আমার হৃদবক্ষে শুধুই তুই পর্ব -০৪

#আমার_হৃদবক্ষে_শুধুই_তুই💖
| পর্ব-৪ |

জুহি চোখ মেলে তাকাতেই অনুভব করলো কেউ তাকে শক্ত করে জড়িয়ে শুয়ে আছে।
ক্লান্ত চোখ দুটি সেইদিকে তাকাতেই থমকে গেলো জুহি।
ফাহয়াজ তাকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে শুয়ে আছে।
জুহি এক নজর ফাহয়াজের মুখের দিকে তাকালো।নিস্প্রভ চেহারা মলিনতার ছাপ।
জুহি কেমন মায়া লেগে উঠলো।

পরমুহুর্তেই ফাহয়াজের করা কান্ডগুলো মনে পড়তেই রাগে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো জুহি।
ফাহয়াজকে সজোড়ে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো।
ধাক্কা বেশি জোরে হওয়াতে ফাহয়াজ ঘুমের ঘোরেই বেড হতে নিচে পড়ে গেলো।
জুহি হা হয়ে সেদিকে তাকিয়ে রইলো।
এদিকে ঘুমের মধ্যে হঠাৎ নিচে পড়া যাওয়াতে ফাহয়াজ পিঠে খুব ভালো ভাবেই ব্যাথা পেয়েছে।
প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব হতেই ফাহয়াজ চোখ মেলে তাকালো।
নিজেকে নিচে দেখে বুঝতে পারলো জুহি ওকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিয়েছে।

ফাহয়াজ রাগে ফোস ফোস করতে করতে বেডে থাকা জুহির দিকে রাগান্বিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।
জুহি ফাহয়াজের দৃষ্টি দেখে মনে মনে বলে উঠলো।

– এইরে এটা কি করলাম!যেচে ঘুমে থাকা মমিকে জাগিয়ে তুললাম।আমি তো গেছি এখন!(মনে মনে)
জুহি ঢোক গিলে মাথা নিচু করে নিলো।
ফাহয়াজ উঠে জুহির দিকে এগিয়ে গিয়ে।একটু জুকেঁ বলে উঠলো।

– লুক এট মি জুহিপাখি!(রাগান্বিত গলায়)

ফাহয়াজের এইরকম রাগান্বিত গলার কথা শুনে ভয়ে আরেকবার ঢোক গিলল জুহি।
এই লোকটা যে এক’শো কি দুই’শো পার্সেন্ট অসভ্য জুহি জানে।
জুহির ভয় করছে ফাহয়াজের যদি আবার তাকে গত পরশুর মতো শাস্তি দেয়।
জুহি মাথা নিচু করেই ঢোক গিলছে।
ফাহয়াজ আর না পেরে ধমকে উঠলো।

– জুহিপাখি লুক!(ধমক দিয়ে বলল ফাহয়াজ)

জুহি ভয়ে ভয়ে তাড়াতাড়ি মাথা উঠিয়ে নিলো।
ফাহয়াজ বাকাঁ হাসলো।
চেহারায় গম্ভীরতা এনে বলে উঠলো।

– আমাকে ধাক্কা দেওয়ার জন্য তোমাকে কি শাস্তি দেওয়া যায় বলোতো জুহিপাখি!(গম্ভীরতা ফুটিয়ে)

জুহি ঘনঘন নিশ্বাস সাথে ঘনঘন পলক ফেলতে লাগলো।
এই লোকটাকে সে প্রচন্ড ভয় পায় যদি উল্টা পাল্টা কি করে।
জুহি ফাহয়াজের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিলো।ফাহয়াজ জুহির গালে স্লাইড করতে করতে নেশাক্ত গলায় বলে উঠলো।

– যাও মাফ করে দিলাম রেডি হয়ে এসো!আজ তো তোমার ভার্সিটি আছে!লিসেন জুহিপাখি ফের যদি কোন ছেলের সাথে তোমায় দেখি না,এর চেয়েও খারাপ কিছু হবে তোমার সাথে মাইন্ড ইট!!কজ তুমি শুধুই আমার,,(বলেই ফাহয়াজ বাকাঁ হাসলো এবং শিষ বাজাতে বাজাতে রুমের বাহিরে চলে গেলো অন্য রুমে ফ্রেশ হতে)

জুহি শুকনো ঢোক গিলে মনে মনে উচ্চারণ করলো।
– আমার কপালটাই খারাপ যে এইরকম একটা লোক আমার কপালে জুটলো।যদি কখনো পালানোর সুযোগ পাই তাহলে নিশ্চয়ই পালাবো!(মনে মনে কথাটা বলেই জুহি কাবার্ড থেকে কাপড় চোপড় নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়)

অন্যদিকে,,

ওয়াইনের ভর্তি গ্লাসে চুমুক দিচ্ছে রিয়ান!আর তীন্ক্ষ চোখে জুহির হাসি মাখা ছবির দিকে তাকিয়ে আছে।
এক সময় রিয়ান রাগে উঠে জুহির ছবিটির সামনে গিয়ে গ্লাসে থাকা বাকি ওয়াইন জুহির ছবিতে ছুড়ে মারলো।
এরপর গ্লাসটা ফ্লোরে সজোড়ে আছাড় মারলো।
রিয়ান জুহির ছবিতে হাত বুলিয়ে বলে উঠলো।

– জুহিবেবি গেট বি রেডি!আই এম ব্যাক টু ইউর লাইফ!(বলেই রিয়ান বাকাঁ হাসলো)

– রিসাব ফ্লাইটের টিকিট’স বুক করো ইমার্জেন্সি!তুমিও আমার সাথে যাবে দ্যাট’স ফাইনাল(গম্ভীর গলায়)
রিসাব মাথা নত করে চলে গেলো।
মুহুর্তেই রিয়ানের ঠোঁটে রহস্যময়ী বাকাঁ হাসি ফুটে উঠলো।
রিয়ান শিষ বাজাতে বাজাতে ডুলু ডুলু পায়ে গিয়ে বিছানায় হাত মেলে উপুড় হয়ে পড়লো।
.

এদিকে সবেমাত্র ভার্সিটি এসে পৌঁছেছে জুহি।ফাহয়াজ তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে ক্লাস পর্যন্ত দিয়ে এসেছে আর তাকে আবারও ওয়ার্ন করেছে যেনো কোন ছেলে আশেপাশে তাকে না দেখা যায়।
জুহি ভয়ে ভয়ে মাথা নিচু করে হ্যাঁ বলে তাড়াতাড়ি ক্লাসে চলে গেলো।
ফাহয়াজও নিজের অফিসে চলে গেলো।

ফাহয়াজের অফিসে।

– স্যার আমাদের কোম্পানির জরুরি ফাইল চুড়ি করে পাশবর্তি কোম্পানিতে বিক্রি করে দিয়েছে স্যার!(মাথা নিচু করে)

সবেমাত্র কফির কাপে এক চুমুক দিয়ে ছিলো ফাহয়াজে।ইবাদের এইরকম কথা শুনে ভ্রু কুচকে ইবাদের দিকে একনজর তাকিয়ে চোখ সরিয়ে ল্যাপটপের স্কিনে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলে উঠলো।

– কাজটা কে করেছে!(গম্ভীর গলায়)
ইবাদ মাথা নত রেখেই বলল।

– অফিসের একজন এম্প্লোই মি.আসাম।
ফাহয়াজ কফির কাপের দ্বিতীয় বার চুমুক দিয়ে কাঠ কাঠ গলায় বলল।

– বিশ্বাসঘাতকতা আমার একদমই পছন্দ নয়!বাকিটুকু কি তোমাকে বলতে হবে!
নাও গেট আউট ফ্রম হেয়ার!
(গম্ভীর কাঠ কাঠ গলায়)

রিসাব মাথা নত করে চলে গেলো।
যেতে যেতে বিরবিরিয়ে বলে উঠলো।

– ইংরেজের বাচ্চা কাজটা ঠিক করিস নাই।এবার মর।ঘুমন্ত বাঘটাকে জাগানোর কি দরকার ছিলো আসাম কাসাম কোথাকারের।(বিরবিরিয়ে)

অন্যদিকে,,

– এই জুহি স্যার তোকে ডাকছে আর তুই কি জানালার বাহিরে তাকিয়ে আছিস!(ফিস ফিস করে)
নীলার ফিসফিসিয়ের কথাটা শুনে জুহি হতচকিয় হয়ে সামনে তাকালো দেখলে।
তাদের স্যার তার দিকে সয়ং অগ্নিমূর্তি হয়ে তাকিয়ে আছেন।
এটা দেখে ঢোক গিলে জুহি তারাতারি মাথা নত করে উঠে দাড়ালো।

– এই মিস না সরি মিসেস খান এটা পড়ার জন্য ভার্সিটি আপনার হাসবেন্ডের সম্পত্তি না যে এখানে যেমন তেমন ভাবে বিহেভ করবেন।
আর এখন বর্তমানে ক্লাস চলছে আপনার ভাবনার ক্লাস যদি শেষ হয় তাহলে আপনি কি ক্লাসে মনে দিবেন!
এটা আমার একটা ছোট অনুরোধ!(কাঠ কাঠ গলায়)

স্যারের এইরকম কথা শুনে জুহির চোখ ছল ছল করে উঠলো।
চারদিকের স্টুডেন্টরা মিটমিটিয়ে হাসছে।
জুহির ব্যাপারটা খুব খারাপ লাগলো।
নীলার দিকে চাহনি দিতেই জুহি দেখলো নীলা অসহায় চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে।

জুহি হুম বলে সিটে বসে পড়লো।এবং পুরো ক্লাসটা ভালো ভাবে মন দিয়ে করলো।.তবে স্যারের কথা শুনে নিহাত খারাপ লাগলো জুহির।
ক্লাস শেষে..

– টাকলু স্যার কোথাকারের এক্টু ভালো ভাবেও তো বলতে পারতো!এই স্যারটারে এক শিক্ষা দিলেই নয় বুটকু পেট মোটা ভুড়িওয়ালা।
আমি বুঝিনা যেখানে আমাদের মতো নিরীহ্ পোলাপাইন থাকে সেখানেই কেনো উপওয়ালা এমন আকরু,টেকো,বুড়িওয়ালা টিচার দেয়।(রাগে গিজগিজ করতে করতে বলল নীলা)

জুহি চুপ করে বার্গারে এক কামড় দিলো।যদি এখন সে কিছু বলে নীলা নেহাৎ তার কথা শুনবে না আরও উল্টাপাল্টা কথা শুরু করবে।
ক্যান্টিনে বসে বসে নীলা সেই কখন থেকে বকবক করেই যাচ্ছে।জু্হি চুপ করে শুনছে।

নীলা রাগ কমানোর জন্য আপাতত তাকে কিছু একটা খেতে হবে।সেই ভেবে ক্যান্টিনের একটা ছেলেকে ডাক দিলো
– এই যে ভাইয়া আমাকে একটা স্যান্ডইউচ দিয়ে যান!(রাগে গিজগিজ করতে করতে বলল নীলা)
কিছুক্ষন পর একটা ছেলে এসে নীলাকে এক্টা প্লেটে করে স্যান্ডইউচ দিয়ে দিলো।
ছেলেটা যেই জুহির তাকিয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করতে নিবে।
ওমনিই বিকট একটা শব্দ হলো।
মুহুর্তেই ছেলেটা ডলে নিচে পড়ে গেলো।

ছেলেটার বুক থেকে ক্রমশ রক্ত গড়িয়ে পড়তে লাগলো।
জুহি,নীলা হতবাক হয়ে ছেলেটার নিথর দেহের দিকে তাকিয়ে আছে।
ছেলেটার চোখ এখনো খোলা চেয়ে আছে সে।

ব্যাপারটা বুঝতে দেরি হলেই ক্যান্টিনে আতঙ্ক সৃষ্টি হতে দেরি।হলো নাহ্ নীলা,জুহি মুখে হাত দিয়ে টেবিল থেকে উঠে দূরে সরে গেলো।

চারদিকে লোকজন ক্রমশ চিৎকার করতে লাগলো।লোকজন ছেলেটার লাশটাকে ঘিড়ে ধরে ভিড় জমালো।
নীলা,জুহি ভয়ে এক কিনারে চলে যেতে লাগলো।জুহি ঘনঘন নিশ্বাস ফেলছে,ঘনঘন পাপড়িও ফেলসে।

সবাই ছেলেটাকে ঘিড়ে দাড়িয়ে রয়েছে সাহায্যের জন্য কেউ এগিয়ে আসছে না।
জুহির ফোনে মেসেজের নোটিফিকেশন আসলো।
জুহি কাপাঁ কাপাঁ হাতে ফোনটা বের করবো।
দেখলো আননোন নাম্বার থেকে মেসেজ

“জুহিবেবি আই এম ব্যাক টু ইউর লাইফ।আমার বিনিময়ে তোমার দিকে যে চোখ তুলে তাকাতে তার সাথে এইরকমই হবে।মৃত্যু

চলবে,,,
[

#Rubaita_Rimi(লেখিকা)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here