আমার মুগ্ধতায় তুমি পর্ব -০৮

#আমার_মুগ্ধতায়_তুমি
#পর্বঃ০৮
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
*আয়াদ দেখতে পেলো অর্শির রুমের মধ্যে অনু সহ বাকি মেয়েরা বসে আছে। সকলের মুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট।‌ আয়াদ ভাবছে “সব তো ঠিক ছিলো। হঠাৎ করে সবাই এক রুমের মধ্যে অর্শিকেও দেখতে পাচ্ছিনা। কোনো ঝামেলা হলো না তো”? আপনমনে কথাটা বলল আয়াদ। আয়াদ করিডোর থেকে অর্শির রুমের দিকে এগিয়ে এলো। অর্শির রুমের কাছে আসতেই অনু আয়াদকে দেখে দৌড়ে আয়াদের দিকে ছুটে চলে এলো। আয়াদ অনুকে বিচলিত দেখে প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে অনুকে উদ্দেশ্য করে বলল

— তোমাকে দেখে চিহ্নিত দেখাচ্ছে ভিশন। সব ঠিক আছে তো? অর্শি কোথায়?

অনু আয়াদকে উদ্দেশ্য করে বিচলিত কন্ঠে বলতে লাগলো

— আয়াদ ভাইয়া অর্শি রুমে নেই। এখনে আসার‌ পরে হঠাৎ ও রুম থেকে বেরিয়ে কোথায়‌ যেনো চলে গেছে। ওর বোনটাও বন্ধ।

অনুর কথাটা আয়াদের কানে আসতেই আয়াদ থ মেরে দাঁড়িয়ে যায়। এই সব কি বলছে অনু? অর্শি একা একা কোথায় গেলো? অচেনা জায়গা। অর্শি তো এই অচেনা শহরের কিছুই চেনে না। মিনিটের মধ্যে আয়াদের মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিলো। আয়াদকে নিশ্চুপ হয়ে যেতে দেখে অনু মৃদু কান্না ভেজা কন্ঠে আয়াদকে বলতে লাগলো

— ভাইয়া কিছু একটা করুন আপনি। অচেনা শহরে অর্শির কোনো বিপদ হলো না তো? আপনি একটু ওকে খুঁজে নিয়ে আসুন। প্লিজ!

আয়াদ অনুকে শান্ত করতে অনুকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— তোমরা চিন্তা করো না। নিজেদের রুমে যাও। আমি অর্শিকে নিয়ে আসছি। আর হ্যাঁ, আমার ফিরে আসার আগ পর্যন্ত কেউ রুম থেকে বের হবে না। ওকে

আয়াদ কথাটা শেষ করতেই দৌড়ে হোটেল থেকে বেরিয়ে যায়। হোটেল থেকে বেরিয়ে আয়াদ পরলো মহা ঝামেলায় এতো বড় শহরে অর্শি কোন দিকে গেছে? সেটা সে আঁচ করবে কি করে? আয়াদ এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখতে পেলো রাস্তার পাশে কিছু লোক দাঁড়িয়ে আছে। আয়াদ দৌড়ে তাদের দিকে চলে যায়। পকেট থেকে ফোন বের করে আয়াদ তাদেরকে অর্শির ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলো

— ভাইয়া এই মেয়েটিকে দেখেছেন? ঘন্টা খানেক আগে এখানেই ছিলো। আপনারা কেউ কি দেখেছেন?

— না ভাই‌। আমরা একটু আগেই এখানে এসেছি। সঠিক বলতো পারবো না।

— ওহহ।

আয়াদ আবারও ছুটতে লাগলো। একে একে রাস্তার পাশের সব গুলো দোকান থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা লোককে জিজ্ঞাসা করলো অর্শির ব্যপারে কিন্তু সবার থেকে হতাশার উত্তর ছাড়া আর কোনো উত্তর পেলো না সে। আর কোথায় খুঁজবে অর্শিকে? নানা ধরনের চিন্তা মাথায় এসে ভর করে চলেছে। অর্শি ঠিক আছে তো? আমায় না বলে কেনো হোটেল থেকে বের হলি? এতো জেদ তোর। এখন আমি কোথায় খুঁজবো তোকে? চিন্তায় চিন্তায় আয়াদের হাত পা কাঁপছে। চিন্তার ছাপ স্পষ্ট আয়াদের মুখে। আয়াদ আরো একটু এগিয়ে যেতেই দেখতে পেলো রাস্তাটা ক্রমশ নিরব হয়ে আসছে। আয়াদ নিজেও জানে না সে কোথায় এসেছে? আয়াদ আরো একটু এগিয়ে আসতেই দেখতে পেলো একটা চা এর ছোট্ট দোকান। আয়াদ চা এর দোকানের দিকে দৌড়ে ছুটে আসতেই দেখতে পেলো একটা ষাট উর্ধ্ব বয়স্ক লোক চা বানিয়ে চলেছে। আয়াদ সেই লোকটির দিকে ফোনটা এগিয়ে দিলো

— আংকেল একটু দেখুন তো এই মেয়েটিকে কি আপনি দেখেছেন কি না! আনুমানিক ঘন্টাখানেক…….!

আয়াদকে সম্পূর্ন কথা শেষ করার পূর্বেই লোকটি ফোনের স্ক্রিনের দিকে ভালো করে তাকিয়ে বলে উঠলো

— হ্যাঁ, কিছুক্ষণ আগেই এই মেয়েটি এখানে এসেছিলো। ফোন রিচার্জ করাতে। কিন্তু আমি তো রিচার্জ করাই না। তাই ফিরিয়ে দিয়েছি।

আয়াদের মলিন ফ্যাকাশে মুখের কোনে সেকেন্ডের মধ্যে এক অদ্ভুত আনন্দ উঁকি দিলো। আয়াদ লোকটিকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— আংকেল দয়া‌ করে আমায় বলুন যে এই মেয়েটি তারপর কোন দিকে গেছে? প্লিজ! একটু মনে করে বলুন।

লোকটি আয়াদের কথা শুনে একটু চিন্তা করে উত্তর দিলো

— বাবা একদম সিওর হয়ে তো বলা যাবে না। কিন্তু আমার যতদূর মনে পরে তারপর এই মেয়েটি এদিকে দিয়ে চলে গেছে।

— ধন্যবাদ আংকেল। অনেক ধন্যবাদ।

আয়াদ চা এর দোকান থেকে বেরিয়ে ঐ চা এর দোকানির বলা পথে ধরে দৌড়ে ছুটে চলল আর অর্শি অর্শি বলে চিৎকার করতে থাকলো। পথটা একদম নিরব। আশে পাশে কোনো মানুষের শব্দ নেই। এমন একটা পরিবেশে অর্শি কি করে আসতে পারে তাও একা এটাই মাথায় ঢুকছে না তার। আয়াদ চিৎকার করে ডাকতে ডাকতে গলা প্রায় শুকিয়ে ফেলেছে। এখন চিৎকার করতেও পারছে না ঠিক মতো। মনে হচ্ছে গলা ফেটে যাবে তার। আয়াদ আরো কিছু সময় দৌড়াতে থাকার পরে হঠাৎ করে হোঁচট খেয়ে পরে যায় সে। পিচ ঢালা পথে হোঁচট খেয়ে পড়ে যেতেই আয়াদের হাত ও পা এর কিছু অংশ ছিঁড়ে যায়। অসহ্য যন্ত্রণা অনুভব হচ্ছে আয়াদের। কিন্তু এই যন্ত্রণার থেকে মনের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া অসহ্যকর যন্ত্রণাটা বড্ড বেশি কষ্ট দিচ্ছে তাকে। আয়াদ বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার দৌড় দিলো। কিছু সময় দৌড়ে এগিয়ে আসতেই আয়াদ দেখতে পেলো দূরে একটা আবছা আলোয় কারো অবয়ক দেখা যাচ্ছে। আয়াদ দৌড়ে ছুটে চলল সেই অবয়ককে অনুসরন করে। চিৎকার করে ডাকছে আয়াদ। এটাই অর্শি। আয়াদের ডাকে অবয়কটা দাঁড়িয়ে যায়। আয়াদ আরো দ্রুত গতিতে ছুটে চলল। অবয়কটা পূর্ণ একটা মানুষ। আয়াদ অর্শিকে দেখতে পেলো। অর্শির কাছে আসতেই আয়াদ হাঁটুর উপর ভর করে হাঁপাতে হাঁপাতে অর্শির দিকে দৃষ্টিপাত করলো। অর্শির মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। আয়াদকে দেখতে পেয়ে অর্শি দৌড়ে আয়াদের কাছে চলে আসে। আয়াদ সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে অর্শির দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রাগে গজগজ করতে করতে বলতে লাগলো

— তোর কোনো‌ কমনসেন্স নাই? মাথার নাট বল্টু কি ঢিলে সব? একা একা কেনো বেশ হলি? যা প্রয়োজন ছিলো আমায় বললে কি পাপ হয়ে যেতো? আজ যদি একটা অঘটন ঘটে যেতো তখন কি হতো? কে দায় দিতো? বাবা মা কে বা কি জবাব দিতাম? আমার থাকার পরেও…..!

অর্শি আয়াদকে সম্পূর্ন কথা বলার সুযোগ দিলো না। দৌড়ে ছুটে চলে আসে আয়াদের বুকে। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আয়াদকে। অর্শির সম্পূর্ণ শরীর ঠান্ডা হয়ে গেছে। ভয়ে মেয়েটা কাঁপছে। আয়াদ অর্শির অবস্থা ঠিক বুঝতে পারলো। আয়াদ নিশ্চুপ হয়ে নিজের রাগকে কন্ট্রোল করে অর্শির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলতে লাগলো

— আরে পাগলি মেয়ে আমি চলে এসেছি আর ভয় পেতে হবে না তোকে।

অর্শি আয়াদের কথা শেষ হতে না হতে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো। আয়াদ অর্শিকে শান্ত করার জন্য অর্শিকে নানা রকম কথা বলতে লাগলো। কিন্তু অর্শির কান্না থামছে না। অর্শি কান্না করতে করতে আয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— আপনি অনেক খারাপ লোক। আমি আপনার উপর জেদ করে বেরিয়েছি। আমি রিচার্জ না করতে পেরে আবার হোটেলেই ফিরে যেতে নিয়েছি কিন্তু আমি পথ হারিয়ে ফেলেছিলাম। এই নির্জন জায়গায় একা একা ভয়ে আমি মরেই যাচ্ছিলাম। আমাকে প্লিজ বাড়ি নিয়ে চলুন। আমি আর এখানে থাকবো না।

আয়াদ অর্শির কথা শুনে মৃদু হেসে বলতে লাগলো

— এএএ এতো রাতে বাড়ি যাবি কি করে? আর শোন আমি তোর সিনিয়ার ওকে। আর আমাকে যাই ভাবিস না কেনো তাতে আমার কিছুই আসবে যাবে না। কিন্তু অর্শি একটা কথা। জেদের বসে কখনও আর এমনটা করবি না। আজ হয়তো কোনো বিপদ হয়নি তোর। কিন্তু সব সময় তো আর সেইফ থাকবি না। তাই বলছি রেগে গেলেও কিছুর দরকার হলে যাস্ট আমায় বলবি। হয়তো তোর আপন হওয়ার যোগ্যতা আমার নেই। কিন্তু বিশ্বাস কর তোকে নিজের থেকেও বেশি আপন মনে করি আমি। আমার সব থেকে কাছের হলি তুই। আর কখনও এমন করিস না। চল হোটেলে ফিরে যাই।

* আয়াদ অর্শিকে নিয়ে হোটেলের দিকে চলতে শুরু করলো‌। অর্শি এখনও ভয় পেয়ে আছে। আয়াদের হাত জোড়া শক্ত করে চেপে ধরে আছে অর্শি। আয়াদ অর্শির সাথে কথা বলতে থাকলো। যাতে করে একটু হলেও অর্শির ভয়টা কমে যায়। হোটেলে ফিরতেই অর্শিকে নিজের রুমে দিয়ে এসে আয়াদ নিজের রুমে চলে এলো। নিজের রুমে এসে আয়াদ আগে ফ্রেশ হয়ে নিলো। ফ্রেশ হয়ে এসে আয়াদ সোফায় বসে একটা শান্তির নিশ্বাস ফেললো। এতো সময় পরে নিজের মনকে একদম শান্ত লাগছে। প্রিয়জনের বিপদে বিচলিত হয়ে পরে না এমন লোক খুঁজে পাওয়া দায়।

* সকাল হতেই আয়াদ বিছানা থেকে উঠে পরলো। হাত পা এর অনেক জায়গা ছিঁড়ে গেছে বলে সামান্য একটু যন্ত্রণা হচ্ছে। আয়াদ ফ্রেশ হয়ে রুমে আসতেই চমকে গেলো। আয়াদ রুমে এসে দেখতে পেলো অনু বসে আছে সোফায়। এতো সকাল সকাল অনু আমার রুমে! এই বিষয়টা একটু অদ্ভুত লাগলো। আয়াদ অনুকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো

— কি ব্যাপার অনু? এতো সকাল সকাল আমার রুমে!

আয়াদের কন্ঠেস্বর পেতেই অনু সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলতে লাগলো

— না আসলে ভাইয়া কাল রাতে তো আপনার সাথে কথা বলার তেমন একটা সুযোগ পাইনি। তাই সকাল সকাল চলে আসলাম ভাবলাম চা খেতে খেতে গল্প করা যাবে। আপনি কি ফ্রি আছেন?

— হুম ফ্রি আছি।

“আজ আবার গল্প করতে আসার ছিলো? গতকাল ট্রেনের কথা মনে নেই মনে হয়। অর্শি এতো সকালে অনুকে আমার রুমে দেখতে পেলে আবার আমাকে নিয়ে বাজে কথা বলা শুরু করে দিবে। কি অশান্তি রে বাবা”। আপন মনে কথাটা শেষ করে আয়াদ ঠোঁটের কোণে একটা হাসির রেখা এঁকে অনুর বিপরীতে বসে পরলো। চা এর কাপ হাতে নিয়ে তা খেতে খেতে গল্প করতে লাগলো আয়াদ।

— এই মিলি শোন আমি একটু আয়াদ ভাইয়ার রুম থেকে ঘুরে আসছি। সকাল সকাল বেরিয়ে আসবো সাগর পাড়ে। তুই তোর বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলা শেষ করে দয়া করে আমার ব্যাগটা গুছিয়ে দিস।

— ওকে। জানু তাই হবে।

”এই মেয়ে হয়েছে সারা দিন বয়ফ্রেন্ডের সাথে কি কথা বলে আল্লাহ ভালো জানে। এতো কথা বলার কি হলো? আর কথা বলতে বলতে কি এদের কাছে কথা শেষ হয়ে যায় না? কি জানি আমি তো কারো সাথে দু লাইনের বেশি কথা বলতেই আর কথা খুঁজে পাই না। যাই হোক আমি বরং আয়াদ ভাইয়ার রুম থেকে ঘুরে আসি”। কথাটা আপন মনে বলতে বলতে অর্শি চলে যায় আয়াদের রুমে। আয়াদের রুমের দরজার কাছে আসতেই অর্শি শুনতে পেলো অনুর হাসির শব্দ। হাস্যজ্বল মুখটার এক মিনিটের মধ্যে ফ্যাকাশে হয়ে যায় অর্শির। “আয়াদ ভাইয়ার রুমে অনু। এতো সকালে”! মনে মনে কথাটা বলল অর্শি। আয়াদের রুমের দিকে এগিয়ে আসতেই দেখতে পেলো আয়াদ আর অনু গল্প করছে। অর্শির মুডটাই খারাপ হয়ে যায় এই দৃশ্য দেখার পরে। অর্শি আয়াদের রুমে প্রবেশ না করে আবার নিজের রুমের দিকে ফিরে আসে।

* অনুর সাথে গল্প শেষ করে আয়াদ নিজের রুম থেকে বেরিয়ে অর্শির সাথে দেখা করতে অর্শির রুমে চলে আসে। অর্শির রুমে আসতেই আয়াদ অবাক হয়ে যায়। আয়াদ অর্শির রুমে এসে দেখতে পেলো অর্শি………………………

#চলবে…………………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here