আমার হৃদবক্ষে শুধুই তুই পর্ব -০৭

#আমার_হৃদবক্ষে_শুধুই_তুই💖
| পর্ব-৭ |(স্পেশাল পর্ব)

ইবাদ বাকহীন,বাকরুদ্ধ হয়ে মি. মিরাজের সামনে হেলে বসে আছে।
যেনো ইবাদের শ্বাস নিতেও কস্ট হচ্ছে।
ফাহয়াজ চরিত্রটা তার কাছে ধোঁয়াশা,সন্দেহজনক মনে হলেও নিছকই ফাহয়াজ চরিত্রটা তার জীবনের শুভাকাক্ষী,দেবদূত ছিলো।
আর আজ সেই দেবদূতের এইরকম হঠাৎ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করা একদমই মেনে নিতে পারছেনা ইবাদ।
মি.‌মিরাজ শুকনো মুখে ইবাদের দিকে তাকিয়ে আছে।মি. মিরাজ উপর দিয়ে যতই কঠোর থাকুক না কেনো ভেতরে ভেতরে তিনি ঠিকই ছেলের শোকে ভেংগে পড়েছেন।
জুহি সেতো ফাহয়াজের ভালোবাসা বুঝতে শিখেছে তবে বড্ড দেরি করে ফেলেছে।

জুহির এখনো ফাহয়াজের বলা কথাগুলোর ধোঁয়াশার জালমুক্ত করতে হবে।কিন্তু ফাহয়াজ তো আর নেই কে বলবে তাকে সেই কথাগুলোর মানে
পুনরাভিত্তি বিয়ের কথা,রহস্যঘেরা সেই কথা।
জুহি শোকে পাথর।
ফাহয়াজ তার রঙ্গিন জীবনে সাদাকালো হয়ে এসে ক্ষণিকের জন্য. ভালোবাসার কলিটাকে ফুটিয়ে বাতাসের সাথে সাথে বিদায় নিয়েছে তার জীবন থেকে।

ফাহয়াজের চেহারাটা প্রতিক্ষনেই তার চোখেমুখে ভাঁসছে।
ফাহয়াজের সেই প্রানবন্ত দুস্টুমিময় হাসি,ঠোঁট কামড়ে এক ভ্রু বাকাঁ করে মুচকি হাসি,,বিরক্তির কর ফেস,,রাগান্বিত চেহারা।
সব সব কিছু জুহির চোখে ভাঁসছে।
জুহি আনমনেই হু হু করে কান্না করে উঠে।

অফিসের সব স্টাফরা মাথা নিচু করে শোক বিলাস করছিলো তাদের বস যেমনই হোক না কেনো তাদের প্রত্যেকের জীবনে কিছু না কিছু,কোন না কোন অবদান আছেই।
নীলা আর মিসেস ফায়ানা সোফায় বসে ছিলো।
নীলা তার মায়ের অর্থাৎ মিসেস ফায়ানার কাধেঁ মাথা রেখে নিশ্চুপ ছিলো।
হঠাৎ জুহির এমন কেদেঁ উঠাতে সবার কস্টটা যেনো আরও গাঢ় হলো।
নীলা মাথা উঠিয়ে কমল নজরে জুহির দিকে তাকালো এরপর উঠে গিয়ে জুহিকে জড়িয়ে সেও কান্না করে দিলো।
সবাই কমল,সচনীয় নজরে ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে মি.মিরাজ পারছেননা আর‌ এইসব নিতে তিনি হুরমুড় করতে করতে বেরিয়ে গেলেন অফিস কক্ষ থেকে।
সব স্টাফরা অশ্রুশিক্ত চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।
_________________________________

সবেমাত্র বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখলো রিয়ান।মুখে মার্ষ্ক পড়ে শরীরে কালো হুডি পড়ে।
রিয়ানের পিছে কয়েকজন বর্ডিগার্ড’স আর রিসাব হেটে চলছে।
রিয়ান ফোন চাপতে চাপতে মুখে রহস্যময়ী হাসি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
যা মুখে মার্ষ্ক পড়ে থাকায় লোকজনমুখে দেখা যাচ্ছে না তবে রিয়ান তো রিয়ানই মনের মধ্যেই তার সয়তানী ফন্দি আটছে।
রিয়ানের খেয়াল নেই।
কারো মেয়েলি কন্ঠে রাগান্বিত স্বর শুনে হুশে এসে সামনে তাকালো।

– আরে এইযে কালী বিল্লি আপনার সাহস তো কম না!আমায় ধাক্কা দিয়ে আমার হাতের জুস ফেলে দেন!
জানেন সবার ভিড়কে ঠেলে উপেক্ষা করে ওই টাকলার দোকান থেকে মোট ৩৫ টাকা খরচ করে এই জুসটা নিয়েছিলাম! বদ কালী বিল্লি কানা লোক।রাস্তাটা মনে হয় কিনে নিয়েছেন!(রাগান্বিত গলায়)

রিয়ান ক্রুদ্ধশ্বাস ফেলে ঠোঁট কামড়ে ভ্রু যুগল কুচঁকে মেয়েটির দিকে তাকালো।
ফর্সা গড়নের একটা মেয়ে।সাধারণ সুতিঁ থ্রীপিসের মধ্যে অসাধারন একটা মেয়ে রাগি ফেসে তার সামনে দাড়িয়ে আছে।
মেয়েটার সম্পূর্ণ কথা শুনে রিয়ানের গা রাগে গিনগিন করতে উঠলো।
আজ পর্যন্ত রিয়ানের সাথে এইরকম গলা উচিঁয়ে ধমকে কেউ কথা বলেনি।
রিসাব হা হয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে।
আজকে মনে মেয়েটার গাল দুটো আর আস্ত থাকবে নাহ্।
রিসাবের ভয়ে বুক দুরুম দুরুম করছে ভাবছে এই বুঝি রিয়ান ঠাস,ঠুস করে মেয়েটার গালে চড় লাগিয়ে দেয়।
রিয়ান চুপ করে ভ্রু কুচঁকে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে।

হঠাৎ মেয়েটা কোমড় থেকে হাত ছাড়িয়ে রিয়ানের মুখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলল।

– এইযে মি:কালাবিল্লি এইরকম ভুত সেজে প্যাকেট হয়ে আমার দিকে এম্নি রাক্ষসের মতো তাকিয়ে আছেন কেন!
আজ যে কার মুখ দেখে ঘুম থেকে উঠেছিলাম যে দিনের মধ্যেখানেই আপনার মতো কালাবিল্লি পথ কেটেছে না জানি সারাদিনটা কেম্নে যায়!
ওহ্ আল্লাহ্ আমারে বাচাঁইয়ো।কালাবিল্লি দেখো ড্যাবড্যাবিয়ে তাকিয়ে আছে কেম্নে মন তো চাচ্ছে এই পিচ্চির হাত থেকে ললিপপটা কেড়েঁ সেটার স্টিক দিয়ে আপনার চোখের ভেতরে ডুকিয়ে ঘেটে দেই হু যত্তসব!(রাগান্বিত গলায় বলেই শ্বাস ফেলল মেয়েটি)

রিয়ানের রাগ আরও গাঢ় হচ্ছে সব ছেড়েছুড়ে মার্ষ্কের ভেতরেই সাপের মতো ফনা,ফোসঁ ফোসঁ করতে লাগলো এই বুঝি মেয়েটাকে দেয়‌ কষিয়ে দুই থাপ্পড়।
রিসাব পেছনে থেকে নিজের কপালে নিজেই ‌একটা থাপ্পড় মারলো ভাবলো মেয়েটাকি পাগল নাকি যে এইরকম না জেনে বুঝে চিল্লাচ্ছে।
তবে রিসাব অবাক হয়ে ভাবছে।

– এ্যাহ্ স্যার এখনো মেয়েটাকে মারছে না কেনো!আমি হলে তো ঠাটাইয়া দুইটা লাগিয়ে দিলো!
এরইমাঝে মেয়েটি বলে উঠলো।

– আজকে আমার সিসি ক্যামরা আসবে বইলা কিছু বললাম না হু!নয়তো বুঝিয়ে দিতাম এই রুবা কি জিনিস যত্তসব কালাবিল্লি উতপত;যাহ্ আমার ৩,৫‌ পয়ত্রিশ টাকাই নস্ট হলো এই কালাবিল্লির জন্য অসহ্য!(বলেই মেয়েটা হনহন করে অন্যদিকে চলে গেলো)

রিয়ানের রাগ বেশ হাই লেভেলে পৌঁছে গেছে।বাংলাদেশে এসেই এইরকম একটা বেয়াদব মেয়ের মুখমুখি হবে কল্পনার ধারাছোঁয়ার বাহিরে ছিলো রিয়ানের।
রিয়ান রাগী চোখে,ফোসঁ ফোসঁ করতে করতে রিসাবের দিকে তাকিয়ে হনহন করতে করতে এক্টা ট্যাকসি থামিয়ে উঠে গেলো।
রিসাব বেক্কলের মতো তাকিয়ে রইলো।
নিজের গাড়িতে না উঠে তাকে সাথে না নিয়ে রিয়ান কিভাবে চলে গেলো

অন্যদিকে।
জুহির প্রচন্ডরকম ভাবে মাথা ঘুড়ছে কাল থেকে আজ পর্যন্ত কিছুই খাওয়া হয়নি ফাহয়াজের এইরকম দশার কথা শুনে।জুহির কল্পনাে বাহিরে ছিলো যে লোকটা তাকে প্রতিনিয়ত ভালোবাসি ভালোবাসি বলতো,কস্ট দিতো,এত এত ভালোবাসতো যে লোকটা তাকে রাগাতো তার জন্য পাগল ছিলো সেই লোকটা আর পৃথিবীতে নেই তার কাছে নেই।

জুহি নিঃস্ব একেবারেই নিঃস্ব খুব বাজেভাবে একা সে।
জুহির মাথা ঘুড়ছে চোখ গুলোও আর খোলা রাখতে পারছেনা।
নীলার কাধেঁ পরম আবেশে হেলে চোখ জোড়া দুটি বন্ধ করে নিলো সে।

নীলা জুহি র জাগা র টের না পেয়ে জুহি র দিকে অশ্রুশিক্ত চোখে জুহি র দিকে তাকালো দেখলো জুহি সেন্স লেস মুহুর্তেই নীলা র বুক ধুক করে উঠলো।
_______ __ _______
.
.
.
– থাইগ্লাসের দিকে মুখ করে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে রিয়ান।
থাইগ্লাসের সামনে থাইগ্লাসে এক হাত রেখে হা করে ধোঁয়া ছুড়লো গ্লাসের দিকে।
আর সেই ধোঁয়ায় কাচেঁ প্রবাভিত হলে রিয়ান তাতে নাম লিখলো।

“জুহুবেবি”
মুহুর্তেই রিয়ানের মুখে ফুটে উঠলো বিজয়ীতার ছাপ, অদ্ভুদ দৃষ্টি, , রহস্যময় বাকাঁ হাসি।
জুহিকে নিজের করে পেতে যাচ্ছে সে আনন্দ তো হবেই।
রিসাব কিছুদূরেই দাড়িয়ে।রিয়ানের কান্ড দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়লো রিসাব।
রিয়ানের এহন‌ আরচণ ভয় পাওয়ায় প্রচন্ড ভয় পাওয়ায় রিসাবকে । এতোদিনে আর কিছু না বুঝোক এটা রিসাব ঠিকই বুঝেছে যে রিয়ান নামের চরিত্রটা পাগল,সাইকো,খারাপ।
যে নিজের,অন্যের জিনিসটাকে নেওয়ার জন্য উতলা হয়ে পড়ে সেটা যেভাবেই হোকনা কেন পাগলামী করে নতুবা মেরে।

তাই তো ফাহয়াজ নামের সুর্দশন,চতুর ছেলেটাকে এভাবে তার পথ থেকে সরিয়ে ফেলে।
ভাবতেই পুনরায় দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়ালো রিসাব।

– এয়ারপোর্টে আমার সাথে গলা উচিঁয়ে কথা বলা মেয়েটাকে আমার চাই! বদ মেয়েটাকে একটা ভয়ংকর শাস্তি দিতে হবে আমার সাথে গলা উচিঁয়ে কথা বলা বের করবো!
মেয়েটার এমন অবস্থা করবোনা যে ভবিষ্যৎ এ রিয়ান আহমেদের সাথে গলা উচিঁয়ে কথা বলার সাহস করবেনা!নাও ইউ গো এন্ড আমার সেই মেয়েটাকে চাই যেখান থেকে পারো তাকে নিয়ে আসো!( কথার স্বরে রাগ এনে)

রিসাব শুকনো ঢোক গিলল সেই সময় কার শোধ রিয়ান যে ভালো করেই নিবে এখন তা বেশ বুঝতে পারছে রিসাব।
রিসাব মাথা নিচু করে দ্রুত রুম স্থান ত্যাগ করলো।
রিয়ানের ঠোঁট কিনারায় আবারো বাকাঁ হাসি প্রভাবিয় হলো।

চলবে,,
[

#Rubaita_Rimi(লেখিকা)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here