আমার হৃদমাঝারে তুমি প্রিয় পর্ব ৬

#আমার_হৃদমাঝারে_তুমি_প্রিয়
#পর্বঃ৬
#Sohana_Akther

প্রিয়তমা

তুমি কি জানো রাগ করলে তোমায় কতোটা সুন্দর লাগে , কেউ কি কখনো বলেছে তোমাকে ।
না থাক কারো বলার প্রয়োজন নেই আমার থেকেই না হয় এই কথাটা শুনো । রাগ করলে যখন তোমার ঠোঁট দুটি কাপঁতে থাকে , মায়াবী চোখে পিটপিট করে তাকাও তখন তোমায় দেখতে যে এতোটা আবেদনময়ী লাগে তা তোমায় বলে বুঝাতে পারবো না ইসস একদম বুকের বা পাশে যেয়ে লাগে ।

যখন রেগে কথা বলো তখন তোমার নাক ও গাল টমেটোর মতো লাল হয়ে যায় তখন ইচ্ছে করে একদম খে….. না থাক নাই বলি বললে তুমি লজ্জা পাবে অনেক আর তোমার ঐ লজ্জামাখা মুখ আমি দেখতে পাবো না তা তো হতে পারে না । তাই এখন আর আমার কথাটা সম্পূর্ণ করলাম না । যখন তোমার সম্মুখীন হবো তখন না হয় বলবো । আর আজ বেলী ফুলের মালা দুটি দিয়েছি কারণ ঐদিনের টা তুমি ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলে থাক ঐদিনের কথা আর নাই বলি , ভালো থেকো প্রিয় ।

ইতি তোমার অচেনা কেউ

আমার হাত দেকে চিরকুট নিয়ে প্রিয়া এতক্ষন ধরে তার ভিতরের থাকা লেখা আমায় পড়ে শুনাচ্ছিল। এগুলো শুনে আমি একদম কাপা কাপি শুরু করে দিয়েছি । থরথর করে আমার হাত কাপছে , গলা শুকিয়ে একদম কাঠ হয়ে আছে । হাতে থাকা বেলী ফুল গুলোও পরে গেল । পাশ থেকে প্রিয়ার কথা শুনতে পেলাম ,

” এই ছেলে তো পুরাই মাজনু নিরা , বেশিদিন দূরে নেই তুই ওর লেয়লা হতে ” এই বলেই কিটকিটিয়ে হেসে ওঠলো দুজনেই ।

আমি ওদের কথায় কোনো পাত্তা দিলাম না , আমি তো কিছু ভেবেই পাচ্ছি না । আজ পর্যন্ত কেউ আমাকে এতোটা গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করেনি , গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করার জন্য এতোটা কাছেও কেউ আসেনি……কথাটা ভাবতেই আমার নিহানের ঐদিনের করা কান্ডটার কথা মনে পরলো । আর ভাবতে পারলাম না আমার চিন্তাশক্তি একদম শূন্য হয়ে গেল । নিহান ! নিহান এই চিরকুট, বেলী ফুল পাঠায় ।

তার কিছুক্ষণ পরেই ভাবলাম নাহ নিহান কিছুই তে হতে পারে না । ঐ বদরাগী, অহংকারী,অসভ্য
লোক কখনোই এতো টা রোমান্টিক হতে পারবে না । পুরো ভার্সিটির মেয়েরা যার পিছনে পাগল সে কিনা আমার পিছনে পাগল এই হতেই পারে না । আমার পাশ থেকে রিয়া ও প্রিয়া কখন থেকে যে বকবক করে যাচ্ছে সে দিকে আমার খেয়াল নেই । রিয়ার ধাক্কায় ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে তার দিকে ফিরে তাকালাম ।

” এই নিরা কোথায় হারিয়ে গেলি আমরা কখন থেকে বকবক করেই যাচ্ছি , তোর কোনো খবর নেই কি হলো তোর ” এই বলে প্রশ্নাতীত চোখে তাকালো আমার দিকে । আমি আমতা আমতা করে বললাম,

” নাহ কোথাও হারিয়ে যাইনি , আর সেই কখন থেকে তোরা কি শুরু করেছিস বলতো । বলেই ওদেরকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দৌড়ে চলে আসলাম । দৌড়ে আসার সময় কার সাথে যেনো ধাক্কা খেলাম পিছু ফিরে আর তাকাইনি কিন্তু আওয়াজ শুনে বুঝতে পারলাম এটা নিহানই ছিল ।

আমার সমস্ত শরীর ঘেমে নেয়ে একদম একাকার হয়ে আছে । বাড়িতে যেয়েই গোসল করতে ওয়াশরুমে চলে গেলাম । শাওয়ারের নিচে দাড়িয়ে আজকের এই নীল চিরকুটার কথাই শুধু মনে পরছে । নাহ আর ভাবতে পারবো না এতো ভাবতে গেলে খুব শীঘ্রই আমার জন্য পাবনাতে একটা সিট বুক করতে হবে । নিজের কথা শুনে নিজেই হাসতে লাগলাম ।

গোসল সেরে টাওয়াল দিয়ে চুলগুলো মুছে ছেড়ে দিলাম । কোমরের অনেক নিচ পর্যন্ত চুল আমার। মাঝে মাঝে নিজের চুল দেখে নিজেই ক্রাশ খাই । কি পাগলামিই না তাই না হিহিহি ।

এই চুল নিয়েও আমার অনেক স্মৃতি জুড়ে আছে। ছোট বেলা থেকেই আমার চুল অনেক বড়ো ছিল। একবার আমার ফুফাতো ভাই দুষ্টুমি করে খেলার ছলে আমার এক বেনুনি কেটে দিয়েছিল তখন আমার সেই কি কান্না । কেউই আমার কান্না থামাতে পারে নি , পুরো একদিন ধরে আমি নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিয়ে কান্নাকাটির কাজ জারি রেখেছি । এর পরের দিনই ভাইয়া কে বেল মাথা দেখছি আমরা , কে যেনো ঘুমের মধ্যে ভাইয়ার মাথা একদম নেড়া করে দিয়েছে । কি যে খুশি হয়েছিলাম তখন কান্না থামিয়ে ভাইয়ার পিছু পিছু ঘুরে তাকে বেলু বলে ক্ষেপানো শুরু করে দিলাম । ঐদিন বিকালে যখন বাগানে আমি একা খেলছিলাম তখন ফুফির দেবরের ছেলে মানে আমার কাজিনের কাজিন সে এসে আমার পিছনে দাড়িয়ে বললো ,

” এই যে পিচ্চি পাখি কিহহ এবার খুশি তো , তোমার খুশির জন্যই আমি ফারানের মাথা নেড়া করে দিলাম ” ।

আমি তখন অতো সতো না বুঝে খুশিতে আত্মহারা হয়ে ভাইয়া কে জরিয়ে ধরে বললাম থেংকিউ ভাইয়া আমাকে এতো গুলা খুশি দেয়ার জন্য । কি পাগলই না ছিলাম তখন , ঐ ভাইয়াটার কথা অবশ্য এতোটা মনে নেই তার নাম ও ভুলে গেছি শুধু আমার এই চুলের কাহিনীর জন্য তার কথা এখনো মনে আছে । দরজা খুলার শব্দে আমার চিন্তার সমাপ্তি ঘটলো । তাকিয়ে দেখলাম আমার ফুফাতো বোন মীরা এসেছে আমাদের বাড়িতে । এসেই আমাকে ঝাপটে ধরে বললো ,

” কেমন আছো নিরাপু , জানো তোমাকে কতোটা মিস করেছি আমি । তুমি তো যাওইনা আমাদের বাড়িতে তাই আমিই চলে আসলাম । তুমি তো আমাকে একটু মিস করো না , ভালোবাসো না ” ।
এই বলেই ন্যাকা কান্না শুরু করে দিল ।

” এই থাম থাম এখনই কি এতোদিনের জমানো সব কথা বলে দিবি নাকি , কিছু তো পরের জন্যও বাকি রাখ ” ।

আমার কথা শুনে মীরা হাসতে লাগলো সাথে আমিও যোগ দিলাম । বয়সে আমার তিন বছরের ছোট মীরা এবার এস এস সি দিবে । এই পিচ্চিটার সাথে আমার বেশ সখ্যতাই আছে । নিরাপু বলতে পাগল এই মেয়ে কিছু দিন পর পরেই এখানে চলে আসে ।

” আরে নিরাপু তোমাকে তো একটি সুখবর দেয়া হয়নি ” ।

” কি খবর ” ?

” ফারান ভাইয়ার বিয়ে ঠিক হয়েছে , হয়েছে বললেও ভুল হবে নিজের বিয়ে নিজে ঠিক করেছে প্রেমের বিয়ে বলে কথা ” বলে আবারও খিলখিল করে হাসতে লাগলো ।

” কি সত্যি ভাইয়ার বিয়ে ! আচ্ছা কবে বিয়ে বল কয়েক বছর পর কোনো কাজিনের বিয়ে এটেন্ড করবো । ইসস আমার তো এখনি নাচতে ইচ্ছে করছে , কতো মজা হবে বিয়েতে তাই না সব কাজিনরা আমরা এক হবো ” ।

” হ্যা নিরাপু আসলেই অনেক আনন্দ হবে , পনেরো দিন পরেই ভাইয়ার বিয়ের দিন ঠিক করেছে । এই কয়দিন আমি তোমাদের এখানে বেড়াবো তারপর তোমায় আমার সাথে করে নিয়ে যাবো চট্টগ্রাম ” ।

” আচ্ছা এখন নিচে খেতে চল তোর কথা পরেও শুনতে পারবো , নিচে ফুফা ফুফি আছে নিশ্চয়ই” ?

” হ্যা তারাও এসেছে নাহলে কি আমি এতোদুর একা আসি নাকি তুমিও না বোকার মতো প্রশ্ন করো ” ।

” আচ্ছা বাচ্চু আমি বোকার মতো কথা বলি হাহ”।

এই বলে তার কান টান দিলাম , আমরা কথা বলতে বলতেই হলরুমে চলে আসলাম । ফুফা ফুফিকে সালাম দিয়ে খেয়ে দেয়ে আমরা আবার রুমে চলে আসলাম ।

রাতে আমি আর মীরা মিলে আড্ডা দিচ্ছিলাম তখন ভোঁ ভোঁ করে আমার বাইব্রেশনে থাকা মোবাইল কেপে কেপে ওঠলো । মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলাম সেই নাম্বার থেকে কল এসেছে । আজ কল রিসিভ করে মীরা কানে দিয়ে রেখে দিয়েছি । কয়েক সেকেন্ড পরেই কল কেটে দিল অপর পাশ থেকে । মীরা কিছুই বুঝতে পারলো না কি হচ্ছে,

” আপি কে ফোন করেছিল আর আমার কানে কেনো দিলে তুমি ” ।

” এখন না সময় হয়ে নোক তারপর বলবো একদিন, এখন শুয়ে পর জলদি অনেক রাত হয়েছে ” ।

ঐদিনের পর থেকে বেলী ফুলের মালার সাথে নানান রঙের একটি করে চিরকুটও প্রতিদিন দেওয়া শুরু করেছে সেই অচেনা কেউ । এখনো এই রহস্যই ভেদ করতে পারলাম না কে এগুলো করছে তারওপর ভার্সিটির ক্রাশ নিহান চৌধুরী তো আছেই । কোন জনমের শত্রু তার সাথে আমার কি জানে , আমাকে অপমান করা আমাকে জ্বালানো যেনো তার নিত্যদিনের কাজ হয়ে গিয়েছে । আমি ও কম না ইটের জবাব পাথর দিয়ে দেই কিন্তু আফসোসের বিষয় পাথর গুলা শেষমেশ আমার মাথায় এসেই পরে । এই ছেলের সাথে পারা যায় না মারাত্মক একদম । তার রুপ যেমন বুদ্ধি ও তেমন ।

আজ আবার ছেলেটি বেলী ফুলের মালার সাথে একটি হলুদ রঙের চিরকুট দিয়ে গেল । শত চেষ্টা করেও এই ছেলের থেকে কিছু বের করতে পারলাম না তার উত্তর জানি না তেই আটকে আছে । চিরকুটটা খুলে পড়তে যাবো ঠিক তখনি…..

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here