আমার হৃদবক্ষে শুধুই তুই পর্ব -১২

#আমার_হৃদবক্ষে_শুধুই_তুই💖
| পর্ব-১২ |

রিয়ান জুহি’র দিকে এক্টু ঝুকেঁ বলে উঠলো।

– তোমার জন্য ফাহয়াজকে আমাদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দিয়েছি!বলো তোমাকে কি করে ছেড়ে দেই!আর এক্টা কথা মাথায় ডুকিয়ে নাও তুমি‌ আমারি হবে!তোমার আর আমার মাঝে যেই আসবে তার জন্য ব্যাপারটা ভালো হবেনা ফাহয়াজের মতোই অবস্থা হবে !(বলেই রিয়ান জুহির থেকে সরে হনহনিয়ে চলে গেলো)

জুহি এখনো থ হয়ে বসে আছে।যে ঘোরের মধ্যে আছি।
জুহি বুঝতে পারছে না জুহি র লাইফ টা কি গোলক ধাঁধা র মধ্যে পড়ে গেলো না কি।
জুহির ভিষণ খারাপ লাগছে ফাহয়াজের জন্য।
আর যাই হোক ফাহয়াজের এক্সিডেন্টে যে রিয়ানে রই হাত আছে রিয়ান তাকে ভালো করে বুঝিয়ে দিয়ে গেলো।

________________________

পুরো একদিন কেটে গেছে ফাহয়াজের লাশ নিখোঁজের।প্রেস মিডিয়া যেখানে সবাই ধরেই নিয়েছে ফাহয়াজ জীবিত নেই।
ইবাদ তাও আশা ছাড়েনি তার মন মানছেনা যে ফাহয়াজ মরে গেছে।

ইবাদ এখনো নিজেই ফাহয়াজকে খুজঁতে বেরিয়েছে।
সে জানে ফাহয়াজ এভাবে মারা যেতে পারেনা।তার দৃঢ় বিশ্বাস আছে।

অন্যদিকে।

নিশিভোর হয়ত এখন চারটা কিংবা পাচঁটা বাজছে।
নির্জন‌ এক্টা জায়গায় বসে আছে ফাহয়াজ।জায়গাটা শহর থেকে এক্টু দূরেই হবে ।হাতে,মাথায়,পায়ে অনেক জায়গায় ব্যান্ডেজ করা ।
ফাহয়াজ ভাবছে পুরো একদিন হয়ে গেলো হয়ত সবাই তাকে খুব খুজঁছে তার জন্য কান্নাকাটি করছে।
ফাহয়াজ ভাবছে তার জন্য জুহি কি ফিল করছে হয়ত খুশি হয়েছে নয়তো মন ক্ষুন্ন হয়েছে ফাহয়াজের তার সম্পর্কে ধারণা নে ই ।

ফাহয়াজ ভিষণ ভাবে ভাবছে। তখন যদি সে গাড়ির দরজা খুলে কোন মতে না বের হতো তাহলে আজ তার অস্তিত্বও খুজে পাওয়া যেতো না।
ফাহয়াজ ছিটকে গাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছিলো কিন্তু গতিটা বেশি হওয়াতে সেতুতে থাকতে পারেনি হাত পিচ্ছিল হয়ে সেতু গড়িয়ে নদীতে পড়ে গিয়ছিলো।
কোনমতে সাতারঁ কেটে পাড়ে গেছিলো।এক্সিডেন্টের স্থলে সবার ভিড় থাকাতে কেউ‌ নদীর. পাড় খেয়াল করেনি।
প্রথমে গাড়িতে থাকায় সাথে ট্রাকের সাথে ধাক্কা লাগায় ফাহয়াজ বেশ আঘাত পায়।
কোন মতে নিজেকে সামলে সেখান থেকে বেরিয়ে যায়।

ভাবণা থেকে বেরিয়ে এলো ফাহয়াজ।
ফাহয়াজ জানে যে তার এই‌ এক্সিডেন্টটা স্বাভাবিক না কেউ ইচ্ছে করে তার এক্সিডেন্ট করিয়েছে তাকে মারার জন্য।
তবে সেই ব্যাক্তিটা কে তা বুঝতে ফাহয়াজ কে বেগ পেতে হচ্ছে।
সব ভেবে চিন্তে ফাহয়াজের হঠাৎ রিয়ানের কথা মনে পড়লো।
রিয়ান ফাহয়াজের বেস্টফ্রেন্ড ফাহয়াজের ধারণা রিয়ান এমন কিছু করতে পারেনা তার সাথে কারন তারা তো বেস্ট ফ্রেন্ড ।
তাছাড়া রিয়ান তো বিডিতেই নেই । ফাহয়াজ মন দিয়ে ভাবছে কে হতে পারে সে ব্যাক্তি ।
ফাহয়াজের চলার মতোই অবস্থা নেই কোন মনে গাছের সাথে হেলেন দিয়ে বসেছে পিঠেও তার প্রচন্ড ব্যাথা।

________________
নীলা ক্যান্টিন থেকে হালকা পাতলা কিছু খেয়ে নিলো। আর জুহির কাছে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।
নীলা কেবিনে গিয়ে দেখলো জুহি মাথা নিচু করে নিশ্বব্দে কান্না করছে।
এটা দেখে নীলা ভ্রু কুচকে জুহির কাধেঁ হাত রাখলো।
মুহুর্তেই জুহি চমকে নীলার দিকে তাকালো। জুহি র এভাবে তাকানো র জন্য নীলা ও ভয় পেয়ে গেলো।
পরে নিজেকে সামলে বলে উঠলো।
– কি হয়েছে জুহি তুই ‌এমন করছিস কেনো কি হয়েছে বল ! কেউ কি কেবিনে এসেছিলো !তোর কি খারাপ লাগছে ! বলনা(চিন্তিত গলায়)
জুহি কিছুক্ষণ চুপ থেকে নীলাকে এক্টু আগের সব ঘটনা খুলে বলল।
নীলা হা হয়ে জুহির দিকে তাকিয়ে আছে নীলা ভাবতে ও‌ পারছেনা রিয়ান তার ধারণাটাকে এভাবে সত্যি করে দিবে।
আর রিয়ানের জিনিস টা মানে সেটা জুহি ই জুহি র জন্য রিয়ান আর ফাহয়াজে র মাঝে কিছু হয়েছে।
নীলা কিছুক্ষন চুপ থাকলো এরপর জুহিকে কাপাঁ কাপাঁ গলায় বলে উঠলো।
– জুহি রিয়ান ভাইয়া এ এখানে এসেছিলো !
জুহি মাথা নাড়ালো যার মানে হ্যাঁ সে এসেছিলো।
নীলা আর দ্বিতীয়ত কথা বলল না জুহিকে চুপচাপ শুয়ে পড়তে বলল শুধু।
________________________________

পার্কে বসে বসে রুবা আর নদী মিলে ললিপপ খাচ্ছে আরে স্টোন,পেপার,সিজার খেলছে।
ক্ষণে রুবা জিতছে মার্কার দিয়ে নদীর মুখে দাগ দিচ্ছে কখনো আবার নদী জিতলে রুবার মুখে দাগ দিচ্ছে।
আর রুবা আর নদীর কান্ড দেখে আশেপাশের লোকজন সাথে বাচ্চারা হাসাহাসি করছে।
ইতিমধ্যে বাচ্চারা তাদের কাছে এসে তারাও খেলবে খেলবে বলছে।

– দেখ রুবা তোরে একদম পেত্নীর সরদারনীর মতো লাগছে ! পেত্নাও তোরে এই অবস্থায় দেখলে হার্টব্রেক করবে ! (হাসতে হাসতে বলল নদী)

রুবাও কম নাকি মজার খিল্লি উরিয়ে বলে উঠলো।
– তোরে কিসের মতো লাগছে আয়নাতে গিয়ে দেখ অবশ্য আয়নায়ও তোরে দেখে ভয় পাবে ! পুরো ই ডাইনী কুইনের মতো লাগছে ! মুছও আছে তো (হাসতে হাসতে বলল রুবা)

রুবার আর নদীর কান্ড দেখে ইতিমধ্যে আশেপাশের লোকেরা হাসতে হাসতে শেষ।

– রুবাকা বাচ্চা চুবা চল পার্কের সাইডে যাই ওখানে নাকি গেমস প্লে করার জিনিস আছে ! চল আমরাও খেলবো প্রতি গেমস দশটাকা করে একবার একবার সুযোগ ? চল আমরাও খেলবো(উৎসুক হয়ে বলল নদী)
রুবা ভাবলো ব্যাপারটা মন্দ না এখন তো ফ্রিই আছে।
রুবা কাধেঁর সাইড ব্যাগ থেকে এক্টা টিসু বের করে নদীকে দিলো।আর এক্টা টিসু দিয়ে নিজের মুখ মুছে নদীকে বলল ও ।

– নিজের মুখ মুছে নে নয়তো দারোয়ান তোরে ভেতরে ডুকতে দিবেনা ! দাড়োয়ান টা ও যা খচ্চর একদিন ডুকতে চাইছিলাম ডুকতে দেয়নাই ! এন্ট্রি ফিস এক শো টাকা সাথে গেমসও খেলতে হবে ১০ টাকা দিয়ে ভাব কত টাকা নস্ট হবে সেদিন আমার কাছে টাকা ছিলোনা দেখে ডুকতে পারিনি ! আজকে টাকা আছে

কথা মতো নদী আর রুবা গেমস প্লেতে ডুকে গেলো।
নদী ইচ্ছে মতো গেমস খেলছে আর পাগলের মতো প্রলাপ বকছে।
রুবা বিরক্ত হচ্ছে কিন্তু কিছু বলছে না নিজের মতো করে রান গেমস খেলছে।

আশেপাশের লোকজন নদীর দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে।

অন্যদিকে।

– স্যার আপনিকি এটা ঠিক করছেন ! ফাহয়াজ স্যারের সাথে আপনি এমনটা না করলে‌ ও পারতেন সামান্য এক্টা মেয়ের জন্য ! দুনিয়াতে কি মেয়ের অভাব পড়েছে ! তাছাড়া আপনি সব দিক দিয়েই পারফেক্ট ! (ইতস্তত বোধ করে বলল রিশান)

রিশানের কথা শুনে হাতে ওয়াইনের গ্লাস নিয়ে পিছনে ফিরলো রিয়ান । ভ্রু কুচঁকে ওয়াইনে র গ্লাসে এক চুমুক দিয়ে বলে উঠলো ।

– তুমি যাকে ভালোবাসবে তাকে কি ছেড়ে দিবে অবশ্য ই না ! তার জন্য যা করার তুমি করবে দরকার পড়লে তুলে নিয়ে আসবে বিয়ে করবে ব্যাস কুল ! এন্ড আমার আর জুহি র ব্যাপার টা তে তুমি‌ এন্ট্রি না নিলে ই ভালো হবে ! ব্যাপারটা আমার !(ভ্রু কুচঁকে)

রিশান মুখটাকে নিকষ কালো বানিয়ে মনে মনে বলে উঠলো ।

– আপনাকে বলেও লাভ নেই আমি জানি কারন গত কয়েক বছর আপ্নার সাথে থেকে যা বুঝলাম আপনি লোকটা কিন্তু খুব ঘাড়ঁত্যাড়া আর ডেন্জারেস ! মাঝে মাঝে আমিও ভাবি এক্টা মেয়ে র জন্য কেউ নিজের বেস্ট ফ্রেন্ডকে এভাবে মেরে ফেলবে ! আমি হলে কখনোই এমনটা করতাম না ! আপনার মধ্য যে মন ছিলো তা আপনিই নিজ হাতে নস্ট করে ফেলেছেন স্যার!
(মনে মনে বলল রিশান)

চলবে,,,

#Rubaita_Rimi(লেখিকা)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here