আমার হৃদবক্ষে শুধুই তুই পর্ব -০৯

#আমার_হৃদবক্ষে_শুধুই_তুই💖
| পর্ব-৯ |

নতুন অতিথীদের বরণ করার দ্বায়িত্ব এবার ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট দের এবং যারা মেধাবী শুধু তাদের দিয়েই নতুন অতিথীদের বরণ করাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে জুহিদের ক্লাস টিচার মিসেস আশা।
সেই সুবাদে জুহি,নীলা আরশি তিনজনেরই দ্বায়িত্ব সাথে আর দুটো মেয়েরও।

জুহি,নীলা,আরশি আর কথা না বাড়িয়ে যথারত তাদের বরণ করার জন্য গেইটের সাথে এগিয়ে গেলো।
জুহি,নীলা,আরশি হাতে বেলিফুলের মালা নিয়ে দাড়িয়ে আছে।
জুহি অবাক হচ্ছে অতিথীদের তো প্রায়ই বছর গোলাপ,রজনীগন্ধা ফুলের মালা নিয়ে আপ্যায়ন করা হয়েছে তবে এই বছর বেলিফুল কেনো।
কপাল কুচঁকে কথাটা নীলাকে জিজ্ঞাসা করতেই নীলা ট্যারা চোখ করে বলে উঠলো।

— আমার বাবা,ভাইয়ার বেলি ফুল অনেক পছন্দের।তাই ম্যাম,স্যাররা সেই অনুযায়ী বেলিফুলের মালাই এনেছেন।(ট্যারা চোখে)
জুহি হ্যা হয়ে তাকিয়ে ট্যারা চোখে নীলার দিকে।
নীলা যেমন অদ্ভুত সেই সম বাড়ির লোকগুলোও অদ্ভুত।জুহি মাথা ঘামালো না।
আরশি তো নীলার মুখে নীলার ভাইয়ের কথা শুনে রিতিমত জামাই জামাই করে লাফাচ্ছে নীলা,জুহিতো সেইরকম বিরক্ত।

–” বান্দুপি আমাকে তোর ভাবী বানানোর জন্য প্রস্তুত তো!প্রতি বছরে বছরে কিন্তু ফুপি হওয়ার খুশিটা পাবি দেখিস!(ক্যাবলামার্কা হাসি দিয়ে)
নীলা,জুহি ট্যারা চোখে আরশির দিকে তাকাতেই আরশি উহুম,উহুম করে কেশেঁ উঠলো।
নতুন অতিথীদের বরণ করার জন্য গেইটে বেলি ফুলের মালা হাতে দাড়িয়ে আছে সবাই।জুহি তো প্রচন্ড বিরক্ত এখনো এই অতিথীগুলো আসছেনা কেন।
নীলা জিজ্ঞাসা করতেই নীলা বলল।
– আরে জ্যামে আছে হয়তো ভাইয়া আর বাবা।

জুহি না পেরে নীলা এবার ধমকে উঠলো।
– কি তখন থেকে বাপ,ভাই ,বাপ,ভাই করেই আসছিস আরেকবার এইরকম করে তোর কানের নিচে দুটো লাগিয়ে মালা তোর গলায় চেপে ধরে তোকে মেরে চলে যাবো।সেই কখন থেকে অসহায়ের মতো তোর বাপ,ভাইয়ের জন্য দাড়িয়ে আছি আর সেই তুই তোর বাপ,ভাইয়ের গুন গাইছিস চুপ করে থাকবি‌একদম।(রাগান্বিত গলায়)

জুহির ধমক খেয়ে আরশি,নীলা দুজনেই চুপসে গেছে।
দেখতে দেখতে কিয়ৎক্ষণ পর মি.মিরাজ খান আর তার ছেলে ফাহয়াজ খান চলে আসলো।
বরণ করার কার্যক্রমটা খুব ভালো ভাবেই কেটে গেলো।
তবে জুহি এক্টা জিনিস আড়ালে খেয়াল করেছে যখন ফাহয়াজকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করছিলো তখন ফাহয়াজ তার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো।
হঠাৎ জুহির নজর ফাহয়াজের মুখশ্রীর দিকে পড়লো।
খোচাঁ খোচাঁ দাড়ি,সরু নাক,মধ্যেম ঠোঁট,গাঢ় ভ্রু সবচেয়ে বড় কথা কি দারুন ধূসর রংয়ের চোখ দুটির মনি।
জুহির নজর আর ফাহয়াজের নজর চোখে চোখ পড়তেই জুহি ভেংচি দিয়ে চোখ সরিয়ে বিরবিরয়ে বলে উঠলো।

–“ইই কিসব ভাবছি দেখতেই এরে কক মুরগীর মতো লাগে আরেকটুর জনয কুচ কুচ ভেবে ফেলছিলাম।ছিঃহ্ এর নজর তো দেখো লুচু টাইপ নজর।নীলা তো এমনিই পাকনী সর্দার উপর দিক দিয়ে তার ভাই‌এইরকম লুচু।ইই
(বিরবিরিয়ে বলল জুহি)

এদিকে জুহির মুখ ভেংচি দিয়ে বিরবিরিয়ে বলা কথা গুলো নিমিষে ই ‌মুখ কাছে থাকায় শুনে ফেলল ফাহয়াজ।
জুহির রিয়েক্টশন দেখে মুচকি হেসে উঠলো সে।
এরপর জুহিকে এড়িয়ে বাবার সাথে অর্থাৎ মি.মিরাজের সাথে স্টেজের দিকে যেতে লাগলো।

মি.‌মিরাজ কিছু বিশেষ স্পিচ দিয়ে নিজের আসন সাধরে গ্রহন করলো।
সবাই যে যার মতো নাচ,গান,কিয়ৎক্ষণের নাটক পরিবেশন করতে লাগলো।
গানেে বেলায় আসলো জুহির নাম।
কারন জুহি গানে পার্টিসিপেট করেছে।আর আরশি নীলা কিয়ৎক্ষনের নাটকে পার্টিসিপট করেছে।
জুহি একরাশ নার্ভাস নেস নিয়ে স্টেজে গেলো।কিছুক্ষন থমকে দাড়িয়ে নীল আরশির দিকে তাকালো তারা হাত দিয়ে তাকে বেস্ট অফ লাক জানাচ্ছে।
এটা দেখে মুচকি হাসলো জুহি জড়তা কাটিয়ে গানের সুর তুলল।

গান শেষে।
জুহি স্টেজ থেকে নেমে গেলো।এদিকে ফাহয়াজের মনে এখনো জুহির গাওয়া গানটা বেজেই চলছে।
ফাহয়াজ মুগ্ধ নয়নে জুহির দিকে চেয়ে আছে।চোখে মুখে কতটা মায়া।

দেখতে দেখতে নবীন বরণ উৎসব শেষ হয়ে গেলো।
সেদিনের মতো ফাহয়াজ নিজের মনে নিজের বিউটিকে রেখে চলে গেলো।

পরেরদিন।

ভার্সিটির লেফ্ট সাইডে দাড়িয়ে আছে নীলা,আরশি আর জুহি।
তিনজনই দাড়িয়ে কালকের ঘটনা নিয়ে কথা বলছে।
কথা বলছে কম আরশি,নীলা তর্ক করছে বেশি টপিক এক্টাই আরশি বলছে সে ফাহয়াজের বউ হবে এন্ড নীলার ভাবি হবে।
নীলা রেগে চোখ গরম করে বলছে।
সে কোনমতেই আরশিকে তার ভাইয়ের বউ হতে দিবেনা।
এই নিয়েই তর্ক জুহি জাস্ট বিরক্ত হয়ে দাড়িয়ে আছে।
হঠাৎই জুহির নজর ভার্সিটির গেটের দিকে গেলো।দেখলো এক্টা কালো গাড়ি সেখানে দাড়িয়ে আছে।
জুহি আরও অনেক বার লক্ষ করেছে এই গাড়িটা তাকে মেইন রাস্তা থেকে ফলো করে এই ভার্সিটি পর্যন্ত এসেছে।
জুহি বেশ উৎসুক।
হয়ে গাড়িটার দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো।
এদিকে ফাহয়াজ গাড়ির ভেতরে দিয়ে এতক্ষন জুহির দিকে তাকিয়ে ছিলো।
প্রথম দেখায় জুহির উপর তার বেশ ইন্টারেস্ট জমেছে।
সে জুহির সাথে পরিচয় হতে চায়।তাইতো আজ রাস্তা থেকে ফলো করে ভার্সিটি পর্যন্ত এসেছে সে।
ফাহয়াজ মনে মনে ঠিক করেছে জুহিকে তার চাই চাই।
কাল তার ফ্রেন্ড জয়ন্তকে জুহির সব ডিটেইলস এনে দিতে বলেছে ।জয়ন্তও এনে দিয়েছে।
ফাহয়াজ‌ এখন শুধু জুহির দিকেই লক্ষ করছে।
এদিকে জুহিকে নিজের গাড়ির দিকে আসতে দেখেছে ফাহয়াজ নড়েচড়ে বসলো এরপর সটান হয়ে বসে সামনের দিকে তাকালো।
এরপর গাড়ি স্টার্ট দিতে যাবে কিন্তু ততক্ষনে দেরি হয়ে গেছে জুহি গাড়ির কাছে এসে গেছে।
এবং ভ্রু কুচঁকে গাড়িতে হাত রেখে রেখে পুরো গাড়ির চারপাশ ঘুড়ছে।
এটা দেখে ক্ষণে ক্ষণে ভ্রুও কুচকাচ্ছে আর মুচকি হাসছেও ফাহয়াজ।
এদিকে জুহি ভ্রু কুচঁকে দৃস্টি অগাঢ় করেও গাড়ির ভেতরে থাকা লোকটার সন্ধান পাচ্ছেনা।
পাবেই বা কি করে ফাহয়াজের গাড়িটাই এমন যে ভেতরে থেকে বাহিরের সব কিছু দেখতে পারবে কিন্তু বাহির থেকে কেউ ভেতরের কিছুই দেখতে পারবেনা।
জুহি খুজেও কারো দেখা পেলোনা।
এরপর খেয়াল করলো গাড়ির কাচঁটা বেশ স্বচ্ছ।সব কিছু পরিস্কার ভাবে দেখা যায়।
জুহি নিজের চোখের কাজল,ঠোঁট গুলো ভালো ভাবে দেখলো।এরপর চুল গুলো ঠিক করতে লাগলো।
এরই মধ্যে ফাহয়াজ জুহিকে ভালো করে দেখার জন্য গাড়ির গ্লাস খুলে দিলো।
জুহি গাড়ির ভেতরে ফাহয়াজ কে দেখা মাত্রউ স্টেচু হয়ে গেলো।
চোখ বড় বড় করে ফাহয়াজের দিকে তাকলো।
ফাহয়াজ মুচকি হেসে জুহির দিকে তাকালো।
ফাহয়াজের চোখে জুহির চোখ পড়তেই।
জুহি সোজা হয়ে ঘুড়ে দাড়ালো ‌এরপর।

“আল্লাহ্” বলে ভার্সিটির ভেতরের দিকে দৌড় দিলো।
ফাহয়াজ বাকরুদ্ধ।জুহির হঠাৎ এভাবে দৌড় দেওয়াতে যেনো ছোট মোটো একটা শক খেলো।
পুরো ব্যাপারটা বুঝতে পুরো দশ মিনিট সময় নিলো ফাহয়াজ।দৌড় দেওয়ার ব্যাপারটা বুঝতে পেরে মুচকি হেসে উঠলো।
এদিকে হাপাঁতে হাপাঁতে নীলা,আরশির কাছে গেলো।
আরশি,নীলা ভ্রু কুচঁকে ওর দিকে তাকালো।জুহি ওদের কাপাঁ কাপাঁ গলায় বলল।

– ক্লাসে স্যার চলে যাচ্ছে ক্লাসে আয়‌ তোরা(কাপাঁ কাপাঁ গলায় বলল জুহি)
শুধু এইটুকু বলেই ক্লাসের দিকে চলে গেলো।
নীলা আরশি একে অপরের দিকে চেয়ে ক্লাসের উদ্দেশ্যে হাটাঁ ধরলো।

কোনমতে প্রতিটা ক্লাস শেষ করলো জুহি।এরপর নীলা আরশিকে বায় বলেই নিজের বাড়ির দিকে চলে গেলো।
নীলা আরশিতো বোকার মতো জুহির যাওয়ার দিকে চেয়ে আছে।

দুদিন পর।

– আপনি আমার পিছু পিছু ঘুড়েন কেনো!(ভ্রু কুচঁকে)
ফাহয়াজ গাছের সাথে হেলান দিয়ে একদৃষ্টিতে জুহির দিকে চেয়ে ছিলো।জুহির এই কথাটা শুনে সোজা হয়ে দাড়ালো এরপর জুহির দিকে চেয়ে বলে উঠলো।

– তোমাকে আমার ভালো লাগে!আমি তোমাকে ভালোবাসি সেই প্রথম দেখাতেই,তোমার মিস্টি গলার অসাধারণ গানটা শুনেই তোমাকে ভালোবাসি। Well you marry me!(মুখে চমৎকার এক্টা হাসি একেঁ বলল ফাহয়াজ)

চলবে,,,
[
#Rubaita_Rimi(লেখিকা)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here