#আমার_তুমি❤
#লেখিকাঃ-তানজিনা আক্তার মিষ্টি ❤
#পর্ব:- ১১
জেসমিনের মা দৌড়ে মেয়ের কাছে গিয়ে হাত উঠায় থাপ্পড় মারতে। কিন্তু মারতে পারেনা কেউ তার হাতটা ধরে ফেলেছে। জেসমিন ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে অনেক সময় চলে যায় কিন্তু গালে কারো স্পর্শ না পেয়ে চেয়ে দেখে রাইয়্যান হাত ধরে আছে মার।
–মানি কি করছো তুমি?
–হাত ছার ওকে আজ মেরেই ফেলবো। এমন মেয়েকে আমি আজই মেরে ফেলবো ওর জন্য সবার সামনে আমাকে লজ্জিত হতে হচ্ছে।
–কি বলছো লজ্জিত কেন হবে তোমার মেয়ে প্রেম করেছে। এতে এতো প্রবলেম কি চুরি ডাকাতি তো করে নি?
–তবুও ও এমন একটা কাজ করলো কিভাবে একবার আমাদের কথা ভাবলো না।
–তোমার কথা ভেবেছে বলেই যো এই কাজ করেছে।
–কি বলছিস তুই আমাদের কথা ভেবে? পাগল হলি তুই আমাদের কথা ভাবলে এমন কাজ করতে পারতো ও। আর তুই কিনা বলছিস আমাদের কথা ভেবেই করেছে।
–হুম আমাদের কথা ভেবেই করছে তুমি বুঝতাছো না। আমাদের জুনায়েদ কি ছেলে হিসেবে খারাপ ওর বাবা মা কেউ নেই কিন্তু ছোট থেকে তো ও আমাদের এখানেই আমার সাথে তোমার সামনে বড় হয়েছে ওকে কি তুমি তোমার মেয়ের হাজবেন্ট হিসেবে মেনে নিতে পারবে না।
–কি বলছিস তুই এসব মেয়ের জামাই মানে? ওদের কি বিয়ে হয়ে গেছে [ চোখ বড় বড় করে ]
–নাহ গো মানি বিয়ে হয় নি তা হয় নি। কিন্তু এবার হবে যদি তুমি জুনায়েদ কে মেয়ের জামাই বলে পছন্দ করো। ওরা দুজন দুজনকে ভালোবাসে প্রথমে আমি ও ওদের একসাথে দেখে রেগে গেছিলাম কিন্তু আরু আমাকে বুঝিয়েছে ওদের হয়ে। আর আমার বিশ্বাস ওরা একসাথে ভালো থাকবে তোমার মেয়ে তাই তোমাকে জিগ্গেস করছি যদি রাজি থাকো তো বিয়েটা খুব তারাতারি দিয়ে দেবো এভাবে লুকিয়ে আর কতো প্রেম করবে বলো।
আরুশি পাশে দাড়িয়ে দেখছে কি সুন্দর ভাবে বুঝাচ্ছে? হঠাৎ কেউ ওকে জরিয়ে ধরে কেদেঁ দেয়। জেসমিন জরিয়ে ধরেছে আরুশিকে কানে আসে বিয়ের কথা বলছে ওরা। এক সপ্তাহ পরেই বিয়ে বিয়েতে ভালো আয়োজন করা হবে। সব ঠিক করা হলো জেসমিন এমন ভাবে মিশছে আমার সাথে সত্যি এ বাসায় এখন আমার সব চেয়ে ভালো লাগছে একজন সঙ্গী হলো। বোন মনে হচ্ছে আমার বড় বোন জেসমিন আগে কতো খারাপ মনে হতো কিন্তু মুটেও খারাপ না। একটু হিংসুটে কিন্তু মনটা খুব ভালো।
আরুশি রাইয়্যানের রুমে এলো,
–তুমি এখানে?
রাইয়্যান কারো সাথে ভিডিও কলে কথা বলছিল হঠাৎ আরুশি ঢুকতেই ফোন কেটে ওর দিকে তাকিয়ে জিগ্গেস করে।
–কেন আসতে পারিনা।
–এই না তা বলেনি তুমি এতো রাতে আমার রুমে এলে যে তাই।
–কই কেবল না এগারোটা বাজে। গার্লফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছিলেন আমি কি ডিসটার্ব করলাম এসে।
–তেমন না আচ্ছা বসো।
আরুশি বসলো না,
–ছাদে যাবেন?
রাইয়্যান ভাবে নি এখন এই কথা বলবে।
–এখন এতো রাতে !!
–হ্যাঁ কেন জানি যেতে ইচ্ছে হচ্ছে মনটা খুব ভালো আবার খারাপ দুই মিলে একটু রাতে আকাশ টা দেখতে মন চাইছে যাবেন।
—রাইয়্যানের যাওয়ার ইচ্ছে নাই তবুও না করতে পারলো না।
— আচ্ছা চলো।
আরুশি খুশি হয়ে ধন্যবাদ দিয়ে বেরিয়ে যেতে লাগলো পেছনে রাইয়্যান ও আসছে হঠাৎ আবার ফোন বেজে উঠলো,
–হ্যালো তানিশা আমি একটু বিজি আছি তুমি ঘুমিয়ে পরো কাল কথা হবে। গুড নাইট;
আরুশি গেটের বাইরে পা রাখতেই কথাটা কানে এলো সাথে নামটা ভালো ভাবে শুনেছে। তানিশা এটা আবার কে গার্লফ্রেন্ড হবে হয়তো।
–চলো কি ভাবছো এভাবে দাড়িয়ে??
–কিছু না চলেন যাই।
–হুম
দুজনে ছাদে চলে অাসে। আরুশি ছাদে আসতেই ওর মনটা ফুরফুরে হয়ে যায়। ঠান্ডা বাতাস বইছে হালকা আলো চাদ দেখা যাচ্ছে না। অন্ধকার আকাশ হালকা আলো তবুও আছে। আরুশি ছাদের কিনার ঘেষে দাড়িয়ে নিচে তাকায় রাস্তায় মানুষ একটা ও নেই দূর একটা লামপোস্টের আলো দেখা যাচ্ছে অনেক সময় পর একটা দুটো গাড়ি শো শো করে চলে যাচ্ছে।
–এভাবে কি দেখছো আমি যে আছি তোমার সাথে সেটা কি মনে আছে তোমার আরু।
–আরুশি চোখ মেলে একটা ঘার ঘুরিয়ে দেখলো রাইয়্যান দোলনায় বসে আছে আর ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। তাকাতেই কাছে ডাকলো,
–এখানে আসো বসো।
–না ঠিক আছে এভাবেই ভালো লাগছে।
–দাড়িয়ে বসো বসলেও ভালো লাগবে। আচ্ছা তুমি আগে থেকে জানলে কি করে জেসমিন আর জুনায়েদ এর ব্যাপার টা।
আরুশি এবার এগিয়ে এলো কিন্তু বসলো না।
–আপনার মতো আমি ও ওদের এক সাথে দেখে ফেলেছিলাম।
–বসো বসে কথা বলো এভাবে একা বসে ভালো লাগে না।
–না ঠিক আছে।
–ওকে আমি ও তাহলে দাড়িয়ে কথা বলি।
বলেই রাইয়্যান ও দাড়িয়ে পরে।
–আপনি বসে থাকেন না।
–আমরা ফ্রেন্ড বুঝেছো তাই একা আমি বসে থাকলে ভালো লাগে না। আচ্ছা তোমার কি আমার সাথে বসতে সমস্যা তাহলে তুমি বসো আমি দাড়িয়ে থাকি।
–না সেটা না
–বুঝেছি আচ্ছা বললে না তো কিভাবে ধরলে আমার চোখে তো কখনো পরেই নি।
–ওই দিন বাগানে।
–কোন দিন,
–ওই যে আপনি আমাকে আমার জেসমিন বাগানে দেখশেন ওইদিন। আমি দেখে ফেলেছিলাম তাদের এক সাথে তারপর আপু আমাকে সব বলে আর আপনাদের বলতে ও না করে।
–ও গড তুমি আমার কতো আগে জেনেছো অথচ আমাকে বলো নি।
–আমাকে নিষেধ করেছিলো।
— আচ্ছা মানলাম।
তারপর আর ও কিছুক্ষণ ছাদে কাটিয়ে আমরা নিচে নেমে যে যার রুমে চলে যায়।
–আরুশি তারাতারি রেডি হয়ে নিচে আসো।[ জেসমিন]
–কেন আপু?[ আরুশি ]
— শপিং এ যাবো চলো তারাতারি।
— শপিং এ কেন?
–বিয়ের কেনাকাটা করতে যাবো।
–অহ আমি কেন তাহলে আপনি যান।
–না তোমাকে ছাড়া তো যাবোই না তারাতারি আসো। আমি কোন অযুহাত শুনতে চাইনা।
–অযুহাত না আপু আপনার বিয়ে আপনি যান পছন্দ মতো শপিং করেন আমি গিয়ে কি করবো? আর কি কে যাবেন?
–আমি, জুনায়েদ, তুমি আর রাইয়্যান চলো তারাতারি রেডি হয়ে আসো তোমাকে ছাড়া আমি যাবো না।
— কিন্তু
–কোন কিন্তু না আমাকে বড় বোন ভাবলে আর কথা না বারিয়ে রেডি হয়ে আসো। আমি অপেক্ষা করছি নিচে।
বাধ্য হয়ে রেডি হয়ে আসে আরুশি।
গাড়ি আমি রাইয়্যানের পাশে বসেছি। পেছনে আপু আর জুনায়েদ ভাইয়া বসেছে।
শপিং মলে এসে।
–আরুশি আমার বিয়ের সব তুমি চয়েজ করে দিবে কেমন?[ জেসমিন]
–আমি আমার পছন্দ ভালো না আপু তুমি নিজেই পছন্দ করে নিও।[ আরুশি ]
–তোমার পছন্দ করা জিনিস বেস্ট হবে আমার বিশ্বাস তোমার জন্য আমরা এক হতে পারছি।
–আমার জন্য না রাইয়্যান এর জন্য উনি না বুঝালে হতো না আমি তো শুধু জানিয়েছি মাএ।
–হুম জানি কিন্তু তাকে বলতে পারব না ভয় লাগে আমার হয়ে ধন্যবাদ দিয়ো।
–তুমি দাও।
–নাগো তুমি ই বলো।
বলেই জেসমিন শাড়ি দেখতে লাগে জুনায়েদ ভাইয়াকে ইশারা করছে কোনটায় ভালো লাগছে ভাইয়া ও ইশারা না দেখাচ্ছে । আমি ও দেখছি আমাকে ও জিগ্গেস করছে ভাইয়াকে ও জিগ্গেস করছে। অবশেষে আমি একটা লাল খয়রি রং এর একটা শাড়ি আপুর দিকে ধরি আর ভাইয়া জিগ্গেস করতেই ভাইয়া সেটা পছন্দ বুঝায়। আপু তো সেই খুশি শাড়িটা নিয়ে চলে যায়।
হঠাৎ একটা মেরুন কালারের শাড়ির উপর আমার চোখ যায় অপূর্ব সুন্দর শাড়ি টা একটা হাত দিয়ে আয়নার নিজেকে দেখি প্রাইজ লেখা এগারো হাজার সাতশত টাকা দেখেই তারাতারি শাড়িটা রেখে অন্য দিকে চলে যায়।
বাপরে কি দামী শাড়ি?
আপু শাড়িটা পরে এসেছে সত্যি খুব মানিয়েছে তাকে। আবার দোকান এসে বসে আর ও কয়েকটা শাড়ি নেয় গায়ে হলুদ এর জন্য আমার জন্য নেয় না করি শুনে না।
জুয়েলারি দোকানে গিয়ে জুয়েলারি কিনে। ভাইয়াকে ও ড্রেস কিনে দেওয়া হয় এর অর্ধেক টাকা জুনায়েদ ভাইয়া দিয়েছে রাইয়্যান বলেছিলো সেই সব খরচ দিবে বিয়ের কিন্তু ভাইয়া চায় তার টাকায় যেন তার বউকে কিনে দেয় এটা তার ইচ্ছে তাই সেটা মেনে নেওয়া হয়।
রাইয়্যান শপিং মলে ম্যাক্ম পরে এসেছে তাই আর বিপদে পরতে হয় নি। সত্যি এদের জামেলা খুব কোথায় শান্তি মতো চলা ফেরা করতে পারে না।
কলেজে গিয়ে ছুটি নিয়ে এসেছি কালকে আপুর গাঢ়ে হলুদ আর পরশু শুক্রবার বিয়ে তাই একদিনের ছুটি এনেছি।
সকালে উঠে চারপাশে ফুল বাতি দিয়ে ভরে ফেলেছে। চোখ ধাধানো সুন্দর ঝিকমিক করছে চারপাশ হা হয়ে তাকিয়ে আছে আরুশি হঠাৎ কেউ কথা বলে,
–এভাবে হা হয়ে আছো কে মুখে মশা যাবে তো?
সাথে সাথে মুখ বন্ধ করে রেগে তাকায়,
–আপনি অাবার তেরা কথা বলছেন?
–নো মাই ডেয়ার, আমি এখানে তেরা কথা কি বললাম তুমি সত্যি হা করে ছিলে।
–একটু করেছিলাম কিন্তু মশা ঢুকবে এমন এতো বড় করেনি। এতো সব দেখে একটু শক খেয়েছি তাই।
বলেই ভেংচি কাটে,
–একদম ভেংচি কাটবে না।
–কাটবোই, আচ্ছা এতো সব কখন করলো।
–সকালে,
–এতো সকালে এতো আয়োজন করে ফেলল,
–অনেক লোক তাই তারাতারি হয়ে গেছে।
–অনৃক সুন্দর হয়েছে এতো বড় বিয়ে আমি কখনো খাই নাই আমার খুব আনন্দ হচ্ছে খুব।
–আমার।
–আপনার কেন হচ্ছে আপনি এতো এর আগে ও এর চেয়ে এমন বিয়ে খেয়েছেন।
–তোমার হচ্ছে তাই তখন তো তুমি ছিলে না।
–কি বললেন?[ অবাক হয়ে]
–কিছু না নিচে আসো কেমন।
বলেই রাইয়্যান নিচে নেমে যায় আরুশি হা হয়ে তাকিয়ে আছে। লোকটা কে বুঝে উঠতে পারেনা ও,
–আরুশিইইই
জেসমিন আপুর ডাকে পেছনে তাকায়,
–হ্যা আপু কিছু বলবে,
–হুম এতো লেট করে উঠলে যে।
–একটু লেট করে ঘুমিয়ে ছিলাম তাই হয়তো কতো বাজে।
ফোন দেখে বলল, 9:23
–ওহ আচ্ছা।
–চলো খেয়ে আসি।
আমরা দুজন একসাথে নিচে নেমে এলাম জুনায়েদ ও আমাদের সাথেই খেতে বসেছে। আপু জুনায়েদের পাশে বসে।
খাওয়ার মাঝে হঠাৎ কেউ চিৎকার করে রুমে ঢুকে আসে। রাইয়্যান বলেই চিৎকার করে আসে। সবাই দরজার দিকে তাকায়। একটা মেয়ে পরনে ফান্ট আর উপরে শার্ট ছোট চুল।
গায়ে রং অতিরিক্ত ফর্সা। রাইয়্যান ও অবাক হয়ে বলে উঠে,
–তুই
মেয়েটা দৌড়ে এসে রাইয়্যান কে জরিয়ে ধরে।
–তানিশা তুই এখানে কবে কখন এলি।
–আজকেই এসেছে এসে সোজা তোর বাসায় চলে এলাম। কিন্তু বাসার কি কোন অনুষ্ঠান এতো সাজানো কেন মনে হচ্ছে বিয়ে কারো।
–হুম ঠিক ধরেছিস বিয়ে।
–বিয়েএএএ কিন্তু কার তোর আমাকে তো কিছু বললি না।
মুখটা কালো করে বলল,
–আরে আমার না জেসমিনের বিয়ে,
–জেসমিনটা আবার কে?
–মানির মেয়ে?
–ওহ ওই কাজের লোকটার মেয়ে তার মেয়ের বিয়ে এতো ধুমধাম করে দিচ্ছিস কেন?
কথা টা শুনে আমি চাচির দিকে তাকায় সে চোখের পানি মুচছে জেসমিন আপু তো চলে যেতে নেয়। কি অসভ্য মেয়ে রে বাবা।
–এসব কি বলছিস তানিশা মানিকে আমরা বাসার একজন মনে করি। আর জেসমিন আমার বোনের মতো তাই ওর বিয়ে তো এভাবে হবে। আর যেন এসব না শুনি তোর মুখে।
#আমার_তুমি❤
#লেখিকাঃ-তানজিনা আক্তার মিষ্টি ❤
#পর্ব:- ১২
আরুশির মুখে হাসি ফুটে উঠলো রাইয়্যানের কথায়। উচিত কথা বলেছে আরুশি জেসমিনের হাত ধরে তাকে আটকে আবার চেয়ারে বসিয়ে দিলো।
–মেয়েটা এগিয়ে আন্কেলের সাথে কথা বলল রাইয়্যান আন্কেল খেতে বলল সাথে বসে কিন্তু মেয়েটা বলল,
টায়ার্ড রেস্ট নিবে এখন। রাইয়্যান একজন র্সাভেন্ট ডেকে রুমে নিয়ে যেতে বলল, তারপর আবার খাওয়া শুরু হলো।
–এই মেয়েটা কে তুমি চিনো চিনো আপু?
জেসমিনকে উদ্দেশ্য করে বলল আরুশি খাওয়া শেষে জেসমিন আর আরুশি সোফায় বসে। তখনই কথাটা বলে উঠে,
–না তো একে তো চিনি না আমি। মা চিনতে পারে আমি চিনি না।
— অহ
— শুনো মেয়েকে একটু ভালো লাগে নি আমার প্রথম আমাদের কতো কথা শুনালো শুনেছো।
–হুম শুনেছি কিন্তু আমাকে কিছু বলল না কেন?
–তোমাকে খেয়াল ই করে নি করলে তোমার কে ও বলতো।
–হয়তো।
–শুনো আমরা কিন্তু পার্লারে সাজবো। আমি সব ব্যবস্থা করে ফেলেছি তুমি আর আমি যাবো ওকে।
–আমি কেন আবার তুমি যাও।
–তুমি মানে তুমি ও সাজবে তাই।
–আমার সাজার কি দরকার আপু? আমার এসব সাজগোজ পছন্দ না তুমি সেজ তাহলেই ভালো।
–এটা কি কথা বললে আরুশি বোনের বিয়েতে তুমি না সেজে থাকবে।
–বোনের বিয়েতে বোন সাজলেই হবে আমার সাজার কি দরকার আপু?
–নাহ তাও তোমাকে ওআমার সাথে যেতে হবে বেশি না সাজলে হালকা সেজ তবু ও যেতে হবে প্লিজ।
এমন ভাবে বলে যে না করতে পারিনা। তাই আর কি রাজি হয়ে গেলাম।
চাচির কাছে গিয়ে হাতে হাতে কাজ করতে লাগলাম। সে না করছে কিন্তু এভাবে বসে থাকাতে তো ভালো লাগে না। রাইয়্যান নিজের বোনের বিয়ে বলে কার্ড পাঠিয়ে ছে সবার কাছে। তাই অনেক আত্মীয় আসছে বাসায়।
দুপুরের দিকে রান্না ঘরে বসে আছি আমাকে শত বলে ও সরাতে পারে নি আর এদিকে জেসমিন আপু ফেশিয়াল প্যাক দিয়ে বসে আছে রুমে।
হঠাৎ কেউ চিৎকার চেচামেচি করতে করতে নিচে নেমে এলো,
বেরিয়ে এসে দেখি ওই তানিশা। একটা র্সাভেন্ট কে ইচ্ছে মতো বকছে। ডয়িং রুমে এখন অনেক মানুষ এ ভরপুর কারণ বিয়ে বাড়ি বলে কথা সবাই সব কিছু ফেলে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে হা করে।
আমি ও ডয়িংরুমের একটু দূরে দাড়িয়ে দেখছি কি অবস্থা এমন করে চেচামেচি কেন করছে কে জানে?
–ইউ তোর সাহস কি করে হলো আমার কথা অমান্য করার হ্যাঁ বল তোকে যদি চাকরি থেকে না তারিয়েছি আমার নাম ও তানিশা না ওকে।
–ম্যাডাম ক্ষমা করে দিন আমার ভুল হয়ে গেছে।
–ভুল হয়ে গেছে আমার কথা শুনিস নি আবার সব রং আমার উপরেই ফেলছিস তকে তো আমি দেখছি রাইয়্যান, রাইয়্যান কোথায় তুমি? এই ছোটলোকের বাচ্চা আমার কি করেছে দেখো।
–আপনার পায়ে পরি মেডাম আমাকে তারিয়ে দিবেন না প্লিজ? আমি ইচ্ছে করে ফেলিনি।
–তুই ইচ্ছে করে ফেলেছিস আমি সিউর। আমি তোকে কফি নিয়ে যেতে বলেছিলাম তুই না করে চলে আসতে গিয়ে ইচ্ছে করে ফেলেছিস।
–মেডাম আমি না করেছি কারণ এই কাজটা স্যার আমাকে আগে শেষ করতে বলেছিল তাই।
আরুশি ভালো করে খেয়াল করলো পায়ে একটু রং পরেছে।
এর জন্য এতো অপমান বাপরে এ তো মামিকে ও ছারিয়ে যাবে।
এর মাঝে রাইয়্যান এসে হাজির। এসেই সবার দিকে তাকিয়ে তানিশা কে জিগ্গেস করে কি হয়েছে এখানে আর সবাই এদিকে তাকিয়ে আছে এ কেন? সবাইকে কাজে যেতে বলে এক ধমক দেয়। আরুশিকে দেখে নি রাইয়্যান আরুশি রান্না ঘরে ঢুকে গেছে ওকে দেখে ও দেখতে চায় রাইয়্যান কার পক্ষ নেয়।
–কি হয়েছে তানিশা এভাবে চিৎকার করছিস কেন?
–দেখ রাইয়্যান এ ছোটলোকের বাচ্চা কি করেছে তুই দেখ?
বলেই পা দেখাতে লাগে,
ভয় পেয়ে গার্ডটা বলে উঠে, স্যার বিশ্বাস করেন আমি ইচ্ছে করে করিনি এটা ভুলবশত হয়ে গেছে আমি চাকরি থেকে বের করবেন না প্লিজ।
–আবার মুখে মুখে কথা বলছিস তোকে তো আমি।
বলেই তানিশা লোকটার গায়ে হাত তুলতে যায়।
আমার তো চোখ বড় বড় হয়ে গেছে সামান্য একটু পায়ে লেগেছে বলে কেউ গায়ে হাত তুলতে পারে।
রেগে আরুশি তাকিয়ে আছে কিন্তু সাথে সাথে মুখে হাসি ফুটে উঠে রাইয়্যান তানিশার হাত ধরে নিয়েছে।
–আপনি আপনার কাজে যান।[ হাতের ইশারায় লোকটাকে চলে যেতে বলে]
লোকটা হাফ সেড়ে বাচঁলো মনে হয় দৌড়ে কাজে চলে গেল,
–রাইয়্যান তুই আমার হাত ধরলি কেন আর ওকে কাজে যেতে কেন বললি?
–তানিশা এটা তুই ঠিক করিস নি সামান্য কারনে কেউ এমন করে ও ইচ্ছে করে করি নি বলেছে। আর বাসার এতো মানুষের মাঝে এসব করা উচিত হয় নি তোর সবাই কি ভাববে?সবার কথা ভেবে ও তুই চুপ থাকতে পারতি আর যেন চিৎকার চেচামেচি না শুনি।
–রাইয়্যান তুই আমার দিকটা দেখলি না।
–এখন আমি বিজি আছি। আর কোন সিন্ক্রিয়েট দেখতে চাই না।
বলেই বাইরে চলে গেল।
তানিশা রেগে ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
রান্না ঘরে ঢুকতে যাবো জেসমিন আপু হাত টেনে রুমে নিয়ে এলো।
–তারাতারি গোসল সেড়ে আয় আমাদের পার্লারে যেতে হবেনা দেখ কতো বাজে একটা বাজে প্রায়।
–এতো আগেই কেন আপু গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান তো চারটার দিকে।
–হ্যাঁ তাই তো এখন যেতে হবে। সাজতে সময় লাগবে না তারাতারি রেডি নে আমি ও গোসল করবো।
বলেই চলে গেল।
আজকে সারাদিন রাইয়্যানের সাথে সকালের পর আর আমার কথা হয় নি। গোসল সেরে আমি আর আপু বেরিয়ে পরলাম ড্রাইভারের সাথে করে।
এখানে এসে পৌঁছনোর হয়েছে দেরটার দিকে এখন বাজে ৩:৪৬ এখন ও আপুর সাজ কমপ্লিট হয় নি এখন ও নাকি বাকি আছে বাপরে বাপ দুই ঘন্টা ধরে সাজাচ্ছে তাও নাকি আজ কম সেজেছে বিয়েতে দশটায় আসবে। আজকে দেরিতে এসেছে তাই ফুল সাজা হলো না। সারে চার তার সাজ কমপ্লিট হলো। ওফ চারটার অনুষ্ঠান কতো লেট।
–আপু অনেক লেট হয়েছে গেছে চলো তো আর বসা ঠিক হবে না।
–বলিস কি কিন্তু তোর তো সাজ হলো না।
–আমার সাজতে হবে না চলো।
–নাহ তোর না হওয়া পযর্ন্ত আমি যাবো না।
–অামার জন্য বসতে গেলে আজ আর তোমার গায়ে হলুদ হবে না।
–তুই রাগ করেছিস তাইনা থাক আমার গায়ে হলুদ হতে হবে না তুই রেডি হও তো।
–কি যে বলো না আমি রাগ কেন করবো আর আমার সাজতে ভালো ও লাগে না চলো তো।
— আচ্ছা সাজতে হবে না শাড়িটা পরে নে ওনাদের বললে তারাতারি শাড়ি পরাতে পারবে।
আমাকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে শাড়ি পরাতে বললো।
কুচি করে উপরে চিকন করে শাড়ি পরিয়ে দিলো কিন্তু এতে বারবার পেট বের হচ্ছে তাই আমি পিনটা খুলে হাতে ছেড়ে রাখলাম শাড়ির আচলঁ।
এবার আপু তাদের বলল হালকা সাজিয়ে দিতে আমি না করছি শুনছে না। তাই চুপ করে রইলাম ঠোটে লাল কালারের লিপস্টিক দিতে আসে আমি না করে দেয়।
হালকা করে একটু পিন কালারের লিপস্টিক দেয়। এতো টকটকে কালার পছন্দ না আমার। মুখে হালকা ফেস পাউডার চোখে কাজল। হাতে চুড়ি পরি কানে দুল আর কিছু পরি না চুল বেনি করতে গেলে আপু বলে এভাবে ছেড়ে রাখ সুন্দর লাগছে। তার কথা শোনে ছেড়েই রাখি।
রাইয়্যান আজ আকাশী রঙের একটা পান্জাবি পরেছে বাম হাতে ঘড়ি ডান হাতে ব্যাসলেট। চোখ সানগ্লাস ফর্সা শরীর কালারটা অসম্ভব ভালো মানিয়েছে। সব মেয়েরা হা করে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। একেকজন চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে। সাংবাদিক রা তো রাইয়্যান কে ঘিড়ে ধরেছে অসহ্য হয়ে রাইয়্যান সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে চোখ দিয়ে একবার চারপাশে চোখ বুলিয়ে কাউকে খুজলো না দেখা মিললো না।
সিড়ি দিয়ে উঠতে যেতেই তানিশার সাথে দেখা ও নিচে আসছে শাড়ি পরছে সাদা শাড়ি। এতো পাতলা শাড়ি যে শরীরের সব স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে রাইয়্যান একবার তাকিয়ে চোখ ফিরে নিলো।
–রাইয়্যান তুই কোথায় যাচ্ছি হলুদের অনুষ্ঠানে যাবিনা।
–যাবো না কেন?
–তাহলে উপরে যাচ্ছিস কেন?
–কনে এখন ও আসে নি।
–আসে নি কোথায় গেছে।
–জানিনা।
–ওইদিকে তাকিয়ে আছিস কেন আমার দিকে তাকিয়ে কথা বল দেখ তো আমাকে কেমন লাগছে। শাড়ি তো আমি পরি না জানিস ই সবাই পরেছে তাই আমি ও পরলাম একটা শাড়িই নিয়ে এসেছিলাম দেখতো ভালো লাগছে নাকি দেখতো।
রাইয়্যান ফিরেও তাকাল না সোজা উপরে চলে গেল।
তানিশা হা হয়ে ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।
রাইয়্যান বারান্দায় গিয়ে দাড়াতেই ওর চোখ আটকে যায় কারো উপর। খোলা চুল সাজ হালকা হাতে চুড়ি। হাত দিয়ে চুল গুলো কানে গুচছে। অরেঞ্জ কালারের শাড়ি। মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাইয়্যান।
আরুশি আর জেসমিন গেটের কাছে নামে সোজা স্টেজের কাছে যায়। জুনায়েদ ভাইয়া আগে থেকেই বসে আছে আমরা যেতেই ভাইয়া হা হয়ে আপুর দিকে তাকিয়ে থাকে। আপুকে আর ভাইয়াকে এক সাথেই হলুদ দেওয়া হবে। তাই একসাথে বসানো হলো আপুকে ভাইয়ার পাশে বসিয়ে আমি স্টেজের নিচে নেমে দাড়ায়।
রাইয়্যান নিচে নেমে বাগানে আসে এসেই আরুশির দিকে যেতে নেয়। সামনে তানিশা এসে দাড়ায়,
–কি হলো সামনে দাড়ালি কেন?
–কি হয়েছে তোর আমার সাথে কথা বলছিস না কেন?
–কই বললাম না।
–তখন যে বললাম কেমন লাগছে কিছু তো বললি না।
–এমনি সর সামনে থেকে।
আরুশি একবার পেছনে ফিরে দেখেছে রাইয়্যান আর ওই তানিশা মেয়েটা গল্প করছে। সমস্ত গেস্ট দের দেখছে সবাই অনেক সুন্দর করে সেজেছে। কিছু কিছু মেয়ের দিকে তাকালে আর তাকানো যায় না। নিজেরই লজ্জা করে।
নিজে একাই দাড়িয়ে আছে আন্কেল কয়েকজন লোকের সাথে বসে গল্প করছে এর মাঝে হলুদ লাগানো শুরু হয়ে গেল জেসমিনের মা আগেই দুজন কে হলুদ ছুয়ে দেয়। তারপর আর কিছু মহিলা দিলো শুরু হলো হলুদ লাগানো আপু আমাকে কাছে ডাকছে ভেবেছি কিছু দরকার তাই তার কাছে এগিয়ে যেতেই এক গাদা হলুদ দিয়ে দিলো আমার মুখে। আমি তো হা এটা করবে ভাবিনি আমি আমি মুখ ছোট করে তাকাতেই দুজন হাহাহা করে হেসে উঠে দুজন কে বকে তাদের ও হলুদ দিয়ে স্টেজ থেকে নেমে আসলাম। সামনে এগুতেই দেখি রাইয়্যান ও হাসছে সাথে এক দল ছেলে। হয়তো ফ্রেন্ড হবে আমি মুখ ভেংচি দিয়ে বাসার ভিতরে যেতে লাগলাম। ডয়িং রুমে আসতেই হাফ ছেড়ে বাচঁলাম এখানে কেউ নেই সবাই বাইরে আছে।
–হে তোমাকে তো ভূত বানিয়ে দিয়েছে। আর জেসমিনের থেকে তোমার মুখে বেশি হলুদ তোমাকে ই সবাই কনে ভাববে।
রেগে রাইয়্যানের দিকে তাকায় আরুশি
রাইয়্যান হাহাহা করে হেসে দেয়।
–হাসবেন না একদম বলে দিচ্ছি তাহলে কিন্তু,,
–হাসলে কি করবে শুনি।[ বলেই হেসে দেয়]
আরুশি রেগে নিজের মুখে থেকে হলুদ নিয়ে ছুড়ে মারে রাইয়্যানের দিকে হলুল পান্জাবিতে লাগে কিছু গালে লাগে একটু।
–এটা কি করলে আরু।
–হাসেন আরো তাহলে হলুদের বাটি এনে আপনার মাথায় ঢালবো হূহ।
–তোমাকে তো আমি আজ,
বলেই ছুট লাগায় আরুশির পেছনে কিন্তু আরুশি কে ধরতে পারলে তো আরুশি বলেই দৌড়ে সিড়ি বেয়ে উঠে রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিয়েছে।
চলবে❤
চলবে❤
[ ভুলক্রটি হলে ক্ষমা করবেন।]