আমার অভিমান তোমাকে নিয়ে পর্ব -০৩

#আমার_অভিমান_তোমাকে_নিয়ে(3)

নিজের কেবিন থেকে বেরিয়েই সামনে চোখ পড়তেই চোখ দুটো লাল বর্ণ ধারন করে আদভানের। অরুণিকার হাত দুটোকে জ্বা*লিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে তার। সাহস কি করে হয় একটা ছেলের কাঁধে হাত দেওয়ার তার। সূর্যের মতো প্রখর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সামনের দিকে। ভেতরে চলছে দাউদাউ করা আ*গুন।

কলেজে আসার সময় বাড়ী থেকে বের হয়ে বেশ অনেকক্ষন অপেক্ষা করার পরও কোনো রিক্সা না পাওয়ায় একরাশ হতাশা নিয়ে হাঁটতে শুরু করে অরুনীকা। কিছুদূর যেতেই ঠোঁটে হাসির ঝিলিক ফুটে ওঠে তার। দৌড়ে গিয়ে বাইকে বসে থাকা এক ছেলের পিছন দিক থেকে চোখ ধরে ফেলে। ফোনে কথা বলার মাঝে এমন কাজে খানিক বিরক্ত হলেও পরমুহুর্তে এক হাত বাড়িয়ে চুল টেনে ধরে অরুনিকার। তারপর এক গাল হেসে বিশ্বজয়ী হাসি দেয়। কান থেকে ফোনটা নামিয়ে এক হাট ধরে অরুনিকাকে সামনে এনে হু হা করে হেসে দেয়। রাগে কটমট করতে করতে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে অরুনীকা।

“কাব্য ভাইয়া তুমি আমার চুল টানলে কেনো? আজ আমি তোমার একটাও চুল আসতো রাখবনা।”

“তুই আমার একমাত্র খালামনির একমাত্র মেয়ে। তুই জন্মের পরই খালামণি তোকে আমার কোলে তুলে দিয়ে বলেছিলো কাব্য এটাকে মানুষ বানাবি একেবারে তোর মতোন। আমি তো শুধু খালামনির দেওয়া দায়িত্ব পালন করছি।” বলেই একটা এক হাতে নিজের চুলগুলো ব্রাশ করে ভাব নেওয়া লুক দিলো।

“লাইক সিরিয়াসলি ভাইয়া? আম্মু তোমাকে এই চাকরি কবে দিয়েছিলো? তুমি নিজেই তো নর্দমার কীটদের মতো তিরিংবিরিং করে চলো, নিজে আগে মানুষ হও। তারপর তোমার উপযুক্ত বয়স থাকতে বিয়ে দিয়ে দেবো। আমারও তো একটা দায়িত্ব আছে নাকি? দিন দিন তো বুড়ো হয়ে যাচ্ছ। দেখা গেলো ক*বর থেকে একটা ক*ঙ্কাল তুলে এনে তোমার সাথে বিয়ে দিতে হলো। আর নেমপ্লেট হবে ক*ঙ্কাল ওয়েডস তো কাব্য ক*ঙ্কাল।” বলেই একহাত বসিয়ে দিলো কাব্যর চুলে। এক থাবায় যতগুলো চুল ধরা যায় সেগুলোতে দিলো এক টান। অবশ্য কাব্য এটাতে কিছুই বললোনা। এটা ওদের দুজনের জন্মগত স্বভাব। দুজনে দুজনের পিছে লেগে থাকে। তবে কাব্য ভীষণ ভালোবাসে অরুনিকাকে। অরুনীকা এখনো কাব্যের কাছে সেই ছোট্টো তোয়ালে জড়ানো অরুনিকাই আছে। অরুনিকাও তার সব আবদারের ঝুড়ি নিয়ে বসে কাব্যের কাছে।

কাব্যের বাইকে করে আজ কলেজে আসে অরুনীকা। কাব্যের কাঁধে হাত দিয়ে সারা রাস্তা গল্প করতে কলেজে পৌছায় অরুনীকা। কেউ একজন যে ভষ্ম করার দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে তাদের দিকে সেদিকে একেবারেই বেপাত্তা অরুণিকা। দেরি হয়ে যাওয়ায় তাড়াতাড়ি করে কাব্যকে বলে ক্লাসে চলে যায় সে।

রাগে গজগজ করতে করতে নিজের কেবিনে চলে যায় আদাভান। সবথেকে বেশী রাগ লাগছে আজকে অরুনিকাদের কোনো ক্লাস নেই তার সেজন্য। থাকলে ক্লাসে আজ একটা উচিৎ শিক্ষা দেওয়া যেতো অন্তত এই মেয়েকে। সাহস কি করে হয় একটা ছেলের বাইকে করে কলেজে আসার, তারউপর এত ঘেঁষাঘেঁষি করে।

কাব্যের জন্য বেশ কিছুক্ষন ধরে অপেক্ষা করে অরুণিকা। যাওয়ার সময় বারবার করে বলে গেছিলো সে নিতে আসবে, যেনো না চলে যায় একা একা। এতক্ষন অপেক্ষা করে বেশ খানিকটা বিরক্ত হলো অরুনিকা। নিজের বিরক্তবোধ কাটাতে একপা দুইপা করে হাঁটতে লাগলো। আদাভান বেশ কিছুক্ষন ধরেই লুকিয়ে অপেক্ষায় ছিলো অরুনিকার জন্য। কলেজের সামনে অরুনিকার সাথে এভাবে কথা বলা সম্ভব নয়।

বেশ কিছুদূর আশার পর অরুনিকা নিজের পিছনে কারোর অস্তিত্ব অনুভব করে। নিজের হাঁটা থামতেই আর একজোড়া পাও যেনো থেমে গেলো। ভয় পেলেও ত প্রকাশ না করে চট করে পিছনে ফিরে আদাভানকে দেখে ভ্রু কুঁচকে যায় তার। অরুনিকা কিছু বলতে যাবে তার আগেই আদাভান আরও খানিকটা এগিয়ে এসে আরুনিকার দুই বাহু চেপে ধরে। ব্যাথায় আহ করে শব্দ করে ওঠে অরুনিকা। কিন্তু সেদিকে কোনও হেলদোল নেই আদাভানের। সে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকিয়ে আছে অরুনিকার দিকে। অরুনিকা নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য মোচড়ামোচড়ি করলে আরও শক্ত করে চেপে ধরে, তারপর হিসহিসিয়ে বলে,

“সকালে কার বাইকে করে কলেজে এসেছিলে? কে ছিলো ওটা? লজ্জা করেনা ছেলেদের সাথে এত ঘেঁষাঘেসি করে বসতে?” আদাভানের কথায় প্রথমে অবাক হয়ে বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলো অরুণিকা তারপর শান্ত কন্ঠে জবাব দিলো,

“আপনার লজ্জা করছেনা এভাবে একজন স্টুডেন্টের পার্সোনাল ব্যাপারে কথা বলতে? সে যেই হোকনা কেন আপনাকে বলতে বাধ্য নয় আমি।” অরুণিকার এমন নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে কথা বলা দেখে গা জ্বলে উঠলো আদাভানের। আবারো গম্ভীর কন্ঠে বলে ওঠে,

“বেশি ডানা গজিয়ে গেছে তোমার মিস. পমপম। ডানা কিভাবে কাটতে হয় সেটা এই আদাভান আহসান খুব ভালো করেই জানে। আজ পর্যন্ত কেউ এই বাঘের থাবা থেকে বেরোতে পারেনি নিজের ইচ্ছেতে। আর যেনো কখনও কোনো ছেলের আশেপাশে না দেখি। মাইন্ড ইট। ” বলেই অরুনিকার মুখের সামনে পড়ে থাকা চুলগুলো আলতো করে কানের পিছনে গুঁজে দেয়।”

আদভানের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দূর থেকে আশা কাউকে লক্ষ্য করে মুচকি হাসে অরুণিকা। তারপর আদাভানের চোখে চোখ রেখে বলে,

“আপনি কলেজে আমার স্যার। তাই যেটুকু সম্মান প্রাপ্য আপনার সেটুকু অবশ্যই পাবেন। তবে কলেজের বাইরে একদম আমার ব্যাক্তিগত জীবনে ঢোকার অনুমতি দেয়নি আমি আপনাকে। কোন অধিকারে আপনি আমাকে স্পর্শ করেন? কোন অধিকারে আমাকে এগুলো জিজ্ঞেস করেন আপনি?
আর হ্যা বাঘের থেকে বাঘিনী কিন্তু বেশি শক্তিশালী হয় স্যার।” বলেই একগাল হেসে সামনের দিকে তাকায়।

অরুনিকার কথাগুলো আদাভানের ভেতরে জ্বলতে থাকা আ*গুনে ঘি এর মত কাজ করে। সেটাকে আর এক দফা দাই দাউ করে জ্বলিয়ে দেওয়ার জন্য সেখানে আগমন ঘটে কাব্যের। অরুনিকা আদাভানের দিকে গা জ্বালানো এক হাসি দিয়ে বাইকে উঠে বসে কাব্যের কাঁধে হাত রেখে তাতে মাথা এলিয়ে দেয়।
___________

বাড়ীতে ঢুকেই নিজের রুমের দরজা লক করে দিয়ে হাতের কাছে থাকা একটা ফুলদানী আছাড় মারে ফ্লোরে।

সাহস কি করে হয় তোমার অরুনিকা আমাকে এতগুলো কথা শোনানোর? তোমার ঐ হাতদুটো কেটে ফেলতে ইচ্ছে করছে আমার। আমার একটা চকোলেটের ভাগও আমি কখনও কাউকে দিয়নি। সেখানে তুমি……
আর কিছু বলতে পারলোনা সে। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। এখন লম্বা একটা শাওয়ার নেওয়া প্রয়োজন।

অরুনিকা বাড়ি ফিরে গুনগুন করে গান করতে করতে নিজের রূমে গিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। তারপর ক্রুর হেসে বলে উঠলো, মি. আদাভান আপনাকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার মানুষ এসে গেছে। আপনাকে হাড়ে হাড়ে টের পাওয়াবো এই অরুনিকা কি জিনিস। আপনার মুখোশ টেনে হিচড়ে খুলে ফেলবো সবার সামনে। সব বদলা নেবো আমি। আপনার বরবাদি আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। নতুন করে ইতিহাস রচনা হবে। যার পাতায় থাকবে ভালোবাসার থেকে ঘৃনার অধ্যায় বেশি। আপনার জালে আপনাকে ফাসাবো। বি রেডি।

লম্বা একটা শাওয়ার নেওয়ার পর রাগটাকে নিজের কন্ট্রোলে আনতে সক্ষম হয় আদাভান। মাথার নীচে দুই হাত দিয়ে বেডে শুয়ে বিড়বিড় করে বলে, রাগটা কমলেও অভিমানটা যে আরও জোরালো হলো মিস. পমপম। পারবেন তো আমার অভিমানের রোষানলে পুড়তে? পারবেন তো সহ্য করতে আমার অভিমান? কারন #আমার_অভিমান_তোমাকে_নিয়ে।

এভাবেই দুজনের রাতটা কেটে গেলো। একজন গভীর চিন্তায় কারোর খোলস উন্মোচনের। আর একজন মগ্ন এক বাঘিনিকে তার অভিমান আর ভালোবাসায় সিক্ত করার চিন্তায়।

“যে অধিকারের দাবি আজ তুমি করলে সেই দাবি খুব জলদি মিটিয়ে দেবো আমি মিস পমপম। শুধু একটু অপেক্ষা করো। তুমি বাধ্য হবে আমাকে সব অধিকার দিতে।” বলেই আদাভান চোখ বন্ধ করে তলিয়ে গেলো গভীর ঘুমে।

চলবে?
#Fiza siddique

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here