ভণিতা ছাড়া বলল,
,কিসের জন্য এই মাঝরাতে ফোন দিয়েছো, জানতে পারি?
পর্ণা বারান্দায় গেল। আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,
,আচ্ছা আদনান, আমি যদি তোমাকে ছেড়ে চলে যায়, তবে তুমি কি কষ্ট পাবে?
আদনান বিরক্ত হলো। মাঝরাতে ফোন দিয়ে এসব বলার মানে কি? পর্ণা যেন তার কা টা ঘা য়ে নুনের ছিঁটা দিচ্ছে । আদনান রুক্ষ কন্ঠে বলল,
,তুমি যদি আমাকে ছেড়ে থাকতে পারো।তবে আমি কেন পারব না? আমিও পারবো তুমি চিন্তা করো না।
,হুম। নিজের যত্ন নিবে।আর সুন্দর, ভালো দেখে একটা মেয়েকে বিয়ে করে সুখে থাকবে।
আদনানের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো।কাঠ,কাঠ কন্ঠে বলল,
,এতরাতে তুমি আমাকে ফোন দিয়েছে, এইসব বলার জন্য? পর্ণা তোমার কি মনে হচ্ছে না,তোমার এইসব কথা জাস্ট বিরক্তিকর!শুনো তোমার এই সো কল্ড কথাবার্তা শোনার আমার সময় নেই। আমি রাখছি!
পর্ণা মলিন হাসলো।অনুনয় করে বলল,
,প্লিজ আর একটু কথা বলবো।তারপর আর কোনোদিন তোমাকে ফোন দেব না। বিরক্ত করবো না। আমার এই কথাটা রাখো!
আদনান কি যেন ভাবলো। তারপর বলল,
,ঠিক আছে, বলো কি বলবে।
,শুনো আমি যদি না থাকি, তবে আমায় ক্ষমা করে দিও।ভুল তো মানুষ মাত্রই হয় তাই না? আমি জানি আমাকে ভালবেসে তুমি অনেক কষ্ট পেয়েছো।হয়তো তোমার কষ্ট ফিরিয়ে নিতে পারবো না। তবে আমি আমার ভুলের প্রায়শ্চিত করবো।রাখছি ভালো থেকো!
এই বলে পর্ণা ফোন কে টে দিল।আদনান কিছুক্ষণ অবাক হয়ে বসে রইলো।পর্ণার কথা গুলো তার বোধগম্য হয়নি।
পর্ণার ধীর পায়ে বাবা মায়ের রুমের কাছে এলো।পাপিয়া বেগমের শরীর ঠিক নেই।বুকে বেশ কয়েকবার চাপ অনুভব করছে। তাই আজ সকাল সকাল ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়ে গেছে। আশোক সাহেবের ও একই অবস্থা। অর্ণা চলে যাওয়ায় পর তাদের কারোর মনমানসিকতা ভালো নেই।পর্ণা দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো। বাবা মায়ের পায়ের কাছে গিয়ে বসে কাঁদতে, কাঁদতে বলতে লাগলো,
,মা বাবা ছোট থেকে তোমরা অনেক কষ্টে আমাদের মানুষ করেছো।অর্ণাকে মানুষ করতে পারলে ও আমি অমানুষই রয়ে গিয়েছি।ছোট থেকে তোমাদের অনেক ক্ষ তি করেছি।তোমাদের মেয়েকে মৃ ত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছি।কিন্তু তোমরা কোনো অভিযোগ করোনি।সব মুখ বুঁজে সহ্য করেছো।আমি তোমাদের কাছে ক্ষমা চাইছি।সামনা-সামনি এই কথাগুলো বলার মুখ আমার নেই। তাই এভাবে বলছি। আসলে কি বলতো মা জারজ রা না এমনই হয়।ওরা ভালো হতে পারে না। ওদের মস্তিষ্কে ভালবাসা নামে কোনো জিনিস থাকে না।যা থাকে তা কেবল হিংসা। প্রতিবারই আমি অর্ণাকে দেখে ভাবতাম,ও আর আমি তো একদিনই জন্মেছি। তবে কেন আমার এই দশা।তোমার যখন আমায় আদর করতে, আমার কাছে তা কেবল করুণায় মনে হতো।তাই তো এত কষ্ট দিয়েছি অর্ণাকে।
পর্ণা শ্বাস নিল।চোখের পানি গুলো পাপিয়া বেগমের পায়ে পড়ছে।পর্ণা মায়ের পায়ে চুম্বন করলো। ঘর থেকে বের হবার আগে বলে এলো,
,পারলে আমায় ক্ষমা করো মা।তোমাদের ভালবাসার মূল দিতে পারিনি তাই এমন সিদ্ধান্ত।

চলবে,,,
(রেসপন্স করবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here