আমার ভীনদেশী এক তারা পর্ব -০৬+৭

#আমার_ভীনদেশী_এক_তারা
#পর্ব৭
#Raiha_Zubair_Ripte

এনা দৌড়ে এসে মেয়েটার সামনে দাঁড়াতেই মেয়েটা আর লোকটা ভ্রু কুঁচকে তাকায়। মেয়েটা এনার দিকে তাকিয়ে বলে,,

” কিছু বলবেন?

” হ্যাঁ আপনার নাম ডালিলা না?

” হ্যাঁ আমার নাম ডালিলা। আপনি কিভাবে চিনেন আমায়?

” আপনি পিটারের স্ত্রী না!

” কোন পিটার?

” আপনি পিটার কে চিনেন না!পিটার উইলসন যার সাথে আপনার বিয়ে হয়েছে।

” ওহ ঐ ছেলের নাম আর বইলেন না তো। অসভ্য ছেলে বিয়ে করবি না তো আগেই বলে দিতে পারতি বিয়ের তিনদিন আগে নাটক করে জানিয়ে দেয় তার পক্ষে আমাকে বিয়ে করা সম্ভব না। আমি কি দেখতে খারাপ বলেন? আমি ও তার থেকে দ্বিগুণ দেখতে হ্যান্ডসাম ছেলে বিয়ে করছি। এই যে আমার হাসবেন্ড আর আমার ছেলে।

” আপনার সাথে পিটারে উইলসনের বিয়ে হয় নি?

” নাহ। আচ্ছা আপনি কে? আপনাকে তো আমি চিনি না আপনি চিনলেন কি করে আমায়?

এনা মেয়েটার হাত ঝাঁকিয়ে উৎফুল্ল হয়ে বলে,,

” সত্যি আপনার সাথে পিটার উইলসনের বিয়ে হয় নি?

” না বললাম তো তার সাথে আমার বিয়ে হয় নি। কিন্তু আপনি কে?

” আমি পিটারের ফ্রেন্ড। আচ্ছা আসি আমি, আপনাদের বিবাহিত জীবন সুখময় হোক। আপনি আজ যা উপকার করলেন আমার আপনায় বলে বোঝাতে পারবো না। ধন্যবাদ দিলেও কম হয়ে যাবে।

কথাটা বলে ছুটে চলে যায় এনা। পেছন থেকে ডালিলা আর তার স্বামি হা করে তাকিয়ে থাকে এনার ছুটে যাওয়ার দিকে।

আজ এনার খুশি দেখে কে। এনাকে এতো খুশি দেখে পাবলো,অ্যানিয়াস,জ্যারেড,ক্লো, আনন্দ, হেফজিবা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে এনার দিকে। এনা হেফজিবার হাত ধরে ঘুরাতে থাকে। আর বলতে থাকে,,

” হেফজিবা আমি দ্বিতীয় বার এ দেশে এসে ভুল করি নি। আমার ভালোবাসা আমারই আছে। উনি আমার অধিকার ভালোবাসা অন্য কাউকে দেন নি।

এনার এমন কান্ড দেখে পাবলো,অ্যানিয়াস,জ্যারেড
,ক্লো, আনন্দ, ভ্রু কুঁচকে তাকায় এনার দিকে। এদিকে হেফজিবা এনা কে থামিয়ে বলে,,

” হয়েছে কি সেটা তো বল। এতো খুশি কেনো আর তখন ওভাবে ছুটে গেলি কেনো?

এনা হেফজিবা কে ছেড়ে এবার ক্লো এর হাত ধরে ক্লো কে ঘুরাতে ঘুরাতে বলে,,,

” আমি আজ অনেক খুশি এ খুশির কোনো সীমা নেই। আমার পিটার বিয়ে করে নি।

কথাটা বলে ক্লো এর হাত ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে
পাবলো,অ্যানিয়াস,জ্যারেড,ক্লো, আনন্দ, হেফজিবার উদ্দেশ্যে বলে,,

” আমি বাসায় যাবো। পিটারের সাথে কথা বলবো আমি।

আনন্দ কিছু একটা ভেবে বলে,,

” হ্যাঁ অনেক বেলা ও হয়ে গেছে চল বাসায় যাওয়া যাক। তাছাড়া আমি তোদের ওদিকেই যাব এনা তাই চাইলে আমার সাথেই যেতে পারিস।

” হ্যাঁ চল তাড়াতাড়ি। হেফজিবা দোস্ত সাবধানে যাস। পাবলো,অ্যানিয়াস,জ্যারেড,ক্লো,সাবধানে যাস আসি আমি।

কথাটা বলে আনন্দ কে নিয়ে চলে যায়।

হেফজিবা এনার হন্তদন্ত হয়ে যাওয়া দেখে হেসে উঠে। হেফজিবার হাসি দেখে পাবলো বলে উঠে,,,

” আশ্চর্য ও এমন ব্যাবহার কেনো করলো। আর কি বললো পিটার বিয়ে করে নি। ও কি জানে না নাকি যে পটার স্যার বিয়ে করে নি।

হেফজিবা পাবলোর মাথায় চাটি মে’রে বলে,,

” গা’ধা জানলে কি আর এমন ব্যাবহার করতো। মেয়েটা পাগলের মতো ভালোবাসে পিটার স্যার কে। এবার যেনো ওদের মিলন টা হয়। আর যেনো কেনো বাঁধা না আসে।

অ্যানিয়াস হেফজিবার কাঁধে হাত দিয়ে বলে,,

” হ্যাঁ তাই যেনো হয়। মেয়েটা অনেক সাফার করছে রে। আমরা তো দেখেছি ছয় বছর আগে যখন বিচ্ছেদ হলো তখন এনা কতোটা ভেঙে পড়েছিল।

” হুম আজ ও ভেসে উঠে সেই দিনটার কথা। দিন টি ছিলো বুধবার আমরা কলেজ শেষে বাসায় ফিরছিলাম সেদিন কলেজ তাড়াতাড়ি ছুটি দিয়েছিলো কারন অনেক ঝড় হচ্ছিলো সেদিন। ভয়ংকর সেই ঝড়ের আবাস পেয়ে টিচার রা ছুটি দিয়েছিলে। পিটার স্যার ও সেই কলেজের ই টিচার ছিলো। রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম আমি আর এনা আর তখন পিটার স্যারের মা এসে এনাকে যাচ্ছে তাই বলে অপমান করেছিল।

পিটার স্যারের মা এও বলেছিলো স্যার যদি এনাকে বিয়ে করার জন্য মুসলমান হয় তাহলে স্যারের মা আ’ত্মহ’ত্যা করবে। এনাকে স্যারের জীবন থেকে দূরে সরে যেতে বলেছিলো স্যারের মা। স্যার কে না জানিয়ে স্যারের মা স্যারের বিয়ে অন্যত্র ঠিক করে ফেলছিলেন। স্যার ও নাকি রাজি ছিলেন স্যারের মা বলেছিলো।

এনা সেদিন বিধ্বস্ত হয়ে এলেমেলো পায়ে বৃষ্টি তে ভিজতে থাকে। নিরালয়ে হেঁটে এক সবুজ মাঠ প্রান্তেরে গিয়ে বসে পরে। এতোক্ষণ দলা পাকিয়ে রাখা কান্না গুলো যেনো এনার তখন উপচে পড়ছিল, হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো আমায় জড়িয়ে।

— হেফজিবা কেনো এমন হলো। স্যার তো আমায় ভালোবাসে সে কি অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারে বল। স্যার বলেছিল আমায় বিয়ে করবে তাহলে এমন টা করলো কেনো স্যার। বল না কেনো সে রাজি হলে অন্য কোথাও বিয়ে করতে।

হেফজিবার চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে নোনা জল বেস্ট ফ্রেন্ডের এমন অবস্থা তার ও মানতে কষ্ট হচ্ছে। অনেকবার সতর্ক করেছিলাম বলেছিলাম তোদের ধর্ম আলাদা তার প্রতি তোর মনে কোনো ভালোবাসার অনুভূতির জন্ম দিস না কিন্তু মেয়েটা স্যারের এমন পাগল পান ভালেবাসায় নিজেকেও আটকে রাখতে পারে নি।

হেফজিবা এনা কে নিজের থেকে ছাড়িয়ে বলে,,,

” আমি আগেই বলেছিলাম এনা তোদের ভালোবাসা পূর্নতা পাবে না। কারন স্যারের মা কখনোই স্যারের পাশে তোকে মানবে। নিজেকে শক্ত কর আর স্যারের সাথে কথা বল।

” হ্যাঁ ঠিক বলেছিস টিচারের সাথে আমার কথা বলতে হবে।

কথাটা বলে তাড়াতাড়ি করে বসা থেকে উঠে আবার কলেজের দিকে ছুটে যায়। পিটার বৃষ্টি ছাড়ার জন্য অপেক্ষা করছিলো। হঠাৎ বৃষ্টির মাঝে এনাকে ছুটে আসতে দেখে পিটার দু তালা থেকে নেমে নিচ তালায় আসে। এনার কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই এনা পিটার কে জাপ্টে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে। হঠাৎ এনার কান্নার মানে পিটার বুঝলো না। এনার চুলগুলোর মাঝে হাত ডুবিয়ে দিয়ে বলে,,,

” কি হয়েছে এনা কাঁদছো কেনো?

এনা কিছুই বলতে পারলো না। আগের চাইতে কান্নার মাত্রা আরো বেড়ে গেলো। পিটার এনাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে ফের জিজ্ঞেস করে,,

” কি হয়েছে আমায় বলো। না বললে বুঝবো কি করে।

এনা পিটারের হাত দুটো ধরে বলে,,

” টিচার আপনি নাকি অন্যত্র বিয়ে করছেন। আপনার মা বললো।

কথাটা কর্ণকুহর হতেই সারা শরীর রাগে কাঁপতে থাকে পিটারের। তার মা’কে এতো বার করে বললো এনাকে কিছু না বলতে। আর সেটাই করে বসলো।

পিটার সেদিন শুধু এনার উদ্দেশ্যে একটাই কথা বলেছিলো,,

” আমরা চাইলেও এক হতে পারবো না এনা। সমাজ পরিবার পিছুটান এরা কখনোই দিবে না। আমি নিজে থেকেই তোমায় বলতাম আমার অন্য জায়গায় বিয়ে ঠিক হয়েছে কিন্তু তার আগেই মা বলে দিলো। তোমার এটা আবেগের বয়স সামনে আরো দিন আছে আমার চাইতেও কেউ তোমায় অনেক ভালোবাসবে।

কথাটা এনার কর্ণকুহর হতেই পিটারের কলার ধরে চেঁচিয়ে বলে উঠেছিলো,,

” আপনি আমায় কথা দিয়েছিলেন পিটার আপনি আমি ব্যাতিত অন্য কাউকে বিয়ে করবে না সে কথা কোথায় গেলো আপনার। আপনি বলেছিলেন আমার ভালোবাসার অন্য কাউকে ভাগ বসাতে দিবেন না আর আজ আপনিই বলছেন আপনি রাজি অন্য কাউকে বিয়ে করতে। আমি সবসময় আপনার সিদ্ধান্ত কে সম্মান করে এসেছি। আজও তাই করবো আপনি যখন রাজিই অন্যত্র বিয়ে করতে তো বেশ করুন অন্য কোথাও বিয়ে আপনায় আটকাবো না। আপনি যেথায় নিজের সুখ খুঁজে পাবেন আপনি সেথায় যান। আমি আপনায় আটকাবো না। তবে লাস্ট বার আপনাকে একটু খানি জড়িয়ে ধরতে চাই। নিজের থেকেও যে বেশি ভালোবাসি আমি আপনায়। দিবেন কি সেই সুযোগ টুকু।

কথাটা বলেই পিটারের উত্তরের অপেক্ষা না করে পিটার কে জড়িয়ে ধরে। পিটারের চোখ দিয়েও গড়িয়ে পড়লো দু ফোটা বিষাক্ত নোনা জল। এনা দেখার আগেই সেটা সন্তপর্ণে মুছে এনাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে হনহন করে বেরিয়ে যায় কলেজ থেকে।

এনা বসে পড়ে মাটিতে দু হাত দিয়ে মুখ চেপে কান্না করতে থাকে। দূর থেকে হেফজিবা দেখছিলো। এনাকে মাটিতে বসে কান্না করতে দেখে ছুটে এসে প্রানপ্রিয় বান্ধবী কে আগলে নেয়। এনা হেফজিবার হাত ধরে বলে,,

” এমন ভালোবাসা আর কারো মনে সৃষ্টি না হোক। ভালোবাসলে যে এতো কষ্ট পেতে হয় সেই কষ্ট কুলানোর সাহস হয় না। কেনো আমাদের ভালোবাসার মাঝে ধর্ম বাধা হয়ে দাড়ালো হেফজিবা । না পারা যায় নিজের ধর্ম ছেড়ে যেতে আর না পারা যায় সেই মানুষটিকে ধরে রাখতে। আজ আমি খ্রিস্টান বা পিটার স্যার মুসলমান হলে হয়তো আমাদের পরিনতি টা অন্যরকম হতো। আমি আর থাকবো না এই বিষাক্ত শহরে যে শহরে ভালোবাসার পৃরাপ্তি ঘটে না।

কথাটা বলে হেফজিবা কে ছেড়ে বসা থেকে উঠে দৌড়ে চলে যায় এনা।

স্যারের মা কখনোই পিটারের আর এনার সম্পর্ক মানতে চায় নি। কারন স্যাররা ছিলো খ্রিস্টান আর এনা ছিলো মুসলিম। এনা আর স্যার তাদের নিজ নিজ ধর্মের উর্ধে গিয়ে একে অপরকে ভালোবাসতে শুরু করেছিলো। তখন তাদের কাছে ধর্ম নিয়ে কোনো চিন্তাই ছিলো না। কিন্তু যখন স্যারের মা তাদের সম্পর্কের কথা জানতে পারে তখন স্যারকে কসম কাটায় যে এনাকে বা তাকে যে কোনো একজন কে বেছে নিতে হবে। কোনো ছেলেই চাইবে না তার মা’কে রেখে অন্যকে বেছে নিতে,স্যার ও পারেনি।

স্যার সেদিন রেগেমেগে তার মা কে অনেক কথা শোনায়। সে তার মায়ের কথায় রাজি হয় সে এনাকে বিয়ে করবে না তবে স্যার ও তার মাকে শর্ত দিয়েছিলো সে এনা ব্যাতিত কখনো কাউকে স্ত্রীর মর্যাদা দিতে পারবে না। তাই তো বিয়ের তিন দিন আগে সে বিয়ে করবে না বলে জানিয়ে দেয়। আর এনা সেদিনের পরের দিনই বিডিতে ব্যাক করে।

কথাগুলো বলে জোরে শ্বাস নিলো হেফজিবা। হেফজিবার কথাগুলো শুনে অ্যানিয়াস তপ্ত শ্বাস ছাড়লো। হেফজিবার দিকে তাকিয়ে বলে,,

” তুই ও তো কম কষ্ট পাচ্ছিস না হেফজিবা। তুই কি মনে করিস আমি তোর খবর জানি না। তোকে দেখলে মাঝে মাঝে বেশ অবাক হই কি করে পারিস কষ্ট গুলোকে নিজের ভেতরে তালাবদ্ধ করে বাহিরে মিথ্যা হাসির রেখা ঝুলিয়ে রোজ নাটক করতে। হাঁপিয়ে যাস না!

অ্যানিয়াসের কথা গুলো শুনে স্মিত হাসে হেফজিবা।

# চলবে?

( ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিবেন। হ্যাপি রিডিং)#আমার_ভীনদেশী_এক_তারা
#পর্ব৮
#Raiha_Zubair_Ripte

মাঝ রাস্তায় আসতেই এনা কিছু একটা ভেবে আনন্দ কে গাড়ি ঘুরিয়ে পিটারের বাসার বিপরীত রাস্তায় থাকা তাদের বাসায় যেতে বলে। আনন্দ এনার দিকে তাকিয়ে বলে,,,

” কেনো কি হলো যাবি না তার কাছে?

এনা জানালার দিকে মুখ ঘুরিয়ে বলে,,

” না।

” কেনো? এতোক্ষণ তে ছটফট করছিলি তার কাছে যাবি তাহলে?

” বুঝবি না তুই। আমায় আমায় বাসায় দিয়ে আয়।

” আচ্ছা।

কথাটা বলে আনন্দ গাড়ি ঘুরিয়ে এনাদের বাসার সামনে এসে গাড়ি থামায়। এনা গাড়ি থেকে নেমে আনন্দ কে বাড়িতে আসতে বললে আনন্দ জানায় অন্য একদিন আসবে আজ তাড়া আছে। এনা আর কথা না বাড়িয়ে ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে বাসায় প্রবেশ করে । সোফায় বসে থাকা ফারাহ্-কে টেনে নিয়ে নাচা শুরু করে। হঠাৎ এনার এতো খুশি হওয়া দেখে বেশ অবাক হয় ফারাহ্। এনা ফারাহ্ কে ঘুরাতে ঘুরাতে বলে,,

” ভাবি আজ আমি অনেক খুশি আমার মতো এতো সুখী, খুশি মানুষ আজ বোধহয় কেউ নেই।

” কেনো কি হয়েছে এনা। ফ্রেন্ড দের সাথে ঘুরে এতো খুশি!

” না ভাবি তেমনটা না। ভাবি আজ আমি আমার.. কথাটা আর শেষ করতে পারে না। হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে নিলে ফারাহ্ হাত টেনে ধরে। পেছন থেকে আরাভ বলে উঠে,,

” আরে কি হচ্ছে এখনই তো নিজেও পড়তে সাথে আমাকেও ফেলতে।

এনা এবার ফারাহ্-র হাত ছেড়ে আরাভের হাত ধরে বলে,,

” আরাভ ভাই আরাভ ভাই এতো খুশি খুশি লাগছে কেনো আমার।

” এতো খুশি হওয়ার কারন কি?

ফারাহ্ এনাকে থামিয়ে সোফায় বসিয়ে বলে,,

” আমি ও তো সেটাই জিজ্ঞেস করছি। এনা তো বলছেই না।

” ভাবি আমি আজ সত্যি জেনে গেছি।

” কিসের সত্যি এনা?

” আরাভ ভাই পি… কথাটুকু বলতেই আবার চুপ হয়ে যায় এনা। আবেগে এতোটাই উৎফুল্ল হয়েছিলো এনা যে হিতাহিতজ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল। তার যে পিটারের সাথে মিলন নেই পিটারের সাথে যে তার ঘর বাঁধা হবে না কোনো কালেই। সোফা ছেড়ে উঠে রুমে চলে আসে দৌড়ে। পেছন থেকে ফারাহ্ আর আরাভ এনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। হঠাৎ কি হলো মেয়েটার ওভাবে দৌড়ে রুমে চলে গেলো।

এনা রুমে এসে দরজা বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নেয়। বিছানায় বসে আলমারি থেকে পিটার আর তার একটা ছবি বের করে বলে,,

” পিটার আপনি বিয়ে করেন নি। তাহলে কি আজও আপনার মনে আমার বিচরণ। এখনও কি আমায় ভালোবাসেন? যখন শুনলাম আপনি বিয়ে করেন নি বিশ্বাস করুন তখন আমার চাইতে খুশি মনে হয় আর কেউ ছিলো না পৃথিবীতে। কিন্তু পরক্ষণেই সেই খুশিটা আর বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। মনে পড়ে গেল আপনার আর আমার ধর্ম তো আলাদা এক হবো কি করে আমি আর আপনি। আর আপনার মা সে তো জীবনেও আমায় মানবে না আপনার পাশে। ইশ কি এমন ক্ষতি হতো আপনি মুসলিম হলে।

তাহলে তো এতোদিনে আমাদের একটা সংসার হতো। জানেন তো আজ ইচ্ছে করছিলো আপনার পছন্দের ধূসর রঙের শাড়ি পড়ে আপনায় সারপ্রাইজ দিবো। সেই জন্য বাসায় এসেছিলাম আপনার কাছে না গিয়ে কিন্তু সেটা আর হবার নয়। এতোটাই খুশি হয়েছিলাম আপনি বিয়ে করেন নি সেটা শুনে যে ধ্যানঞ্জান সব ভুলে শুধু আপনাকে পাওয়ার লোভ করে বসেছিলাম।

আপনি উত্তর মেরুর মানুষ আর আমি দক্ষিণ মেরুর মানুষ যা কখনো এক হবার নয়। খানিকের জন্য আপনাকে একান্তে কাছে পবার আশা জেগেছিল। আমি না হয় -দূর হতে আপনারে সাধিব গোপনে বিরহডোরে বাঁধিব।

“আপনি তো ছিলেন আমার কাছে ভিনদেশী এক তারার মতো। আপনি না হয় ভিনদেশী তারাই হয়ে রইলেন আমার কাছে। অনেক ভালোবাসি আমি আপনায় বুঝেছেন ”

ছাঁদের কার্নিশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে পিটার। তার সামনেই অ্যাঞ্জেলেকা পুতুল নিয়ে খেলছে। হেফজিবার কাছে শুনেছে একটু আগেই ফোন করে জানিয়েছে আজ এনা জেনে গেছে সে বিয়ে করে নি। পিটার নিজের ভাগ্যের কাছে নিরুপায়। পিটার ইচ্ছে করলে মুসলিম হয়ে এনা কে বিয়ে করতে পারতো কিন্তু এর পর! এরপর সে কি করতো? মেয়েটা কে আরো তার মায়ায় পড়াতে বাধ্য করতো তারপর একদিন হঠাৎ করে সব মায়া ত্যাগ করে নিজ গন্তব্যে চলে যেতে হতো। যেই গন্তব্যে কেউ আগে যায় তো কেউ পরে যায়। কিন্তু সবাইকে একদিন যেতেই হবে সে জায়গায়। সে কেউ চাইলেও যেতে হবে আর না চাইলেও যেতে হবে। এটাই তো প্রকৃতির নিয়ম। যেই নিয়মে বাঁধা পিটার।

” শোনো ভীনদেশী তারা তোমাকে চাইলেও আর ভালোবাসতে পারবো না,
পারবো না আর তোমার মুখের হাসির কারন হতে রোজ। কারন নিজের হাতেই দিয়েছি সেসব রাস্তা বন্ধ করে, করেছি দাফন নিজের সুখ। বিধাতার তটে চাই এমন ভালোবাসা না দিক আর কোনো মানবীর জীবনে। যে ভালোবাসার প্রাপ্তির কোনো স্থান নেই। ভালো থেকো আমার ভিনদেশী তারা। তোমার পিটার তোমায় সেদিন ও ভালোবেসেছিল আজ ও ভালোবাসে আগামী তেও ভালোবেসে যাবে।

হেফজিবা বাসায় এসে অনেক অবাক হয় সামনে সোফায় বসে থাকা মানুষটাকে দেখে। সোফায় বসে থাকা মানুষটা রাগান্বিত চোখে তাকিয়ে আছে হেফজিবার পানে। চোখ দিয়ে ভস্ম করে দিবে হেফজিবা কে। সোফা থেকে উঠে স্যামিয়ুল সোজা হেফজিবার হাত ধরে রুমে টেনে নিয়ে বিছানায় ধাক্কা মে’রে ফেলে দেয়। দরজাটা বন্ধ করে দেয় শব্দ করে স্যামিয়ুল। কেঁপে উঠে হেফজিবা। স্যামিয়ুল যতো এগিয়ে আসছে হেফজিবার দিকে ততোই গলা শুকিয়ে যাচ্ছে ভয়ে হেফজিবার। কোমর থেকে বেল্টটা খুলে হেফজিবা কে এলোপাথাড়ি মার’তে শুরু করে। হেফজিবার আর্তচিৎকার বারি খাচ্ছে চার দেওয়ালে। দরজায় কান পেতে থাকা হেফজিবার চাচি সেই আর্তচিৎকার শুনে পৈশাচিক আনন্দ পায়।

হেফজিবা বেল্টের সেই ধারালো আ’ঘাত গুলো থেকে বাঁচার জন্য স্যামিয়ুলের পা ধরে মিনতি করে বলছে,, স্যামিয়ুল আমি সহ্য করতে পারছি না। দয়া করে আর মার’বেন না আমায়। আমার কি অপরাধ সেটা বলুন। আমি আর পারছি না ছেড়ে দিন। এই অবস্থায় আমাকে আর মারবেন না প্লিজ।

স্যামিয়ুল হেফজিবার কথা শুনে শরীরের সর্বোচ্চ শক্তি খাটিয়ে একের পর এক আ’ঘাত করতে থাকে। হেফজিবা আর সহ্য করতে পারলো না সেই মা’রের আ’ঘাত, লুটিয়ে পড়লো মেঝেতে। সারা শরীরে তার বেল্টের লাল দাগ বসে গেছে। ফর্সা শরীর সে দাগ যেনো চাঁদের গায়ে কলঙ্কের মতে। জায়গা জায়গা থেকে র’ক্ত ঝড়ে পড়ছে। মেরুন রঙের শাড়ী টা র’ক্তে ছুপছুপ। স্যামিয়ুল হেফজিবার কাছে গিয়ে তল পেটে সজোরে লা’থি মা’রে সাথে সাথে হেফজিবা আমার বাচ্চা বলে এক আর্তচিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারায়।

#চলবে?

( ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিবেন। সামনে আছে আরো অনেক টুইস্ট, তাই ধৈর্য ধরুন আগে থেকেই কিছু ভেবে বসবেন না। হ্যাপি রিডিং)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here