#আমার_হৃদমাঝারে_তুমি_প্রিয়
#পর্বঃ৭
#Sohana_Akther
এই মেয়ে তুমি আমার গায়ে হাত দিলে কেনো , কি কুমতলব তোমার বলতো “। ভ্রু কুঁচকে সন্দেহ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিহান আমার দিকে সাথে তার বন্ধুগুলাও ।
কিছুক্ষণ আগে চিরকুটটি যখন পড়তে যাবো তখন প্রচন্ড বাতাসের কারণে চিরকুটটি উড়ে নিহানের শার্টের কলারে পিছন দিক দিয়ে আটকে ছিল ঐটা নেওয়ার জন্যই হাত দেয়ার ফলে ওনার কাধে স্পর্শ করে ফেলেছি তাই এই কথা বলেছে ওনি ।
” দেখেন আমার কোনো কুমতলব নেই , আপনার শার্টের কলারে আমার চিরকুট আটকে গিয়েছে সেটা নেয়ার জন্যই হাত দিয়েছি না বলে গায়ে হাত দেওয়ার জন্য সরি ” ।
” দেখি কি চিরকুট ” বলে নিহান আমার হাত থেকে চিরকুটটি নিয়ে গেল , নিয়ে পড়ার চেষ্টা করতে গেলে আমি ওনার থেকে চিরকুটটি নেয়ার চেষ্টা করি,
” এই দেখুন দিয়ে দেন বলছি এমন কেনো করছেন আপনি , কারো ব্যক্তিগত জিনিস দেখা অসভ্যতামি কিন্তু দিয়ে দেন এটা আমায় ” ।
” অসভ্যতামি তাই না এবার দেখো আসল অসভ্য কি ” এই বলে ওনি মেলে পড়তে যাবেন তখনি আমি তা নেয়ার জন্য সামনে হাত বাড়াতেই পায়ের সাথে পা বেধে ওনাকে নিয়েই মাটির উপর পরে গেলাম । ওনি মাটিতে আর আমি ঠিক ওনার উপরে । ওনি দুহাত দিয়ে আমার পিঠ ও কোমরে ধরে রেখেছেন । চারপাশে কোনো কিছু তেই হুশ নেই আমাদের একনাগাড়ে একে অপরের দিকেই তাকিয়ে আছি । হুশ ফিরলো রিজভী ভাইয়ার ডাকে ।
” এই তোমরা কি এভাবেই পরে থাকবে নাকি ওঠবে চারপাশে তাকিয়ে দেখ সবাই এইদিকেই তাকিয়ে আছে ” ।
রিজভী ভাইয়ার কথা শুনে আমি আর নিহান তাড়াতাড়িই ওঠে দাড়ালাম । আমি দাড়িয়ে আমার জামা কাপড় ঠিক করে নিহানের হাত থেকে আমার চিরকুটটি নিয়ে দৌড়ে চলে আসলাম ।
বাড়িতে এসে চুপিসারে রুমে ঢুকে বারান্দায় যেয়ে আরাম করে বসে চিরকুটটি খুললাম তাতে লেখা ছিল,
মায়াবিনী
তোমাকে রোজ এক পলক না দেখলে আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে , মনে হয় আমি এখনই মারা যাবো । তোমাকে দেখলেই যেনো আমার হৃৎস্পন্দন তীব্র গতিতে ছুটে চলে, এতোটা যে আমি নিজের হৃৎস্পন্দন নিজে শুনতে পাই ।
তোমাকে দেখলে যেনো আমার চোখের পলক ফেলতেই পারি না । ঐ একটা গান আছে না
পরেনা চোখের পলক
কি তোমার রূপের ঝলক
ঠিক তেমনটাই । তোমাকে প্রান ভরে দেখার পরও যেনো তোমায় দেখার তৃষ্ণা কাটে না । তোমাকে একবার না দেখলে আমার বুকটা খা খা করে । এই শুকনো মরুভূমিতে পানি হয়ে আসা হলো তোমার একটি ঝলক ।
ইতি তোমার অচেনা কেউ
লেখাগুলো পড়ে আমার শরীরের সমস্ত পশম দাড়িয়ে গেছে , হৃৎস্পন্দন তীব্র গতিতে ছুটে যাচ্ছে । এই কি হচ্ছে আমার সাথে । হঠাৎ হচকচিয়ে গেলাম মীরার ডাকে ,
” এই নিরাপু কি করো তুমি এখানে একা একা বসে হুম তোমাকে আমি পুরো বাড়িতে খুঁজে বেড়াচ্ছি ” ।
” কই কিছু করছি না তো , এখানে এমনিতেই বসে আছি বারান্দায় খুব বাতাস দেখ ” এই বলে একটু হাসার চেষ্টা করলাম ।
” আচ্ছা যাই হোক শুনো কাল সকালে আমরা চট্টগ্রাম যাবো পরশুই ভাইয়ার গায়ের হলুদ ভুলে গেলে নাকি ”
” এই রে দেখ আমি একদম ভুলে গেলাম, চল এখনি প্যাকিং করে ফেলি সব , না না থাক রাতে গল্প করতে করতে করবো ।
রাতে আমি আর মীরা মিলে গল্প করতে করতে সব প্যাকিং সেরে নিলাম, মোবাইল বন্ধ করে চার্জে লাগিয়ে শুয়ে পরলাম । সকাল আটটায় ট্রেন আমাদের । ঢাকা টু চট্টগ্রাম অনেক বড়ো রাস্তার সফর নিশ্চিত করবো আমরা ।
সকালে মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙলো । ভুলেই গেলাম যে সকালে আমাদের ট্রেন ধরতে হবে । মা তো পুরো বাড়ি মাথায় তুলে ফেলেছে, সবাই রেডি শুধু আমি ছাড়াই ।
” এই তুই ওঠবি কিনা বল নাকি তোকে ছাড়াই আমরা বড়ো আপার বাসায় চলে যাবো ” ।
” এই নাহহ মা কি বলো আমি এখনি দু মিনিটেই রেডি হয়ে আসছি তোমরা একটু অপেক্ষা করো আমার আদরের আম্মু ” । এই বলেই আমি জলদি ফ্রেশ হয়ে একটি লাল রঙের থ্রি পিস পরে বের হয়ে এলাম ” । হলে যেয়ে সমানে চিল্লাতে লাগলাম ,
” এই কোথায় তোমরা এতক্ষন আমার জন্য দেরি হচ্ছিল এখন নিজেরাই দেরি করছে হুহহ ” এই বলে সোফায় বসে পরলাম । কয়েক মিনিট পর মা এসে মাথায় থাপ্পর দিয়ে বললো,
” কেউ দেরি করেনি সবাই গাড়িতে অপেক্ষা করছে আপনার যান যেয়ে উদ্ধার করেন সবাই কে , আমিও কিছু নেয়ার জন্যই ঘরে এলাম ” ।
আমি দ্রুত যেয়ে গাড়িতে ওঠলাম, আমার পাশেই মীরা বসেছে ,
“কি নিরাপু এতো লেইট কেনো করলে তুমি, রাগে ইচ্ছে করছিল তোমায় ফেলে চলে যাই কিন্তু তোমায় কি আমি ফেলে যেতে পারি বলো ” ।
” জি না আপনি তো আমায় ছেড়ে কোথাও যেতে পারেন না আমার ছোট বাবু বলে কথা ” বলে আমরা সবাই জোরে হাসতে লাগলাম বেচারি মুখ ফুলিয়ে বসে আছে । মা আসার পর আমরা রেল স্টেশনে রওনা দিলাম । স্টেশনে পৌঁছে আমরা সব ব্যাগ ঠিক করে নিয়ে আমাদের বুক করা কেবিনে গিয়ে বসলাম । আমি জানালার পাশে গিয়ে বসে পরলাম । প্রকৃতি দেখতে দেখতে ভ্রমণ করার মজাই আলাদা । এক অদ্ভুত আনন্দ খুঁজে পাই এতে ।
চলবে.