আমার হৃদমাঝারে তুমি প্রিয় পর্ব ১০

#আমার_হৃদমাঝারে_তুমি_প্রিয়
#পর্বঃ১০
#Sohana_Akther
সকালে নাস্তার পর নিহানের আর দেখা পেলাম না । যখন আমরা সবাই রেডি হয়ে কনের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিবো তখন নিহানকে দেখলাম পান-শুপারি , মিষ্টি এগুলো গাড়িতে রাখছে । তার দায়িত্ব পরছে বরযাত্রী কতো জন যাবে তা , কে কোন সিটে বসবে , তা ঠিক করা । নিহান গুনে গুনে লোকজন গাড়িতে তুলছে । আজও তাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে , কমপ্লিট সুট পরেছে সে ।

ফারান ভাইয়ার গাড়িটা সাদা গোলাপ ফুল দিয়ে অসম্ভব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে । এই কাজ টাও নাকি নিহান করেছে । এই ভাব ওয়ালা ছেলের টেলেন্ট আছে বলতে হবে । ইতিমধ্যে ফারান ভাইয়াও এসে পরছে সাথে তার বন্ধুরা ।
ফারান ভাইয়ার গাড়িতে তার সাথে তার বন্ধুরা বসবে । মীরাকে বসতে বলা হয়েছে কিন্তু সে আমাকে ছাড়া বসতে রাজি নয় তাই ও আমার সাথেই বসেছে । নিহান এরমধ্যে আমার সাথে আর কথা বলেনি ।

এক ঘন্টা অতিক্রম করার পর কনের বাড়িতে এসে গাড়ি থামলো । গাড়ি থেকে নামার পর
হৈ চৈ শুরু হয়ে গেল বর এসেছে বর বর এসেছে বলে। আমরা গাড়ি থেকে নেমে সামনে এগিয়ে গেলাম, কনের ভাই এসে বরকে গাড়ি থেকে বের করে গেইটের কাছে নিয়ে গেল ।

গেইটের মধ্যে শুরু হয়ে গেল বরপক্ষ আর কনেপক্ষের মধ্যে টাকা নিয়ে ঝগড়া । বিয়ে বাড়িতে এই এক জিনিসটাই সবচেয়ে ভালো লাগে । আমরা বিশ হাজার টাকা বলছে আর আমরা বলছি দশ হাজার , তাদেরকে বিশ হাজার টাকাই নাকি দিতে হবে । অবশেষে তাদের কথাই মানতে হলো তাও ভাইয়ার জন্য ওনার তো ভিতরে যাওয়ার তর সইছে না ।

ফারান ভাইয়াকে নিয়ে স্টেজে বসানো হয়েছে , সাথে তার বন্ধুরাও সেখানে কনে পক্ষের মেয়েদের সাথে দুষ্টুমি করছে । আমি আর মীরা যেয়ে আমাদের হবু ভাবির সাথে দেখা করতে গেলাম । আমি আগে দেখিনি ভাবিকে , মীরা ছবি দেখাতে চেয়েছিল আমি ইচ্ছে করে দেখিনি একবারে কনে সাজে দেখবো বলে ।ভাইয়া হবু স্ত্রীর নাম তিথি । তিথি ভাবির সাথে দেখা করে মীরাকে তার পাশে রেখে আমি এদিক সেদিকটা ঘুরে দেখছিলাম । চারপাশ ঘুরে নিহানকে খুঁজতে খুঁজতে সামনের দিকে ফিরে আচমকাই একজন ছেলের সাথে ধাক্কা খেলাম,

” সরি দেখতে পারি নি , আসলে আমি কাউকে খুঁজছিলাম ” ।

” ইটস ওকে , সমস্যা নেই কোনো । বাই দা ওয়ে আপনি বরপক্ষের লোক না ” ?

” জ্বী আমি বরপক্ষের , বরের মামাতো বোন হই আমি । ”

” তাহলে তো আপনি আমার বেয়াইন হোন , আমি তিথির চাচাতো ভাই তিহাম । আর আপনার নাম কী ? বলে তার ডান হাত এগিয়ে দিল । হাত মিলাবো না কি তা ভাবতে ভাবতে হাত মিলিয়েই বললাম,

” ইনায়াত আহমেদ নিরা কিন্তু ছোট করে সবাই নিরা বলেই ডাকে ” ।

” খুব সুন্দর নাম তোমার কিন্তু আমি তোমাকে ইনায়াত বলেই ডাকবো তোমার এই নামটা আমার বেশ লেগেছে ” ।

তিহামের সাথে কথা বলতে বলতে বাম পাশে তাকিয়ে দেখি নিহান এইদিকেই তাকিয়ে আছে । দৃষ্টি তার আমার আর তিহামের হাতের মধ্যে ।
আমরা এখনো একে অপরের হাত ধরে দাড়িয়ে আছি । জলদি তিহামের হাত থেকে আমার হাত ছুটিয়ে তাকে বায় বলে ঐ স্থান ত্যাগ করলাম ।

বিয়ে পরানোর শেষে খাবার টেবিলে যেয়ে দেখি নিহান বসে আছে তার পাশের চেয়ার খালি দেখে আমিও বসে পরলাম । আমাকে দেখে নিহান ওঠে চলে যেতে নিলে বাকি কাজিনদের জন্য আর ওঠতে পারেনি । ডান হাত কাটার কারণে নিহান বাম হাতে চামচ দিয়ে খাওয়া চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুতেই ভালো ভাবে খেতে পারছে না । তার না খেতে পারা দেখে মীরা আমাকে বললো নিহানকে খাইয়ে দিতে । আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই নিহান বললো ,

” আমি নিজের খাবার নিজে খেতে পারবো কাউকে আমার জন্য কষ্ট করতে হবে না ” ।

তার এই কথা শুনে মাথা গরম হয়ে গেল আমার, আমার হাতে খেতে সমস্যা কোথায় ওর । তাই আমিও জোর দেখিয়ে বললাম,

” আমার কোনো কষ্ট হবে না, বরং আপনার আমার হাতে খেতে সমস্যা হলে বলতে পারেন ” ।

আমার কথা শুনে নিহান আর কিছু বলেনি আর পাশ থেকে বাকি কাজিনরাও বলছে খেতে নিতে তাই একপ্রকার বাধ্য হয়েই আমার হাতে খেতে রাজি হয়েছে নিহান ।

খাইয়ে দিতে যেয়ে বাধলো আরেক বিপত্তি, নিহান প্রতিবার মুখে খাবার দেয়ার সময় আঙ্গুলে কামড় দিচ্ছে । চেয়েও কিছু বলতে পারছি না তাকে তাই কামড় সহ্য করেই তাকে খাইয়ে যাচ্ছি। কিন্তু এবার একটু বেশি জোরেই কামড় দিয়ে ফেললো , ব্যথা সহ্য করতে না পেরে আহহ শব্দ করে উঠলাম । সামনে তাকিয়ে দেখি সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে তাই মুখে হাসি এনে বললাম ,

” টেবিলের নিচে কি যেনো ছিল , তাই ভয়ে এমন করলাম ” ।

সবাই আর কিছু না বলে যার খাবারে মন দিল । নিহান সবার অগোচরে আমার কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বললো,

” অনেক শখ তোমার ছেলেদের হাত ধরে কথা বলার তাই না ” বলে কেমন করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে ।

আমার আর বুঝতে দেরি হলো না যে এই কামড় গুলা কি জন্য পেয়েছি আমি । তার এই ব্যাপারে আমার মাথায় রাগ চেপে বসলো তাই তার খাবারে মাংসের বদলে কাচা মরিচ দিয়ে দিলাম ।
নিহান বুঝতে পেরেও চুপচাপ খেয়ে নিলো , এভাবে অনেক বার দেয়ার পর দেখলাম তার ঝালে তার চোখ দিয়ে পানি পরছে , চোখ দুটো একদম লাল হয়ে আছে । তার এই অবস্থা দেখে ওয়েটার দিয়ে মিষ্টি আনিয়ে খাইয়ে দিলাম । মিষ্টি খেয়েই কিছু না বলে টেবিল থেকে ওঠে চলে গেল নিহান । সবাই তার যাওয়ার পথে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে । সন্ধ্যার সময় আমরা বউ নিয়ে বাসায় আসলাম । বিয়ের তামজামে এতটাই ক্লান্ত ছিলাম যে রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পরলাম আর নিচে যাইনি । নিচে সবাই নতুন বউ নিয়ে মেতে আছে ।

বৌভাতের দিন আবারও নিহানের রাগের শিকার হতে হলো আমায় তাও ভাবির ঐ কাজিন তিহামের কারণে ।
এখানে আসার পর থেকেই আমার পিছনে লেগে আছে ।
না জানি কি আছে আমার কপালে ..

চলবে …

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here