আমার অভিমান তোমাকে নিয়ে পর্ব -২০

#আমার_অভিমান_তোমাকে_নিয়ে(20)

“নূর আমার ব্ল্যাক ফাইলটা পাচ্ছিনা, দাওতো একটু।”

সদ্য গোসুল করে রুমে আসতেই আদিলের কথায় হালকা হাঁসে নূর। এই কয়েকদিনে দুজনের মাঝে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক না হলেও বেশ বন্ধুত্ত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। তবে সবটার কৃতিত্ব আদিলের। আদিলের ব্যাবহারে একপ্রকার মুগ্ধ হয়েই তার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে নূর। টেবিলের উপর থেকে ফাইলটা আদিলের হাতে দিয়ে মুচকি হাসলো নূর। আদিল অপলক নয়নে তাকিয়ে থাকলো নূরের দিকে। সদ্যস্নাত নূরকে কোনো হুরপরীর থেকে কম লাগছেনা। পরনে একটা কালো পাড়ের সাদা শাড়ি, ভিজে চুলগুলো এলোমেলো হয়ে পুরো পিঠে ছড়ানো, মুখের কোনো কোনো অংশে এখনও পানির ফোঁটা লেগে আছে। মুহুর্তেই মুচকি হাসলো আদিল। রোজ অফিসে যাওয়ার আগে কোনো এক বাহানায় নূরকে ডেকে এভাবেই কয়েক পলক তাকিয়ে থাকে সে।

“কি মায়ায়, বেঁধেছো আমায়,
বুকে ধরে রাখো আরও কাছে থাকো
বুকে ধরে রাখো আরও কাছে থাকো,
ভালোবেসে ফেলেছি তোমায়,
ওগো পিয়া”

মনের সুখে গুনগুন করে গান করতে করতে বেরিয়ে গেলো আদিল অফিসের উদ্দেশ্যে।

শাশুড়ির আর ফুফুশাশুড়ির মন রাখতে গিয়ে বাড়ীর প্রায় সবকাজই নিজের হাতেই করে নূর। এই নিয়ে বেশ ঝক্কি পোহাতে হয় তাকে। বাড়ীতে কাজের লোক থাকা সত্ত্বেও নিজের হাতে এতগুলো মানুষের রান্না সেই সাথে সবার জন্য আলাদা রকম আইটেম। তবে আদিল এসবকিছু থেকে অজানা। নূর কখনও জানতে দেয়নি নিজেদের মধ্যের বিবাদ। সম্পর্কের মাঝে একটুও ফাটল আসুক কোনোক্রমে চায়না নূর। আদিল কখনোই অন্যায় সমর্থন করেনা, আর কথা যদি হয় নূরের ক্ষেত্রে তবে আদিল ঢাল হয়ে দাড়ায় সবসময়। l

দুপুরের রান্নার প্রস্তুতি করতে ব্যাস্ত থাকার মাঝে পাশে রাখা ফোনের শব্দে সেদিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে নূর। হাতের কাজটা শেষ করতে করতে শব্দটা হারিয়ে যায়, তবে সাথে সাথে আবারো সশব্দে জানান তার উপস্থিতি। কানের সাথে ফোনটা চেপে ধরতেই অপর পাশের মানুষটার উৎকণ্ঠাময় কণ্ঠ শুনে হালকা হাসে নূর।

“ঠিক আছো তুমি? এতো দেরি হলো ফোন রিসিভ করতে?”

“জ্বী, ঠিক আমি আমি। একটু ব্যাস্ত ছিলাম তাই দেরী হলো।”

নূরের মিনমিন করে বলা কথা শুনে মুচকি হাসলো আদিল। ভীষন অবাক হয়ে এই যুগের মেয়ে হয়েও নূরকে এতো মার্জিত স্বভাবের হতে দেখে। কথার মাধ্যমে ক্ষত বিক্ষত করে দিলেও একটুও টু শব্দও করেনা সে।

“কী কাজ করছিলে? ফুফু আম্মু কি তোমাকে দিয়ে কিছু কাজ করাচ্ছে নাকি?”

“নাহ নাহ। একদম এমন ভাববেন না। উনি আমাকে কিছুই বলেননি। আমি নিজের ইচ্ছেতে একটু কিচেনে এসেছি। আর ফুফি কিছু বললেও আমি খুশি মনেই করবো সেটা।”

“জ্বী বুঝেছি। আপনি এতো মহান বলেই তো আপনার জন্য আমাকে পাঠিয়েছেন উপরওয়ালা।”

“………….”

“এই শোনো, বিকালে তৈরি হয়ে থেকো। আমি এসে এক জায়গায় নিয়ে যাবো।”

“কোথায়”

“সেটা সারপ্রাইজ। গেলেই দেখতে পাবেন ম্যাম।”

“আচ্ছা রাখি”

“এতো তাড়া? এই যাহ কেটে দিলো।”

____________

অরুনিকার বাড়ীর সামনে দাঁড়িয়ে আছে আদাভান আর অরুনিকা। মনের মাঝে ভয় আর শঙ্কা নিয়ে কলিংবেল চাপ দিলো আদাভান। ভয়ে অরুনিকার হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে আসছে। কথায় আছে যে মানুষ যত শান্ত রেগে গেলে ততো ভয়ংকর হয়ে ওঠে। ভাবনার মাঝেই দরজা খোলার আওয়াজে সেদিকে তাকায় দুজনে। রুবিনা বেগমকে দেখে কান্না ভেজা চোখে তাকিয়ে থাকে অরুনিকা।

দরজার ওপারে অরুনিকাকে দেখে ভীষণ আবেগী হয়ে পড়েন রুবিনা বেগম। কিছু না বলে ভেতরে ঢুকে পড়েন তিনি। অরুনিকার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে ভরসাময় আশ্বাসে এগিয়ে যায় ভেতরে।

সোফায় বসে চা খাচ্ছিলেন তাহসান সাহেব। এতদিন পর অরুনিকাকে দেখে তার দুই নয়ন ভরে ওঠে। মুহুর্তেই নিজেকে সামলে নিয়ে উচ্চস্বরে বলে ওঠেন,

“রুবিনা, ওদেরকে ভেতরে আসতে কে দিয়েছে? অচেনা কাউকে বাড়ীর মধ্যে আসতে দিচ্ছ কবে থেকে তুমি?”

“আব্বু!”

“এই কে তোমার আব্বু? তোমার আব্বু এখানে থাকেনা। আমাদের কোনো মেয়ে নেই।”

“আব্বু প্লীজ মাফ করে দাওনা। আমি একটুও ভালো নেই তোমাদের ছাড়া। অনেক ভালবাসি তোমাদেরকে।”

তাহসান সাহেবের পা জড়িয়ে ধরে অরুনিকাকে আকুতি করতে দেখে আদাভানের চোখের কোনেও জল জমে ওঠে। তার ভুলের জন্য অরুনিকার চোঁখের পানি কিছুতেই সহ্য হয়না আদাভানের।

“আঙ্কেল আমার আপনাকে কিছু সত্যি বলার আছে। এসবকিছুতে অরুনিকার কোনো দোষ নেই। সব দোষ আমার। আমিই জোর করে বিয়ে করেছিলাম অরুনিকাকে।”

আদাভানের কথা শুনে অবাক নয়নে সেদিকে তাকান তাহসান সাহেব। অরুনিকাও কান্নাভেজা চোখে তাকায় সেদিকে। আদাভান যে এভাবে নিজের ভুল স্বীকার করে নেবে তা ভাবেনি অরুনিকা।

“এসব কি বলছো তুমি? সেদিন তুমিই বলেছিলে যে তোমরা একে অপরকে ভালোবাসো।”

“আঙ্কেল এটা ঠিক যে আমি অরুনিকাকে ভালোবাসি। আর সেই ভালোবাসা থেকেই এই ভুল পদক্ষেপ। আপনাদেরকে কষ্ট দেওয়ার কোনো উদ্দেশ্য আমার ছিলোনা। আমি জানতাম আপনারা কখনও সহজে অরুনিকার সাথে আমার বিয়ে দিতেন না। সাথে দিনের পর দিন অরুনিকার আমাকে এড়িয়ে চলা, কাব্যের সাথে মেলামেশা সবকিছু আমাকে ভীষণ ভাবিয়ে তোলে। মণের মাঝে এক অশান্ত ঝড় ওঠে। অরুনিকাকে হারিয়ে ফেলার তীব্র যন্ত্রনা আমাকে নিঃশেষ করে দেয়। জোর করে সেদিন বাধ্য করেছিলাম আমি অরুনিকাকে আমাকে বিয়ে করতে।”

মাথা নিচু করে অনুশোচনার স্বরে বিশ্লেষণ করা সবটা শুনে তেড়ে আসেন তাহসান সাহেব। দুইহাতে আদাভানের কলার ধরে রোষের অনলে পুড়ে বলে ওঠেন,

“তোমার সাহস কী করে হয় আমার সামনে দাঁড়িয়ে এসব কিছু বলার? শুধু তোমার জন্য আমি আমতা মেয়েকে ভুল বুঝেছি। আমার মেয়ের জীবন নিয়ে খেলে কি লাভ পেলে তুমি?”

চলবে?
#Fiza Siddique

কাল বড়ো করে পর্ব দেবো। মন ভালো না থাকায় বেশী গুছিয়ে লিখতে পারছিনা দেখে বেশি বড়ো করলাম না আর পর্বটা। জানি পর্বটা অনেক অগোছালো হয়েছে, তাও নিজেদের মতামত জানাবেন প্লীজ 🥺

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here