আমার হৃদমাঝারে তুমি প্রিয় পর্ব ৮

#আমার_হৃদমাঝারে_তুমি_প্রিয়
#পর্বঃ৮
#Sohana_Akther
চট্টগ্রাম রেল স্টেশন পৌঁছে মীরার ডাকে ঘুম ভাঙলো । কখন যে চোখ লেগে গেল তা বুঝতে পারলাম না । এই এক বাজে অভ্যাস আমার ট্রেন ছাড়ার পর বাহিরের প্রকৃতি দেখতে দেখতে কখন যে ঘুমিয়ে যাই তার খেয়াল থাকে না । ট্রেন থেকে নেমে দেখলাম ফুফা আর ফারান ভাইয়া আমাদের নিতে এসেছে । আজ দুই বছর পর ভাইয়ার সাথে দেখা হলো । জবের কারনে ভাইয়া এই দুই বছরে আমাদের এখানে আসতে পারেনি আর আমি এই দুই বছরে ফুফির বাসায় আসিনি।

ফারান ভাইয়ার কাছে যেয়ে ওনাকে সালাম দিয়ে ভালো জিজ্ঞাসা করলাম ,

” আসলামুআলাইকুম ভাইয়া কেমন আছো তুমি” ?

” ওয়ালাইকুম আসসালাম, আলহামদুলিল্লাহ । তুই কেমন আছিস পুচকি ” ।

” আলহামদুলিল্লাহ, দেখো ভাইয়া আমি কিন্তু আর ছোট নেই তুমি পুচকি বলে ডাকবে না তো “।

” তুই যতই বড় হস না কেনো থাকবি আমার পুচকি বোনই , এখন বেশি কথা না বলে চল বাসায় মা তোদের অপেক্ষা করছে ” ।

” আচ্ছা চলো ” বলে আমরা ফুফির বাসার দিকে রওনা দিলাম । বাসায় পৌছাতে আমাদের এক ঘন্টার মতো সময় লাগলো । ফুফিদের বাড়ি আমাদের বাড়ি থেকে অনেক বড়ো । বাড়ির সামনে অনেক খোলা মেলা জায়গা । ফারান ভাইয়ারা এক ভাই এক বোনই । মাঝে মাঝে আমার খারাপ লাগতো আমার কেনো কোনো ভাই বোন নেই , যাক যার ভাগ্যে যা আছে ।
কলিং বেল বাজানোর পর ফুফি এসে দরজা খুললো ।

” কিরে তোদের আসতে এতো সময় লাগলো ” ।

” মা সাধারণত আসতে এতটাই সময় লাগে তুমি একটু বেশি ভাবো ” ।

” হুম এখন আমিই বেশি ভাবি , যাহ তোরা সবাই ফ্রেশ হয়ে নে । আমি খাবার রেডি করছি ।

ফ্রেশ হয়ে সবাই খাবার সেরে যার যার রুমে রেস্ট
করতে চলে গেলাম । মীরার মুখে শুনলাম আজ বিকেলে নাকি তার চাচা আসবে পরিবার নিয়ে, বিজনেসের কারনে আগে আসতে পারে নি ।

বিকেলে ছাদে বসে সবাই গল্পগুজব করছিলাম সাথে ফুচকা পার্টি, ফারান ভাইয়া আমার জন্য নিয়ে এসেছে । মীরার চাচা , চাচী আসলেও তার চাচাতো ভাই আসে নি সে নাকি কালকে হলুদের আগে আসবে । আড্ডা দেয়ার পর সবাই ছাদ থেকে চলে গেলেও আমি রয়ে গেলাম । এই পরন্তু বিকেলে সূর্যের আলো গায়ে মাখাতে এক আলাদাই সুখ অনুভব হয় ।

রাতে ফোনের ভোঁ ভোঁ শব্দে ঘুম ভেঙে গেল । ফোন বালিশের নিচে রেখে ঘুমিয়ে পরেছি । ফোন হাতে নিয়ে দেখলাম সেই নাম্বার থেকে কল এসেছে । কোনো রকম চোখ মেলে কলটা রিসিভ করে কানে নিয়ে ঘুমঘুম কন্ঠে বললাম ,

” হ্যালো, কি ব্যাপার বলুন তো প্রতিদিন কথা না বললে কল কেনো দেন । ফোনে বেশি টাকা হয়ে গেলে আমাকে কিছু রিচার্জ করে দেন শুধু শুধু টাকা নষ্ট করে কি লাভ ” ।

আমি একাধারে বকবক করেই যাচ্ছি কিন্তু অপর পাশ থেকে কোনো সাড়া শব্দ নেই শুধু নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পারছি । কয়েক সেকেন্ড পর পরেই এক গভীর দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে । কয়েক মিনিট নিরবতার পর অপর পাশ থেকে কবি রুদ্র গোস্বামীর একটি কবিতা আবৃত্তি করতে লাগলো,

অসময় কেটে গেলে
…… রুদ্র গোস্বামী।

এই অসময় কেটে গেলে আর কি আমাদের দেখা হতে পারে?
বলো হে প্রিয় মুখ, বলো হে প্রিয় নাম, আর কি দেখা হতে পারে?
বলো হে শহর, বলো হে নিয়নের আলো,
বলো হে আমার আরও যত আছ দেখার আকুতি
আর কি আমাদের দেখা হতে পারে?

দেখাতো হয়নি আমার, যেটুকু সুখ তুমি কাছাকাছি আছ।
বলো হে ফুল, বলো হে পাখির শিস আর কি আমাদের দেখা হতে পারে?
বলো হে ঘুম, বলো হে জেগে থাকা,
বলো হে আমার আরও যত আছ না বলা কথার আকুতি
আর কি আমাদের দেখা হতে পারে?

কাছেতো পাইনি তোমাকেও আরও যে তুমি কাছে রাখতে পারো।
বলো হে প্রেম, বলো হে ভালোথাকা, আর কি আমাদের দেখা হতে পারে?
বলো হে বিষাদ, বলো হে অভিমান,
বলো হে আমার আরও যত আছ না জানা অনুভূতি
আর কি আমাদের দেখা হতে পারে?

বলো হে বুকের ঢেউ, বলো হে দুটি চোখে অশান্ত চেয়ে থাকা,
আর কি আমাদের দেখা হতে পারে?

এই কবিতাটি আগে কখনো না শুনিনি কিন্তু আজ তার মুখে শুনে এক অজানা ভালো লাগা গ্রাস করতে লাগলো । তার কবিতা আবৃত্তির বিপরীতে আমি কিছু বলিনি । চুপ করে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে পরলাম বুঝতে পারলাম না । সেই ঘুম ভাঙলো সকাল নয় টায় মীরার ডাকে ।

” এই নিরাপু ওঠো দেখো কয়টা বাজে, ওঠে পরো জলদি আজ তোমার পছন্দের ভুনা খিচুড়ি আর ইলিশ ভাজা ” ।

ভুনা খিচুড়ি আর ইলিশ ভাজার কথা শুনে আর নিজেকে আটকাতে পারলাম না, খুব পছন্দের খাবার এটা শুনেই জ্বিবে পানি এসে পরলো । যথা সম্ভব দ্রুত ফ্লেশ হয়ে নিচে খেতে গেলাম । নিচে যেয়ে এক আলাদাই দৃশ্য দেখতে পেলাম । পুরো বাড়িতে মানুষের আনাগোনা , ফারান ভাইয়ার সব কাজিনরা এসে পরেছে অনেক আত্মীয়-স্বজন ও । একদল এই পাশে আড্ডা দিচ্ছে তো আরেক দর আরেক পাশে । বাচ্চারা চেয়ার নিয়ে খেলছে , কাজিনরা ডান্সের প্রেকটিস করছে আর বড়রা সোফায় বসে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলছে , বিয়ে বাড়িতে নানান কাজের শেষ নেই ।

আমি যেয়ে দ্রুত নাস্তা সেরে সকল কাজিনদের সাথে জয়েন করলাম । তাদের মধ্যে ফারান ভাইয়ার খালাতো ভাই রুজেন ভাইয়া আমাকে নাচার জন্য নিয়ে গেয়ে বললো ,

” কি নিরা সেই কখন থেকে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি আমরা আর তুমি এই মাত্র এলে , দিছ ইজ নট ফের “।

” আসলে ভাইয়া ঘুম থেকে জলদি ওঠতে কষ্ট হয় আমার ”

” আচ্ছা সমস্যা নেই চলো আমাদের সাথে আজ সন্ধ্যার প্রোগ্রামের জন্য ডান্স প্রেকটিস করো ” ।

” নাহ ভাইয়া , এই ডান্স টান্স আমার ধারা হবে না আপনারা চালিয়ে যান ” বলে তাদের কাউকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে উপরে চলে আসলাম ।

সন্ধ্যায় চারদিকে নানান রঙের আলোকসজ্জায় ঝিকঝিক করছে । হলুদের প্রোগ্রাম ছাদে করা হয়েছে, বাচ্চারা গান লাগিয়ে এখনি নাচা শুরু করে দিয়েছে । মীরা রেডি হয়ে সারা বাড়ি ঘুরঘুর করছে । তার আর মায়ের জন্য আমার জলদি রেডি হতে হলো । রয়েল ব্লূ কালারের লেহেংঙা পরেছি , চুলে খোপা বেধে বেলী ফুলের মালা বেধে নিলাম , হাতেও চুড়ির জায়গায বেলী ফুলের মালা পেছিয়ে রেখছি । বেশি সাজা কখনোই আমার পছন্দের ছিল না তাই নরমালই একটু সাজলাম নাহলে মীরির বকবকে মাথা শেষ হয়ে যেতো ।

যখন ছাদে ওঠতে যাবো তখন ফুফি হাতে ফারান ভাইয়ার পাঞ্জাবী ধরিয়ে দিয়ে বললো এগুলা ভাইয়ার রুমে ভাইয়া কে দিয়ে আসতে । আমি ও তা নিয়ে ভাইয়ার রুমে গেলাম কিন্তু যেয়ে কাউকে দেখতে পেলাম না । বারান্দার দিকে দেখতে যাবো তখন খট করে বাথরুমের দরজা খুলার শব্দ শুনলাম, ভাবলাম হয়তো ভাইয়া তাই পিছনে ফিরে ভাইয়া ফুফি তোমার জন্য বলে তাকিয়েই এক চিৎকার দিয়ে হাত থেকে পাঞ্জাবী ফেলে দিলাম । আমার সামনে টাওয়াল পরে যে দাড়িয়ে আছে তাকে দেখে আমার হার্ট এট্যাক হওয়া উপক্রম । নিহান ! সে এখানে কি করছে ।

আমার চিৎকার শুনে নিহান এগিয়ে এসে আমাকে দেয়ালের সাথে চেপে একহাত দিয়ে আমার মুখ চেপে ধরেছে । সে এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়েই আছে , এইদিকে মুখ চেপে ধরার কারণে আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে । আমার নড়াচড়া দেখে মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিহান আমার চোখে চোখ রেখে বললো ,

” এতো চিৎকার করছো কেন তুমি এখন তোমাকে আমার সাথে কেউ এভাবে দেখলে কি ভাববে” ?

আমি কিছু বলতে যাবো তখনি বাহির থেকে ফুফির শব্দ শুনা গেল ওনি এদিকেই আসছে আমি নিহানের হাত থেকে ছুটে চলে আসবো ঠিক তখনি ….

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here