আমার তোমাকে প্রয়োজন পর্ব -০৪+৫

#আমার_তোমাকে_প্রয়োজন💖
#Writer_Tanisha_Akter_Tisha
#Part_4

কপি নিষিদ্ধ ❌

ঐশী চোখ খুলতেই সামনের চেয়ারে আহাদকে দেখতে পায়।

আহাদ হাতের কফি ঐশীর দিকে বাড়িয়ে দেয়।
নাও।

আপনি!

হুম,খেয়ে নাও মাথা ব্যাথা কমে যাবে।

আপনি কি করে বুঝলেন?

আমি সব বুঝি তুমি এখন কফিটা খাও।

ঐশী আহাদের হাত থেকে কফির মগটা নিয়ে কফিতে চুমুক দেয়,আহাদ ঐশীর দিকে তাকিয়ে আছে।
ঐশী সম্পূর্ণ কফিটা শেষ করে।

আস্তে আস্তে মাথা ব্যাথা কমে যাবে।

হ্যাঁ।

ক্লাস নেই?

নাহ প্রথম ক্লাসটা হবে না।

ওহ।

আহাদ পকেট থেকে একটা ফোন বের করে টেবিলের উপরে রাখে।
তোমার জন্য।

আমার জন্য!

হ্যাঁ কাল তো তোমার ফোনটা হারিয়ে গেছে তাই তোমার জন্য একটা নিউ ফোন এনেছি।

সরি আমি এটা নিতে পারবো না।
কথাটা বলে ঐশী বই গুছিয়ে চলে যায়।
আহাদ ওকে পেছন থেকে ডাক দেয় কিন্তু ঐশী পেছনে ফিরে তাকায়নি।

ঐশী ক্লাস করে বের হয়ে দেখে মেইন গেটের সামনে আহাদ পকেটে হাত গুঁজে চোখে সানগ্লাস পড়ে দাঁড়িয়ে আছে।
ঐশী আহাদের পাশ কেটে চলে যেতে নিলে আহাদ বাঁধা দেয়,ঐশী থেমে যায়,
ফোনটা নিয়ে নাও।

আচ্ছা আপনার সমস্যাটা কোথায় আমি তো বলেছি আমি এটা নিতে পারবো না,তবুও কেন বার বার দিতে চাইছেন।

আচ্ছা নেও না আমি তোমাকে গিফট করলাম।

গিফট দেওয়া নেওয়ার মতো কোনো সম্পর্ক আমাদের মধ্যে নেই।
কথাটা বলেই ঐশী আহাদের পাশ কেটে চলে যায়।

ঐশী বাসায় এসে রেডি হয়ে আমেনাকে নিয়ে বাসা থেকে বের হয় প্রথমে একটা মোবাইল শপে যেয়ে কম দামের মধ্যে একটা টাচ মোবাইল কিনে।

আমেনার চেক আপ করানোর জন্য হসপিটালে যায়,
ওনার কয়েকটা টেস্ট করে ঐশী ডক্টরের চেম্বারে যায়,
আমেনাকে বাহিরে বসিয়ে এসেছে।

ডক্টর রিপোর্ট দেখে গম্ভীর গলায় বলে,
শুনো মামনি তোমার মায়ের অবস্থা ভালো না।

আঙ্কেল কি হয়েছে আম্মুর?

তোমার মা ২ বার হার্ট অ্যাটাক করেছেন,ওনার শরীরে কন্ডিশন খুব খারাপ,ওনাকে এখন টেনশন মুক্ত রাখতে হবে,ওনার উপর কোনো রকম প্রেসার ফেলা যাবে না,
নাহলে যেকোনো সময় যা কিছু হতে পারে,
বুঝছো মামনি?

জ্বী আঙ্কেল।

ডক্টর মেডিসিন লিখে দেয় ঐশী পেসক্রিপশন নিয়ে বাহিরে চলে যায়।
ঐশীর মনটা খারাপ হয়ে যায় আমেনাকে নিয়ে হসপিটাল থেকে বের হয়ে রিকশায় চড়ে বসে,
কি হয়েছে মা তোমার মনটা খারাপ কেন?

না আম্মু কিছু হয়নি।

অনেকখানি যেতেই জ্যাম লেগে যায়।
অনেকক্ষণ ধরে বসে থাকার পরও জ্যাম না ছাড়ায় ঐশী রিকশা থেকে নেমে দাঁড়ায় কেন জ্যাম লেগেছে তা দেখার জন্য ঐশী সামনে যাচ্ছে।
ঐশী সামনে যেয়ে যা দেখলো তাতে ওর অন্তর আত্না কেঁপে উঠল।

সবার গাড়ি থামিয়ে মাঝ রাস্তায় গা’ন হাতে চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে আহাদ।

ওর সামনে হাত পা বাধা অবস্থায় একজন লোককে রাস্তায় দু হাঁটু গেড়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে,লোকটার পাশে এক ব্যাক্তির লা’শ পড়ে আছে।

লোকটির পেছনে আহাদের গার্ডরা দাঁড়িয়ে আছে।
গার্ডদের মধ্যে থেকে দুজন গার্ড লোকটার মাথার দু পাশে গা’ন ধরে দাঁড়িয়ে আছে,লোকটা ভয়ে থর থর করে কাঁপছে।

আহাদ লোকটার ভয় আরো বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
বল কেন আমার সাথে কেন বেইমানি করেছিস?

আহাদের কথায় লোকটা মাথা নিচু করে ফেলে।

কি কিছু বলবি না?
ঠিক আছে তাহলে ম’র।

লোকটা কিছু বলবে তার পূর্বেই আহাদ লোকটার কপাল বরাবরা গু’লি করে,লোকটার দুপাশে দাড়ানো গার্ড দুটো লোকটার মাথার দুপাশে গু’লি করে।
গুলির শব্দে সেখানে উপস্থিত সবাই ভয়ে কেঁপে উঠে।
লোকটার নিথর দেহ রোডে পড়ে রয়।
এই দৃশ্য দেখে ঐশীর অন্তর আত্না কেঁপে উঠে।

শাহীন লা’শ গুলোকে দাফন করে দাও আর রোডে পড়ে থাকা সমস্ত ব্লা’ড ক্লিন করে রোড ক্লিয়ার করে ফেলো।

ওকে স্যার।

আহাদ চেয়ারে ছেড়ে উঠে সামনে তাকাতেই ঐশীকে দেখতে পায়।

কাল ঐশীর চোখে কৃতজ্ঞতা দেখলেও আজ এই চোখে ওর প্রতি কেবল আর কেবল ঘৃণা দেখতে পাচ্ছে।

আহাদ ঐশীর কাছে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই ঐশী দৌড়ে সেখান থেকে চলে যায়।
আহাদ ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে গাড়িতে উঠে বসে।

গার্ডরা মুহূর্তের মধ্যে রোডে পড়ে থাকা সমস্ত ব্লা’ড ক্লিন করে রোড ক্লিয়ার করে দেয়।

সব গাড়ি যার যার গন্তব্য উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
ঐশীরা বাসায় চলে আসে।

ঐশী রুমে এসে হাতের ব্যাগটা বিছানায় ছুড়ে মারে।
রাগে,ভয়,ঘৃনায় ঐশীর শরীর থরথর করে কাঁপছে,
ছি একটা মানুষ এতোটা খারাপ কি করে হতে পারে,
দুটো মানুষকে মুহুর্তের মধ্যে এতো গুলো মানুষের সামনে মে’রে ফেললো,ওনার মধ্যে কি কোনো দয়া মায়া নেই,একটা বার লোকটার কথা শুনতেও তো পারতো কিন্তু না উনি তা না করে লোকটাকে মে’রে ফেললো।
আচ্ছা মা’ফি’য়া’রা এমন কেন এদের কাছে কি মানুষের কোনো মূল্য নেই,আমরা কি ওদের হাতের পুতুল নাকি?
মি. আহাদ শেখ আই হেট ইউ,হেট ইউ।

রাত ২ টায়,
ঐশী যখন গভীর ঘুমে ছিল তখন ওর ফোনটা বেজে ওঠে,ঐশী গভীর ঘুমে ছিল তাই প্রথম বারের কল রিসিভ করতে পারেনি,দ্বিতীয় বার কল দেওয়ায় ঐশীর ঘুম ভেঙে যায়,ও ঘুম ঘুম চোখে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখে অচেনা নাম্বার থেকে কল এসেছে,
ও কল রিসিভ করে ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে,
হ্যালো।

ও পাশ থেকে কারো কন্ঠ শোনা যাচ্ছে না।

ঐশী আবারও “হ্যালো” বলে বাট কেউ রেসপন্স করছে না।

ঐশী বিরক্ত হয়ে কল কাটতে নিলেই শুনতে পায়।
“জান”।

ঐশী এক ঝটকায় শোয়া থেকে উঠে বসে।
ঐশীর বুক কাঁপছে,কে এটা আহাদ!

ঐশী পুনরায় ফোন কানে দেয়,ও আবারও শুনতে পায়।
” জান”।

কে আপনি?

জান চিনতে পারছো না?

না আপনার পরিচয় দিন।

জান আমি আহাদ বলছি,ঘুমিয়ে ছিলে তাই না?

এতো রাতে আপনি কেন কল দিয়েছেন?

জান তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে একটু ছাদে আসো না।

মানে?

মানে আমি তোমার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছি,ছাদে এসো তবেই তুমি আমাকে দেখতে পারবে।

ঐশী আহাদের কথা শুনে এক মিনিটও দেড়ি করলো না দৌড়ে ছাদে চলে গেল।
ঐশী ছাদের একদম কিনারায় এসে নিচে তাকাতেই রাস্তায় জ্বলতে থাকা ল্যাম্পপোস্টের হালকা আলোতে আহাদের মুখ দেখতে পেল।

বাহ জান এতো তাড়াতাড়ি চলে আসলে।

আপনি কেন এসেছেন চলে যান এখান থেকে।

তোমাকে দেখতে এসেছি,জান আজ কি আমার ঐ রুপ দেখে ভয় পেয়েছিলে?

আহাদের কথায় ঐশী চুপ করে রয়।

কি হলো জান কথা বলো,ভয় পেয়েছিলে?

আপনি চলে যান এখান থেকে।

যদি না যাই?

দেখুন এখানে আমাদের একটা সম্মান আছে আপনার জন্য মানুষ আমাদের নিয়ে সমালোচনা করুক এটা আমি চাই না।

মানুষের কাজই তো সমালোচনা করা।

হ্যাঁ,কিন্তু আমি তাদের সমালোচনার পাএী হতে চাই না,
আপনি প্লিজ এখান থেকে চলে যান।
কথাটা বলেই ঐশী কল কেটে আহাদের থেকে চোখ সরিয়ে ছাদ থেকে নেমে আসে।

আহাদ ছাদ থেকে চোখ সরিয়ে গাড়িতে উঠে বসে।
আজ আহাদের মনটা খারাপ ছিল তাই ঐশীকে এক নজর দেখার জন্য আহাদ ছুটে এসেছিল।

সকাল বেলা,
ঐশী ঘুম থেকে উঠে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে একটা নাম্বার থেকে এসএমএস এসেছে,ও এসএমএস অপশনে যেয়ে দেখে কালকের নাম্বার থেকে এসএমএস এসেছে ও নাম্বারে ক্লিক করতেই এসএমএস স্ক্রিনে ভেসে উঠে,এসএমএস লেখা,
“গুড মর্নিং জান।
কেমন আছো?
ঘুম ভালো হয়েছে?
আজ ভার্সিটিতে যাবে না?

ঐশী আহাদের এসএমএসের রিপ্লে দেয় না,ও রেডি হয়ে ভার্সিটিতে চলে আসে।

অপরদিকে আহাদও রেডি হয়ে অফিসে যায়।
আহাদ যখন ওর কেবিনে বসে কাজ করছিল তখন সিয়াম দরজায় নক করে ভেতরে আসে।
সিয়াম মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

কি হয়েছে সিয়াম কিছু বলবে?

আসলে স্যার,

হ্যাঁ বলো।

আসলে স্যার,

সিয়াম বলো।

আসলে স্যার,

কি আসলে নকলে করছো বলতে হলে বলো না বলতে হলে চলে যাও।

আসলে স্যার আমরা রুস্তম আলীর লোকদের ধরতে পারিনি।

কি!

হ্যাঁ স্যার ওরা আমাদের হাত ফসকে চলে গেছে।

হাত ফসকে চলে গেছে মানে কি তুমি জানো না ওরা যদি সব এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে তাহলে এর পরিণাম কি হবে।

আব স্যার,

সিয়াম আমি কিচ্ছু শুনতে চাই না যে করেই হোক ওদের খুঁজে বের করতেই হবে।

জ্বী স্যার।

সিয়াম আমার চোখের সামনে থেকে চলে যাও ওদের না ধরা অব্দি তুমি আমার সামনে আসবে না,যাও।

সিয়াম “জ্বী স্যার” বলে চলে যায়।

আহাদের রাগে মাথা ফে’টে যাচ্ছে,রুস্তম আলীর লোক যদি বাহিরে ঘুরে বেরায় তাহলে সাধারণ মানুষের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে,রুস্তমের মতো পশু যা ইচ্ছে করতে পারে।

আহাদ টেবিলের উপরে রাখা সব কিছু ফেলে দিচ্ছে রাগে ওর শরীর কাঁপছে ভা’ঙচু’র করেও রাগ কমছে না,আহাদ বুঝতে পেরেছে কি করলে ওর রাগ কমবে,
আহাদ হন হন করে কেবিন থেকে বের হয়ে যায়।

ক্লাস শেষ করে ঐশী লাইব্রেরিতে এসেছে,ও হুমায়ুন আহমেদের বই গুলো দেখছে,ও কনফিউজ হয়ে পড়েছে বুঝতে পারছে না কোনটা পড়বে,ও যখন বই দেখায় মগ্ন ছিল তখনই কেউ ওকে হেঁচকা টান দিয়ে পাশের রুমটাতে নিয়ে যায়।
ঐশী তাকাতেই আহাদকে দেখতে পেলো,
ও কিছু বলবে তার পূর্বেই আহাদ ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে,অনেকটাই শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে ঐশী ওকে সরানোর চেষ্টা করছে কিন্তু এক চুলও সরাতে পারছে না।

বেশ কিছুক্ষণ পর আহাদ ঐশীকে ছেড়ে দেয়।

আহাদ কিছু বলবে তার পূর্বেই ঐশী আহাদের গালে ঠাস করে চড় মা’রে।
আহাদ গালে হাত দিয়ে অবাক হয়ে তাকায়।

আমাকে জড়িয়ে ধরেছেন কোন সাহসে,
গত দুদিন ধরে আপনাকে লক্ষ্য করছি আপনি প্রতিটা মুহুর্তে আমাকে ফলো করেছেন,কাল মাঝরাতে আমার বাড়ির সামনে চলে এসেছেন আপনি কি শুরু করেছেন এগুলো যখন ইচ্ছে তখন ফোন দেন যখন ইচ্ছে তখন এসএমএস দেন,আমাকে কি আপনার হাতের পুতুল মনে হয়?
আপনারা মা’ফি’য়া’রা আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জীবন অতিষ্ঠ করে দিয়েছেন,আপনি নিজের লিমিট ক্রস করবেন না,আমার থেকে দূরে থাকবেন,আপনি আর কখনো আমার সামনে আসবে না,আপনার এই চেহারা আমি দেখতে চাই না।

কথা গুলো বলে ঐশী চলে যেতে নিলে আহাদ ওর হাত ধরে হেঁচকা টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে ঐশীর ঠোঁট জোড়া দখল করে নেয়।

ঐশী ছাড়ানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু পারছে না আহাদ বেশ শক্ত করে ওকে জড়িয়ে ধরেছে।

বেশ কিছুক্ষণ পর আহাদ ওকে ছেড়ে দেয়,আহাদের হাত আগলা হতেই ঐশী ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়।

আহাদ ঐশীর মুখ চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে রাগী গলায় বলে,
আজ যদি তোমার জায়গায় অন্য কেউ থাকতো না তবে তাকে এমন মৃ’ত্যু দিতাম যা দেখলে লোকের রুহু কেঁপে উঠতো,শুধু মাএ তোমাকে ভালোবাসি বলে তোমার গায়ে হাত তুললাম না,কিন্তু এরপর থেকে আমার গায়ে হাত তোলা তো দূরের কথা আমার সাথে উঁচু স্বরে কথা বললে তোমার এমন অবস্থা করবো যে তুমি ভাবতেও পারবে না,ভালোবাসি বলে যে তোমার সব কিছু মেনে নিবো এটা ভেবো না।
তুমি কি বললে তুমি আমার হাতের পুতুল নাকি?
হ্যাঁ ঠিক বলেছো তুমি আমার হাতের পুতুল,আমি তোমাকে যেভাবে নাচাবো তোমাকে ঠিক সেভাবেই নাচতে হবে।
লিমিট ক্রশ করা কাকে বলে তা আমি তোমাকে বুঝিয়ে দিবো,তোমার ডানে বামে সামনে পেছনে আমার ছায়া থাকবে,তোমার হৃদ স্পন্দনে,নিশ্বাসে আমার নাম জড়িয়ে থাকবে,তোমার ভাবনায় আমি বসবাস করবো,
আমি যেমন তোমাকে ভালোবাসি,এক দিন তুমিও আমাকে এই মা’ফি’য়া আহাদ শেখকে ভালোবাসবে।
কথাটা মনে রেখো।
কথা গুলো বলে আহাদ চলে যায়।
এসেছিলো রাগ কমাতে কিন্তু দ্বিগুণ রেগে বোম হয়ে চলে গেল।

#আমার_তোমাকে_প্রয়োজন💖
#Writer_Tanisha_Akter_Tisha
#Part_5

কপি নিষিদ্ধ ❌

রাগে ঐশীর চোখ থেকে পানি পড়ছে ও দৌড়ে ভার্সিটি থেকে বের হয়ে যায়।

বাসার সামনে এসে কলিংবেলে চাপ দেয় আমেনা এসে দরজা খুলে দেয়।
ও আমেনার সাথে কথা না বলে দৌড়ে রুমে চলে যায়।

হাতের ব্যাগটা বিছানায় ছুঁড়ে মারে,ওয়াশরুমে যেয়ে ঝর্ণা ছেড়ে দেয়,ঝর্ণার পানি ওর সারা অঙ্গ ভিজিয়ে দিচ্ছে,ঐশী জোরে জোরে ঠোঁট মুচ্ছে,ওর ভাবতেও ঘৃণা হচ্ছে ওর ঠোঁটে আহাদের পরশ আছে।
আহাদ ওকে জড়িয়ে ধরেছিলো এটা মনে পড়তেই ঐশী
ওর শরীর সাবান দিয়ে ঘষছে,ঘষতে ঘষতে একটা পর্যায় ওর শরীর ছিলে যায়।
ঐশী ঝর্ণার নিচে হাঁটু গেড়ে বসে কাঁদছে,
ঝর্ণার পানির সাথে ওর চোখের পানি মিশে যাচ্ছে।

বেশ কিছুক্ষণ পর ঐশী ওয়াশরুম থেকে বের হয়,
চুল এখনো ভিজা ওর মুছতে ইচ্ছে করছে না চুলের পানিতে পিঠ ভিজে যাচ্ছে,ঐশীর সে বিষয়ে কোনো ত্রুক্ষেপ নেই ও বারান্দায় চলে আসে,মেঝেতে দু হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে,আজ কেমন নিজেকে অসহায় অসহায় লাগছে,আগে তো কখনো এতোটা অসহায় লাগে তবে আজ কেন লাগছে?

ঐশীর চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে,
মি. আহাদ শেখ,আই হেইট ইউ,
হ্যাঁ মানছি আমার চার পাশে আপনার ছায়া বিদ্যমান থাকবে,হ্যাঁ আমার হৃদ স্পন্দনে,নিশ্বাসে আপনার নাম জড়িয়ে থাকবে,হ্যাঁ আমার ভাবনায় আপনি বসবাস করবেন,কিন্তু তা কেবল আর কেবল ঘৃণার,
আপনার মতো মা’ফি’য়াকে আমি কখনো ভালোবাসবো না,আপনার মতো মানুষ কারো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য না,আপনি সারাটা জীবন আপনার কাছ থেকে ঘৃণাই পাবেন কখনো এই ঘৃণা ভালোবাসায় পরিণত হবে না।

ঐশী না খেয়ে পড়াতে চলে যায়,প্রথমে দুটো স্টুডেন্ট পড়িয়ে,শেষের স্টুডেন্টকে পড়াতে যায়,ঐশী দাঁড়িয়ে আছে সেই গলিটার সামনে ওর ভয় হচ্ছে ও বুঝতে পারছে না কি করবে যাবে না কি যাবে না,
আজও যদি ওরা ওকে তাড়া করে তখন ও কি করবে?
কিন্তু না গেলে পড়াবে কি করে,বেশ কিছুক্ষণ পর ঐশী সাহস জুগিয়ে গলি দিয়ে হাঁটা শুরু করে,নাহ আশে পাশে কেউ নেই,ঐশী স্টুডেন্টটার বাসায় চলে আসে।

ঐশীর পড়ানোর মাঝে বাচ্চার মা ওর কাছে আসে,
জানো ঐশী এখানে কি হয়েছিলো?

না তো আন্টি আমি তো কিছু জানি না,
কি হয়েছে এখানে?

তুমি যেদিন পড়িয়ে গিয়েছিল,ঐ যে বৃষ্টির রাতে।

হ্যাঁ।

সেদিনের পরদিন সকালে রাস্তায় এই এলাকার বখাটে ছেলে গুলোর লা’শ পাওয়া গেছে।

কি?

হ্যাঁ,কে মে’রেছে জানো?

কে মে’রেছে?

আহাদ শেখ।

কি আহাদ শেখ!

হ্যাঁ,তাও আবার খুব বাজে ভাবে মে’রেছে,ছেলে গুলোর চোখ উ’পড়ে ফেলেছে,জিহবা কে’টে দিয়েছে,হাতের নখ গুলো প্লা’স দিয়ে টেনে উ’ঠি’য়েছে,শরীরের সমস্ত জায়গায় ধারালো ছু’রি দিয়ে আ’ঘা’ত করেছে,
ওদের অনেক কষ্ট দিয়ে মে’রেছে।
মে’রে ফেলেছে ভালোই করেছে ওরা অনেক মেয়ের জীবন ন’ষ্ট করেছে ওদের মতো ন’রপ’শুদের মে’রে ফেলাই উচিত।
কথাগুলো বলেই উনি অন্য রুমে চলে যান।

ওদের এতোটা বাজে ভাবে মা’রা কথা শুনতেই ভয়ে ঐশীর সারা শরীর কেঁপে উঠে।

পড়ানো শেষ করে ঐশী ওনাদের বাসা থেকে চলে আসে,গলি থেকে বের হয়ে মেইন রোডে আসতেই আহাদকে দেখতে পায়,আহাদ ঐশীকে দেখে ওর কাছে আসে,ঐশী ওর পাশ কেটে চলে যেতে নিলে আহাদ ওর হাত ধরে ফেলে আহাদ হাত ধরতেই ঐশী ব্যাথায় ”আহ” করে উঠে।

আহাদ ঐশীর হাত দেখে ভ্রু কুচকে বলে,
হাত ছিলেছে কিভাবে?

ঐশী কিছু বলে না।

আমার জন্য নিজেকে কষ্ট দিয়েছো কেন?

ঐশী আহাদের হাত থেকে হাত ছাড়িয়ে নেয়।
আমি নিজের সাথে যা ইচ্ছে তাই করবো
তাতে আপনার কি?

আহাদ ঐশীর হাত ধরে হেঁচকা টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।
আমারই তো সব,কারণ তুমিই তো আমার।

ছাড়ুন।

আচ্ছা নেও ছেড়ে দিলাম।
দুপুরে খাওনি কেন?

খেতে ইচ্ছে করেনি।

আচ্ছা চলো।

কোথায় যাবো?

চলো একসাথে ডিনার করে আসি।

না,আপনি যান।

তোমাকে ছাড়া যাচ্ছি না।

আচ্ছা আপনার সমস্যা কি আপনি কেন আমার পিছনে পড়ে আছেন।

কারণ আমি তোমায় ভালোবাসি।

আপনার ভালোবাসার আমার প্রয়োজন নেই।

আমার তো প্রয়োজন আছে,চলো।

যাবো না।

ঐশী এবার কিন্তু আমার রাগ উঠে যাচ্ছে।

দুপুরের কথা,আর ঐ ছেলেদের মৃ’ত্যুর কথা মনে পড়তেই ঐশী ভয়ে ঢোগ গিলে।

চলো।

ঐশী আর কিছু না বলে গাড়িতে উঠে বসে,
ঐশীকে গাড়িতে উঠতে দেখে আহাদ মুচকি হেসে গাড়িতে উঠে বসে,আহাদ গাড়ি স্টার্ট দেয়,ঐশী চুপ করে বসে আছে।
আহাদ ওর সাথে কথা বলছে কিন্তু ও উত্তরে কিচ্ছু বলছে না।

ওরা রেস্টুরেন্টে চলে আসে,আহাদ আগে থেকেই টেবিল রিজার্ভ করে রেখেছে,ওরা যেয়ে টেবিলটায় বসে
আহাদ ওকে খাবার অর্ডার করতে বলে কিন্তু ঐশী কিছু অর্ডার করে না তাই আহাদই খাবার অর্ডার করে।
আহাদ ঐশীর সাথে কথা বলছে কিন্তু ও উওরে কিছুই বলছে না।
খাবার চল আসে,ঐশী এখনো অব্দি কিছু মুখে দেয়নি
চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে আছে।

কি হলো জান খাচ্ছো না কেন?

খেতে ইচ্ছে করছে না।

আহাদ ঐশীর মুখের সামনে খাবার তুলে ধরে,ঐশী আহাদের দিকে চোখ তুলে তাকায়।

খেয়ে নাও।

ঐশী আহাদের দিকে তাকিয়ে ওর হাত থেকে খেয়ে নেয়,আহাদ মুচকি হাসে।
আহাদ আস্তে আস্তে ঐশীকে খাইয়ে দিচ্ছে ঐশী আহাদের দিকে তাকিয়ে খেয়ে নিচ্ছে।

ঐশী খাওয়ার মাঝে আহাদকে প্রশ্ন করে,
ছেলে গুলোকে মে’রেছেন কেন?

আহাদ সোজাসাপ্টা উওর দেয়,
কারণ ওরা আমার জানের দিকে হাত বাড়িয়েছিলো।

ওদের কথার মাঝে ঐশীর ফোন বেজে উঠে,ও ব্যাগ থেকে ফোন বের করে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখে ওর মা কল দিয়েছে।
ঐশী কল রিসিভ করে।
আসসালামু ওয়ালাইকুম আম্মু।

ওয়ালাইকুম আসসালাম,মা তুমি কোথায়,আসতে এতো দেরি হচ্ছে কেন?

আম্মু আমি রেস্টুরেন্টে।

রেস্টুরেন্টে! কার সাথে?

আব আম্মু রিমন আর আন্টির সাথে আসলে ও বাহিরে আসার জন্য বায়না করছিলো তাই ওকে নিয়ে এসেছি।

ওহ আচ্ছা ঠিক আছে,সাবধানে এসো।

আচ্ছা।

আচ্ছা।
আমেনা কল কেটে দেয়।

মাকে মিথ্যে বললে কেন?

সত্যিটা বলা যেতো না।

মায়ের শরীরটা বেশি ভালো না তাই না?

আপনি কি করে জানেন?

গতকাল তুমি হসপিটালে গিয়েছিলে মায়ের চেকআপ করানোর জন্য তাই না?

হ্যাঁ কিন্তু আপনি,

কি করে জানলাম তাই তো,বলেছিলাম না আমার ছায়া সব সময় তোমার আশে পাশে থাকবে,
আমার বর্ডিগার্ডরা আমার ছায়া আর আমার ছায়ারা সব সময় তোমার আড়ালে তোমার উপর নজর রাখবে।

আপনি আমাকে নজর ব’ন্দী করতে চাইছেন?

নতুন করে আর কি করবো তুমি তো আগে থেকেই আমার নজরে ব’ন্দী হয়ে আছো।

ঐশী বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়।
আহাদও উঠে দাঁড়ায়।
ঐশী হাঁটা শুরু করে,ঐশীর পিছে পিছে আহাদও হাটা শুরু করে।
ওরা গাড়িতে উঠে বসে,আহাদ ঐশীকে ওর বাসার সামনে নামিয়ে দেয়।

এভাবে দোখতে দেখতে কেটে যায় ২ টি মাস।
এ ২ মাসে অনেক কিছু হয়েছে।
ঐশীর প্রতি আহাদের ভালোবাসা বেড়েছে,
বেড়েছে ওর প্রতি কেয়ারিং।
এই কদিনে ঐশীর একটা মেয়ের সাথে পরিচয় হয়েছে
মেয়েটার নাম”রোজা”,মেয়েটা ভালো,ভদ্র,মেয়েটা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান,মেয়েটা খুব সুন্দর কিন্তু কিছুটা ভীতু প্রকৃতির,ঐশী রোজার সাথে চলা ফেরা করে,একসাথে কলেজে আসে,একসাথে বাসায় যায়,
ওদের মাঝে বেশ ভালো বন্ডিং তৈরি হয়েছে।

ঐশী রোজা ভার্সিটিতে ক্লাস করছিলো,স্যার ক্লাস করানো শেষে কক্ষ থেকে চলে যান,স্যার যেতেই কক্ষে আহাদ প্রবেশ করে,ও ঐশীদের বেঞ্চের কাছে আসে,
ঐশী রোজা কথা বলছিলো আহাদকে আসতে দেখে ওরা দুজনেই দাঁড়িয়ে যায়।

রোজা তোমার সাথে কিছু কথা আছে আমার সাথে আসো।

আহাদের কথায় রোজা ভয়ে ঢোগ গিলে।

#চলবে

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here