আমায় একটু ভালবেসো পর্ব -২৬ ও শেষ

#আমায়_একটু_ভালবেসো
#জান্নাতুল_ফেরদৌস_কেয়া

(২৬)

অন্তিম পর্ব

তাহমিদের কথা শুনে অর্ণা অবাক হলো। সত্যি মানুষ কে চেনা বড়ই কঠিন। ওদের কে দেখলে বুঝাই যাবে না, যে ওরা এমন মনমানসিকতার।অর্ণা তাহমিদের কাঁধে হাত রেখে বলল,

“চিন্তা করো না।সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি বাবাকে বলব।যাতে ভাইয়াদের সাথে যোগাযোগ করে।

তাহমিদ হতাশার নিয়ে বলল,

” এই পরিবার আলাদা না হলো,ভাইয়া কখনোই ফিরবে না। যাইহোক আমার যাবার সময় হয়েছে। আমি আসছি।তুমি খেয়ে নিও!
তাহমিদ বেরিয়ে পড়লো অফিসের উদ্দেশ্য। অর্ণা তাহমিদের আধ খাওয়া ভাতগুলো খেয়ে রান্না ঘরে গেল।

এভাবেই কেটে গেল আরো কিছু দিন। হঠাৎ একদিন সকালে পেট ব্যাথা করতে লাগলো পর্ণা।প্রথমে ভেবেছে, কম হয়তো।কিন্তু বেলা যত গড়ালো।পর্ণার পেট ব্যাথাও বেড়ে গেল।ব্যাথা সহ্য করতে না পেরে পর্ণা আদনানকে কল করে। ফোন পেয়ে সাথে,সাথে ছুটে আসে আদনান। পর্ণার অবস্থা তখন বেহাল। তার বিল্ডিং হতে শুরু করেছে। যা দেখে আদনান ভয় পেয়ে যায়। পর্ণাট ডেটের আরো পনেরো দিন বাকি।এতো আগেই ব্যাথা ওঠেছে দেখে আদনান আরো ঘাবড়ে যায়।সে তারাতাড়ি পর্ণাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

হাসপাতালের করিডোরে পায়চারী করছে আদনান।পাপিয়া বেগম ওটির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আদনান হাসপাতাল আসার পর,পরই তাদের কে খবর দেয়া হয়।ডাক্তার এসে জানিয়েছে পর্ণাকে সিজার করাতে হবে। যেহেতু শুরুতেই একটা সমস্যা হয়েছিল।তাই তারা আর রিক্স নিতে চান না।আদনান আর কোনো দ্বিমত করেনি। সে একমনে আল্লাহ কে ডেকে চলছে। বাচ্চা টা যাতে সুস্থসবল থাকে এই তার প্রার্থনা।

দীর্ঘ একঘন্টা-বিশ মিনিট পর ডাক্তার বের হলো ওটি থেকে।মুখে মাক্স থাকায় বুঝা যাচ্ছে না তার ভাবভঙ্গি। সেখানে থাকা প্রত্যেকটা মানুষ গিয়ে, ডাক্তার কে ঘিরে ধরলো। সবার এক প্রশ্ন”মা ও বাচ্চা ভালো আছে তো? ”
ডাক্তার তার হাতে থাকা গ্লাভস্ খুলতে, খুলতে বলল,
,দু’জনেই ঠিক আছে। তবে মায়ের শরীরটা কিছু টা খারাপ। ঠিক মতো মেডিসিন নিলে ওটাও ঠিক হয়ে যাবে। আপনারা আরেকটু ওয়েট করুন।একটু পরেই তাদের কেবিনে শিফট করা হবে। আর হ্যা, আমাকে কিন্তু মিষ্টি খাওয়াতে ভুলবেন না ।কারণ,আপনি ছেলের বাবা হয়েছেন।
শেষের কথা টা আদনানের কাঁধে হাত রেখে বলল। খুশিতে আদনানের চোখ জল এসে ভীড় করলো।সত্যিই পৃথিবীতে বাবা হওয়ার মতো সুখ।হয়তো আর কিছুতেই নেই।
পর্ণাকে কেবিনে শিফট করলে,সেখানে গিয়ে ভীড় জমালে সকলে। উদ্দেশ্য বাচ্চা টাকে কোলে নেয়ার।পর্ণা ঘুমিয়ে আছে। তার হুঁশ জ্ঞান নেই।বাবুটাকে সবার প্রথমে আদনানের কোলে দেয়া হলো। ছেলেকে কোলে নিয়ে চুমুতে ভরিয়ে দিল আদনান।তার যে কি খুশি লাগছে। তা হয়তো বলে বোঝানো যাবে না। একটু পরই আদনানের কোল থেকে ছিনিয়ে নিল আয়ান।একে, একে সবাই নিল।

পাপিয়া বেগম ফোন দিয়ে অর্ণাকে জানালো পর্ণার কথা।অর্ণা বলল”আমরা আজকেই রউনা হব।”

ফোন রেখে অর্ণা ব্যাগ গোছাতে লেগে পড়লো।ফোন দিয়ে তাহমিদ কে বলল,লাঞ্চে যেন বাড়িতে চলো আসে।তারা আজ বেড়াতে যাবে। প্রথমে তাহমিদ না করে। পরে অর্ণা মন খারাপ হবে ভেবে রাজি হয়।
অর্ণা আজ ভিষণ খুশি।খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছে।কতদিন পর আজ বাড়িতে যাবে। বিয়ের পর শুধু চারবার গিয়েছে। তাও আবার দুদিন করে থেকেছে। অর্ণা মনে,মনে বলল”এবার বেশিদিন থেকে আসবো। দুপুর হতেই যথা সময় তাহমিদ চলে এলো।সে ফ্রেস হয়েই বেড়িয়ে পড়তে হলো।অর্ণা নাকি কি সারপ্রাইজ দিবে।তাই তারাতাড়ি যেতে হবে।

অর্ণারা পৌঁছাতে পৌঁছাতে বিকেল পেরিয়ে গেল।সূর্য তখন ডুবি,ডুবি অবস্থা। অর্ণারা সোজা গেল হাসপাতালে। সেখানেই সবাই আছে। তাহমিদ বাচ্চাটাকে দেখেই কোলে তুলে নিল। সে বাচ্চা অনেক পছন্দ করে।বাবুটাকে নিয়ে তাহমিদ খেলায় মেতে গেল। অর্ণা তার মায়ের সাথে কথা বলছিল,এমন সময় আদনান এসে অর্ণাকে ডাক দিল।

“অর্ণা একটু এদিকে আসবে।তোমার সাথে কিছু কথা ছিল!
অর্ণা ইতস্তত বোধ করে। আদনান কিসের জন্য ডাকছে তাকে?কি এমন কথা যা আলাদা বলতে হবে?
অর্ণা দ্বিধা নিয়ে মায়ের দিকে তাকায়।পাপিয়া বেগম যেতে ইশারা করলো।অর্ণা তাহমিদ দিকে তাকালো। সে বাচ্চা নিয়ে খেলছে। আপাতত এদিকে আসবে না।অর্ণা দ্রুত চলে যায় করিডোরে শেষ মাথায়।

প্রাইভেট হাসপাতাল।তাই কোলাহল তেমন একটা নেই। চারপাশ বেশ শান্ত। আদনান হালকা কাশলো অর্ণার মনেযোগ পাওয়া জন্য। অর্ণা বারবার এদিক-সেদিক তাকাচ্ছে। পাছেই না আবার তাহমিদ দেখে ফেলে।
আদনান লম্বা একটা নিশ্বাস নিয়ে বলল,

” অর্ণা তোমাকে কিছু কথা বলার জন্য এখানে ডেকেছি। আমার মনে হয় কথাগুলো তোমার জানা প্রয়োজন।

অর্ণা ব্যস্ত সুরে বলল,

“যা বলার জলদি বলুন।আমাকে যেতে হবে!

আদনান মুচকি হেসে বলল,

“তাহমিদ অনেক ভালোবাসে তোমায়। তাই না?

অর্ণা আদনানের চোখের দিকে তাকালো। মৃদু হেসে বলল,

” হুম।আর শুধু সে না।আমি ও তাকে প্রচন্ড ভালবাসি।আসলে আগে মরীচিকার পেছনে দৌড়েছি।এতদিনে চোখ খুলেছে।

“খুব ভালো। তুমি সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত টা নিয়েছো।যা আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। যাই-হোক পর্ণাকে নিয়ে কিছু কথা। যেগুলো কখনো সামনে আসেনি। সেগুলো বলার জন্যই তোমাকে এখানে ডেকেছি।

” আপনি বলুন, আমি শুনছি।

আদনান দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলতে লাগল,

“আসলে পর্ণা আমাকে বিয়ে করতে চাই নি, ওকে আমি বলেছিলাম। শুরুতেই যখন তোমাদের দুবোনকে দেখি,আমার খুব বিরক্ত হতাম।মনে হতো,একজন অযথাই কথা বলে।অপরজন একেবারে চুপচাপ। যখন আস্তে আস্তে তোমাদের সাথে পরিচয় হয়।তখন অবশ্য বিরক্তিভাব চলে গিয়েছিল।
তো একদিন পর্ণাকে দেখি রাস্তার পাশে। সাদা শাড়ি পরিহিত এক শুভ্রতা যেন। মেয়েটা হেলেদুলে কোথায় যেন যাচ্ছে। আমার মনে গেঁথে যায় সেই শুভ্রতাকে।পরক্ষণেই মনে হয় মেয়েটা আমার ছাত্রী। আমি কি করে তাকে নিয়ে এসব ভাবতে পারি?বাড়ি এসে নিজে নিজেই শাসালাম,যে তার দিকে যেন ভুলেও চোখ না দেই।কিন্তু মন!সে কি আর এতো বাঁধা মানে।ঠিকই ঐ মেয়েকে মন দিয়ে বসলো।আমার তখন বেহাল অবস্থা। একজন শিক্ষক হয়ে ছাত্রী কে বিয়ে করলে,লোকে কি বলবে?পড়ে সিদ্ধান্ত নেই, লোকে বললে বলুক। তবুও ঐ মেয়েকে চাই। পর্ণাকে এক নজর দেখার জন্য তোমাদের বাড়িতে টিউশনি করাতাম। এতটা ভালবাসতাম তাকে।হঠাৎ একদিন মা বলল তার ছেলের বউ চাই। আমি তখন বিপাকে পরি।ভেবেছিলাম আরো দু-এক বছর পর পর্ণাকে জানাবো আমার মনের কথা। কিন্তু মায়ের কথা শুনার পর। সেই আশা বাদ দেই।
তুমি তো জানো আমি স্পষ্ট কথা বলতে পছন্দ করি। তাই আর দেরি না করে পর্ণাকে বলে দেই আমার মনের কথা।সে ও রাজি হয়ে যায়। বিশ্বাস করো আমি জানতাম না পর্ণা মনে এসব চলছিল।আমি যখন বলি, “অর্ণা তো তোমার বড় বোন। তার আগে তোমার বিয়ে। এটা কি তোমার পরিবার মেনে নিবে?পর্ণা বলেছিল রাজি করানোর দায়িত্ব তার। বাকিটা সে ম্যানেজ করবে। এর পর কি হয়েছে তা তো তুমি জানোই।

অর্ণা বিস্মিত হয়।আদনান যে পর্ণাকে পছন্দ করতো। তা সে জানেই না।উল্টো আরো অবাক হতো এই ভেবে, যে পর্ণা কি করে আদনান কে রাজি করলো।তাকে বিয়ে করার জন্য।
আদনান অর্ণার দিকে তাকিয়ে বলল,

” আমি পর্ণাকে কলেজে নিয়ে যায়। তারপর কলেজ ভর্তি ছাত্র-ছাত্রী সামনে পর্ণাকে দিয়ে তার কুকীর্তি কথা স্বীকার করায়। কলেজ সবাই যেন গেছে তার অপরাধের কথা। সে এখন ঘর থেকে বের হয় না। তার কোনো বন্ধু ও নেই। লোকে দেখলে এখন তাকে, বেঈমান বলে গা-লি দেই। এতসব কিছু আমি এজন্য করেছি, যাতে সে তার উপযুক্ত শাস্তি পাই। আমি জানি ও তোমার সাথে যা করেছে। এগুলো তার কিছুই না। তবুও আমি বলব, তাকে তুমি ক্ষমা করে দাও।আর রইল কথা আমার । তুমি হয়তো বলতে পারো,এতকিছুর পর ও কেন তাকে নিয়ে আমি সংসার করছি?আসলে ভালবাসা, ন্যায়,অন্যায়,ধনী,গরীব,অপরাধী, খু নি, ধর্ম এসব কিছু মানে না।তার একটাই চাওয়া। ভালবাসার মানুষ নিয়ে সুখে থাকা। যাকে ভালবেসেছি তাকে আগলে রাখা। সে যদি হাজারটা খু ন ও করে। তবুও আমি তাকে ভালবাসি। অর্ণা আমি চাই তুমি তাকে মাফ করে দাও। আমি তোমার কাছে কোনদিন এই আবদার করতাম না। যদি না পর্ণা অনুতপ্ত না হতো।কিন্তু আমি তো দেখি মাঝরাতে ওঠে তার কান্না। সেজদায় লুটিয়ে পড়ে আল্লাহ কাছে একটায় চাওয়া। তা হলো ক্ষমা। তুমি প্লিজ তাকে ক্ষমা করে দাও!

“আপনি চিন্তা করবেন না স্যার। আমি পর্ণাকে ঐদিনই মাফ করে দিয়েছি,যেদিন তাহমিদ আমার জীবনের এসেছিল। যদিও পর্ণার দেয়া কষ্ট গুলো আমার জন্য মর ণ যন্ত্রণার মতো ছিল। প্রতি মূহুর্তেই মনে হতো নিজেকে শেষ করে দেওয়ার কথা। তবে আমার আল্লাহ আমার সাথে ছিল। তাই শেষ পর্যন্ত সত্যেরই জয় হলো। ” যে চলে গেছে তার জন্য আপসোস করো না।নিশ্চয়ই আল্লাহতালা তোমার জন্য উত্তম কিছু পরিকল্পনা করে রেখেছে “। এই কথাটা আমার জীবনে একদম অক্ষরে, অক্ষরে মিলে গেছে। যাইহোক নিশ্চয় আর কিছু বলার নেই স্যার।তাহলে আমি আসি!

এই বলে অর্ণা চলে এলো। আদনান একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো অর্ণার যাওয়ার পানে। সে মনে,মনে বলল,
” তুমি তাকে ভালবেসো,যে তোমাকে ভালবাসে। তার জন্য পা গ ল হয়ো না,যাকে তুমি ভালবাস”।
অর্ণা চলে যেতেই আদনান পর্ণার কেবিনে গেল।পর্ণা তখন সজাগ। আদনান যেতেই সে৷ ওঠে বসার চেষ্টা করলো।। যা দেখে আদনান ধমকে ওঠলো।

“কি করছো কি?ওঠছো কেন! সুয়ে থাকো।

আদনান গিয়ে পর্ণার পাশে বসলো।পর্ণা তার হাতটা নিজের হাতের মধ্যে রাখলো। তারপর অনুনয় সুরে বলল,

” আমাকে ক্ষমা করে দাও। জানি অনেক ভুল করেছি।আমি ক্ষমার অযোগ্য। তবু ক্ষমা করে দাও। শুধু #আমায়_একটু_ভালবেসো।তাতেই আমি খুশি। তবুও আমার থেকে এভাবে মুখ ফিরিয়ে নিও না!

আদনান মুচকি হাসলো। পর্ণাকে একহাতে জড়িয়ে ধরে বলল,

” তোমাকে ভালবাসি পর্ণা। তাই নেক্সট টাইম এমন কিছু করবে না। যাতে আমার বিশ্বাস ভাঙে।এবারের মতো ক্ষমা করে দিলাম। নিজেকে শুধরে নিও!

রাতে অর্ণা তার বাবার বাড়িতে এলো।রাতের খাবার শেষ করে তারা রুমে এসে শুয়ে পড়লো। অর্ণা লক্ষ্য করলো হাসপাতাল থেকে আসার পর থেকেই তাহমিদের মন খারাপ। অর্ণা একবার জিজ্ঞেস করেছিলো, কেন মন খারাপ? কিন্তু তাহমিদ কিছু বলেনি।তাহমিদ বিছানায় বসতেই অর্ণা তার উপর চড়াও হলো। কোমরে দুহাত দিয়ে ধরে বলল,

“এই আপনার সমস্যা কি বলবেন?তখন থেকে দেখছি মুখটাকে বাংলার পাঁচ করে রেখেছে। জিজ্ঞেস করলেই বলে ” কিছু না”।আরে বাবা কি সমস্যা, সেটা তো বলবে নাকি?
তাহমিদ তখনো কিছু বলল না। এবার অর্ণার মাথা গরম হয়ে গেল। তাহমিদের কলার টেনে ধরে বলল,
,এই তাকান তো আমার চোখের দিকে। তাকান!হ্যা এবার বলুন কি সমস্যা?

তাহমিদ মুখটাকে ভোঁতা করে বলল,

“ঐ বাবুটা কি সুন্দর?

অর্ণার ভ্রু কুঁচকে এলো। বিরক্তি নিয়ে বলল,

” কোন বাচ্চাটা?

“ঐ যে পর্ণার বাবুটা।

অর্ণা ভাবলেশহীন ভাবে বলল,

” তো?

তাহমিদ এবার অর্ণাকে জরিয়ে ধরলো। তার বুকে মাথা রেখে বলল,

“আমার ও চাই একটা ওমন বাবু!

অর্ণা আঁতকে ওঠলো। আতংকিত হয়ে বলল,

” অসম্ভব! আমি ওসব বাচ্চা-কাচ্চা পয়দা করতে পারবো না।একবার ভাবুন, যদি আমি বাচ্চা জন্ম দিতে গিয়ে মরে যায়।তখন কি হবে? আপনি আপনার বউ পাবেন কই?

তাহমিদ মাথা চুলকালো। তার মাথায় কিছু ঢুকছে না
অর্ণার দিকে তাকিয়ে বলল,

“সত্যি বলছো?

” আল-বাদ সত্যি বলছি।আরে আপনি কি মুভি দেখেন নি,নায়ক-নায়িকাকে কে জন্ম দিতে গিয়ে তাদের মা মারা যায়।তখন তাদের বাবা তাদের দেখতে পারে না। নিজে হয়ে যায় দেবদাস!
অর্ণার কথা শুনে তাহমিদের মগজ ধোলাই হয়ে যায়। তার বাচ্চার দরকার নেই। আগে বউ!

সকাল হতেই অর্ণার মাথায় ভূত চাপে কক্সবাজার যাবে। তাও আবার আজ!তাহমিদ অবাক হচ্ছে অর্ণার এমন আবদার শুনে।সে তো কখনো এমন করে না। পাপিয়া বেগম মেয়েকে বোঝাচ্ছে আর কয়দিন পর যাবার জন্য। কিন্তু অর্ণার এক কথা। সে আজকেই যাবে। বাধ্য হয়ে আশোক সাহেব তাহমিদ কে বলল নিয়ে যাবার জন্য। দশটা বাজতেই তারা রওনা দেই কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে।
যেতে, যেতে প্রায় বিকেল হয়ে যায়।অর্ণার অবস্থা কাহিল।গাড়িতে কতবার যে বমি করেছে তার হিসেব নেই। এখন ম রার মতো ঘুমোচ্ছে গাড়িতে পরে। তাহমিদ গাড়িটা পার্কিং করে অর্ণাকে কোলে তুলে নিল। হোটেলের ভিতর ঢুকে রিসিপশনে গেল।সেখান থেকে চাবি নিয়ে। তাদের জন্য বুক করে রাখা রুমে ঢুকলো।
তাহমিদ রুমে এসে অর্ণাকে বিছানায় শুয়ে দিল। তারপর নিজে গেল ফ্রেশ হতে।
গোসল করে বাইরে এসে দেখলো, অর্ণার ঘুম ভেঙে গেছে। সে জানাল দিয়ে সমুদ্র দেখছে। তাহমিদ তাকে ফ্রেশ হতে বলে নিচে গেল।
অর্ণা ফ্রেশ হয়ে এসে খেয়ে নিল। তারপর দুজন মিলে ঘুম দিলো।ঘুম ভাঙলো সন্ধ্যায়। অর্ণা তাহমিদ কে ডেকে তুললো। তাহমিদ বিরক্ত হলো। পরে অর্ণার জোরাজুরিতে ওঠতে হলো।ঘুম থেকে ওঠে দুজন ফ্রেশ হলো। তারপর বেরিয়ে পড়লো সমুদ্র দেখার জন্য।

তাহমিদ আর অর্ণা একে-অপরের হাত ধরে বিচে হাঁটছে। তাদের মতো আরো অনেকেই আছে। চাঁদের আলোয় চারপাশ আলোকিত হয়ে আছে। সমুদ্রের ঢেউ গুলো এসে আছড়ে পড়ছে অর্ণার পায়ের কাছে। অর্ণা খুশিতে লাফাচ্ছে। নিজের করা কান্ড দেখে নিজেই অবাক হচ্ছে অর্ণা।”সে তো এমন ছিল না।তবে কিভাবে হলো এতো পরিবর্তন?তাহমিদ নাকি তার ভালবাসা।কে করলো আমায় এতো পরিবর্তন?

তাহমিদ তাকিয়ে আছে অর্ণার দিকে। মেয়েটাকে কি সুন্দর ই না লাগছে! ঠিক যেন আরেকটা চাঁদ।
হঠাৎই অর্ণা তাহমিদের সামনে গেল। হাসি, হাসি মুখ করে বলল,

“ঐদিন আপনাকে বলেছিলাম না, যে আমি আপনাকে একটা সারপ্রাইজ দেবো?

” হুম।

“আজ সেই সারপ্রাইজ দেয়ার দিন।আপনি নিচু হোন আমি আপনার কানে,কানে বলব।

তাহমিদ বিস্ময় নিয়ে নিচু হল।অর্ণার তার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,

” আপনি বাবা হবেন মি’চৌধুরী।

তাহমিদের একমুহূর্তে জন্য নিজের কানকে বিশ্বাস হচ্ছিল না।সে আবার অর্ণার মুখের দিকে তাকায়।অর্ণার মাথা নেড়ে সায় জানায়।খুশিতে দুজনের চোখে জল। তাহমিদ হাটু গেড়ে নিচে বসে পড়লো। অর্ণার হাত দুটোকে নিজের কপালের সাথে ঠেকিয়ে কাঁদতে, কাঁদতে বলল,

“ধন্যবাদ অর্ণা।অনেক,অনেক ধন্যবাদ।আমার এই রঙহীন জীবনটাকে তুমি রাঙিয়ে দিয়েছো। নিশ্বার্থ ভালবাসা দিয়েছো,বাবা হবার সুখ দিয়েছো,একটা পরিবার দিচ্ছো। এতো, এতো সুখ আমি কোথায় রাখবো। বলো অর্ণা,আমি কি আদৌ এত সুখ পাওয়ার যোগ্য? আমি তো হতভাগা।

অর্ণা তাহমিদ তুলে দাঁড় করালো।তার চোখের জল মুছে দিয়ে চুমু খেল। তারপর শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। তাহমিদ সমুদ্রের দিকে মুখ করে তাকালো।তারপর চিৎকার দিয়ে বলল,

” শুনছো আকাশ, শুনছো বাতাস, ওহো উত্তাল সমুদ্র! তোমরা শুনলে তো। আমি বাবা হবো। হ্যা,হ্যা আমি বাবা হবো। আজ আমার সকল দুঃখ মুছে গেল।আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি ব্যাক্তি।হ্যা পরওয়ারদিগার আপনার কাছে লাখ, লাখ শুকরিয়া। আমার জীবনে এতো সুখ দেবার জন্য।

তাহমিদের চিৎকার শুনে বিচে থাকা লোকজন তার দিকে তাকিয়ে রইলো। তাহমিদের খুশি দেখে অনেকেই অবাক হচ্ছে। বাবা হওয়ার আনন্দ বুঝি এটাকে বলে!

অর্ণার আর তাহমিদ একে-অপরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। তাহমিদ অর্ণার দিকে তাকিয়ে বলল,

“এভাবেই আমাকে ভালবেসে যেও অর্ণা। #আমায়_একটু_ভালবেসো। তাতেই হবে!এর বেশি কিছু চায় না। ” তুমি আমার দুঃখ হইয়ো অর্ণা।তবুও আমার থেকে যেও”!

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here