আমায় একটু ভালবেসো পর্ব -২৪+২৫

# আমায়_একটু_ভালবেসো
#জান্নাতুল_ফেরদৌস_কেয়া

(২৪)

পর্ণা রুমে এসে দরজা বন্ধ করলো। খাটের উপর বসে পেটে হাত রেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো।
,আমায় ক্ষমা করিস বাবু। তোর এই কল ঙ্কিনী মা, তোকে নিজ হাতে মে রে ফেলছে। তোকে এই পৃথিবীর আলো দেখাতে অক্ষম সে।তার যে ভিষণ ভ য় হয়,যদি তুই তার মতো হোস! এমন ঘৃনিত জীবন বাস করিস! তাই এমন করছে। জানি কষ্ট হবে, তবুও একটু সহ্য করে নিস।

পর্ণা সিলিং ফ্যানের মাঝে ওরনা দিয়ে দঁড়ির ফাঁ স বানালো।পেটে হাত দিয়ে চেয়ার এনে তার উপর ওঠলো।

প্রচন্ড তৃষ্ণায় গলা শুকিয়ে গেছে আয়ানের।পানি খেতে ওঠে দেখলো,জগে পানি নেই। তাই নিচে নামছে পানি খাওয়ার জন্য।
আয়ানের রুমটা দোতলার একদম শেষ কর্ণারে।তাই আসার সময় সবগুলো রুমই দেখা যায়।আয়ান এলোমেলো পায়ে হাঁটছে। ঘুমের ঘোরে কিছুই মাথায় ঢুকছে না।হঠাৎই কারো কান্না শব্দ শুনে থমকে দাঁড়ায় আয়ান।ভালো করে লক্ষ্য করেতেই বুঝলো,কান্না টা পর্ণার রুম থেকে আসছে। আয়ান ভাবলো,হয়তো আদনানের সাথে ঝগড়া হয়েছে তাই কাঁদছে। এমনিতেও ওর সাথে কথা বলার কোনো ইচ্ছে আয়ানের নেই।ওই মেয়ের যে বদজাত। আর নয়তো কি, কেউ কারো সাথে এমন করো?
আয়ান পা চালিয়ে চলেই যাচ্ছিল।কিন্তু হঠাৎ আবার কি মনে করে যেন পর্ণার রুমে উঁকি দিল।পর্ণার রুমের সামনের জানালাটা খোলা।সেটা দিয়েই আয়ান যা দেখলো,তাতে পায়ের তলে মাটি সরে গেল তার।
পর্ণা নিজের গলায় ওড়না দিয়ে প্যাচ দিয়েছে।পা দিয়ে চেয়ারটা চেষ্টা করছে সরাতে।হঠাৎ শব্দ করে চেয়ারটা নিচে পরলো। আর পর্ণা কাতরাতে লাগলো।চেয়ার পরার শব্দে ধ্যান ভাঙলো আয়ানের।সে একটা ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছিল। শব্দ শুনে,আয়ান দৌড়ে দরজার কাছে গিয়ে দরজা ধাক্কাতে লাগলো।
,এই পর্ণা, পর্ণা।কি করছিস তুই?দরজা খোল,দরজা খোল বলছি?
বলেই জোরে, জোরে দরজা ধাক্কা দিয়ে ভাঙ্গার চেষ্টা করছে।
চারিদিক নিঝুম, নিস্তব্ধতায় ছেঁয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেই নিস্তব্ধতা কে ভেঙে, পুরো বাড়ি জুড়ে ছড়িয়ে পরলো আয়ানের চিৎকার।
বাড়ির প্রায় সকল সদস্যই সজাগ হয়ে গেছে। আয়ান আর ইশান মিলে ধাক্কা দিতেই দরজা ভেঙে গেল।অনল সাহেব জলদি গিয়ে দু-হাতে পর্ণার পা উপরে তুলে নিল।আয়ান খাটের উপর ওঠে রশি কা টার চেষ্টা করছে। প্রায় পয়তাল্লিশ সেকেন্ড পর পর্ণার গলা থেকে রশি সরে যায়।তার চোখগুলো উল্টো ফেলেছে। ইশান দ্রুত তাকে কোলে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্য রওনা হয়।
আকস্মিক ঘটনায় সকলেই হতবিহ্বল। পর্ণা যে এমন একটা কাজ করবে,তা কেউ ভাবতেই পারেনি।সবার মাথায় হাত!পাপিয়া বেগম ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠলো। মেয়ে টা কেন এমন হয়ে গেলে? বলেই জোরে কেঁদে দিল।

হাসপাতালে এনে পর্ণাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।আয়ান আদনানকে কল করে সবকিছু বলে।ফোন পেয়ে গাড়ি নিয়ে দ্রুত ছুটে আসে আদনান। তার মাথা হ্যাং হয়ে আছে। তবে কি এই জন্যই ফোন দিয়েছিল পর্ণা?

সকাল নয়টার দিকে জ্ঞান ফিরে পর্ণার। জ্ঞান ফিরার পর যে কথাটি আগে বলে পর্ণা তা হলো,
,আমার বাচ্চা! আমার বাচ্চা কেমন আছে ডাক্তার? ও বেঁচে আছে তো?
পর্ণার চিৎকার শুনে ডাক্তার দৌড়ে আসে। পর্ণার কথা শুনে জিজ্ঞেস করলো,
,আপনি প্রেগন্যাট?
,হ্যা। আমার বাচ্চা?
ডাক্তার বিড়বিড় করে বলল,
,ওহ নো!
পর্ণা উত্তেজিত হয়ে বলল,
,কি হয়েছে ডাক্তার? আমার বাচ্চা টা ঠিক আছে তো?
ডাক্তার কিছু একটা ভেবে বলল,
,দেখুন আমরা শুধু আপনাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছি।তাই বুঝতে পারছি না,আপনার সন্তান এখন কেমন আছ!আমি এখুনি কিছু টেস্ট করিয়ে দেখছি বিষয়টা।
ডাক্তার কেবিন থেকে বের হয়ে গেল। পর্ণার চিৎকার শুনে সবাই এসে দাঁড়ালো দরজার সামনে। পর্ণার মুখে বাচ্চার কথা শুনে সবাই আরেক দফা চমকালো।
আদনান যখন বুঝতে পারলো বিষয়টা, তখন রে গে গিয়ে দাবানীয় এক চড় বসালো পর্ণার গালে।পর্ণার গাল চেপে ধরে বলল,
,এই কি বললি? কি বললি একটু আগে। আমার সন্তান আসছে পৃথিবীতে। আর তুই কি করলি,তাকে মা রার জন্য ওঠে-পড়ে লাগলি। আরে মায়েরা তার সন্তান কে আগলে রাখে।বিপদ এলে তা নিজে মোকাবেলা করে আর তুই, তোর নিজের স্বার্থের জন্য একটা নিষ্পাপ বাচ্চা কে মে রে ফেলছিস? তাকে দুনিয়ার আলো দেখতে দিলি না।এই তোর সাহস হলো কি করে, আমার সন্তান কে মা রার কথা চিন্তা করা? আজ যদি আমার সন্তানের কিছু হয়।তবে তোকে জানে মে রে ফেলবো আমি।কথাটা মাথায় রাখিস!
আদনান আরো কিছু বলতে, কিন্তু তার আগেই তাকে ধরে বাইরে নিয়ে গেল সবাই। আদনান ফ্লোরে বসে কান্না ভেঙে পড়লো।দু’হাতে মুখ ডেকে ডুকরে কেঁদে ওঠলো। চিৎকার করে বলল,,
,হে আল্লাহ! এ কোন পা পের শাস্তি দিচ্ছো তুমি আমায়?আমাকে দুঃখ দিলে দাও।কিন্তু ঐ নিষ্পাপ শিশুটা কেন এই কষ্ট সহ্য করবে?আল্লাহ তুমি আমার সন্তানের সকল বিপদ এনে আমায় দাও। তবুও তাকে সুস্থ করে দাও!

সবাই আদনানকে সান্ত্বনা দিল। যে কিছু হবে না ঠিক হয়ে যাবে। ডাক্তার পর্ণাকে বিভিন্ন ধরনের টেস্ট করাচ্ছে। প্রায় ত্রিশ মিনিট পর ডাক্তার বাইরে বের হলো।ডাক্তার বের হয়েছে দেখে সবাই এগিয়ে গেল তার দিকে। প্রত্যেকের মুখে একই প্রশ্ন,” ডাক্তার বাচ্চাটার কি অবস্থা?
ডাক্তার চিন্তিত সুরে বলল,
,আপনারা ঠিক সময়, ফাঁ সির রশিটা কে টে ফেলেছেন। তাই বিশেষ কিছু হয়নি।তবে এখনো ক্লিয়ার করে কিছু বলা যাচ্ছে না। আমরা বাচ্চাটার হার্টবিট শুনতে পাচ্ছি। তবে অন্য কোনো ক্ষ তি হয়েছে কিনা তা বলতে পারছি না।যাইহোক এখন থেকে ওনাকে সাবধানে রাখবেন। আর এরকম যাতে দ্বিতীয়বার না ঘটে, সেই দিকে খেয়াল রাখবেন।
সবাই যেন খুশি হতে গিয়ে ও হতে পারলো না।কোথায় যেন একটা সুর কে টে গেছে।
পর্ণাকে তখন বেডে দেয়া হয়েছে। আদনান করিডোরে বসে আছে। পর্ণাকে দেখার তার কোনো ইচ্ছে নেই। দেখলেই হয়তো গ লা টিপে ধরতে ইচ্ছে হবে।
যারা,যারা এসেছিল সবাই চলে গেছে। শুধু পাপিয়া বেগম আর আদনান রয়ে গেছে।
পাপিয়া বেগম ধীর পায়ে কেবিনে প্রবেশ করলো। পর্ণা তখন চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিল। বাচ্চা টা বেঁচে আছে শুনে, সে শান্ত হয়েছে। পাপিয়া বেগম মেয়ের মাথায় হাত রাখলো। পর্ণার বিদ্যুৎগতিতে চোখ মেললো।মায়ের চোখের দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে ফেলল,
,পাপিয়া বেগম দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,
,কেমন আছো এখন?
,ভালো মা।
,হুম ভালো।তা রাতে ওমন একটা কান্ড কেন ঘটিয়েছো জানতে পারি?
পর্ণার চুপ করে রইলো।তার কি বলার মতো মুখ আছে। পাপিয়া বেগম এবার কিছুটা শক্ত হলো।কন্ঠে কাঠিন্য ভাব এনে বলল,
,কি হলো, কথা বলছো না কেন?জবাব দাও!
পর্ণা মৃদু কেঁপে ওঠলো।ঠোঁটে ঠোঁট চেপে বলল,
,আমি এসব নিজেকে শা স্তি দেয়ার জন্য করেছি মা!এই অপরাধ বোধ আমাকে কুঁড়ে, কুঁড়ে খাচ্ছিল।তোমরা আমাকে কোনো শাস্তি না দিয়ে আমাকে ছেড়ে দিলে,এটাই আমি মানতে পারছিলাম না।
,তাই এসব করেছো তাই তো? পর্ণা তোর যদি শরীর ভালো না থাকতো।তবে আজকে আমার হাতের একটা চড় তোর গালে পরতো।হ্যা রে,তুই তো তোর মায়ের থেকে ও নিকৃষ্ট। সে তো তোকে দশ মাস দিন গর্ভেধারণ করে তোকে জন্ম দিয়েছে। তারপর নাহয় ফেলে দিয়ে গেছে।ফেলে দিয়ে গেছে তাতে কি? তুই তো একটা জীবন পেয়েছিস, ভালবাসা পেয়েছিস,আপন মানুষ পেয়েছিস।কিন্তু তুই কি করছিলি,তাকে দুনিয়াতে আসার আগেই শেষ করে দিতে চেয়েছিলি। আজকে যদি আয়ান সঠিক সময় তোকে দরজা ভেঙে গিয়ে না বাঁচাতো।তবে এখন কোথায় থাকতি একবার ভাবতে পারছিস? অবশ্য ওসব ভেবে তোর কি লাভ?তুই তো শুধু নিজের কথায় ভাবিস।তোর জন্য অন্যের কোনো ক্ষ তি হলো কিনা,তা ভাবার তোর সময় আছে?
যাইহোক। এতদিন যা কিছু হয়েছিল তারজন্য আমি তোকে ক্ষমা করে দিয়েছিলাম।কিন্তু আজ তুই যা করলি,তা ক্ষমার অযোগ্য। তাই আজ থেকে আমি ভুলে যাবো,যে পর্ণা নামের আমার কোনো মেয়ে ছিল। আসছি!
#আমায়_একটু_ভালবেসো
#জান্নাতুল_ফেরদৌস_কেয়া

(২৫)

হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে পর্ণাকে, আদনানদের বাড়িতে নেয়া হলো। আদনান,অবশ্য জোর করেই এনেছে। তার এক কথা,”আমি আর কিছুতেই আমার সন্তানের, ক্ষ তি হতে দেব না”।পর্ণার আর কিছু বলেনি। সে মাথা নিচু করে সব শুনে গেছে।

সময় বহমান। সে কারো জন্য থেমে থাকে না। এভাবে কেটে গেল কয়েকমাস। অর্ণা আর তাহমিদ ভালোই আছে। তাদের ভালবাসার কেনো কমতি নেই। দু’জনেই একে-অপরের খেয়াল রাখে। একজন ঝগড়া করলে,অপরজন চুপ থাকে।এমন করেই চলছে তাদের জীবন।

অপরদিকে পর্ণার,জীবনে সুখ নেই! আদনান সবদিকে খেয়াল রাখলে ও, পর্ণার সাথে কথা বলে না। পর্ণার কখন কি লাগবে,না লাগবে সব খেয়াল রাখে। তবে পর্ণার সাথে কোনো কথা বলে না।হয়তো অভিমান জমেছে মনে, তাই।
বাড়ির সকলেই পর্ণাকে ক্ষ মা করে দিয়েছে। এমন কি সবাই চেষ্টা করে পর্ণা, যাতে সবসময় হাসি-খুশি থাকে। এমন সময় মেয়েদের বেশি মুড-সুয়িং হয়।তাই সবাই পর্ণাকে কথায় ব্যস্ত রাখে সবসময়। কিন্তু যত যাই-হোক।মেয়েরা তার প্রেগন্যান্সির সময় তার হাসবেন্ড কে পাশে চাই! তাদের আহ্লাদী পেতে চাই।যার কিছুই পাচ্ছে না পর্ণা।আদনান সারাদিন শেষে বাড়িতে ফিরে। গোসল সেরে ভাত খায়,তারপর আবার কলেজের কাজ নিয়ে পড়ে থাকে।রাত নয়টায় সেই কাজ শেষ করে, নিচে বিছানা করে শুয়ে পড়ে। পর্ণার তখন ভিষণ মন খারাপ হয়। তার ইচ্ছে করে, আদনানের বুকে মাথা রেখে ঘুমোতে।কিন্তু আদনান তাকে ধারে কাছেও সহ্য করতে পারে না।দিন গুলো অসহ্য কাটছে পর্ণার।কেমন যেন দম বন্ধকর। প্রিয় মানুষের অবহেলা যে কতটা অসহনীয়। তার হাড়ে, হাড়ে টের পাচ্ছে পর্ণা।
পর্ণার পেট বেশ উঁচু হয়েছে। হাত,পায়ে পানি এসে গেছে। এইতো পরশুদিন নয়মাস হলো। আজকাল শরীর বেশ জ্বালা-পোড়া করে। সারারাত ঘুমুতে পারে না। পর্ণার জন্য আদনান ও জেগে থাকে।যতক্ষণ পর্যন্ত না পর্ণা ঘুমাবে।ততক্ষণ সে ও সজাগ থাকে। পর্ণার তখন অনেক খারাপ লাগে।কতদিন যে বলেছে, “আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন। আমি ঠিক আছি”।
কিন্তু আদনান শুনে না।সে তার মতো চলে।

আজ পর্ণাকে চেক-আপের জন্য নেয়া হবে। সকাল থেকেই আদনান বেশ ব্যস্ত।পর্ণাকে রেডি করিয়ে খাইয়ে দেয়া।তারপর নিজে তৈরি হওয়া।সব রিপোর্ট গুলো একসাথে করা। সবমিলিয়ে বেশ ব্যস্ত।পর্ণা অবশ্য কয়েকবার বলেছে,সাহায্য করতে। কিন্তু আদনান এমন ভাবে তাকালো,যে পর্ণা চুপ হয়ে গেল।
সবকিছু রেডি করে তারা নিচে নামলো।পর্ণা গাড়িতে ওঠতেই আদনান এসি অন করে দিল।গরম মেয়েটা একদম সহ্য করতে পারে না। দোতলা থেকে নেমে আসতেই হাঁপিয়ে গেল। গাল দুটো গোলাপি রঙ ধারণ করেছে। নাকে বিন্দু, বিন্দু ঘাম,ফোলা,ফোলা নাক মুখ।আদনান লুকিং গ্লাসে পর্ণার চেহারাটা দেখতে লাগলো। মা হওয়ার সময়টাতে, সব মেয়েরাই কি পর্ণার মতো সুন্দর হয়।নাকি পর্ণায় আলাদা?মেয়েটাকে আজ-কাল এতো সুন্দর লাগে,আদনানের ইচ্ছে হয় খেয়ে ফেলতে।
আদনান দীর্ঘ শ্বাস ফেলল।সবকিছু যদি ঠিক থাকতো,তবে কতই না সুন্দর হতো সব।

তাহমিদ অফিসে যাবে। তাই প্রতিদিনের মতো গোসল করে এসে খাটে বসেছে। হাতে থাকা ভেজা তোয়ালেটা খাটের উপর রাখলো।তার চুল থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে।
অর্ণাকে বেশ কয়েকটা ডাক দেয়া হয়েছে। প্রতিবারই জবাব এসেছে ” আসছি”
তাহমিদ আবার ডাক দিতে যাবে। এমন সময় হাজির হলো অর্ণা।হাতে তার ভাতের প্লেট। আজ ওয়াহিদ সাহেব বাড়িতে নেই। এজন্য ঘরেতে বসে খাবে তাহমিদ।বাবার কারণে শুধু সবার সাথে কথা বলে তাহমিদ। আর নয়তো তাও বলতো না।
অর্ণা রুমে ঢুকেই চেঁচিয়ে ওঠলো।দাঁতে দাঁত খিঁচে বলল,

,এই,আপনার কি আক্কেল-জ্ঞান নেই।কোনো আক্কেলে ভেজা তোয়ালেটা খাটের উপর রাখলেন।তার উপর আবার মাথাটা মুছেননি।চুলের পানি দিয়ে তো, ফের শরীর ভিজে যাচ্ছে।

তাহমিদ অর্ণার কথার কোনো প্রতিক্রিয়া করলো না।উল্টো অণার হাত ধরে টেনে তার কাছে আনলো। দুহাত দিয়ে কোমড় পেঁচিয়ে পেটে নাক গুঁজলো।
অস্পষ্ট সুরে বলল,

“কেন প্রতিদিন চিৎকার করো।জানোই তো আমি এমন।

” তাই বলে নিজেকে শুধরাবেন না? জেঠিমা তো বলল,আপনি নাকি অনেক ম্যাচিউর।নিজের কাজ সব নিজে করেন। কাউকে ধরতে দেন না।তবে এখন কি হলো?

“হ্যা। এতদিন গুছালো ছিলাম।কারণ তুমি ছিলে না।এখন আমার গুছিয়ে দেবার লোক আছে। তাই এখন একটু অগোছালো হলাম।তোমার যদি সমস্যা হয়,তবে আবার আগের মতো হয়ে যাবো।
অর্ণার মন খারাপ হয়ে গেল। সে কি আর ওভাবে বলেছে নাকি?তার তো ভালোয় লাগে তাহমিদের এমন দুষ্টমি গুলো। শুধু তাহমিদ যেনো খেপাতে না পারে, এজন্য ওমন করে বলে।
তাহমিদ বুঝি বোঝলো।যে অর্ণা রাগ করেছে। তাই অর্ণার গাল টিপে বলল,

” আরে মজা করছিলাম। তুমি বললেই কি আমি ঠিক হয়ে যাবে নাকি?এতদিন পর একটা জ্বালানোর মানুষ পেয়েছি। তাকে কি এতো সহজে ছাড় দিয়ে দিবো।
নাও এখন আমার মাথা মুছে,শার্ট পড়িয়ে দাও।তারপর টাই টা বেধে দিবো।আরো আছে,,,

অর্ণা তাহমিদ কে থামিয়ে দিয়ে বলল,

“থাক আর বলা লাগবে না। আমি জানি কি করতে হবে।

অর্ণার কথায় দুজনেই হেসে ওঠে। তারপর অর্ণা তার কাজে লেগে পড়ে।
কেবিনেট থেকে শার্ট নামিয়ে, তাহমিদকে পরিয়ে দিল।তারপর তার টাই বেধে, হাতে ঘড়ি, তার ওয়ালেট, গায়ে পারফিউম,সর্বশেষ কোট পরিয়ে দিল।
তাহমিদকে তৈরি করিয়ে দিয়ে, তাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিল অর্ণা। খাওয়ার সময় হুট করে চোখে জল এসে গেল তাহমিদের।তা দেখে অর্ণা ব্যতিব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

” কি হয়েছে আপনার?কাঁদছেন কেন?

তাহমিদ ধরা গলায় বলল,

“জানো অর্ণা,জন্মের পর তুমি আর আমার বাবাকে দেখেছি আমাকে এতো যত্ন করতে। এছাড়া আর কেউ করে না। এই যে দেখছো, আমরা একান্নবর্তী পরিবার। তবুও আমার ভালবাসার মানুষ খুবই কম।এই পরিবারে সবাই, সবার সার্থের জন্য সবকিছু করে। এই যে দেখছো এতো ভালো জেঠিমা,ওনিও এমন। উনার বড় মেয়েকে আমার বাবার টাকায় বিয়ে দিয়েছে। ছোট ছেলেকে আমার বাবার টাকায় লেখাপড়া করিয়ে বিদেশ পাঠিয়েছে। এখন যে ছোট মেয়ে আছে। তার দায়িত্ব ও বাবার। একথায় এই পরিবার টা বাবার জন্য এক হয়ে আছে। কারণ সব কিছুর খরচ বাবা দেয়।বাকিরা আমাদের টাকায় খায়, আর নিজেদের টাকা জমায়। ভাইয়া তো এইজন্যই ভাবীকে নিয়ে বিদেশ চলে গেছে। কারণ এতো করে ও ওরা আমার ভাইয়ের বাচ্চাটাকে বাঁচতে দেয়নি।

অর্ণা অবাক হলো।কি বলছে এসব তাহমিদ। সে অবাক সুরে বলল,

” কি বলছেন?কে বাঁচতে দেয়নি?

তাহমিদ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,

“ভাইয়ার বিয়ের পর, ভাই আর ভাবী এখানেই থাকতো।কিন্তু হঠাৎ একদিন ভাইয়া পোষ্টিং হয় অন্য জায়গায়। ভাবী তখন আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তাই ভাইয়া ঠিক করে ভাবীকে এখানে রেখে,সে একায় যাবে। হয় ও এমন। ভাবীকে জেঠিমা, আর কাকীর দায়িত্বে দিয়ে যায়। আমি তখন বাবার সাথে বাইরে থাকি সবসময়। কারণ বাবার নির্বাচন নিয়ে বেশ ঝামেলা চলছিল। বাড়িতে ভাবী আর বাকিরা। ভাইয়া চলে যাওয়ার পরই,ভাবীর উপর শুরু হয় অত্যাচার।তাকে দিয়ে বাড়ির সব কাজ করানো,রান্নাবান্না, যা আছে সব কিছু। যেখানে ঐ মেয়ের কাজ অন্যদের করে দেওয়া উচিৎ ছিল।সেখানে তাকে দিয়ে এতসব করিয়েছে।ভাবী হাসিমুখে সব মেনে নেয়।কারণ এটা তো তারই বাড়ি এই ভেবে।এমনই একদিন ভাবী যায় বাবার কিছু কাপড়চোপড় ধোঁয়ার জন্য বাথরুমে। আর সেখানেই সাবানের মধ্যে পিচ্ছিল খেয়ে পরে যায়।সাথে, সাথে ব্লিডিং শুরু হয়।ভাবী অনেক ডাকাডাকি করে। কিন্তু ওরা সবাই তখন টিভি দেখায় ব্যস্ত।তাই কেউ শুনতে পাইনি।এমন সময় আমি এলাম বাড়িতে। বাবার কিছু কাগজ-পত্রের জন্য। রুমে ঢুকেই দেখি ভাবীর এই অবস্থা। সাথে, সাথে তাকে নিয়ে হাসপাতালে যায়।কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।বাচ্চা টা মা রা যায়। ভাবী অবস্থা যে তখন কেমন ছিল।তা আমি নিজের চোখে দেখেছি।বেচারীর বুক ভরা হাহাকার।
ভাইয়া এসে এসব শুনে আলাদা হতে চাই। কিন্তু বাবা রাজি না।তার এক কথা” জীবন গেলে ও আলাদা হতে পারবে না”সেদিন বাবার সাথে অভিমান করে, ভাবীকে নিয়ে দেশ ছাড়ে ভাইয়া। সেই যে গেল, আর আসেনি।বাবাও ফোন দেয় না।আমার সাথে কথা হয় মাঝে মাঝে। একটা মেয়ে হয়েছে। তিন বছর বয়স।কি যে পাকা হয়েছে।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here