আমার হৃদমাঝারে তুমি প্রিয় পর্ব ৯

#আমার_হৃদমাঝারে_তুমি_প্রিয়
#পর্বঃ৯
#Sohana_Akther
নিহানের হাত থেকে ছুটে চলে আসার চেষ্টা করতেই সে আবার আমাকে টেনে একদম তার বুকের সাথে মিশিয়ে ফেললো । ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে, ফুফি বাহিরে বকবক করছে আমি এখনো ভাইয়া কে পাঞ্জাবী দিয়ে বাহিরে যাই নি । খট করে দরজার খোলার শব্দ হতেই আমি ভয়ে নিহানের বুকে সেধে গেলাম । নিহান তার একহাত দিয়ে আমায় আগলে রেখেছে , দরজাটা যখনি পুরো খুলতে যাবে তখন নিহান উচ্চ স্বরে বললো ,

” বড় মা আমি নিহান ভিতরে রেডি হচ্ছি , কিছু কাজ থাকলে বলতে পারেন ” ।

” ওহহ নিহান তুমি বাবা , আচ্ছা নিরা কি এদিকে এসেছিল ” ?

” না বড় মা কেউ তো আসে নি আর এই নিরা কে বড় মা ” ।

” কি বলিস তুই চিনস না নিরা কে, নিরা আমার ভাইয়ের মেয়ে ” ।

” আচ্ছা ঠিক আছে এখন চিনলাম, এখন তুমি বাকি কাজ দেখো আমি রেডি হয়ে আসছি ” ।

এতক্ষণ তাদের কথা চোখ বন্ধ করেই শুনছি, ফুফি চলে যাওয়ার পর তার বুক থেকে মাথা ওঠিয়ে চোখ মেলে নিহানের দিকে তাকালাম । অনেকটা বিস্ময় নিয়ে থাকে প্রশ্ন করলাম,

” আপনি এখানে কি করছেন আর আপনি ফুফিকে বড় মা বলে কেন ডাকলেন ” ?

” তোমার প্রথম প্রশ্নের উত্তর আমি এখানে এইজন্য যে এটা আমার বাড়ি এবং আজ আমার ভাইয়ের বিয়ে , আর তোমার ফুফিকে বড় মা বলে ডাকি কারণ ওনি আমার বড় চাচী হন তাই আশা করি সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গিয়েছ ” ।

আমি তার জবাব শুনে একদম বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম । তার মানে ওনিই সেই ছেলে যে ফারান ভাইয়ার মাথা একদম নেড়া করে দিয়েছিল । নিহানের কি ঐসব কথা মনে আছে এখনো । এসব ভাবতে ভাবতেই রুম থেকে বের হয়ে আসলাম ।

ছাদে এসে মীরার সাথে এক কোনায় বসে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে লাগলাম , হলুদ কখন শুরু হবে , কাল বরযাত্রী কখন বের হবে এসব নিয়েই । কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রোগ্রাম শুরু হয়ে গেল । ফারান ভাইয়ার বন্ধুরা অনেকেই এসেছে, এরমধ্যে একজন তানজির নাম সে একটু বেশিই ভাব করার চেষ্টা করছে । আমিও কোনো রকম কথা বলে তার থেকে দুরে থাকার চেষ্টা করছি ।একে অনেকের হলুদ দেয়া হয়ে গেল, আমি আর মীরা একসাথে হলুদ দেয়ার জন্য ওঠলাম । হলুদ দেয়ার সময় ছাদের দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলাম নিহান এগিয়ে আসছে । নিহান ব্লু কালারের পাঞ্জাবী পরে এসেছে । এই প্রথম নিহানকে দেখে বুকে ধুকপুকানি বেড়ে গেল। তাকে এতটাই সুন্দর লাগছিল যে আসে পাশে অনেক মেয়েই তার দিকে তাকিয়ে আছে ।

সবাই এভাবে তাকিয়ে আছে যেনো মনে হয় আগে কখনো কোনো ছেলে দেখেনি যত্তসব লুচ্চি মেয়ে । এক অদ্ভুত কারণে এসব দেখে মন খারাপ হয়ে গেল , কোনো রকম হলুদ দিয়ে স্টেজ থেকে নেমে আসলাম । মীরা সেই কখন থেকে প্রশ্ন করেই যাচ্ছে কি হয়েছে আমার মুড অফ কেনো । এখন আমি কি করে থাকে বলি কেনো মুড অফ , কারণটা আমি নিজেই জানি না । সবাই হলুদ দেয়া শেষ হওয়ার পর ডান্স প্রোগ্রাম শুরু হলো ।

কয়েক টা পারফরমেন্স শেষ হওয়ার পর হঠাৎ করে মীরা এনাওসমেন্ট করলো আমি আর রুজেন ভাইয়া একসাথে ডান্স করবো । অনেক না করেও কিছু হলো , ডান্সের জন্য রাজি হতে হলো ।

স্টেজে গিয়ে আমি আর রুজেন ভাইয়া ডান্স শুরু করলাম ,

Mere haath me tera haat ho
Sari Jannate meri sath ho
Tu jho pas ho pher keya ahh jahahh
Teri peyar meh ho jao fanna…

( বাকি গান নিজ দায়িত্বে শুনে নিবেন, অনেক সুন্দর গান একটি )

আমরা অনেকটা ক্লোজ হয়েই ডান্স করছিলাম আমরা , ডান্স করতে করতে নিহানের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দেখলাম সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে । তার তাকানো দেখে একটু সরে আসলাম রুজেন ভাইয়া থেকে, আবার ডান্সে মনযোগ দিলাম । আচমকা নিহান এসে নিহান এসে আমাকে রুজেন ভাইয়া থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে নিজে ডান্স করতে লাগলেন । সবাই তার এমন ব্যবহারে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ।

নিহান আমাকে আলতো করে জরিয়ে ধরে ঘুরে ঘুরে ডান্স করতে লাগলো । প্রথমে অবাক হলেও পরে ব্যপারটা বুঝতে পারলাম । আমার লেহেংঙার উপরের পার্টের চেইন অনেকটা খুলে গেছে আর নিহান তা ঠিক করার জন্যই এমনটা করলো । গান শেষ হওয়ার পর নিহান ছাদ থেকে নিচে ঘরে চলে গেল । সবাই তার এমন অদ্ভুত কাজের কারণ না জানলেও আমি ঠিকি জানি । আজ তার জন্য আমার মনে সম্মানের সৃষ্টি হলো। আমিও তার পিছু পিছু নিচে চলে আসলাম ।

নিচে এসে নিহানকে খুঁজতে খুঁজতে একটি রুমের কাছে এসে কিছু ভাংচুর এর শব্দ শুনে ভিতরে ঢুকে দেখলাম নিহান রুমের জিনিসপত্র ভাংচুর করছে । কাচঁ লেগে তার ডান হাত কেটে আছে ঐদিকে তার কোনো খবর নেই । দৌড়ে গিয়ে তাকে আটকাবার চেষ্টা করতে লাগলাম ,

” নিহান করছেন টাকি আপনি , এভাবে ভাংচুর করছেন কেনো দেখেন আপনার হাত কেটে রক্ত পরছে সেদিকে খেয়াল আছে আপনার ” বলে রুমে ফার্স্ট এইড বক্স খুঁজতে লাগলাম । দ্রুত ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে তারপাশে বসে হাতটা আমার কোলের উপর রেখে রক্ত পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ করে দিলাম । তার দিকে তাকিয়ে দেখলাম সে একনজরে পলক না ফেলে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । আচমকা হাত ঝেড়ে ফেলে দিয়ে পুরো রুমে পায়চারি করতে লাগলেন। আচমকা আবার আমার কাছে এসে আমার বাহু ঝাঁকিয়ে বলতে লাগলো ,

” এতো ভাব কিসের তোমার রুজেনের সাথে এতো লেগে লেগে ডান্স করার মানেটা কি হাহ্ ।
আর এই কি ড্রেস পরেছ তুমি যার কিছুই ঠিক নেই ” । বলে রাগে ফুফাতে লাগলো ।

আজ এই কোন নিহানকে দেখছি আমি । সাধারণত নিহান অনেক ঠান্ডা মস্তিষ্কের মানুষ আজ এই সামান্য কারণে রেগে যাওয়ার কথা তো তার না । আমি কিছু বলতে যাবো তখনি নিহান আমাকে তার সাথে মিশিয়ে আমার চুলে হাত দিয়ে মাথা উঁচু করে আমার অধর যুগল তার আয়েত্ব নিয়ে গেল । আমার হাত পা একদম অসার হয়ে আসলো , এতটাই অবাক হলাম যে কি রিএক্ট করবো বুঝতে পারলাম না । কতক্ষণ যে এভাবে ছিলাম জানি না একদম রোবট হয়ে দাড়িয়ে রইলাম । নিহান সেই রাগি কন্ঠে বলতে লাগলো এই রুম থেকে এক্ষুণি চলে যেতে নাহলে এরচেয়েও বেশি খারাপ হবে । আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে টেনে রুম থেকে বের করে মুখের দরজা বন্ধ করে দিল ।

সারারাত ঘুমাতে পারিনি ঐ ঘটনার পর , রাগ লজ্জা একদম ভর করে আছে । জীবনের প্রথম চুমু তাও কিনা নিহানের সাথে । ঘুম একদম চোখ থেকে উড়ে গেছে , ভোর পাঁচটার দিকে চোখ লেগে আসলো ।

সকালে নাস্তার টেবিলে নিহানের সাথে মুখোমুখি হলাম, অসস্তির কারণে তার দিকে তাকাতে পারলাম না কিন্তু সে এমনভাবে নরমাল হয়ে আমার সাথে কথা বলছে যে মনে হয় রাতে কিছু হয়নি আমাদের মধ্যে । আমি অবাক হয়ে কোনো রকম খেতে লাগলাম ।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here