আমার হৃদবক্ষে শুধুই তুই পর্ব -০৮

#আমার_হৃদবক্ষে_শুধুই_তুই💖
| পর্ব-৮ |

-“পটর পটর তো ভালোই জানো তো এখন কোথায় গেলো সেই তোমার ওই ননসেন্স পটরপটর!(বাকাঁ হেসে)

বলেই রিয়ান রুবাকে ধাক্কা দিয়ে একদম কোল্ড ঝর্ণার মধ্যে ছেড়ে দিলো।রুবা তো এত ঠান্ডার পানির স্পর্শ পেয়ে চিৎকার দিয়ে সড়ে যেতে নিলো কিন্তু রিয়ান তাকে পানিতেই চেপে ধরেছে।
রুবা একেতো রিয়ানের ভয়ে কাচুমাচু হয়ে আছে আর দ্বিতীয়ত এখন এইভাবে এই একলা জায়গায় তাও আবার ঠান্ডা পানির মধ্যে চেপে ধরেছে।
ভয়ে রুবার হিতাহিত জ্ঞান হাড়িয়ে যাচ্ছে।একদিকে রিয়ান আরেক দিকে ঠান্ডা পানি।
রুবা চোখ বন্ধ করাে আগে “টাইটাইনিক„ ফিল্মটা একবার স্বরণ করে নিলো।
প্রচন্ড ঠান্ডার কারণে জ্যাক দেখিতে দেখিতে উপরওয়ালার কাছে ট্রান্সফার হয়ে গেছে।এইবুঝি সেও উপরওয়ালার কাছে ট্রান্সফার হয়ে যাবে।
রুবা ঠান্ডায় তর তর করে কাঁপছে।রিয়ান রুবার অবস্থা দেখে বেশ মজা পাচ্ছে।একপ্রকার বাকাঁ হেসে বলে‌ উঠলো।

– রিয়ান আহমেদের সাথে আজ পর্যন্ত কেউ গলা তো কি চোখ তুলে তাকিয়ে কথা বলেনি সেখানে তোমার মতো এক্টা পুচকি মেয়ে এসে আমায় কি!কি জেনো বলেছিলে ও হ্যাঁ মনে পড়েছে কালীবিল্লি,ভুত,রাক্ষস,কানা লোক এম আই রাইট।
এটাতো সবে শুরু তোমার সাথে আমি কি করি জাস্ট দেখতে থাকো!(বলেই রুবাকে ওয়াশরুমের দেয়ালের সাথে ধাক্কা দিয়ে বাহিরে হনহনিয়ে চলে গেলো রিয়ান।রুবা জ্ঞান হাড়িয়ে সেই ঠান্ডা পানির মাঝেই পড়ে রইলো)

কাহিনীটা কি খুলে বলি।
নিজের সিসি ক্যামেরা উরফে নদীর সাথে পার্কে এক কোণায় বসে বাদাম খাচ্ছিলো আর গল্প করছিলো রুবা।
নদী কালই একেবারের জন্য ইউএস থেকে বাংলাদেশে এসেছে।
তাই আজ দুই বান্ধুবি থুরি দুই বেস্ট বোন পার্ক ঘোড়ার জন্য পার্কে এসেছে।
হঠাৎ রুবার ফোন আসায় রুবা নদীকে বসতে বলে কিছুদূরে এক্টু নির্জণ জায়গায় গেলো।
কিন্তু হঠাৎই রুবা’র মুখে রুমাল থেকে পিছু থেকে কে জানি মুখ চেপে ধরলো।
রুবা কিছুক্ষণ অজ্ঞাত লোকটার হাত থেকে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য মুচরামুচরি করলো এরপর আর না পারলো না কারন মুহুর্তেই রুবা অজ্ঞান হয়ে পরে।
রুমালে ক্লোরোফর্ম ছিলো।অজ্ঞাত ব্যাক্তিটা বাকাঁ হেসে রুবাকে কোলে তুলে নিয়ে গেলো।

বাকিটাতো জানেনই।
রিয়ান রুবাকে নিজের ফার্মহাউসে নিয়ে এসেছে।যেখানে রিয়ান বছরের একবার আসতো এখানে শুধু পাচঁজন সার্ভেন্ট আছে যারা সবসময় এখানেই নিজেদের মতো গুছগাছ করে থাকে।
_ __ _____ ______ _________ __________ _

জুহি বিলাপ করছে দুঃখের বিলাপ যে বিলাপে শুধু ফাহয়াজ আছে।
অতীতে যে বিলাপে ফাহয়াজ খানের প্রতি ঘৃনা,অভিমান ছিলো ।তা মুহুর্তেই সরে গিয়ে ভালোবাসায় শিক্ত হয়েছে কিন্তু ফাহয়াজ খান আর নেই কথাটা মানতে জুহির কস্ট হচ্ছে প্রচুরতর ভাবে কস্ট হচ্ছে।
তাই তো দুঃখের বিলাপের মাঝেও ভালোবাসি কথাটা প্রতিক্ষণ আওড়াচ্ছে।

–“আমার আমার ভুল হয়েছে ফাহয়াজ আমাকে ক্ষমা করে দিন আমি কখনো আপনাকে ভালোবেসে দেখেনি কখনো আপনার ভালোবাসাটা উপলব্ধি করতে পারেনি!কিন্তু আ প আপনিউ বলুন কিভাবে এক্টা সাইকো লোককে ভালোবাসা যায় আমি জানি আপনি যতই যতই আমাকে কস্ট দিন কিন্তু সেই কস্টের মধ্যে ছিলো আমাকে পাওয়ার নেশা,আমার প্রতি আপনার ভালোবাসা,ভালোলাগা কিন্তুযা কখনো আমি বুঝিনি আপনি থাকতে আমি আপনাকে ভালোবাসিনী কিন্তু কিন্তু এখন আপনাকে বড্ড ভালোবাসি প্লিজ,প্লিজ ফিরে আসুন ফাহয়াজ আর কারো জন্য নয় আমার জন্য তো ফিরে আসুন!(পাগলের মতো বিলাপ করতে করতে বলল জুহি)

জুহি হসপিটালের বেডে শুয়ে শুয়ে এইসব বলছে আর কাদঁছে।
মাথায়,ঠোঁটে,হাতের বিভিন্ন জায়গায় ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ করা।

সেইসময় অফিস থেকে বেরিয়ে পাগলের মতো দৌড় রাস্তার অপার হওয়ার সময় জুহির সাথে এক্টা গাড়ির ধাক্কা লাগে।
ড্রাইভার গাড়িটা‌ আস্তে চালানোতে জুহির তেমন কিছু হয়নি তবুও মাথায়,ঠোঁটে হাতে সাথে পেটেও প্রচন্ডরক‌ম ভাবে ব্যাথা পেয়েছে।

জুহি এইসব বলছে আর কাদঁছে তখনি কেবিনে নীলা প্রবেশ করলো সাথে জুহির মা বাবা আর‌ ইশফানও।

জুহি কাদোঁ কাতর চোখে নীলার দিকে তাকালো এই দুইদিনেই নীলার চোখ,মুখ শুকিয়ে একদমই বিশ্রী অবস্থা হয়ে গিয়েছে।
জুহি নীলার দিক থেকে চোখ সরিয়ে মি.ইবাদাত আর মিসেস জিনাতের দিকে তাকালো।
মি.ইবাদাতের মুখ চুপসে আছে।মিসেস জিনাত বোবাদের মতো মুখ করে জুহির দিকে তাকিয়ে নিরবে চোখের পানি ফেলছে।
ইশফান সেতো নিশ্চুপ করে বোনের দিকে তাকিয়ে আছে।
আগে তার এই বোনটা কত দুস্টু ছিলো দুই ভাই বোন কত দুস্টুমি করতো আর সেই আচমকা একটা ঝড় এসে এভাবে সব উলোট পালোট করে দিলো।

ভাবতেই ইশফান কেপেঁ উঠছে।
মি.ইবাদাত চোখ মুখ শক্ত করে বলে উঠলেন।

–“জিনাত তুমি ইশফান আর নীলা মাকে নিয়ে এক্টু বাহিরে যাও আমার সাথে জুহিমার একটা কথা আছে!
(চোখ মুখ শক্ত করে)
মিসেস জিনাত কি বুঝলেন দ্রুত নীলা,ইশফানকে নিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলেন।
মি.ইবাদাত দীর্ঘনিশ্বাস নিলো এরপর জুহির দিকে তাকিয়ে বলে‌ উঠলো।

-” জুহিমা তোকে আজ আমি একটা চরম সত্যি‌কথা বলতে যাচ্ছি যেই সত্যি থেকে তুই এতদিন লুকায়িত ছিলি।তুই সর্বক্ষণ ফাহয়াজকে পাগল,সাইকো খারাপ ভাবছিস কিন্তু তুই ওর যেই রুপ দেখেছিস ওটা ওর আসল রুপ নয় রে মা।ফাহয়াজ সত্যিই খুব ভালো ওর মতো ছেলে লাক্ষে একটা পাওয়া যায়।
আমার কথা গুলো তুই আজকে মন দিয়ে শুনিস কোন কথা বলিস না।শুধু আমার উপর একটু ভর্ষা রাখ।

এইটুকু বলেই থামলেন মি.ইবাদাত এরপর আরেকটু দম নিয়ে বলা শুরু করলেন।
–“তোর কাছে ধোঁয়াশা লাগে সবসময় ফাহয়াজ কেনো বলতো দুই বছর তোর জন্য ও কস্ট পেয়েছে,রাতে ঘুমায়নি নিজে বউ বলে দাবি করেছে।
হ্যাঁ তুই অনেক আগে থেকেই‌ ফাহয়াজের বৈধ বউ।এখন তুই ভাবছিস আমি এইসব অগোছালো কথা বলছি কেনো!গুছিয়ে বলতে হলে সেই দু বছর আগে যেতে হবে।

বলেই আবারো থামলেন মি.ইবাদাত।জুহি নিস্পাপ চোখে তার বাবার দিকে চেয়ে আছে।জুহির মন বলছে হয়তো আজ সে তার সব উত্তর আজ যাবে।

মি.ইবাদাত বলতে লাগলেন।
২ বছর আগে।

আজ ভার্সিটিতে নবীন-বরণ উৎসব।জুহি উৎসবটা নিয়ে এক্টু বেশীই ভাবুক তাই সকাল ‌সকাল উঠে দ্রুত ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করে রেডি হওয়া শুরু করলো।
এরই মাঝে চলে আসলো তার প্রাণপ্রিয় দুই বেস্টুর কল নীলা,আরশি।
জুহি দ্রুত রেডি হয়ে মা,বাবাকে বিদায় জানিয়ে একটা রিকশা নিয়ে ভার্সিটি চলে গেলো।
ওখানে যেতেই দেখলো নবীন-বরণ উৎসবের জন্য ভার্সিটির সকলে সুন্দর করে তৈরি হয়ে চলে এসেছে।
জুহি অলরেডি লেইটলতিফ গার্ল তাই আজকেও তার লেট হয়ে গেলো।জুহি তাও মুচকি হেসে দ্রুত পদে নীলার কাছে যাওয়া ধরলো।

–” কিরে বান্দুপি এতো দেরি করলি ক্যান!(বিরক্তির স্বরে আরশি)
নীলা ভাবুকলেস হয়ে বলে উঠলো।

— এই‌ জানিস আজ ভার্সিটির নবীন-বরণের চিপ গেস্ট হিসেবে কে আসবে!
আরশি আবারো চটপটে স্বরে বলে উঠলো।

– কে আবার প্রতি বছর ওই যে চাপারগান্জু টাকলুটা আসে ওইটাই তো আসবে এসেই ভাংগা স্পিচ শুরু করে দিবো।(বিরক্তির স্বরে)
নীলা চোখ গরম করে আরশির মাথায় চাটি মেরে বলল।

– এইবার চিপ গেস্ট হিসেবে মি.মিরাজ খান আর তার ছেলে ফাহয়াজ খান আসবে।যারা কিনা আমার বাপ,ভাই(চোখ গরম করে)

জুহি এতক্ষন চুপ করে নীলা আর আরশির কান্ড দেখছিলো ওর বাপ,ভাই কথাটা শুনে চোখ বড় বড় করে নীলার দিকে তাকালো আরশি আর জুহি দুজনেই।

– এইবার আর‌ওই চাপারগান্জু টাকলু আর আইবো নাহ্।যাক বাচ্ছিরে আগের বছর নবীন বরণ উৎসবে ওই টাকলুর চেয়ারে ভুল করে চুইংগাম রেখে দিয়েছিলাম যা ওই বেটার পান্জাবিতে লেগে গেছিলো সেকি কান্ডুরে বাপরে বাপ!(ভয় পাওয়ার মতো করে)
নীলা না হেসে আর পারলো না।জুহি আগের মতোই হা হয়ে তাকিয়ে আছে।
জুহিকে হা হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে নীলার জুহির থুতনি ধরে উপরে উঠিয়ে দিলো এবং বলে‌উঠলো।

– কিরে আমার বাপ,ভাই কথাটা শুনে কি ঝটকা পটকা খেলি নাকি!আর হ রে হ আমার ভাই আর বাবা এইবার নবীন-বরণ উৎসবে চিপ গেস্ট হিসেবে আসবে।আর বলতেই তো ভুলে গেছি আমার ভাই দুই দিন আগেই কানাডা থেকে এসেছে।(কোমল গলায়)

চলবে,,
[
#Rubaita_Rimi(লেখিকা)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here