আমার হৃদবক্ষে শুধুই তুই পর্ব -০৫

#আমার_হৃদবক্ষে_শুধুই_তুই💖
| পর্ব-৫ |

টেক্সট টার দিকে নিস্পলক তাকিয়ে ভয়ে কাপঁছে জুহি।
জুহি ভেবেই নিয়েছে কাজটা ফাহয়াজের তবে ফাহয়াজ তো এমন লোক না যে, যে কাউকেই এভাবে প্লাবিক প্লেসে শুট করে খুন করবে।
জুহি ভয়ে কাপাঁ কাপাঁ চোখে চারদিকে তাকিয়ে শুকনো পাপড়ি,গলায় নীলার দিকে তাকালো।
নীলা ভয়ে মুখে হাত দিয়ে তার গা ঘেষে দাড়িয়ে আছে।জুহিকে চুপ থাকতে দেখে নীলা ভয়ে ভয়ে তার ফোনের দিকে তাকালো।
নীলা টেক্সট টা পড়তেই কয়েক মুহুর্তের মধ্যে থমকে গেলো।
ফাহয়াজ!
নীলা ভাবতেও পারছে না তার ভাই এইরকমটা করবে।কিন্তু ফাহয়াজ তো এইরকমটা করার মানুষ না।
নীলা থমকে বড় বড় চোখ করে জুহির চোখের দিকে তাকালো।জুহিও ভয়ার্ত চোখে নীলার চোখে চোখ রাখলো।
.
.
রকিং চেয়ারে মাথা এলিয়ে রাগে চোখ দুটি বন্ধ করে আছে ফাহয়াজ।কোম্পানির এত বড় লোকশান হবে কখনোই ভাবতে পারেনি ফাহয়াজ।
কিছুক্ষন আগেই অফিসের সব স্টার্ফ,কর্মচারীদের উপর চেচাঁমেচি করে এসেছে সে।বর্তমানে মাথায় তার আগুন জ্বলছে।
চুপ করে বসে আছে ফাহয়াজ এমন সময় তার ফোনে মেসেজের নোটিফিকেশন আসলো।
ফাহয়াজ মুখশ্রীতে রাগের আভাস ছড়িয়ে ফোনটা হাতে নিলো।

” সবেতো অফিসের ধার হাড়াচ্ছো তোমার মহামূল্যবান জিনিসও আস্তে আস্তে আমি আমার করে নিবো।তুমি নিঃস্ব হয়ে যাবে ফাহয়াজ।গেট বি রেডি ওকে”

মেসেজটা দেখে ফাহয়াজের চোখ লাল হয়ে যেতে লাগলো।ফোনটাকে দেয়ালে ছুড়ে মারলো।রাগে ফাহয়াজের কপালের রগ ফুলে উঠেছে কি করবে ফাহয়াজ বুঝতে পারছে না।
মাথার চুল শক্ত করে টেনে ধরে দ্রুত পায় ডেষ্ক থেকে বেরিয়ে হনহন করতে করতে অফিস থেকে বেরিয়ে যেতে লাগলো।

পিছু থেকে ইবাদ অবাক হয়ে ফাহয়াজের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।কি মনে করে হঠাৎ ইবাদও ফাহয়াজের পিছু পিছু যেতে লাগলো।

সেতুর নিউ কনট্রাকশন চলছে।আশেপাশে যে যার মতো সাবধানতা অবলম্বন করে গাড়ি ড্রাইভ করছে।এদিকে ফাহায়াজ পাশবর্তি থাকা রোডে দ্রুত ড্রাইভ করছে।
সেই রোডে নিউ কনট্রাকশন কাজ চলছে বলে খুব কমই লোক সেখান দিয়ে ড্রাইভ করে যাচ্ছে।
ফাহয়াজ দ্রুত ড্রাইভ করছে রাগে তার চোখ,মুখ লাল হয়ে আছে।
ফাহয়াজের থেকে অনেকদূরে ইবাদ গাড়ি নিয়ে ফাহয়াজের পিছু ছুটছে।
ফাহয়াজ দ্রুত ড্রাইভ করছে এমন সময় সামনে থেকেও দ্রুত একটা ট্রাক তার গাড়ির দিকে এগিয়ে আসছে।
ফাহয়াজ এটা দেখে ভ্রু কুচকে ব্রেক কষলো কিন্তু ব্রেক কাজ করছে না।
ফাহয়াজ বারবার ব্রেক করার চেস্টা করছে কিন্তু গাড়ি ব্রেক করছে না।
ফাহয়াজ ব্রেক কষা ছেড়ে পাশবর্তি রাস্তায় ইউর্টান নেওয়ার আগেই ট্রাকটার সাথে তার গাড়ির প্রচন্ড রকম ভাবে সংঘর্ষ হলো।
মুহুর্তেই ফাহয়াজের গাড়িটা উল্টাতে উল্টাতে সেতুর চারদিক দিয়ে বেড়াজাল দেওয়া নেট ভেংগে ফাহয়াজের গাড়িটা নদীতে পড়ে যেতে লাগলো।

ঘটনটা চক্রে আশেপাশে থাকা লোকজন হতভম্ভ।কনট্রাকশন করা লোকজন গুলি দ্রুত ট্রাকটাকে ধরাে চেস্টা করলো কিন্তু তারা ব্যর্থ হলো।ট্রাকটা মেরেই আর থামেনি অন্যদিকে ছুটেছে।

এদিকে ইবাদ ঘটনাটা দেখে জোরে ব্রেক কষলো।হতভম্ভ হয়ে তারাতারি গাড়ি থেকে বেরিয়ে যেখান দিয়ে ফাহয়াজের গাড়িটা নেট ভেংগে নিচে পড়ে গেছে সেখানে দৌড়ে যেতে লাগলো।

রিতিমধ্যে চারদিকে মানুষ আতংকিত হয় গেলো।সবাই যে যার মতো চিৎকার,চেচাঁমেচিঁ করতে লাগলো একথায় সবাই ঘটনাস্থলে জড়,সড় হয়ে গেলো।
ইবাদ সেখানে গিয়ে হতভম্ভ নদীতে ফাহয়াজের গাড়িটাও দেখা যাচ্ছেনা বোধহয় ডুবে গেছে।

অন্যদিকে।

– বস কাজ হয়ে গেছে পথে কাটাঁকে সহকেই উপড়েঁ ফেলেছি।(হাসতে হাসতে)

– ভেরি গুড,,,,এখন সব আমার হাতে।তোর জারিঝুড়ি শেষ ব্রো এখন আমার রাজত্ব থাকবে এন্ড তোর পাখিকেও তোর খাচাঁ থেকে মুক্ত করে আমার খাচাঁয় বন্দি করবো!
(বাকাঁ হেসে)
নিজে নিজে কথাটা বলেই ঠোঁটের কোণে রহস্যময় হাসি ফুটিয়ে তুলল ছেলেটা।

এদিকে।

ইবাদ কাদঁতে চিৎকার করে কাদঁছে।
পুলিশের লোকজনরা তাকে চেয়েও আটকাতে পারছে না ইবাদ বারবার চেস্টা করছে নদীতে লাফ দেওয়ার কিন্তু পুলিশেরা তাকে প্রাণপনে আটকে রাখছে।
ইতিমধ্যে ঘটনাস্থলে প্রেসমিডিয়া,পুলিশ এসে হাজির হয়েছে।
বিজনেস ম্যান ফাহাদ খানের ছেলে ফাহয়াজ খানের গুরুতর ভাবে এক্সিডেন্টে মৃত্যু।কথাটা পুরো শহরে রটে গেছে।
ইবাদ বারবার বলছে।

– আমাকে ছেড়ে দিন!আমাকে আমার স্যারের কাছে যেতে দিন প্লিজ!(অনুনয়ের স্বরে)
কিন্তু পুলিশ বা কেউ ইবাদকে সেখানে যেতে দিচ্ছেনা।
পুলিশ কাউকেই সেখানে যেতে দিচ্ছেনা।
বর্তমানে প্রতিটা চ্যানেলেই এই একই খবর টেলিকাস্ট হচ্ছে।

অন্যদিকে।

জুহি,নীলা নিস্প্রভ হয়ে একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে।
দুজনের মধ্যেই নীরবতা বিরাজমান।
একসময় নীরবতা ভেংগে নীলা কাপাঁ কাপাঁ গলায় বলে উঠলো।

– জ জুহি ক কাজটা কে কক ক করতে পারে!(ভয়ার্ত গলায়)
ইতিমধ্যে ভার্সিটিতে পুলিশও এসে হাজির হয়েছে।সব জায়গায় তদন্ত করছে।সবাইকে জিজ্ঞাসা বাদ করছে।

অবশেষে অপেক্ষার প্রহর কাটিয়ে পুলিশ তাদের সামনে এসে দাড়ালো।
পুলিশ অফিসার জিজ্ঞাসু গলায়,চোখে বলে উঠলো।

– তো মিস আমরা যা জানতে পারলাম এই কান্ড ঘটার সময় আপনারা এই যে এই লোকটার সামনেই ছিলেন!
ঘটনাটা কিভাবে হয়েছে আপনারা দুজনে কি এক্টু এক্সেপ্লেইন করে বলতে পারবেন!এই লোকটাকে কে মেরেছে!(চোখ,মুখে জিজ্ঞাসুর ছাপ রেখে)

নীলা আর জুহি ঢোক গিলল।খুনটা যে জুহি,নীলার জন্যই হয়েছে ওই মেসেজটাই প্রমান করে দেয়।
নীলা পুলিশ অফিসারকে সব খুলে বলে শুধু মেসেজের কথাটা চেপে রেখে।
.
.
ইশফান হা হয়ে টিভির দিকে রিমোট তাক করে একধ্যানে টিভিতে টেলিকাস্ট হতে থাকা খবরটার দিকে তাকিয়ে আছে।
মি.ইবাদাত সবেমাত্র বাহির থেকে বাজার করে এসেছেন।
এসেই কিচেনে বাজার গুলো রেখে মিসেস জিনাত এক গ্লাস শরবত দিতে বলে তিনি ড্রয়িংরুমের সোফায় বসলেন।
সোফায় ক্লান্ত হয়ে বসতেই ওনার চোখ গেলেন ইশফানের দিকে তিনি দেখলেন ইশফান এক নজরে টিভির দিকে তাকিয়ে আছে।
সেই দৃষ্টি অনুস্বরন করে টিভির দিকে তাকাতেই
তিনি বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে গেলেন।

– বাবা আমি যা শুনছি,দেখছি তুমিও কি তাই দেখছো,শুনছো।(অবিশ্বাসী গলায়)
মি. ইবাদাত নির্বাক হয়ে টিভির দিকে তাকিয়ে আছেন।

সজোড়ে কিছু পড়ে ভাংগার আওয়াজে টিভির থেকে চোখ সরিয়ে সেদিকে তাকালো মি. ইবাদাত আর ইশফান।
দেখলো মিসেস জিনাত মুখে হাত দিয়ে টিভির দিকে হা হয়ে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছেন।
.
.
এক রিকশা নিয়ে জুহি,নীলা বাড়িতে চলে আসলো।
আজ ফাহয়াজ তাদের নিতে আসেনি।তারাও আর ফাহয়াজকে ফোন করেনি নীলা ভাবছে হয়তো ফাহয়াজের অফিসের কাজে ব্যাস্ত তাই নিতে আসেনি।

বাড়িতে এসেই নীলা আর জুহি কেউ কাউকে কিছু না বলেই যে যার রুমে চলে গেলো।
জুহি সর্বপ্রথম আগে কাবার্ড থেকে কাপড়_চোপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।

ফ্রেশ হয়ে বাহিরে এসে জুহি দেখলো তার ফোনটা বাজছে।
জুহি জানে ফোনটা কে করেছে ফাহয়াজ।এমনিতেও ফাহয়াজ আজ তাদের নিতে আসেনি দেখো হয়তো সরি বলার জনয ফোন করছে।
জুহি সেদিকে ধ্যান না দিয়ে আয়নায় তাকালো।
পরপর অনেকক্ষন ফোন বেজে যাওয়াতে বিরক্তিতে ভ্রুযুগল কুচঁকে ফোনটা হাতে নিলো জুহি দেখলো ফোনের স্কিনে “ইশফান” নাম লেখা।
মোট ১২ টা মিসড কল উঠে রয়েছে।জুহি হন্তদন্ত চোখে ফোন রিসিভ করলো।

– হ্যালো এই কি হয়েছে রে মা,বাবার শরীর ঠিক আছেতো!(হন্তদন্ত গলায়)

ওপাশ থেকে ইশফানের গলা শোনা গেলো।

– আপু ট ট ট,,(তোতলিয়ে)
জুহি বিরক্তি ভরা গলায় বলে উঠলো।

– তোতলাচ্ছিস কেনো কি হয়েছে!(বিরক্তিমাখা স্বরে)
– আপু টিভি দেখেছিস!ফাহয়াজ!

জুহি এবার আরও প্রচন্ড বিরক্ত হলো।ধমকে বলে উঠলো।

– কি হয়েছে স্পষ্ট করে বলতে পারিস না।ফাহয়াজ মানে কি!

– আপু টিভি দেখিস নি টিভিতে দেখাচ্ছে ফাহয়াজ, ফাহয়াজ ওনার নাকি এক্সিডেন্ট মৃত্যু হয়েছে!(মলিন গলায়)

জুহি চোখ বড় বড় করে নিলো।ছেলেটা কি পাগল হয়েছে নাকি!কিসব বলে চলছে!জুহি ধমকে বলে উঠলো।

– মাথা খারাপ নাকি কিসব বলছিস ওই লোকটা তো এখন অফিসে আছে।(ভ্রু যুগল কুচঁকে)
– আপু তুই,,,

আর কিছু শোনার আগেই জুহি নিচে থেকে নীলার কান্না শুনতে পেলো।
জুহি আবারও হন্তদন্ত হয়ে উঠলো উত্তেজিত হয়ে ফোন কেটে দ্রুত নিচে নামলো।
দেখলো নীলা টিভির সামনে দাড়িয়ে চিৎকার করে কান্না করছে।

জুহির টিভিতে নজর দিতেই বাকরুদ্ধ হয়ে দাড়িয়ে গেলো।

চলবে,,

#Rubaita_Rimi(লেখিকা)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here