আমার হৃদবক্ষে শুধুই তুই পর্ব -১০

#আমার_হৃদবক্ষে_শুধুই_তুই💖
| পর্ব-১০ |

ফাহয়াজের কথা শুনে জুহির মাথায় আকাশ ভেংগে পড়লো।লোকটা পাগল নাকি।
জুহি ফাহয়াজের কথাতে বাকরুদ্ধ এই মুহুর্তে পার্কে দাড়িয়ে এইসব কথা জুহি নিতে পারছে না।
জুহি বেশ বিরক্ত হলো।ইচ্ছে করছিলো ফাহয়াজকে কিছু শুনিয়ে দিতে কিন্তু পার্ক আশেপাশে লোকজন এখানর সিনক্রিয়েট করা চলবে না আর দ্বিতীয়ত সবচেয়ে বড় কথা ফাহয়াজ নীলার ভাই।
তবুও বিরক্তস্বর গলায় জুহি বলে উঠলো ।

– ভদ্রতা বজায় রাখুন মি: ফাহয়াজ খান আপনি নীলার ভাই সম্পর্কে আমারো ভাই লাগেন তাই কিছু নতুন করে বললাম না!আর শুনুন যেখানে সেখানে আমার পিছু পিছু ঘোড়া বন্ধ করুন লোকে আপনাকে না বরংচ আমাকেই খারাপ ভাবছে!!(বলেই হাটাঁ ধরলো জুহি)
এদিকে জুহির মুখ থেকে ভাইয়া শুনে ফাহয়াজ ভ্রু কুচঁকে মুখে হালকা রাগের আভাস ছড়ালো।এরপর সেও সেখানে থেকে চলে গেলো।

জুহির বাড়িতে।
জুহি বাড়িতে ডুকতেই অবাক হয়ে গেলো।ড্রয়িংরুমে পুরো মানুষের খন খন করছে।
জুহি অবাক এত মানুষ এখানে কি করে এলো।

জুহির নজরে এলো তার বাবা মি‌.ইবাদাত এর পাশে ফাহয়াজ বসে আছে।আর তার মা মিসেস জিনাতের সাথে নীলা বসে আছে ভ্যাটকাচ্ছে।
জুহি নীলাকে ইশারায় বোঝালো “তুই এখানে তোর গুষ্ঠী নিয়ে কেন আসলি পাগল”
নীলা বুঝেও না বোঝান ভান করেই হেসে যাচ্ছে নীলার পাশেও আরশি কাদোঁ কাদোঁ মুখ করে বসে আছে।

– জুহিমা এনারা তোকে এনাদের বাড়ির বউ করে নিয়ে যেতে এসেছেন যদি আমরা রাজি হই ,তুই রাজি হোস তাহলে পরের সপ্তাহেই তোদের বিয়ে হবে!(গম্ভীর গলায়)

বাবার এমন কথা শুনে জুহি যেনো আকাশ থেকে টপ করে মাটিতে পড়লো। বিয়ে!
জুহির মাথায় হাত জুহি হা হয়ে ফাহয়াজের দিকে তাকালো এরপর নীলার দিকে।
নীলা ইশারা দিচ্ছে রাজি হয়ে যেতে আর সাথে তার মাও।
মিসেস জিনাত মনে করেন যেখানে নীলার মতো ননদ,ভালো পাত্র,বাবা-মা ভালো সেখানে মেয়ে খুশি থাকবেন তিনি তো আগে থেকেই রাজি।
এতো লোককে নিজের দিকে উৎসুক হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে আর মা,নীলার এইরকম ইশারা ফিশারা দেখে আর না বলার সাহস পেলো না জুহি।মাথা নাড়ালো যার মানে হ্যাঁ সে রাজি।
মি.ইবাদাত ফাহয়াজকে এবং জুহিকে আলাদা রুমে নিজেদের মতামত প্রকাশের সুযোগ দিলো।

রুমে।

– আপনার সাহস তো কম হয়না আপনি আমাদের বাড়ি পর্যন্ত চলে আসছেন!আপনার কি একটুও লজ্জা নেই নাকি!(হালকা রাগী স্বরে বলল জুহি)
ফাহয়াজ মুখে বাকাঁ হাসি একেঁ জুহির একগুচ্ছা চুল পিছু থেকে এনে সামনে দিয়ে দিলো।এরপর বলে উঠলো।

– আমার লজ্জা নেই ছেলেদের তো লজ্জাই থাকতে নেই তুমি তা জানো জুহিপাখি।আমার সাহসের সবে কি দেখলে আমি চাইলে আরও অনেক কিছু করতে পারি।তোমার তার ধারণাও নেই(বাকাঁ হেসে)
জুহি পিছিয়ে গেলো।ফাহয়াজ বলে‌ উঠলো।

– বিয়েতে হ্যাঁ করেই দাও!(বলেই ফাহয়াজ হনহন করতে করতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো)
জুহি রাগে ফোস ফোস করছে।এরপর জুহিও কিছুক্ষন পর রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
এবার সবাই পরিস্কার জুহির সম্মতি জানতে‌ চায়।
মায়ের চাপে শেষমেষ পরিস্কার করে বলেই দেয়।

– আমি এই বিয়েতে রাজি তবে বিয়ের পরেও আমি আমার পড়ালেখা কন্টিনিউ করতে চাই।
(বলেই নিজের রুমে চলে গেলো জুহি।এখন অন্তত ফাহয়াজের মুখোমুখি হবেনা সে।)
রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো জুহি কারন সে জানে এখন আরশি,নীলা এখানে আসবে আর‌ ওরা আসলেই তাকে বিপাকের মুখে পড়তে হবে।জুহি বিছানায় বসে একভাবে ভাবতে লাগলো কিভাবে ফাহয়াজের সাথে সব মানিয়ে চলবে।



পরের সপ্তাহে,,
আজ জুহি ফাহয়াজের বিয়ে।
জুহি রেডি হয়ে কাজিনদের সাথে বিয়ের আসরে যাচ্ছে আরেকটু পর বরযাত্রী চলে আসবে।জুহির মা জুহিকে ধরে সেই কখন থেকে কেটে কেদেঁ যাচ্ছে।আজ জুহি সবাইকে ছেড়ে অন্য বাড়িতে চলে যাবে অন্য বাড়ির সদস্য হয়ে যাবে।।
দেখতে দেখতে শোনা গেলো একপর্যায়ে বরযাত্রী চলেও আসে।
সাথে বিয়ের পড়ানোও শুরু হয়ে যায়।

অন্যদিকে মি.ইবাদাতের মুখে চিন্তার,ভয়ের ছাপ।এক্টু আগেই কেউ তাকে কল করে ফাহয়াজের নামে বড় এক্টা যুক্তি দিয়েছেন।
যুক্তিটা কিছু এমন ছিলো।
ফাহয়াজ ড্রাগসেবন করে,মেয়ে পাচার করে আরও বিভিন্ন অসৎ কাজে ফাহয়াজ লিপ্ত।
প্রথমে কথাটা বিশ্বাস না করতে চাইলেও ‌সেই অনাকাক্ষিত লোকটার কথায় বাধ্য হয়ে এইটা মেনে নিতে হয়।
মি.ইবাদাত ভাবছেন এমতাবস্থায় সে কিভাবে বিয়েটা আটকাবেন কিছু এক্টা ভেবে তিনি দ্রুতপদে বিয়ের আসরে উপস্থিত হন।
কিন্তু ততক্ষনে দেরি হয়ে যায় ফাহয়াজ. জুহির বিয়েটা শেষ হয়ে যায়।
মি.ইবাদাত আশাহত হয়েও হন না তিনি তার স্ত্রীকে কথাগুলো বলে দেয় আর জুহিকে ফাহয়াজের থেকে আলাদা করে করানোর প্ল্যানও বানাতে থাকেন।


জুহি ফাহয়াজের বিয়ের এ নিয়ে একসপ্তাহ্ পুরোন হলো।তবে এই একসপ্তাহে্র মধ্যে ফাহয়াজে জুহির কাছেও ঘেষেনি শুধু তাদের মধ্যে কথাবার্তাই সীমাবদ্ধ ছিলো।

আজকে জুহি ভার্সিটি যাবে অনেক হলো যায়না নীলা আগেই চলে গেছে তাকে রেখে আর ফাহয়াজও অফিসে চলে গেছে দেখে জু্ুহি একটা টেক্সসি করে ভার্সিটি চলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে কিন্তু জুহি ভার্সিটি না গিয়ে সোজা তার বাবার বাড়ি চলে যায়।

মি.ইবাদাত জুহিকে বাড়ি আসতে দেখে খুব খুশি হন আজকে ফাহয়াজের সব সত্যটা জুহিকে বলে দিবেন যেমন ভাবনা তেমন কাজ।মি.ইবাদাত জুহিকে সব বলে দেয় প্রথম জু্হি বিশ্বাস না করলেও পরবর্তীতে বিশ্বাস করে নেয় জুহির খুব রাগ হয় ফাহয়াজকে এটা জিজ্ঞাসা করার জন্য জুহি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় সাথে পিছু পিছু মি.ইবাদাত আর মিসেস জিনাত জুহিকে ডাকতে ডাকতে বের হয়।
জুহি মেইন রোডে চলে যায় টেক্সসি করে ফাহয়াজের অফিসে যাওয়ার জন্য।রাস্তায় শুধু প্রাইভেট গাড়ি,বাসই চলছে
কোন টেক্সসি আসছে না দেখে জু্হি রাস্তা পাড় হতে নেয় সাথে দ্রুতক্রমে জুহির সাথে এক্টা প্রাইভেট গাড়ির এক্সিডেন্ট হয় যার ধরুন জুহির মাথায় প্রচন্ড তর আঘাত পায়।
মি.ইবাদাত আর মিসেস জিনাত দ্রুত জুহিকে হসপিটালে নিয়ে যায়।
জুহির অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে ডক্টরদের ধারণা জুহি গত এক,দু বছরের কথা ভুলে যাবে।
জুহিকে হসপিটাল থেকে নিয়ে মি.ইবাদাত মিসেস জিনাত সাথে ইশফানকে নিয়ে বর্তমানে জায়গা ছেড়ে কাউকে কিছু না জানিয়ে অন্য কোথায় চলে যান।
আর এ বিষয় নিয়ে ফাহয়াজ বা তার পরিবারের কেউ জানেন না।

বর্তমানে,,

মি.ইবাদাত সব কিছু জুহিকে বলে দিয়ে চুপ করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে জুহির দিকে তাকায়।জুহি বিশ্বাস করতে পারছেনা ফাহয়াজের সাথে আগেও তার বৈধতামূলক ভাবে বিয়ে হয়েছে।
জুহির কান থেকে গরম ধোঁয়া বের হয়ে চোখ মেলে রাখাও তার কস্টকর হয়ে যাচ্ছে।

অন্যদিকে।

রুবা”র কিছুক্ষন আগেই জ্ঞান ফিরেছে।রিয়ানের কথা ভেবে রুবার ভয়ে অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
জ্ঞান ফিরে চারদিকে তাকাতেই ভয়ে ঢোক গিলল রুবা চিলেকোঠার মতো দেখতে একটা জায়গা পড়ে ছিলো রুবা।
রুবার ভাবতেও ভয় লাগছে রিয়ান তাকে এখানে ফেলে রেখেছে।
রুবা অন্ধকারের বরাংবরই ভয় পায়।কি থেকে কি করবে ভেবে ভয়ে মুখে চেপে কান্না করে উঠলো রুবা।
শব্দহীন ভাবে কাদঁতে কাদঁতে উঠে দরজার দিকে গেলো দরজা ধরে টান দিতেই রুবা আশ্চর্য হয়ে গেলো।
দরজটা খোলা ভেবে কিঞ্চিৎ খুশি হয়ে চোখের জল মুছে চুপিচুপি বের হয়ে গেলো চিলেকোঠা থেকে।
রুবা আশ্চর্য বাড়িতে কাউকেই দেখতে পারছেনা মেইন গেটও খোলা।
রুবা খুশি হয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে দৌড়াতে লাগলো।
কিছুদূর গিয়ে দেখলো হাইওয়ে ওখানে দিয়ে ক্ষনে ক্ষনে সিনএজি,রিকশা যাচ্ছে রুবা‌ এক্টা রিকশা নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে চলে গেলো।
রুবার ভয় হচ্ছে বাড়িতে গিয়ে সবাইকে কি বলবে একেতো কাক ভেজা হয়ে আছে দ্বিতীয়ত এতক্ষন বাড়ির বাহিরে ছিলো।

চলবে,,

#Rubaita_Rimi (লেখিকা)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here