আমার হৃদমাঝারে তুমি প্রিয় পর্ব ১১

#আমার_হৃদমাঝারে_তুমি_প্রিয়
#পর্বঃ১১
#Sohana_Akther
শাড়ি যখন পরতেই পারো না তাহলে পরার প্রয়োজনটা কি , নাকি ছেলেদের নিজের শরীরে কয়টা তিল কোথায় আছে তা দেখানোর জন্য পরো , বলে হেচকা টান দিয়ে নিহান আমার শাড়িটাই খুলে ফেললো ।

তার এমন ব্যবহারে আমি পুরোই হতবাক । সে এক দৃষ্টিতে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে আমার দিকে আর ভুলেও চোখ তুলে তাকায় নি । কয়েক মিনিট নিরবতা পালন করার পর পা দিয়ে দরজা বারি দিয়ে রুম থেকে চরে গেল । আমি এখনো সেই অবস্থাতেই আছি , শাড়ির আচল নিচে , কুচি ও অর্ধেক খোলা । রাগে , অপমানে লজ্জায় আমার চোখ দিয়ে পানি পরতে লাগলো । আজ পর্যন্ত কেউ আমার সাথে এমন বাজে ব্যাবহার করেনি ।
আজ ভালোলাগা আর শ্রদ্ধা বদলে একরাশ ঘৃণা কাজ করছে নিহানের প্রতি ।

আজ বৌভাতে মীরার সাথে দুষ্টুমি করে দৌড়াদৌড়ি করার সময় কখন যে কোমরের দিক থেকে একটু শাড়ি সরে গেল সেদিকে খেয়াল করিনি । আমি যখন তিহামের সাথে দাড়িয়ে কথা বলছিলাম তখন সে এক দৃষ্টিতে আমার কোমরের দিকে তাকিয়ে ছিল । প্রথমে ব্যবহারটা বুঝতে পারি নি আমি , কিছু বুঝে ওঠার আগেই কোথায় থেকে নিহান এসে আমাকে টেনে রুমে নিয়ে এসে কিছু না বলেই টেনে আমার শাড়িটাই খুলে ফেললো ।

দুই দিন আগে যে ছেলেটি সবার সামনে আমার সম্মানের রক্ষা করলো আজ একান্তে এমন ব্যবহার মেনে নিতে পারলাম না । তার এতদিনের করা সকল ব্যবহারের জন্য তাকে শাস্তি পেতে হবে , আর তার শাস্তি এটাই হবে যে আজ থেকে তার সাথে দেখা তো দুর কথাও বলবো না । তার কাছ থেকে নিজেকে একদম আড়াল করে ফেলবো । কোনো রকম শাড়ি বদলে একটা থ্রী পিস পরে আবার অনুষ্ঠানে উপস্থিত হলাম । অনুষ্ঠানে যেয়ে বাবা মাকে বললাম আজই বাড়িতে চলে যাবো । বাড়িতে যাওয়ার কথা শুনে মা বকতে শুরু করলো ,

” এটা কেমন কথা নিরা বিয়ের অনুষ্ঠান এখনো ঠিক করে শেষ হয়ন আর তুমি বাড়িতে যাওয়ার কথা বলছো ” ।

” মা আগামী পরশু আমার পরীক্ষা আছে , আমার এখনো প্রকার প্রিপারেশন নেই আমার আজই যেতে হবে বাড়িতে ” ।

” এতোদিনে আজ এসে মনে পরলো তোমার পরীক্ষার কথা ” ?

” ভাইয়ার বিয়ের এক্সসাইটমেন্টে মনে ছিল না মা , কিছুক্ষণ আগে রিয়া ফোন দিয়ে বলাতে মনে পরলো । প্লিজ মা বাবাকে বলে আজই চলো ” ।

আমার জন্য অতপর বাবা-মা ফুফা ফুফিকে বুঝিয়ে আমাকে নিয়ে বাড়িতে চলে আসলো । আসলে দুই দিন পরেই কলেজে পরীক্ষা আছে , বিয়ের জন্য মনে ছিল না । বাড়িতে এসে বই নিয়ে বসে পরলাম, শুধু খাওয়ার সময় খাওয়া আর গোসলের সময় গোসল এর ব্যতীত বই হাত থেকে রাখিনি । যতক্ষন হাতে বই থাকে ততক্ষণ অন্য কোন কিছুর ভাবনা মাথায় আসে না । বইয়ের থেকে মন ওঠালেই নিহানের কথা মনে পরে আর আমি কিছুতেই তাকে মনে করতে চাই না ।

সকল পরীক্ষা ভালোভাবেই কেটে গেল । পরীক্ষা দিয়ে বের হওয়ার সময় নিহানকে গেইটের সামনে দেখতাম, আমাকে দেখে কিছু বলার জন্য এগিয়ে আসার আগেই আমি সেখান থেকে চলে আসতাম । কিন্তু শেষ পরীক্ষার দিন আমার শেষ রক্ষে আর হলো না , নিহান একদম আমার সামনে এসে হাজির । আমি কিছু না বলে চলে আসতে নিলেও আমার হাত ধরে আটকে রাখলো, প্রিয়া আর রিয়াকে আমি ছাড়াই চলে যেতে বললো ।

” কি হয়েছে তোমার, সেই কবে থেকে তোমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করছি আর তুমি দেখেও না দেখার ভান করছো “। একদম স্থির হয়ে শান্ত ও শীতল কন্ঠে কথাটি বললো নিহান ।
চমকে আমি তার দিকে তাকালাম আজ পর্যন্ত কখনো তাকে এতোটা শান্ত স্বরে কথা বলতে দেখেনি , আমার সাথে তো নাই । তারপরও আমি কিছু না বলে চুপ করে রইলাম ।

” দেখো নিরা ঐদিনের ব্যবহারের জন্য আমি সত্যিই অনেক অনুতপ্ত, প্লিজ ক্ষমা করে দেও আমায় । তোমার কোমরের দিকে যখন তিহাম তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল তা আমি একদম সহ্য করতে পারিনি ” । শেষের লাইনটা একটু কর্কশ কন্ঠেই বললো ।

হয়েছে আপনার কথা বলা , এখন দয়া করে পথ ছাড়ুন বাড়িতে যেতে হবে আমার । বলেই তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আমি চলে আসলাম।

এভাবেই কয়েকদিন কেটে গেল । নিহান আমার সাথে কথা বলতে আসলে আমি পাশ কাটিয়ে চলে যেতাম । এখন আর সেও কিছু বলার চেষ্টা করে না একটু দুরে দুরেই থাকে । প্রথমে একটু কষ্ট লাগলেও পরে মনকে বুঝালাম আমি কেনো কষ্ট পাচ্ছি তার জন্য । যে কাজ সে করেছে তার জন্য তাকে ক্ষমা করতে পারব না আমি।

একদিন আমি একা একা হাঁটতে হাঁটতে কলেজের পিছনের দিকে গেলাম । সেখানে কখনো যাওয়া হয়নি, শুনেছি সেখানে একটি পুকুর আছে আর তাতে পদ্ম ফুল ফোটে তাই তা দেখারজন্য সেখানে গেলাম । কিন্তু আমার জন্য যে অন্যকিছুই অপেক্ষা করছে সেখানে তাতো জানতাম না ।

পুকুর পাড়ে যেয়ে দেখলাম সেখানে কয়েক জন ছেলে বসে তাস খেলছে আর স্মোক করছে । তাদেরকে দেখে সেখান থেকে দ্রুত চলে আসতে নিলে তাদের মধ্যে একজন হঠাৎ আমার সামনে এসে দাড়ালো । ভয়ে আমি পাশ কাটিয়ে যেতেনিলে আরো একজন এসে হাজির হলো ।

” কি ব্যাপার সুন্দরী আমাদের দেখে চলে যাচ্ছিলে কেনো , আসো আমাদের কাছে এসো “।

পাশ থেকে একজন বলে ওঠলো ,

” মামাহ একটা মালই এই মেয়ে, এমন মাল আগে কখনো দেখিনি ” ।

” দেখুন ভাইয়া আমাকে যেতে দিন ” বলে চলে আসতে নিলে আমার ওরনা ধরে টান দিয়ে আমার গালে স্পর্শ করার জন্য হাত এগিয়ে আনতে গেলেই কে যেনো ছেলেটির মুখ বরাবর একটি ঘুসি মারলো । মারার সাথে সাথে ছেলেটি মাটিতে পরে গেল । পাশে তাকিয়ে দেখলাম এই আর কেউ না নিহান!

আমার দিকে রক্তচক্ষু নিক্ষেপ করে বলল ,

“এখানে কি জন্য এসেছো তুমি ” ? এখুনি যাও এইখান থেকে । বলে একদম হিংস্র হয়ে ছেলেদের মারতে লাগলেন । সাথে তার বন্ধুরা মিলে ও মারতে লাগলো । আমি তখনো একপাশে দাড়িয়ে এসব দেখে যাচ্ছি । নিহানকে তো একদম চিনতেই পারছি না । শত হাতির বল যেনো তার শরীরে যুক্ত হলো , সে একাই সকলকে মেরে যাচ্ছে । অবস্থা বেগতিক দেখে তার বন্ধুরা তাকে আটকাবার চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুতেই তার সাথে পেরে ওঠছে না । সে তাদেরকে মেরেই যাচ্ছে আর বলতে লাগলো সাহস কি করে হলো আমাকে ছোঁয়ার । মারতে মারতে একদম রক্তাক্ত করে ফেললো তাদের ।

এসব দেখে আমি অতিরিক্ত ভয় পেয়ে গেলাম আর ভয়ের কারণে চারদিক আমার অন্ধকার লাগতে লাগলো । কখন যে চোখ বন্ধ করে মাটিতে লুটিয়ে পরলাম বুঝতেই পারলাম না । আমার মাটি পরার শব্দ শুনে নিহান দৌড়ে আমার কাছে আসলো । আমার মাথা তার কোলে নিয়ে বলতে লাগলো,

” এই নিরা চোখ মেলে তাকাও কি হয়েছে তোমার। আমি কিছু হতে দিবো না তোমায় এই.. এই নিরা চোখ খুলো ” । চোখে তাকে ঝাপসা দেখতে পেলাম, তার প্রত্যেকটি কথা আমার কানে বাজতে লাগলো । তার কোলেই আমি জ্ঞান হারালাম ।

চোখ মেলে তাকিয়ে নিজেকে হাসপাতালে আবিষ্কার করলাম, পাশে তাকিয়ে দেখতে পেলাম….

চলবে …

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here