আমার হৃদবক্ষে শুধুই তুই পর্ব -১৩

#আমার_হৃদবক্ষে_শুধুই_তুই💖
| পর্ব-১৩ |

আজকে জুহিকে হসপিটাল থেকে ডির্স্চাজ করা হবে।জুহি সারাক্ষণ নিজেকর দোষী,একা মনে করছে।
তবে জুহি এটা বুঝছে না রিয়ানের তাকে পছন্দ হয়েছে কবে।আর রিয়ান জুহিকে দেখলোই বা কবে।
জুহি ভিষণ কনফিউজড । রিয়ানের বলা সব কথা গুলো জুহি কে খুব ভাবাচ্ছে ।
নীলা ও জুহি র সাথে আর এই কথা নিয়ে কোন আলাপ বা কথা বলেনি ।
হসপিটাল থেকে ফেরার পথে জুহি র খুব খারাপ লাগছিলো । তার জীবন থেকে সে তার আসল জিনিস টাই হাড়িয়ে ফেলেসে। জুহির বোধগম্য হচ্ছ এখন ব্যপারটা নিয়ে।

নীলা গাড়িতে জুহির পাশেই বসেছে।
– নীলা তোর কি হয়েছে ! তুই আমার সাথে আর কথা বলছিস না কেনো!তোর কি ফাহয়াজের কথা মনে পড়ছেনা?তার জন্য খারাপ লাগছেনা!(মন খারাপ করে বলল জুহি)
নীলা কিছুক্ষণ চুপ থেকে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলে উঠলো।

– না তা খারাপ লাগবে কেনো ! তোকে আমার কিছু বলার আছে জুহি বাড়িতে চল সব খুলে বলছি !(দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল নীলা)
জুহি কিছুই বলল না শুধু নীলার মুখের দিকে চেয়ে রইলো।
.
বাড়িতে।
নীলা জুহির রুমে গেলো দেখলো জুহি চুপ করে জানালার ধারে দাড়িয়ে বাহিরে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।
.
নীলা ‌পুরো রুমটাকে ভালো করে দেখলো ফাহয়াজের কোনও জিনিস নেই আশেপাশে ফাহয়াজের ছবি গুলোও ঢাকা দেওয়া ওড়না দিয়ে।
এটা দেখে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো নীলা মুচকি হাসলো জুহি র দিকে এগিয়ে গিয়ে জুহি র কাধেঁ হাত রাখলো জুহি নিস্প্রভ মুখে তার দিকে ফিরলো।
.
– নীলা আমার না জানি কেনো ফাহয়াজ ওনার জন্য খুব খারাপ লাগছে ! আমি কেনো ফাহয়াজকে বুঝিনি! কিন্তু তুই বিশ্বাস কর প্রথমে আমি ওনাকে চিনিনি উনি আমার সাথে যেইসব আচরণ করেছে সত্যিই ওনার প্রতি ঘৃণা,রাগ,ভয় জম্ম নিয়ে ছিলো কিন্তু ভালোবাসা টা ঢাকা পড়ে গিয়েছে যা ওনার শূণ্যতায় নিজেকে ধরা দিয়েছে ! আমি সত্যি ই কারো ভালোবাসা র যোগ্য নই আমার জন্য ওনার আজকে এই অবস্থা উনি আর বেচেঁ নেই ! (নীলাকে জরিয়ে কান্না করে বলল জুহি)
.
নীলা মুচকি হাসি দিলো ! এবং মনে মনে বলল
.
– তার‌ মানে আমার ভাইটাকে তুই ভালোবেসে ফেলে ছিস জুহি ! ভাইয়া কথা টা জানলে খুব খুশি হবে ।(মনে মনে)
.
নীলা জুহিকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে বলে উঠলো।
.
– জুহু তোকে এক্টা সত্যি কথা বলি জানিস তুই ভাব ছিস ফাহয়াজ ভাইয়া আর নেই মারা গেছে আসলে কথাটা মিথ্যা ফাহয়াজ ভাইয়ার কিছুই হয়নি ! কাল রাতে আমায় ফাহয়াজ ভাইয়া কল দিয়ে ছিলো আর সব বলে ছিলো
জানিস যখন ভাইয়ার কন্ঠ শুনে ছিলাম বিশ্বাস করতে পারিনি পরে আমার বিশ্বাস হয়েছে ওটা ভাইয়ার গলা ভাইয়ার কিছুই হয়নি ঠিক আছে ভাইয়া।আর রিয়ানের ব্যাপারে ভাইয়াকে সব কিছু বলে দিয়েছি ! (মুচকি হসে মিঠি কন্ঠে বলে উঠলো নীলা)
.
জুহি অবাক হয়ে নীলার মুখশ্রীর দিকে তাকালো।ফাহয়াজ সত্যিই বেচেঁ আছে। কথাটা জুহিকে ভাবাচ্ছে পরমুহূর্তেই ফাহয়াজ ঠিক আছে সেটা ভেবে ঠোঁটের কোণে মিস্টি হাসি প্রসারিত করলো।নীলার দিকে তাকিয়ে জুহি মুচকি হাসি প্রভা ভিত রেখে বলে উঠলো।
.
– উ উনি কোথায় ন নীলু আমি ফাহয়াজ ওনার সাথে দেখা করবো ! প্লিজ আমায় ওনার কাছে নিয়ে চল ! (হাসিময় ঠোঁটে উৎফুল্ল কন্ঠে)
.
নীলা মুখ কালো করে বলে উঠলো ।
.
– ভাইয়া বলেছ যতদিন না রিয়ানের এক্টা ব্যাবস্থা নিবে ততদিন পর্যন্ত আর আমাদের সাথে দেখা করবেনা ! ভাইয়া বলেছে আমাদের বাড়ি থেকে কোথায় না বেরুতে আর বের হলেও সিকিউর নিয়ে বের হতে ! আর বলেছে তোকে কোথায় একা না যেতে দিতে তোর ক্ষতি হতে পারে এ কথা ভেবে বলেছে ভাইয়া (গম্ভীর গলায়)
.
ফাহয়াজের সাথে দেখা করতে পারবেনা ভেবে জুহির খুব খারাপ লাগলো। তবুও ফাহয়াজ যে ঠিক মতো আছে তা ভেবে ই জুহি র আনন্দ লাগছে।
এক মাস অথবা দু মাস কিংবা পাঁচ ছয় মাস পর হলে ও অন্তত সে ফাহয়াজ কর এক নজর দেখতে পারবে।কথাটা ভেবেই আনন্দিত হচ্ছে জুহি।মুখে মিস্টি প্রশারিত করে নীলাকে জরিয়ে ধরলো।
.
– নীলা আমার যে কতটা আনন্দ হচ্ছে আমি তোকে বলে বোঝাতে পারবোনা ! আমি খুশি যে ফাহয়াজ ওনার কিছুই হয়নি উপরওয়ালার কাছে শুকরিয়া আদায় করছি যেনো সব সময় ফাহয়াজকে সাবধানে রাখে ( মনে মনে বলল জুহি )
.
অন্যদিকে ।
.
ফাহয়াজ তার সিক্রেট হাউজে এসেছে । এই হাউজ টা র ব্যাপারে কেউ জানেনা এমনকি ফাহয়াজের বাবা মা , নীলা ও জানে না এ বিষয়ে ।
ফাহয়াজ তার রকিং চেয়ে বসে চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ সংযত করছে। ছোট বেলা থেকে সে যাকে সব চেয়ে প্রিয় বন্ধুর আসনে বসিয়ে আসছে সেই তাকে পিঠ পিছে ছুড়ি বসাচ্ছে । ফাহয়াজ যথা যথ ভাবে নিজের রাগ সংযত করছে কিন্তু কমার বদলে তার রাগ আকাশ ছোঁয়া অবস্থা হচ্ছে । ফাহয়াজ রাগে তার পাশেই থাকা খাওয়ার টেবিলের জিনিস পত্র ছুড়ে মারলো ।
.
– যাকে নিজের সব চেয়ে প্রিয় ব্যাক্তি মেনে এসেছি সেই আমার সাথে এমন করবে ভাবতেও পারছিনা ! রিয়ান তুই কাজ টা ভালো করলি না আমার জুহি র দিকে নজর দিয়ে ছিস তুই তোর সাহসে র ওয়াও দিতে হচ্ছে ! কি ভেবে ছিস আমাকে সরিয়ে আমার জুহি কে তুই নিজের করে নিবি !(রাগে দাঁতে দাঁত চেপে বলল ফাহয়াজ)

– কাজটা তুই একদম ভালো কর লিনা রিয়ান এর শাস্তি তোকে পেতে হবে ! তুই ভুল পদক্ষেপ নিয়ে ফেলেছিস।(বাকাঁ হেসে বলল ফাহয়াজ)
.
. ___________________
.
সারা বাড়িময় দৌড়ে বেড়াচ্ছে রুবা আর নদী নদী আগে দৌড়াচ্ছে আর রুবা পিছনে।
রুবার হাতে জুসের গ্লাস যা সে বার বার নদীর দিকে ছুড়ে ফেলার চেস্টা করছে ।

– দেখ বোইন এক্টু আগে গোসল করসি এখন যদি এমন কিছু করস তাইলে তোরে ড্রেনের ময়লা পানিতে চুবামু!(সোফার পিছনে গিয়ে বলল নদী)

এদিকে রুবা জুসের গ্লাস নিয়ে হেসে হেসে বলে উঠলো ।

– তাইলে এক্টু আগে আমার মুখে এলোভেরার রস ফেললি কেনো তাও ফ্রীজের ঠান্ডা পানি দিয়ে গুলিয়ে ! ( হেসে হেসে বলল রুবা )
নদী কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলে উঠলো ।

– আরে ইয়ার এলোভেরা র রস তো মুখের জন্য ভালো আর তুই ও ঘুম থেকে উঠ ছিস না তাই এই রকম করলাম দোস্ত দেখ আমার ঘাট হইসে আর জীবনে ও তোর ঘুমে ব্যাঘাত ঘটামু না !
( কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলল নদী )

রুবা কিছু না বলে আড়চোড়ে একবার নদীর মুখের দিকে তাকিয়ে সয়তান্নী লুক দিলো।
এরপর সোফায় গিয়ে ধপ করে বসলো আর সামনে থাকা টেবিলের উপর জুসের গ্লাসটা রাখলো।
নদীও ভয়ে ভয়ে রুবার পাশে গিয়ে বসলো।

– আরে ইয়ার দেখনা কোন খচ্চর বারবার কলিংবেজ বাজাচ্ছে যা না গিয়ে দেখ কে এইরকম করতাছে!

রুবা ভ্রু কুচঁকালো সেদিকে জ্ঞ্যান না দিয়ে রুবা নক খুটঁতে লাগলো । নদী আবারো বলে উঠলো।
– আরে যা না দেখ কে বেল বাজিয়ে মাথা খেয়ে ফেলসে!

রুবা বিরক্ত আর রাগান্বিত হয়ে জুসের গ্লাস টা উঠিয়ে নিলো দরজায় যেই থাকবেনা কেনো মুখের উপর মেরে দিবে।
যেই ভাবা সেই কাজ দরজা খুলেই সামনে থাকা ব্যাক্তিটার মুখে জুসটা ছুড়ে মারলো রুবা।

চলবে,,,

#Rubaita_Rimi(লেখিকা)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here