আমার সংসার পর্ব ৭

#আমার_সংসার
পর্ব-০৭
Sara Mehjabin

চোখ খুলতেই গাঢ় কালো অন্ধকার দেখল আজমী। চারপাশে কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না। আজমী বেশ ভয় পেয়ে গেল। ও তো রিশানকে খোঁজার জন্য বেরিয়েছিল। এখানে আসল কিভাবে? আজমী মনে করার চেষ্টা করছে। কিন্তু ওর কিছু মনে পড়ছে না‌। শুধু মনে আসছে ও রিশানকে খুঁজছিল। কিন্তু এরপর কি হয়েছে তা ওর স্মৃতিতে আসছে না। হঠাৎ অন্ধকার ঘরটার ভেতর একটা আবছা ছায়া আজমীর মুখে পড়ল। ধীরে ধীরে সেই ছায়া আজমীর দিকে এগিয়ে আসতে লাগল। আরেকটু এগোতে আজমীর মাথার উপর যে কম আলোর লাইটটা জ্বলছিল তাতে লোকটার মুখ স্পষ্ট দেখা যায়। সেটা দেখেই আজমী তারস্বরে চিৎকার করে ওঠে‌।

আজমীর কানের কাছে মুখ নিচু করে এনে ফিসফিসিয়ে কিন্তু হিংস্রভাবে বলল, কি ভেবেছিস তুই? মুক্তি পেয়ে গেছিস হ‍্যা, আমার থেকে মুক্তি পাওয়া এতোই সহজ? শোন্ এই জীবনে তোর আমার থেকে কোন মুক্তি নেই‌।” তারপর অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল। হাসির শব্দে আজমীর সারা গা কেঁপে উঠল।

“তোকে বলেছিলাম তোর জীবনের শিকল আমার হাতে থাকবে। যা আমি বলব তুই তাই করবি। কিন্তু তুই শুনিস নি…আমার কথার বিরুদ্ধে গিয়েছিস। তোকে তো এর শাস্তি পেতেই হবে,,, আজমী বেবি‌।” আজমীর কপাল থেকে গাল বরাবর স্লাইড করে। তারপর আজমীর চুলের মুঠি টেনে মাটিতে শুইয়ে দিয়ে বাইরের একজন লোককে ইশারা করে ডাকে। তারপর দুইজন মিলে দড়ি দিয়ে আজমীর হাত-পা বাঁধতে শুরু করে। আজমীর নিজেকে বাঁচানোর জন্য ওদের সঙ্গে অনেক ধ্বস্তাধ্বস্তি হয়। কিন্তু দুইজন ছেলে মানুষের সঙ্গে আজমীর পক্ষে লড়াই করা সম্ভব ছিল না। ওরা আজমীর মুখসহ হাত-পা বেঁধে ফেলে।

“তো? কি করবি এবার তুই? আমার হাত থেকে এবার তোকে কে বাঁচাবে?”

লোকটি আজমীর দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসতে থাকে। আজমী বুঝতে পারছে কিছুক্ষনের মধ্যেই তার সব শেষ হয়ে যাবে। আর কিছুই করার নেই। বেঁচে যাওয়ার কোন আশাও নেই। এই লোকটার হাত থেকে তাকে কেউ বাঁচাতে পারবে না; কেউ না। আজমী মনে মনে আল্লাহকে ডাকতে থাকে। অপেক্ষা করে কোনভাবে যদি শেষ মুহূর্তে বেঁচে যেতে পারে।

লোকটি আজমীর শরীরের ওপর ঝুঁকে শাড়ির আচলে টান দিতেই পিছন থেকে কেউ লাঠি দিয়ে লোকটির মাথায় আঘাত করে। আজমী চোখ তুলে দেখে সামনে ফারহান দাঁড়িয়ে আছে। লোকটি মাটিতে লুটিয়ে পড়তেই ফারহান লোকটিকে মারতে শুরু করে‌। লোকটিও পাল্টা আক্রমণ করে ফারহানকে। সাথে আরেকটি লোক‌ যাকে সাথে নিয়ে সে আজমীকে বেধেছিল। ওরা দুইজন ওদের বিপক্ষে ফারহান একা। ওরা দুইজন একত্রে ফারহানের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে। কিন্তু ফারহানের শক্তির কাছে কেউই পেরে ওঠে না। আজমীর ধারেকাছেও ঘেষতে পারে না। সাথের লোকটি ফারহানের আঘাতে অজ্ঞান হয়ে যায়। কিন্তু সেই লোকটির মুখ তখনো ঢাকা।

“তুই কে? আজমীর কাছে কি চাস? বল্ কি চাস?”

ফারহান হুডি পড়া লোকটির কলার শক্তিতে চেপে ধরে‌।

“মুখ খোল্ তোর। আমি তোকে দেখতে চাই। মুখ ঢেকে রেখেছিস কেন? কে তুই?”

লোকটি উল্টো ফারহানের গলা চেপে ধরল‌। ফারহান ছাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু লোকটির শক্তি ক্রমশ বেশি হয়ে যাচ্ছে। ফারহানের সঙ্গে লোকটির দীর্ঘসময় ধ্বস্তাধ্বস্তি হলো। ধ্বস্তাধ্বস্তির একপর্যায়ে লোকটি ফারহানকে ধাক্কা দিয়ে চলে গেল। লোকটির চেহারা ফারহান দেখতে পারল না।

ফারহান দ্রুত আজমীর হাত-পায়ের বাঁধন খুলে দিল। সাথে সাথেই আজমী ফারহানকে জড়িয়ে ধরল। আজমীর কান্না কিছুতেই থামছে না। ফারহান ওকে জড়িয়ে ধরে শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকে। ভাগ্য ভালো সে সময়মতো পৌঁছাতে পেরেছে। না জানি কত বড় ক্ষতি করত ওরা আজমীর‌। রিশানকে রেখে আজমীকে ডেকে আনার জন্য ফারহান বাসা থেকে বেরিয়েছিল।। যেহেতু রিশান বাসায় ফিরেই এসেছে ঠিকমতো আজমীকে তাড়াতাড়ি ডেকে আনা দরকার। হয়তো অনেক টেনশনে আছে বেচারি। আজমীকে পুরো এলাকা খুঁজেও কোথাও না পেয়ে ফারহান জঙ্গলের পথে এলো‌।সেই মুহুর্তেই একটা কালো গাড়ি নজরে পড়ল ফারহানের। এই জঙ্গলের ভেতর গাড়ি দেখে ফারহানের কেমন যেন সন্দেহ হয়। সে গাড়িটার পিছন নেয়। আড়ালে দাঁড়িয়ে দেখে একটা মুখ ঢাকা লোক গাড়ি থেকে নেমে আজমীকে পিছনের সিট থেকে কোলে করে হেঁটে যাচ্ছে। ফারহান আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারল না। কে এই লোকটা? লোকটা যেই হোক, সাহস কিভাবে হয় আজমীকে স্পর্শ করার?নিশ্চয় আজমীর কোনো ক্ষতির উদ্দেশ্যে নিয়ে যাচ্ছে। না, ফারহানকে যেতে হবে। যেভাবেই হোক, আজমীকে বাঁচাতে হবে। আমি আমার বৌয়ের কোন ক্ষতি হতে দিতে পারি না।

“আজমী শান্ত হও। দ‍্যাখো কিচ্ছু হয় নি। তুমি ঠিক আছো। এই অজমী..”

ফারহান তার বুকের ওপর আজমীকে জড়িয়ে শান্ত করতে চেষ্টা করে। আজমীর ভয় এখনো কাটে নি। একটা ঘোরের মধ্যে সে ফারহানকে জড়িয়ে ধরে আছে। ফারহানের বুকে নিজেকে লুকিয়ে ফেলার চেষ্টা করছে। ফারহান খেয়াল করল আজমী এখনো কাঁদছে। মেয়েটির সারা শরীর কেঁপে যাচ্ছে কান্নার সাথে।

ফারহান তার বুকে থাকা আজমীর মুখটা তুলে ধরল,,, আজমীর দুই গালে কোমলভাবে হাত রাখল।
“এখনো কাঁদছে বোকা মেয়ে একটা।”

“ও আসবে। আবার আসবে। ও আমাকে ছাড়বে না। আমাকে শেষ করে দেবে ও।” আজমী আবারও চিৎকার করতে থাকে।

“কেউ আসবে না। তোমাকেও কিছু করবে না। আমি আছি তো।”

ফারহানের কথা শুনে আজমী অনেকক্ষণ ফারহানের দিকে তাকিয়ে রইল। একদম ফারহানের চোখে চোখ রেখে। ফারহানের চোখজুড়ে অদ্ভুত মায়া নির্ভরতার ছায়া দেখতে পেল। ফারহান সময়মতো না আসলে আজকে ওর কি হতো কে জানে। ফারহানের জন্য এই প্রথম মনে মনে ফিলিংস কাজ করছে‌।

“চলো বাসায় যাই। রিশান একা আছে। এতক্ষণ তোমাকে না দেখে অস্থির হয়ে যাবে।”

“রিশান? রিশানকে কোথায় পেয়েছেন? ও ঠিক আছে তো?”

“হ‍্যা। রিশান ঠিক আছে। বাট রিশানের মাম্মা একদম ঠিক নেই। সে এখানো বাচ্চাদের মতো কাঁদছে।”

আজমীর চোখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল ফারহান। তারপর আজমীর দুই চোখের পাশ থেকে পানি মুছিয়ে দিল।

“এই যে এখন ঠিক আছে। চলো।”

ফারহান আজমীকে হাত ধরে। আজমী চিৎকার করে উঠল, “একি! আপনার কপাল দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে।”

ধ্বস্তাধ্বস্তির কারনে ফারহানের কপালের অনেকটা কেটে গেছে। কপাল বেয়ে রক্ত পড়ছে সমানে‌। আজমী ফারহানকে টেনে ধরল।

“আপনার তো কপাল কেটে গেছে। আর আপনার কোন হুশ নেই!”

“আরে নাহ্ তেমন কিছুই না এটা। একাই ঠিক হয়ে যাবে।”

“চুপ করুন। আপনাকে এত কথা বলতে হবে না। আপনি চুপ করে আসুন।”

ফারহানকে টেনে আজমী বসাল। তারপর শাড়ির আচল ছিঁড়ে কপালে বাঁধতে থাকে। এর ফলে আজমী ফারহানের খুব কাছাকাছি চলে এসেছে। সে এতোই মনোযোগ দিয়ে ফারহানের ব‍্যান্ডেজ করছিল যে ফারহান যে তারদিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছে সেটা খেয়াল-ই করে নি। হঠাৎ ফারহানের স্পর্শ পেয়ে তাকিয়ে দেখে ফারহান আজমীর হাত ধরে আছে,

“আচ্ছা আজমী আমরা কি নতুন করে সবকিছু শুরু করতে পারি না? অতীতটা ভুলে যাওয়া যায় না?”

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here