আমার হৃদবক্ষে শুধুই তুই পর্ব -০৬

#আমার_হৃদবক্ষে_শুধুই_তুই💖
| পর্ব-৬ |

বাকরুদ্ধ হয়ে টিভির দিকে তাকিয়ে আছে জুহি।
ধীর পায়ে নিচে নামতেই নীলা তাকে দেখার সাথে সাথে নীলা হাউমাউ করে কাদঁতে কাদঁতে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে জোড়ে কান্না করতে লাগলো।
জুহি শুকনো ঢোক গিললো।তার ভেতরে কেমন জানি লাগছে।
মনটা অস্থির অস্থির লাগছে তার।সাথে প্রচন্ড রকম ভাবে মাথাও ভোঁ ভোঁ করছে।
এরই মাঝে জুহি নীলার কোন রেসপন্স পেলো না।
আধো আধো চোখে নীলার দিকে তাকালো বুকটা ধুক করে উঠলো তার নীলা সেন্সলেস হয়ে গেছে।
কিন্তু জুহির শক্তিতে কুলাচ্ছে না যে চিৎকার করে কোন সার্ভেন্ট করে ডাকবে
শেষে জুহি উপায় না পেয়ে কোন মতে নীলাকে ধরে সোফায় বসলো সাথে সেও চোখ বন্ধ করে নিলো।
.
.
ইমার্জেন্সিতে বাংলাদেশ ব্যাক করছেন মিঃ মিরাজ(ফাহয়াজের বাবা) এবং মিসেস
ফায়ানা(ফাহয়াজের মা)
ছেলের এইরকম একটা ঘটনার কথা মুহুর্তের মধ্যেই তাদের কানে এসে পৌঁছেছে।যেই কথাটা শুনেছেন সেই মিসেস ফায়ানা নিজেকে সামলে রাখতে পারেননি কেদেঁ কেটেঁ অবস্থা একদম নাজেহাল তাদের।
মিঃমিরাজ উনি তো বাকরুদ্ধ জীবনে কখনো কল্পনা করেননি‌ এইভাবে ছেলেকে হাড়াতে হবেন।
দ্রুত তারা বাংলাদেশে ব্যাক করছেন।

এদিকে।
ফাহয়াজের এক্সিডেন্টের এইএকটা কথা যেনো সারা এলাকা জুড়ে তকমা লাগিয়ে দিয়েছে।
সেতুটিতে এখনো প্রচন্ড রকম ভিড়,পুলিশ,প্রেস-মিডিয়ার আনাগোম।
পুলিশ লোকজনদের সেখানে থেকে সড়াতে আপ্রাণ চেস্টা করছেন।
কিন্তু লোকজনের‌ একটাই কথা তারা এর শেষ দেখতে চায়।
ইবাদ একদম ভেংগে পড়েছে কাদঁতে কাদঁতে পাগলামী করতে করতে তার অবস্থাও নাজেহাল।
তার বস তাকে ভাইয়ের নজরে দেখতেন।যখন তার মাথার উপর ছাদঁ ছিলোনা মা,বাবা,দুইবোন ছোট ভাই কে নিয়ে কোথাও যাওয়া ছিলোনা,দু বেলা পেট পুড়ে খাওয়ার সাধ্য ছিলো না তখন ফাহয়াজেই দেবদূত হয়ে তাদের সাহায্য করতে এসেছে।
কথাটা যখনই ইবাদের মনে পড়ে তখনই হাউমাউ করে কেদেঁ উঠে।

পুলিশ ডুবুরিদের দিয়ে ফাহয়াজের গাড়ি,ওর তার বডিটা খুজাচ্ছে।ডুবুরি প্রায় এক ঘন্টা ধরে ফাহয়াজের বডি খুজে যাচ্ছে ভাগ্যক্রমে গাড়িটা পেয়েছেন তারা তবে ফাহয়াজকে এখনো খুজেঁ পাওয়া যায়নি।
ডুবুরিদের মত ফাহয়াজের বডিটা সম্ভবত অতলে গভীরে চলে গেছে খোজাঁ বড় মুশকিল।
তবে পুলিশদের তো ফাহয়াজের বডিটাই চাই।
তার পরিবারকে দেওয়ার জন্য শেষ কৃত্য করার জন্য।
পুলিশ অফিসার তো ভেবেই নিয়েছে বডিটা পাওয়া যাবেনা।
ইবাদ আর পারছে না এইসব লোকজনের চেচাঁমেচিঁ ইবাদের পাশেই দাড়িয়ে আছেন থানার ওসি মি.আহমেদ।
তিনি সবটাই লক্ষ্য করছেন।চারদিক পর্যবেক্ষন করছেন।
আর সাথে মাঝে মাঝে ইবাদকে আশ্বাস দিচ্ছেন।
ইবাদ আর না পেড়ে মি.আহমেদের কাধেঁ হেলিয়ে পড়ে।
মি.আহমেদ ভড়কে গিয়ে দ্রুত ইবাদকে ধরে ফেললেন।
এরপর ইবাদকে ধরে তার গাড়ি অবধি নিয়ে গিয়ে বসিয়ে দেন।
ফাহয়াজের এইরকম ঘটনায় তিনিও ব্যাথিত।

অন্যদিকে।

ঠোঁটে রহস্যময়ি হাসি ফুঁটিয়ে শিষ বাজাচ্ছে আর আয়নার দিকে নিজের দিকে তাকিয়ে আছে রিয়ান।
দেখছে তাকে ফিটফাট লাগছে কিনা।
ব্লাক জিন্সের শার্ট,প্যান্ট হাতা।চুল গুলো জেল দিয়ে সেট করা কিলার লুক।ব্লাজ সু।
রিয়ানের নিজেকে এখন হিরো হিরো মনে হচ্ছে।
অবশ্য কাটাঁকে উপড়ে ফেলে হিরোয়িনকে তুলে নিতে যাচ্ছে।
রিয়ান ভাবছে শেষে কিনা খলনায়ক থেকে একদম হিরো হয়ে গেছে।
ভাবতেও মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো রিয়ান।
দূর থেকে দরজায় শুকনো চেহারা নিয়ে দাড়িয়ে রিসাব।
আয়নার রিসাবের দিকে নজর পড়তেই বাকাঁ হাসি দিয়ে পুনরায় শিষ বাজাতে লাগলো।
রিসাব বুঝতে পারছে সে বড় কোন কান্ড ঘটিয়েছে বা ভবিষ্যৎ এ ঘটাবে।
ভাবতেই শুকনো ঢোক গিলল রিসাব।

– বস!(শুকনো ঢোক গিলে)

রিয়ান আয়নার মধ্যেই তার রিসাবের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিলো।

– টিকিট বুক করেছো!!(বাকাঁ হেসে)
রিসাব ভয়ে ভয়ে মাথা নাড়ালো।

রিয়ানের ঠোঁট বাকাঁ হাসি জায়ি রইলো হাত দিয়ে ইশার করলো রিসাবকে যেতে
রিসাব মাথা নিচু করে হনহনিয়ে চলে গেলো।

এদিকে।

জুহি চোখ খুলতেই দেখলো নীলা তার কাধেঁর উপর মাথা রেখে নিস্প্রান শুয়ে আছে।
চোখের জল শুকিয়ে তা রেখান্বিত হয়ে মুখে দাগ পড়েছে।
জুহির মাথাটা এখনো ঝিম মেরে আছে।জুহি নীলাকে আলতো গলায় ডাক দিলো।

– নীলা,নীলা ওঠ।

অনেকবার ডাকার পড়েও নীলার কোন রেসপন্স পেলো না জুহি।
জুহি নীলাকে সরিয়ে আলতো করে নীলার মাথাটা সোফার সাথে এলিয়ে দিয়ে ঝগ থেকে এক্টু পানি হাতের নিয়ে নীলার মুখে ছিটিয়ে দিলো।
নীলার ভ্রুযুগল কুচঁকে উঠলো।
নীলা আধো আধো চোখ খুলে চারিদিকে তাকালো এরপর যেই জুহির দিকে তাকালো মুহুর্তেই ভাইয়ের কথা মনে পড়তেই নীলা থমকে উঠলো তার বুকের ভেতরে যেনো কেউ সুচঁ চেপে ধরেছে।
নীলা ডুকরে কেদেঁ উঠলো।নীলার কান্না দেখে জুহিও নিজেকে ধরে রাখতে পারলো নাহ্।নীলাকে জড়িয়ে ফুপিঁয়ে ফুপিঁয়ে কেদে উঠলো।

– জ জুহি প্লিজ আম আমাকে ভাইয়ের কা কা কাছে নিয়ে চ চল!(কাদোঁ কাদোঁ ভাষায়)
নীলার কথায় জুহির মন ক্ষুন্ন হলো।বিষন্ন মন নিয়ে নীলার আদলের দিকে তাকালো।

জুহির খারাপ লাগছে খুব খারাপ লাগছে।
জুহি কিছু বলতে নিবে ওমনি কলিংবেল বেজে উঠলো।
কেউ অনবরত কলিংবেল চেপে যাচ্ছে।
জুহি দুঃখের ঢোক গিলে আলতো পায়ে উঠে ধীর গতিতে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো।
দরজা খুলতেই একজন বয়স্ক মহিলা হাউমাউ করে জুহিকে জড়িয়ে কান্না করতে লাগলো।
মহিলাটির কর্মকাজে জুহি হতভম্ভ।

নীলা ফুপিঁয়ে ফুপিঁয়ে কাদঁতে কাদঁতে সেদিকে তাকালো।
তাকাতেই দেখতে পেলো তার বাবা,মা ব্যাগ লাগেজ নিয়ে এসে দাড়িয়ে আছে।
তার মা জুহিকে জড়িয়ে কাদঁছে।মি.মিরাজ চোখে মুখে বিষন্নতার ছাপ ফুটিয়ে ড্রয়িংরুমের দিকে ক্ষুদ্ধ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন।

নীলার দিকে চোখ যেতেই মি. মিরাজ মায়াবদ্ধ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন।
নীলা নিজেকে না দমিয়ে দৌড়ে এসে মি.মিরাজকে জড়িয়ে জোড়ে জোড়ে কাদঁতে লাগলো।
বাড়ির সকল সার্ভেন্ট এসে জড়ো হলো ড্রয়িংরুমে ইতিমধ্যে তারাও ফাহয়াজের খবর পেয়েই ড্রয়িংরুমে এসে জড়ো হয়েছেন।
মি. মিরাজও দ্বিমত করলেন না সাধরে মেয়েকে জড়িয়ে নিশ্চুপে চোখের পানি ফেলতে লাগলেন।
যেনো মুহুর্তেই খান বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

– পাপা আমাকে ভাইয়ার কাছে নিয়ে চলো!আমি আমার ভাইয়ার কাছে যাবো! টিভিতে এইসব মিথ্যা খবর বলছে কেনো পাপা!ফাহয়াজ ভাইয়ার কিছু হতে পারেনা প্লিজ পাপা আমায় নিয়ে চলো ভাইয়ার কাছে!(ফুপিঁয়ে ফুপিঁয়ে কাদঁতে কাদঁতে বলল নীলা)

মিসেস ফায়ানা জুহিকে ছেড়ে নীলার কাছে গেলেন।নীলা তার মাকে দেখে আরও কান্নার বেগ বাড়িয়ে দিলো।

– মাম্মা,পাপা তোমরা আমায় প্লিজ ভাইয়ার কাছে নিয়ে চলো!আমার খুব কস্ট হচ্ছে ভাইয়ার জন্য!
মনে খালি কু ডাকছে!(কান্না করতে করতে)

মি.মিরাজ আর মিসেস ফায়ানা বাকহীন কিছুতেই বলতে পারছেন না তারা।ছেলের শোকে তারাও পাথর এরিমধ্যে মেয়ের দমানো কান্না।
মিসেস ফায়ানা আর সহ্য করতে পারছেন না।তিনি তালে তাল মিলিয়ে নীলাকে জড়িয়ে কাদঁতে লাগলেন।
মি. মিরাজ চুপ করে আছেন ওনার নজর বর্তমানে জুহির উপর পড়লো।

এদিকে জুহি কারো কান্নার ছোঁয়া পেয়ে বাকহীন হয়ে দাড়িয়ে আছে।জুহির মুখে না কোন রিয়েক্টশনের প্রতিচ্ছবি আছে না কোনো নরচড়।
আছে শুধু পাথর জুহির চোখে বর্তমানে আর কিছু না থাকলেও একরাশ ভালোবাসা হাড়ানোর দহনের আগুনে পোড়ার কস্ট,একরাশ দুঃখতা।
সব কিছু মিলিয়ে যেনো না অনুভব করা এক কঠিন যন্ত্রণা উপভোগ করছে জুহি।

এদিকে।

ডুবুরিরা ফাহয়াজের ডেড বডি অনেক খুজেও খুজে পায়নি।
অবশেষে ক্লান্ত হাড় মেনে তারা উপরে উঠে এসেছে।
পুলিশেরা এক প্রকার হাল ছেড়েই দিয়েছে।অনেক তো খুজেঁছে না পেলে তো কিছুই করার নেই।
বর্তমানে প্রতিটা চ্যানেলের ব্রেকিং নিউজ হিসেবে একটাই নিউজ রিপিট হচ্ছে তা হলো।

-মি.ফাহয়াজ খানের গুরতর এক্সিডেন্ট অতঃপর তিনি গাড়ি সহ্ নদীতে পড়ে যান।বর্তমানে ডুবুরিরা একটানা দু ঘন্টা অনেক খুজেও ফাহয়াজ খানের বডি খুজঁতে অক্ষম!

চলবে

#Rubaita_Rimi(লেখিকা)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here